বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতিতে এত আগাছা কেন

আবদুল গাফফার চৌধুরী
Published : 22 March 2021, 06:39 PM
Updated : 5 Sept 2015, 02:31 PM

সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনাটি বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে একটি পুরনো প্রশ্ন আবার নতুন করে সামনে টেনে এনেছে। প্রশ্নটি হল, দেশে ছাত্ররাজনীতি আর চলতে দেওয়া উচিত কিনা। ছাত্ররাজনীতিতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লাইসেন্সবাজি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করার প্রায় বছর কুড়ির আগে দেশে কেউ কেউ দাবি তুলেছিলেন, ছাত্ররাজনীতি তথা শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। সকলেই এই দাবি সমর্থন করেছিলেন তা নয়।

যত দূর মনে পড়ে, স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম রাষ্ট্রপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতিতে সন্ত্রাসের ব্যাপকতা দেখে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব তুলে বিতর্কিত হয়েছিলেন। অনেক রাজনীতিক তো বটেই, অনেক শিক্ষাবিদও সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। তাদের প্রস্তাব ছিল, ছাত্ররাজনীতি কলুষমুক্ত করতে হবে, নিষিদ্ধ করা চলবে না। অনেক ছাত্রনেতাও তখন সাবেক রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন।

এই বিতর্কের সময়েই দেশের সুশীল সমাজের কেউ কেউ বলেছিলেন, কেবল ছাত্রদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে লাভ হবে না। শিক্ষকদের মধ্যেও দলীয় রাজনীতির চর্চা এবং নিজেদের স্বার্থভিত্তিক রাজনীতিতে ছাত্রদের জড়ানো বন্ধ করতে হবে। সবচাইতে বড় কথা, রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে, স্বার্থ-সুবিধার ব্যবস্থা করে ছাত্রদের দলের পেটোয়া লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন, তার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এই ব্যাপারে দেশের নানা মুনি নানা মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কেউ বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটি করার জন্য এগিয়ে আসার ইচ্ছা বা সাহস দেখাননি। সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-নিগ্রহের দায়ে ছাত্রলীগ অভিযুক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'এই দলটি থেকে আগাছা উপড়ে ফেলতে হবে।' কিন্তু এই আগাছা উপড়ে ফেলার কার্যকর পন্থাটি কী, সে কথা তিনি বলেননি। যত দূর জেনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের পদত্যাগের দাবিতে যে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন, ছাত্রলীগ নামে অভিযুক্ত এক দল ছাত্র সেই শিক্ষকদের নির্যাতন করেছে; অর্থাৎ তারা ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষ নিয়ে এই দুর্বৃত্তপনা করেছে।

অভিযুক্ত ছাত্রদের মধ্যে মাত্র চার জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে এই লেখা তৈরির সময় পর্যন্ত জেনেছি। চার জন কেন, আরও কয়েক জন ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেও কোনো লাভ হবে না। কারণ সমস্যাটি ছাত্ররাজনীতির নয়, শিক্ষক-রাজনীতির। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর সম্পর্কে এক দল শিক্ষক গুরুতর অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ অথবা অপসারণ দাবি করছেন। আরেক দল শিক্ষক তাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রকের উচিত ছিল দ্রুত বিবাদটির মীমাংসা করা। নিরপেক্ষ তদন্তে যদি দেখা যেত ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক, তাহলে তাকে সরে যেতে বলা। অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত না হলে অভিযোগকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বসে তাদের অভিযোগগুলো অন্যভাবে মিটিয়ে ফেলা।

