গঙ্গা চুক্তির সফলতা-ব্যর্থতা

জাহিদুল ইসলাম
Published : 25 July 2012, 11:25 AM
Updated : 28 Jan 2012, 02:56 PM

হুগলী নদীর তীর ঘেঁষে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নির্মান করা ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে পূরাতন ও প্রধান বন্দর কলকাতা। ষাটের দশকে নদী থেকে বয়ে আসা বিপুল পলি বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধা সৃষ্টি করায় তার প্রতিকারে ভারত সরকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় ১৯৫১ সালে, যাতে গঙ্গা নদীতে ব্যারেজ নির্মান করে একটি বিকল্প খাল দিয়ে গঙ্গার পানিকে হুগলী নদীতে প্রবাহিত করে বন্দরের সঞ্চিত পলিকে স্থানচ্যুত করা যায়। সেই পরিকল্পনা পরিশেষে বাস্তবায়িত হয় ১৯৭৪-৭৫ সালে 'ফারাক্কা ব্যারেজ' নামে। ১৯৫১ সালে ফারাক্কা ব্যারেজের পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে শুরু হওয়া বিতর্ক, আলোচনা ও সংঘাতের অবসান ঘটে ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির মাধ্যমে [১]। ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ৫৭ টি অভিন্ন নদী থাকলেও গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক পানিচুক্তি। গত ১২ ডিসেম্বর এই চুক্তির ১৫ বছর পূর্তি হলো, সব ঠিক থাকলে এই ২০২৬ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এর পরে এই চুক্তির নবায়ন উভয় দেশের উপর নির্ভর করবে। গঙ্গার পানিবন্টন নিয়ে প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় খবরাখবর থাকে, এই ইস্যু নিয়ে ভারত-প্রীতি বনাম ভারত-বিদ্বেষী রাজনীতিও হয় তাই প্রতিবছর। তবে এই রিপোর্টগুলিতে উপাত্তভিত্তিক বিশ্লেষণের অভাব পরিলক্ষিত হয়। ইন্দো-বাংলাদেশ যুক্ত নদী কমিশন ( জে আর সি) এই উপাত্ত সংগ্রহ ও সরবরাহের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। যুক্ত নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে ২০০৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিবছর গঙ্গার ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশ অংশে প্রবাহের একটি তুলনামূলক উপাত্ত রাখা আছে যা মূলত প্রেসনোট আকারে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায় পাঠানো হয়ে থাকে। এই নিবন্ধে সাম্প্রতিক উপাত্তের ভিত্তিতে গঙ্গা চুক্তি কতটা সফল বা বিফল তার একটি আলোচনা থাকবে।

গঙ্গা চুক্তির পানিবন্টন সমীকরণঃ
মুল আলোচনায় যাবার পূর্বে গঙ্গা চুক্তির পানিবন্টন সমীকরণ একটু জেনে নেয়া যাক। এই পানিবন্টন চুক্তি ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং পানিবন্টন হয় ১০ দিন ভিত্তিক, অর্থাৎ একটি মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করে ১০ দিনের গড় প্রবাহ অনুযায়ী চুক্তি অবলোকন করতে হয়। চুক্তি অনুযায়ীঃ
o প্রবাহ যদি ৭৫,০০০ কিউসেকের বেশি হয় তাহলে ভারত পাবে ৪০,০০০ কিউসেক আর বাদবাকী পাবে বাংলাদেশ।
o প্রবাহ যদি ৭০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ এর মধ্যে হয় তাহলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫,০০০ কিউসেক আর বাদবাকী পাবে ভারত।
o প্রবাহ যদি ৭০,০০০ এর কম হয় সেক্ষেত্রে দুই দেশ সমভাবে পানি ভাগ করে নিবে। তবে যেহেতু শুষ্ক মৌসুমে দুই দেশেই পানির প্রয়োজন বেশি তাই প্রবাহ ৭০,০০০ এর চেয়ে কমে গেলেও ১১-২০ মার্চ, ১-১০ এপ্রিল, ও ২১-৩০ এপ্রিল এই তিনটি সময়ে বাংলাদেশ ৩৫,০০০ কিউসেক পানি গ্যারান্টি সহকারে পাবে; পক্ষান্তরে ২১-৩০ মার্চ, ১১-২০ এপ্রিল ও ১-১০ মে এই তিন সময়ে ভারত ৩৫,০০০ কিউসেক পানি গ্যারান্টি সহকারে পাবে। একটি দেশ যখন গ্যারান্টিড পানি পাবে অন্যদেশ তখন মোট প্রবাহ থেকে ৩৫০০০ কিউসেক বাদ দিলে যা থাকে তাই পাবে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। গঙ্গা চুক্তির এই পানিবন্টন সমীকরণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ফারাক্কায় গঙ্গার হিস্টরিকাল প্রবাহের উপর ভিত্তি করে। এই ৪০ বছরের উপাত্তের ১০ দিন ভিত্তিক গড় আসলে গঙ্গা চুক্তির সমীকরণ প্রনয়ণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তাই এই চুক্তির বিশ্লেষণে এর গুরুত্ত্ব অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত এবং মূল চুক্তির সংযুক্তি ২ হিসেবে এই উপাত্ত চুক্তির একটি অংশও। যদিও এই সময় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে, বিশেষত এই ৪০ বছরের মধ্যে ফারাক্কা ব্যারাজ-পূর্ব (১৯৪৯-১৯৭৩) এবং ফারাক্কা ব্যারাজ-পরবর্তী (১৯৭৫-১৯৮৮) প্রবাহ রয়েছে এবং বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারেজের ফলে খোদ ফারাক্কাতেই পানির প্রবাহ কমেছে অথচ চুক্তি করার সময় এই দুই পর্যায়ের গড় পানির প্রবাহ নিয়ে সমীকরণ তৈরি করা হয়েছে, যা কোনোমতেই গঙ্গায় পানি প্রবাহের বাস্তব চিত্র হতে পারে না [১]। যাক এই নিবন্ধের আলোচনা সেটিকে কেন্দ্র করে নয়।

