ইংরেজিতে বিজ্ঞানচর্চা যে-কারণে দরকার

ফাহাম আব্দুস সালাম
Published : 22 Nov 2011, 02:59 PM
Updated : 22 Nov 2011, 02:59 PM

সম্প্রতি বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর-এ একটি লেখায় ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী মত দিয়েছেন যে সহজ বাংলায় বিজ্ঞানের টেক্সট লেখা হলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার বেশি ঘটবে বলে সেটা কাম্য। আমি লেখকের সাথে একমত নই। তানভীরুল ইসলাম লিখেছেন যে বিজ্ঞান চর্চা কেন মাতৃভাষায় করা আবশ্যক। লিখেছেন, মাতৃভাষায় একজন শিক্ষার্থী যেভাবে বিজ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে সেভাবে অন্য ভাষায় পারবে না। আমি লেখকের সাথে একমত নই। ফিরোজ আহমেদ লিখেছেন যে "সুবিধাজনক অবস্থার কল্যাণে প্রাপ্ত ইংরেজিজ্ঞানকে জ্ঞানার্জনের উপায় এবং মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা গেলে তাই তার (মধ্যচিত্তের বাঙালি) চেয়ে সন্তুষ্ট কেউ থাকে না"। এবং এটি মধ্যচিত্তের বাঙালির হিপোক্রাসি। আমি বুঝতে পারছি না মধ্যচিত্তের বাঙালি সম্বন্ধে লেখকের এই অভিযোগ যদি সত্যও হয়ে থাকে সেটা হিপোক্রাসি হিসেবে কীভাবে কোয়ালিফাই করে? আমি নিজে ইংরেজি শিখে জ্ঞানের জগতে নিজের বিচরণ সুগম করে অপরকে যদি অন্য একটি ভাষায় আটকে থাকার পরামর্শ দেই, সেটাকে বরং বলা যেতে পারে হিপোক্রাসি। আমাদের দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী যেমনটি করেন। দেখি, যে তারা বাংলায় শিক্ষা প্রসার নিয়ে গলা ও কলম ফাটিয়ে অন্যদের হিতোপদেশ দেন কিন্তু নিজেদের ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ান। আমি যে সুযোগ পেয়েছি, সে সুযোগ অন্য সবার পাওয়া উচিত এবং আরো কম বয়স থেকে পাওয়া উচিত, এই মত প্রকাশ করা আর যাই হোক, হিপোক্রাসি হতে পারে না। রাগের মাথায় শব্দটি ব্যবহার না করে থাকলে ইংরেজি শব্দ প্রয়োগে লেখকের আরো সতর্কতা প্রয়োজন, যেটা বেশি করে ইংরেজি চর্চা করলে আয়ত্তে আসবে বলে আমার অনুমান। বলাই বাহুল্য, আমি এই লেখকের সাথেও একমত নই। স্বভাবতই উপরোক্ত তিন লেখকের প্রতিটি বক্তব্যের সাথে আমি ভিন্নমত পোষণ করি না, করি মূল সুরের সাথে এবং আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে আমাদের জন্য ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা এবং সম্ভব হলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার করা জরুরী। পাঠক, দয়া করে ভাববেন না যে ইংরেজির বিপরীতে বাংলাকে দাঁড় করিয়ে কোনো ভাষার মহত্ত্ব কিংবা দীনতা প্রমাণ করা আমার উদ্দেশ্য। ভাষাকে আমি এই লেখায় কেবলমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছি।

প্রথমে আমি দুজন বিজ্ঞানীর মতামত উল্লেখ করবো যাদের প্রথম ভাষা ইংরেজি না। দেখা যাক তারা কীভাবে, কোন ভাষায় বিজ্ঞান চিন্তা করেন। প্রথম জন বিশ্বখ্যাত, ১৯৯৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ইমিউনোলজিস্ট রলফ জিঙ্কারনেগেল (তার বিদ্যাশিক্ষা এবং খুব সম্ভবত প্রথম ভাষা /মাতৃভাষাও জার্মান)। অন্য একটি লেখায় আমি উল্লেখ করেছি যে রালফ স্টাইনম্যান ও রলফ জিঙ্কারনেগেলের মতো ভালো সায়েন্টিফিক ইংলিশ অন্তত আমি কাউকে লিখতে দেখি নি। তাকে আমি সরাসরি তিনটি লিখিত প্রশ্ন করেছিলাম। প্রশ্ন ও উত্তরগুলো যেন অনুবাদের ফাঁকে একটুও হারিয়ে না যায় সেজন্য মূল ইংরেজিতেই দেয়া হোলো।
Do you think in English when you write about science or you just translate your thoughts (which are processed in your first language)?
-No, I think in English.
Do you think it is any longer possible to be and thrive in science in a language other than English?
-Yes, of course, English is just more convenient.
Would you recommend anyone whose first language is not English to think in English to survive in Science?
– Clear thinking is sufficient plus some help in writing properly in English.

