প্রসঙ্গ: বিশেষ সময়ের জটিলতা ও তা থেকে উত্তরণ

কাজী আহমদ পারভেজ
Published : 11 April 2016, 09:20 AM
Updated : 11 April 2016, 09:20 AM

১.

আমেরিকায় বছরে ৮৩ লাখ মানুষ আত্মহননের কথা ভাবেন। তাদের ২২ লাখ পরিকল্পনা করেন; ১০ লাখ কোনো না কোনো প্রচেষ্টা চালান; শেষ পর্যন্ত তাতে সফল হন ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মতো মানুষ। এই 'সফল' আত্মহত্যাকারীর মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষরা সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও অন্য সব ক্যাটাগরিতে, অর্থাৎ ভাবা, পরিকল্পনা করা ও প্রচেষ্টা চালানোতে নারীরাই এগিয়ে।

বোঝা যাচ্ছে যে, আত্মহনন প্রচেষ্টার পদ্ধতিতে কিছু একটা দুর্বলতা থাকার কারণেই হয়তো-বা নারীরা আত্মহত্যার ক্ষেত্রে 'পিছিয়ে' পড়ছেন। পুরুষরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেখানে আত্মহত্যার জন্য 'গান শট'এর মতো অব্যর্থ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, নারীরা সাধারণত করেন বিষের মতো ধীর পদ্ধতির প্রয়োগ। তাই প্রচেষ্টাত্তোর বেঁচে যাওয়ার হার নারীদের জন্য অনেক উচ্চ। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটা আবার ঠিক যে, যে সকল নারী তাদের সেই দুর্বল পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হন, তাদের বিরাট অংশ (প্রায় ৯০ শতাংশ) তা ঘটিয়ে ফেলেন তাদের ঋতুচক্রের নির্দিষ্ট একটা সময়ে।

এটা কি কেবলই কাকতাল? নাকি সেই সময়টায় আছে বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য, যা নারীকে অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্নভাবে 'শক্তিশালী' করে তোলে তার এই অনাকাঙ্ক্ষিত লক্ষার্জনের জন্য?

আসুন আগে জেনে নিই, কোন সেই 'অভিশপ্ত' সময়কাল যখন মরণের ভূত পেয়ে বসে তাদের কাউকে কাউকে?

তার আগে বলে রাখি, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আত্মহত্যার ঘটনা যাদের ক্ষেত্রে ঘটে, দেখা গেছে তাদের বিরাট একটা অংশ (আবারও সেই ৯০ শতাংশ) আগে থেকেই কোনো না কোনো চিহ্নিত (ডায়াগোনাইজড) মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তা হতে পারে, বিষণ্নতা থেকে শুরু করে বাই-পোলার ডিজঅর্ডার পর্যন্ত কিছু না কিছু। এ থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায়, আত্মহত্যার বিষয়টা সাধারণত যত না আকস্মিক বা যে কারও কাজ বলে মনে হয় বাস্তবে তা নয়, এটা তার চেয়ে ঢের বেশি আত্মহত্যাপ্রবণদের একটি 'দীর্ঘ প্রস্তুতির ফসল'। তাই ঐ সময়ের কারণে কেউ আত্মহত্যা করছেন, এটা ভাবার কারণ নেই। বরং যারা এমনিতে অন্য কোনো কারণে তা করতেনই, তারা ঐ সময়টা সুবিধাজনক বলে বেছে নিয়েছেন, এটা ভাবাই যুক্তিযুক্ত।

এই লেখাটা আত্মহত্যা বা আত্মহত্যা-প্রবণতা নিয়ে নয় বরং সেই রহস্যময় সময় নিয়ে, যখন আত্মহত্যাপ্রবণ নারীরা তাদের দুর্বল আত্মহনন প্রচেষ্টায়ও সফল হন অনেক বেশি।

২.

ঋতুচক্রের এই রহস্যময় সময়টা হল মূলত 'প্রাক-মাসিক' সপ্তাহটি। তবে ব্যক্তিভেদে এটা ঋতুস্রাব শুরুর পাঁচ থেকে এগারো দিন আগে শুরু হয়ে আরও চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে এটা তাদের সাইকেলের ৭-১৪ দিনের একটা জটিলতাপূর্ণ অধ্যায়।

'বেশিরভাগ নারী' কথাটা বললাম কেন?

