রক্তাক্ত প্যারিস: মৌলবাদ নিয়ে রাজনীতির ফল

চিররঞ্জন সরকারচিররঞ্জন সরকার
Published : 15 Nov 2015, 06:36 PM
Updated : 15 Nov 2015, 06:36 PM

মুক্তবুদ্ধিচর্চার পীঠস্থান এবং সবচেয়ে বেশি অভিবাসীদের শহর হিসেবে খ্যাত প্যারিস আবারও ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে। এলোপাতাড়ি গুলি আর একের পর এক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। শহরের বিভিন্ন অংশের রেস্তোরাঁ, বার ও কনসার্ট হলে আক্রমণ চালিয়েছে সন্ত্রাসবাদীরা। অবস্থার ভয়াবহতা দেখে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন।

শুক্রবার রাতে প্রথম বিস্ফোরণটি হয় প্যারিসের স্ট্যাডে ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামের বাইরে। সেখানে তখন ফ্রান্স-জার্মানির প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ চলছিল। স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্টেডিয়ামের কাছে একটি বারে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। সে হামলার এক ঘণ্টার মধ্যে লুভ্যর মিউজিয়াম সংলগ্ন একটি শপিং সেন্টারে সন্ত্রাসীদের গুলি চালানোর খবর আসে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনাটি ঘটে বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে। সেখানে শুরুতেই শতাধিক দর্শককে পণবন্দি করে নেয় জঙ্গিরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পণবন্দিদের অনেককে জঙ্গিরা গুলি করে মারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে এটাই সবচেয়ে বড় হামলা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সেদেশের বিখ্যাত ব্যাঙ্গ পত্রিকা শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। মুখোশধারী দুই হামলাকারীর নির্বিচারে গুলিতে পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকসহ ১১ জন নিহত হন। সেবারও বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে সর্বসাম্প্রতিক ন্যাক্কারজনক হামলাটির পর দুনিয়াজুড়ে ক্ষোভ আর নিন্দার ঝড় হয়েছে আরও তীব্র। হতবিহ্বল হয়েছে বিশ্ব। বিশ্বনেতারা যথারীতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করছেন তাদের ঘৃণা আর অঙ্গীকারের কথা। নিঃসন্দেহে এ ধরনের ঘটনা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন যে কোনো মানুষের জন্যই অত্যন্ত শঙ্কার– উদ্বেগেরও।

আমাদের দেশেও নিয়মিত বিরতিতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। যারা একটু ভিন্ন চিন্তাধারায় বিশ্বাসী, মুক্তমনা, ভিন্ন ধর্ম কিংবা আচার-অনুষ্ঠানে বিশ্বাসী, তাদের একের পর এক জীবন দিতে হচ্ছে। আমাদের সরকার হামলাকারীদের শায়েস্তা করার ব্যাপারে আন্তরিক নয়, পুলিশি ব্যবস্থা দুর্বল ইত্যাদি কথা বলে আমরা আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছি। চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবন যাপন করছি। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে যারা উন্নত, জননিরাপত্তা যেসব দেশে প্রধান রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার, সেসব দেশে যখন নিয়মিত সন্ত্রাসী হামলা ঘটে, মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, তখন আমরা ভীষণ রকম কুঁকড়ে যাই। ভীত হই। অসহায় বোধ করি। অশুভ শক্তির হাতে বিনা কারণে প্রাণত্যাগ করাই কি তবে মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়াল?

