সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ: বাকি রয়ে গেল কিছু বলিতে…

শিশির ভট্টাচার্য্যশিশির ভট্টাচার্য্য
Published : 22 July 2016, 05:14 AM
Updated : 22 July 2016, 05:14 AM

যে প্রাইমেটরা আমাদের পূর্বপুরুষ তাদের টিকে যাবার অন্যতম কারণ সম্ভবত এই যে, প্রতিযোগী গোষ্ঠীগুলোকে তারা নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছিল। এমন নৃশংস আচরণ করতে তারা বাধ্য হয়েছিল, কারণ তখনকার পৃথিবীতে প্রাইমেটদের সংখ্যার তুলনায় খাদ্যের পরিমাণ অতি সীমিত ছিল। প্রাইমেটদের উত্তরপুরুষ আধুনিক মানবগোষ্ঠীগুলোও সম্পদ ও ক্ষমতার জন্যে যুদ্ধ করে চলেছে। যার একটি ক্ষুদ্রতর সংস্করণ হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস।

যুুদ্ধ ও সন্ত্রাসের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শান্তি নয়, যুদ্ধের কারণেই মানবপ্রজাতি টিকে আছে এখনও। স্মরণাতীত কাল থেকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে মানুষ স্থানান্তরে যেতে বাধ্য হয়েছে যার ফলে 'শক-হুন-দল-পাঠান-মোঘল' এক দেহে লীন হয়ে মানবপ্রজাতির জিনবৈচিত্র্য নিশ্চিত হয়েছে।

এছাড়া পুঁজিবাদী অর্থনীতির মন্দা দূরীকরণে যুদ্ধ অন্যতম সমাধান। যুদ্ধের কারণে কোনো দেশের দুর্বল অর্থনীতি কিছু দিনের জন্যে সবল হয়ে উঠতে পারে। কোরিয়ার যুদ্ধের রসদ সরবরাহ করে পঞ্চাশের দশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হাজার হাজার টন অস্ত্র তৈরি করা হয়েছিল। যুদ্ধ বা সন্ত্রাস না হলে গুদামজাত অস্ত্র বিক্রি হবে না এবং অস্ত্র বিক্রি না হলে শত শত অস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে লক্ষ লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়বে। ডলারের দাম পড়ে গিয়ে মন্দার সৃষ্টি হবে যার শিকার হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি।

পুঁজিবাদী অর্থনীতির জন্যে এটা মোটেও কাম্য অবস্থা নয়। সব মিলিয়ে যুদ্ধ বা সন্ত্রাস মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

পুঁজিবাদী অর্থনীতি যতদিন চালু থাকবে অস্ত্র-কারখানা ততদিন বন্ধ হবে না; আর অস্ত্র-কারখানা যতদিন চালু থাকবে ততদিন সন্ত্রাস ও যুদ্ধ অব্যাহত থাকাটাই স্বাভাবিক। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যুদ্ধ ও সন্ত্রাস বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। যে অস্ত্র তৈরি হচ্ছে প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে সে অস্ত্র তো কারও না কারও প্রাণ হরণ করবেই। কোথায় কোন গোষ্ঠী অন্য এক গোষ্ঠীর প্রাণ হরণ করবে– এর কোনো আগাম সতর্কবাণী দেওয়া ভূমিকম্পের পূর্বাভাষ দেওয়ার মতোই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়নি– অস্ত্র-ব্যবসা তথা অর্থনীতির জন্যে এটা খারাপ খবর। কিন্তু অস্ত্র-ব্যবসা তা বলে বন্ধ নেই। এখানে ওখানে গৃহযুদ্ধ, খণ্ডযুদ্ধ চলছে। নিজে থেকে শুরু না হলে যুদ্ধ লাগানো হচ্ছে। যুদ্ধ লাগিয়ে অসমানভাবে পিঠা ভাগ করছে যে বানরেরা, তারা আধুনিক সভ্যতার ধারক-বাহক পাশ্চাত্যবাসী (অবশ্য আমরা তাদের জায়গায় থাকলে একই আচরণ করতাম, কারণ তারা এবং আমরা একই প্রাইমেট গোষ্ঠীর উত্তরপুরুষ)।

