বাঙালি জাতির অর্জনগুলো ধরে রাখতে হবে

শেখ হাসিনাশেখ হাসিনা
Published : 22 Feb 2017, 01:52 PM
Updated : 22 Feb 2017, 01:52 PM

[গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠান যে ভাষণ দেন তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হল।]

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম

আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি ও আমার সহকর্মীবৃন্দ, একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন, উপস্থিত সুধিমণ্ডলী-

আসসালামু আলাইকুম।

একুশে পদক ২০১৭ প্রদান অনুষ্ঠানে যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন, সকলকে আমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি বায়ান্নর সেই মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি– সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউদ্দীনসহ যাঁরা সেদিন রক্ত দিয়ে আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করে গিয়েছিলেন। আমি শ্রদ্ধা জানাই ভাষা আন্দোলনের পথিকৃত, '৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন যিনি শুরু করেছিলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছি। আমি শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় চার নেতার প্রতি এবং আমাদের ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ মা-বোনের প্রতি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল পরিবার আপনজন হারিয়েছেন, সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বজন হারাবার বেদনা নিয়ে যাঁরা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি আমি আমার সহমর্মিতা জানাই। ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

এ বছর যাঁরা একুশে পদক পেয়েছেন তাদের সবাইকে আমি আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে যাঁরা বিশেষ ভূমিকা রেখে গেছেন তাদের, এমনকি অনেকের নাম হারিয়ে গিয়েছিল– আমরা চেষ্টা করছি খুঁজে বের করতে।

সেই সঙ্গে আরেকটা অনুরোধ জানাব, আমাদের একেবারে গ্রাম-বাংলায় অনেক বিজ্ঞজন আছেন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা বিশেষ বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। কিন্তু তাদের কথা সব সময় হয়তো প্রস্তাবও আসে না, খবরও পাই না। সেজন্য আমার একটা আবেদন থাকবে যে, এই ধরনের যাঁরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন, সমাজের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন, তাদের নামগুলি সংগ্রহ করা– সেগুলি দিলে পরে বিভিন্নভাবে তাদের সম্মান জানিয়ে আমরা কৃতার্থ হব, আর জাতি উপকৃত হবে। সেই জন্য সকলের সহযোগিতা আমি কামনা করি।

সুধিমণ্ডলী,

একুশ আমাদের শিখায় মাথা নত না করা। একুশ আমাদের শিখায় যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। একুশ আমাদের শিখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে একটা অনন্য দিন। কিন্তু এই একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা শহীদ দিবস হিসেবে পালন করেছি। আজকে শুধু শহীদ দিবস হিসেবে নয়, সেই সঙ্গে সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি কিন্তু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কিন্তু এই দিবসটি কীভাবে হল?

আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের ভাষা। আর বাংলাদেশ আমাদের দেশ। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস আছে, ঐতিহ্য আছে, সংস্কৃতি আছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের এই সংস্কৃতিকে ভুলিয়ে দেওয়া, আমাদের নিজেদের ভাষাকে ভুলিয়ে দেওয়ার এক গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছিল– ঠিক যখন ঐ পাকিস্তান নামে একটি দেশ হল যার দুটি অংশ। প্রায় হাজার/১২০০ মাইল দূরে একটা পূর্ব, আরেকটা পশ্চিম পাকিস্তান গড়ে তোলা হল। বাঙালিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু দেখা গেল যে, যারা সংখ্যালঘু তারাই আমাদের উপর, মনে হল যেন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, একে একে সব অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাল।

'৪৭ সালের নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসের দিকে করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে, উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতির কথা তারা ভুলেই গেল। কিন্তু বাঙালিরা বসে থাকেনি। যখনই এই ঘোষণা এল, সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, যদিও সীমিতভাবে, তাঁরা মিছিল নিয়ে– তখনকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন– তার বাড়ি ঘেরাও করে এবং এর প্রতিবাদ জানায়। এভাবেই কিন্তু আমাদের ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল।

সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তখন একটা উদ্যোগ নেয়। তখন আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ নামে একটি সংগঠন তিনি গড়ে তোলেন। এরপর তিনি ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে এবং সেখানে তমুদ্দন মজলিসসহ আরও অন্যান্য সংগঠন নিয়ে একটা ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন।