দ্বিতীয়জন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, ডঃ আবেদ চৌধুরী। নাম করা জেনেটিসিস্ট (বিশ্বখ্যাত জার্নাল Nature-এ তার পাবলিকেশান আছে) এবং বাংলাদেশে লেখক হিসেবেও পরিচিত। তাকে আমি কেবল প্রথম প্রশ্নটি করেছিলাম যে তিনি কোন ভাষায় বিজ্ঞান চিন্তা করেন। তিনি বললেন যে অবশ্যই ইংরেজিতে যদিও তিনি বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের যে ভণ্ডামির অভিযোগটি একটু আগে আমি উল্লেখ করলাম সেটা তিনিও করলেন এবং যোগ করলেন, "cognition এর কী বাংলা তুমি করবা"?
একটু খেয়াল করুন যে জিঙ্কারনেগেল যিনি একজন নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞানী এবং যার নিজের ভাষা বিজ্ঞান চর্চার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক তিন-চারটে ভাষার একটি, তিনিও বিজ্ঞান-চিন্তা করেন ইংরেজিতে। তিনি মনে করেন যে অন্য ভাষায় এখনও বিজ্ঞান চর্চা করা সম্ভব, তবে ইংরেজিতে সুবিধাজনক। এখানে কিন্তু একটি ভাষার সাথে আরেকটি ভাষার তুলনা আসতে বাধ্য। অর্থাৎ বিজ্ঞান চর্চায় ইংরেজির তুলনায় বাংলা যতোটা সুবিধাজনক, জার্মান ভাষা তার চেয়ে অবশ্যই বেশি সুবিধাজনক যেহেতু জার্মান ভাষার নিজস্ব ঐতিহ্য যথেষ্ট উজ্জ্বল। বর্তমান লেখায় এ নিয়ে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। এবং তৃতীয়ত তিনি বিজ্ঞান চর্চার জন্য স্পষ্ট চিন্তা এবং শুদ্ধভাবে ইংরেজি লিখতে পারাটাকেই যথেষ্ট মনে করেছেন। "Clear Thinking" কিন্তু কোনো জন্মগত বৈশিষ্ট্য না, এটা অনুশীলন ও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আয়ত্ত হয়। আমার দাবী শুধুমাত্র এতোটুকু যে এই প্রক্রিয়া ও অনুশীলনে একটি ভাষার যে রসদ থাকা অপরিহার্য সেটি আমাদের না থাকায় ইংরেজিতে বিজ্ঞান চর্চা করা সুবিধাজনক।

যারা বলেন যে জার্মান, জাপানিজ ও চাইনিজরা নিজেদের ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করতে পারলে আমরা কেন পারবো না, ক্ষমা করবেন, তাদের কাণ্ডজ্ঞানের অভাব আছে বলে মনে করি। উসাইন বোল্ট ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ুতে পারলে আমি কেন পারবো না, আমার কি দুইটা পা নাই, আমি কি দৌড়াতে পারি না? এই প্রত্যয় শুনতে ভালোই লাগে, কিন্তু আমি বললে আপনারা যে আমাকে পাগল বলে গালি দেবেন সেটা আমি শুনতেই পারছি একরকম। বিজ্ঞান চর্চার রেসে জার্মান, জাপানিজ ও চাইনিজ হয়তো ইংরেজির চেয়ে পিছিয়ে ছিলো সবসময় এবং আছেও; কিন্তু তারা তো রেসটা ছেড়ে দেয় নি কোনোদিন। আমরা তো এই রেসে নামিই নি কোনোদিন। আমাদের সাথে কি ওদের তুলনা চলে? আপনি যদি ক্লাস টু পর্যন্ত পড়ে তিন বছর বিরতি দিয়ে আবার পড়া শুরু করেন তাহলে জ্ঞানের অভাবটা হয়তো পুষিয়ে নিতে পারবেন, যদি আট বছর বিরতি দিয়ে ক্লাস টেনে ভর্তি হয়ে যান তাহলেও হয়তো কেউ কেউ ক্ষতিটা পুষিয়ে নেবেন; কিন্তু ক্লাস টু থেকে সরাসরি অনার্সে ভর্তি হলে জ্ঞানের যে ঘাটতি হয়ে যাবে সেটা কি পোষানো যাবে? গত একশ বছরে বিজ্ঞানের যে প্রসার হয়েছে তার আগের হাজার হাজার বছরে সে তুলনায় হয়তো ভগ্নাংশ পরিমাণও হয় নি (এখানে আমি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের গুরুত্বের কথা বলছি না, বলছি সাধারণ মানুষের মাঝে এর প্রসারের কথা। মনে রাখবেন নিউটন যখন ক্যালকুলাস আবিষ্কার করছিলেন, তখন ব্রিটিশ নেভাল ফোর্সের অ্যাডমিরাল সাধারণ ভাগ অংক শিখছিলেন)। এই একশ বছরে বিজ্ঞানের অকল্পনীয় প্রসারের ফলে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে ইংরেজির সাথে বাংলার যে দূরত্ব সৃষ্টি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে সেটা মেটানো এক কথায় অসম্ভব এবং এই বাস্তবতা অস্বীকার করার মধ্যে বাহাদুরি নেই, আছে মূর্খতা।

