প্রশ্নপত্র ফাঁস: বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

ইমতিয়ার শামীম
Published : 24 Feb 2017, 01:01 PM
Updated : 24 Feb 2017, 01:01 PM

শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই নতুন বইপুস্তক হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছে কলহাস্যে মুখর শিশু-কিশোর-ছাত্রছাত্রীরা– এই আনন্দ ও স্বস্তি স্পর্শ করেনি এমন কেউ কি আছেন? আমরা, বাংলাদেশের মানুষজন, খুব অল্পেই খুশি হই। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বছরের শুরুতেই নতুন পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা মোটামুটি কার্যকর করে আমাদের খুশি করেছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা জন্মেছিল।

এমন নয় যে, এতে শিক্ষার মান খুব বেড়েছিল, শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছিল, প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি-অনিয়ম মুক্ত হয়েছিল কিংবা বেড়েছিল শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ ও মর্যাদা; কিন্তু এককথায় আমাদের অনেকের বিশ্বাস জন্মেছিল, সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর আন্তরিকতা রয়েছে, নিশ্চয়ই আমরা আমাদের 'দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার' পেরুতে পারব। তাই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটা মাধ্যমিক-প্রাথমিক পর্যায়কে স্পর্শ করার মধ্যে দিয়ে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকলেও আমাদের অনেকেই সেই বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে চেষ্টা করেছেন খুশি থাকতে, চেষ্টা করেছেন শিক্ষামন্ত্রীর হয়ে সাফাই গাইতে। শেষমেষ শিক্ষামন্ত্রী যে গত বছর অনেকটা খরখরে গলায় বলে বসেছিলেন, "প্রশ্নপত্র ফাঁস কীভাবে সামলাব? …আমরা তো স্কুলে স্কুলে পাহারা বসাতে পারব না।"

সে কথাও তাদের গায়ে লাগেনি। তারাও বলেছেন, তাই তো, তার পক্ষে কি সম্ভব এটা ঠেকানো? এ জন্যে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে…ইত্যাদি, ইত্যাদি।

তবে স্তাবকেরা যা-ই বলুক না কেন, শিক্ষামন্ত্রীকে এখন সত্যি-সত্যিই ভাবতে হবে, যেটুকু আশাবাদের তিনি জন্ম দিয়েছিলেন, যেটুকু আস্থা তাকে ঘিরে মানুষের জন্মেছিল, সত্যিই মানুষের মনে সেসবের কিছু অবশিষ্ট আছে কি না।

পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপার আগেও ঘটেছে, কিন্তু গত কয়েক বছরে তা বিস্ময় আর সহ্যের সীমাও অতিক্রম করেছে। অভিভাবক হিসেবে নিজে একবার বিষয়টি চিন্তা করে দেখুন, সারা বছর সততার সঙ্গে সন্তানকে পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুত করেছেন, সে নাক-মুখ গুঁজে লেখাপড়া করেছে, কিন্তু পরীক্ষার দিন সে জানতে পারছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তারই কোনও সহপাঠী 'ভালো' পরীক্ষা দিয়েছে। জানতে পারছে, তার সেই সহপাঠীরই হয়তো অভিভাবক, হয়তো শিক্ষক, হয়তো কোনও নিকটজন এর ব্যবস্থা করেছেন!

এরপর তার বিশ্বাস বা আস্থার কি কোনও জায়গা আর অবশিষ্ট থাকে? শুধু এটুকুই নয়, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, চলমান শিক্ষামন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে 'জিপিএ-৫' নামের প্রজন্ম একটি অন্তঃসারশূন্য প্রজন্ম হয়ে বেড়ে উঠছে; বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোয় যার স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটছে। আর এবার বিদ্যালয় পর্যায়ের নতুন পাঠ্যপুস্তকগুলোও আমাদের জানাচ্ছে, চকচকে মোড়কে পশ্চাৎপদ ও রদ্দিমার্কা শিক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তোলার প্রস্তুতিও প্রায় শেষ।

এই পশ্চাৎপদতার উপযোগী অনৈতিকতা তো নির্মাণ করা হয়েছে আরও আগে, প্রতি বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসকে একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করার প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অন্ততপক্ষে তিনটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে; অথচ শিক্ষামন্ত্রী এখনও বলছেন, প্রমাণ পেলে ওই পরীক্ষা বাতিল করা হবে। এর সহজ অর্থ একটাই, গণমাধ্যমগুলো মিথ্যা বলছে, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যেহেতু এসব মিথ্যা, যেহেতু এসব গুজব, অতএব আপনাদের প্রতিবাদ, অনুযোগ, লেখালেখি সব কিছুই অর্থহীন!

কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারটি নিম্নকণ্ঠে স্বীকার করা হলেও এর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কেবল শিক্ষকদের ওপর। অথচ যে সমন্বিত চক্র শিক্ষকদের একাংশকেও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছে, তাদের ব্যাপারে তারা ভয়াবহ রকম নীরব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বটেই, গ্রহণযোগ্য অনলাইন সংবাদমাধ্যমেও হাতেনাতে দেখানো হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে,এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত সেরকম স্ক্রিনশটও মিলছে। হয়তো তা এই প্রক্রিয়ার একটি খণ্ডিত চিত্র, কিন্তু সরকার আন্তরিক হলে এই সূত্রটুকু থেকেই কি সম্ভব নয় এর মূলোৎপাটন করা?

এখন শোনা যাচ্ছে, প্রশ্নপত্র ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন এক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর তা কার্যকর করা হবে আগামী এইচএসসি পরীক্ষার সময় থেকেই। অদ্ভূত নতুন এই ডিজিটাল পদ্ধতিটা এমন, পরীক্ষার দিন সকাল ৭টায় শিক্ষাবোর্ডগুলো তাদের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সংশোধন ও চূড়ান্ত করবেন। প্রশ্নপত্রের চারটি সেট করবেন তারা। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকবে কেন্দ্রসচিবের তত্ত্বাবধানে একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি মডেম এবং একটি আইপিএস থাকবে। পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে, সকাল সাড়ে ৯টায়, শিক্ষাবোর্ডে লটারি করে প্রশ্নপত্রের সেট নির্বাচন করা হবে। তারপর তা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান ই-মেইল করে সবগুলো পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেবেন। প্রশ্নপত্র উন্মুক্ত করার পাসওয়ার্ড বা কোড থাকবে প্রত্যেক কেন্দ্রসচিবের কাছে। তিনি তার ল্যাপটপে ই-মেইল খুলে কোড উন্মুক্ত করে সঙ্গে সঙ্গে সেটি প্রিন্ট করিয়ে নেবেন এবং বিতরণ করবেন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। যাকে বলে, একেবারে নিঃশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা– প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে কোত্থেকে?

সময় দিতে রাজি নয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এর কর্মকর্তারা চাইছেন এ ধরনের প্রক্রিয়াটি আগামী এইচএসসি পরীক্ষার সময় থেকেই কার্যকর করতে। তার মানে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় হাতে আছে আমাদের। নতুন কোনো ব্যবস্থা চালু করতে গেলে সাধারণত নমুনা পরীক্ষা করা হয়, পাইলট প্রকল্প করা হয়। এক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রক্রিয়াতেও যেতে চাইছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একটি ব্যবস্থার সম্ভাব্যতা যাচাই করার আগেই সেটি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্তই বলা চলে।

যত না সমস্যার সমাধান, তারও বেশি চমক সৃষ্টি করার এই উদ্যোগ আসলে কতটুকু কাজে লাগবে? সারা দেশে এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র কমবেশি আড়াই হাজার। এর সব কেন্দ্রেই কি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে? আর থাকলেও তা কি নিরবচ্ছিন্ন? প্রশ্নপত্রের কোড খোলার বা তা মুদ্রণের সময় সংযোগ চলে গেলে কী হবে? কেন্দ্রসচিব প্রযুক্তি ব্যবহারে কতটুকু দক্ষ? কিংবা তিনি না হলেও দায়িত্বশীল এমন কেউ কি আছেন যিনি আইসিটিতে বা ই-মেইল ব্যবহারে দক্ষ? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই আমাদের।

কয়েকদিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যারা বৈঠক করেছেন, আমাদের বিশ্বাস, তারা নিশ্চয়ই এসব ভেবেচিন্তেই প্রশ্নপত্র ব্যবস্থাপনার নতুন উদ্যোগের দিকে এগুচ্ছেন। তারা নিশ্চয়ই ভেবে দেখেছেন, এ জন্যে কয়টি ল্যাপটপ, প্রিন্টার্স, মডেম ইত্যাদি কিনতে হবে আর এসব ক্রয়বাবদ কত টাকা বরাদ্দ করা হবে, কাজের দরপত্র কারা পাবে। অথচ এসবের আগে উচিত ছিল, সর্ষের ভূত খুঁজে বের করা। কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে গত কয়েক বছরে বার বার যার বা যাদের সংযোগের আলামত মিলেছে, তার বা তাদের একটি রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে এবং খুব স্পষ্ট করেই বলা যায়, এটি একটি রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। তাতে শিক্ষার গলায় ফাঁস পরলে তাদের কিছু আসে যায় না, প্রশ্নপত্র তারা ফাঁস করবেই, কেননা রাজনৈতিক শক্তি তাদের সহায়।

আমরা যদি সেই রাজনৈতিকতাকে পাশ কাটিয়ে যাই, এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সংযোগের দিকটি এড়িয়ে যাই, তা হলে যে কোনো উদ্যোগই ব্যর্থ হতে বাধ্য।

আমার বক্তব্য খুবই পরিস্কার, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি এখন পুরোপুরিই রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। তাই তা বন্ধ হবে কি না, তা-ও একটি 'রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের' বিষয় হয়ে উঠেছে।

