বিএনপির কমিটি: দলে অসন্তোষ, জামায়াতে সন্তোষ

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 12 August 2016, 06:47 AM
Updated : 12 August 2016, 06:47 AM

বিএনপির পরম হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে "বিএনপির কোনো দলীয় গঠনতন্ত্র নেই" বলে মন্তব্য করেছেন। দলটির কাজ-কারবারে ত্যক্তবিরক্ত হয়েই সম্ভবত তিনি এ কথা বলেছেন।

বাস্তবে বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে। বিএনপির ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ এই গঠনতন্ত্র দেখতে বা পড়তে পারেন। তবে এবার দলের নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজে গঠনতন্ত্রটি পড়ে দেখেছেন কি না– সে প্রশ্ন করাই যেতে পারে। কারণ, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের বিধান মেনে চলা হয়নি।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে জাতীয় নির্বাহী কমিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি অনুর্ধ্ব ৩৫১ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। তবে দলের চেয়ারম্যান কর্মকর্তা বা সদস্যদের সংখ্যা নিরূপণে বিশেষ ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে পারবেন কিন্তু মোট সদস্যসংখ্যা ৩৫১ জনের ঊর্ধ্বে দশ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করা যাবে না।

অথচ এবার বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯২ জনে। গঠনতন্ত্র অনুসারে এটা কোনোভাবেই ৩৮৬ জনের বেশি হওয়ার কথা নয়। আবার দলের ভাইস চেয়ারম্যানের সংখ্যা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ জন। অথচ এবার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে ৩৫ জনের।

একইভাবে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাউন্সিল সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানকে বিশেষ বিষয়ে পরামর্শের জন্য সহ-সভাপতির পদমর্যাদায় ১৫ জন উপদেষ্টা থাকবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে চেয়ারম্যান উপরোক্ত সংখ্যা বাড়াতে পারবেন। কতজন পর্যন্ত এ সংখ্যা বাড়ানো যাবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা না থাকার সুযোগ নিয়ে এবার চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে ৭৩ জনকে।

এভাবে দলীয় গঠনতন্ত্র নিয়ে চরম স্বেচ্ছাচারিতা করা হয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। বিএনপি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে যদি গণতন্ত্র চর্চার লেশমাত্র না থাকে তাহলে সেই দলের পক্ষে গণতন্ত্রের আন্দোলন এগিয়ে নেওয়া কতটুকু সম্ভব– সেটা অবশ্যই একটা বড় প্রশ্ন।

বিএনপিতে যদি জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো নেতার সংখ্যা অনেক বেশি থাকে এবং তাদের কমিটিতে নেওয়াও যদি অপরিহার্য বলে মনে হয়, তাহলে দলের গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

চলতি বছরের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন কি দলের নীতিনির্ধারকদের মাথায় কমিটির সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি কোনোভাবেই আসেনি? এত অদূরদর্শী হলে কীভাবে চলবে?

দলের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটি জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কাউন্সিল থেকে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার ওপর কমিটি গঠনের একক দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে হিসেবেই খালেদা জিয়া প্রায় সাড়ে চার মাস সময় নিয়ে দলের পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি গঠন করেছেন।

৬ আগস্ট দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কমিটির সদস্যদের নাম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। এই কমিটি ঘোষণার পর দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা ও নানামুখী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। সাধারণত রাজনৈতিক দলের নতুন কমিটি ঘোষিত হলে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়ে থাকে। পদবঞ্চিতদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ-হতাশা থাকলেও তা উৎসবের আমেজকে ম্লান করতে পারে না।

কিন্তু এবার বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর উল্টোটাই ঘটেছে। দলের মধ্যে নতুন কমিটি ব্যাপক উৎসাহ তৈরি করার পরিবর্তে একধরনের স্থবিরতাই তৈরি করেছে। দলের মধ্যে কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-হতাশাই বেশি। বলা হয়েছিল, দলনেত্রী খালেদা জিয়া ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদেরই উপযুক্ত পদপদবি দিয়ে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন।

আন্দোলনে ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে আগের কমিটি নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা ছিল। ফলে এবারের কমিটি কেমন হয়, কারা নতুন নেতৃত্বে আসেন– তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহল ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, বেগম জিয়া যেহেতু কমিটি গঠনে অনেক সময় নিচ্ছেন, সেহেতু কমিটিটা ভালো হবে। দলের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। দল আগের চেয়ে বেশি গতিশীল হবে।

আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, বিএনপিতে এই কমিটি নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা আলমগীর কমিটিকে 'ভাইব্রান্ট' ও 'ডায়নামিক' বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফনই দেখা যাচ্ছে না। গণমাধ্যমে নানা রকম খবর প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে প্রতিদিন। এর বেশির ভাগই নেতিবাচক।

ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে প্রথম তোপ দেগেছেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। তিনি নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি পদত্যাগের কথা জানান। জিয়া পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মোসাদ্দেক আলী ফালু দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। কেন তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। যদিও বলা হয়েছে, 'শারীরিক' কারণেই তিনি দলের কোনো দায়িত্ব পালনে অপারগ। কিন্তু আসল কারণ অন্য কিছু বলেই মনে করা হচ্ছে।

বেগম জিয়া তাঁকে একটি পদের জন্য মনোনীত করলেন অথচ তিনি তা কার্যত প্রত্যাখ্যান করার সাহস দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিক বলে মনে করছেন না। ফালু এখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরলে তাঁর পদত্যাগ-রহস্য উন্মোচন হলেও হতে পারে!

ফালু ছাড়াও পদ পেয়েও তা গ্রহণ না করার কথা জানিয়েছেন শামীমুর রহমান শামীম। তিনি এর আগে সাত বছর সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন; এবারও তাঁকে আরেকটি সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটাকে তাঁর কাছে অপমানজনক মনে হয়েছে! তাই তিনি পদ না গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কমিটি ঘোষণার পর পরই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ ও অভিমানের অনেক খবর শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ যেমন কমিটি থেকে পদত্যাগের কথা ভাবছেন, তেমনি কেউ কেউ আবার আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করে নিষ্ক্রিয় হওয়ার কথাও ভাবছেন। ফলে নতুন কমিটি নিয়ে বেগম জিয়া কত দূর অগ্রসর হতে পারবেন– সে প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে।

শোনা যাচ্ছে, বিএনপির এই কমিটি নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভ্যানুধ্যায়ীরা তেমন খুশি না হলেও বিএনপির মিত্র জামায়াতে ইসলামী নাকি যথেষ্ট উৎফুল্ল। বিএনপিতে জামায়াত যাঁদের ঘনিষ্ঠ বা কাছের লোক বলে মনে করে তাঁরাই নতুন কমিটিতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন, তেমনি সংখ্যাতেও তাঁরা বেশি।

মুক্তিযোদ্ধা এবং জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির অতি মাখামাখি যাঁরা পছন্দ করেন না সেসব নেতারা এবার যথাযথ মর্যাদা ও দায়িত্ব পাননি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতেও জামায়াত ঘনিষ্ঠদেরই সংখ্যা বেশি। বিএনপিতে উদারপন্থী বলে পরিচিত আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আশা করেছিলেন এবার তাঁরা দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাবেন। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তাঁরা সবাই হতাশ। এঁদের কেউ কেউ দল এবং রাজনীতি ছাড়ার কথাও ভাবছেন। স্থায়ী কমিটির দুটি পদ শূন্য রাখা হয়েছে।

পদপ্রত্যাশী ক্ষুব্ধ নেতারা যাতে বিদ্রোহ ঘোষণা না করেন সে জন্য তাঁদের সামনে ওই শূন্য দুপদের মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। বেগম জিয়া সম্ভবত কারো কারো ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন। যাঁরা এই পরীক্ষায় পাশ করবেন তাঁদের মধ্য থেকে দুজনকে স্থায়ী কমিটিতে নেওয়া হতে পারে। আবার কোনো কোনো পত্রিকায় এমন খবরও বেরিয়েছে যে স্থায়ী কমিটির শূন্য দুপদে বেগম জিয়া তাঁর দুই পুত্রবধূকে ঠাঁই দেবেন।

অবশ্য এই খবরের সূত্র ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। কমিটি ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়েই তিনি স্থায়ী কমিটির শূন্য দুপদে বেগম জিয়ার দুই পুত্রবধূর অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছিলেন। এমনটা হবেই তা বলা মুশকিল।

কিন্তু এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মতামত ব্যক্ত করায় মনে হচ্ছে, দুই পুত্রবধূর একজন অর্থাৎ তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের আর কোনো সম্ভবনা নেই। কারণ, শেখ হাসিনা ডা. জোবায়দার প্রশংসা করে বলেছেন, তাঁর মতো শিক্ষিত ও ভদ্র পরিবারের মেয়ে রাজনীতিতে এলে সেটা রাজনীতির জন্য ভালো।

শেখ হাসিনা যাঁর প্রশংসা করেছেন খালেদা জিয়া তাঁকে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে জায়গা করে দেবেন– এটা আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় অসম্ভব বলেই মনে হয়।

নতুন কমিটিতে যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে বিএনপি সম্ভবত সবাইকে এই বার্তাই দিয়েছে যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ বলে কিছুই মানে না।