এক্ষেত্রে আরও একটি অবান্তর উদাহরণ হোলো শিল্প-বিপ্লবোত্তর আধুনিক যুগে ইংরেজির উত্থানের কথা টেনে এনে প্রমাণ করার চেষ্টা করা যে, তখন তারা পারলে এখন আমরা পারবো না কেন? পারবো না এই জন্য যে First Mover Advantage একজনই নিতে পারে, সবাই না। ebay যখন '৯০ এর দশকে ব্যবসা শুরু অকল্পনীয় রকমের সাফল্য অর্জন করে তখন অনেকেই ভেবেছিলো যে, ওরা পারলে আমরা পারবো না কেন? এবং তারা সবাইই ফেইল করেছিলো কেননা ebay তে কেনাকাটা করলে ক্রেতা ও বিক্রেতা যে Feedback পায় সেটা তো আরেকটা ওয়েব সাইটে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। কার এতো সময় আছে আবার নতুন করে ঝামেলা শুরু করার। ইংরেজির আগে পৃথিবীতে যে Lingua Franca গুলো ছিলো সেগুলো প্রযুক্তির সুফল পায় নি। তখন সাধারণ মানুষ জ্ঞান চর্চা করতো না যেটা এখন করে। প্রযুক্তির কল্যাণে একটা শিশু ঘরে বসে টিভি দেখে, কোনো শিক্ষক ছাড়া বিদেশী একটা ভাষা শেখে, যা একশ বছর আগে মানুষ কল্পনাও করে নি। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ ব্রাইট মাইন্ড নিজের ভাষায় না লিখে ইংরেজিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো লিখছে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলোরই Language of Instruction ইংরেজি। এমন মনে করা কি বাস্তবসঙ্গত যে এরা নতুন করে আরেকটি ভাষা শিখে সবাই সে ভাষায় জ্ঞান চর্চা করা শুরু করবে কিংবা আমরা এতো জোড়ে দৌড়ানো শুরু করবো যে ওদের ধরে ফেলবো?

ফিরোজ আহমেদসহ অনেকে মনে করেন যে বিজ্ঞানের সব টেক্সটকে বাংলায় অনুবাদ করলেই সব কেল্লাফতে হয়ে যাবে। আবার অনেকের ধারণা: পরিভাষা সে আর এমন কি, অনুবাদ করে দিলেই হোলো (পাঠক বুঝলো কি না সেটা পাঠকের সমস্যা, বড়জোর অনুবাদকের সমস্যা, কিন্তু কোনোমতেই ভাষার সমস্যা না)। সম্ভবত তাদের বিশ্বাস যে বিজ্ঞানের টেক্সট আর জেফরি আর্চারের থ্রিলার অনুবাদ করা এক জিনিস। বাংলা একাডেমী ধরনের বিশাল একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে যার কাজ হবে বিজ্ঞানের অনুবাদ করা। সংকল্পটি মহৎ, সন্দেহ নাই কিন্তু ভুলতে পারি না যে The road to hell is paved with good intentions.

ক্রিকেটে "দুসরা" কোন ধরনের বোলিং এটা কোনো ক্রিকেট-প্রেমীকে বুঝিয়ে বলতে হয় না, তা তিনি যে ভাষারই লোক হোন না কেন। তা বোলিংটা "other one" না হয়ে "দুসরা" হোলো কেন? কেননা এটা আবিষ্কার করেছেন সাকলায়েন মুশতাক এবং তিনি যেহেতু উর্দুতে দুসরা বলেছেন সেহেতু অস্ট্রেলিয়ানরাও এই বোলিংকে দুসরাই বলে, অন্য কোনো শব্দ দিয়ে নির্দিষ্ট করার কসরত করে না।

বৈজ্ঞানিক পরিভাষা এমনই একটা অর্গানিক ডেভেলাপমেন্ট, এটা অহী মারফৎ নাযিল হয় না। প্রত্যেকটি পরিভাষার একটা পরম্পরা আছে। এই পরম্পরাটি কিন্তু এক দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফসল যেটার কোনো অনুবাদ হয় না অন্য কোনো ভাষায়। ঐ যে রেসের কথা বলছিলাম, সেই রেসে থাকলেই কেবল ঐতিহ্যটার সাথে পরিচিত থাকা যায়, অন্যথা না। পরম্পরাটি আমাদের নেই বলে আজগুবি শব্দ দিয়ে একেকটা জিনিসকে নির্দিষ্ট করতে হবে যেটা হয়তো কোনো সেন্স-মেক করবে না। DNA কে জীয়ন-সূত্র বা জীবন-লতিকা বলে কবিতায় উতরে যাওয়া হয়তো যাবে, কিন্তু একজন বিজ্ঞানী এমন উদ্ভট অনুবাদ গ্রহণ করবেন কেন? মোবাইল ফোনকে আজকাল মুঠোফোন লেখার রেওয়াজ শুরু হয়েছে কোনো কোনো জায়গায় (এখনও কাউকে বলতে শুনি নি)। তা আমরা যে ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করি সেটা কি মুঠোতে না রেখে বগলে রাখি? আর ল্যান্ড ফোন তাহলে বাংলায় কী হবে? তার-ফোন, দূরালাপনি না অন্যকিছু? যেখানে বিজ্ঞানের অ-তি সাধারণ ধারণাকে সুনির্দিষ্ট করার বাংলা শব্দ আমরা খুঁজে পাই না, সেখানে জটিল বিষয়গুলোর অনুবাদ হবে কীভাবে? ফিরোজ আহমেদ সম্ভবত ভাবেন যে বিজ্ঞান "লিখার" জিনিষ এবং "লিখার" অবকাঠামো থাকলে "অতি উচ্চ স্তরের টেক্সট" সব ক্ষণে ক্ষণে মুসাবিদা হয়ে যাবে বাংলা ভাষায় (আমি দেখেছি যে সরকারী কর্মকর্তাদের এ ধরনের উচ্চাশা থাকে, তারা অবকাঠামো থাকলে মুরগী দিয়ে হালচাষ করার প্রকল্পও বাস্তবায়িত করে দেয়ার আশ্বাস দেন)। সেক্ষেত্রে তার তো অনুবাদের একটা দায় আছে, নাকি? বেশী না মাত্র কয়েক' শ শব্দের সাধারণ একটা পিএইচডি থিসিসের Abstract এই লেখার পরিশিষ্টে যোগ করা হোলো। যিনি বিজ্ঞানের "সব টেক্সট" বাংলায় অনুবাদ করে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি সামান্য একটা Abstract অনুবাদ করতে নিশ্চয়ই পারবেন আর পাঠকরাও এতে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করতে যারপরনাই উৎসাহিত হবেন (পরিভাষাটুকু ইংরেজিতেই রাখুন, অসুবিধা নাই)।

তানভীরুল ইসলামসহ অনেকের কাছে আমি শুনেছি যে মাতৃভাষায় একটি ধারণাকে যেভাবে অন্তরস্থ করা যায় সেটা অন্য কোনো ভাষায় সম্ভব না। এই তত্ত্বের কোনো প্রমাণ আমি চারপাশে দেখি না এবং আমি এর ঘোরতর বিরোধী। প্রথমত, আমি মাতৃভাষা না বলে প্রথম ভাষা বলবো কেননা মাতৃভাষা বললে এমন একটা আবেগ তৈরি হয় যার বশবর্তী হলে অন্য ভাষার চর্চা "মায়ের" ভাষার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কাছাকাছি চলে আসে। এই অবস্থা বাস্তবানুগ না দেখে শব্দটি এক্ষেত্রে আমি পরিহার করতে চাই। পাঠকরা বিরক্ত না হলে একটু নিজের কথা বলি। আমি অল্প-বিস্তর পড়ালেখা জানা মানুষ এবং এতোটুকু দাবী করা সম্ভবত অন্যায় হবে না যে বাংলা ভাষায় আমার বোঝার, লেখার ও বলার ক্ষমতা গড়পড়তা বাংলাদেশীদের চেয়ে খুব কম হবে না। সে তুলনায় আমার ইংরেজি জ্ঞান সীমিত। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমি ইংরেজি ছাড়া সব বিষয় পড়েছি বাংলায়। কিন্তু আমি বিজ্ঞান বোঝার চেষ্টা করি ইংরেজিতে, বাংলায় না; তার কারণ একটাই: আমার কাছে ইংরেজিতে বুঝতে সহজ মনে হয়। বাংলায় পড়লে আমি মনের মধ্যে ছবিটা আঁকতে পারি না।

এই অভিজ্ঞতা আমার একার না। এই দেশেরই ইংলিশ মিডিয়ামের হাজার হাজার ছাত্র সব বিষয় ইংরেজিতে শেখে, তারা তো বাড়ীতে বাংলাতেই কথা বলে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (শুধুমাত্র জাতীয় ফলাফলের ভিত্তিতে) ক্যাডেট কলেজগুলোর শিক্ষা মাধ্যম এখন ইংরেজি হয়ে গেছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের কাছে তো আমি শুনি যে তাদের প্রথম ভাষা বাংলাই অনেক কঠিন, ইংরেজিতেই বরং বিজ্ঞান শিক্ষা অনেক সহজ। আমার বহু সহকর্মী ভারতীয়। এদের দুজনই কেবল হিন্দি মিডিয়ামে পড়ালেখা করেছে আর ঐ দুজনই বলে যে হিন্দি মিডিয়ামে পড়াশোনা করে বিজ্ঞান চর্চা তাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। আমরা না হয় ভারতীয় উপমহাদেশের সব ঔপনিবেশিক মানসিকতা আক্রান্ত মানুষ, চাইনিজ সহকর্মীদের অনুযোগ যে আরো ভয়াবহ। সরকারী প্রকল্পে বিজ্ঞান অনুবাদ যে কী বিচিত্র জিনিস চাইনিজদের জিজ্ঞেশ করলে বুঝবেন। DNA, PCR এমন কি বাংলাদেশ নামটিরও (শুনেছি ম্যান্ডারিনে বাংলাদেশের নাম মনজালা, এটি সম্ভবত আগের থেকেই ছিলো) অনুবাদ করতে গিয়ে তারা এমন এক চোঙ্গা দিয়ে পৃথিবী দেখা শুরু করে যে তার থেকে আর নিস্তার পায় না, পিএইচডি করতে এসে পস্তায় প্রতি মুহূর্তে আর বলে তোমরা বাংলাদেশী আর ইন্ডিয়ানরা কী ভাগ্যবান, বিজ্ঞান পড়েছো ইংরেজিতে। এই ভুল বুঝতে পেরে কি না জানি না, তারা এখন পূর্ণোদ্দমে ইংরেজি শিখছে নিজ দেশে এবং ২০৪০ এর মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইংলিশ স্পীকিং কান্ট্রি হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে চায়না! দেশের বাইরে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী শিশু কিশোর অন্য ভাষায় লেখাপড়া করছে কিন্তু তাদের প্রথম ভাষা বাংলা। এতে কি এদের বিজ্ঞান শিক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে? মধ্য যুগের এমন স্কলার কমই পাওয়া যাবে যারা Bilingual কিংবা Multilingual ছিলেন না। তাতে কি তাদের বিদ্যা-চর্চা থমকে গিয়েছিলো?

বিদ্যার্জন অনুশীলনের ব্যাপার। যে ভাষায় আপনি অনুশীলন করবেন, সে ভাষাতেই আপনি ভালো করে বুঝতে শুরু করবেন আস্তে আস্তে। প্রশ্ন হলো যে ভাষায় আপনি অনুশীলন করছেন সে ভাষার এমন সক্ষমতা আছে কি না যে সে ধারণ করবে প্রয়োজনীয় কনসেপ্টগুলো, ভাষাটি আপনার প্রথম না দ্বিতীয় সেটা খুব বড় বিষয় না। খুব ভালো হোতো যদি বাংলা ভাষার এই ক্ষমতা থাকতো, কিন্তু বাস্তবতা হোলো সে ক্ষমতা আমাদের নেই। বাংলা ভাষায় অনুশীলন করলে উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যন্ত আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন (সে রসদ আমাদের আছে)। এতোটুকু বিজ্ঞান শিক্ষা হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য যথেষ্ট কিন্তু এরপর থেকে আপনাকে ইংরেজিতেই বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে যদি আপনার পেশায় বিজ্ঞানের সংশ্লিষ্টতা থাকে। এটাই যদি অনতিক্রম্য বাস্তবতা হয় তাহলে যে ছোটো বেলা থেকে ইংরেজিতে বিজ্ঞান শিখবে সে তো বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষাকারীর চেয়ে পরবর্তীতে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবে। এই সুবিধাটি আমি অন্যায্য মনে করি কেননা কেবল অর্থ থাকলে আপনার সন্তান এ সুবিধাটি পায়। গ্রামের ছেলেটি মেধাবী হয়েও এ সুযোগটি পায় না। এই আনফেয়ার এডভান্টেজটা যেন না থাকে সেই প্রচেষ্টা একজনের কাছে হিপোক্রাসি ঠেকেছে, জাঁদরেল বাঙালি বটে!

আরেকটা মজার তত্ত্ব আছে। ইংরেজি আমাদের "শিখতেই" হবে কেননা ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা (এই কথাটা না বললে জাতে ওঠা যায় না) আবার পড়াশোনার মাধ্যম বাংলা হতেই হবে (এই কথাটা না বললে পলিটিকালি কারেক্ট হওয়া যায় না)। এই দুয়ের মিশ্রণ যে কী বিচিত্র জিনিস গত চল্লিশ বছরে আমরা ভালোই দেখেছি। বাংলাদেশে আমার এক ছাত্র য়ুনিভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে participate শব্দটার অর্থ জানতো না। সিডনীতে মোট এগারজন বাংলা মিডিয়ামে পড়া স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো National Anthem মানে কী, নয় জন উত্তর দিতে পারে নি (এর মধ্যে একজন নটরডেমিয়ানও আছেন)। এ প্রসঙ্গে একজন লেখকের মনোহর স্ববিরোধিতা উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না।

যে পাঠক তার গবেষণা বাংলায় লেখার প্রত্যয় জানান তাকে তিনি বাহবা দেন, উপদেশ দেন বেশি বেশি ইংরেজি জেনে অন্যের জন্য জ্ঞানের দুয়ার খুলে দেয়া হোক। কিন্তু গোটা জাতিকে Bilingual করার প্রচেষ্টা তার কাছে মনে হয় অসম্ভব। অর্থাৎ আমি-তুমি যারা ইন্টারনেটে পত্রিকা পড়ি তাদের ইংরেজি জানাটা জরুরী কিন্তু গ্রামের লোকজনদের ইংরেজি না জানলেও চলবে, তাদের জন্য আমরা দেবো আজগুবি অনুবাদের বিজ্ঞান বই। এবং এটি জ্ঞানের পুরোহিতিকরণ না, ইতরীকরণ! আমার আপনার মতো কিছু মানুষ ইংরেজি শিখে কর্মক্ষেত্রে তার সুবিধা না নিয়ে, য়ুনিভার্সিটির টিচিং ও রিসার্চ পজিশন ছেড়ে দিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সব অনুবাদ কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এমন ভাবনা শিশুতোষ চিন্তার জাদুঘরের একদম প্রথম কক্ষটায় স্থান পাওয়ার যোগ্য। আরো আছে! আমি আপনি ইংরেজিসহ অন্য ভাষা শিখবো এবং শিখে Bilingual ও Multilingual হবো কিন্তু গোটা জাতির Bilingual হওয়াটা অসম্ভব ব্যাপার, তাই আমরা সে চেষ্টা করবো না। কিন্তু সমস্যা হোলো কে ইংরেজি শিখবে আর কে শিখবে না এটা ঠিক করে দেবে কে? হাজার হাজার বই বাংলায় অনুবাদের চেয়ে একজন ছাত্রকে ইংরেজি শিখিয়ে দিলে যে তার পৃথিবীটা এমনিতেই অনেক বড় হয়ে যাবে এটা বোঝা নিশ্চয়ই রকেট সায়েন্স না।

