প্রশ্নপত্র ফাঁস: তথ্য অধিকার আইনের অভিজ্ঞতা

ওমর শেহাব
Published : 8 Oct 2015, 04:25 AM
Updated : 8 Oct 2015, 04:25 AM

চারদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে হইচইএর মধ্যেই একুশে সেপ্টেম্বরে একটি ইমেইল পেয়েছিলাম। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে এটির জন্য অপেক্ষা ছিল। যারা শিরোনাম পড়ে লাফ দিয়ে উঠেছেন এই ভেবে যে, মাত্র হয়ে যাওয়া মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে অভিযোগ উঠেছে আমি তার সুরাহা করে ফেলেছি, তাদের হতাশ করার জন্য দুঃখিত। আজকের লেখা প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়েই। তবে এ ফাঁসের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার আগের রাতে।

যখনই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আসে তখনই আমরা দেখি শিক্ষামন্ত্রী বা সচিব সবার আগে সরাসরি ব্যাপারটি অস্বীকার করে বসেন। প্রতিবারই দেখা যায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের রাতে অসংখ্য সৎ আর বিবেকবান মানুষ তাদের কাছে শত শত ইমেইলে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কপি পাঠান যাতে তাঁরা ব্যবস্থা নেন। ঘটনাচক্রে এ রকম বেশ কিছু তরুণ-তরুণীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব রয়েছে যারা এমন ইমেইল পাঠানোর সময় এক কপি আমাকেও পাঠান। এভাবেই আমি জানতে পারি যে শিক্ষামন্ত্রী, সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এদের সবার ইমেইল একাউন্টের ইনবক্সে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কপি প্রমাণ হিসেবে নিয়মিত পাঠানো হয়। যখন তাঁরা পরদিন সকালে সাংবাদিকের সামনে এসব অস্বীকার করেন তখন তাদের ইনবক্সে পাঠানো প্রমাণগুলোর কী হল সেটি তারা ব্যাখ্যা করেন না। কেনই-বা সেই প্রমাণগুলো গ্রহণযোগ্য নয় তাও তাঁরা বলেন না।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই চক্করে আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছি। তার সর্বশেষ প্রমাণ হল মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে এবং যথারীতি পরদিন সকালেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সে সব অস্বীকার করেছেন।

গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় বেশ কিছু বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও সরকার খুব সম্ভবত শুধুমাত্র ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের জন্য একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে। তারও অনেক দিন পরও আমি কোনো এক পত্রিকায় সেই কমিটির হাল নিযে খুব বেশি খবর জানতে পেলাম না। খুব আশা করেছিলাম যে, সাংবাদিকরা ব্যাপারটি খেয়াল রাখবেন। কিন্তু মনে হচ্ছে, কিশোর-কিশোরীদের পড়াশুনার মতো তুচ্ছ ব্যাপারে ধৈর্য ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ভিতরের খবর বের করে আনার আগ্রহ ওনাদের কম। মনে হচ্ছিল, আমার মতো স্বাধীন নাগরিক– যে আবার দেশে থাকে না– তার এ কৌতূহল মেটানোর মনে হয় আর উপায় নেই।

তখন আচমকা তথ্য অধিকার আইনটির কথা মনে পড়ল। এর আগে কখনও এই আইনের অধীনে কোনো সেবা গ্রহণ করিনি। দুয়েকবার পত্রিকায় যা খবর এসেছে তাতে মনে হয়েছে, তেমন কোনো সেবা পাওয়া যায় না। তখন কজন বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করলাম। কিন্তু তথ্য অধিকার আইনের আশ্রয় নিতে যাচ্ছি শুনে হেসে উড়িয়ে দিল ওরা। এক সাংবাদিক বন্ধু তো শুনে আকাশ থেকে পড়ল। তার প্রতিক্রিয়া শুনে মনে হল যেন কোনো বুদ্ধিমান মানুষ এসব 'আইন-ফাইন' ব্যবহার করে না। সব শুনে মনে হল, কেউ যেহেতু উৎসাহ দিচ্ছে না, তার মানে এটি করা দরকার!