১১ মার্চ ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সেই থেকে কিন্তু আমাদের আন্দোলনের যাত্রা শুরু। জাতির পিতার এই উদ্যোগের ফলে আমরা দেখেছি যে, দেশের মানুষের ভিতরে একটা উদ্দীপনা শুরু হয় এবং বাংলা ভাষা দাবি দিবস পালন করতে গিয়ে সেই ১১ মার্চ যখন ধর্মঘট চলে, সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। আবার ১৫ তারিখে তাঁরা মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর ১৬ মার্চ আরেকটি জনসভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় হয়। সেই সভার সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তখন একটি স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এভাবেই আমাদের আন্দোলন কিন্তু চলতে থাকে।

এই আন্দোলনেরই এক পর্যায়ে '৪৮ সালের ১৯ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলাদেশে আসেন। পাকিস্তান হবার পর পূর্ব বাংলায় এটা তার প্রথম আগমন। সে কারণে আন্দোলন তখন স্থগিত রেখে তাকে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়। রেসকোর্স ময়দান অর্থাৎ এখন যেটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সেখানে তিনি বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। সেই ভাষণ দেওয়ার সময় ঘোষণা করলেন যে, উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা। তখনই কিন্তু সেই সভা থেকেই ছাত্রসমাজ এবং জনগণ এর প্রতিবাদ করে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন অনুষ্ঠিত হয় কার্জন হলে। সেই কনভোকেশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্ররা যখন তার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্যে প্রস্তুত, তিনি তার ভাষণে ঘোষণা দিলেন যে, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হবে। তখন উপস্থিত ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করে এবং 'নো নো' বলে চিৎকার করে। এভাবেই কিন্তু প্রতিবাদ চলতে থাকে।

বঙ্গবন্ধু সব সময় এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যেই সংগ্রাম করেছেন। একদিকে ভাষা আন্দোলন, অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের অধিকার আন্দোলন। সেই সময় বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল। লিয়াকত আলী খান পাকিস্তান থেকে তখন পূর্ব বাংলায় আসেন। সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে ভুখা মিছিল পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি আন্দোলনের সময় কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) বারবার গ্রেফতার হন, বারবার মুক্তি পান, আবার গ্রেফতার হোন আবার মুক্তি পান। এই ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য ছাত্রসমাজ তখন সিদ্ধান্ত নেয় যে, সমস্ত বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে এর প্রচার-প্রচারণা চালাবেন। সেই প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়েও কিন্তু তিনি বারবার গ্রেফতার হন।

এরপর ১৪ অক্টোবর ভুখা মিছিল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আওয়ামী লীগের শামসুল হক সাহেব, মওলানা ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধুসহ অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। অনেকে মুক্তি পান, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আর মুক্তি পাননি। '৫২ সাল পর্যন্ত তিনি এই কারাগারে বন্দি ছিলেন। কিন্তু এই বন্দি থাকা অবস্থায়ও তিনি বসে থাকেননি। হাসপাতালে যখন তিনি চিকিৎসারত অবস্থায় কেবিনে ছিলেন তখন ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নাইমুদ্দিন এবং খালেক নেওয়াজ। তাঁরা গোপনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং অন্যান্য ছাত্রনেতারাও দেখা করতেন। তখনই আলোচনা হত কীভাবে এই ভাষা আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং এটাকে আরও সফল করা যায়। কারণ এর মাঝে বারবার নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে। খাজা নাজিমুদ্দিন এক সময়ে কথা দিয়েছিল যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটা তিনি সমর্থন করবেন। কিন্তু এরপরই তিনি ঘুরে যান এবং প্রাদেশিক পরিষদে ঘোষণা দেন যে, উর্দুকে বাঙালিরা মেনে নেবে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। সেভাবে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তখন শুরু হয়। কাজেই এই আন্দোলন অব্যাহত রাখা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যদি জাতির পিতার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়ি, সেখানে আপনারা দেখবেন যে, তিনি লিখেছেন– "পরের দিন রাতে এক এক করে অনেকেই এল। সেখানেই ঠিক হল আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনার করতে হবে।"

['অসমাপ্ত আত্মজীবনী' ; পৃষ্ঠা- ১৯৭]

এই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার জন্য সংগ্রামের অনেক তথ্য সেখানে আমরা পেতে পারি। তিনি নিজে তখন অনশন ধর্মঘট পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। বরিশালের মহিউদ্দিন সাহেবও তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন। ঐ অবস্থাতে তখন– আপনারা জানেন যে, একুশে ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক পরিষদের বাজেট অধিবেশন ছিল। প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনটা তখন বসত জগন্নাথ হলে। আপনাদের নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে থাকার কথা যে, জগন্নাথ হল– যেটা ভেঙে পড়েছিল এবং সেখানে অনেক ছাত্র মারা গিয়েছিল– সেই জায়গাটাতেই ছিল প্রাদেশিক পরিষদের অ্যাসেম্বেলি হল। সেখানেই তখন প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন বসত।