অথচ বিশ্বটা এমন ছিল না। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় টুইন টাওয়ারে জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়েই যেন বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যায়। জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে এই প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ। টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পরই বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ দমন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে পশ্চিমারা প্রথমে আফগানিস্তান ও পরে ইরাকে আক্রমণ চালায়। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবানদের আশ্রয়ে থাকা ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে কেনিয়া ও তানজানিয়ার মার্কিন দূতাবাসে হামলার অভিযোগ এনে। কিন্তু আসলে এসবের পেছনে এদের একটা বৃহৎ স্বার্থ কাজ করেছে। আর তা হল, মধ্য এশিয়ার খনিজ তথা তেল সম্পদের উপর তাদের আধিপত্য কায়েম করা।

সে প্রেক্ষিতেই 'বুশ-সাম্রাজ্যবাদ'এর বিরোধিতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে 'আল্লাহর আইন' কার্যকর করার জন্য পশ্চিমা ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে মুসলিমদের একটি অংশ। জিহাদের অংশ হিসেবে চলে সন্ত্রাসবাদ, বোমা-হামলা, নিরীহ মানুষের প্রাণহানি। এরা গোটা বিশ্বে জঙ্গি বলে পরিচিতি পায়।

নয়-এগারোর জঙ্গি হামলার জের যেন এখনও থেকে গেছে৷ বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই ঘটে চলেছে একের পর এক হামলা৷ মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক-সিরিয়ায় যুদ্ধ; নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বোকো হারাম মুসলিম জঙ্গি গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য; বাংলাদেশে জেএমবি, জামায়াত, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ নানা নামের সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান; ভারত-পাকিস্তানে লস্কর-ই তৈয়বা, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন কিংবা আফগানিস্তানে তালিবান, আইএসএর হামলা– এমনই নানাভাবে চলছে। এখনও বুঝতে পারি না কীভাবে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে আইএস ও তালেবানের নেটওয়ার্ক৷ সন্ত্রাস রুখতে গোটা বিশ্ব একজোট হয়েও কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে? ভাবতে বসলে চিন্তাগ্রন্থি কেমন অবশ হয়ে আসে!

প্যারিসের রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলা 'সিরিয়ায় ফ্রান্সের হস্তক্ষেপের ফল' বলে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করে আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলকসও প্যারিস হামলাকে সম্পূর্ণভাবে বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও লিবিয়ায় চরমপন্থী অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফল হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ কথা ঠিক যে, এই হামলার পেছনে ফ্রান্সের মধ্যপ্রাচ্য নীতি অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু প্রধানত দায়ী আইএস জঙ্গিদের চণ্ড-নীতি, মনুষ্যত্ববিরোধী উগ্র ধর্মবাদ!

তালেবানের পর এখন বিশ্বজুড়ে নতুন উৎপাতের নাম হয়েছে আইএস। সশস্ত্র জঙ্গিরা 'ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া' (আইএসআইএস) পরিচয় থেকে এখন নিজেদের অধিকৃত ইরাক আর সিরিয়ার অংশের নাম দিয়েছে, 'ইসলামিক স্টেট' (আইএস) বা খিলাফত। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করে তারা মসুল-নিবাসী পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী ও তার চেয়েও প্রাচীন জরথুষ্ট্রপন্থী ইয়েজিদি সম্প্রদায়কে ফতোয়া দিয়েছে: হয় ইসলাম নয় মৃত্যু। এরপর পাহাড় মরুভূমি পেরিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের পলায়ন, অভাবনীয় হত্যাকাণ্ড, জীবন্ত পুঁতে ফেলার খবরের পরে একের পর এক পশ্চিমি সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর জবাইয়ের ছবি দেখে আমরা শিউরে উঠলাম।

কয়েক বছর আগে ইরাকি জনগণ স্লোগান দিয়েছিল, 'বাগদাদ কান্দাহার নয়'। এবার মসুল শহরে দেওয়ালে দেওয়ালে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা, 'নিনেভ কান্দাহার নয়… আমাদের রক্ষা কর'। আফগানিস্তানে কান্দাহার ছিল তালেবানের সদর দফতর। হুকুম জারি হয়েছিল সেখানে: পুরো মুখ ঢাকা বোরকা না পরলে মেয়েদের মরতে হবে। ইয়েজিদি মেয়েরা যুদ্ধের লুঠ হিসেবে যথেচ্ছ ধর্ষণ, খ্রিস্টান মেয়েদের যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া– এই তো বিধর্মীর উপযুক্ত শাস্তি! সেখানে বেড়ে যায় শিশু-বিবাহ। সাত বছরের মেয়েকেও বিয়ে করে শয্যাসঙ্গী করা হয়।