যুদ্ধ বা সংঘাত সৃষ্টিতে সাধারণত পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে বিদ্যমান ঘৃণার উৎস কাজে লাগানো হয়। ঐতিহাসিক কারণে পাশ্চাত্যের বেশিরভাগ মানুষের মনে সেমিটিকদের প্রতি একটা ঘৃণা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেমিটিকদের একটি অংশ ইহুদিদের উপর অত্যাচার করার প্রয়োজনে এই ঘৃণা কাজে লাগানো হয়েছিল।

এখন সেমিটিকদের অন্য অংশ আরবদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় পাশ্চাত্য। অনেকটা সে কারণে তারা 'ভুল করে' ইরাক আক্রমণ করেছিল। ঘটনাক্রমে আরবদের সিংহভাগ মুসলমান হওয়াতে আরবদের প্রতি ঘৃণা মুসলমানদের প্রতি ঘৃণায় পর্যবসিত হয়েছে, যদিও মুসলমানদের মধ্যে আরবরা সংখ্যালঘু।

যেহেতু বহু অনারব মুসলমানের মাতৃভূমি এক সময় পাশ্চাত্যের উপনিবেশ ছিল, সেহেতু তারা নিজেদের পশ্চাদপদতার জন্যে পাশ্চাত্যকে দায়ী করতে চায়। বাচ্চারা যেমন আছাড় খেলে মাটিতে লাথি মেরে রাগ ঝাড়তে চায় অনেকটা তেমনই আর কী!

অনারব মুসলমানদের প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের আরবদের মনোভাব ও আচরণ যে একেবারেই ভ্রাতৃসুলভ নয়, সে ব্যাপারটা আদৌ হিসাবের মধ্যে না নিয়ে, নিজ নিজ মাতৃভূমির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হেলায় ঠেলে ফেলে শুধুমাত্র সমধর্মী হওয়ার কারণে মধ্যযুগের আরবিভাষীদের বিভিন্ন অর্জন নিজেদের অর্জন বলে মনে করতে আগ্রহী অনারব মুসলমানদের একটা বড় অংশ।

আরবেরা খুশি, কারণ দলে লোক ভারী হচ্ছে। ফোকটে আরব ঐতিহ্যের ভাগীদার হতে পেয়ে অনারবেরাও অখুশি নয়। কিন্তু তৃপ্তির হাসিটা হাসছে অস্ত্র-বিক্রেতারা, কারণ ঘৃণা বা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা যত বেশি হবে তাদের ব্যবসারও হবে ততই রমরমা।

ঐতিহাসিকভাবে ঘৃণার অস্তিত্ব না থাকলে কৃত্রিমভাবেও ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। কানের কাছে যদি দিনরাত বলা হয় যে, আপনার ধর্ম সর্বশ্রেষ্ঠ আর বাকিদের ধর্ম ভুয়া, অথবা যদি অবিরাম শোনানো হয় যে, গায়ের রঙ যাদের কালো তাদের জন্ম হয়েছে সাদাদের গোলামি করার জন্যে, তবে মানুষের মনে পারস্পরিক ঘৃণা সৃষ্টি হতে দেরি হবে না।

আশির দশকে আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে ধর্মস্থানে, যানবাহনে ক্যাসেট-সিডি বাজিয়ে, কোনো কোনো টিভি চ্যানেলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিনিয়ত বলা হয়েছে (এখনও হয়তো হচ্ছে), একটি বিশেষ ধর্মের লোক ব্যতীত আর কেউ স্বর্গে যাবার চান্স পাবে না। যারা সেই বিশেষ ধর্মের অনুসারী তাদের মনে অন্য সব ধর্মের প্রতি অবজ্ঞার সৃষ্টি হয়েছে। যারা অন্য ধর্মের অনুসারী, অথবা যারা লোকদেখানো ধর্মে বিশ্বাস করে না, তাদের মনে যুগপৎ ঘৃণার এবং (শব্দদূষণের কারণে) বিরক্তির সৃষ্টি হয়েছে ক্যাসেটের ধর্মটির প্রতি। যত খারাপই লাগুক, শ্রোতাদের প্রতিবাদ করার উপায় নেই, কারণ সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা!