কারণ প্রতি চার জন নারীর তিন জনই তাদের ঋতুচক্রের এই অধ্যায়ে এমন মাত্রার শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় আক্রান্ত হন যা তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, পেশাগত দায়িত্ব, এমনকি সম্পর্কের উপরও লক্ষ্যণীয় প্রভাব ফেলে থাকে।

শারীরিক কষ্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, তলপেট কামড়ানো (ক্র্যাম্প), পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, পিঠব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ফ্লুইড রিটেনশনজনিত ওজন বৃদ্ধি, পেট ফেঁপে থাকা, ব্রেস্ট টেন্ডারনেস, ব্রণ, ডায়রিয়া অথবা কন্সটিপেশন, নিদ্রাহীনতা অথবা অতিনিদ্রা ইত্যাদি।

মানসিক কষ্টগুলি হল দুশ্চিন্তা বা উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতা, বিরক্তি, হঠাৎ হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়া, বিরক্তি বা ক্রোধযুক্ত মুড-সুইং, ঘুম নিয়ে সমস্যা, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও দায়িত্বপালনে অনীহা, মনোযোগহীনতা ইত্যাদি।

৩.

সমীক্ষা থেকে আরও জানা যায় যে, নারীদের কুড়ি থেকে ত্রিশ ভাগের জন্য, মানে প্রতি পাঁচ জন নারীর মধ্যে এক থেকে দেড় জন উপরের এইসব উপসর্গে এতটাই আক্রান্ত হন যে, পরিত্রাণ পেতে তাদেরকে মেডিকেল হেলপ নিতে হয়। মেডিকেল হেলপ অর্থে ডাক্তারের পরামর্শে বাধ্যতামূলক ঔষধ সেবন থেকে শুরু করে সময় সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত হতে পারে।

যাদেরকে এই চিকিৎসা সহায়তার আওতায় আসতেই হয়, তাদেরকে সচরাচর 'প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম' বা পিএমএস-আক্রান্ত হিসেবে ডায়াগনোসিস করে তারপর সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। আবার এসব রোগীর প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ঋতুমতী সকল নারীর আট শতাংশের মধ্যে এই সমস্যাগুলি এতটাই প্রকট থাকে যে, তাদের পিএমএস হিসেবে ডায়াগনোসিস না করে 'প্রি-মেন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিজঅর্ডার' (পিএমডিডি) নামের আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হিসেবে ডায়াগনোসিস করা ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসার আওতায় আনা হয়।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, পিএমডিডি হল মনোচিকিৎসার বাইবেল বলে পরিচিত 'ডিএসএম-৫'এর অন্তর্ভুক্ত একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেটি সম্পর্কে ডিএসএম-৫এর ৬২৫.৫এ আলোচনা করা হয়েছে।

আজকের লেখায় পিএমডিডি নয়, পিএমএস নিয়ে লিখতে চাইছি। তাই পিএমডিডিটা তোলা থাক। যদি পাঠকগণের আগ্রহ দেখি, পরে এক সময় ওটা নিয়েও আলাপ করবার ইচ্ছা থাকল।

৪.

চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতির পরও এই যে প্রজননক্ষম নারীদের ৭৫ শতা্ংশ, ২০ শতাংশ বা ৮ শতাংশ নানা মাত্রার কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, এটা কি গ্রহণযোগ্য? এটা কি কেবলই দুর্ভাগ্যপ্রসূত?

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সারা বিশ্বের এত এত নারী প্রতিনিয়ত এতসব কষ্টের মধ্য দিয়ে গেলেও তাদের অবস্থার উন্নয়নে বা যন্ত্রণা লাগবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য গবেষণা বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এটা ভাবা যায়?

