রাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের বেতন

জহিরুল হক মজুমদার
Published : 17 Oct 2015, 07:01 AM
Updated : 17 Oct 2015, 07:01 AM

১৯০৫ সালে বাংলাকে ভাগ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি আলাদা 'প্রভিন্স' গঠন করেছিলেন ইংরেজ সরকার। কিন্তু বাংলা ফুঁসে উঠেছিল এর বিরুদ্ধে, বিশেষ করে কোলকাতা। নবগঠিত প্রভিন্সের প্রশাসনিক অবকাঠামো হিসেবে ঢাকায় অনেক স্থাপনা তৈরি করা হয়। লাটসাহেবের বাসভবন এবং আমলাদের বাড়ি এর অন্যতম।

১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেলে ইংরেজ সরকার লক্ষ্য করেন যে, পূর্ববঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের মধ্যে এটি গভীর মনোবেদনার কারণ হয়েছে। এরই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়, যার নাম দেওয়া হয়, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়'। কোলকাতার বুদ্ধিজীবীদের বিবিধ উষ্মামূলক মন্তব্য ছিল এ রকম: ওখানে অধিকাংশ মানুষ চাষবাস করে খায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কে পড়বে? কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়ন্ত্রণ এলাকা কমে যাওয়ায়ও তাদের ছিল আপত্তি। সে সব নিষ্পত্তি করে ইংরেজ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।

লক্ষ্য করার বিষয় হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি প্রদেশ না পাওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে। আর এর মাধ্যমেই এর আপতিক গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। নতুন প্রভিন্স পরিচালনার জন্য যত রকম পুরকর্ম করা হয়েছিল– লাট সাহেবের বাসভবন থেকে মন্ত্রী-আমলাদের বাড়ি– সবই দেওয়া হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার আগেই এই অঞ্চলের মানুষ এ বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র করেই নিজেদের জীবনমান ও ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছে পূর্ববঙ্গের মানুষ। এখানে পড়াশুনা করেই পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটে। এই শ্রেণি তাদের অধিকারের চেতনায় শাণিত হয়ে শ্রমিক, কৃষককে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাঁর পূর্ববঙ্গ-কেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু হয় এটি কেন্দ্র করেই। এখানকার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বহিষ্কৃত হন। অন্য বন্ধুরা মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে এলেও তিনি আসেননি। কিন্তু নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অটুট শ্রদ্ধা ছিল। 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩'– যে আইনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং শিক্ষকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়– তাও তাঁরই সদিচ্ছার প্রতিফলন। অনুরূপ আইন চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রণয়ন করেছেন তিনি।

পাকিস্তান আমলে শিক্ষকদের উপর প্রচলিত নানা ধরনের সরকারি চাপের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীন চিন্তার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এটা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, শিক্ষকদের যে কোনো বৈধ সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ও মতপ্রকাশের অধিকারও দেওয়া হয় এর আওতায়। [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩, ধারা ৫৬ (২); রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩, ধারা ৫৫ (২); চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩, ধারা ৫৫(২); জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩ ধারা ৪৪(২)]

শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতি পায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে, তার স্থাপত্য সৌন্দর্য ও আবাসিক চরিত্রের জন্য। জ্ঞানের মাত্রায় এটি কখনও অক্সফোর্ডের সমতুল্য ছিল না। সত্যেন বসু নামে কোলকাতার এক উজ্জ্বল তরুণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক তাঁর অসাধারণ তাত্ত্বিক কাজের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে এনেছিলেন বিশ্ব-বিজ্ঞানের আঙিনায়।

১৯২১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানপীঠ হিসেবে সমাজে অবদান রেখেছে। শিক্ষকদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজ, ছাত্রদের নিবেদিতপ্রাণ জ্ঞানচর্চা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজের চোখে একটি বাতিঘরের জায়গায় অধিষ্ঠিত করে রেখেছিল। সত্যেন বসু, কাজী মোতাহার হোসেন, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, মোহিতলাল মজুমদার, হরিদাস ভট্টাচার্য, ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল্লাহ ফারুক, আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ, মমতাজুর রহমান তরফদার, মোজাফফর আহম্মদ চৌধুরী, আহমদ শরীফ, এ এম হারুন উর রশিদ, কামাল উদ্দিন, রঙ্গলাল সেন, খোন্দকার মোকাররম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, খান সারয়ার মুর্শিদ, আনিসুজ্জামান হয়ে এ এক দীর্ঘ তালিকা।

