এখনই সময় লাগাম টেনে ধরার

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 23 June 2016, 07:23 AM
Updated : 23 June 2016, 07:23 AM

সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায়ে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় কোনো আসামি মুখাবরণ (মাস্ক) ব্যবহার করেননি। তারা এতটাই বেপরোয়া ছিলেন এবং ভেবেছিলেন যে, তাদের চেহারা চিনলেও তাদের কিছুই হবে না। তাদের এ ভাবনার কারণ হল, তাদের পেছনে এমন একটা শক্তি রয়েছে যে বা যারা তাদের সকল প্রকার ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য ঝামেলা থেকে রক্ষা করার শক্তি রাখেন।

স্থানীয় বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা এ ধরনের চিন্তা করতে পারে। কারণ, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের পরিহার করার প্রবণতা দেখা যায় না। বরং অধিকাংশ এদের ওপর নির্ভরশীল। যা কোনো দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। এ ধরনের সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। মুখ থুবড়ে পড়বে গণতন্ত্র।

হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্ক করতে চাইলে কেউ তা করতেই পারেন। কিন্তু তাতে বাস্তবতার হেরফের হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যে বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সেটাই সত্য। রাজনীতি থেকে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতরা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। আর যারা নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তারাই জায়গা দখল করছে। অতিসাম্প্রতিক দুটি ঘটনার কথা প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়।

যাত্রাবাড়ি এলাকায় ৩৪ লাখ টাকা ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছে ছাত্রলীগের স্থানীয় পর্যায়ের দু-তিন জন নেতা-কর্মী। থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে নাকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে খবর কোনো গণমাধ্যমে পাইনি। তবে এ ধরনের 'দুর্বৃত্ত' যে ছাত্রলীগে আরও আছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। তাদের অপকর্মের খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী তানিয়া খান ১৩ জুন মোহাম্মদপুর থানায় নির্যাতন ও মারধোরের অভিযোগে মামলা করেছেন। তানিয়ার অভিযোগ, অন্য নারীর সঙ্গে মারুফের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারুফ তার মাথায় আঘাত করেন। পরে কী হয়েছে সেটা জানা না গেলেও বোঝা যাচ্ছে মানুষ হিসেবে কেমন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব।

এ প্রসঙ্গ ধরেই একটু ভিন্ন আলোচনায় যেতে চাই। সংবাদপত্রে আমার লেখা ছাপা হলে পাঠকদের কাছ থেকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া পাই। এ রকম নিয়মিত প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকেন পঞ্চগড় জেলার বোদা নিবাসী ওয়ালিউল ইসলাম মন্টু। তিনি আমার বড় ভাইয়ের মতো, আমার কয়েক বছরের সিনিয়র এবং নেতা। তার স্ত্রী লিজা ভাবীও আমার নিত্য শুভার্থী। তাদের দু কন্যা লুবনা ও লাবনী এবং এক পুত্র নাহিদ বাবু আমার অত্যন্ত প্রীতিভাজন, তাদের কাকা আমি। সম্পর্কটা একেবারেই পারিবারিক পর্যায়ের।

মন্টু ভাইয়ের মতো আরও কয়েকজন বড় ভাই– আবদুর রউফ, সফিকুল আলম চৌধুরী, সামসুজ্জোহা– এদের দেখে বা এদের হাত ধরে সেই স্কুলজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের একজন সামান্য কর্মী হিসেবে ছাত্রআন্দোলনে সক্রিয় হয়েছিলাম। যাদের নাম বললাম তারা সবাই এখনও জীবিত এবং এলাকায় কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে এঁদের মধ্যে কেবল মন্টু ভাইয়ের সঙ্গেই আমার এখন পর্যন্ত নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আমি বাড়ি গেলে কিংবা তিনি ঢাকা এলে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। আর অন্য সময়ে টেলিফোনে যোগাযোগ হয়। লেখা ছাপা হলে তিনি অবশ্যই ফোন করেন এবং তাঁর মতামত তুলে ধরেন।

ওয়ালিউল ইসলাম মন্টু শুধু বোদা থানার নন, পঞ্চগড় জেলারই একজন খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। যদিও এখন দলীয় রাজনীতিতে সেভাবে সক্রিয় নন। ১৯৯৬ সালে সামসুদ্দোহা, নূহ-উল-আলম লেনিনের নেতৃত্বে সিপিবির কজন সাবেক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তাদের মধ্যে মন্টু ভাইও একজন।

