লোক্যাল বাস, সামাজিক মর্যাদা ও সমাজের কদর্যতা

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 9 Sept 2016, 06:42 AM
Updated : 9 Sept 2016, 06:42 AM

মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনা আমাদের সামনে এসে হাজির হয়, যাকে আমরা অচেতন মনে আমাদের জীবনের রুটিন-কার্যক্রমের বাইরে রাখি। কিন্তু আমরা এসব ঘটনা নজর-সীমার বাইরে রাখি বলেই সেটা আমাদের একটি ভিন্ন মাত্রায় নজর কাড়তে বাধ্য করে। কেননা, সেটা আমাদেরই লালন-পালন করা আমাদেরই সামাজের উৎপাদন; যাকে আমরা কিছুটা জোর করে নজর-সীমার বাইরে রাখার চেষ্টা করি।

এ ধরনের ঘটনা সমাজের মিথস্ক্রিয়ার ধরন, গতি-প্রকৃতি ও শ্রেণিচরিত্র আমাদের সামনে হাজির করে। উন্নয়নের চাদরে লুকিয়ে রাখা সামাজিক কদর্যতা এ ধরনের ঘটনার ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয়। এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটা জরুরি বলে আমি মনে করি। কেননা, এর ভেতর দিয়ে সমাজের চরিত্রটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। এ ধরনের ঘটনা সমাজের উপরতলার মানুষের জন্য খানিকটা গোপন অস্বস্তি উৎপাদন করলেও মোটাদাগে সমাজের রূপান্তর বোঝাবুঝির জন্য বেশ ফলদায়ক।

বিষয়গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল যখন ময়মংসিংহের কলসিন্দুরের মেয়ে ফুটবলারদের 'যথাযথ সম্মান না-করা' নিয়ে জনপরিসরে যে বয়ান তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে একটু ভিন্ন ভাবনার জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। ফিরতি বাসে এসব কিশোরী ফুটবলারদের সঙ্গে কিছু বাসযাত্রীর দুর্ব্যবহার, তাদের সঙ্গে কোনো প্রতিনিধি না পাঠিয়ে একা ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, যে বাসে তাদের নিজগ্রামে ফেরত পাঠানো হয়েছে যাকে আমরা বলি 'লোক্যাল বাস' এবং এসব ফুটবলারদের পারিবারিক অবস্থান ও শ্রেণিচরিত্র একত্রে পাশাপাশি বসিয়ে একটা ইন্টারেক্টিভ বৈঠক করছিলাম।

এর ভেতর দিয়ে উন্নয়নের জোয়ারে-ভাসা দেশ হিসেবে, নানান সামাজিক সূচকে ভারতকে টেক্কা দেওয়া দেশ হিসেবে, মিডিয়ার আস্কারায় জনপ্রিয় হওয়া 'উদীয়মান অর্থনীতি' হিসেবে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে এবং ৩০ হাজার বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সমাজের অন্তর্গত কদর্যতার পারদ কোন ডিগ্রিতে অবস্থান করছে– সেটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম।

তিনটি পয়েন্টে আমি বিষয়টা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব–

১. লোক্যাল বাস ও সমাজের শ্রেণি-বিভাজন

সম্প্রতি শেষ হওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ বাছাইপর্বে অপরাজিত গ্রুুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ কিশোরী ফুটবল দলের নয়জন সদস্যই কলসিন্দুর এলাকার। এদের নেতৃত্বেই ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব ১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ৭ সেপ্টেম্বর কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক, ফুটবলার মেয়ে ও তাদের অভিভাবক এবং এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের নয় সদস্য ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরে ফেরে।

কিন্তু তাদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে, তাদের যে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি এবং এত বড় একটা সাফল্য অর্জনের পরও বাফুফে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রশ্ন বড় করে সামনে চলে এসেছে। কারণ, তাদের 'লোক্যাল বাস'এ করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। 'লোক্যাল বাস' শুধু বাস নয়, সমাজের শ্রেণি-বিভাজন বোঝার একটি কার্যকর উপাত্ত।