এছাড়া ষাটের দশকে জাতি পেয়েছে একদল উজ্জ্বল ছাত্র-নেতৃত্ব, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের ভ্যানগার্ড। পূর্ব বাংলার মানুষের বঞ্চিত হওয়ার 'দুই অর্থনীতি তত্ব'এর নির্মাতাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রসঙ্গে সর্বাগ্রে নাম করতে হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমানের।

এছাড়া ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭০এ প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল অবদান রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে– সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাস একদিকে রাখলেও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোশারফ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আখলাকুর রহমানের তাত্বিক অবদান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য আবু সায়ীদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ আর মল্লিকের সাংগঠনিক অবদান অসাধারণ। আর শহীদ ছাত্র-শিক্ষকদের অবদান তো ছিলই।

একাত্তরের পর গোটা সত্তর দশক জুড়েই মেধা ও ব্যক্তিত্বে সমুজ্জ্বল উপাচার্য এবং পণ্ডিত শিক্ষকদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চা অব্যাহত ছিল। কিন্তু আশির দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় অযাচিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে একাডেমিক শৃঙ্খলা নষ্ট করা হয়। যার ফলে তৈরি হয় সেশন জট এবং এর রেশ আজকের দিন পর্যন্ত চলছে।

পাশাপাশি সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মেতে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় 'ডাকাতদের পাড়া', ছাত্ররা 'সন্ত্রাসে লিপ্ত', শিক্ষকরা 'রাজনীতি করেন', বিশ্ববিদ্যালয় 'রাষ্ট্রের ভিতর আরেকটি রাষ্ট্র'– এ সব সমালোচনা দাঁড় করানো হয়। মূল উদ্দেশ্য, শিক্ষক এবং ছাত্রদের সামরিক শাসনবিরোধী অবস্থান পরিবর্তনের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করা। আজকের দিন পর্যন্ত বেসামরিক আমলাতন্ত্র এই প্রচারণা চালাচ্ছে।

আসলে অত্যন্ত সীমিত সম্পদ ও ব্যক্তিগতভাবে চাকরির অনেক কম সুবিধাদি সত্ত্বেও সাধারণ শিক্ষকরা তাদের একাডেমিক কাজ করে যাচ্ছেন। যদি গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটপুট বলে মনে করা হয়, তাহলে এত কম সম্পদের ব্যবহার করে এত বেশি সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে দক্ষ প্রতিষ্ঠান বলতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সাধারণ শিক্ষক যে বেতন পান তা জীবনধারণের সাধারণ মানের জন্যও যথেষ্ট নয়। একটি চাকরি, যেখানে আর কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট নেই, পর্যাপ্ত আবাসন ও পরিবহন সুবিধা নেই, ব্যক্তিগত স্টাফ না থাকার কারণে প্রয়োজনীয় ফটোকপি থেকে শুরু করে একটি চিঠিও নিজ হাতে নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে দিয়ে আসতে হয়, সেই চাকরিতে বেতন যদি সাধারণ চাকুরেদের মতো হয় তাহলে জ্ঞানের মতো উচ্চতর সেবা আশা করা বাতুলতা। সেখানে গবেষণা তো সুদূরপরাহত।

যারা মনে করছেন শিক্ষকরা নিজেদের মতো সময়ে অফিসে আসেন, তাদের মনে রাখা উচিত যে, শিক্ষকতা ফাইল-ওয়ার্ক নয়। একজন শিক্ষক নিজেই নির্ধারণ করেন তাঁর লেকচারের মান কী হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় পড়াশুনা এবং ক্লাসের প্রস্তুতি তিনি অন্তত আগের রাত থেকেই করেন। তাহলে সেই সময়টা হিসাবের বাইরে থাকবে?

