ভিনদেশে ছাত্রশিবির: কিছু দালিলিক প্রমাণ

বিজন সরকার
Published : 24 Jan 2017, 04:40 AM
Updated : 24 Jan 2017, 04:40 AM

গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত 'ভিনদেশেও ছাত্রশিবিরের অপতৎরতা' শীর্ষক নিবন্ধটি দেশে-বিদেশে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক সাড়া জাগায়। লেখাটি ১৫ হাজারের বেশি শেয়ার হয় এবং অনেক পাঠক এতে মন্তব্য করেন। এতে বোঝা যায়, লেখাটি সাধারণ পাঠক সাদরে গ্রহণ করেছে।

তবে গোমর ফাঁস হওয়ায় জামায়াত-শিবিরের ঘরে ঘরে চলছে আস্ফালন, বিশেষকরে জাপান ও কোরিয়ার জামায়াত শিবিরের ডেরাগুলোতে সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গে লেখকদ্বয়কে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া ও হেনস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

লেখাটিতে উল্লেখিত কোরিয়ার বাংলাদেশি ছাত্র সংগঠনের ফেসবুক গ্রুপ পেইজে লেখকদের একজনকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, সাম্প্রদায়িক মন্তব্য, লেখকের লেখার সমালোচনা করার দাবি করায় নারী সদস্যের প্রতি অবমাননাকর উক্তি করা হয়।

প্রসঙ্গত, লেখকদের একজন সংগঠনটির শুরুর দিকের একজন সদস্য। 'আ' আদি অক্ষর যুক্ত একজন গ্রুপ অ্যাডমিন গালাগালিতে অংশগ্রহণ করেন। যারা গালাগালিতে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের অনেকেই সরাসরি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত; অনেকেই আবার নীরব সমর্থক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

আমাদের যুক্তি ছিল, লেখাটির কোনো অংশে অস্পষ্টতা কিংবা অসংলগ্নতা থাকলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবাদলিপি পাঠাতে। সংগঠনটির ফেসবুক পেইজের অ্যাডমিন প্রথমেই জানিয়ে দেন, যদি লেখক ক্ষমা না চান এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লেখাটি প্রত্যাহার না করে, তাহলে লেখককে আজীবন সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লেখক অ্যাডমিনদের ও কতিপয় সদস্যকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার বললেও তাতে কাজ হয়নি। গালিগালাজ ও অশ্রাব্য ভাষার প্রয়োগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

লেখক তাঁর অবস্থান থেকে না সরলে পেইজটির অ্যাডমিনরা জানালেন যে, তারা প্রকাশিত নিবন্ধে সংগঠনটি সম্পর্কিত কিছু তথ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কোরিয়ার ডানপন্থা সমর্থিত একটি ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন।

কিন্তু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অফিসে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো প্রতিবাদলিপি আসেনি বলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানাচ্ছেন। তবে সংগঠনটির প্রতিবাদলিপিটি জামায়াত-শিবিরের 'বাঁশেরকেল্লা'সহ অন্যান্য অনলাইন পেইজগুলিতে দেখা যায়। এমনকি গ্রুপ পেইজে প্রতিবাদলিপিটি পোস্ট হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই কোরিয়ার ভূঁইফোড় ডানপন্থী পোর্টালটিতে ও বাঁশেরকেল্লায় দেখা যায়। কয়েক ঘণ্টা পরে বাঁশেরক্কেল্লা সেই প্রতিবাদলিপি থেকে সরিয়ে নেয়। তবে গ্রুপে অ্যাডমিনরা জানান যে, প্রতিবাদলিপিটি তাদের কেউ পাঠায়নি।

এরপরও আমরা স্ব-উদ্যোগে কোরিয়া ও জাপানের জামায়াত-শিবিরের নীরব উত্থান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর, দাললিক প্রমাণ ও পাঠক প্রতিক্রিয়া সাধারণ পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই।