পিএমএস বা পিএমডিডি– এই সমস্যাগুলো নিশ্চয়ই আদিম যুগ থেকেই ছিল। অথচ ভাবলে অবাক লাগে, মাত্র ১৯৩১ সালে এগুলোকে প্রথম চিকিৎসা সেবা পাওয়ার উপযুক্ত বলে স্বীকার করা হয়। তার মানে, তার আগে পর্যন্ত উপরোল্লিখিত যন্ত্রণাক্রান্ত তিন-চতুর্থাংশ নারী যত যন্ত্রণাভোগ করেছেন, তারা তা লাঘব করার কথা কাউকে বলতে পর্যন্ত পারেননি। আর এখনও যে এর সমাধানে তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়, সেটাও সম্ভবত ঐ একই কারণে যে, তারা এখনও সেভাবে বিষয়টা আলোচনায় তুলে আনছেন না বা আনতে পারছেন না।

প্রশ্ন হল, এত বিপুল সংখ্যক নারী যে নিয়মিত বিরতিতে এই যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা ভোগ করছেন, এটা কি তাদের দুর্ভাগ্য? নাকি এর পিছনে নিবারণযোগ্য কোনো কারণও রয়েছে?

বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা যে হয়নি সেটা আগেও বলেছি। তবে যতটা গবেষণা হয়েছে তা থেকে এটা বোঝা গেছে যে, এই অবস্থার পিছনে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট কারণ কাজ করছে না। বিভিন্ন কারণ ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় ক্রিয়াশীল হয়েই নারীদের জন্য এই যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। আর হয়তো সেই কারণে এই অবস্থার উপশম প্রচেষ্টাও বেশ জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ধরে নেওয়া যায় যে, যথাযথ গবেষণা করে কনট্রিবিউটিং ফ্যাক্টরসমূহের সবগুলি ঠিক ঠিক চিহ্নিত করা গেলে ও সেগুলি কতটা কীভাবে ভূমিকা রাখে, তা জানা গেলে ভুক্তভোগীদের কষ্ট লাঘবের দীর্ঘমেয়াদী একটা সুনির্দিষ্ট পথ পাওয়া যেতে পারত।

৫.

এই পর্যায়ে আসুন জেনে নেওয়া যাক জটিলতাসমূহ, তার তীব্রতা ও এগুলো লাঘবে নেওয়া প্রচলিত ব্যবস্থা সম্পর্কে।

প্রথমেই আসে খিঁচুনিসহ বা ছাড়া তলপেটে বা অন্যান্য পেশীতে ব্যথার বিষয়ে, যেগুলোর তীব্রতা কারও কারও ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক বা সন্তান জন্মদানের সময়কার ব্যথার কাছাকাছি হয়ে থাকে। অন্যদের ক্ষেত্রে এটা অত তীব্র না হলেও পিএমএস যাদের থাকে তাদের ক্ষেত্রে তা এতটাই তীব্র হয় যে, আইবুপ্রোফেন জাতীয় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ঔষধ সেবন ছাড়া স্বাভাবিক কাজকর্ম করা প্রায় সম্ভবই হয় না।

কমন প্রবলেমের মধ্যে এরপরই আসে মাথাব্যথা ও বমি ভাব। আইবুপ্রোফেন তলপেটের ব্যথা ও খিঁচুনি কমালেও অনেকের ক্ষেত্রে আবার মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব বাড়াতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া যাদের হাইপার এসিডিটি আছে তাদের গ্যাস হওয়া ও বুকজ্বলার কারণ হতে পারে এই আইবুপ্রোফেন।

এসব ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের ব্রেস্ট টেন্ডারনেস, ফ্লুইড রিটেনশন ইত্যাদিও হয়ে থাকে। বেদনানাশকে ব্রেস্ট টেন্ডারনেস কাটলেও ফ্লুইড রিটেনশন থেকে মুক্ত হতে কাউকে কাউকে ডিউরেটিকস জাতীয় ঔষধ সেবন করতে হয়। মাসে মাসে এভাবে ডিউরেটিকস সেবন অন্যান্য জটিলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে এমন আশঙ্কা থেকে যায়।

৬.

