রামু সহিংসতার চার বছর: একটি অপ্রিয় সত্যপাঠ

Published : 30 Sept 2016, 03:52 AM
Updated : 30 Sept 2016, 03:52 AM

২৯ সেপ্টেম্বর দিনটি রামু সহিংসতার দিন হিসেবে পরিচিত। ৩০ সেপ্টেম্বর একই ঘটনা ঘটেছিল উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়াতে। কিন্তু শুরুটা রামু থেকে হয়েছিল বলেই ঘটনাটি রামু সহিংসতা নামে পরিচিতি পায়। দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত এই ঘটনার চতুর্থ বর্ষপূর্তি হল। তবে এই পূর্তি আনন্দের নয়, বেদনার। চার বছর আগের এক বিভীষিকাময় রাতের বুক-কাঁপানো স্মৃতি স্মরণ করার দিন এটি।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ঘটনার প্রথম বছর থেকে স্মরণানুষ্ঠানের পরিধি সংকুচিত হতে থাকে। রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ নামে এক যুব সংগঠন ২৯ সেপ্টেম্বরে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এ বছর সংগঠনটি ক্ষুদ্রপরিসরে দিনটি স্মরণ করেছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ ছিল আয়োজনটি। রামু, উখিয়া, পটিয়া ছাড়াও কিছু কিছু সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থানে এই দিন উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করে থাকে।

২.

রামু সহিংসতার দিন স্মরণ করার বিষয়ে একটা মহল যে মোটেও একমত নন সেটা স্পষ্ট। তাদের মতে, পুড়িয়ে দেওয়া বিহারগুলো পুননির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। আগে যা-ই ঘটে থাকুক, এখন বিহারগুলোর নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলোও বানিয়ে দেওয়া হযেছে।সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এত কিছু করার পরও ঘটনাটি কেন সামনে টেনে আনা হয়? কেন এটি ভুলে থাকা যাচ্ছে না? ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধরা কি তাতে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছে না?

২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের স্মরণ-সভায় অযাচিতভাবে প্রবেশ করে রামুর এক রাজনৈতিক নেতা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, "পরের বছর থেকে (চলতি বছর) এভাবে অনুষ্ঠান না করে মাঠে নিয়ে সম্প্রীতি-সমাবেশ করা হবে।"

প্রথম বছর থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ২৯ সেপ্টেম্বর পালন করতে গিয়ে আমরা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাব না। কারণ রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার মঞ্চ তৈরি করে দিলে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, রামু সহিংসতার ঘটনাটি রাজনৈতিক দোষারোপের চোরাগলিতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, একদম শুরু থেকেই। তাছাড়া এ ঘটনা কেন্দ্র করে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ধরাশায়ী হয়েছেন। একই পরিণতি থেকে বেঁচে যাওয়া আরও কিছু মানুষকে সুবিধা নেওয়ার জন্য মঞ্চ তৈরি করে দেওয়ার মানে হয় না।

দুঃখজনক, একটা মহল ঠিক এটাই চাচ্ছেন। সুযোগসন্ধানী এবং লেজুড়বৃত্তিতে অভ্যস্ত কিছু লোক সকল দল, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীতে থাকে। আমাদের মধ্যেও আছে। ওদের দিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বরের স্মরণ-সভা লক্ষ্যচ্যুত করার চেষ্টা চলছে।

উল্লেখযোগ্য যে, ২৯ সেপ্টেম্বরে কোনো স্মরণ-সভায় নির্দিষ্ট কোনো দল বা ব্যক্তিকে দায়ী করা হয় না কিংবা সরকারবিরোধী কোনো বক্তব্য দেওয়া হয় না। এই স্মরণ-সভা থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয় যে, আমরা মনে করি রামু সহিংসতা কোনো দলীয় মনোভাব থেকে হয়নি, 'এটা পরিকল্পিত একটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছিনিয়ে আনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই অপশক্তিকে বাড়তে দেওয়া যায় না। তাই রামু সহিংসতার মতো ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক হামলার ন্যায়বিচার হওয়া আবশ্যক। এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমাদের নৈতিক কর্তব্য হল, এ কাজে রাষ্টকে আন্তরিক সহযোগিতা করা।'