'ভিনদেশেও ছাত্রশিবিরের অপতৎপরতা' লেখাটি যখন লিখেছিলাম তখন আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে ছিল। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় আমরা 'অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রমাণ' ও 'ব্যক্তির নাম' প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলাম। লেখাটির প্রধান উদ্দেশ্যেই ছিল নাম প্রকাশ করে কারও মানহানি না করে কেবল বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ মহলকে সতর্ক করা।

দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিতে কিংবা ব্যবসা ও চাকরি করতে এসে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত অপরাধীদের মতো কেউ যেন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে। আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল– যারা বিপথে হাঁটছেন, তাদের পথটাকে বন্ধুর করে দেওয়া; যেন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ও দেশের সম্মানের কথা বিবেচনা করে উগ্রবাদের পথ থেকে তারা সরে আসে।

আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সেটা করতে সফল হয়েছি। হাজার হাজার পাঠকের শেয়ার, কমেন্ট আর লেখকদ্বয়কে ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো খুদেবার্তা বড় পাওয়া। আর সেই সঙ্গে বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস অবহিত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসও স্বীকার করে নিয়েছে, কোরিয়ায় প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে উগ্রবাদের চাষাবাদ হচ্ছে।

কিন্তু লেখাটিতে যারা স্তম্ভিত সেই জামায়াত-শিবিরের অবিরত গুজব লেখকদ্বয়ের নজরে এসেছে। আমরা তাদের সেই গুজবের জবাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে তুলে ধরা সচেতন লেখক হিসেবে দায়িত্ব বলে মনে করি।

লেখাটি প্রকাশের পর জাপানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে পোস্ট এবং ব্যক্তিগত বার্তা দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, লেখক নাদিম মাহমুদ লিখেছেন, "জাপান সরকারের বৃত্তি 'মনবুশো' পেয়ে যেসব শিক্ষার্থী আসছে তারা সবাই জামায়াত-শিবিরকর্মী।" তারা আরও ছড়াচ্ছে, এতে করে "টোকিওস্থ বাংলাদেশের দূতাবাস এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।" আর এ কথা বলে সাধারণ বাঙালিদের ভুল বুঝিয়ে লেখকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমরা এ ধরনের গুজবের উত্তরে বলব 'না'। জাপানে যারা আসছে তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের কর্মী নন। এমনকি আমরা পূর্বের লেখাতেও তা বলার চেষ্টা করেছি। আমরা সেখানে বলেছি, 'মনবুশো' পেয়ে যারা আসছেন, তাদের মধ্যে একটি অংশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী কিংবা জামায়াত-শিবিরের আদর্শে অনুপ্রাণিত।

আমরা 'মনবুশো' স্কলার নির্বাচন করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি; বোঝাতে চেয়েছি যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই হয়তো কিছু ব্যক্তি জামায়াত-শিবিরকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, 'মনবুশো' স্কলার নির্বাচনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর স্নাতক, স্নাতকোত্তর-পিএইচডি ও বিশেষায়িত প্রযুক্তিবিদ্যায় অধ্যয়নের সুযোগের জন্য ৫০ জন করে মোট দেড়শ জনের আবেদন চাওয়া হয়। পরবর্তীতে এই আবেদনপত্র মন্ত্রণালয় যাচাইবাছাই করে ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসে পাঠায়।

আমাদের অভিযোগটি এমন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের 'বৃত্তিশাখা'র কোনো কোনো কর্মকর্তা 'মনবুশো' স্কলারশিপের আবেদনপত্র যাচাইবাছাইয়ে সুকৌশলে শিবির সমর্থকদের এগিয়ে রাখেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তালিকা থেকেই ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাস আবেদনপত্র স্ক্রিনিং করে চূড়ান্ত করে। আমরা এ-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহনাজ সামাদের কাছে ইমেল করেছি। আমরা কোনো ফিরতি বার্তা পাইনি। আমরা বলছি যে, দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে এসে অনেকেই উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বিষয়গুলো সরকারের গোচরে আনা। ফলে আমাদের লেখাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে যে অভিযোগ জামায়াত-শিবির আনছে সেটি ঠিক নয়; বরং দেশের ভাবমূর্তি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একজন সম্মানিত পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় জাপানের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একই চিত্র পাওয়া যায়। উনি প্রয়াত বিচারপতি কে এম সোবহানের মেয়ে। তাঁর প্রতিক্রিয়া লেখক বিজন সরকারকে ইন-বক্সে জানিয়েছেন। উনি ১৪ বছর জাপান ছিলেন; বর্তমানে কানাডাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