এবার আসি আরেক ধরনের অর্থাৎ মানসিক উপসর্গ সম্পর্কে।

যাদের পিএমএস থাকে তাদের নানা প্রকারের ব্যথার পাশাপাশি আরেক ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় যা মনোবৈকল্যকর। যেমন, বিষণ্নতা, মুড-সুইং, উৎকণ্ঠা, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি। এসবের প্রভাবে চলমান সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি অনেকেরই খাদ্য গ্রহণের, বিশেষ করে চিনি বা লবণের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। আর এতে স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে তো যায়ই, পায়ে বা পেটে পানিও আসতে পারে।

এইসব উপসর্গ যে সকল পিএমএস রোগীর থাকে তাদেরকে অনেক সময়েই অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট সহযোগে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু যাদের স্থূলতার সমস্যা আছে, তাদের জন্য প্রতি মাসে কয়েক দিন এভাবে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট সেবন সুখকর নয়। তাছাড়া নিদ্রাহীনতা বা অতিনিদ্রা ও এই সম্পর্কিত উৎকণ্ঠা আবার বেড়ে যেতে পারে। আরও নতুন নতুন উপসর্গ যোগ হওয়াও বিচিত্র নয়।

৭.

দেখা যাচ্ছে যে, মূল সমস্যার গোড়ায় না পৌঁছে এভাবে উপসর্গের উপশম-প্রচেষ্টা সাময়িক কিছু নিরাময় দিলেও এগুলো আবার দীর্ঘমেয়াদে জটিলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ পর্যায়ে আসুন এসব জটিলতার পিছনের কারণ কতটা উদঘাটিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছু শুনি।

অন্য অনেক শারীরিক জটিলতার মতোই জেনেটিক ফ্যাক্টর পিএমএস ও পিএমডিডির একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। এটা হয়ে থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে করার কিছু থাকে না সত্য, তবে বয়োসন্ধির আগে থেকেই কিছু কিছু সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা যায় যা পরবর্তীতে যন্ত্রণা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এরপরই যে ফ্যাক্টরটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী তা হল স্ট্রেস। এটা যদিও পরিবেশগত কারণে আসে তবে কে কতটা স্ট্রেসড হবেন তার পিছনে জেনেটিকভাবে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের ভূমিকাও থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাৎক্ষণিকভাবে নিবারণ করার কিছু নেই, তবে ব্যাপারটা জানা থাকলে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে অন্যান্য নিবারণ প্রচেষ্টা সহজতর করা সম্ভব। আবার স্ট্রেসড হয়ে পড়লে তা ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

আরেকটি দায়ী ফ্যাক্টর হল পরিবেশগত টক্সিসিটি। অনেকেই দাবি করেন যে, খাদ্যাভ্যাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এই টক্সিসিটি কমিয়ে আনা সম্ভব।

৮.

এখন দেখি, এই ফ্যাক্টরগুলো শারীরিক কী কী পরিবর্তন ঘটাতে ভূমিকা রাখে যা পূর্বোল্লিখিত ঐসব উপসর্গের জন্ম দিতে পারে? এ ক্ষেত্রে তিন ধরনের শারীরিক ভিন্নতা ঘটতে পারে বলে মনে করা হয়:

১. পিরিয়ডের দিনগুলোতে বড় ধরনের হরমোন ইমব্যালান্স; ২. ব্রেইনে ঘটা কেমিক্যাল চেইঞ্জ; ৩. এন্ডোমেট্রিওসিস। চিকিৎসার জন্য প্রথমেই দেখা উচিত এন্ডোমেট্রিওসিস আছে কিনা। এন্ডোমেট্রিওসিস যদি থেকে থাকে আগে সেটা চিহ্নিত করা ও চিকিৎসা করা জরুরি। এন্ডোমেট্রিওসিস থাকা অবস্থায় হরমোন ইমব্যালান্স দূর করার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত তেমন কাজে দেবে না।

যদি বোঝা যায় যে, উল্লেখযোগ্য কোনো এন্ডোমেট্রিওসিস নেই, তখন চিকিৎসকরা হরমোন ইমব্যালান্স দূর করার চেষ্টা করে বা ব্রেইনের কেমিক্যাল চেইঞ্জ নিয়ন্ত্রণ করে রোগীর অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট হতে পারেন।

৯.

এবার জানা যাক কী ধরনের হরমোন ইমব্যালান্স ঘটে বলে ধরা হয় আর কীভাবেই-বা তার চিকিৎসা করা হয়?