আইএস-অধিকৃত মসুলে মেয়ে ডাক্তারদের বলা হয়েছে শরীর-ঢাকা বোরকা ও হাতে দস্তানা পরতেই হবে, যাতে শরীরের কোনো অংশ দেখা না যায়। মসুলের হাসপাতালের দুই ডাক্তার, সালওয়া মোহাজের আর আনসাম আল-হামদানি তাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে জানিয়েছেন, চিকিৎসকের ভীষণ অভাব। সবাই প্রায় পালিয়ে গিয়েছেন। তারাও এই সব ফতোয়া মেনে ডাক্তারি করছেন। নির্ধারিত পোশাকে রোগীদের দেখা এবং শল্যচিকিৎসা করা সম্ভব নয় বললে বলা হয়েছে, নির্ধারিত পোশাক পরা অনেক বেশি জরুরি। মেয়েদের বিভাগে পুরুষ জঙ্গিরা সব সময় ঢুকছে নজরদারি করতে। এমনকি ডাক্তার ও নার্সরাও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পান না।

সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল, মসুলে বিজ্ঞপ্তি পড়েছে, ১১ থেকে ৪৯ বছর বয়সের সব শিশু ও নারীকে 'সুন্নতে খতনা' করতে হবে। 'মেয়েদের সুন্নত' আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে চালু রয়েছে। এ খতনার শিকার মেয়েরা কখনও যৌন আনন্দ পান না। কোনো রকমে শৌচকর্ম আর সন্তান-জন্মের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াটি চালাতে পারেন। ওসব দেশে সাধারণত পনের বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের যৌনাঙ্গের প্রায় সবটুকু কেটে ফেলে দেওয়া হয়। এটা করে নাপিত ধরনের মানুষেরা, ছুরি, কাঁচি, দাড়ি কামানোর রেজর প্রভৃতি দিয়ে। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ থাকে না। ফলে সুন্নতের সময় অনেক শিশু-কিশোরী রক্তক্ষরণে বা সংক্রমণে মারা যায়। যারা বেঁচে যায়, তারা সারাজীবন অস্বস্তি, যৌনাঙ্গে বার বার সংক্রমণ ও অসুস্থতা নিয়ে 'আধা' জীবন যাপন করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সারা পৃথিবীতে প্রায় বার কোটি মেয়ে এ্ই সুন্নতে খতনার শিকার। মিশর ও সোমালিয়ায় প্রায় সমস্ত মেয়েদের এটা করানো হয়। অন্যত্র, এমনকি পশ্চিমের কিছু কিছু দেশেও অনেক মুসলিম পরিবার গোপনে মেয়েদের সুন্নত করিয়ে নেয়।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে এ প্রথা চালু থাকলেও ইরাক বা সিরিয়ায় ছিল না। তাহলে এখন কেন? ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'এটি মেয়েদের বিপথে চালিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে।'

এই সব অনুশাসনের সঙ্গে বিয়ের জন্য অফিসও খোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কুমারী মেয়েরা জিহাদিদের শয্যাসঙ্গী হয়ে 'নিজেদের পরিশুদ্ধ করতে পারে'। একদিকে মেয়েরা যাতে পুরুষের চিত্তচাঞ্চল্য না ঘটাতে পারে, তার জন্য নানা নিষেধ, এমনকি পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান– অন্যদিকে মেয়েদের শরীরকে জেহাদিদের যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য সুযোগদান– নারীর মানবাধিকারের ওপর এই দ্বিবিধ হস্তক্ষেপ হয়ে চলেছে তথাকথিত এই খিলাফতে।