কাজেই সেই সময়ে যেহেতু বাজেট অধিবেশন এবং প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন তখন ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নিল ঐ দিনই তারা এই ভাষার দাবি নিয়ে মিছিল করবে। যে মিছিলে গুলি হল সেখানে আমাদের সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউদ্দিনসহ আরও অনেক জানা-অজানা শহীদ আত্মাহুতি দিলেন। এই রক্তের মধ্য দিয়ে, এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবার সংগ্রাম আরও ব্যাপকতা পেল।

এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন। তখনও আপনারা জানেন যে, ইমারজেন্সি ডিক্লেয়ার করে ৯২(ক) ধারা দিয়ে সেই সরকার উৎখাত করা হল। কিন্তু এরপর, '৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তখন সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রধানমন্ত্রী হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে পাকিস্তানের যে শাসনতন্ত্র রচনা হয়, সেই শাসনতন্ত্রে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই বাংলা ভাষা প্রথম শাসনতন্ত্রে স্বীকৃতি পেল, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেল।

আওয়ামী লীগ সরকারই একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। শুধু শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণাই দেয়নি, শহীদ মিনার তৈরি করবার জন্য– যেখানে ছাত্ররা গুলি খেয়েছিল– এই জায়গাটায় মেডিকেল কলেজের হোস্টেল তখন ছিল– মানে বেড়ার ঘর টিনের চাল দেওয়া হোস্টেল ছিল– তার পাশেই সামনের রাস্তায় এই গুলিটা হয়। কাজেই ঐ জায়গায় শহীদ মিনার গড়বার প্রকল্প গ্রহণ করে এবং বাজেটে টাকা দেয়। শহীদ মিনারের নির্মাণকাজও শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এক একটা কাজ শুরু করলে তারপরেই একটা বাধা আসে। '৫৮ সালের ৭ অক্টোবর আইয়ুব খান পাকিস্তানে মার্শাল ল' ঘোষণা করে নিজেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শহীদ মিনার নির্মাণের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। আপনারা জানেন যে, বাংলা ভাষাকে কীভাবে বাদ দেওয়া যায়, তার জন্য নানা ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। এক সময় আসে আরবি হরফে বাংলা লেখা হবে, রোমান হরফে বাংলা লেখা হবে– নানা ধরনের প্রস্তাব তখন পাকিস্তানের শাসকদের কাছ থেকে আসে। আইয়ুব খানের সময়ে এল রোমান হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব। যেটার প্রতিবাদ সব সময়ে ছাত্রসমাজ করেছে। আমরাও ছাত্র হিসেবে এর প্রতিবাদ এবং আন্দোলন করেছি। এভাবে বারবার আমাদের ভাষার উপর আঘাত আসতে থাকে। আর বারবারই এদেশের মানুষ প্রতিরোধ করে থাকে।

ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই কিন্তু জাতির পিতা ৬ দফা দেন। যেটা বাংলাদেশের মানুষের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামের পথ। আর সেই ৬ দফা দেওয়ার পর তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রসমাজ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ৬ দফাসহ ১১ দফা দিয়ে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটে, তারই ফলে তিনি মুক্তি পান। '৭০এর নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করি। '৭১এর ৭ মার্চ তাঁর যে ঐতিহাসিক ঘোষণা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে– ঐ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অর্থাৎ তখন ওটা রেসকোর্স মাঠ ছিল– সেখানেই তিনি 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম' সেই ঘোষণা দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং গেরিলা যুদ্ধের জন্য সকল প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তাঁর আহ্বানে তখন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা– যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতন হয়– ইয়াহিয়া খান সরকার গঠন করে। কাজেই তার বিরুদ্ধে আবার এদেশের মানুষ রুখে দাঁড়ায়। বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এই অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাই। পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা শুরু করে এবং যে মুহূর্তে তারা আক্রমণ চালায়, ঠিক তার পরপরই জাতির পিতা ছাব্বিশে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করি।

আজকে একটা জিনিস আমরা লক্ষ্য করছি, পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। তারা এই কিছুদিন আগে একটি পুস্তক বের করে। পঁচিশে মার্চ থেকে তারা যে গণহত্যা শুরু করেছিল সেই গণহত্যার ছবিগুলিতে তারা– এই হত্যাকাণ্ড যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী শুরু করেছিল এবং তাদের সঙ্গে পরবর্তীতে যোগ দেয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী– এদেশীয় কিছু কুলাঙ্গার– কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমরা এখন দেখতে পারছি তারা নতুনভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ঐ গণহত্যার ছবিতে– সেগুলি মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছে বলে সেই ক্যাপশন দিয়ে তারা সেই রিপোর্ট তৈরি করে সব জায়গায় বিলি করার চেষ্টা করছে।