শিক্ষামন্ত্রী তা করেননি। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের কিছু ক্ষমতা কর্তন করে ঢাকায় ফিরে গেছেন। অর্থাৎ বিবাদটি ঝুলিয়ে রেখেছেন। অনুমান করি, এই সুযোগে ভাইস চ্যান্সেলর নিজে অথবা তার সমর্থক শিক্ষকদের অতিউৎসাহী অংশ ছাত্রদের অংশবিশেষকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আন্দোলন ভাঙার কাজে ব্যবহার করাতে চেষ্টা করেছেন। যেহেতু আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়, তখন সরকারি ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ও নেতাকেই তারা ব্যবহার করেছেন। যদি এটা বিএনপির জমানা হত এবং ভাইস চ্যান্সেলর বিএনপি-পন্থী হতেন, তাহলে হয়তো ছাত্রলীগের বদলে ছাত্রদলকেই ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষে জঙ্গে নামতে দেখা যেত।

ব্রিটিশ আসলে, এমনকি পাকিস্তানি জমানাতেও দেখা গেছে, ছাত্রআন্দোলন ছিল আদর্শ ও কর্মসূচীভিত্তিক। ছাত্রআন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সাহসী। সরকারের ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় নয়, দেশি-বিদেশি স্বৈরাচারী শাসকদের অত্যাচার-নিপীড়নের মোকাবেলা করে তারা আন্দোলনে সক্রিয় থাকতেন। বর্তমানে এর সম্পূর্ণ উল্টো দৃশ্য দেখা যায়। বড় বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশই রাজনীতিতে আসেন নানা সুযোগ-সুবিধা, অর্থ ও প্রতিপত্তির লোভে; আদর্শের কোনো বালাই সেখানে থাকে না।

অতীতে ছাত্ররাজনীতি ছিল বড় বড় রাজনৈতিক নেতা তৈরির সূতিকাগার। শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, পরবর্তীকালের তোফায়েল আহমদ, আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর, রাশেদ খান মেনন প্রমুখ ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রআন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বেরিয়ে এসেছেন। বর্তমানের ছাত্ররাজনীতি আর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতা তৈরি করতে পারেছে না। এই খরা চলছে উপরতলার রাজনীতিতেও। অর্থাৎ ডান বাম কোনো রাজনৈতিক দলই পারছে না নতুন রাজনৈতিক নেতা তৈরি করতে। বাংলাদেশের যে রাজনীতি একদা শেখ মুজিব থেকে শেরে বাংলা পর্যন্ত ক্ষণজন্মা নেতাদের জন্ম দিয়েছে, আজ সেটি এতই অনুর্বরা যে তাতে আগাছাই জন্ম নিচ্ছে বেশি। তার প্রভাব পড়েছে ছাত্ররাজনীতিতেও। বর্তমান অবস্থার জন্য একা ছাত্ররাজনীতি দায়ী নয়। দায়ী সন্ত্রাস ও দুর্নীতি-কবলিত মূল রাজনীতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্ররাজনীতি থেকে আগাছা উপড়ে ফেলার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু এই আগাছার শিকড় রয়েছে মূল রাজননৈতিক দলগুলোর ভেতরে। দেশের মূল রাজনীতি, এক কথায় বড় রাজনৈতিক দলগুলো আগাছামুক্ত না হলে তাদের লেজুড়বৃত্তি করছে যে ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের আগাছামুক্ত করা যাবে না। মূল রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসরণে ছাত্ররাজনীতিতেও এখন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি ঢুকেছে। দলের কমিটি গঠন ও শাখা গঠনের নামে চলে লাখ লাখ টাকার রাজনৈতিক বাণিজ্য। এই অপরাজনীতির দাপটে সৎ ও শুভ রাজনীতি এখন দেশছাড়া।

ব্রিটেনের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে না হলেও মোটামুটি পরিচিত। এখানে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক যেমন ছাত্র সংগঠন আছে, তেমনি আছে লেবার, লিবারেল ইত্যাদি পার্টির সমর্থক ছাত্র সংগঠন। তারা মূল দলের লেজুড়বৃত্তি করে না। আদর্শ ও কর্মসূচীর ভিত্তিতে মূল দলকে সমর্থন দেয়। মূল দল তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না। আবার মূল দল ক্ষমতায় গেলে তাদের সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধাও পান না। ইউরোপে ছাত্ররাজনীতি তাই পরিচ্ছন্ন এবং কর্মসূচীভিত্তিক।