সাম্প্রতিক উপাত্তের আলোকে চুক্তির সফলতা ব্যর্থতাঃ
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি কতটা সফল তা নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপরঃ
o প্রথমতঃ ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে প্রায় ২০ বছরকাল ভারতের একতরফা পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের পানিসম্পদ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র ও সর্বোপরি আর্থসামাজিক অবস্থার যে অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক কতটা কমানো বা লাঘব করা গিয়েছে।
o দ্বিতীয়তঃ চুক্তি অনুযায়ী ঠিকমত পানি আদৌ বাংলাদেশ পাচ্ছে কিনা।
o তৃতীয়তঃ হিস্টরিকাল প্রবাহের উপাত্ত, যা কিনা গঙ্গা চুক্তির সাথে যুক্ত, তার আলোকে বাংলাদেশ আদৌ পানি পাচ্ছে কিনা।

প্রথমটি নির্ণয় করা কঠিন কাজ, এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ গবেষণা ও উপাত্ত যা এই নিবন্ধে সম্ভব হচ্ছেনা। দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত সহজ তবে তা নির্ভর করে গঙ্গার প্রবাহের ভারতীয় ও বাংলাদেশে অংশে, বা আরো ভাল করে বলতে গেলে ফারাক্কা ব্যারেজ সংলগ্ন পয়েন্ট ও হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টের গঙ্গার প্রবাহের উপাত্তের উপর।

ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে গঙ্গাচুক্তি কার্যকর থাকে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এবং পানিবন্টন হয় ১০ ভিত্তিক গড় প্রবাহ অনুযায়ী। সেই বিচারে জানুয়ারী থেকে মে এই পাঁচ মাসকে মোট ১৫ টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এই নিবন্ধে ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১ সালে গঙ্গাচুক্তিকে বিশ্লেষণ করা হবে দুটি ভিত্তিতেঃ
o প্রথমতঃ প্রতিবছর এই ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে কতটি পর্যায়ে ১৯৯৬ এর চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে। অর্থাৎ শতকরা কত ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি রক্ষিত হচ্ছে আর কতভাগ সময়ে তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
o দ্বিতীয়তঃ ফারাক্কায় গঙ্গার হিস্টকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) থেকে চুক্তির সমীকরণ অনুযায়ী বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রাপ্য পানির আলোকে প্রতিবছর এই ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে কতটি পর্যায়ে বাংলাদেশ সঠিক ভাবে পানি পাচ্ছে। অর্থাৎ শতকরা কত ভাগ সময়ে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনযায়ী গঙ্গা চুক্তি রক্ষিত হচ্ছে আর কতভাগ সময়ে তা বিঘ্নিত হচ্ছে।

এখানে বলে নেয়া ভাল যে গঙ্গাচুক্তির পানিবন্টন ফারাক্কায় পানির প্রবাহের উপর ভিত্তি করে। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে উপরে উল্লেখিত প্রথম বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেলে মনে হতে পারে গঙ্গাচুক্তি সঠিক ভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ২ এ উল্লেখ আছে[২],
"ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত দশ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে।"
অর্থাৎ যেহেতু গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে তাই ফারাক্কায় গঙ্গার প্রবাহ যাতে হিস্টরিকাল গড় প্রবাহের চেয়ে কমে না যায় সেই দিকে উজানের পানি ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আর যদি তা না করা হয় সেটাও গঙ্গা চুক্তির লঙ্ঘন বলেই প্রতীয়মান হবে।

এবারে দেখা যাক গত ৪ বছরের চিত্র। এখানে উল্লেখ্য যে চুক্তি অনুযায়ী কতটুকূ পানি বাংলদেশের প্রাপ্য তা হিসেব করা হয়েছে ফারাক্কাতে মোট প্রবাহ আর বন্টন সমীকরণ অনুযায়ী আর আদৌ সেই পানি বাংলাদেশ পাচ্ছে কি না তা নির্ধারন করা হয়েছে পদ্মাতে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে গঙ্গার প্রবাহ অনুযায়ী।