এটুকু বলার অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান নিশ্চয়ই আমাদের দিয়েছে।

পরিবারের কেউ মারা গেলে আমরা আজীবন তাকে স্মরণ করি, তার পারলৌকিক সদগতি কামনা করে পূণ্যকর্ম করি। ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধ বিহার ও পল্লীতে হামলা, জ্বালাও-পোড়াও এবং লুটপাটের ঘটনায় আমরা অষংখ্য বুদ্ধমূর্তি হারিয়েছি। ধ্বংস করা হয়েছে শত শত বছরের প্রাচীন পুরাকীর্তি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী নন তাদের অনেকে মনে করেন, বৌদ্ধরা আদতে মূর্তি-পূজারী। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। গৌতম বুদ্ধ সশরীরে জীবিত না থাকলেও তাঁর দেহধাতু ত্রিলোকে এখনও রয়েছে। বুদ্ধ বলেছেন:

"হে ভিক্ষু-ভিক্ষুণী সংঘ, উপাসক-উপাসিকা সংঘ, আমার মহাপরিনির্বাণের পর তোমরা ত্রিপিটকের প্রতিটি বাণী এক একজন বুদ্ধ বলে জানবে। ত্রিপিটকের শিক্ষা প্রতিপালন করবে। তাহলে তোমরা তখনও মার্গফল এমনকি অমহত্ব ফলও লাভ করতে সক্ষম হবে।"

গৌতম বুদ্ধের ধাতু দিয়ে তৈরি বুদ্ধমূর্তি, ত্রিপিটক এবং গৌতম বুদ্ধের ধর্মশাসন এখনও জগতে বিদ্যমান। আমরা সেই বুদ্ধকেই পূজা করি। রামু-সহিংসতায় বুদ্ধমূর্তিগুলোর উপর এমনভাবে অস্ত্র চালানো হযেছে যেভাবে কোনো জীবন্ত মানুষের উপর চালানো হয়। বুদ্ধের সমকালীন সময়ের তালপাতায় লেখা মহামূল্যবান পুঁথিগ্রন্থ এবং বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য ত্রিপিটক খণ্ড পুড়েছে যা আর কোনোভাবেই সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তাই আমরা শ্রদ্ধাভরে দিনটি স্মরণ করতেই পারি।

একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, ষোলই ডিসেম্বর, পনেরই ও একুশে আগস্ট এদেশের মানুষ স্মরণ ও উদযাপন করে থাকেন। সেটিও অনেকের কাছে অপছন্দনীয় হতে পারে। কিন্তু এরপরও তো আমরা ঘটনাবহুল এই দিনগুলো স্মরণ ও উদযাপন করি। করতেই হয়।

৩.

আমরা মনে করি, সম্প্রীতি-সমাবেশেরও অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা সারা বছর ধরে হয় না কেন? সাম্প্রদায়িক এসব হামলা প্রতিরোধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিকল্প নেই। রামু-সহিংসতার পর একটি পক্ষ বলে বেড়াচ্ছে যে, এই ঘটনায় স্থানীয়রা জড়িত নয়। এই পক্ষের মতে, হামলাকারীরা রোহিঙ্গা, জঙ্গি, দুর্বৃত্ত ইত্যাদি। ঘটনার এক দিন পর, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বৌদ্ধ বিহার ও পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে ২০৫ জনের নাম প্রকাশ করে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৮০ জন রামুর বলে নাম ও ঠিকানাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে পুলিশ ১৫ হাজারের বেশি লোকের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের সিংহভাগ রামুর বাসিন্দা। আদালতে চার্জশিট প্রদানকালে এই সংখ্যা ১ হাজারে নেমে আসে। এই আসামীদেরও সিংহভাগ রামুর। অভিযোগ আছে যে, পুলিশ নিরীহ লোকদের মামলার আসামী করেছে। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নাম ও ছবি ছাপানো হয়েছে অনেক আসামীর। পুলিশ তাদের ধরার পর কতিপয় নেতা তড়িঘড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন ওদের। অনেক ক্ষেত্রে এ কাজে সুবিধাভোগী কতিপয় বৌদ্ধকে ব্যবহার করা হয়েছে।

