উরি-কাণ্ডে ফের উত্তেজনা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে

সুখরঞ্জন দাশগুপ্তসুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
Published : 21 Sept 2016, 05:01 AM
Updated : 21 Sept 2016, 05:01 AM

কাশ্মীরের উরি সেক্টর কাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর এবং বিজেপি জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি প্রকাশ্যেই বলেছেন, "ভারত-কাশ্মীর-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল, তা খতিয়ে দেখা দরকার।"

ঐ ঘটনার পর ভারতের ১২৫ কোটি মানুষ দাবি তুলেছেন, 'দাস ফার অ্যান্ড নো ফারদার'। উরির ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৬৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে কী ঘটেছিল কাশ্মীরসহ বিভিন্ন সীমান্তে। সে বছর আগস্টের শেষ থেকেই আইয়ুব খান দলে দলে সন্ত্রাসীবাদী জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকিয়ে দিয়ে বহু লোককে হত্যা করেন। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। যুদ্ধশেষে দেখা গেল আইয়ুব এবং তার প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের বাহিনী পর্যুদস্ত হয়েছে।

আবার সেপ্টেম্বর মাস। ২০১৬। কী হবে বা কী হতে চলেছে, তা দেখতে এই বিশাল গণতান্ত্রিক দেশের বাসিন্দারা উৎকণ্ঠিত হয়ে আছেন। বিশ্ব স্তম্ভিত।

এই ধরনের ঘটনা ঘটার খবর আগেই ছিল বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সব রাজ্যকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু উরি সেক্টরে সে সতর্কবার্তা পৌঁছাল না কেন? এই প্রশ্নে যখন গোটা দেশ তোলপাড়, তখনই অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করের দিকে।

এখনও পর্যন্ত যে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওযা গিয়েছে তাদের মধ্যে দুজন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। গন্দাধর দলুই এবং বিশ্বজিৎ ঘড়াই।সরকারিভাবে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং নওয়াজ শরীফকে বয়কট করা হোক। এর প্রথম ধাপ হিসেবে আগামী নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্ক দেশগুলোর যে সম্মেলন হওয়ার কথা, সেখানে ইতোমধ্যে যোগ দেবে না বলে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছে। ভারতের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কংগ্রেসের এ কে অ্যান্টনি বলেছেন, "অনেক সহ্য করা হয়েছে। আর নয়। এবার, মোদীজী, একটা কিছু করুন।"

আশ্চর্যের ব্যাপার, এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, সেখানে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অনুপস্থিত ছিলেন। তা নিয়েও দিল্লীতে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের কাশ্মীরের ঘটনা এবং উরি-কাণ্ডের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকবে না, জাতিসংঘের বাৎসরিক অধিবেশন ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে, ভারতের পক্ষে সেখানে যাচ্ছেন না নরেন্দ্র মোদী। তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন সুষমা স্বরাজ। আর পাক-প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কে পৌঁছে গিয়েছেন।

আমার মনে আছে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় আমার সাংবাদিকতার বয়স এক বছরও হয়নি, কিন্তু আমার বস আমাকে পরীক্ষা করার জন্যই হয়তো এয়ারপোর্ট-টু-এয়ারপোর্ট ডিউটি দিয়েছিলেন। ব্রিগেডের জনসভায় লালবাহাদুর শাস্ত্রী পাকিস্তানের প্রস্তুতি নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তা এরূপ:

"৩ সেপ্টেম্বর সকালে আমি যখন সাউথ ব্লকের অফিসে কাজ করছি, তখন আমার কাছে একটি ফোন এল। ফোনটি করেছিলেন সেই সময়কার সেনাপ্রধান জেনােরেল জয়ন্তনাথ চৌধুরী। গোটা কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবে জঙ্গি পাঠিয়ে তাণ্ডব শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই অনেককে হত্যা করেছে।

আমি ঘটনা শুনে জেনারেলকে বললাম, 'সীমান্তে পাকিস্তান যা করছে তা দেখার দায়িত্ব আপনার। আর রাজনৈতিক বিষয় হলে সেটা আমি দেখব।'"

তারপর তিনি বললেন– "এই বাঙালি জেনারেল চৌধুরীর নেতৃত্বে যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি।" তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন নতুন স্লোগান দিয়ে– 'জয় জওয়ান, জয় কিষান'।

এই যুদ্ধে আমেরিকা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। তাই আমেরিকা থেকে গম আনা বন্ধ করার কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লবস্ত্র সেন। তিনি সে দাবি মেনেও নিয়েছিলেন।