কয়েকদিন আগে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, "সরকার চাইলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যায়। সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হত না।"

তাঁর এ কথায়ও অনুমান করি, ওই রাজনৈতিক যোগসূত্রেরই ইঙ্গিত রয়েছে। তা ছাড়া একটা কথা আছে,'বজ্রআটুনি ফস্কা গেরো'— সেই কথার সূত্রেই প্রশ্ন জাগে, পরিকল্পিতভাবে একটি কেন্দ্রের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সংযোগ রয়েছে এমন একটি স্থানে বসে পরিকল্পিতভাবে জেনে নেওয়া পাসওয়ার্ড বা কোড ব্যবহার করে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ডিজিটালি কায়দায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করা কি বিজি প্রেস থেকে বা পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রশ্ন হাতিয়ে নেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি সহজ নয়?

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে, এ কথাটিকে অনেকে হয়তো রাজনৈতিক বলেই বিবেচনা করা হবে। কিন্তু সরকারের নিকটবর্তী সব সূত্র কথা থেকেই এমন অনেক কথা বেরিয়ে আসছে, যা থেকে স্পষ্ট, কেবল প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়, সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাতকে, বিশেষত প্রাথমিক-মাধ্যমিক খাতকে ঘিরে যা কিছু ঘটেছে তা আপাতদৃষ্টিতে দুর্নীতি-অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদির ফসল বলে মনে হলেও সেসবের সঙ্গে রাজনৈতিক খেলা জড়িয়ে আছে।

পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নকে ঘিরে যে কেলেঙ্কারি ঘটে গেছে, তাকে কিছুতেই কেবল অব্যবস্থাপনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একজন প্রভাবশালী শিক্ষক মাঝেমধ্যেই আক্ষেপ করে বলেন, "বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শিক্ষানীতিতে চারুকলা ছিল আবশ্যিক, আর আওয়ামী লীগের সময়ে চারুকলা হয়েছে ঐচ্ছিক!"

শিক্ষানীতির এমন বাকবদলকে যদি কেবল অদূরদর্শিতা বা অসতর্কতা বলা যায়, তা হবে মারাত্মক ভ্রান্তি। নিশ্চয়ই সরকারি দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও সংস্কৃতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে; আগে এসব পরিবর্তনগুলো ছিল অসংবদ্ধ অবস্থায়, কিন্তু এখন ক্রমশই বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে সংবদ্ধ রূপ পাচ্ছে এবং তার রাজনৈতিক দিকগুলোও তাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ডামাডোলের মধ্যে কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষায় সুশাসন নিশ্চিত করা সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মন্তব্য করেছেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পর্কে তাদের কাছে পাহাড়সমান অভিযোগ জমা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে, আবার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রকৃত ফলাফল বদলে দেওয়া হচ্ছে।

প্রতি বছর প্রায় শত ভাগ ছাত্রছাত্রী পাশের রেকর্ড তৈরি করার যে আত্মতৃপ্তিতে এই সরকার ভুগছে, তা আসলে কোন অনৈতিকতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার খানিকটা ইঙ্গিত মিলছে দুদক চেয়ারম্যানের এসব কথা থেকে। এসবের পাশাপাশি রয়েছে আরও অনেক অনিয়ম, যা একজন শিক্ষককে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলার জন্যে যথেষ্ট।

একজন শিক্ষককে যখন পেনশনের কাগজপত্র প্রস্তুতের জন্যে হয়রান হতে হয়, প্রাপ্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অনৈতিক সুবিধা দিতে হয়, একজন নারী শিক্ষককে যখন মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্যে বারবার ধর্ণা দিতে হয়, প্রশিক্ষণের তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্যেও কৃপা প্রার্থনা করতে হয়, তখন তাকে আমরা আসলে দায়িত্বহীন, দুর্নীতিপরায়ণ ও সুবিধাভোগী হওয়ার জন্যেও প্রস্তুত করে ফেলি। দুদকের পক্ষ থেকে এর চেয়ারম্যান বলেছেন, আরও তিন মাস দেখবেন তারা, তারপর এখানেও হাত দেবেন তারা। কিন্তু এই তিন মাস কয় মাসে গিয়ে ঠেকবে তা কেউ জানে না।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, পরীক্ষায় নকল করার ছড়াছড়ি আমাদের বাকরুদ্ধ ও আশঙ্কিত করেছে। এখন তা বন্ধ হয়েছে বটে, কিন্তু যেনবা তারই পুনরাবির্ভাব ঘটেছে নতুন রূপে, আরও ভয়াবহতা নিয়ে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্যে দিয়ে। এখন আর কেবল ব্যক্তি শিক্ষার্থী নয়, এখন এই সর্বনাশা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক চক্র এবং শিক্ষক-অভিভাবকদেরও অনেকে। এখন এর মূলোৎপাটন করতে গেলে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনাকারীদের, নীতিনির্ধারকদের নিজেদেরই যে অন্তঃক্ষরণের শিকার হতে হবে। তাই বোধ করি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে।