৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের পূর্বাপর

মো. আনোয়ার হোসেনমো. আনোয়ার হোসেন
Published : 7 Nov 2016, 04:06 AM
Updated : 7 Nov 2016, 04:06 AM

৭ নভেম্বরের সিপাহি অভ্যুত্থান নিয়ে বিতর্ক ঘোরতর। বিতর্ক এই অভুত্থানের নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহেরকে (বীর উত্তম) নিয়ে এবং যে দলটি এই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিল সেই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) নিয়ে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে সংগঠিত এই অভ্যুত্থানের সূচনা থেকেই বিতর্কের শুরু হলেও ইদানিংকালে বিতর্কের তীব্রতা ও পরিধি উভয়ই বেড়েছে।

বিতর্কের কারণ বহুবিধ। সে সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। কোনো ঘটনার সত্যাসত্য নির্ধারনে স্থান-কাল-পাত্র গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নভেম্বর অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে। কেন তা ব্যাখ্যার চেষ্টা করব। রহস্য আছে দিনটিকে ঘিরে। সবকিছু কেমন যেন ধোঁয়াশায় ঢাকা। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার সিংহাসনে বসা জেনারেল জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপি দিনটিকে 'জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস' হিসেবে পালন করে এবং এর নায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমানের উপর মাহাত্ম আরোপ করে। আওয়ামী লীগ ৭ নভেম্বরকে 'মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক ও অফিসার হত্যা দিবস' হিসেবে দেখে।

জাসদ দিবসটিকে 'সিপাহি জনতার অভ্যুত্থান দিবস' হিসেবে পালন করে। সামাজিক বিপ্লবের ডাক দিয়ে জন্মলাভ করা একটি রাজনৈতিক দল সিপাহি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করছে। সন্দেহ, অবিশ্বাসের একটি কারণ তা-ও। লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি জারের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও সৈনিকের সম্মিলিত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নভেম্বর বিপ্লব সফল করেছিল এবং দুনিয়াতে প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশের উদ্ভব ঘটিয়েছিল, সে উদাহরণ অবশ্য আছে।

কাকতালীয় হলেও সত্য যে রাশিয়ায় এবং সেই সমাজতান্ত্রিক দেশটির সক্রিয় সমর্থনে স্বাধীনতা লাভ করা বাংলাদেশে একই তারিখ অর্থাৎ ৭ নভেম্বরে দুটি অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এই উভয় অভ্যুত্থানের মিল ও অমিলের প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ায় অভ্যুত্থান সফল হলেও বাংলাদেশে তা ব্যর্থ হয়। তার বাইরেও নানা মিল-অমিল আছে। ইদানিং চল হয়েছে, জাতির জনকের হত্যাকাণ্ড, পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল ও দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে কার্যত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি দ্বারা দেশ শাসিত হওয়ার দায়ভার মুখ্যত জাসদ ও কর্নেল তাহেরের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। এ সময় কেন তা করা হচ্ছে, তা কতটুকু যথার্থ তা-ও অনুসন্ধান করব।

স্থান-কাল-পাত্রের কথা শুরুতে বলেছি। '৭৫-এর ৭ নভেম্বরকে ঘিরে সময়টি ছিল জটিল, অস্থির, শ্বাসরুদ্ধকর ও কঠিন সংকটপূর্ণ। তার কারণও ছিল। এর আগে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চরম দক্ষিণপন্থী শক্তি। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে সংগঠিত ঘাতক অফিসারদের ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন আওয়ামী লীগের দক্ষিণপন্থী শক্তির নেতা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে তা ঘটে।

হত্যাকাণ্ড আরও হত্যাকাণ্ড ডেকে আনে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আরও বিশৃঙ্খলার বিশেষ করে, যখন তা ঘটে ক্ষমতার পরিবর্তনে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল স্তম্ভ বলে বিবেচিত সেনাবাহিনী ব্যবহৃত হয়েছে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তনে। এর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী ও ক্যান্টনমেন্ট হয়ে পড়েছে একদিকে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র এবং অন্যদিকে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও আরও বড় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আধার। শৃঙ্খলাভঙ্গকারী নিয়ন্ত্রণহীন খুনী মেজরদের দাপটে ভেঙে পড়েছে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা। যেখানে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করে জাতির জনককে হত্যা করা যায়, ক্ষমতার সিংহাসনে বসা যায়, সেখানে পদপদবির জন্য ষড়যন্ত্রমূলক অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান তো নমস্য।