কোরিয়ান সরকারি বৃত্তির ক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থান একই। আমরা বলতে চেয়েছি, 'কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম' (সংক্ষেপে 'কেজিএসপি') স্কলারশিপ নিয়ে যারা এখন আসছেন, তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কেজিএসপিতে বেশি দেখা যেত। অনেকেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেজিএসপি যে কেবল সিজিপিএ-ভিত্তিক নয় তা বোঝাতে চাচ্ছেন। কোনো স্কলারশিপই কেবল সিজিপিএ-ভিত্তিক নয়, অন্যান্য মাপকাঠি ব্যবহার করা হয়। তবে কোনো অ্যাকাডেমিক জ্ঞান মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর সিজিপিএ একমাত্র না হলেও প্রধান মানদণ্ড; অন্তত শিক্ষা মনোবিজ্ঞান তা-ই বলে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রেড প্রদানের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনার অধিকতর কঠোর বলেই আমরা মনে করি। প্রসঙ্গত, লেখকদের একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

অধিকন্তু, মানসম্পন্ন নয় বাংলাদেশের এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আমরা উল্লেখ করেছি। দেশের বিভিন্ন মূলধারার গণমাধ্যমে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও উগ্রবাদের প্রতি উদাসীন থাকার অভিযোগ বহুবার উঠেছে। আমাদের আরেকটি পয়েন্ট ছিল যে, কেজিএসপিতে এখন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও সংগঠনটির আদর্শে অনুপ্রাণিতদের আসতে দেখা যাচ্ছে এবং সেটির সংখ্যা নেহাত কম নয়। এরা খুব কৌশলে উগ্রবাদ প্রচার করছে। নিচের স্ক্রিনশটটি একজন কেজিএসপি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।

জাপানের অভ্যন্তরীণ 'কালচারাল একচেঞ্জ' নীতি অনুযায়ী বিদেশি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নামে কার্যক্রম সরাসরি করা যায় না বলে জানা যাচ্ছে (তথ্যটি পুরোপুরি নিশ্চত করা সম্ভব হয়নি)। তবে আমরা লক্ষ্য করছি, ছায়া নাম ব্যবহার করে জাপানে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তারা এখন 'সেভ হিউম্যানটি ইন বাংলাদেশ', 'ইসলামিক মিশন', 'ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন' নাম দিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এ নামগুলো ব্যবহার করার পেছনে তিনটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, জাপান সরকারের নীতি মেনে চলা; দ্বিতীয়ত, গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং তৃতীয়ত, সাধারণ প্রবাসী বাঙালিদের এসব সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের পতাকা তলে নিয়ে আসা।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় এ সংগঠনগুলোর ব্যানারে জাপানের রাস্তায় জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে জাপানিজ ও বাংলা ভাষায় পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চাওয়া হয়; বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার নামে কুৎসা রটানো হয়। "আমরাই কাদের মোল্লা", "গৃহপালিত অবৈধ ট্রাইব্যুনাল" "বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ কর" ও "গোলাম আজমের মুক্তি চাই" লেখাসংবলিত বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড ব্যবহার করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে জাপানিদের কাছে বাংলাদেশ সরকারকে অসম্মান দেখানোর চেষ্টা করতে জামায়াত-শিবিরকে দেখা যায়। জাপানিজ ভাষায় নানা প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে জামায়াত-শিবির। 'সেভ ইন হিউমানিটি' সংগঠনটি বিভিন্নভাবে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশে উগ্রতার মতোই টোকিওর এই সংগঠনটির আড়ালে জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম সামলাতে অনেক সময় হিমসিম খেতে হয় জাপানি পুলিশের। তাদের প্রতিবাদে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা বহু শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে দেখা যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমরা আগের লেখায় জোর দিয়ে বলেছিলাম, "ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তারা জাপানে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজের সুযোগ কিংবা কারিগরি কলেজগুলোতে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়ে দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদেরও জাপানে আনছে। এই ব্যবসায়ীদের সিংহভাগই গাড়ি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত।"