শিক্ষকতার পেশা আর দশটা পেশার মতো ভাবলে চলবে না। এখানে শিক্ষক নিজেই নিজেকে কাজ দেন, নিজেই সেটি সঠিকভাবে করার জন্য নিজের উপর চাপ অব্যাহত রাখেন। এটি নিজের কাছে দায়বদ্ধ একটি পেশা। যে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর ছাত্ররা তাঁকে আজীবন মনে রাখে। একজন শিক্ষকের কাজে গোটা জাতি উপকৃত হয়। তাঁর দেওয়া জ্ঞান প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রবাহিত হয়। অনেক সময় জগতজোড়া খ্যাতিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে গোটা জাতির।

শিক্ষকতা পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য একজন মানুষের বিশেষ ধরনের মনের গড়ন চাই, যা তৈরি হয় সারাজীবন। 'বিসিএস পছন্দক্রমের শীর্ষে ছিল ফরেন সার্ভিস; পরে নিয়োগ পেলাম আনসারে'– এই রকম চাকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা নয়। যারা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্বেও অন্য চাকরি করছেন এটা তাদের রুচি ও সমস্যা। শিক্ষককে সমালোচনা করার অধিকার তাদের রয়েছে বলে মনে করি না।

সব শিক্ষক একই রকম মানসম্মত জ্ঞানচর্চা করেন, সবার মেধা এবং জ্ঞান-উদ্যোগ সমান, বিষয়টি তা নয়। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই এ ধরনের অসন্তুষ্টি প্রকাশের মতো ব্যতিক্রমী কর্মী পাওয়া যাবে। কিন্তু উচ্চতর জ্ঞান-কেন্দ্র হিসেবে রাষ্ট্র যদি অবকাঠামো, গবেষণা ও বেতন খাতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা তৈরি না করে, তাহলে উচ্চতর জ্ঞানচর্চা ব্যাহত হবে মারাত্মকভাবে এবং হচ্ছেও।

পাকিস্তান আমলে সঠিক প্রণোদনার অভাবে অনেক মেধাবী লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে সিএসপিএর সদস্য হয়ে সরকারি চাকরি করেছেন। এমনকি বেতন বেশি বলে অনেকে সরকারি কলেজের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। অনেক সাধারণ সরকারি চাকরিও আকর্ষণীয় লেগেছে অনেকের কাছে। এতে জ্ঞানচর্চা ব্যাহত হয়েছে। কবি জসীম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি সাধারণ নন-ক্যাডার চাকরি করেছেন সারাজীবন।

বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি সে যুগেও পরিবার চালানোর জন্য কতটা অসুবিধাজনক ছিল। আর সিএসপিদের তালিকা তো অনেক দীর্ঘ, যারা কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েই এই চাকরি ত্যাগ করেছিলেন।

এত সব অসুবিধার মধ্যেও যারা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে জ্ঞানচর্চা করেছেন, জ্ঞান বিতরণ করেছেন, তাদেরকে সমাজ ও রাষ্ট্রের দিক থেকে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে বলে মনে করি না। সরকারি হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র অধ্যাপকের জন্য একটি সিট পাওয়া যায়নি তা নিজ চোখে দেখেছি। অথচ সরকারি কর্মচারি পরিচয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপ-রেজিস্ট্রারকে আলাদা কেবিনে থাকতে দেখেছি।

সরকারি দপ্তরের একজন সাধারণ কর্মকর্তা যেখানে অফিসিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন, সেখানে বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি আমলাতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে সাধারণ নাগরিকদের মতো সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহারে বাধ্য করেছে। দূতাবাসের লাইনে দাঁড়ানো এবং অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে গিয়ে বাইরে ওয়ার্কশপ-কনফারেন্সে যাওয়া বিঘ্নিত হয়।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের লাশ দীর্ঘদিন জার্মানির মিউনিখে একটি মরচুয়ারিতে পড়ে ছিল। একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের মরদেহ ফেরত আনার জন্য সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিক্ষক সমিতি ও পরিবারের ব্যবস্থাপনায় তাঁর লাশ ফেরত আনা হয়।

এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সরকারি চাকরিতে যাওয়ার প্রবণতা না থাকলেও, বিদেশে গিয়ে ফিরে না আসার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতি।