আশির দশক থেকে পাশ্চাত্য অর্থায়নে উপমহাদেশের উত্তরাংশে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে মুরগির গলা কাটিয়ে কাটিয়ে তরুণদের শেখানো হয়েছে কীভাবে মানুষের গলা কাটতে হয়। দলে দলে সেখানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেকার, বিপথগামী তরুণেরা।

এই সময় থেকে বাংলাদেশের সমাজে ধর্ম পালনের জন্যে একটা কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। কাউকে 'দাদা' বলা যাবে না, 'ভাই' বলতে হবে, কারণ 'দাদা' হিন্দুয়ানি শব্দ (প্রকৃতপক্ষে 'ভাই' সংস্কৃত তদ্ভব শব্দ, 'দাদা' সম্ভবত ফারসি শব্দ)। 'শুনেছ, অমুক মুদি তো প্রার্থনা করে না?' 'ওমা তাই নাকি! তাহলে তো আজ থেকে ওকে বয়কট করতে হয়!' ব্যস, কথাটা চাউর হওয়ার যা দেরি। মুদিকে এবার দোকান বন্ধ করে প্রার্থনায় বসতে হবে, অন্তত খদ্দেরদের মনরক্ষার জন্যে। এভাবে পিয়ার-গ্রুপ-প্রেসার সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে পরিকল্পিতভাবে সমাজকে ধর্মধ্বজী ও অসহিষ্ণু করে তোলা হয়েছে।

অনেকে বলছেন, ড্রাগ দিয়ে, ব্রেনওয়াশ করে কোমলমতি তরুণদের দিয়ে নৃশংসতা করানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ঘৃণা বা নিষ্ঠুরতা মানুষের সহজাত একটি বৈশিষ্ট্য যা অনুকূল পরিবেশ পেলে বা বিচারহীনতার গ্যারান্টি পেলে ড্রাগ বা মগজধোলাই ছাড়াই প্রকটিত হতে পারে। যেসব রাজাকারের ফাঁসি দিয়ে জাতি আজ দায়মুক্ত হচ্ছে তারা তো সন্ত্রাস-ধর্ষণ করার সময় তরুণই ছিল। এদের সবার কি ব্রেইনওয়াশ করা হয়েছিল, নাকি ড্রাগ খাওয়ানো হয়েছিল? তাই যদি হত, তবে অপ্রকৃতিস্থতার অজুহাতে যুদ্ধাপরাধের বিচারে এদের ফাঁসি হত না।

গুলশানের যে তরুণদের আমরা বিপথগামী বলছি, তাদের হয়তো নায়ক হবার নেশা ছিল এবং সর্বোপরি ছিল বেহেস্তে যাবার নেশা। কারও কারও কাছে তারা হয়তো ইতোমধ্যে নায়কে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকে অনেক মাসুম তরুণীকে প্রার্থনাও করতে দেখেছি, সৃষ্টিকর্তা যেন গুলশানের সুদর্শন জঙ্গিদের বেহেস্ত-নসিব করেন! এর মানে হচ্ছে, গুলশানের জঙ্গিদের মতো অসুস্থ মানসিকতার লোক বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার মধ্যে আরও অনেক আছে।

বাংলাদেশে জঙ্গিবান্ধব মানসিকতার উদ্ভব ও বিকাশের অনুকূল পরিবেশ এদেশের রাজনীতিবিদেরাই সৃষ্টি করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস হচ্ছে। কোনো সরকার কি এই সন্ত্রাস বন্ধ করার আন্তরিক চেষ্টা করেছে? কিছু দিন আগে কোনো এক প্রগতিশীল নেতা কি ফোনালাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথা বলেননি? সন্ধ্যার অন্ধকারে বই মেলায় বা প্রকাশ্য দিবালোকে কারও বাড়ি গিয়ে চাপাতি দিয়ে একজন নিরপরাধ নাগরিককে খুন করা আর গুলশানের কোনো রেস্টুরেন্টে চাপাতি দিয়ে একাধিক বিদেশিকে হত্যা করার মধ্যে কী এমন তফাৎ?

প্রথম অপরাধের বিচার হয়নি বলেই গুরুতর দ্বিতীয় অপরাধ হয়েছে। চিকিৎসা না হলে অসুখ তো বাড়তেই থাকবে। তথাকথিত ব্লগার-বুদ্ধিজীবী-সংখ্যালঘু হত্যা যদি কারও দৃষ্টিতে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে থাকে, তবে গুলশানের ঘটনা অভূতপূর্ব মনে হবে কেন? আগের ঘটনাগুলোকে আমরা যেমন বিনা বিচারে (সর্বার্থে) ভুলে গেছি, গুলশান-বিপর্যয়ও একদিন আমাদের বিস্মৃতির অংশ হয়ে যাবে। ফ্রান্সের নিস শহরে ট্রাক দিয়ে গণহত্যা কি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এরশাদ আমলে বাংলাদেশেও মিছিলে ট্রাক তুলে দেওয়া হয়েছিল?