লেখার এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে বিভ্রান্তি রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাই সম্মানিত ব্যবসায়ীদের ছোট করার উদ্দেশ্যে এটা লেখা হয়নি। বরং 'গাড়ি ব্যবসায়ী' পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা হতে পারে। আমাদের ব্যবসায়ীদের যাতে ক্ষতি না হয় কিংবা তাদের কেউ ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য ওই লেখায় সর্তক করা হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরের সমর্থক গোষ্ঠী 'গাড়ি ব্যবসায়ী' নাম করে উগ্রবাদে উসকানি দিচ্ছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর সেগুলোর প্রমাণ মেলে তখনই যখন জাপানের জামায়াত শিবিরের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সংবাদ জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত 'দৈনিক সংগ্রাম', যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মীর কাসেমের অর্থপুষ্ট 'নয়া দিগন্তে' দেখা যায়।

চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের ফাঁসির পর গত ৪ সেপ্টেম্বর সায়তামা সিটির কসিগাওয়ার এক রেস্টুরেন্টে যে গায়েবানা জানাযার আয়োজন করা হয়েছিল; এর নেতৃত্ব দেয় 'সেভ হিউম্যানিটি ইন বাংলাদেশ'। আর প্রতিবাদসভার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'জাপান-বাংলাদেশ' পেইজটি প্রচারের কাজে ছিল। এ সংগঠনটির পেছনে রয়েছে জামায়াত-শিবিরের ব্যবসায়ীরা। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে জাপানের একটি জামায়াত-শিবিরের 'প্রবাসে বাংলাদেশ ডটকম' নামের অনলাইন পোর্টাল বিরামহীনভাবে উসকানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করছে। পোর্টালটির মালিক 'সংগ্রাম'-এর প্রতিবেদক হিসেবেই বিভিন্ন সংবাদে দেখা যাচ্ছে। পোর্টালটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে 'ক্যাঙ্গারু ট্রাইব্যুনাল' উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করত। এতে আদালত অবমাননার বিষয়টি ছিল সুস্পষ্ট।

শুধু তাই নয়, 'সেভ ইন হিউম্যানিটি', 'ইসলামিক কালচার ফাউন্ডেশন' ও 'ইসলামিক মিশন' যে জামায়াতে ইসলামীর জাপান শাখার ছায়া সংগঠন তার প্রমাণ মেলে 'দৈনিক সংগ্রাম''নয়া দিগন্ত'-এর খবরে। একই ধরনের খবর যখন জামায়াতে-ইসলামী বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে ওঠে তখন পাঠকদের ধারণা করতে অসুবিধা হয় না এ সংগঠনগুলোর কৃতকর্ম সর্ম্পকে।

জাপানিরা শান্তিপ্রিয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে জামায়াত-শিবিরের এ ধরনের উগ্রবাদী কর্মসূচির ফলে বাঙালিদের প্রতি জাপানিদের মনোভাবের পরিবর্তন হচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছে, জামায়াত-শিবির তো নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন নয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন এত লেখালেখি?

প্রথমেই আমরা পরিস্কার করে দিয়েছি আমাদের লেখার উদ্দেশ্য সর্ম্পকে। কে নিষিদ্ধ কিংবা কে নয়– সে বিষয়ে এখানে আলোকপাত করিনি। প্রশ্ন হল, জামায়াত-শিবির যদি রাজনৈতিক সংগঠন হয়ে থাকে, তাহলে তারা কেন মানুষকে বোকা বানানোর সংগঠনগুলোর নাম ভাঙিয়ে বিদেশে প্রচারণায় লিপ্ত থাকবে? তাদের তো নিজস্ব নাম-লোগো আছে। তাহলে কেন এই সংগঠনগুলো জামায়াতে-ইসলামীর আদর্শ প্রচারণা করবে? তাহলে কি অন্যদের মতো আমরাও বলব, যে জাপান সরকারকে বোকা বানিয়ে জামায়াত শিবির নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল করছে?