সমাজে যারা এখনও 'জাতে' ওঠেনি, তারাই সাধারণত লোক্যাল বাসে চড়ে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর নাম– 'লাইনের বাস'। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের চিত্র কিছুটা পাল্টালেও এখনও লোক্যাল বাসে চড়া বিশেষ করে মেয়েদের জন্য এক ধরনের সামাজিক স্টিগমার বিষয় হিসেবে পরিগণিত। "অমুকের মেয়ে লাইনের বাসে চড়ে। ছি ছি!"– এটা একটা মোটামুটি গালি হিসেবে সমাজের অংশবিশেষে এখনও প্রতিষ্ঠিত।

বড় শহরগুলোতে এ লাইনের বাসের নাম 'পাবলিক বাস' দিয়ে, নিজেদের লাইনের বাসে চড়াটা মোটামুটি জাতে তুলে ফেলা হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিলাম না; কেননা সেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্টই মেজরিটি মানুষের যাতায়াতের বাহন। সেখানে বাইরে চরম শ্রেণিবৈষম্য থাকলেও পাবলিক বাস বা ট্রেনের অভ্যন্তরে ধনী-দরিদ্র সাম্যবাদের সঙ্গে চলাচল করে। তাই বিদেশের তুলনায় না গিয়ে আসুন দেশের চরিত্র সামান্য পোস্টমোর্টেম করার চেষ্টা করি।

বাস নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা সমাজের একটা চমৎকার শ্রেণিবৈষম্যের চরিত্র পেয়ে যাই। যেমন, সামজের বিত্তবানদের স্লিপিং কোচ, এলিট, স্কেনিয়া কিংবা কমপক্ষে এসি ভলভো না হলে চলে না। তাদের কথা বাদ দিলেও, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন– যারা সারাক্ষণ উচ্চবিত্ত হওয়ার বাসনায় থাকে আর মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে যাতে কোনোভাবে নিম্নবিত্তে পতিত না হয়, সে জন্য সর্বদা চতুর-ভাবভঙ্গিতে থাকে– তারা এসি-ভলভোতে না চড়তে পারলেও 'লোক্যাল বাসে' চড়ে না। তারা চড়ে 'ক্লোজ-ডোর ডাইরেক্ট' বা 'সিটিং সার্ভিস' বাসে।

লোক্যাল বাস হচ্ছে সমাজের নিম্নবিত্তের মানুষের যানবাহন। সুতরাং এ রকম বড় একটি সাফল্যের পর কিশোরী ফুটবলারদের তাতে চড়িয়ে বাড়ি পাঠানোর জেরে মর্যাদাহানির অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মিডিয়া রাষ্ট্র করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটা ভাইরাল হয়ে একটা সামাজিক প্রেসার তৈরি করেছে এবং কর্তৃপক্ষ এ প্রেসারের রেসপন্স করতে বাধ্য হয়েছে। এ মেয়েদের লোক্যাল বাসে পাঠানো 'ঠিক হয়নি' বলে স্বীকার করেছে। সঙ্গে আবার একটা নোক্তা যুক্ত করতে ভোলেনি যে, "পাছে এসি গাড়িতে পাঠালে যদি অস্বস্তিবোধ করে, তাই লোক্যাল বাসে পাঠানো হয়েছে।"

এর অর্থ দাঁড়ায়, "এরা তো ছোটলোক, নিচতলার মানুষ, এদের জন্য লোক্যাল বাসই জুতসই; এসি বাস তো এদের জন্য নয়! গরিবের পেটে ঘি যদি বদহজম হয়!"

সুতরাং 'লোক্যাল বাস'এ এদের পাঠানোর ব্যবস্থা করে বাফুফে খুন করার মতো অপরাধ করেনি; বড়জোর 'ছিঁচকে চুরি' করার অপরাধ করেছে। তাই দুটি কানমলা দিলেই মাফ! সুতারং 'সরি' বলারও দরকার নেই; 'কাজটা ঠিক হয়নি' বললেই কাফি!

এ ঘটনার ভেতর দিয়ে এসব চ্যাম্পিয়ন কিশোরী ফুটবলারদের, যারা রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করেছে, প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পারি যেখানে 'লোক্যাল বাস' একটি উপসর্গ মাত্র।

২. অমর্যাদা এবং খেলাধুলার জেন্ডার সেনসিটিভিটি

বাংলাদেশের মানুষের খেলাধুলা নিয়ে আগ্রহ, উত্তেজনা ও আবেগের কমতি নেই। এক সময় ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে ফুটবলের জায়গা দখল করে নিয়েছে ক্রিকেট। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পুরুষের খেলাধুলার পাশাপাশি নারী/মেয়েদের অংশগ্রহণও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে দাবায় রানী হামিদ, শ্যুটিংয়ে সাবরিনা, টেবিল টেনিসে নিলু– এসব নারী খেলোয়াড়দের সাফল্য আছে। এভারেস্ট জয়ে পুরুষদের সমান্তরালে নারীদেরও (নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজনীন) সাফল্য রয়েছে।

তবে ক্রিকেটের সাফল্যের কাছে অন্য খেলাগুলো রীতিমতো হারিয়ে যেতে বসেছে। অলিম্পিকে গিয়ে আমাদের প্রতিযোগীরা হিটেই বাদ পড়ে যান এবং চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতা করারই সুযোগ পান না। তাছাড়া ছেলেদের ফুটবলে দীর্ঘ বছর ধরে গোল খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এমন বাস্তবতায় হঠাৎ একদল কিশোরী ২০১৫ সালে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব ১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করে। আবার ২০১৬ সালে এফসি অনূর্ধ্ব ১৬ বাছাই পর্বে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। ফলে সবাই একটু নড়েচড়ে বসেছে।

আমি বাংলাদেশের সবগুলো ম্যাচ ইউটিউবে দেখেছি। চমৎকার ফুটবল খেলে বাংলাদেশের মেয়েরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি ব্রাজিলের নারী ফুটবলার মার্টার একজন ভক্ত। কেননা, মার্টা এত চমৎকার ফুটবল খেলেন যে সেটা আর খেলা থাকে না, রীতিমতো শিল্প হয়ে ওঠে!

বাংলাদেশে এই অনূর্ধ্ব ১৬ টিমে মার্টার মতোই খেলোয়াড় আছে যারা সত্যিকার প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের ফুটবল একটি ভিন্ন মাত্রায় নিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।

খেলাধুলা নিয়ে আমাদের সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং এর যে জেন্ডার সেনিসিটিভিটি– সেটা এসব মেধাবী ও প্রতিভাবান কিশোরী ফুটবলারদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা। আসলে বাংলাদেশে ক্রিকেট বনাম ফুটবল নিয়ে একটা বুদ্ধিবৃত্তিক টুর্নামেন্ট চলছে দীর্ঘদিন থেকে। প্রত্যয়গত পাইকারি জ্ঞান তো আছেই, যেমন: ছেলেরা ক্রিকেটে কোনো ম্যাচ জিতলে আমরা সেটাকে দেখি 'ক্রিকেটের জয়' হিসেবে, কিন্তু মেয়েরা জিতলে আমরা ক্রিকেটের জয় না বলে বলি 'নারী ক্রিকেটের' জয়। একইভাবে ফুটবলেও মেয়েরা জিতলে ফুটবল জেতে না, জেতে 'নারী ফুটবল'।

নারী-পুরুষের এই সামাজিক বিভাজনের বাইরেও ফুটবলের উপর ক্রিকেটের রয়েছে একটা আধিপত্যশীল মনোভাব। ঢাকার মাঠ দখল নিয়ে ফুটবল ও ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট আমরা দেখেছি। ফলে এ বিভাজন যেমন আছে প্রতিষ্ঠানের মাথায়, তেমনি আছে সমাজের পারসেপশনে।

কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিনতি রানী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "গ্রামের লোক একসময় বলত, মেয়ে মানুষ খেলবে ফুটবল! ফুটবল খেলা মেয়ে মানুষের কাম না।"

একই স্কুলের ক্রীড়াশিক্ষক মফিজ উদ্দিন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "আমি যখন প্রথম কোচিং শুরু করি, গ্রামের লোকজন আমাকে বলল, মাইয়া মাইনসে ফুটবল খেলবে এটা কেমন কথা।"

তাই এটা শুধু কলসিন্দুর গ্রামের মানুষের কথা নয়, এর মধ্য দিয়ে প্রতিভাত হয় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং খেলাক কেন্দ্র করে জেন্ডার সেনসিটিভিটি, অর্থাৎ কোন লেখা ছেলেদের আর কোন খেলা মেয়েদের তা নিয়ে একটা সামাজিক মনস্তত্ত্ব আমাদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য ডিসকোর্স হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