ষড়যন্ত্র তীব্রতর হয়েছে, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে। বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। তা পরিব্যাপ্ত হয়েছে রাষ্ট্রের অন্যান্য স্তম্ভে– প্রশাসন, কারাগার এবং বিচার বিভাগ সর্বত্র। খোদ কারাগারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র ষড়যন্ত্রকারীরা প্রবেশ করে বন্দী চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছে। এমন অবস্থাকে রাষ্ট্রের 'তরল অবস্থা' বলে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে তা-ই ঘটেছে। রাষ্ট্রের এই তরল অবস্থায় মাৎসায়ন পরিস্থিতি বিরাজ করে। তেমনটাই হয়েছিল বাংলাদেশে।

'৭৫-এর ৭ নভেম্বর সিপাহি অভ্যুত্থানের পূর্বাপর গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনার আগের স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় না রাখলে এ অভ্যুত্থান নিয়ে যে ঘোর বিতর্ক আছে, তার কার্যকারণ বোঝা যাবে না। বিতর্ক নিরসনও কঠিন হবে। তাই খোদ ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের উদ্ভব, এই অভ্যুত্থানের কুশীলবগণ এবং অভ্যুত্থানের পরিণতি বিষয়ে আলোচনার পূর্বে দূর এবং নিকট অতীত নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলব।

দেশের সংকটে সাড়া দিয়ে জনগনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশে সাধারণ সিপাহিদের বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানে সামিল হওয়ার ঘটনা এই উপমহাদেশে নতুন নয়। এমন বিদ্রোহে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠিন শাস্তি অবধারিত জেনেও সিপাহিরা তাতে অংশ নিতে পিছপা হয়নি।

ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ, যাকে কার্ল মার্ক্সস অভিহিত করেছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। তার উপর লেখা 'The Last Mughal' পুস্তকে লেখক William Dalrympol লিখেছেন–

"In 1857 the Bengal army was the largest modern army in Asia having 1,39,000 sepoys. Among them all but, 7,796 turned against their British masters."

এ তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছে, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল সেই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার ব্যারাকপুরে অবস্থিত ৩৪তম বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট থেকে। এই রেজিমেন্টের মঙ্গল পাণ্ডে ও ঈশ্বরী প্রসাদ সূচিত বিদ্রোহ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। ওই দুজনের ফাঁসি সিপাহি বিদ্রোহের আগুনকে প্রশমিত না করে তাকে দাবানলে পরিণত করেছিল। এশিয়ার সর্ববৃহৎ আধুনিক সেনাবাহিনী বেঙ্গল আর্মির এক লাখের বেশি সিপাহি যোগ দেয় বিদ্রোহে এ কথা জানা সত্ত্বেও যে বিদ্রোহের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সিপাহি বিদ্রোহের পরাজয়ের পর ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কে অগণিত বাঙালি সিপাহিকে বিদেশি ইংরেজরা ফাঁসি দিয়েছিল।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে বাংলাদেশের মানুষের উপর হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর বাঙালি সিপাহিরা বিদ্রোহ করে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্রোহের সিদ্ধান্তটি আসে সিপাহিদের কাছ থেকে। তারপর অফিসাররা যোগ দেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধস্তন সিপাহিদের চাপে বাধ্য হয়েই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে হয় অফিসারকে। পরিতাপের কথা এমন একজন অফিসার পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর উচ্চপদে সমাসীন হয়েছেন, ৭ নভেম্বর সিপাহি অভ্যুত্থানে বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে বিপ্লবের 'নায়ক' হয়েছেন এবং তাদের দাবির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে শত শত সিপাহিকে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলব।

মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন এবং প্রত্যাশার সমভাগী হয়েছিল সিপাহিরা। তার কারণ ছিল দ্বিবিধ। মূলত সিপাহিরা ছিল সাধারণ কৃষকের সন্তান। অন্যদিকে প্রথাগত পাকিস্তান ব্যারাক আর্মির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। নয় মাস জনগণের পাশে থেকে, আশ্রয়ে থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে জীবন-মরণ যুদ্ধ করেছে। এভাবেই জনগণের সঙ্গে তারা একাত্ম হয়েছে। প্রচলিত ব্যারাক আর্মির স্থলে স্বাধীন দেশের উপযোগী জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী একটি গণবাহিনীর সদস্য তারা হবে– এই চিন্তাই তারা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর তারা দেখল যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তা ভেঙে তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছে সে দেশে পুনরায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদলে গড়া সেনা কাঠামোতে তাদের আবদ্ধ করা হয়েছে। সেই একই ঔপনিবেশিক আইন। সিপাহি ও অফিসারদের মধ্যে একই দাসসুলভ সম্পর্ক।