এবারে যে যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে তা কি সত্যিই হবে? মোদীর বন্ধু বারাক ওবামা কি হতে দেবেন? প্রশ্নটা কিন্তু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী সকলের মনেই এসেছে। ভারত কি যুদ্ধে যেতে চায়? পশ্চিমা দেশে একটা প্রচলিত কথা আছে– পাকিস্তান হল তিন 'এ'– আমেরিকা, আর্মি এবং আল্লাহ। ১৯৬৫এর যুদ্ধের পর পাকিস্তান ভারতের বেশ কিছুটা অংশ কিছুদিনের জন্য রাখতে পারে। কিন্তু ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন সেভিয়েত নেতৃত্বের উদ্যোগে তাসখন্দে পাকিস্তান ও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকে শান্তির পক্ষে সওয়াল করার একটি চুক্তি হয়। চুক্তি সই হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাসখন্দের একটি হোটেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লালবাহাদুর শাস্ত্রী মারা যান।

উরির ঘটনায় পাকিস্তান যে সরাসরি যুক্ত তার যাবতীয় প্রমাণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল, তথা জাতিসংঘের দ্বারস্থ হচ্ছে ভারত। ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বৈঠকের শিষ্টাচার ভেঙেই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর তার ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের বৈঠকে যে আরও খানিকটা দূরত্ব তৈরি হবে তা বলা বাহুল্য। উরির সেনা-ঘাঁটিতে মারণ-হামলার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাকিস্তানকে জঙ্গি বলে উল্লেখ এবং নরেন্দ্র মোদীর কড়া বার্তাতেই স্পষ্ট, এই হামলা সহজভাবে নিচ্ছে না ভারত। সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমন করার উদ্যোগ নিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রক যে টালবাহানা করবে সেটারও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে সাউথ ব্লক।

এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে ভারত সাধারণত পাকিস্তানের জঙ্গি যোগাযোগের যাবতীয় প্রমাণ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়ে উত্তেজনা কমানোর আর্জি জানিয়ে থাকে। উরির ঘটনার পর ভারত যে দিকটাও এড়িয়ে যাবে বলেই মনে করছেন ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা। এনডিএ সরকারের বিদেশনীতি হিসেবে সার্কএর পুর্নগঠন এবং আঞ্চলিক সমন্বয়ের ওপরই প্রথম থেকে জোর দিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই তিনিই নভেম্বর ইসলামাবাদে পাক-সফরে যাচ্ছেন না।

শুরুতেই বলেছি, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ঐ রাজ্যের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কোনো কাজ করতে পারছেন না। কারণ তিনি এমন একটি দলের সঙ্গে গাঁটাছাড়া বেঁধেছেন যারা কাশ্মীর থেকে সংবিধান-স্বীকৃত ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নিতে চায়। কাশ্মীরের হুরিয়তের নেতারা সাম্প্রতিক ঘটনায় ভারতের সংসদের সর্বদলীয় বৈঠকে আসেননি। হুরিয়ত নেতারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বছরের পর বছর মদত দিয়ে আসছেন। তাদের কাছে প্রশ্ন– ১৯৭১ সালে যারা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ৩০ লক্ষ হিন্দু-মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে গেলে কি সমস্যার সমাধান হবে?

মেহবুবার বাবা মুফতি মহম্মদ সঈদ যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় তিনি বহুবার হুরিয়ত নেতাদের সতর্ক করেছেন। কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এখন যুদ্ধ এড়িয়ে গিয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের দিকে এগোতে হবে। কিন্তু কোন সে পথ তা ঠিক করতে পারে দিল্লী আর ইসলামবাদ। দুদেশের জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কোন পথে যাবে তার দায়িত্বও এই দুই দেশের রাষ্ট্রনেতাদের।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত কুমার রায় ও জ্যোতির্ময় চট্টোপধ্যায় মনে করেন, এখন যুদ্ধ হলে পাকিস্তান চীনের সাহায্য পাবে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে। তার ফল যে কী মারাত্মক হতে পারে তা কল্পনাতীত। এশিয়ায় পাকিস্তানকে সন্ত্রাসমুক্ত না করা পর্যন্ত কোনো শান্তি ফিরে আসবে না। কারণ নওয়াজ শরীফের সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এলেও তাকে আসলে পরিচালনা করে পাক গুপ্তপ্তর সংস্থা আইএসআই। তারা যদি মনে করে তাহলে নওয়াজ থাকবেন; না চাইলে তিনি থাকবেন না।

আবার একটু '৭১ সালের ঘটনার দিকে তাকানো যাক। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের বিধান সভা এবং জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দল। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরই সরকার গড়ার কথা। তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। আর তার পরামর্শদাতা পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো।

সেই আওয়ামী লীগকে সরকার গড়তে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবর রহমানরা যখন আন্দোলন করছেন, সে সময় সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল খানসেনারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং হুরিয়াত নেতাদের স্বপ্নভঙ্গও এই পথেই ঘটবে। আজ যে আইএসআই হুরিয়ত নেতাদের অস্ত্র ও অর্থসাহায্য করে চলেছে, পাকিস্তানে গেলে বা পাকিস্তানবিরোধী কোনো মন্তব্য করলে এদের কী অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। তার অতীত অভিজ্ঞতাও ইতিহাসে রয়েছে।