ফিরে আসি ফ্রান্সের ঘটনায়। সেখানকার মুসলিম অভিবাসীদের মনে রয়েছে নানা ক্ষোভ। তা থেকে কেউ আত্মঘাতী হলেও হতে পারে। আশির দশকে ফ্রান্স মুসলিম অভিবাসীদের একাধিক স্ত্রী আনতে 'চুপচাপ' অনুমতি দিয়েছিল। ২০০০ সালের হিসাবে, শুধু প্যারিসেই দু'লক্ষ পরিবারে একাধিক স্ত্রী রয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে সরকার এক স্ত্রী ও তার সন্তানকেই বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করে। কেন অভিবাসনের শর্ত হিসেবে প্রথমেই সেটা বলা হয়নি সেটির পেছনে রয়েছে রাজনীতি। গোষ্ঠীর অধিকারের নামে বাল্যবিবাহ, জোর করে বিয়ে, একতরফা বিচ্ছেদ, মেয়েদের সুন্নত, বোরকা পরিধান, সম্মানের নামে হত্যা এ সব 'অধিকার'এর তকমা দিয়ে চালু রাখার সুযোগ দিয়েছিল তারা। এসব নিয়ে কোনো মামলা হলে গোষ্ঠীর অধিকার ও সাংস্কৃতিক বহুত্বের নামে অভিযুক্তরা হালকা শাস্তি পেত, এমনকি অনেকে ছাড়াও পেয়েছে।

এই বহুত্ববাদ প্রায়শ একটি গোষ্ঠীর গোঁড়া অংশটিকে লালিত ও পুষ্ট করে। আজ তাই বহু পশ্চিমিও আইএসএ যোগ দিতে আকৃষ্ট হয়েছে। এদের কালো পতাকা দেখা গিয়েছে নিউ জার্সিতে, প্যারিসে।

আইএসএর উত্থান শুধু শিয়া-সুন্নির বিরোধ বলে ভাবলে চলবে না। ধর্মীয় মৌলবাদের ছড়ানো শিকড় এখনই কাটতে শুরু না করলে আমরা সবাই বিষবৃক্ষের ফল খেতে বাধ্য হব। মেয়েদের সর্বনাশ হবে সবচেয়ে বেশি। মুক্তচিন্তার নগরী প্যারিসে বার বার হামলা ফরাসীদের জন্য তো বটেই, বিশ্ববাসীর জন্যই বিপদ-সংকেত। মৌলবাদ নিয়ে অনেকেই খেলতে পছন্দ করেন। কিন্তু কাল সাপ কারও পোষ মানে না। তালেবানদের এক সময় সিআইএ ও পেন্টাগন সাহায্য-সহযোগিতা ও অস্ত্র-প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছিল। সেই তালেবানরা এক সময় ঠিকই আমেরিকার ওপর মরণ-কামড় বসিয়েছে। একইভাবে আইএস জঙ্গিদেরও আমেরিকাসহ কোনো কোনো পশ্চিমি দেশ মদদ ও সমর্থন দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এরা যে গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, সংশ্লিষ্টরা তা ভেবে দেখছেন বলে মনে হয় না। কাজেই মৌলবাদীদের ব্যাপারে 'জিরো টলারেন্স' নীতি ঘোষণা ও কার্যকর করতে হবে অস্তিত্বের স্বার্থেই। তা না হলে সবাইকেই মূল্য দিতে হবে।

মৌলবাদী সন্ত্রাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উদ্যোগ-আয়োজন ও গবেষণার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে মৌলবাদের বিকাশ নিয়ে আগে বলা হত, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা ও কাঠামোর অভাব মৌলবাদ বিকাশে সহায়ক। কিন্তু ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে যখন মৌলবাদী হামলার ঘটনা ঘটে, তখন আমরা কী বলব? রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর অভাব?

আসলে ধর্মীয় মৌলবাদ সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস, ডিসকোর্স, রাষ্ট্রীয় নীতি সব কিছু নিয়ে নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে।

চিররঞ্জন সরকার: কলামিস্ট।