বাংলাদেশেও এই অবস্থা এক সময় ছিল। আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগ বা অপর কোনো মূল দলের আদর্শে বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠনগুলোর স্বাধীন অস্তিত্ব ছিল। মূল দলের অর্থ-সাহায্যে বা নিয়ন্ত্রণে তারা চালিত হত না। আদর্শ ও কর্মসূচীর ভিত্তিতে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগকে, ছাত্র ইউনিয়ন কম্যুনিস্ট পার্টিকে সমর্থন জানাত। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটান ক্ষমতা দখলের পর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি ছাত্র সংগঠনগুলোকে একটা না একটা বড় দলের লেজুড় হিসেবে রাজনীতিতে টিকে থাকতে বাধ্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রকে অর্থ ও মন্ত্রিত্বের টোপ দেখিয়ে দলে টেনে সন্ত্রাসী বানিয়েছেন। জিয়াউর রহমান অনুগ্রহলোভী এক শ্রেণির ছাত্রদের দ্বারা ছাত্রদল গঠন করেন এবং শিক্ষাঙ্গনে তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেন।

একই পথে হেঁটেছেন পরবর্তী সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্র সাজিয়ে অছাত্র সন্ত্রাসী ঢোকানো, চরদখলের মতো হলদখলের অসৎ ছাত্ররাজনীতির চর্চা তখনই শুরু হয়। মূল রাজনীতিতেও পচন ধরান জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এরশাদ এই দুজন সামরিক শাসকই। তারা ক্ষমতার বলে সৎ ও নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিকদের রাজনীতির মাঠ থেকে তাড়ান। স্বাধীনতার শত্রু এবং সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের রাজনীতিক সাজিয়ে এনে নেতা ও মন্ত্রিত্বের আসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন। বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি দুটি দলের জন্মই এভাবে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্ররাজনীতির নীতি-নৈতিকতা ধ্বংস করা হয় লাইসেন্স-পারমিটবাজিতে ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ছাত্র সংগঠনগুলোকে অবাধ সুযোগ দানের ব্যবস্থা দ্বারা। আমার অনেক পাঠকের স্মরণ থাকতে পারে, বিএনপির শাসনামলে বুয়েটে একটি কনস্ট্রাকশন কাজের পারমিট পাওয়া নিয়ে ছাত্রদলের দুই অংশের মধ্যে প্রচণ্ড বন্দুক-যুদ্ধের সময় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেধাবী ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে এই ধরনের লাইসেন্স-পারমিটবাজির বখরা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই অংশের মধ্যে বিবাদে হতাহতের সংখ্যা কম নয়।

স্বৈরশাসকদের পতন হয়েছে। রাষ্ট্র-ব্যবস্থাতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু স্বৈরশাসন দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থার যে পচন ধরিয়ে গেছে, তা রোধ করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রাজনৈতিক শাসনও। বরং স্বৈরশাসকদের অনেক ক্ষতিকর ব্যবস্থা এখনও সযত্নে লালন করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা হয়নি। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির গ্রাস থেকে রাজনীতিকে মুক্ত রাখা হয়নি। তারই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বর্তেছে ছাত্ররাজনীতির উপরেও। কেবল ছাত্ররাজনীতির উপর দোষ চাপিয়ে লাভ কী?