বড় নেতাদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোয় জায়গা করে নিতে পারলেও মন্টু ভাইয়ের মতো যারা স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন তাদের সবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ভালো হয়নি। মন্টু ভাই সিপিবির একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। বিশেষ করে নিজের ইউনিয়নে (মাড়েয়া) তিনি ছিলেন 'মুকুটহীন রাজা'।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর নিজের এলাকার ভোট কেন্দ্রে ন্যাপের প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে গিয়েছিলেন। সে সময় ছিল নৌকার প্রবল জোয়ার। তারপরও একটি কেন্দ্রে ন্যাপ-প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছিলেন প্রার্থীর নিজের জনপ্রিয়তার কারণে নয়, মন্টু ভাইয়ের জনপ্রিয়তার উপর ভর করে। একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কম ভোট পাওয়ার বিষয়টি তখন ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল।

মন্টু ভাই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর টানা চার বার তিনি সে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তার কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়।

আগেই বলেছি, তিনি ছিলেন সিপিবির একজন প্রভাবশালী নেতা এবং পার্টির সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদের ঘনিষ্ঠ জন। মন্টু ভাই ভালো বক্তাও ছিলেন। স্থানীয় যে কোনো জনসভায় তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য মানুষকে সাগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেক ওলট-পালট ঘটে যায়। দলটিতে তাঁকে যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। তিনি শুধু ছোট দলের বড় নেতা ছিলেন না, ছিলেন সত্যিকার গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন জনপ্রিয় মানুষ। নেতৃত্ব দেওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্বেও আওয়ামী লীগে উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে সম্ভবত নিজেকে গুটিয়েই নেন। কিছুটা হতাশাও বোধহয় তাঁকে পেয়ে বসেছিল।

মন্টু ভাইয়ের মতো নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক সংগঠকের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ার বিষয়টি আমাকে সব সময় পীড়িত করে। বোদা উপজেলায় এখন যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন, তারা কেউ যোগ্যতার বিবেচনায় তাঁর ধারে-কাছে যাওয়ার মতো নন। অথচ তারাই সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর মন্টু ভাই যেন থেকেও নেই।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য মন্টু ভাইয়ের গুণকীর্তন নয়। আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা যে রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন বা তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেটি বোঝানোর জন্যই কথাটা তুললাম। মন্টু ভাই তো অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে গেছেন, তিনি কিছুটা বৈষম্যের শিকার হতেই পারেন। কিন্তু যারা জীবনভর আওয়ামী লীগ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দলের ওপর যখন বিপর্যয় নেমে এসেছিল, তখন যারা বাতি জ্বালিয়ে রেখেছিলেন তেমন প্রবীণ নেতা-কর্মীরাও যে আজ আওয়ামী লীগে কল্কে পাচ্ছেন না, তেমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

রাজনীতিতে যারা নীতি হিসেবে, মানবকল্যাণের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন, জায়গা-জমি বিক্রি করেও যারা দলের জন্য কাজ করতেন তারা এখন দলে অপাঙতেয়। অথচ রাজনীতিকে যারা ব্যবসা হিসেবে দেখছেন, উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে করছেন, আওয়ামী লীগে এখন তাদেরই রমরমা অবস্থা। কয়েক বছর আগেও যাদের দুবেলা খাওয়া জুটত না তাদেরই দুএকজনকে এখন এমন ফুটানি করতে দেখা যায়, যা সাধারণ মানুষের চোখেও লাগে। ক্ষমতার রাজনীতি তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আঙ্গুল ফুলে তাদের কেউ কেউ কলা গাছ নয় বরং বটগাছে পরিণত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

মন্টু ভাইয়ের মতো এমন অসংখ্য মানুষ আমাদের দেশে এখনও আছেন, যারা কিছু পাওয়ার জন্য নয়, দেওয়ার জন্যই রাজনীতিতে এসেছিলেন। তারা সত্যিকার অর্থেই মানুষের দুঃখ মোচনের জন্য রাজনীতি করতেন। এ রকম মানুষদের যদি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় করে তোলা যায়, তাদের অভিজ্ঞতা যদি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক শক্তির বিকাশের কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন দল লাভবান হবে, তেমনই দেশের রাজনীতি ভালোর দিকে মোড় নিবে।

রাজনীতি-ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে যদি রাজনীতিকে মুক্ত করা যায়, তাহলেই রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। অভিমান করে, হতাশ হয়ে, বঞ্চিত বোধ করে, অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন, নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাদের অবস্থান এখনও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে। তারা মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগের, শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনা করেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলটি তাঁর সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে আরও দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকুক, এই প্রত্যাশা তাঁরা বুকের গভীরে লালন করেন।