যে বাঙালি অফিসার যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, সেই একই অফিসার এখন তার হুকুমদাতা। শুধু নাম পরিবর্তন হয়েছে, এ তো পুরোদস্তুর পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সিপাহিদের জীবনযাত্রার অবনতি হয়েছিল। তাদের ইউনিফর্ম, পায়ের বুট পর্যাপ্ত ছিল না। মেসে খাবারের মান নিম্নমানের, রেশন মহার্ঘ। সদ্য স্বাধীন দেশে এমন অবস্থা অস্বাভাবিক নয়। কৃচ্ছ্রতাসাধন, অল্পে তুষ্টি– এ সবকিছুর জন্য সাধারণ মানুষের মতো সিপাহিরাও মানসিকভাবে তৈরি ছিল। শুধু প্রয়োজন ছিল মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর মতো সিপাহি-অফিসারদের একযোগে সুখদুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মানসিকতা। দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয়নি। চোখের সামনেই তারা দেখতে পেল অফিসারদের দ্রুত পদোন্নতি, জীবনযাত্রার উঁচু মান। তাদের স্বপ্ন ভেঙে যেতে থাকল।

এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমও ছিল। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার দিকটি দেখার ভার অ্যাডজুটেন্ট জেনারেলের ওপর। সৈনিকেরা অবাক হয়ে দেখল এ পদে যাঁকে বসানো হয়েছে তিনি একজন একপেয়ে কর্নেল। কখনও নকল পা বা কখনও ক্র্যাচ নিয়ে তিনি হাঁটেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার আবু তাহের বীর উত্তম। মুক্তিযুদ্ধে এই অফিসারের বীরত্বের কথা তারা শুনেছে। এবার তারা দেখল তাদের মনের কথা বলেন এই কর্নেল। ব্যতিক্রমী নানা কাজও করেন। অফিসারদের উপর নির্দেশ জারি হয়, যুদ্ধ শেষে নানা উপঢৌকন যারা পেয়েছেন বা নিজেরাই নিয়ে নিয়েছেন, সে সবকিছু জমা দিতে হবে। জমা হল এবং নির্দিষ্ট একদিনে বহ্নিউৎসবে তা ভস্মীভূত করা হল। এটা ছিল প্রতীকী।

তাহের পরে ঢাকা কারাগারের অভ্যন্তরে গোপন বিচারের জবানবন্দিতে তা স্মরণ করে বলেছেন, চিত্তশুদ্ধির তার ওই আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছিলেন অফিসারেরা। ঢাকায় অবস্থানরত ৪৬তম ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল জিয়াউদ্দিন। তাঁর চিন্তাও তাহেরের মতো। পাকিস্তান থেকে একসঙ্গে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তিনিও বলেন স্বাধীন দেশে ব্যারাক আর্মির স্থলে পিপলস আর্মির কথা।

এরপর সেনারা তাহেরকে পেল কুমিল্লা সেনানিবাসে ৪৪তম ব্রিগেডের সক্রিয় কমান্ডার হিসেবে। জনগণের মাথার বোঝা ব্যারাক আর্মি আর নয়, উৎপাদনশীল গণবাহিনী গড়ার উদ্যোগ নেন তাহের। ব্রিগেডের প্রতীক করেন কৃষকের লাঙল। সিপাহি-অফিসারদের মিলিত শ্রমে কয়েক লাখ আনারসের বাগান গড়ে উঠে কুমিল্লা সেনানিবাসে। বিভিন্ন সেনা ইউনিট আশপাশের গ্রামগুলোতে নানা কাজে গরিব জনসাধারণকে সাহায্য করে। 'ইঞ্জিনিয়ারিং কোর' যুদ্ধে বিধ্বস্ত সড়ক-পুল-কালভার্ট মেরামত করে মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে। 'শিক্ষা কোর' নৈশ স্কুলে বয়স্কদের পড়ালেখা শেখায়। 'মেডিকেল কোর' স্বাস্থ্যসেবা দেয়। সাড়া পড়ে সেনানিবাসে-জনপদে।