ভেবে দেখলাম এতে দুটি লাভ হবে। প্রথমত, কিছু তথ্য, যেগুলো আর কোনোভাবে জানতে পারছি না তা জানতে পারব। দ্বিতীয়ত, আইনটির ব্যবহারও আমার শেখা হবে। তার সঙ্গে বোনাস হিসেবে এটাও জানা যাবে যে, আমার দেশের তথ্য অধিকার সেবা আসলে সত্যিকারভাবে কাজ করছে কিনা। অনেক ভেবে এ বছরের ২৬ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিকার কর্মকর্তার ইমেইল ঠিকানা ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে একটি মেইল পাঠালাম। নিচে সেটি হুবহু তুলে দিলাম।

"আমি ২০১৪ সালের ২৬শে মে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একটি প্রবন্ধ হতে জানতে পারি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জনাব নাহিদের ভাষায়, "যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। এই কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন।"

তিনি আরও বলেন, "এ কমিটির সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে প্রধান হচ্ছে, (ক) এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের চিহ্নিত করা এবং কোথায় কীভাবে তা সংঘটিত হয়েছে তা বের করা। (খ) ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এসব বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।"

এছাড়া আরও বলা হয়, "আরও তথ্য ও প্রমাণ বের করার পর এ রকম বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে পরের দিকে সাক্ষাৎ করে তাদের অভিমত নিলে আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে তা সহায়ক হবে।"

কমিটি সম্পর্কে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো জানতে চাই:

১. কমিটির আনুষ্ঠানিক নাম;

২. এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের নাম;

৩. কমিটির বর্তমান সদস্যদের নাম;

৪. কমিটির এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকের সংখ্যা;

৫. এখন পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত কাউকে চিহ্নিত করা হয়েছে কিনা;

৬. যদি চিহ্নিত করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের সংখ্যা;

৭. যদি চিহ্নিত করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই সংখ্যা;

৮. এখন পর্যন্ত কয়টি স্থান থেকে ফাঁস হয়েছে সেই সংখ্যা (যদি এ ধরনের কোনো তথ্য ইতোমধ্যে উদঘাটিত হয়ে থাকে);

৯. ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তদন্ত কমিটির দেওয়া সুপারিশের সংখ্যা;

১০. যদি সুপারিশের সংখ্যা শূন্যের চেয়ে বেশি হয় তাহলে কমিটির কততম সভাগুলোতে সেগুলো এসেছে সেই তথ্য;

১১. সাক্ষাৎকার নেওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা;

১২. তদন্ত কমিটি যদি ইতোমধ্যে কোনো প্রতিবেদন দিয়ে থাকে সেটি দাখিলের তারিখ ও প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা সংখ্যা।

অনেকেই হয়তো ভ্রু কুঁচকাবেন দেখে যে, আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু সংখ্যা জানতে চেয়েছি। স্বীকার করছি আসলে কী ধরনের তথ্য জানা উচিত এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই। প্রথমত, আমি এমন কোনো তথ্য জানতে চাইনি যেটি মন্ত্রণালয় তদন্তাধীন বিষয় বলে এড়িয়ে যেতে পারবে। দ্বিতীয়ত, আমি আসলে জানতে চেয়েছিলাম তদন্ত কমিটি কেমন কাজ করছে, তারা নিয়মিত একসঙ্গে বসছে কিনা, বসলে তার ফলাফল কী সোজা কথায় তাদের ডিসিপ্লিন জানতে চেয়েছিলাম।

প্রথমেই বলে নিই, মোটামুটি সার্বিক অভিজ্ঞতায় আমি বেশ সন্তুষ্ট। আমার তথ্য পেতে সাড়ে পাঁচ মাসের উপর লেগেছে এটি সত্যি। আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই এটি এক মাসের বেশি লাগার কথা নয়। শুধু তাই নয়, চাইলে এক মাস পরই আমি আপিল করতে পারতাম। কিন্তু আমার মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি ছিল এই ব্যবস্থা কী করে কাজ করে সেই কৌতূহল মেটানো। তাছাড়া যে তথ্য অধিকার কর্মকর্তার কাছে আমি চিঠিটি লিখেছিলাম তার মতো অমায়িক, বন্ধুবৎসল, বিনয়ী আর কর্মঠ মানুষ আমি খুব বেশি দেখিনি।

তাহলে প্রশ্ন হল, উনি এত ভালো হয়ে থাকলে সাড়ে পাঁচ মাস লাগল কেন? আমার অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝেছি তা হল, তথ্য অধিকারের দায়িত্ব আসলে তথ্য দেওয়া নয়। বরং মন্ত্রণালয়ের যে মানুষটি আমার চাওয়া তথ্যের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক দায়িত্বে আছেন তার সঙ্গে আমার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করাই তথ্য অধিকার কর্মকর্তার দায়িত্ব এবং আমার ক্ষেত্রে সেতুবন্ধনটি এর চেয়ে চমৎকার হওয়া সম্ভব ছিল না। সাড়ে পাঁচ মাসে আমি গড়ে প্রতি সপ্তাহে একবার করে উনাকে ফোন দিয়েছি, কিন্তু উনি কখনওই বিরক্ত বা অধৈর্য হননি। সব সময় শুরুতে তিনি দু:খ প্রকাশ করেছেন তথ্য এখনও না দিতে পারার জন্য। স্বচ্ছতার সঙ্গে জানিয়েছেন আমার ফাইল ঠিক এখন কোন পর্যায়ে আছে এবং কেন হচ্ছে সেটা। একজন নাগরিক হিসেবে এর চেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারি?

