ঢাকার দূষণ, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ও আমস্টারডামের বাইসাইকেল

গোলাম কিবরিয়া পিনুগোলাম কিবরিয়া পিনু
Published : 13 Dec 2016, 03:28 AM
Updated : 13 Dec 2016, 03:28 AM

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাজধানীকে দুষণমুক্ত করতে প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। যাচ্ছেন কিনা জানিনে। এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ্ও রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সাইকেলে চড়ে দু'একদিন তার অফিসে গেছেন বলে মনে পড়ছে। তিনি চেয়েছিলেন সাইকেলে চড়ার অভ্যাস করলে রাজধানীর বায়ুদূষণ কমবে। কিন্তু পরে সেই উদ্যোগ আর দেখা যায়নি।

রাজধানীতে এখন যে যানজট, তার অন্যতম এক কারণ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অনেক গুণে বৃদ্ধি, যা রাজধানী ধারণ করতে পারছে না। কিছু মানুষের হাতে টাকা এলেই গাড়ি কেনার দিকে নজর পড়ে। প্রয়োজনের চেয়ে সামাজিক মূল্য বাড়ানোর দিকে তাদের লক্ষ্য, সেইজন্য গাড়ির ওপর শুধু ভর করে। যাদের টাকা আরও বেশি, তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা গাড়ি, বউ ও নিজের জন্যও আলাদা গাড়ি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বায়ুদূষণ ও যানজটের সমস্যা কী পর্যায়ে যাবে কল্পনা করা যায় না। তাই, হাঁটা ও সাইকেল চালানোর বিষয়টিতে জরুরি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

যারা আমস্টারডাম গিয়েছেন, তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে, আমারও আছে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের বিবেচনা করলে এক নিদারুণ পার্থক্য চোখে পড়ে। এ-থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। আমস্টারডাম বাইসাইকেলের নগরী। এত বড় নগর, এর প্রায় বেশিরভাগ লোকই বাইসাইকেল চালায়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস-বাজার থেকে শুরু করে সব ধরনের যাতায়াতের কাজটি করে বাইসাইকেলের মাধ্যমে। সকালে অফিস সময়ে দেখা যায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাইকেলে চড়ে কী প্রাণবন্তভাবে চলেছেন। কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরাও কী-এক আনন্দে বাইসাইকেলে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। সব রাস্তার সঙ্গে বাইসাইকেল চালানোর লেন সংযুক্ত।

ভাবি, এরা যদি প্রাইভেট কার কিনত, সেই গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করত, তাহলে কী অবস্থা হত আমস্টারডামের! জানি, এদের বেশিরভাগ মানুষের সামর্থ্য আছে গাড়ি কেনার, তবুও গাড়ি কেনে না, স্বাস্থ্য-পরিবেশ ও অন্যান্য বহুবিধ কল্যাণকর দিক বিবেচনা করে। আর অন্যদিকে দেখি শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের লোকেরা হেঁটেও চলাচল করে।

আমাদের দেশে এর পুরো উল্টো চিত্র। মন-মানসিকতাও ভিন্ন ধরনের। সরকার নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সাইকেল-বান্ধব কোনো উদ্যোগ নেয় না। রাস্তার সঙ্গে কোনো সাইকেল লেনও থাকে না। সুবন্দোবস্ত নেই হাঁটারও। ফুটপাত দিয়ে হাঁটাচলা করা যায় না। নতুন নতুন শহর এলাকায় হাঁটাচলা ও সাইকেল চলাচলের ব্যবস্থা রাখার ব্যবস্থা করা যায় সহজেই। যেমন নতুন গড়ে ওঠা শহর বা আবাসিক এলাকাগুলোতে আগে থেকে পরিকল্পনা করা যেতে পারে। নতুন 'পূর্বাচল' শহরটাকে সাইকেল ও হাঁটাবান্ধব করে গড়ে তোলা যেতে পারে।

পাদটিকা:

ঢাকায় কিশোর-তরুণরা বাইসাইকেল চালাতে উৎসাহী হচ্ছে জেনে ভালো লাগে। আমি পনের বছরেরও আগে ঢাকায় একটানা দুবছর সাইকেল চালিয়েছি, অনেককে উদ্বুব্ধ করেছিলাম, দুএকজন সাইকেল কিনে চালিয়েছেও। তবে, প্রথমে অফিসে সহকর্মীদের কাছ থেকে পেলাম ধাক্কা– 'অফিসের পিওন চালায় মটরসাইকেল আর কর্মকর্তা হয়ে চালায় বাইসাইকেল'! এরপর প্রতিবেশিরা তাকাতে লাগল বাঁকা চোখে। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে গুঞ্জন। মানুষের মানসিকতা! সব মিলে ব্যর্থ হলাম।

তবে সাইকেল চালালে শরীর-মন বেশ ভালো থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ অনেক রোগ থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যায়। পরিবেশের জন্য ভালো, অর্থনেতিকভাবেও সাশ্রয়ী। কিশোর-তরুণরা এগিয়ে এলে এই আন্দোলন সফল হতে পারে।

এখনও মনে হয় আবারও সাইকেল চালাই।