সবচেয়ে মজার বিষয় হল, দেশে থাকা অবস্থায় সুপ্ত থাকা জামায়াত-শিবিরের 'মেধা-স্কোয়ার্ড' জাপানে আসার পর 'সুপারমারিও' (জাপানিজ এনিমি) হয়ে যাচ্ছে।

'ভিনদেশেও ছাত্রশিবিরের অপতৎপরতা' নিয়ে কোরিয়াতে বেশি প্রতিক্রিয়ায় পাওয়া যায় সাধারণ ছাত্র-সংগঠনটিতে। সংগঠনটির কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য হল– ব্যক্তিসত্তা ও সংগঠন এক বিষয় নয়। ফলে সংগঠনের বাইরে কে কোন রাজনীতি দলের কর্মকাণ্ডে জড়িত, সেটি সংগঠনের দেখার বিষয় নয়।

আমাদেরব বক্তব্য ছিল, জামায়াত-শিবির কোরিয়াতে এসে নিজেদের আদর্শের বহু মানুষকে এই সংগঠনটির মাধ্যমে পেয়ে যায়। কারণ এটি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের একটি সংগঠন। এখানে সব রাজনৈতিক আদর্শের ছাত্রছাত্রীরা সদস্য। ফলে এই সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে যারা কিছুটা উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী, তাদের জামায়াত-শিবিরের সনাক্ত করতে সুবিধা হয়। আমরা সাধারণ সদস্যরা না চাইলেও সংগঠনটির মাধ্যমে তাদের আদর্শের লোকদের খুঁজতে জামায়াত-শিবির সুবিধা নেয়– এটি বললে দোষ কোথায়? এ সংগঠনটি জামায়াত-শিবিরের সমর্থক, সব সাধারণ সদস্য জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত কিংবা জামায়াত-শিবিরের আদর্শে অনুপ্রাণিত, আমরা তা বলছি না।

আমরা বলতে চাইছি যে, ব্যক্তিসত্তাটি যখন একটি সংগঠনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকেন এবং তিনি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেই ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডের একটি আদর্শিক যোগসাজশ ঘটে, একটি মিউটেশন ঘটে। এটির প্রতিফলন ও নানাভাবে আমরা দেখতে পাই। তবে সেই নীতিনির্ধারণী ব্যক্তির আদর্শিক প্রভাবের আকার কতটুকু সেটি একটি অ্যাকাডেমিক গবেষণার বিষয়। ফলে যারা ট্রেনের ইঞ্জিনের কোনো একটি অংশের ত্রুটির জন্য ট্রেনটিকে ত্রুটিপূর্ণ বলতে চাইছেন না কিংবা মেরামতের তাগিদ অনুভব করছেন না, তাদের বিবেকবোধ এবং চিন্তার জগতের সংস্কার আগে দরকার। ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং নিজেদের হারিয়ে যাওয়া অবস্থান ফিরে পাওয়ার অযথা চেষ্টা না করাই শ্রেয়। বরং সংগঠনটির সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে সংস্কারে হাত দেওয়াই জরুরি; জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী ফোরামকে মুক্ত করা জরুরি।

এই ছাত্রসংগঠনটির নীতিনির্ধারণী ফোরামে যেসব জামায়াত-শিবিরের সদস্য ছিল এবং বর্তমানে আছে, তাদের নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ কারো কাছে গোপন থাকেনি। তারাও গোপন রাখতে চায়নি। বাকি যেসব নীতিনির্ধারণী সদস্য ছিল ও আছে, তাদের রাজনৈতিক আদর্শ একটি রহস্যময় বিষয়। অনেকেই সাতেও আছেন, আবার পাঁচেও আছেন।