সাধারণত ইস্ট্রোজেন বেড়ে গিয়ে ও প্রোজেস্টেরন কমে গিয়ে হরমোন ইমব্যালান্স ঘটে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রোজেস্টেরন-ওনলি কন্ট্রাসেপটিভ বা স্বল্পমাত্রার অন্য কোনো কন্ট্রাসেপটিভ প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক রোগীর পিএমএস ও পিএমডিডিজনিত উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

এখানে সমস্যা বাঁধে এই যে, কারও কারও আবার ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল (ওসিপি) সম্পর্কে বিরূপ ধারণা্ থাকে। তারা ভাবেন, 'ওটা খেলে তো মোটা হয়ে যাব।' এমনকি শুনে শুনে বা অজ্ঞতাজনিত কারণে এই বিরূপ ধারণা এতটাই প্রবল হয় যে, যে ডাক্তার এটা পিএমএস বা পিএমডিডি নিরাময়ে প্রেসক্রাইব করেছেন জেনেও তারা তো তা মানেনই না, বরং এক ধরনের বৈরী মনোভাবও পোষণ করেন।

এটা ঘটে পুরোনো দিনের আত্মীয়-পরিজনদের কাছে ওসিপি খেয়ে মোটা হয়ে যাবার গল্প-গাঁথা শোনার কারণে।

হ্যাঁ, এক সময় ওসিপিতে উচ্চমাত্রার অপরিশোধিত হরমোন ব্যবহৃত হত। সে সময়ে তা খিদে বাড়িয়ে ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখত। কিন্তু আজকালকার ওসিপিগুলোতে খুবই স্বল্পমাত্রায় পরিশোধিত হরমোন ব্যবহার করা হয়। এগুলো সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় ন্যূনতম পর্যায়ে। তাছাড়া যে উপসর্গ নিরাময়ে এটা ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলোর তুলনায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে কিছুই নয় তা বুঝেই তো চিকিৎসক এটা প্রেসক্রাইব করেছেন, তাই না?

আবার এই হরমোন ব্যালান্সিংএর চিকিৎসাটি যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। ওসিপি প্রয়োগে পিএমএস বা পিএমডিডি চিকিৎসার অন্য একটা সমস্যা এদেশে আছে। রোগী যদি অবিবাহিত বা সিঙ্গেল হন, সে ক্ষেত্রে তার ওসিপি সেবন সন্দেহের চোখে দেখার আশঙ্কা থেকে যায়।

এই কুদৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ট্যাবু থেকে শুধু রোগী নয়, অনেক সময় চিকিৎসকরাও বেরুতে পারেন না। আর তখন তারা নিজের ও রোগীর নিরাপত্তার কথা ভেবে বা জটিলতা এড়াতে শ্রেয়তর জানার পরও ওসিপি প্রয়োগে হরমোন ব্যালান্সিংএ না গিয়ে উপসর্গ দূর করতে অন্য পদ্ধতি, যেমন বেদনানাশক হিসেবে আইবুপ্রোফেন বা ডিপ্রেশন কমাতে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ইত্যাদি জাতীয় ঔষধ প্রেসক্রাইব করে বসেন।

১০.

তবে শুধু ঔষধ প্রয়োগে হরমোন ইমব্যালান্স দূর করা একমাত্র উপায় হিসেবে নিয়ে তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে দীর্ঘমেয়াদে ভালো না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ক-আউট করে ও শারীরিকভাবে অ্যাকটিভ থাকে, তার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেও হরমোন ইমব্যালান্স কমানো বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। এই জন্য যা করা হয় তা হল, এলার্জি উদ্রেককারী খাদ্যসমূহ ও রিফাইনড খাদ্যসামগ্রী বর্জন, গ্লুটেনমুক্ত খাদ্যগ্রহণ, কিছু মিনারেল ও মাইক্রো-নিউট্রেন্ট সাপ্লিমেন্ট করা, ব্যালান্সড খাদ্য গ্রহণ ও স্বল্পমাত্রায় বেশি বার খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি।

পাশাপাশি, বৌল-মুভমেন্ট ঠিক রাখতে প্রচুর শাকসবজি, ফলমূলও খাওয়া উচিত। পর্যাপ্ত পানি পানও জরুরি। এসবের পাশাপাশি ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন যথাসম্ভব কমানোর সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণমূলক কিছু কিছু চর্চা চালানো উচিত।

১১.

চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ সেবন ও জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুধু পিএমএস ও পিএমডিডি সম্পর্কিত জটিলতাই নিয়ন্ত্রণ নয়, এর আফটার ইফেক্ট হিসেবে আর যা যা ঝুঁকি আছে, সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে বলে আশা করা যায়।

আসুন এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পিএমএস ও পিএমডিডির সুদূরপ্রসারী রিস্কগুলি কী কী?

গবেষণায় দেখা গেছে, পিএমএস ও পিএমডিডিতে যারা ভোগেন, বয়স বাড়লে অন্যদের চেয়ে তাদের হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। তাদের মধ্যে স্থূলতার হারও উচ্চতর। আর এসব কারণে হৃদরোগ ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, দীর্ঘদিনের ঔষধ-নির্ভরতা এদের কিডনির সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। সব কিছুর মিথস্ক্রিয়ায় পিএমএস-আক্রান্তদের গড় আয়ু অন্যদের তুলনায় কম হওয়া তাই মোটেও বিচিত্র নয়।

১২.

কথা হল, এত যে যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ড-সম্পর্কিত জটিলতা, পিএমএস বা পিএমডিডি নিয়ে, সেটা জনসাধারণ্যে এত কম গুরুত্ব পায় কেন?

এই কম গুরুত্ব পাওয়াটা আসলে পিরিয়ড-সম্পর্কিত অজ্ঞতা ও একে ট্যাবু জ্ঞান করে এ নিয়ে আলাপে অনীহা-সম্পর্কিত। একটি ঘটনা বলি।

সম্প্রতি একদল চিকিৎসা বিজ্ঞানী দেখতে পেলেন, ভায়াগ্রার উপকরণ 'সিলডেনাফিল' প্রয়োগ করে পিএমএস-আক্রান্তদের অনেক ধরনের উপসর্গ উপশম হয়। এটা জানার পর তারা আরও গবেষণার করতে চাইলেন যেন এই ঘটনার কার্যকারণ বোঝা যায়। পাশাপাশি, সিলডোনাফিল প্রয়োগে পিএমএস চিকিৎসা যদি গ্রহণযোগ্য হয় তবে তার ডোজসহ অন্যান্য নিরাপদ ব্যবহারবিধি প্রণয়ন করা যায়। তারা খুবই অবাক হলেন, যখন দেখতে পেলেন কোটি কোটি নারীকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবার সম্ভাবনা থাকা এমন একটা গবেষণায় কেউ অর্থায়ন করতে উৎসাহী নন।

হয়তো ঔষধ কোম্পানিগুলো ভাবছে, এ গবেষণার সফলতা বাজারে চালু তাদের তৈরি বেদনানাশক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট, মুড-স্ট্যাবিলাইজিং ঔষধগুলোর বাজার সংকুচিত করে ফেলবে। অন্যান্যরা অজ্ঞতার কারণে ব্যাপারটার গুরুত্ব যে কত, সেটা বুঝতেই পারছেন না।

১৩.

এই পর্যন্ত যা যা বললাম, তা শুনে আবার এটা ভেবে বসবেন না যে, আমি পিএমএসকে একটি রোগ হিসেবে ও যাদের তা আছে তাদেরকে রোগী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য এই লেখাটা ফেঁদে বসেছি। একটি পপুলেশনের এক চতুর্থাংশ সদস্যের বৈশিষ্ট্য তাদেরকে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত নয়। আবার তিন-চতুর্থাংশের পিএমএস থাকার কারণে তাদেরকে অস্বাভাবিক ভাবাও ঠিক নয়।

তাছাড়া বুঝলাম অবস্থাটা কষ্টকর, তারপরও এটা যে ন্যাচারাল সিলেকশন পাচ্ছে এর পিছনেও নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। আমরা তাই যে কোনো মাত্রায় পিএমএস থাকা বা কোনো পিএমএস না থাকা, উভয়কেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেব। আর এই পর্যায়ে আলোকপাত করব পিএমএস থাকা বা না থাকা সম্পর্কের উপরে কী প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে তা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সঙ্গী উভয়ের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসা সম্ভব সে বিষয়ে।

যাদের পিএমএস আছে, তাদের ঋতুচক্র মোটামুটি চারটি সমান বা প্রায় সমান ভাগে ভাগ হয়ে যায়। পিরিয়ড শুরুর আগের সপ্তাহটা কাটে সবচেয়ে টালমাটাল অবস্থায় যাকে কেউ কেউ 'ভলকানো উইক' বলেও চিহ্নিত করেন। আগেই বলেছি, এ সময়ে শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি নানা মানসিক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে নারীকে যেতে হয়। সম্পর্কের জন্য, বিশেষ করে তা যদি হয় নতুন সম্পর্ক, এই সময়টা খুবই সমস্যাসঙ্কুল। দেখা যাবে অন্য সময়ে সঙ্গীর যা যা দেখে উনি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন, এই সময়ে মুড-সুইংএর কারণে একই বা আরও ভালো কিছু দেখে বিরক্ত বা উত্যক্ত বোধ করছেন। আবার অন্য সময়ে যার একটা কথা শোনার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে থাকতেন, এ সময়টাতে তারই আরও আর্দ্র কথা শুনেও তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন।

উভয় পক্ষে এই অবস্থা মোকাবেলার প্রস্তুতি না থাকলে ভুল বুঝাবুঝি হওয়া ও তা থেকে সম্পর্কের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অতি উচ্চ।

তবে পিরিয়ড শুরুর অব্যবহিত পরই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটা শুরু হয় এবং প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে চলা এই অধ্যায়টা এক অর্থে তাই 'রিকভারি উইক'। আর এরপরই আসে সাইকেলের সবচেয়ে রঙ্গিন অধ্যায় যাকে কেউ কেউ 'লাভ উইক' বলেও অভিহিত করেন। এই অধ্যায়টা এভাবে বর্ণনার একটি কারণ হল এই যে, ভলকানো বা তাতে পৌঁছুনোর আগেকার কিছু সময় যে ভালোবাসাহীনতায় নষ্ট হয়েছে, নির্ঝঞ্ঝাট এই সময়টাতে তা পুষিয়ে দিতে এমন কোনো পদক্ষেপ নেই যা তারা নেন না।

অবশ্য যাদের পিএমএস নেই, সঙ্গীর সঙ্গে তাদের আচরণে এখানে তাই বড় রকমের ভিন্নতা দেখা যায়। তাদের ক্ষেত্রে এ রকম কোনো ভালোবাসায় টইটম্বুর পৃথক অধ্যায়ের প্রয়োজন পড়ে না। সব সময় ভালো থাকাটা কিন্তু এক অর্থে চ্যালেঞ্জবিহীন একটি জীবন। আর তাই এ সময়টা কারও কারও জন্য একঘেঁয়েমিপূর্ণ হিসেবেও দেখা দিতে পারে।

লাভ উইকটি সাধারণত হঠাৎ করে ভলকানো উইকে পরিবর্তিত হয় না। এই দুইয়ের মাঝে যত কমই হোক একটা ক্রমাবনতি অধ্যায় থাকে। এ সময়টা শুরুতে আঁচ করা গেলে, উভয় পক্ষই সামনে আসতে থাকা খারাপ সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

পিএমএস থাকা বা না-থাকাদের এ ধরনের আরেকটা পার্থক্যের কথা এখানে বলে রাখি। হরমোনাল ও বায়োলজিকাল কারণে নারীর জন্য সবচেয়ে আগ্রহ-জাগানিয়া সময় হবার কথা তার ওভুলেশনের সময়টা। কারণ তখন উচ্চহারে ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন প্রবাহ ঘটে থাকে। আর পিরিয়ডকালে এগুলো কম থাকায় সে সময়ে আগ্রহ সবচেয়ে কম থাকার কথা। যাদের পিএমএস নেই, তাদের জন্য এই ব্যাপারগুলো সাধারণত ঠিকঠাক ঘটে। কিন্তু যাদের পিএমএস আছে তাদের কেউ কেউ পিরিয়ডকালে উচ্চমাত্রার যৌনাকাঙ্ক্ষা জাগার কথা বলে থাকেন। এটা যাদের ক্ষেত্রে ঘটে, তাদের পিএমএসএর পিছনে হরমোনাল ইমব্যালান্সের ভূমিকাই যে প্রবল, এমনটা ধরে নেওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ তাই খুঁজে পাওয়া যায়।

১৪.