আরও আছে! লেখকের মতে মধ্যচিত্ত প্রতিষ্ঠার নিরাপদ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে চায় (এই কথাটা পুরোপুরি সত্য বলে মনে করি)। আবার পরক্ষণে এও বলেন যে মধ্যচিত্তের প্রস্তাবিত সকলকে ইংরেজি শেখানোর পথ খুব দুরূহ, তার চেয়ে অনেক সহজ "সব" টেক্সট বাংলায় লিখে ফেলা (এটি যিনি বলছেন তাকে জিজ্ঞেশ করা প্রয়োজন যে জীবনে তিনি দুই ছত্র বিজ্ঞান অনুবাদ করেছেন কি না?)। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে মধ্যচিত্তের প্রস্তাবনাটিই আসলে বেশি কঠিন এবং মধ্যচিত্ত চাইছে গ্রামের একটি ছেলেও যেন তার কাতারে চলে আসে, যেন একটি বিদেশী ভাষা জানার সুবিধা সে নিজে একা ভোগ না করে। কিন্তু তারপরেও তিনি মধ্যচিত্ত এবং হিপোক্রাসি আক্রান্ত, কী বিচিত্র এই বিচার!

একটি জুজুর ভয় আমাদের মধ্যে খুব কাজ করে যে ইংরেজিতে বিদ্যাশিক্ষা করলে আমরা যেন আর কেউ বাঙালি থাকবো না, সব মগজের দাস হয়ে যাবো। ভারতীয় উপমহাদেশের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে মওলানা আবুল কালাম আজাদ ছাড়া কোন প্রভাবশালী নেতাটি চোস্ত ইংরেজি না জেনে নেতা হয়েছিলেন, বলুন দেখি? বাংলা সাহিত্যের কোন দিকপাল ইংরেজি সাহিত্যের কাছে অধমর্ণ নন? সত্যেন বসু কিংবা জগদীশ চন্দ্র বসু কোন ভাষায় বিজ্ঞান শিখেছিলেন? এরা কি সব মগজের দাস হয়েছিলেন? আমাদের সন্তানরা ইংরেজি শিখলে তাহলে কেন সব বিজাতীয় হয়ে যাবে বলে আমাদের ভয়? একশ বছর ধরে ইংরেজি শিক্ষা চালু রেখে ভারতীয়রা কি সব সংস্কৃতিহারা হয়ে গেছে, না একেনমিক পাওয়ার হাউজে পরিণত হয়েছে? ইংরেজি শিক্ষা-জনিত যে উন্নাসিকতা এবং আরেক পক্ষের হীনম্মন্যতা আমাদের চোখে পড়ে তার কারণ মাত্র কিছু লোক এই সুবিধাটা পায় এবং আমি এই পক্ষপাতের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। বরং আমি মনে করি, সার্বজনীন ইংরেজির চর্চা হলে আমাদের সন্তানেরা এমনভাবে তাদের দেশকে চিনতে শিখবে যার উদ্বোধন হয়তো আমাদের হয় নি। হ্যাঁ, তারা হয়তো বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে দেখতে শিখবে কিন্তু সেটা খুব খারাপ হবে বলে আমরা ভয় পাচ্ছি কেন? তাছাড়া আমরা যেভাবে দেশটাকে চিনেছি তাতে হানাহানি-কাটাকাটি কমেছে বলে তো মনে হয় না। তাদের বাংলাদেশ আমাদের বাংলাদেশের চেয়ে ভালোও তো হতে পারে।

শেষ করতে চাই একটি বাস্তবতার কথা বলে। আপনি যতোই ঔচিত্যমূলক আদর্শবাদে দীক্ষিত হয়ে মাতৃভাষার জয়গান করুন না কেন, বাস্তবতা হোলো, ভালো ইংরেজি যে জানবে সে এমন সব সম্ভাবনার মুখোমুখি হবে যা অন্য কোনো ভাষা জেনে সম্ভব না। প্রবাসে দেখেছি অসংখ্য মেধাবী বাংলাদেশী শুধুমাত্র ইংরেজির দখল না থাকার জন্য ভারতীয়দের থেকে পিছিয়ে পড়ে। খারাপ খবর হোলো আমার জীবদ্দশায় এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোনো লক্ষণ আমি দেখছি না। আর ভালো খবর হোলো আপনিও ভালো ইংরেজি শিখে অন্য অনেক দুর্বলতা ঢেকে রাখতে পারবেন, নিজ দেশে ও প্রবাসে। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ খবর হোলো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষ বিচিত্র ধরনের দিবাস্বপ্নের কথা বলে আপনাকে পলিটিকালি কারেক্ট বানানোর চেষ্টা করবেন যেগুলো ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে বিরক্তি ছাড়া অন্য কিছুর উদ্রেক করে না। যে টেক্সটের পাঠক গোটা দেশে পাঁচশ জন নেই এবং ক্রেতা নেই দশ জন (বাকীরা সব বইটা ফটোকপি করবে) সেই টেক্সট বাংলায় অনুবাদ করতে খরচ করবো লক্ষ লক্ষ টাকা এবং মূল প্রকাশককে দিতে হবে লক্ষ ডলার রয়ালটি বাবদ; এবং অনূদিত বইটি কী বস্তু হবে সেটাও আমাদের জানা নেই। তাছাড়া কে করবে এই অনুবাদ? চল্লিশ বছর ধরে বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষা বলবত রেখেও আমরা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সহজবোধ্য বাংলায় বিজ্ঞান বই লিখতে পারি না, যে অভিযোগ ফারসীম মোহাম্মদী যথার্থই করেছেন। এখন পর্যন্ত যে দেশে "মাতৃভাষা" বাংলার চূড়ান্ত কোনো ব্যাকরণ বই লেখা যায় নি (হুমায়ুন আজাদ প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাংলা একাডেমীকে, পূর্ণাঙ্গ একটি ব্যাকরণ বই লেখার, তারা রাজী হন নি) সে দেশে স্বপ্ন দেখবো যে বৈজ্ঞানিক টেক্সটের অনুবাদ হবে সব কাতারে কাতারে।

বারো বছর আলাদা একটি বিষয় হিসেবে ইংরেজি শিক্ষার পলিসির যে মনুমেন্টাল ফেইলিয়ার হয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সফল, বিত্তবান ও যারা এই পলিসি ফেইলিয়ারের জনক, তারা কিন্তু খুবই বুদ্ধিমান, তারা বোঝেন সব ফাঁক-ফোঁকর আর তাই নিজেদের ছেলেমেয়েদের তারা পড়ান ইংলিশ মিডিয়ামে এবং এইচএসসি'র পরেই পার্সেল করে পাঠিয়ে দেন বিদেশে। আর সাধারণদের জন্য আছে মাতৃভাষা আর দেশপ্রেমের সবক। ভুল বুঝবেন না, তারাই ঠিক কাজটা করেন এবং আমার অনুরোধ আপনারাও একই কাজ করুন, আপনার জন্য সময় থেমে থাকবে না। ভালো ইংরেজি শিখুন, অবশ্যই ইংরেজিতে বিজ্ঞান শেখার চেষ্টা করুন এবং ইংরেজিতে ভাবনার অনুশীলন করুন, আপনার বাংলা ভালো হবে।

ফাহাম আব্দুস সালাম: বিজ্ঞান-গবেষক ও লেখক।

পরিশিষ্টঃ এই অংশটুকু তাদের জন্য, যারা সায়েন্টিফিক ইংলিশ জিনিসটা কী তার অ-তি সামান্য ধারণা পেতে চান। পরিভাষা ছাড়া বিজ্ঞান হয় না, তবুও পরিভাষার অনুবাদের কথা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকুন, পরীক্ষা করুন যে ক্রিয়াপদ, বিশেষণ আর বিশেষ্যগুলো বাংলায় অনুবাদ করা সম্ভব কি না? আর মনে রাখবেন, Abstract কিন্তু লেখা হয় সাধারণ বিজ্ঞান পাঠকদের জন্য, যে সমস্ত বিজ্ঞান বইয়ের অনুবাদের কথা হয়েছে সেগুলো এর চেয়ে শতগুন জটিল।

Abstract

The cytokines interleukin-3 (IL-3), interleukin-5 (IL-5), and granulocyte-macrophage colony stimulating factor (GM-CSF) exhibit overlapping activities in the regulation of hematopoietic cells. All these cytokines signal via a specific alpha receptor () and the shared human beta common subunit (hβc). This thesis explores IL-3 and GM-CSF receptor binding and activation mechanisms.

GM CSF is an important mediator of inducible hematopoiesis and inflammation with a critical role in the function of alveolar macrophages. GM CSF signals via GM CSFR and hβc. This thesis investigated the role of the Ig-like domain of the GM CSFR in GM CSF binding and signalling. Deletion of the Ig-like domain abolished direct GM CSF binding and decreased growth signalling in the presence of hβc. Val51 and Cys60 were found having critical roles in binding to the  receptor with Arg54 and Leu55 also important. High affinity binding in the presence of hβc was strongly affected by mutation of Cys60 and also reduced by mutation of Val51, Arg54 and Leu55. Growth signalling was most severely affected by mutation of Cys60. The results indicated a previously unrecognized role for the Ig-like domain, and in particular Cys60, of GM CSFR in the binding of GM CSF and subsequent activation of cellular signalling.