কিন্তু তাঁরা অত্যন্ত দুঃখ-বেদনার সঙ্গে এটা লক্ষ্য করছেন যে, দলের মধ্যে এমন শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যারা ঘুণপোকার মতো ভেতর থেকে কেটে দলকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই ঘুণপোকাদের যদি তাড়ানো না যায়, তাহলে যে কোনো দমকা হাওয়ায় সব কিছু ভেঙে তছনছ হয়ে যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈরী সময় ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যথেষ্ট দক্ষতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করছেন। আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা কিংবা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক-দরদীদের অনেকের অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কারও কোনো কথা নেই। তবে তাদের অনেকের মধ্যে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে। এই আতংকই আমি সেদিন মন্টু ভাইয়ের কন্ঠে শুনতে পেয়েছি।

ফোন করে কুশলাদি জিজ্ঞাস করার পরই মন্টু ভাই বললেন, দেশের পরিস্থিতি খুব ভালো ঠেকছে না। মানুষের মধ্যে কেমন একটা গুমোট ভাব। কেউ মন খুলে কথা বলতে চায় না। কৃষকের অবস্থা খুবই খারাপ। ধানের দাম না পেয়ে তারা চরম হতাশার মধ্যে আছে। সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে তার থেকে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক।

শেখ হাসিনার সরকার কৃষক-দরদী বলে পরিচিত অথচ ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে সেই কৃষকেরই মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। কিন্তু তাদের এই দুরবস্থা দেখার কেউ নেই। কৃষকের যদি সর্বনাশ হতে থাকে তাহলে দেশের উন্নয়নের গল্প শুনে মুগ্ধ না হয়ে বিরক্ত হয়ে উঠতে পারে। খোদ কৃষকের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা করতে হবে অবিলম্বে। আর এ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের কিছু নেতা যে 'স্লিপ' বাণিজ্য শুরু করেছে সেটাও বন্ধ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিরুদ্ধ পক্ষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে রকম কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন, তেমন কঠোরতা দেখাতে হবে দলের মধ্যে থেকেও যারা নানা ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গী হয়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে এবং সরকারের সুনাম-সাফল্য ম্লান করে দিচ্ছে।

মন্টু ভাই অবশ্য আশা প্রকাশ করে বললেন যে, যা-ই হোক না কেন, শেখ হাসিনা পরিস্থিতি সামলে নিবেন। তাঁর উপর ভরসা করেই তো দেশ চলছে, দল চলছে। দেশের মানুষের সব আশা-ভরসা এখন তাঁর ওপর। তাঁর প্রতি মানুষের পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস আছে বলেই দেশের কোথাও কোনো ধরনের বিক্ষোভ-বিদ্রোহ দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, তিনি তো একলা মানুষ। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এখন সেভাবে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ নয়। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যেভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা গেল, সেটা ভালো লক্ষণ নয়। বিএনপির চেয়ে অনেক বেশি চেয়ারম্যান পদ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই বিজয়কে কোনোভাবেই জনপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। নির্বাচন নিয়ে নানান প্রশ্ন ও বিতর্ক আছে। বিএনপির চেয়ে বেশি চেয়ারম্যান পদ পেয়েছে আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীরা অর্থাৎ বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ।

কাজেই এখনই সাবধান হওয়ার উপযুক্ত সময়। লাগাম এখনই টেনে না ধরলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে না পারলে শেখ হাসিনা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করার জোর পাবেন কোথা থেকে?

মন্টু ভাই শেষে বললেন, আমাদের সাধারণ মানুষের মতামত, প্রতিক্রিয়া প্রকাশের তেমন কোনো জায়গা নেই। তোমরা যারা লেখালেখি কর, তাদেরই উচিত কেবল তোয়াজ-তোষামোদ না করে ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে সরকারকে সঠিক পথে পরিচালনায় সহায়তা করা। আসন্ন কাউন্সিলে দল গোছানোর বিষয়টি যেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, এই অনুরোধটা যেন তাঁর কাছে পৌঁছে।

প্রধানমন্ত্রীর একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী মন্টু ভাইয়ের কথাগুলো এখানে তুলে ধরতে পেরে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি। আমার বিশ্বাস, তাঁর মতো আরও অনেক মানুষেরই মনের কথা এগুলোই।