অনেকেই নিজেদের প্রগতিশীল ভাবতে পছন্দ করেন; অনেকেই গণজাগরণ আন্দোলনের সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কোরিয়ার রাস্তায় নেমেছেন বলে 'মার্কেটিং' করেন। আবার একইসঙ্গে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারব্যবস্থা প্রতিহত করতে চেয়েছিল, তাদের এই ছাত্রসংগঠনটির নীতিনির্ধারক করে রাখতে কিংবা একসঙ্গে কাজ করতে তাদের কোনো অসুবিধা হয়নি, এখনও হচ্ছে না। এটি নিছক ভণ্ডামি।

নীতিনির্ধারণী ফোরামে যারা ছিল, তাদের আরেকটি বড় অংশ কোরিয়ার চিহ্নিত জামায়াত-শিবিরের নেতা ও ছাত্রসংগঠনটিতে জামায়াত-শিবিরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। তাদের বিশ্বস্ত ও বাংলাদেশে অধ্যয়নকালীন বন্ধুবান্ধবদের সূত্র থেকে জানা যায়, এরা মূলত জামায়াত-শিবিরের নিরাপদ সৈনিক। সমাজে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে গোপনে জামায়াত-শিবিরের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সেসব নীতিনির্ধারক চিহ্নিত জামায়াত-শিবিরের নেতাদের সঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার এবং একসঙ্গে অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনার ছবি ও তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে।

সংগঠনটির একজন প্রাক্তন নীতিনির্ধারক শিবিরের নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি দেওয়া সময় দেশের বিচারব্যবস্থার বিরোধিতা করেছেন, দেশের নির্বাহীবিভাগের প্রধানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাষায় ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছেন। বর্তমান কমিটির এক সদস্য সেসব পোস্টে 'লাইক' দিয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন। সেই শিবিরের নেতা তার পিএইচডির গবেষণাপত্র আওয়ামী লীগের সরকারের সময় নিহতের (তার ভাষায় সরকার দ্বারা হত্যা) উৎসর্গ করেছেন। এত কিছুর পরও উনি নীতিনির্ধারণী ফোরামে থেকে সংগঠনটির দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তার ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া দুটি স্ন্যাপশট আমাদের কাছে আছে। প্রসঙ্গত, সেই নীতিনির্ধারক দেশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে এই সদস্য চলে গেলে আরেকজন শিবিরের নেতা কমিটিতে আসে। আসার পর সংগঠনটিতে পরিবর্তন স্পষ্ট আঁচ করা যায়। একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি এই সদস্যের 'এলারজি'র কারণে তা সবার নজরে আসে। সংগঠনটির ফেসবুক গ্রুপে প্রায়ই পোস্ট নিয়ে বিতর্ক দেখা দিত। জামায়াত-শিবিরের ঘাতকের বিচার বন্ধের দাবি এবং বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করে সেই সদস্য নানা পোস্ট নিজের ওয়ালে দিতেন। তার সঙ্গে সংগঠনটির বিগত সময়ের নীতি-নির্ধারকের অনেকেরেই ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তাদের মেলামেশার ছবি আমাদের হাতে রয়েছে। এই সদস্যের ওয়াল থেকে নেওয়া একটি  স্ন্যাপশট পাঠকদের জন্য দেওয়া হল সেটি ১৫ আগস্টের  প্রতিক্রিয়া–

ছাত্র সংগঠনটির বর্তমান নীতিনির্ধারণী এক সদস্যের ভূমিকা নিয়েও বহু প্রশ্ন রয়েছে। উনি সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী ফোরামে আছেন কয়েক বছর ধরেই।