২০০৮ সালে ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর ৩ টি পর্যায়ে পায়নি। অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে। তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা গিয়েছে ঠিক উল্টো পরিস্থিতি। ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে মাত্র ২ টি পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ১৩ ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে।

২০০৯ সালেও ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর তিনটি পর্যায়ে পায়নি। অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে। তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা পরিস্থিতি ২০০৮ এর মত। ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে মাত্র ২ টি পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ১৩ ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে।

২০১০ সালেও ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ৯ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর ৬ পর্যায়ে পায়নি। অর্থাৎ শতকরা ৬০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে। তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা পরিস্থিতি ভয়াবহ। ১৫ টি পর্যায়ের কোনটিতেই বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পায়নি।

২০১১ সালে ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর ৩ টি পর্যায়ে পায়নি। অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে। তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে ৫ টি পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ৩৩ ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে।
উপরের তথ্যগুলিকে চার্ট আকারে নিচের দু'টি চিত্রে দেখানো হলো।

উপরোক্ত চিত্র (চিত্র-১) এ দেখানো হয়েছে ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চুক্তি সময়কালের ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে শতকরা কতটি পর্যায়ে বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পেয়েছে বা পায়নি। দেখা যাচ্ছে গড়ে শতকরা ২৫ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ এই চার বছরে প্রতি বছর ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে নিদেনপক্ষে ৩-৪ টি পর্যায়ে ( এক-দেড় মাসে) বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি।

উপরোক্ত চিত্র (চিত্র-২) এ দেখানো হয়েছে ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চুক্তি সময়কালের ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে শতকরা কতটি পর্যায়ে বাংলাদেশ হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী পানি পেয়েছে বা পায়নি। দেখা যাচ্ছে গড়ে শতকরা ৮৫ ভাগ সময়ে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ এই চার বছরে প্রতি বছর ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে নিদেনপক্ষে ১২-১৩ টি পর্যায়ে ( বা চার মাসে) বাংলাদেশ হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী অনুযায়ী পানি পায়নি।

পরিশেষেঃ
গঙ্গা চুক্তি প্রতিবছর জানুয়ারী থেকে মে এই ৫ মাসে মোট ১৫ টি পর্যায়েই সংরক্ষিত হবার কথা। কিন্তু গত চার বছরের উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে শতকরা ২৫ ভাগ সময়েই চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছেনা বাংলাদেশ। সেই সাথে আরো দেখা যাচ্ছে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে, গত চার বছরে জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত সময়কালে শতকরা ৮৫ ভাগ সময়ে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছেনা। এভাবে ক্রমাগত ভাবে যদি ফারাক্কাতে গড় প্রবাহ এই হিস্টরিকাল প্রবাহ থেকে কমে যেতে থাকে তা উদ্বেগের কারণ এবং সেই জন্য গঙ্গা চুক্তিতেও অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ২ এ এই বিষয়ে দুই দেশের কী করনীয় তা উল্লেখ করা আছে। গঙ্গার প্রবাহ কমে যাবার কয়েকটি মূলত দুটি কারন থাকতে পারেঃ
প্রথমতঃ উজানে গঙ্গার পানির ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্য কোন কারনে গঙ্গার প্রবাহ কমে গিয়েছে।
যদি প্রথমোক্ত কারনে গঙ্গার প্রবাহ কমে যায় তাহলে সেটি চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ২ অনুযায়ী চুক্তির লঙ্ঘন। আর দ্বিতীয় কারনে প্রবাহ কমে গেলে চুক্তির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে সেক্ষেত্রে যুক্ত নদী কমিশনের উচিৎ এই পরিস্থিতিতে কী কী করনীয় তা প্রনয়ন করা। আশা করি যুক্ত নদী কমিশন শুধু ২০০৮ সাল থেকে নয় বরং ১৯৯৭ সাল থেকে এই বর্তমান সময় পর্যন্ত উপাত্ত জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করবে। এবং সেই উপাত্ত নিয়ে এই ধরনের বিশ্লেষণ করে সঠিক কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করবে।


জাহিদুল ইসলাম
: পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা, কানাডা।
প্রাক্তন শিক্ষক, পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ, বুয়েট।

তথ্যসুত্রঃ
[১] 'ফিরে দেখা গঙ্গা চুক্তি', জাহিদুল ইসলাম, কালের কন্ঠ ৮ ডিসেম্বর, ২০১০
[২] গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, জাহিদুল ইসলাম (সচলায়তনে সিরিজ আকারে প্রকাশিত)
উপাত্তসুত্রঃ
যুক্ত নদী কমিশন প্রেস নোট (http://www.jrcb.gov.bd/press_release.html)

জাহিদুল ইসলামঃ পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা, কানাডা।
প্রাক্তন শিক্ষক, পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ, বুয়েট
zahidripon@gmail.com