গুলশান হামলার অংশ নেওয়া এক জঙ্গির মা-বাবা এই ভেবে অবাক হয়েছেন যে, তাদের যে ছেলে একটা তেলাপোকা মারতে ভয় পেত, সে কীভাবে চাপাতি দিয়ে মানুষ খুন করে? মানুষের প্রতি এত ঘৃণা কীভাবে জমে উঠল তাদের মনে?

ঘৃণা মানুষের সহজাত। ঘৃণা সৃষ্টির জন্যে যে কোনো সামান্য পার্থক্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলাটাই যথেষ্ট: রঙের পার্থক্য, ধর্মের পার্থক্য, সম্পদের পার্থক্য, জাতের পার্থক্য…। অনুকূল পরিবেশের কারণে মনের অন্তর্লীণ ঘৃণা প্রকট হয়ে উঠতে পারে। অনুকূল পরিবেশ এবং সর্বাত্মক প্রপাগাণ্ডার কুপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা অল্প।

সন্ত্রাস বা যুদ্ধ মূলত মনের ঘৃণারই বহিপ্রকাশ। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, সাম্প্রদায়িকতাও ঘৃণার এক ধরনের বহিপ্রকাশ বৈ নয়। এই ঘৃণা ব্যবহার করে উপমহাদেশে যুগের পর যুগ সংখ্যালঘু নিপীড়ন করা হচ্ছে। অন্যের প্রতি ঘৃণা যখন ব্যষ্টিকে আঘাত করে তখন আমরা সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি। ঘৃণা যখন সমষ্টিকে আঘাত করে, তখন সরকার ও সমাজপতিরা একটু নড়েচড়ে বসেন বটে। বড় বড় যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ, বোমাবাজি, গুলশানের জঙ্গি-হামলা, নিসের ট্রাক-সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সামষ্টিক ঘৃণা প্রকাশের উদাহরণ।

বর্তমান বিশ্বে যে দুটি প্রধান গোষ্ঠী প্রকাশ্যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে: আইএস এবং তালেবান, তারা যে পাশ্চাত্যের সৃষ্টি– এ নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ সম্ভবত আর নেই। এমন হওয়া অসম্ভব নয় যে, কোনো একদিন এ ধরনের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে এসে যাবে ছোটখাট পারমানবিক বোমা। তখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রযন্ত্রটিকেও তারা পুতুলের মতো নাচাতে পারে। পুরো মানবজাতির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়াও বিচিত্র কিছু নয়।

পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের বহু দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, চীনসহ বহু দেশ উপরোক্ত দুই গোষ্ঠীসহ পৃথিবীর অন্য সব সন্ত্রাসীকে যুদ্ধ-রসদ সরবরাহ করে পরোক্ষে যে তাদের মদদ দিচ্ছে– সামাজিক মিডিয়ার বদৌলতে সে ব্যাপারগুলো আর গোপন নেই। এই দেশগুলোর সরকার অনেকটা সৃষ্টিকর্তার মতো আচরণ করছে: 'চোরেরে কয় চুরি কর, গৃহস্তে কয় ধর ধর!' প্রকাশ্যে যে আইএস বা তালেবানের সমালোচনা করছে তারা, সেই তালেবান বা আইএসএর সঙ্গেই তারা রমরমা ব্যবসা করে চলেছে গোপনে, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস বা নিসে হামলা হওয়া সত্ত্বেও।

এ ধরনের আচরণ করতে তারা বাধ্য, কারণ অস্ত্র বা পণ্য বিক্রি না করলে তাদের চলবে না। পুঁজিবাদী অর্থনীতির ধর্মই এই। লেনিন নাকি একবার বলেছিলেন, পুঁজিবাদীরা নিজের ফাঁসির দড়িটাও বিক্রি করতে পিছপা হয় না।

ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এখানে ঘাঁটি করতে পারলে ভারত ও চীন– এই দুই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। বাংলাদেশে কোনো শক্তিশালী সরকার থাকুক, এটা একটি মহলের না-পসন্দ, কারণ এ ধরনের একটি সরকার তাদের কাজকর্ম বিনা প্রশ্নে অনুমোদন করবে না। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি হোক এটাও তারা চাইবে না, কারণ এতে তাদের ব্যবসার অন্যতম সহায়ক বেকার-হতাশ কিশোর-তরুণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ ধ্বংস করাও সম্ভবত তাদের প্রকল্পের অংশ, কারণ মধ্যবিত্তরা অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে কমবেশি সোচ্চার হয়। ইতোমধ্যে ইরাকে তারা এটা করতে সক্ষম হয়েছে। ইরানেও সম্ভব হলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা তাদের আছে। সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী এক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ, বিশেষত এর তরুণ সমাজকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে এক বা একাধিক গোষ্ঠী। বিভিন্ন দেশের সরকারের অভ্যন্তরেও এদের অনুগত লোক থাকা বিচিত্র নয়। সরকার ও বিরোধী দলগুলোও হয়তো নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যে সময় ও সুযোগমতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে থাকে।

অভিযোগ উঠেছে, ধর্মগ্রন্থ থেকেই নাকি তরুণেরা সন্ত্রাসের অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। গীতার আঠারোটি অধ্যায় জুড়ে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষের হিন্দু স্বাধীনতা-সংগ্রামীরা গীতা পড়ে অনুপ্রাণিত হতেন বটে, কিন্তু সন্ত্রাস বা যুদ্ধে অনুপ্রাণিত হবার জন্যে গীতা পড়া অপরিহার্য নয়। চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনি।

জাপানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সৈন্যরা কোন ধর্মগ্রন্থ পড়ে চীন ও কোরিয়ার উপর নৃশংশ অত্যাচার করেছিল? শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধরা কীভাবে তামিল হিন্দুদের উপর অত্যাচার করেছিল? কীভাবে মায়ানমারের বৌদ্ধরা অসহায় রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করছে? কোন গ্রন্থ পড়ে ভারতবর্ষের হিন্দুরা বৌদ্ধদের প্রায় নিশ্চিন্ন করে দিয়েছিল? বাইবেলে চোখের বদলে চোখ এবং দাঁতের বদলে দাঁত তুলে নেবার কথা আছে, কিন্তু লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে পুড়িয়ে মারার অনুপ্রেরণা জার্মানেরা নিশ্চয়ই বাইবেল থেকে পায়নি।

দুর্জনের যেমন ছলের অভাব হয় না, তেমনি ধর্মগ্রন্থে পাপ করতে বারণ করা হয়েছে বলেই কেউ পাপ থেকে বিরত হয় না। বেশিরভাগ মুসলমান যদি সুদ খাওয়া হারাম মনে করত তবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো কবেই বন্ধ হয়ে যেত। যে কোনো পবিত্র পুস্তকে অবৈধ স্ত্রী-সংসর্গ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সবাই যদি এসব কথায় বিশ্বাস করত, তবে দেশে দেশে দেহব্যবসা চালানো সম্ভব হত না।

সুতরাং কোনো ধর্মগ্রন্থে বিশেষ কোনো প্রসঙ্গে শত্রুর ঘাড়ের পিছনে তলোয়ারের কোপ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে বলেই সেই ধর্মের অনুসারীরা চাপাতি নিয়ে বিধর্মীদের কোপাতে আসবে না, যদি না তার পেছনে ভিন্ন প্ররোচনা ও প্রণোদনা থাকে।

পৃথিবীতে যুদ্ধ ও সন্ত্রাস হচ্ছে, কারণ এই কার্যক্রমের ব্যাপক চাহিদা আছে। যতদিন এই চাহিদা বন্ধ করা না যাবে ততদিন পৃথিবীতে সন্ত্রাস ও যুদ্ধ বন্ধ হবে না। অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাস ও যুদ্ধ হলে বাংলাদেশও কমবেশি তার শিকার হবে। সন্ত্রাসের চাহিদা যত বাড়বে, ততই জঙ্গি দলগুলোর নতুন কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন হবে।

নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্যে সরকারি-বেসরকারি-ধর্মীয় নির্বিশেষে একে একে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসীরা নিজেদের প্রয়োজন ও অবসরমতো কব্জায় নিতে চেষ্টা করবে, কারণ বেশিরভাগ তরুণ সেখানেই সহজলভ্য। সন্ত্রাসের চাহিদা ভবিষ্যতে সম্ভবত বাড়বে, কারণ প্রথমত, এই কর্মকাণ্ড অত্যন্ত লাভজনক এবং দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসের পেছনে সরকার ও জনগণের একটি অংশের কমবেশি সমর্থন আছে।