১৯২১ সাল থেকে ১৯৮০ দশক পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বেতন নিয়ে কোনো আন্দোলন করেননি। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পি জে হার্টগকে বিশেষ বেতনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের বয়ানে পাওয়া যায় যে, কাজী মোতাহার হোসেনের মতো পণ্ডিত ব্যক্তি দুশ টাকা বেতনে পঁচিশ বছর চাকরি করেছিলেন। বেতন বাড়েনি এক টাকাও।

আশির দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় শিক্ষকরা প্রথম বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন করেন, যা সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের চাপে সফল হয়নি। বেতন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়ভিত্তিক বড় আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৬-৮৭ সালে। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বেই এটি হচ্ছিল। তখন ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে এম সাদউদ্দীন এবং মহাসচিব ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনু মুহাম্মদ। এই আন্দোলন সম্পর্কে অধ্যাপক মইনুল ইসলাম লিখেছেন:

"ওই আন্দোলনের সময় আমরা ৪২ দিন শিক্ষক ধর্মঘট চালাই এবং তদানীন্তন এরশাদ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচটি সভায় আলাপ-আলোচনা করি। ফেডারেশনের একটি প্রতিনিধিদল খোদ রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। এরশাদ নীতিগতভাবে আলাদা বেতন স্কেল দিতে তাঁর আপত্তি নেই বলে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, সিভিল আমলাতন্ত্রের আপত্তি রয়েছে আলাদা স্কেলের ব্যাপারে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আলাদা বেতন স্কেল দেওয়া হলে চাকরির প্রারম্ভিক স্তরে তুলনামূলকভাবে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার অধিকারী সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা নাকি নিজেদের বঞ্চিত মনে করবেন।..

আমাদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের প্রতিনিধিদলে যে চার জন জাঁদরেল আমলা নেতৃত্ব দিতেন, তাঁরা হলেন তদানীন্তন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুবুজ্জামান, অর্থ সচিব সাইদুজ্জামান, স্বরাষ্ট্র সচিব শামসুল হক চিশতি ও শিক্ষা সচিব আজহার আলী। ওই আলোচনায় প্রতিবেশি দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল থাকার বিষয়টি নজির হিসেবে আমরা নথিপত্রসহ উপস্থাপন করেছিলাম, যেখানে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ আমাদের জন্য প্রযোজ্য হওয়ার ভালো যুক্তি রয়েছে। ভারতে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের সর্বোচ্চ বেতন দুই লাখ ভারতীয় রুপিরও বেশি।''

১৯৮৬-৮৭এর এই আন্দোলন নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ লিখেছেন:

"এর আগে বেতন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়ভিত্তিক বড় আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৬-৮৭ সালে। সামরিক স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি তখন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছিল। শিক্ষকদের আন্দোলনও তখন বেশ শক্তিশালী আকার নিয়েছিল। …

সে বছরই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের উদ্যোগে এ বিষয়ে একটি জাতীয় সেমিনার হয়েছিল। সেখানে উপস্থাপনের জন্য প্রবন্ধের কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছিলাম, শিক্ষকদের বেতন ১৯৭২ সালের তুলনায় আর্থিক পরিমাণে বেড়েছে, কিন্তু প্রকৃত আয় হয়ে গেছে তিন ভাগের এক ভাগ। আরও দেখেছি, সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মধ্যে সামাজিক অবস্থান যাঁর যত কম, প্রকৃত আয় হ্রাস তাঁর তত বেশি। …

আলোচনা হয়েছিল বটে, কিন্তু পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছিল সচিবেরা এ বিষয়ে কথা বলতে বা শুনতে খুবই অনিচ্ছুক, এরশাদ সরকারের লোক দেখানো কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা আলোচনা করলেন, তাই তার কোনো অগ্রগতি হয়নি।…

গত প্রায় তিন দশকে বেতন নিয়ে আর সে রকম দাবিদাওয়া সংগঠিত হয়নি। এর মধ্যে নিয়মমাফিক একাধিক বেতন স্কেলে শিক্ষকদেরও বেতন কিছু বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত আয়ের ক্ষেত্রে বারবার অন্য অনেকের মতোই হোঁচট খেয়েছেন শিক্ষকেরাও।