এই স্পর্শকাতর ঘটনার মামলায় হয়তো কিছু নির্দোষ মানুুষ হয়রানির শিকার হতে পারে, জেলও খাটতে পারে। কিন্তু রামু সহিংসতায় রামুর মানুষ জড়িত ছিল না বলা ঠিক হবে না। জ্বালাও-পোড়াও মধ্যরাতে হলেও মিছিল-মিটিং হয়েছে সন্ধ্যা থেকে। এক পর্যায়ে তা ছড়াতে থাকে। শুরু থেকে যারা মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে, পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়েছে, তারা তো রামুরই লোক। এক কথায়, রামু সহিংসতার ক্ষেত্র তৈরি করা থেকে হামলা, লুটপাট, জ্বালাও-পোড়াও পর্যন্ত যারা অংশ নিয়েছে তাদের সিংহভাগ রামুর বাসিন্দা।

দিবালোকের মতো স্পষ্ট এ সত্য আড়াল করার উপায় আছে বলে মনে হয় না। যা সত্য তা হল, রামুর এগার ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বাস করেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৩-৪ লাখ মুসলমান। রামু সহিংসতায় সকল মুসলমান অংশগ্রহণ করেননি। অনেকে রাতে ঘটনা ঘটার বিষয়ে জানতেও পারেননি। জেনেছেন পরের দিন। ঘটনার রাতে অনেকে বৌদ্ধ বিহার ও পল্লী রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। কেউ কেউ নিজেদের বাড়িঘরে বৌদ্ধদের আশ্রয় দিয়েছেন। কেউ কেউ প্রতিরোধ করতে গিয়ে হামলাকারীদের রোষানলে পড়েছেন, আঘাতপ্রাপ্তও হয়েছেন।

এই চার বছরে রামু সহিংসতার বিচার না হলেও সেই রাতের ঘটনার ইতিহাস মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে আসামীদের প্রথম ১-৫ জনের মধ্যে ১ নং ব্যক্তি উত্তম কুমার বড়ুয়া এখন কোথায়? তিনি তো মামলার ১ নং আসামী। ২ নং ব্যক্তি নুরুল ইসলাম সেলিম, ৩ নং ব্যক্তি আবদুল মোক্তাদির, ৪ নং ব্যক্তি ওমর ফারুক এবং ৫ নং ব্যক্তি সাদ্দাম হোসেন। উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেইসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননাকর ছবি প্রকাশের অভিযোগ তুলে হামলা করা হয়। তিনি পেশায় দলিল লেখক ছিলেন।

নুরুল ইসলাম সেলিম রামু চৌমুহনী চত্বরে প্রথম সমাবেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখে পরের দিন হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন। আবদুল মোক্তাদিরই প্রথম উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেইসবুক একাউন্টে পবিত্র কোরআন অবমাননাকর ছবিটি আবিষ্কার করেন এবং ফটোকপি করে লোকজনের মাঝে বিলি করেন।

ওমর ফারুক কম্পিউটার ও মোবাইল সার্ভিসিং দোকানের মালিক। উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেইসবুক একাউন্টে ট্যাগ করা পবিত্র কোরআন অবমাননাকর ছবিটি তার দোকান থেকে আবিষ্কার করা হয় এবং তিনিও ছবিটি ফটোকপি করে বিলি করে উত্তেজনা ছড়ান। সাদ্দাম হোসেন ফকিরা বাজার থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এই পাঁচ জনের মধ্যে আবদুল মোক্তাদির ছাড়া বাকিদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। উত্তম কুমার বড়ুয়া এবং ওমর ফারুক পলাতক থাকলেও, নুরুল ইসলাম সেলিম এবং সাদ্দাম হোসেন আছেন প্রকাশ্যে। বরং রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন তারা। চার বছরেও আইন তাদেরকে ছুঁতে না পারলেও তাদেরকে স্থানীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। নুরুল ইসলাম সেলিম রামু প্রেস ক্লাবের সভাপতি হিসেবে বহাল আছেন এবং কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসকের প্রেস সচিব হয়েছেন। সাদ্দাম হোসেন রামু-কক্সবাজার সদর আসনের সাংসদের ডান হাত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

সাংবাদিক নেতৃত্ব এবং ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকা মানে তাদের পুরস্কৃত করার সমান নয় কি?