কুমিল্লা সেনানিবাসে অবশ্য তাহেরের এমন কর্মকাণ্ড দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অভিযোগ যায় সেনাসদরে। কানভারী করা হয় লন্ডনে চিকিৎসাধীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। ইতোমধ্যে যুদ্ধাহত এই ব্যতিক্রমী অফিসার সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু জেনেছেন। বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যারাক আর্মির স্থলে অগণিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে উৎপাদনশীল পিপলস আর্মি গঠনের তাহেরের পরিকল্পনাও তিনি শুনেছেন। বঙ্গবন্ধু জরুরি তারবার্তা পাঠালেন তাহের যেন অবিলম্বে লন্ডনে আসেন আরও উন্নত নকল পা লাগিয়ে নিতে। তাহের তড়িৎ জানালেন, ওই মুহূর্তে তাঁর দেশ ছাড়া ঠিক হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর দেশে অনুপস্থিতির সুযোগে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেনাবাহিনীতে, এতে মন্ত্রিসভার একজন সদস্যও যুক্ত। মুক্তিযুদ্ধে তাহের বাঁ পা হারিয়েছেন হাঁটুর উপর থেকে। এর আগে কুমিল্লা সেনানিবাস সফরকালে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অফ অনার প্রদান করেছেন স্টেশন কমান্ডার নকল পা পরা এক পেয়ে কর্নেল তাহের। জাতির জনক সে কথা ভুলে যাননি। কর্নেল তাহেরের জন্য একটি অটোমেটিক গাড়ি কিনতে বৈদেশিক মুদ্রা বরাদ্দ করেছেন বঙ্গবন্ধু। যাতে বাঁ পায়ের সাহায্য ছাড়াই তাহের গাড়িটি চালাতে পারেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা তখন মহার্ঘ। আমার মনে আছে, বাসায় ফিরে তাহের এ সংবাদ জানিয়ে বললেন, তিনি খুবই অভিভূত হয়েছেন। তবে সেইসব মুক্তিযোদ্ধা যাদের হাত-পা উড়ে গেছে, কিন্তু এখনও একটি কৃত্তিম অঙ্গ সংযোজিত হয়নি বলে পঙ্গু হয়ে আছে, তাদের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধুকে চিঠি লিখে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, তার জন্য বরাদ্দ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা যেন জার্মান ডাক্তার গার্স্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সোহরাওয়ার্দী পঙ্গু হাসপাতালে তিনি দেন। তাই হবে যথার্থ। আমরা জানতাম নিজে গাড়ি চালাতে কী পছন্দই না করতেন তাহের!

যাই হোক, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার পরপরই সেনাসদর থেকে নির্দেশ পেলেন তাহের, তাঁকে ৪৪তম ব্রিগেডের অধিনায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ডিডিপি (ডিরেক্টর ডিফেন্স পারচেজ) পদে বদলি করা হয়েছে।

১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরের একদিন সকাল ১১টার দিকে ব্রিগেড কমান্ডারের পতাকাবাহী একটি গাড়ি কার্জন হলে আমার বিভাগের সামনে এসে থামল। একজন সৈনিক এসে জানাল, কর্নেল তাহের নিচে গাড়িতে আছেন। দোতালা থেকে নেমে এলে তিনি আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলেন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্তের কথা তিনি আমাকে জানালেন। তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে দিচ্ছেন। আজই পদত্যাগপত্র পেশ করবেন সেনাসদরে। আরও জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেছেন–

"তাহের, তুমি আমাদের জাতীয় বীর। যুদ্ধে পা হারিয়েছ। আরও উন্নত নকল পা লাগাতে বিদেশে যাও। তোমার জন্য অটোমেটিক গাড়ির অর্থ বরাদ্দ আমি এখনও রেখেছি। দেশে ফিরে ডিডিপি পদে যোগ দাও। এই পদে তোমার মতো একজন সৎ মানুষ খুব প্রয়োজন। নতুন সেনাবাহিনীর জন্য বহু কেনাকাটা করতে হবে।"

তাহের স্পষ্ট বুঝতে পারলেন তাঁকে সক্রিয় কমান্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার চেয়েও যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হল সেনাবাহিনীর ভেতরে শুরু থেকেই ক্রিয়াশীল গভীর ষড়যন্ত্র যা তিনি বঙ্গবন্ধুকে পূর্বেই অবহিত করেছেন, তা আমলে না নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা চালিত হচ্ছেন তিনি। আমাকে তিনি এ-ও জিজ্ঞাসা করলেন, সেনাবাহিনী ছেড়ে দেওয়ার তাঁর সিদ্ধান্তটি ঠিক হচ্ছে কি না। এ জটিল প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারিনি।

একবার মনে হয়েছে নতুন পদে যোগ দিয়ে তাহেরের সেনাবাহিনীতেই থাকা উচিৎ। তবে এ কথাটি বুঝেছিলাম, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্র অত্যন্ত গভীর। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ এমন সেনাবাহিনীতে তাহের ভাই থাকতে চাচ্ছেন না। আজ বহু বছর পর এ কথা ভেবে গভীর আনন্দ বোধ করি যে, কোনো ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার চিন্তা থাকলে তাহের সেনাবাহিনীতেই থাকতেন, যেমনটা থেকেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান বা অন্য সেনানায়কেরা। তাহের তা করেননি, কঠিন বন্ধুর পথ বেছে নিয়েছেন। সে পথ সামাজিক বিপ্লবের, অসম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধকে সমাপ্ত করার দুস্তর পথ।

দেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধ করতে শিখতে হবে। তাই সচেতন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাহের '৬০-এর দশকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জানতেন, জনযুদ্ধের সময় তা কাজে লাগবে। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। ১১ নম্বর সেক্টরে কৃষক ও ছাত্রদের সমন্বয়ে বিশাল গেরিলা বাহিনী গড়ে উঠেছিল তাহেরের নেতৃত্বে। সারা বাংলাদেশেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা সচেতন প্রয়াসে এভাবে মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে।

কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী অধিকাংশ সেনা অফিসারদের ভাবমানস ছিল ভিন্ন। জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, শফিউল্লাহ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নিজেদের ক্ষমতার ভিত পাকা করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদলে নিজেদের নামে তিনটি ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীরও সায় ছিল তাতে। তবে তাজউদ্দীন আহমেদের প্রবাসী সরকার কেন সেনানায়কদের এই দাবি মেনে নিলেন তা-ও একটি রহস্য।

যুদ্ধের শুরুতে যেখানে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনী ছেড়ে আসা প্রশিক্ষিত বাঙালি সেনা-অফিসারদের নিয়োজিত করার কথা ইয়ুথ ক্যাম্পগুলোতে উন্মুখ হয়ে অপেক্ষমান সারা দেশের হাজার হাজার ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দানে, সেখানে তাদের আবদ্ধ করা হল ভারতের অভ্যন্তরে নিয়মিত ব্রিগেড গঠনের কাজে। পরে 'জেড ফোর্স', 'কে ফোর্স' ও 'এস ফোর্স' নামের এই তিনটি ব্রিগেড স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সেনাবাহিনীর গোড়াপত্তন করে।

জনগণ-বিচ্ছিন্ন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করার বীজ রোপিত হয়ে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের গোড়াতে প্রবাসী সরকারের সময় থেকে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সমর চিন্তার ঘাটতির কারণেই মুখ্যত এই ভুলটি হয়। তার একটি ঐতিহাসিক কারণও আছে। ১৮৫৭ সালে সংঘটিত সিপাহি বিদ্রোহের পরাজয়ের পর যুদ্ধবিদ্যা থেকে বাঙালিদের দূরে সরিয়ে রাখে ব্রিটিশ সরকার। তার কারণটির কথা শুরুতে বলেছি। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢেউ বার্মা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। ইন্দোচীনসহ যেসব উপনিবেশ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে সক্রিয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, সেসব দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জাতীয় মুক্তির লড়াই হয়েছে। তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওইসব রাজনীতিবিদগণ যাদের সমরবিদ্যায় প্রভুত জ্ঞান ছিল। এমন নেতৃত্বকে 'পলিটিকো-মিলিটারি' নেতৃত্ব বলা যায়।

জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, শফিউল্লাহ এবং সমগোত্রীয় অফিসারদের যুদ্ধ দর্শনের বিপরীতে ১১ নম্বর সেক্টরে তাহের জনযুদ্ধের নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের সীমান্তে ও মুক্তাঞ্চলে জড়ো হওয়া হাজার হাজার যুবকদের প্রশিক্ষিত করে তোলেন যুদ্ধের মধ্যে থেকে। এদের বেশিরভাগ ছিল কৃষকের সন্তান অথবা ছাত্র। এদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা যুদ্ধ, চলমান যুদ্ধ এবং একপর্যায়ে হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে মুক্তাঞ্চল সৃষ্টির যুদ্ধ করেন তিনি। ফলে অক্টোবর মাসের মধ্যেই তাঁর নেতৃত্বে বিশাল 'কৃষক বাহিনী' গড়ে উঠে। এই বাহিনীতে সামরিক নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রশিক্ষকদের নিয়োগ দেন তাহের। জনগণের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করেই এরা যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন।

অবাক বিষয়, একদিকে জেড, কে এবং এস ফোর্সকে ব্রিগেডে রূপান্তর করার প্রশ্নে সম্মতি দিলেও, অন্যদিকে বেসামরিক যুবক, বিশেষ করে কৃষকের সন্তানদের নিয়ে গঠিত এই বাহিনীকে একটি নিয়মিত ব্রিগেডে রূপান্তরে সেক্টর অধিনায়ক তাহেরের অনুরোধ সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী প্রত্যাখ্যান করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তাঁর ডাকে জীবন দিতে এরাই এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু এদের দিয়ে বাহিনী করার কথা যখন তাহের বললেন তা গৃহীত হল না।

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোটির শ্রেণিচরিত্র কেমন হবে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালেই। জেড ফোর্স, এস ফোর্স ও কে ফোর্স– মেজর জিয়া, মেজর শফিউল্লাহ ও মেজর খালেদের নামে গড়ে তোলা এই তিনটি ব্রিগেড বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোড়াপত্তন করে। পাঠক স্মরণ করবেন, উপরোক্ত তিন অফিসারই ১৫ আগস্টের কালরাতে সেনাবাহিনীর তিন শীর্ষ পদে সমাসীন ছিলেন। কিন্তু জাতির জনক এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় তাঁরা কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি সেনাবাহিনী থেকে পৃথক যে রক্ষীবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল, তার হেড কোয়ার্টার বঙ্গবন্ধুর বাসগৃহ ৩২ নম্বর থেকে খুব কাছে থাকা সত্ত্বেও মুষ্টিমেয় ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তারা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি।

১৯৭২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে কর্নেল তাহের তাঁর পদত্যাগপত্রে পাকিস্তানি আদলে গড়ে তোলা জনবিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র ও ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু তাহেরকে সেনাবাহিনী ছেড়ে যেতে হয়েছিল, আর যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা রয়ে গেলেন সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে। রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিল একই অবস্থা। তাই দেখা যায়, ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকালে সেনাবাহিনীর 'চিফ অব স্টাফ' ছাড়া বাকি আটটি গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং এমনকি রক্ষীবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন এমন সব পাকিস্তান প্রত্যাগত ব্যক্তিবর্গ যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। আর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ সেনায়কদের ভাবমানস সম্পর্কে পূর্বেই উল্লেখ করেছি।

এ কারণে ১৫ আগস্ট এত সহজে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং পরবর্তীতে কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে দেশে এক দীর্ঘস্থায়ী সামরিক স্বৈরতন্ত্র চাপিয়ে দিতে পেরেছিল। সেনাবাহিনীর উচ্চপদে থেকে ষড়যন্ত্র করে 'ক্যু দেতা' ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলে তাহের বিশ্বাসী ছিলেন না বলে ওই সেনাবাহিনী ছেড়ে দিয়ে বেসামরিক জীবনে ফেরা এবং জনতার রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করতে তাঁর বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয়নি।

অনেকেই প্রশ্ন করেন, সেনাবাহিনী ছেড়ে জনতার রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করা তাহের কেন আবার সেই ছেড়ে আসা সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? আগেই উল্লেখ করেছি যে, তাহের বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করেছিলেন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রচলিত স্ট্যান্ডিং সেনাবাহিনীকে অপরিবর্তিত রাখার বিপদ সম্পর্কে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা পদত্যাগ পত্রে তাহের বলেন–

"আমি চিন্তা করেছিলাম বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবজনক সেনাবাহিনী গড়ে তুলব। আমি ছাউনিতে অবস্থানকারী সেনাবাহিনীতে কাজ করেছি এবং আমি বুঝতে পারি একটি অনুন্নত দেশের জন্য এই ব্যারাক আর্মি কতটুকু বিপদজনক হতে পারে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে জনগণের কোন ধরনের সম্পর্ক নেই বলেই এমন স্বেচ্ছাচারী ধরনের শাসনের ফলে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এবং সর্বশেষে দেশটিকে ধ্বংস করে ফেলে। আমি উৎপাদনশীল গণমুখী সেনাবাহিনী যা দেশের প্রগতির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, সে ধরনের একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলার ধারণা নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ এবং আরো কিছু উচ্চ পদস্থ অফিসার আমার এই ধারণার ব্যাপারে কোন ধরনের উৎসাহ ও সহযোগিতা দান করেননি। এই মৌলিক বিষয়ে, সেনা বাহিনীর চীফ অব স্টাফের সাথে আমি মতৈক্যে পৌঁছুতে পারিনি।"

তাহের নিশ্চিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের উপর প্রথম আঘাত আসবে এই সেনাবাহিনীর ভেতর থেকেই, যার কারণে তিনি তাঁর পত্রে আরো বলেন–

"জনগণের স্বার্থই আমার কাছে সর্বোচ্চ। আমি সেনাবাহিনী ত্যাগ করে জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই। যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমার চারিদিকে জড়ো হয়েছিল আমি তাদের বলবো কী ধরনের বিপদ তাদের দিকে আসছে।"

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে হাতেগোনা যে কজন বাঙালি অফিসার তাদের মেধা ও কর্মদক্ষতার জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তাহের ছিলেন তাদের অন্যতম। তাই মুক্তিযুদ্ধের পর তাহেরের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদলেই রেখে দেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে যে আঘাত আসবে সেই আঘাত প্রতিহত করতে হলে সেই সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরেই নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। এই সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া জনগণের রাজনীতিরই একটি অংশ।

আপাতদৃষ্টিতে এমন 'বেআইনি' কাজে তাহের মুক্তিযুদ্ধের আগেও লিপ্ত হয়েছিলেন যখন ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের মধ্যেই তিনি ছুটি নিয়ে ঢাকায় কলাবাগানে তাঁর বড় ভাই আবু ইউসুফ খানের (বীর বিক্রম) বাসায় প্রতিদিন তিনটি ব্যাচে স্বাধীনতাপ্রত্যাশী যুবকদের রাজনৈতিক-সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের আগে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু নিজেও এমন পথে অগ্রসর হয়েছিলেন। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আসামিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র পন্থায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে মুক্ত করার পরিকল্পনার অভিযোগ এনেছিল। মামলার আসামিদের সম্পর্কে বলা হয়েছিল, তাঁরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীতে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করা চেষ্টায় লিপ্ত। হারানো ইতিহাস ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। আজ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী এমপি জানাচ্ছেন যে, আগরতলা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ছিল সত্য। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যদের সঙ্গে নিয়ে তথাকথিত 'বেআইনি' উপায়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

এবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জিয়ার ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি দুর্গতির জন্য কেন তাহের ও জাসদকে দায়ী করা হচ্ছে এবং ক্রমাগত তা কেন বেড়েই চলেছে, সে সম্পর্কে পাঠকের বিবেচনার জন্য কিছু কথা বলব।

৭ নভেম্বরে জাসদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ও কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পরিচালিত সিপাহি অভ্যুত্থান জয়লাভ করতে পারেনি। জিয়াউর রহমানের প্রতিবিপ্লব জয়যুক্ত হয়েছিল। তার মুখ্য কারণ জিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য টেকেনি শুরু থেকেই। রাস্তায় অভ্যুত্থানী সিপাহিদের সঙ্গে সংগঠিত জনতার সম্মিলন ঘটাতে পারেনি জাসদ। সিপাহি জনতার অভ্যুত্থান হয়ে উঠতে পারেনি সিপাহি বিদ্রোহ। দীর্ঘ জরুরি অবস্থায় উন্মুক্ত রাজনীতির অনুপস্থিতিতে গণসংগঠনের সংকুচিত হয়ে পড়া এবং অত্যন্ত দ্রুতলয়ের ঘটনাপ্রবাহ মোকাবেলায় পারঙ্গমতা দেখাতে ব্যর্থ হয় জাসদ। ফলে জিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি।

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তির নেতা হিসেবে সিপাহিদের ১২ দফা ও জাসদের রাজনৈতিক প্রস্তাবের সঙ্গে এবং সর্বোপরি জীবনদাতা কর্নেল তাহেরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে সমর্থ হয়েছিলেন জিয়া। এর ফল হয়েছিল মারাত্মক। তাহের এবং তাঁর আহ্বানে অভ্যুত্থানে ঝাঁপিয়ে পড়া শত শত সিপাহিকে হত্যা করেছিলেন জিয়া। জাসদের উপরও নেমে এসেছিল কঠিন নিপীড়ন। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল জেনারেল জিয়ার প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকার, তাঁর মৃত্যুর পর জেনারেল এরশাদ আমলে কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র ও সংবাদপত্রের ওপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম করেছিল। জনগণ শুনেছে শুধুমাত্র তাদের প্রচারণা। তেমনি কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সাধারণ সিপাহিদের অভ্যুত্থানের পরাজয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির প্রতিবিপ্লবী নায়ক হিসেবে জেনারেল জিয়াউর রহমানের উত্থানের পর তাঁর সেনা শাসনকালে রাষ্ট্রযন্ত্র ও সংবাদপত্রের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে ৭ নভেম্বরের সিপাহি অভ্যুত্থানের প্রকৃত ইতিহাস মানুষ জানতে পারেনি।

৭ নভেম্বরের সিপাহি অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলেও তা কায়েমি সমাজ ও রাষ্ট্রের গভীরে আঘাত হেনেছিল। তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল সমাজের প্রতিষ্ঠিত শ্রেণি ও তাদের রাষ্ট্র। তাই কর্নেল তাহের ও তাঁর রাজনৈতিক দল জাসদের ওপর চলে তাদের অব্যাহত আক্রমণ ও বিষোদগার। ইতিহাস বিজয়ীর পক্ষে কথা বলে। সত্য প্রকাশের জন্য পরাজিত শক্তিকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাহের ও জাসদের ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় 'কালো আইন' বলে পরিচিত পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করার ফলে তাহের হত্যার ৩৪ বছর পর তাঁর বিচার দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট করা সম্ভব হয়। জিয়াউর রহমান এই সংশোধনী জারি করে '৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সব সামরিক সিদ্ধান্তকে বৈধতা এবং এসবের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিলের সুযোগ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন।

আমার ও আমার দুই প্রয়াত ভ্রাতা কর্নেল আবু তাহের ও আবু ইউসুফের সহধর্মিনীদের একটি রিটের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মর্মে রুল ইস্যু করেন যে, কেন 'মার্শাল ল রেগুলেশন ১৬' ও তার অধীনে তাহেরের বিচার অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না? পরে দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০১১ সালের ২২ মার্চ তারিখে এক ঐতিহাসিক রায়ে কর্নেল আবু তাহেরের তথাকথিত বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

রায়ে বলা হয়, বিশেষ সামরিক আদালতের বিচার ছিল লোক-দেখানো প্রহসন; তাহেরের ফাঁসি ছিল ঠাণ্ডা মাথায় একটি পরিকল্পিত খুন। রায়ে এ-ও বলা হয়, তাহেরের হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশে মৃত ব্যক্তির সাজা প্রদানের আইনি বিধান না থাকায় জিয়াকে শাস্তি দেওয়া যায়নি। তবে রায়ে 'মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল'-এর একমাত্র জীবিত সদস্য ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আলীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রজু করার কথা বলা হয়। তাহেরকে একজন মহান দেশপ্রেমিক উল্লেখ করে তাঁকে শহীদের মর্যাদা দিতে বলা হয় রায়ের পর্যবেক্ষণ।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চালু করা জিয়া মাহাত্ম্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের চরম দণ্ড ও তা কার্যকর হওয়ার ফলে বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত ও এই দলের বিভিন্ন নামের জঙ্গিদের শক্তি খর্ব হয়ে পড়তে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে ১৪ দলীয় ঐক্যজোটের শরিক জাসদ ও তার সভাপতি হাসানুল হক ইনু 'জঙ্গিদের সঙ্গী' হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতি থেকে এই অপশক্তিকে বিদায় করার কথা নিরন্তর বলে যাচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সচেতন তরুণ প্রজন্ম, যারা শাহবাগে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছিল, তাদের সামনে অনুসরণ করার মতো বিপ্লবী হিসেবে কর্নেল তাহের নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছেন ফাঁসিতে তাঁর আত্মাহুতির চার দশক পর। অন্যদিকে তাঁর দল জাসদও বহু ষড়যন্ত্রের পরও রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের সম্ভাবনাময় বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। এ কথাও বলা যায় যে, জাসদে সাম্প্রতিক ভাঙন ভেতর থেকে দলটিকে অকার্যকর করে রাখার আরেকটি চেষ্টা মাত্র। পাশাপাশি জাসদের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপি-জঙ্গিদের অব্যাহত আক্রমণও এই ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাসদ একটি শক্তি হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াতে রয়েছে।

এই শঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে তাহের ও জাসদকে বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ '৭৫-পরবর্তী সব দুর্গতির জন্য দায়ী করে বক্তব্য দেওয়াকে ব্যাখ্যা করা যায়। এমন বালখিল্য মন্তব্য তাঁরা করতেই পারেন। তবে এমন মন্তব্যের বিপরীতে প্রকৃত গবেষকরা কিছু পাল্টা প্রশ্ন করতেই পারেন:

একটি জনযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট সেনাবাহিনীকে কেন শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন এবং অনুৎপাদনশীল করে রাখা হয়েছিল?

স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীতে কেন কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধার স্থান দেওয়া হল না?

কেন ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টায় লিপ্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তাহেরের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও?

পাকিস্তান থেকে রিপ্যাট্রিয়েটেড হয়ে আসা সেনাসদস্যদের বাছবিচার করার জন্য একটি স্ক্রিনিং বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এমন একটি বোর্ড গঠনের পরও কেমন করে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অফিসার সেনাবাহিনীতে বহাল থাকেন?

বঙ্গবন্ধু কেন জিয়া-খালেদ-শফিউল্লাহর মতো অফিসারদের ওপর আস্থা রাখতে পারলেও তাহেরকে আস্থায় নিয়ে পারেননি?

সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বাধীন ছাত্র-জনতার মধ্যে তাঁর সবচয়ে আস্থাশীল এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন অংশকে কেন বঙ্গবন্ধু দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন?

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিশ্বাসী এবং কনফেডারেশনের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টারত খন্দকার মোশতাককে বঙ্গবন্ধু কেন আস্থায় নিয়েছিলেন?

সব দোষ জাসদের– জনগণকে এমন ধারণা দিয়ে কিছু আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদের দুর্বলতা এবং চরম ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন। আমি তাদের অনুরোধ করব, একটু নিজেদের দিকে তাকান। বাংলাদেশেকে জন্ম দেওয়ার জন্য আমাদের যেমন অবদান আছে, আজকের বাংলাদেশের জন্যেও আমাদের সবারই কমবেশি দায় আছে।

আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর সিপাহি অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল কি করবে? কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে জাসদকে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা নিয়ে একটি মধ্যবাম দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথে থেকেই কেবল জাসদ বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক দলে নিজেদের উন্নীত করতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারকবাহক জামায়াত-বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে উচ্ছেদ করে সেই সক্ষমতায় পৌঁছানো সম্ভব। তেমন একটি অবস্থায় ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের প্রকৃত ইতিহাস ও সত্য পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হবে। দীর্ঘকাল অপেক্ষার ইতি ঘটবে তাহেরের অনুসারীদের, যাঁরা অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণ করার যুদ্ধে এখনও লিপ্ত আছেন।