আমি মনে করি যে, এখন আমরা স্বাধীন দেশ। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সেই সময়ে এই ধরনের অপপ্রচার তারা করে যাচ্ছে, এটা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

তাই পঁচিশে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আমাদের গ্রহণ করা– এ ব্যাপারে আমি মনে করি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কারণ সে সময়ে জঘন্য ঘটনা তারা ঘটিয়েছিল– দিনের পর দিন এ দেশের মানুষকে তারা হত্যা করেছে– আমাদের ত্রিশ লক্ষ শহীদ জীবন দিয়েছে, দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত গিয়েছে– এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশে কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা, কোনো কোনো দলের নেতা– আমি নাম ধরেই বলতে চাই, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে বলেছিলেন যে, ত্রিশ লক্ষ শহীদ মৃত্যুবরণ করেনি, শাহাদাতবরণ করেননি, এ সংখ্যা নাকি ঠিক নয়। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে? এর থেকে জঘন্য কথা হয়তো আর কিছু হতে পারে না।

আমার মনে হয় যে, পাকিস্তানিদের এই অপপ্রচার আর তার এই বক্তব্যে কোনো সূত্র আছে কিনা। আমি জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ঐ একই সুরে তিনি কথা বলার চেষ্টা করছেন। শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা এবং শহীদের প্রতি অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কখনও পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে কত গণহত্যা হল সেটা সবাই দেখে না। কিন্তু গণহত্যা যে হয়েছিল এবং কত মানুষ যে মারা গিয়েছিল সেটার চিহ্ন তো আজকে সমগ্র বাংলাদেশে। বাংলাদেশের প্রায় এমন কোনো পরিবার নেই যে পরিবারের কেউ না কেউ জীবন দিয়েছেন।

কাজেই মুক্তিযুদ্ধে কত জন শাহাদাতবরণ করেছে আর দেশের ভেতরে অভ্যন্তরে কীভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছিল, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করা হয়েছিল, প্রত্যেকের সেই ঘটনাগুলি জানা আছে। অন্তত সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা বাঙালি জাতির প্রতি চরম অবমাননা। যে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তার প্রতি চরম অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়।

যাহোক, আমরা '৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি সে সময়ে আমরা দেখলাম, কানাডা-প্রবাসী আমাদের দেশের কিছু মানুষ, কয়েকজন মিলে, তাঁরা একটা কমিটি করে সেটা হচ্ছে 'ভালোবাসি মাতৃভাষা'। এই কমিটিতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ছিলেন এবং আমাদের বাংলাদেশেও প্রতিনিধি ছিলেন রফিক আর সালাম নামে দুই ভদ্রলোক। তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন এবং তাঁরা জাতিসংঘে একটা আবেদন করেছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য। জাতিসংঘ সাধারণত কোনো সদস্য দেশের প্রস্তাব ছাড়া গ্রহণ করে না।

এই কথাটা যখন সালাম এবং রফিক দুজন আমাকে জানালেন এবং তখন আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন সাদেক সাহেব, সঙ্গে সঙ্গে সাদেক সাহেব আমাকে বললেন যে, আমাদের দেশের পক্ষ থেকে আমরা এটা আবেদন করব। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিসংঘে আবেদন জানাই। ইউনেস্কোতে আমাদের প্রস্তাব পাঠাতে হয়, আমরা প্রস্তাব পাঠাই। প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। একুশে ফেব্রুয়ারির সমস্ত ঘটনা আমরা তুলে ধরি। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে আমরা এই সকল তথ্য প্রেরণ করি। আমাদের প্রত্যেকটা দেশের দূতাবাসকে আমরা নির্দেশ দিই সেই দেশের যাঁরা প্রতিনিধি অথবা দেশের সরকার অথবা অন্যান্য যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।