'ভিনদেশেও ছাত্রশিবিরের অপতৎপরতা' লেখাটির পাঠক প্রতিক্রিয়া থেকে জানা যায় যে এই নীতিনির্ধারক সংগঠনটির ডানপন্থা মতাদর্শের প্রাক্তন নীতিনির্ধারকদের পথেই আছেন। তিনিও একইভাবে কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা, সরকার ও ভারতবিরোধী গুজব এবং ধর্মীয় উস্কানিসম্বলিত 'বাঁশেরকেল্লা', 'বিশ্বতরুণপ্রজন্ম'সহ নানা উগ্রবান্ধব পেইজের লিংক নিজের ওয়ালে শেয়ার করেন। সংগঠনটির বর্তমান নীতিনির্ধারণী ফোরামের অন্যান্য সদস্য তার নির্দেশেই চলেন– তারই একজন বিশ্বস্ত লোক বিষয়টি লেখকের একজনকে নিশ্চিত করেন। এমনকি সংগঠনটির প্রতিবাদ 'বাঁশেরকেল্লা'সহ শিবিরের অন্যান্য পেইজগুলিতে উনার মাধ্যমেই যেতে পারে, সেটিও পাঠক প্রতিক্রিয়া থেকে জানা যায়।

আমাদের লেখাটির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিউলস্থ বাংলাদেশের দূতাবাস। দূতাবাস সম্পর্কিত দুটি বিষয়ে দূতাবাস একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে। তার একটি হল 'উজং স্কলারশিপ'। বিবৃতিটির মূল অংশটি নিচের স্ত্রিনশটে দেওয়া হল।

আমাদের বক্তব্য হল, দূতাবাস যে প্রতিটি সেমেস্টারে আটজনকে নমিনেশন দিচ্ছে তাদের অ্যাকাডেমিক সিজিপিএ (শিক্ষার্থীর পূর্ববর্তী দুই সেমিস্টারের) দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে দেওয়া হোক। আবেদনকারীদের অনেকেরই ধারণা, নমিনেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। ৪.৫ এর মধ্যে ৪.৫ সিজিপিএ পেয়েও নমিনেশন পাচ্ছে না, আবার কম পেয়েও নমিনেশন পাচ্ছে– এমন ধারণা বাংলাদেশ কমিউনিটির মধ্যে রয়েছে। আমরা ২০১৫ সালের জানুয়ারি ও জুনের নমিনেশনপ্রাপ্তদের নাম ও তাদের প্রাপ্ত সিজিপিএ তালিকা দূতাবাসের কাছে চেয়েছিলাম। দূতাবাস বাংলাদেশ ও কোরিয়ার তথ্য অধিকার আইনের বরাত দিয়ে কেবল নমিনেশনপ্রাপ্তদের তালিকা দিয়েছে, সিজিপিএ-এর তালিকা দেয়নি। তবে সিজিপিএ-এর তালিকা পেলেই নমিনেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আমরা মনে করি।

দূতাবাস কোরিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটিতে উগ্রবাদের চাষাবাদ বিষয়টি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। সেটির মূল অংশও পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হল।

আমাদের লেখার মূল বিষয় কোরিয়া ও জাপানে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উগ্রবাদের চাষাবাদ। এটি সত্য যে, বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ড প্রশংসার দাবি রাখে। তবে সমস্যাটি অন্য জায়গায়। দূতাবাসের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কতিপয় নেতার সুসম্পর্ক রয়েছে বলে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আলোচনা রয়েছে। এতে করে দূতাবাস সম্পর্কে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে ঋনাত্নক ধারণার জন্ম নিচ্ছে। এসব নেতার ব্যক্তিগত অনলাইনে সাইটে যেসব উগ্রবাদী পোস্ট দেখা যায়, তা দূতাবাসের বক্তব্য এবং দাবিকৃত বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের লেখাটির মাধ্যমে শুধুমাত্র কোরিয়া কিংবা জাপান নয়, সমগ্র বিশ্বের প্রবাসী বাঙালিরা সচেতন হবেন। সাধারণ সংগঠনগুলোর আড়ালে জামায়াত-শিবির যে বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে, তা বোঝার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

বিদেশে প্রিয় স্বদেশের ভাবমূর্তি উগ্রবাদ কিংবা জঙ্গিবাদের ছোঁয়ায় নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের দলটি যেন তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্ক ঘায়েল করতে না পারে সে জন্য প্রগতিশীলতার চর্চা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় আদর্শের সোপানগুলো সূক্ষ্মভাবে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শেখাবেন যেন উগ্রবাদের আছর থেকে মুক্তি দিতে পেতে পারে– আমরা সেই প্রত্যাশা করি।