এই যখন অবস্থা, পিএমএস আছে এমন নারী তার স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে কী করতে পারেন?

প্রথমেই যেটা করণীয় তা হল, তার ও সঙ্গী উভয়েরই পিএমএস যে একটি স্বাভাবিক অবস্থা, সেটা মেনে নিতে ঐক্যমতে আসা প্রয়োজন। এরপর খোলাখুলি আলাপ ও তথ্য আহরণে আগ্রহী হতে হবে। এ জন্য দুই থেকে তিনটি সাইকেলের মনোদৈহিক পরিবর্তনগুলি ডায়েরিভুক্ত করতে হবে। এটা করা হলে, আগে উল্লেখ করা ঋতুচক্রের চারটি সুনির্দিষ্ট অধ্যায় চিহ্নিত করায় বড় সমস্যা হবার কথা নয়। এরপর সঙ্গীর যা করণীয় তা হল, ভবিষ্যতের দিনগুলির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ও অধ্যায় অনুযায়ী সঙ্গিনীকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া।

এতে একদিকে যেমন সম্পর্ক-হানিকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে, অন্যদিকে সঙ্গিনীর স্ট্রেস কমিয়ে তার শারীরিক ও মানসিক কষ্ট সহনীয় মাত্রায় আনতে ভূমিকা রাখা যাবে।

বলতে চাচ্ছি যে, পিএমএস বা পিএমডিডি থাকা সত্ত্বেও যুগলের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক ও প্রেমময় সম্পর্ক রাখা সম্ভব যদি তারা উভয়েই আগ্রহ নিয়ে খোলামেলাভাবে তথ্য শেয়ার করেন এবং পরস্পর পরস্পরকে যথাযথ সাপোর্ট দিতে সম্মত থাকেন। আর হ্যাঁ, এই সাপোর্টের মধ্যে চিকিৎসা সহায়তাও কিন্তু সামিল।

অনেকের মতো আমিও সহমত পোষণ করি যে, পিএমএস ও পিএমডিডি নিয়ে ভোগা জটিলতার কথা আরও প্রকাশ্য হোক। আক্রান্তরা অন্যদেরকে সচেতন করুন যেন একে ঐ সেভেনটি ফাইভ বা টুয়েন্টি পার্সেন্ট নারীর সমস্যা না ভেবে সবাই নিজেরও সমস্যা বলে ভাবেন এবং এটা থেকে উত্তরণে সবাই মিলে একটা সম্মিলিত প্রয়াস নিতে পারেন।

১৫.

আমার স্ত্রী যখন জানলেন, আমি পিএমএস, পিএমডিডি তথা পিরিয়ডের জটিলতা নিয়ে একটা সচেতনতামূলক লেখা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি, উনি রাগে ফেটে পড়লেন। বললেন, "পিরিয়ড নিয়ে তোমার লেখালেখির কী দরকার? মহিলাদের এসব ব্যাপারে তোমার এত আগ্রহ কেন?" ইত্যাদি, ইত্যাদি…

অতঃপর আদেশ জারি করলেন, "আর যাই লিখ, এইসব মেয়েলি ও গোপনীয় বিষয়ে লেখালেখি করতে পারবে না।"

কী বিচিত্র বৈপরীত্য! লেখালেখি করছি যে বিষয়ে সবার ওপেননেস ও সচেতনতা তৈরি হবার আশা নিয়ে, ঘরের ভিতরে থাকা খুব কাছের মানুষদেরও সে বিষয়ে সচেতন হবার আগ্রহ শূন্যের কোঠায়। পাশে থেকে হাতে-কলমে তথ্য দিয়েও যেখানে সচেতনতা জাগাতে পারছি না, সেখানে কেবলই লেখা পড়ে কারও সচেতনতা জাগবে, এই আশা করা বোধহয় খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে!

যেসব উৎস থেকে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে: