যে বইগুলো পড়তে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

শাকিল রিয়াজ
Published : 10 Oct 2016, 03:25 AM
Updated : 10 Oct 2016, 03:25 AM

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি বই পড়েন না। একটা আস্ত বই কোনোদিন পড়েননি তিনি। তাঁর সময় হয়নি। টাকাকড়ির বাইরেও যে একটা পৃথিবী আছে 'আমি', 'আমি'র বাইরেও যে একটা 'আমরা' আছে, 'মূল্য'র বাইরেও যে 'মূল্যবোধ' থাকতে পারে– অজানা তাঁর। এক নার্সিসিস্টকে প্রতিদিন টিভিতে দেখতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে!

একজন লোক যিনি কিনা বিশ্ব শাসন করবেন বলে জেদ ধরেছেন, একটা বাক্য পর্যন্ত শুদ্ধ বলতে পারেন না। কথাবার্তা অগোছালো আর মিথ্যায় ভরা। বর্ণবাদী, নারীবিদ্বেষী, উগ্র, জোচ্চোর। করফাঁকি দেওয়াকে বলেন 'স্মার্টনেস' এবং বললেন তা প্রকাশ্যেই। লভ্যাংশ তো দুই আঙুলে গোনা যায়। 'বুদ্ধি' আটকে আছে তাই তাঁর দুই আঙুলের ফাঁকে। পরিধি বাড়েনি। লোকটির বাসায় এ জন্য কোনো বই নেই।

ছেলেবেলাায় কেউ তাঁকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়নি। বই পড়ে শোনায়নি কেউ। ভাবনার পৃথিবী বড় হবে কীভাবে? এই লোক জানেন না পৃথিবীর ইতিহাস। কখনও পড়েননি ফিলসফি। সফল মানুষদের জীবনী ঘেঁটে দেখেননি কোনোদিন। কিংবা পড়েননি এমন কোনো গল্প বা উপন্যাস যেখানে মানুষের নিঃস্বার্থ হওয়ার কাহিনি আছে, আছে টাকার বাইরেও জীবনের অন্য কোনো লাভের মহিমাবর্ণন।

ভাবতে পারি না ৮ নভেম্বর সকালে ঘুম থেকে জেগে শুনব ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কতটা ভালো কতটা খারাপ– এই বিতর্কের অনেক বাইরে ট্রাম্প। ট্রাম্প ইটসেলফ এক দুঃস্বপ্ন! রিপাবলিকানরা এবং অন্যান্য সুবিধাসন্ধানী গোষ্ঠী এই মাথামোটাকে সামনে নিয়ে এসেছে তাঁকে দিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে। ঠিক যেমন হিটলারকে দেওয়া হয়েছিল চ্যান্সেলরশিপ। পৃথিবী এখনও ভুগছে!

ডোনাল্ড ট্রাম্প বই পড়েন না– এই তথ্য আরও বিভীষিকাময়। গ্রন্থই মানব আকৃতির প্রাণিকে 'মানব' বানায়। মানুষের নিশ্চল বোধে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগাতে পারে মানবিকতা। ট্রাম্পের অসারবোধে চলুন সুড়সুড়ি দিই। তাঁকে বই কিনে পাঠাই। বই কিনে তাঁর দেউলিয়া হওয়ার দরকার নেই; বরং চলুন, পৃথিবীকে দেউলিয়াত্বের অমানিশা থেকে বাঁচাতে তাঁকেই আমরা বই উপহার দিই।

ট্রাম্প সাহেবের পাঠের জন্য ঘেঁটেঘুটে তাই একটা 'লিস্ট' করা হল। বইয়ের লিস্ট। তাঁকে পাঠানো যেতে পারে।

তালিকার প্রথম তিনটি বই শেক্সপিয়ারের লেখা। তিন ট্র্যাজেডি। 'হ্যামলেট' , 'কিং লিয়র' এবং 'ম্যাকবেথ' । এই তিন ট্র্যাজেডি থেকে যা তিনি শিখতে পারবেন তা হল প্রতারণা, দুর্নীতি আর ঔদ্ধত্য আখেরে সুফল বয়ে আনে না।

তালিকার পরের বই জর্জ অরওয়েলের এলেগরিকাল উপন্যাস 'অ্যানিম্যাল ফার্ম' । উপন্যাসে দেখানো হয়েছে শুকরদের হাতে ক্ষমতা গেলে কী কাণ্ড ঘটতে পারে!

হারম্যান মেলভিলের 'মবি ডিক' হতে পারে ট্রাম্পের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। যুক্তিহীন অবসেসন, মিথ্যাচার, ঘোর ও সংস্কার কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে মেলভিল দেখিয়েছেন তাঁর এই চমৎকার কাহিনিতে।

'ক্যাচ টুয়েন্টি টু' উপন্যাসটি ট্রাম্পের অবশ্যপাঠ্য। জোসেফ হেলারের এই দুনিয়া-কাঁপানো কাহিনির মর্ম যদি একবাক্যে লেখা যায়, তবে লেখা যেতে পারে– যুদ্ধ মানে অসুস্থতা। মানুষকে যুদ্ধ বা বিরোধে জড়িয়ে ফেলার যন্ত্রণাময় ও নির্মম ব্যুরোক্রেসি বর্ণিত হয়েছে এতে।

গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতাও পড়া যেতে পারে। ট্রাম্পের চোখ খুলে দিতে পারেন মেক্সিকান কবি অক্তাভিও পাজ। নোবেলজয়ী কবি বলেছেন দেখিয়েছেন প্রমাণ করেছেন– মেক্সিকানরা ধর্ষক নয়, সুযোগসন্ধানী নয়, মাদকব্যবসায়ী নয়; বরং তারা এক কৃষ্টির প্রণেতা, এক ঐতিহ্যের সূত্রধর।

ইতালিয়ান লেখক প্রিমো লেভির বই 'ইফ দিস ইজ অ্যা ম্যান' দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা এক মর্মস্পর্শী গাঁথা। বইটি ট্রাম্পকে শেখাবে অর্থকড়ির চেয়েও মানবিক মূল্যবোধ অনেক দামি।

তালিকার বইগুলো যদি ট্রাম্পের জন্য হজমে কঠিন হয়, ক্ষতি নেই। যেহেতু তিনি কোনোদিন বই পড়েননি, শুরু করতে পারেন শিশুতোষ কিছু ক্ল্যাসিক দিয়ে। 'হ্যারি পটার' সিরিজের সাতটি বই তিনি চেখে দেখতে পারেন। আস্ত্রিদ লিন্দগ্রেনের 'দ্য ব্রাদারস লায়নহার্ট' এবং জে আর আর টলকিয়েনের ট্রিলজি 'দ্য লর্ড অব দ্য রিংস' হতে পারে ট্রাম্পের জন্য হাতেখড়ি। যেসব শিশু-কিশোর এই বইগুলো পড়েছে তারা শিখেছে ভালো আর খারাপের দ্বন্দ্বে শেষাবধি ভালোরই জয় হয়।

এ বইগুলো পাঠানো যেতে পারে ট্রাম্পকে। কিংবা এই ধনকুবেরের জন্য আপনাদের পছন্দের বই কী কী? তালিকা করুন। পোস্ট করুন তাঁর ঠিকানায়। হাজার হাজার বই ভিড় করুক তাঁর দরজায়।

আইডিয়াটা যাঁর তিনি আমেরিকায় জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ লেখিকা মেগ রোসফ। সম্প্রতি সুইডেন এসেছিলেন গোথেনবার্গ বইমেলায় অংশ নিতে। সেখানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন এই আইডিয়া। বললেন, নির্বাচনের বেশি দেরি নেই। এত অল্প সময়ে ট্রাম্প কয়টাই-বা পড়তে পারবেন! কিন্তু এটা কোনো ব্যাপার না। সবাই যদি বই পাঠাতে শুরু করেন তবে ট্রাম্পের স্বপ্নের 'সীমান্তপ্রাচীর'এর বদলে গড়ে উঠতে পারে 'গ্রন্থপ্রাচীর'।

মেগ রোসফ আশা করছেন, এই প্রাচীর যেন ট্রাম্পের মাথায় ভেঙে পড়ে। এর নিচেই যেন গর্দভটির সমাধি ঘটে!

মেগ রোসফের ফ্যান্টাসির মতো বিয়োগান্ত নয় আমার ফ্যান্টাসি। আমিও চাই ট্রাম্পের চারপাশে গড়ে উঠুক গ্রন্থপ্রাচীর। বাড়তি যেটা চাই, বইগুলো যেন 'জানালা' হয়। তাতে উঁকি দিলে যেন দেখা যায় পৃথিবী।