তাহলে আমাদের কি কিছুই করার নেই? সমাজে ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা বন্ধ করতে পারি আমরা। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সমমর্মিতার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারি। ভালোবাসা, সমমর্মিতা সহজাত অনুভূতি নয়। সমাজে থাকতে থাকতে মানুষ এই গুণগুলো 'অর্জন করে'। পাঠ্যপুস্তকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পরিবারে, ধর্মস্থানে ও মিডিয়ায় জাতিধর্মনির্বিশেষে মানুষের প্রতি মানুষের এই ভালোবাসার কথা রয়েসয়ে বলা যেতে পারে। রয়েসয়ে, কারণ ভালো কথাও কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করলে এক সময় সেটা বিরক্তির কারণ হয়।

তরুণদের বোঝাতে হবে যে, এই পৃথিবী, এই দেশ আমাদের সবার। পৃথিবী একটি বাগান। এখানে সব ধরনের ফুলের গাছ থাকবে এটাই কাম্য। সবাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পাবার অধিকারী। সৃষ্টিকর্তা যদি এক ধর্মের তুলনায় অন্য ধর্মকে উত্তম মনে করে থাকেন, তবে সব মানুষকে তিনি উত্তম ধর্মের মহিলাদের গর্ভেই জন্ম দেন না কেন? অন্য ধর্মের সর্বশেষ লোকটিকে মেরে ফেললেই পৃথিবী যদি অধিকতর বাসযোগ্য হয়ে উঠত তবে মুসলিমপ্রধান আরবে ও খ্রিস্টানপ্রধান পাশ্চাত্যে কোনো যুদ্ধ বা সন্ত্রাস হত না।

বৈচিত্র্য সৃষ্টির ধর্ম। কোনো স্থানের সব অধিবাসী এক ধর্মাবলম্বী হওয়ার অব্যবহিত পরেই বৈচিত্র্যের নিয়মে সেখানে এমন একাধিক উপদলের সৃষ্টি হতে পারে যারা পরস্পরের বিরুদ্ধে হাজার বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হবে। ক্যাথলিক আর প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে বহু শত বৎসরের সংঘর্ষ আজ ইতিহাস হলেও শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে হাজার বছরের পুরোনো দ্বন্দ্ব এখনও শত শত নিরপরাধ মুসলমানের প্রাণ হরণ করে চলেছে।

বহু দিন যাবৎ বাংলাদেশের পরিবারে, সমাজে ও শিক্ষাঙ্গনে জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে মানুষকে সম্মান করতে শেখানো হচ্ছে না। আজকের তরুণ-তরুণী আগামী দিনের বাবা-মা। কুশিক্ষিত বাবা-বা পরবর্তী প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করতে পারার কথা নয়। এমন অনেক ভণ্ড, দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন পিতামাতা আছেন যারা সন্তানের কাছে অনুকরণীয় নন। যেসব বাবা-মা নিজেরাই মানুষ হয়নি, তারা সন্তানকে কীভাবে মানুষ করবে?

আশির দশক থেকে বিদেশি মদদে ও অর্থায়নে বাংলাদেশে একটি মহল ভাবছে এবং অন্যদের ভাবতে বাধ্য করছে যে, তরুণদের শুধু বিশেষ একটি ধর্মীয় মূল্যবোধ থাকলেই যথেষ্ট। তাদের ধারণা যে অনেকাংশে সত্য নয়, আশা করি গুলশান-বিপর্যয়ের পর থেকে বেশিরভাগ বাঙালি তা বুঝতে শুরু করেছে।

কুশিক্ষার কারণে আমাদের তরুণেরা প্রথমে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবার থেকে এবং অবশেষে পৃথিবী থেকে। ধর্মীয় মূল্যবোধ অবশ্যই দরকার, কিন্তু ধর্মের যে জায়গাগুলোতে মনুষ্যত্বকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে এবং অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে সে জায়গাগুলোর প্রতি তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে বারবার। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ একটি কাঁঠালের মতো। কাঁঠাল যদি খেতেই হয়, তবে ভুতি ও আঠা বাদ দিয়ে কোয়াগুলো খেতে, খাওয়াতে জানতে হবে।

বাংলাদেশের সংবিধান এবং বাংলা ভাষা প্রচলন আইন অনুসারে বাংলা ভিন্ন অন্য ভাষা শিক্ষার বাহন হতে পারে না। কিন্তু দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশি ভাষায় বিদেশি ঐতিহ্য শেখানোর অনুমতি দিয়ে রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। বাংলাদেশে বড়লোকের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি, মধ্যবিত্তের বাংলা, গরীবের আরবি।