তবে সরকারের কাছে আমি আরও কিছু চাইব। সবার প্রথমে যেটি তা হল, একের বেশি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া। আমার কাজের মাঝখানেই সেই কর্মকর্তাকে অফিস থেকে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময় বিকল্প তথ্য অধিকার কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রাখা হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটি শুরু করা উচিত। আরেকটি যেটি হলে খুব ভালো হয় তা হল, যদি কোনো কর্মকর্তার আলসেমির কাছে তথ্য অধিকার কর্মকর্তা অসহায় হয়ে থাকেন তাহলে সেটির জন্য ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেওয়া।

এতক্ষণ নিশ্চয়ই সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন জানার জন্য যে, আমি সেই তথ্যগুলো পেয়েছি কিনা। হ্যাঁ, পেয়েছি। পাওয়ার পর আমার ঈদে নতুন জামা পাওয়ার মতো আনন্দ হয়েছে। সেই আনন্দ ভাগ করার সময় যেন একটুও কমে না যায়, তাই আমার কাছে পাঠানো উত্তরের হুবহু কপি এখানে তুলে দিলাম:

দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। কোনো সাংবাদিক যদি একদম সিরিয়াল নম্বর ধরে সবার সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেন আমি নিশ্চিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিতরের পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও পরিষ্কার হবে। শুধু তাই নয়. যে দশটি সভা হল সেখানে কী কী কথা হয়েছে তাও যদি আমরা জানতে পারি, বোঝা যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একে আদৌ সিরিয়াসভাবে নিচ্ছে কিনা। তাছাড়া, যে তেইশটি সুপারিশ করা হয়েছে আমরা যদি সেটি জানতে চাই তাহলে কি খুব বেশি চাওয়া হবে?

চিঠিটি পাওয়ার পর হঠাৎ মনে হল, আমি যদি বিদেশে বসেই ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্য জেনে ফেলতে পারি তাহলে দেশে একজন পরিশ্রমী মেধাবী সাংবাদিক যদি একটু সময় নিয়ে অনুসন্ধান করেন তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিতরে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস অস্বীকার করার একটি চর্চা শুরু করেছেন তাদের গোড়া ধরে টান দিতে পারবেন। মেনে নিচ্ছি যে, এটি খুবই তুচ্ছ, বাচ্চাদের পড়াশোনা-সংক্রান্ত ব্যাপার। তারপরও যদি কেউ আগ্রহী হন তাহলে উপরে ছাপানো চিঠিগুলোর কিছু ক্লু থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন।

আমরা জানি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষায় ভর্তি হতে না পারা একটি সৎ পরিশ্রমী মেয়ের, যে কিনা টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনেনি, মন ভেঙে যাওয়ার গল্প আমি ফেসবুকে পড়েছি। টাকা দিয়ে ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্ন কেনা গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত ছাত্র-ছাত্রী আর অভিভাবক ছাড়া আর সব সাধারণ মানুষ ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে। সবাই ভাবছে কী করে এটি বন্ধ করা যায় অথবা অন্তত সরকারের নির্লজ্জ অস্বীকার করার প্রবণতাটি বন্ধ হয়।

আমরা তথ্য অধিকার আইনের সহায়তায় আরও অনেক তথ্য বের করে আনতে পারি আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে নিজেরা অনুসন্ধান করে দেখতে পারি যে, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করার কোনো উপায় আছে কিনা। এবারের অভিজ্ঞতার পর আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, প্রশাসনে অনেক তরুণ সৎ কর্মকর্তা বসে আছেন– তাদের যেটুকু ক্ষমতা আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য। এখন কেবল দরকার সৎ নাগরিক আর সৎ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি কার্যকর যোগাযোগ।

এটি শুধু সময়ের ব্যাপার আসলে।

ওমর শেহাব: ডক্টরাল ক্যান্ডিডেট, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি, সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটিজি ফোরাম (আইসিএসএফ), প্রাক্তন ছাত্র, শাবিপ্রবি।