হাডুডু, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, কানামাছি, সাপলুডু, ছক্কা, কাবাডি– এসব হচ্ছে মেয়েদের খেলা এবং ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি হচ্ছে পুরুষের খেলা; আর এটাই হচ্ছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। তাই কলসিন্দুরের কিশোরী ফুটবলারদের অসম্মান কেবল একটি হঠাৎ সংঘটিত আকস্মিক ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না, একে সমাজের অন্তরে বিশ্বাস হিসেবে বাস করা সামাজিক মনস্তত্ত্ব হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তবেই এর 'শানে নুযুল' উপলব্ধি করা সম্ভব।

৩. কিশোরী ফুটবলারদের অসম্মান ও সামাজিক কদর্যতা

এসব কিশোরী ফুটবলারদের চমৎকার ফুটবল-শৈলীর সাফল্যে এবং কৃতিত্বে গোটা দেশ যখন উত্তেজিত ও আনন্দিত, তখন এই ফুটবলাররা হয়েছে সামাজিক গঞ্জনার স্বীকার। ফিরতি বাসের মধ্যে অনেকেই নানাভাবে নানা রকমের তিরস্কার করেছে তাদের। যারা এসবের প্রতিবাদ করেছে, তাদের সহ্য করতে হয়েছে নানান শব্দাঘাত। সামাজিক মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী একে তো মেয়েদের জন্য খেলাধুলা সমাজসম্মত নয়, তার ওপর হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলা। সুতরাং তিরস্কার, লাঞ্ছনা এবং নানান তীর্যক কথাবার্তা তো তাদের প্রাপ্য!

নারী ক্রিকেটারদের প্রতি সমাজ কিঞ্চিত সহৃদয়। কেননা, তারা ফুলপ্যান্ট পরে খেলে। আর নারী ফুটবলারদের প্রতি সমাজ নির্দয় কারণ, তারা হাফপ্যান্ট পরে খেলে। মনে হচ্ছে আমাদের প্রগতি, উন্নতি এবং সামাজিক অগ্রগতির নিখিল-চেতনা হাফপ্যান্ট বনাম ফুলপ্যান্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ!

সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলাম, "এটা হচ্ছে একধ রনের সমাজের মনোবৈকল্য। যে কোনো ধরনের সামাজিক মনোবৈকল্য নিন্দনীয়।"

তাই এসব চ্যাম্পিয়ন কিশোরী ফুটবলাদের তিরস্কার করা, সামাজিক গঞ্জনা দেওয়া এবং সামাজিকভাবে একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমাজে তাদের অবস্থানের মূল্যায়ন প্রকারান্তরে আমাদের সমাজের কদর্যতা তুলে ধরে। এটা আসলে কিশোরী ফুটবলারদের অসম্মান নয় বরং এ অসম্মানের হাত ধরে আমরা আমাদের সমাজের একটা কদর্য রূপ প্রকাশিত হতে দেখলাম।

সবশেষে বলব, সমাজে নারী-পুরুষের সমমর্যাদার সহাবস্থান সুনিশ্চিত করা না গেলে, বিদ্যমান সামাজিক মনস্তত্ত্বের একটি ইতিবাচক রূপান্তর না ঘটানো গেলে এবং সমাজে বিদ্যমান চরম শ্রেণিবৈষম্য সহনীয় মাত্রায় আনা না গেলে আমরা যতই উন্নয়নের চাদরে ঢেকে রাখি না কেন, সমাজ মাঝে মাঝেই তার কদর্য রূপ আমাদের সামনে প্রকাশ করবেই। কেননা, মুখোশ দিয়ে বেশিদিন মুখ ঢেকে রাখা যায় না।

তাই মুখোশ পরে অন্যকে আমোদিত না করে মুখটা ঠিকঠাক করে প্রয়োজনীয় মেরামত করে সুন্দর করে বাঁচতে শিখতে হবে। তখনই 'লোক্যাল বাস' এবং 'সামাজিক মর্যাদা' আর সম্মান-অসম্মানের স্মারক হবে না।

বিখ্যাত নারীবাদী তাত্ত্বিক জুড়িত বাটলার বলেছেন, "Masculine and feminine roles are not biologically fixed but socially constructed."

সুতরাং নারী ও পুরুষের ধারণা এবং সমাজে তাদের কাজ/ভূমিকা কী– সেটা এক ধরনের সামাজিক নির্মিতি। তাই সেই নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় নজর দিতে হবে যাতে গোড়ার গলদ দূর হয়– নারীবিদ্বেষী অসূরের স্বর সুরেলা হয়।