সর্বজনীন শিক্ষার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা ছিল। তা না করে সরকারগুলো বরং জাতিকে বেহুদা বহুধা-বিভক্ত করে তুলছে। দেশীয় ভাষায় দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে তরুণদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি-ধর্মীয় কোনো বিদ্যায়তনেই শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে শিক্ষাগ্রহণ করছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি না সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

সব মিলিয়ে তরুণদের মনে হতাশা বাসা বাঁধছে এবং ক্রনিক হতাশা ক্রমশ পরিণত হচ্ছে বিদ্রোহে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগহীন মানুষ পশুর সমান। প্রায় পশুতে পরিণত হওয়া এই তরুণেরা জানে না, কে বা কারা তাদের দুরবস্থার জন্যে দায়ী। এই অবসরে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশে তরুণদের ধর্ম, অর্থ ও কামের মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে এবং মানসিকভাবে অপরিণত তরুণেরা বিনা প্রশ্নে সেই ভণ্ড সুযোগসন্ধানীদের দলে ভিড়ে সুদূর ইরাক বা সিরিয়ায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসছে মস্তিস্কবিকৃত জঙ্গি হয়ে।

প্রশ্ন হতে পারে, জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন হিন্দু অধ্যাপক বা একজন জাপানি বুদ্ধিজীবী কেন ধর্মান্তরিত হয়ে সপরিবারে সিরিয়ার গিয়ে জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে? এরা তো অপরিণত তরুণ নয়। এরাও কি হতাশার শিকার, নাকি এদের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ প্রলোভন কাজ করছে? এসব প্রশ্নের উত্তর আশা করি একদিন জানা যাবে।

সন্ত্রাস-ব্যাধির যে চিকিৎসাগুলোর কথা বলা হল উপরে, সেগুলো নিছকই টোটকা সমাধান। কোনো রোগের সুচিকিৎসা করতে হলে প্রথমেই রোগটির কারণ জানতে হবে: রোগটি কি জীবানুঘটিত, বংশগত, নাকি শরীরে কোনো উপাদানের ঘাটতিজনিত। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর মানুষ আসলে জানেই না, সন্ত্রাসের মূল কারণ কী। আইএস দাবি করছে যে, তারা সর্বত্র বিরাজমান, অথচ সরকারের দাবি, বাংলাদেশে নাকি আইএস নেই। সরকার বলছে, সব তাদের নখদর্পণে, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে জনগণকে সব জানানো সম্ভব নয়।

একের পর ঘটতে থাকা বিপদের উৎস না জানাটা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা যারা এ বিষয়ে কমবেশি লিখছি, আমরাও হয়তো অন্ধকারে হাতড়ে মরছি। পাঠকদের মধ্যে গুলশান-বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ যারা জানেন, তাঁরা হয়তো আমার লম্বা প্যাঁচাল পড়ে মুচকি হাসছেন। এটা নিশ্চিত, জনগণকে অন্ধকারে রেখে সন্ত্রাস কেন, কোনো গুরুতর সমস্যারই স্থায়ী সমাধান করা যাবে না। এছাড়া কিছু দিন পর পর ইস্যু বদলে যাবার কারণে কোনো ইস্যুই ঠিকমতো মনোযোগ পাচ্ছে না এবং অতঃপর একদিন সবাই সবকিছু ভুলে যাচ্ছে, যার ফলে সন্ত্রাসী এবং তাদের গডফাদাররা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।

'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।' নিজের জন্যে কিছু নয়, শুধু সন্তানের জন্যে সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করেছিল সুদূর অতীতে বাঙালির এক প্রপিতামহী, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলের হতদরিদ্র, অশিক্ষিত ঈশ্বরী পাটনী। আমার সন্তান যদি আমারই না থাকে, তবে সে দুধভাত খেলেই কী, দুম্বার বিরিয়ানি খেয়ে উটের ঢেকুর তুললেই-বা কী!

তরুণদের বাঙালি এবং মানুষ করে গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিতে হবে এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পদ্মা সেতু বা ঢাকার মেট্রোর চাইতে এই দায়িত্ব কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হলে তা জাতির ভবিষ্যতের জন্যে হিতকর হবে না।