আমরা সত্যি আনন্দিত যে, তাদের এই উদ্যোগটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই উদ্যোগটায় গুরুত্ব দিয়েই আমরা যে প্রস্তাবটা প্রেরণ করি, এই প্রস্তাব ১৭ নভেম্বর '৯৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ইউনেস্কোর যে সম্মেলনটা হয়, সেই সম্মেলনে ভোটাভুটি হয় এবং আমরা ভোটে জয়ী হই। বলতে গেলে, আসলে সকলেই আমাদের সমর্থন করে। এভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা হল, যেহেতু এটা আমাদের প্রস্তাবে এসেছে এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা একদিকে যেমন শহীদ দিবস হিসেবে পালন করি,–কিন্তু আজকে এটা আমাদের একটা মর্যাদার বিষয়ও। আপনারা জানেন যে, জাতির পিতা যখন স্বাধীনতার পর প্রথম জাতিসংঘে ভাষণ দিতে যান তখন বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমিও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যতবারই জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি প্রতিবার বাংলা ভাষায়ই আমার ভাষণ দিয়ে থাকি। এই ভাষা আমার মাতৃভাষা, আমরা রক্ত দিয়ে এটা অর্জন করেছি। কাজেই এই ভাষার মর্যাদা আমাদের অবশ্যই দিতে হবে।

আমরা সারাবিশ্বের মাতৃভাষা যাতে হারিয়ে না যায়, আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাও যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য উদ্যোগ নিই। একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট গড়ে তুলি। সেটার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনে তখনকার জাতিসঙঘের মহাসচিব কফি আনান আমার আমন্ত্রণে ঢাকায় আসেন। আমরা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ভিত্তিপ্রস্থরটা স্থাপন করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ২০০১ সালের পর আমরা সরকারে আসতে পারিনি। তখন মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় আসে, যথারীতি তারা সেটা বন্ধ করে দেয়।

আমাদের সৌভাগ্য যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোট পেয়ে যখন আবার সরকার গঠন করি, ২০০৯ সালে আমরা এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে বিভিন্ন দেশের ভাষা, মাতৃভাষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, গবেষণার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বিভিন্ন যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি এবং অনেকে এখানে গবেষণা চালাচ্ছেন। বহু দেশের হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষার স্ক্রিপ্ট এবং অন্যান্য তথ্য আমরা ধীরে ধীরে সংগ্রহ করে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটটাকে পরিচালনা করে যাচ্ছি।

আমাদের একটি কথাই বারবার মনে হয়– বাঙালি জাতির যখন যা কিছু অর্জন– অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের অর্জন করতে হয়। কিন্তু সেই অর্জনগুলো আমাদের ধরে রাখতে হবে। কোনো মতেই যেন এই অর্জনগুলি কেউ আবার ভবিষ্যতে নস্যাৎ করতে না পারে, সেদিকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আজকে যাঁরা আমাদের একুশে পদক পেয়েছেন, গুণীজন, আমি তাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। কারণ গুণীজনদেরকে সম্মান করা, তাদের কদর দেওয়া– এটা আমাদের আমি মনে করি যে, জাতি হিসাবে একান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তো এদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তারাও শিখবে।

আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে– খেলাধুলা থেকে শুরু করে গবেষণা– সমস্ত বিজ্ঞানচর্চা থেকে– সর্ব ক্ষেত্রেই আমাদের যে মেধা, তা বিকাশের সুযোগ পাবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম– আমাদের ইতিহাস তাদের জানাতে হবে– গৌরবের ইতিহাস যে, আমরা রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছি– রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই চেতনা যেন কখনও নস্যাৎ হয়ে না যায়।

আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারও কাছে মাথা নত না করা, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না। আমাদের যতটুকু সম্পদ– যেটা জাতির পিতা বারবার বলেছেন– সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আপন মহিমায় গৌরবান্বিত হব, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এদেশের মানুষের জন্য সব দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

কাজেই আগামী প্রজন্মকেও আমি সেই আহ্বানই জানাব যে, নিজেদের এভাবেই প্রস্তুত করতে হবে যে, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসাবে বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে চলব। আর আমাদের গুণীজন– আজকে আমরা হয়তো সকলকে পুরস্কৃত করতে পারছি না– কিন্তু তারপরও যতজনকে আমরা পেরেছি– এরই মধ্য দিয়ে প্রেরণাশক্তি এবং মেধার যে মনন– তার চর্চার একটা উৎসাহ যোগাবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে, সেটাই আমরা মনে করি।

সবাইকে আবার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা চাই আমাদের দেশটা একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্যের হাত থেকে– মাদকাসক্তের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, সম্মানিত জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় যেন আমরা চলতে পারি। সেভাবেই আমরা এই দেশকে গড়তে চাই।

একুশ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে– মাথা নত না করার, আপন মর্যাদায় এগিয়ে চলার– সেই এগিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে, আবারও যারা পুরস্কারপ্রাপ্ত তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য এখানে শেষ করছি।

খোদা হাফেজ।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।