অনেকেই ভেবেছিলেন বিএনপিতে অবস্থানকারী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার পর বিএনপি কলঙ্কমুক্ত হবে, দলটি আর নতুন করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কাউকে দলের নেতৃত্বে ঠাঁই দেবে না। কিন্তু বিএনপি নতুন কমিটিতে যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যদের নতুন করে পুনর্বাসিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের হতাশ করেছে।

চট্রগ্রামের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করে বিএনপি অনেকের গালেই চপেটাঘাত করেছে। হুম্মাম কোনোদিন বিএনপির রাজনীতি করেছেন বলে শোনা যায়নি। দলের জন্য কোন ত্যাগ স্বীকারের পুরস্কার তিনি পেলেন– সেটা বিএনপির অনেকের কাছেই অজানা। সালাহউদ্দিন চৌধুরীর ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরীও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জায়গা পেয়েছেন।

এ ছাড়া জয়পুরহাটের বিখ্যাত রাজাকার আব্দুল আলীমের ছেলেকেও বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে সাদরে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও কমিটিতে রাখা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুকে কমিটিতে রেখে বিএনপি খুব সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে– এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না।

এঁদের কমিটিতে না রাখলে কোনো ক্ষতি হতো না। কারণ, বিএনপির জন্য এঁরা অপরিহার্য নয়। তারপরও এঁদের কমিটিতে রাখায় মানুষ এটাই মনে করবে যে যত অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেই জড়িত হোক না কেন, খালেদা জিয়া তাঁদের দল থেকে দূরে ঠেলে দেবেন না।

এবার বিএনপির কমিটিতে স্বজনপ্রীতি বা আত্মীয়করণের প্রবল প্রভাব দেখা গেছে। দলের নেতাদের পুত্র-কন্যা–পুত্রবধূ-ভাইরা জায়গা পেয়েছেন দলীয় কর্মকাণ্ডে সেভাবে যুক্ত না থেকেই। বিএনপিতে শুধু জিয়া পরিবারের আধিপত্যের অপবাদ দূর করার জন্যই হয়তো জমিরউদ্দিন সরকার ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পুত্র, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী ও ভাই, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে ও পুত্রবধু ছাড়াও আরও অনেকেই আত্মীয়তার সূত্রেই বিএনপির কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।

বিএনপিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের খুব বেশি লোকজন নেই। তাই বলে এক পরিবারের একাধিক সদস্যকে নির্বাহী কমিটিতে নেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে নির্বাহী কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীসদস্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এবারের কমিটিতে বড় জোর ১২ শতাংশ নারীসদস্য আছেন। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে খালেদা জিয়া ছাড়া আর কোনো নারীসদস্য নেই। বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে যেসব নারীদের দেখা য়ায় কিংবা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টক শোতে অংশ নিয়ে যেসব নারী বিএনপির পক্ষে উচ্চকণ্ঠ অবস্থান নেন তাঁরাও এবার কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়ন পাননি বলে অভিযোগ উঠছে।

বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে যেসব সমালোচনা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া সেসব মোটেও আমলে নিচ্ছেন না। তিনি মনে করছেন, কমিটি নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলেও দ্রুত তা কেটে যাবে। বিএনপিতে যেহেতু তাঁর কথাই শেষ কথা সেহেতু এ নিয়ে বাদ প্রতিবাদ করা একেবারেই অর্থহীন। তবে বিএনপির ভেতরে-বাইরে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে, বেগম জিয়া যেভাবে দল চালাচ্ছেন সেভাবে চালিয়ে দলটিকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে নেওয়ার অবস্থা তৈরি করা সহজ না-ও হতে পারে।

বেগম জিয়ার নেতৃত্ব দলের মধ্যে এখনও চ্যালেঞ্জ হয়নি, কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ অবশ্যই হয়েছে। ২০০৬ সালের পর থেকে তাঁর কোনো সাফল্যই নেই। তিনি একাধিকবার আন্দোলনের ডাক দিয়ে একদিকে দেশের সম্পদ ও নিরীহ মানুষের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, অন্যদিকে দলের নেতাকর্মীদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন।

একের পর এক ব্যর্থতার দায় এককভাবে খালেদা জিয়ারই। কারণ, দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তিনি খুব একটা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন বলে শোনা যায় না। অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশ হলে অনেক আগেই ব্যর্থতার দায় নিয়ে দলীয় প্রধানকে সরে দাঁড়াতে হতো।

কিন্তু আমাদের দেশে কারোই নৈতিক দায়বোধ কিংবা লাজলজ্জার বালাই নেই বলেই ব্যর্থরাও পদ আঁকড়ে থাকার সুযোগ পান। বিএনপির নতুন কমিটি যদি সরকারবিরোধী বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় তাহলে কেবল এই কমিটিই সমালোচিত হবে না, কমিটির নির্মাতা হিসেবে খালেদা জিয়াও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সমালোচিত হবেন।