শুভ ও সৎ রাজনীতির অনুপস্থিতিতে অপরাজনীতির গ্রাস সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে। শিক্ষক সমাজও তা থেকে মুক্ত নন। সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাই তো প্রমাণ করে ভাইস চ্যান্সেলরের বিরোধী ও সমর্থক দুই শিক্ষক গ্রুপের মধ্যে এই বিরোধ। এখানে অনুমান করা যায় ভিসি-সমর্থক গ্রুপ তাদের গদিরক্ষার জন্য এক শ্রেণির ছাত্রকে ব্যবহার করেছেন। নিজেদের চাকরির স্বার্থ, পদোন্নয়নের স্বার্থ এবং অন্যান্য স্বার্থে এক শ্রেণির শিক্ষক যে ছাত্রদের ব্যবহার করেন, এমনকি তাদের মধ্যে খুনোখুনি বাঁধিয়ে দেন তা আজ প্রমাণিত সত্য। ছাত্রদের শিক্ষাদান ও চরিত্রগঠনে সাহায্যদানের পরিবর্তে নিজেদের দলীয় স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা এক শ্রেণির শিক্ষকের কাছে এখন আর অনৈতিক কোনো ব্যাপার নয়।

শিক্ষকেরা রাজনীতি করুন। নিজেদের পছন্দমতো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করুন তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু তারা যখন সেই দলীয় রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনে টেনে আনেন এবং শিক্ষক পদের প্রভাব ও মর্যাদা খাটিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিরোধ ও সংঘাত বাঁধান, তখন এই ব্যাপারে কোনো সরকারেরই নিশ্চুপ থাকা উচিত নয়। কিন্তু মুশকিল হয়েছে, রাজনৈতিক সরকারগুলোও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ নিজ দলের প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখার জন্য ভাইস চ্যান্সেলর ও শিক্ষক পদে অনেক ক্ষেত্রেই অনুগত লোকদের নিয়োগ লাভের ব্যবস্থা করেন।

এই পছন্দের ভাইস চ্যান্সেলররা অনেক সময়েই যোগ্য ব্যক্তি হন না। যোগ্যতা না থাকলে বৈধ-অবৈধ নানাভাবে পদ আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করতে হয়। তাতে শুধু সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানই কমে না, বিশ্ববিদ্যালয়টিও ভালোভাবে পরিচালিত হয় না। এই ধরনের এক ভাইস চ্যান্সেলরের উদাহরণ ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। তার আমলে মধ্যরাতে পুলিশ ডেকে এনে ঢাকার শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীদের অশোভনভাবে পেটানো হয়েছিল। আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-সমর্থক ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নারীঘটিত কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। তিনি একদিন সহসা আততায়ীর হাতে নিমর্মভাবে খুন হন।

অতীতের কাসুন্দি আর ঘাঁটতে চাই না। বর্তমানের পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সতর্ক হোন। বিচার বিভাগের মতো শিক্ষা বিভাগেও যোগ্য, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অথরিটি প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। লাইসেন্স-পারমিটবাজি থেকে ছাত্রদের দূরে রাখার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন দরকার। ছাত্র সংগঠনগুলোকে স্বাধীন ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজস্ব নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত। মূল দলের সিন্ডিকেটের আধিপত্য ও দাসত্ব থেকে ছাত্র সংগঠগুলোকে মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করে দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল নীল দলে বিভক্ত হয়ে শিক্ষকদের সংকীর্ণ রাজনীতি করার অবাধ সুযোগও হ্রাস করা দরকার। এক কথায়, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ ফিরিয়ে আনা আবশ্যক।

দেশের রাজনীতি যদি কলুষমুক্ত না হয়, আগাছামুক্ত না হয় তাহলে ছাত্ররাজনীতিও হবে না। ছাত্ররাজনীতি দেশে নিষিদ্ধ করেও কোনো লাভ হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো আত্মশুদ্ধির পন্থা উদ্ভাবন করুন। নিজেদের মধ্য থেকে আগাছা দূর করার কঠোর পদক্ষেপ নিন। অন্যথায় ছাত্ররাজনীতি থেকে আগাছা উৎপাটন করা যাবে না। সিলেটে কাল যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি অন্যত্র আগামীকালও ঘটতে থাকবে।

লন্ডন; ৩ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, ২০১৫