কাঠমান্ডুতে এক সেমিনারে যোগ দিতে গিয়ে পাকিস্তান, ভারত ও নেপালের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের পাবলিক বা সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন এত নিচে; কোথাও তাঁদের তিন ভাগের এক ভাগ, কোথাও অর্ধেক।''

শিক্ষকদের কম বেতন দেওয়া বিষয়ে যেসব খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করানো হয় তার একটি হল, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংএ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম অনেক নিচের দিকে। শিক্ষকদের বেশি বেতনের দাবি মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করার জন্য। তাছাড়া যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকদের জন্য গাড়ি, পিয়ন ইত্যাকার লজিস্টিক সাপোর্ট নেই, তাই মোট বেতন বাড়িয়ে দিলে শিক্ষক নিজেই এ সব ব্যবস্থা করে নেবেন।

যে সব মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং তালিকায় উঠে আসে এর মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে গবেষণা। এ জন্য আলাদা অর্থ-বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষককে যত বেশি বেতনই দেওয়া হোক না কেন, তাতে গবেষণা হবে না। এ যুগে গবেষণার আর্থিক ব্যয় অনেক বেশি, এমনকি সমাজবিদ্যা কিংবা মানববিদ্যার গবেষণাতেও; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে তো অনুমেয়। যারা মনে করেন শুধু কাগজ কলম থাকলেই গবেষণা করা যায়, তাদের এ বিষয়ে ধারণা নেই। তবু, স্বল্প সুবিধার মধ্যেও শিক্ষকরা গবেষণা করে চলেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের প্রকাশনা থাকছে।

উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই করে তা কিন্তু নয়। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বড় বড় গবেষণাগারেও অনেক ভালো গবেষণা হয়। যেমন, ভারতের CSIR, BARC, পাকিস্তানের AQ Khan Laboratories, PCSIR, অস্ট্রেলিয়ার CSIRO, যুক্তরাজ্যের National Physical Laboratory যুক্তরাষ্ট্রের NASA, Los Alamos National Laboratory ইত্যাদি। বাংলাদেশের একই ধরনের গবেষণাগার BAEC, BCSIR, BARC, BLRI, BRRI, এই সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বাজেট দেখলেই বুঝা যায় সরকার গবেষণার অর্থ-বরাদ্দের বিষয়ে কতটা অনুদার। সেখানে বিজ্ঞানীদের বেতন-কাঠামোও সাধারণ চাকরিজীবীদের মতো।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নেতিবাচক সমালোচনার জোয়ালের নিচে রাখলে নিজেদের শাসন শিক্ষকদের সমালোচনামুক্ত রাখা যায়, এটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের বশংবদ আমলা-জোটের পুরনো কৌশল। শিক্ষকদের একাংশকে তখন কেনা যায় ধমক ও সামান্য সুবিধা দিয়ে। জনগণের করের পয়সায় আমলাতন্ত্রের উদরপূর্তি আর উন্নয়ন-উন্নয়ন খেলার নামে দলীয় ক্যাডার ও ব্যবসায়ীদের উদরপূর্তির সংস্কৃতি চলছে বহু দিন।

কিছুদিন আগেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন ছিল তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি বা ড্রাইভারের বেতনের সমান। স্বভাবতই একজন আমলা একজন প্রাথমিক শিক্ষককে তাঁর ড্রাইভারের চেয়ে বেশি সম্মান দেবেন না। একটি উন্নত সমাজের দিকে এটি কি একটি ভুল যাত্রা নয়?