২০১৪ সালে কাশ্মীর নির্বাচনে আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মেহবুবা মুফতি। সে নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্সকে হারাতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মধ্যপন্থী হুরিয়তের সমর্থনও পেয়েছিলেন মেহবুবা। আর অন্যদিকে বিজেপির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল উত্তর-পূর্ব বা কাশ্মীর সীমান্তে রাজ্যের ক্ষমতা দখল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধেই সে রাজ্যে সরকার গড়েন তিনি। পিডিপি এবং বিজেপির মতো পরস্পরবিরোধী দুটি দলের এই বোঝাপড়া কার অঙ্গুলিহেলনে ঘটল সেটাই চিন্তার ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের।

এই ঘটনায় গোটা দেশ যখন মুহ্যমান, সকলেই শোকস্তদ্ধ, তখন একজনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বঙ্গেশ্বরী মমতা বঙ্গোপাধ্যায়। উরির ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর এই কপি লেখা পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দিয়ে উঠতে পারেননি। এই আক্রমণের প্রতিবাদে যখন গোটা দেশের সব রাজনৈতিক দল সোচ্চার তখন মমতা কেন চুপ? তার দলেরই একাংশ মনে করছে, সংখ্যালঘু ও অবাঙালি ভোট হারানোয় ভয়েই মুখ খুলছেন না তিনি।

পাঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার ঘটনার স্মৃতি না মেলাতেই আবার জইশ-ই মহম্মদ জঙ্গিরা হামলা চালায় কাশ্মীরের উরি সেনা-ঘাঁটিতে। হামলায় এ পর্যন্ত ২০ জন সেনার মৃত্যু হয়েছে; আরও ১৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে ঐ ঘটনার জবাব দিতে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে যে জঙ্গি ঘাঁটি রয়েছে সেখানে আক্রমণ চালাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংএর বাড়িতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসেছে। ঐ বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও সামগ্রিক পরিস্থিতির বিষয়ে রিপোর্ট নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী সবুজ সঙ্কেত দিলেই সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধংস করার কাজ শুরু হবে।

গত রোববার উরি সেনা-ঘাঁটিতে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘাঁটিতে তখন ডোগরা ও বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানদের বেশিরভাগই ঘুমোচ্ছিলেন। আচমকা শুরু হয় বিস্ফোরণ। একের পর এক গ্রেনেড ফাটতে থাকে। তাঁবু থেকে বেরিয়ে পালাতে গিয়ে গুলির মুখে পড়েন সেনারা। শুরু হয় গুলির লড়াই। সংঘর্ষে ও তাঁবুর আগুনে পুড়ে মারা যান ১৭ জন। জখম হয়েছেন আরও ২৮ জন। তাদের মধ্যে ১৯৯ জনের অবস্থা গুরুতর ছিল। পরে গুরুতরদের মধ্যে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।

এদিকে এই হামলার ঘটনায় কেন্দ্রের মোদী সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আর একবার প্রশ্ন উঠল। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ বিজেপি সরকার। এর পাশাপাশি দেশের গোয়েন্দা ব্যবস্থার দক্ষতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কেও বড়সড় প্রশ্ন উঠে এল। সেনাকর্তাদেরই ধারণা, উরি সেনা-ঘাঁটির ভেতর কী হচ্ছে তার পুরো খবর রাখত জঙ্গিরা। সে কারণে ঘাঁটির দায়িত্ব বদলের সময়টি বেছে নিয়েছিল। ডোগরা বাহিনীর হাত থেকে ঐ ঘাঁটির দায়িত্ব নিচ্ছিল বিহার রেজিমেন্ট। ঘাঁটির কোথায় ডিজেল মজুত আছে তাও জানত হামলাকারীরা। ফলে ঐ আক্রমণটা যে ছিল খুবই পরিকল্পনামাফিক তা খুব স্পষ্ট।

এদিকে পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমান্ত জঙ্গি হানার ঘটনাও বেড়েই চলেছে। গত ২ জানুয়ারি পাঞ্জাবের পাঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা হয়েছিল। সেখানে জইশ জঙ্গিরা হামলা চালায়। গত সপ্তাহে এই পাক জঙ্গি সংগঠন একটি ভিডিও প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় হিজাবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির হত্যার উপযুক্ত বদলা নেওয়া হবে। দিন সাতেক পরই ঘটল এই ঘটনা। ২০০২ সালের পর এত বড় জঙ্গি হানার ঘটনা জম্মু-কাশ্মীরে ঘটেনি।

ঐ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। তারই প্রেক্ষিতে রাজনাথ সিংয়ের বাড়িতে বৈঠক বসে। ঐ বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে যান রাজনাথ সিং, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রধানরা, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবরা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দাভাল। এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে জঙ্গি-হানার জবাব দিতে ভারত কোন পথে যাবে।