অথচ রামু সহিংসতার পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে জামায়াত নেতা তোফাইল আহমদকে আইনের আওতায় আনা যেতে পারলে, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে, একই ঘটনার বাস্তবায়নকারীদের অন্যতম হিসেবে তালিকার শীর্ষে থাকা আসামীরা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে ক্ষমতা ভোগ করবে কেন?

এসব বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। আমি কেবল আমার লেখনীর মাধ্যমে সত্যটা প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি, রামু-সহিংসতা একটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। সেদিন হামলা হয়েছিল দুটি সম্প্রদায় এবং দুটি ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে। তদন্ত প্রতিবেদনগুলোতেও একটি বিষয় ফুটে উঠেছে। তা হল, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত-শিবিরের সমর্থক এবং নেতা-কর্মীরা দলমতনির্বিশেষে হামলা ও লুটপাটে অংশগ্রহণ করেছে।

কিন্তু ঘটনার পর অপরাধীরা কুকর্মের পরিণতি ভোগ করা থেকে আত্মরক্ষার জন্য দলীয় পরিচয় সামনে নিয়ে আসছে। দল ও দলীয় নেতারা তাদের কুকর্মের দায়ভার নেবেন কেন?

৪.

রামু সহিংসতার চার বছর পর এসে বলব, এলাকায় সম্প্রীতি ফিরে আসেনি তা নয়, তবে আরও উদ্যোগ নিতে হত। যে যা-ই বলুক, লোকদেখানো সম্প্রীতি দিয়ে কাজ হয়নি। এখনও উভয় সম্প্রদায়ের কিছু কিছু মানুষের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ, অভিমান ও প্রতিহিংসা রয়ে গেছে। এ সত্য আড়াল করা উচিত হবে না। কারণ সম্প্রীতির পূর্ণ উত্তরণ ঘটাতে হলে এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।

২৯ সেপ্টেম্বরের স্মরণ-সভা বানচাল করার চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে সারা বছর ধরে সম্প্রীতির স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য এর সুষ্ঠু বিচার যেমন প্রয়োজন তেমনি আঘাতপ্রাপ্ত সম্প্রীতির জায়গাও সমৃদ্ধ করা দরকার।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যবাহী এই বাংলাদেশে পারস্পরিক সম্প্রীতি ছাড়া শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব নয়। সার্বক্ষণিক আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারা বসিয়ে বাঁচার নাম সম্প্রীতি নয়। সুখে-দুঃখে উত্থানে-পতনে একে অপরের পাশে থাকার নামই সম্প্রীতি। যে দেশের মানুষ মৃতপ্রায় নবজাতকের জীবন বাঁচানোর জন্য এতটা উদার ও মনুষ্যত্ববান হতে পারে সেদেশের মানুষের হাতে কারও প্রাণ যেতে পারে না। তাদের হাতে দেওয়া আগুন কারও ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির ও বিহার পোড়াতে পারে না।

যে অনাচারের বিরুদ্ধে একাত্তরে এদেশের মানুষ লড়াই করেছে, সেই একই অনাচারে লিপ্ত হওয়া কিছুতেই তাদের শোভা পায় না। এর প্রমাণ ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আবারও মিলেছে। কেবল ২৯ সেপ্টেম্বরের রাতটা ছিল হামলাকারীদের। ৩০ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে গর্জে উঠেছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। বাকিটা সবার জানা।

দেশ-বিদেশের সেই হৃদয়বান মানুষদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। রামু-সহিংসতার কথা স্মরণ করতে গিয়ে তাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

জয়তু মানবতা, জয়তু বাংলাদেশ।