যে ছেলেটি মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে খাটলে তাঁর পাঠানো ডলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যাপ্ত রিজার্ভের অহংকারে সরকারগুলো ফেটে পড়ে, সেই ছেলেটির গ্রামের স্কুলের শিক্ষককে সরকার বেতন দিতে দ্বিধা করে। যে আমলারা নিজেদের কর্মদক্ষতার বয়ান গেয়ে সরকারের কাছ থেকে অধিক বেতন আদায় করে নিতে চান তাদের সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন আমাদের আরেক সহকর্মী। তিনি সাবেক আমলা ড. আকবর আলী খানের Gresham's Law Syndrome and Beyond: An Analysis of the Bangladesh Bureaucracy বইয়ের বরাতে লিখছেন:

"বিশ্ব ব্যাংক পৃথিবীর ২০৯ টি দেশের আমলাতন্ত্রকে তিন ভাগে ভাগ করেছে, যার মধ্যে প্রথমটি হল 'খুবই কার্যকর আমলাতন্ত্র' যার মধ্যে পড়েছে ৭০ টি দেশের আমলাতন্ত্র। দ্বিতীয়টি হল 'মোটামুটি কার্যকর আমলাতন্ত্র' যার মধ্যে পড়েছে বিশ্বের ৭১ টি দেশের আমলাতন্ত্র এবং শেষটি হল 'অকার্যকর আমলাতন্ত্র' যার মধ্যে পড়েছে ৬৮ টি দেশের আমলাতন্ত্র। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান 'অকার্যকর আমলাতন্ত্র' ক্যাটাগরিতে এবং র‌্যাংকিং হল ১৬৮ (প্রাপ্ত নম্বর ১০০ তে ২০) এবং দক্ষিণ এশিয়ার র‌্যাংকিংএ বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের অবস্থান অন্য সব দেশের নিচে (গভর্নেন্স ম্যাটারস, ২০১২)।''

ড. আকবর আলী খান লিখেছেন:

''সরকারের কার্যকারিতার সূচক বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ। সারা পৃথিবীতে মাত্র ৩৯টি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ করেছে এবং বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং গোটা পৃথিবীর নিকৃষ্টতমগুলোর একটি।''

মনে রাখা জরুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বউদ্যোগে নিজস্ব যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের অর্থ খরচ না করেই পিএইচডি বা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আসেন, অল্প কিছু কমনওয়েলথ বৃত্তির কথা বাদ দিলে। এতে উপকৃত হয় জাতি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটিকালীন পূর্ণবেতন প্রদানের বিধানও নেই। সরকারি আমলারা বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, অস্ট্রেলিয়ান এইড, এসব বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যান পূর্ণ বেতনে। এদের বিরাট অংশেরই উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তির যোগ্যতাও থাকে না।

অষ্টম বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে যেভাবে আগের প্রাপ্য বেতন থেকেও দুধাপ নিচে বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে তা কোনোভাবেই তাদের মেধা, যোগ্যতা ও অবদানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এটি চূড়ান্ত অপমানজনক। সিনিয়র সচিব ও কেবিনেট সচিবের পদ বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পদের অবনমন ঘটেছে অন্তত চার ধাপ। কোনো পেশার মর্যাদা অবনমন মানে হচ্ছে সমাজে এটি অপ্রয়োজনীয় এমন বার্তা প্রদান। এই বার্তা গোটা সমাজের মূল্যবোধ, চেতনা ও অগ্রগতির দিক থেকে নেতিবাচক একটি বিষয়।

অর্থমন্ত্রী অধিক অধ্যাপকের সংখ্যা বিষয়ে যে অভিযোগ উত্থাপন করে শিক্ষকদের 'দুর্নীতিবাজ' বলেছেন তাও তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ১৯৭০ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপকের সংখ্যা ৬৮৯, অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মাত্র দুজন। বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মাত্র ১ জন করে। ওদিকে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা মোট শিক্ষকের ৪৮ শতাংশ।

সচিবালয়ে অতিরিক্ত সংখ্যক যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে যে পরিস্থিতির তৈরি করা হয়েছে তাতে গোটা আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংকটাপন্ন। উপ-সচিবের ৮৩০ টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১২৯৪ জন। যুগ্ম সচিবের ৩৫০ পদের বিপরীতে ৯১৭ জন, অতিরিক্ত সচিবের ১২০ পদের বিপরীতে ৪২৯ এবং সচিবের ৬০ টি পদের বিপরীতে ৭২ জন রয়েছেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ গোটা সমাজকেই বিষণ্ণ করবে, তৈরি করবে আস্থাহীনতার পরিবেশ। তাই বিষয়টির আশু মীমাংসা জরুরি।