জনসংখ্যা ভাবনা, সরকার ও আগামীর বাংলাদেশ

মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
Published : 16 Sept 2015, 08:00 AM
Updated : 16 Sept 2015, 08:00 AM

জনসংখ্যা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা মূলত সব সময়কার। বিশেষত আমাদের মতো দেশের প্রেক্ষিতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বিমত প্রকাশের ফলে দেশের এক সন্তান নেওয়ার স্লোগান দুসন্তানের স্লোগানে পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। গত বছরের জুনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্লোগান 'দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়' বাদ দিয়ে প্রতিটি পরিবারের দুটি করে সন্তান নেওয়ার পক্ষে মত দেন। গত বছর চীন ও জাপান ঘুরে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি তার আলোকে ভবিষ্যত ভাবনা নিয়ে স্লোগানটি পরিবর্তনের কথা বলেছেন।

বর্তমান সরকারপ্রধান খুব সম্ভব জনসংখ্যা রপ্তানি করে তথা বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনার কথা ভেবেছেন। মনে পড়ে ২০১০ সালের ২ জুন তিনি জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, 'উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আমাদের জন্য কোনো সমস্যাই নয়।' চীন-জাপানের উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রকৃত চিত্র ও প্রেক্ষাপট তাঁর কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। জনসংখ্যা বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিতে চীনে ছিলাম ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল অব্দি, প্রায় ৫ বছর। আধুনিক চীনের অর্থনৈতিক বিকাশে জনসংখ্যা নীতির প্রভাব নিজে দেখার সুযোগ পেয়েছি। অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নীতির বিবর্তন কীভাবে ঘটেছে সেটিও অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছি।

আধুনিক চীনের এক সন্তান নীতি সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এটি মূলত নগর বা শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। গ্রামীণ এলাকায় যদি কোনো পরিবারে প্রথম সন্তান কন্যা হয় তবে পরবর্তীতে আরও সন্তান নিতে পারেন তারা। আবার শহরের কোনো পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি এক সন্তান-বিশিষ্ট পরিবার থেকে আসেন, তবে ওই দম্পতি দুটি সন্তান নিতে পারেন। প্রথম সন্তান কোনো জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মালে বা প্রতিবন্ধী হলে পরবর্তীতে সন্তান নেওয়া যায়।

আরও মজার বিষয়, এক সন্তান নীতিটি শুধুমাত্র 'হান' কমিউনিটির জন্য প্রযোজ্য, যারা মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ, বাকি ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর জন্য এ নীতি নয়। বর্তমানে এক সন্তান নীতি (আমার দৃষ্টিতে ১.৫ শিশু পলিসি) বেশ কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে।

প্রত্যেক নীতির সুফল-কুফল থেকে যায়। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাসে চীন অত্যন্ত সফল। তেমনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সফলকাম তারা। বর্তমানে চীনে লিঙ্গ-অনুপাতে জনসংখ্যার তারতম্য থাকায় বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আর জনসংখ্যা নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে এ কারণেই। লিঙ্গ-অনুপাতে জনসংখ্যার এই তারতম্য শুধু পলিসির জন্য হয় না, গর্ভপাত, প্রযুক্তির বিকাশ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা ও অন্যান্য কারণও এ জন্য দায়ী।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাপানের উদাহরণও দিয়েছেন। হ্যাঁ, জাপানের পপুলেশন পিরামিডে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেশি এবং সে অনুযায়ী জাপান অধিক সন্তান নিতে প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। একটি উন্নত দেশ হিসেবে জাপান তার নাগরিকদের যা দিতে পারছে বা পারবে আমাদের সরকার কি তা দিতে পারবে? সে সক্ষমতা রয়েছে কি?

সরকারপ্রধানের প্রস্তাবিত দুই সন্তানের দম্পতিদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে তা পরিষ্কার নয়। সমগ্র প্রজনন হার (টিএফআর) হ্রাসে আমাদের সাফল্য থাকলেও জাতীয় জনসংখ্যা নীতি, ২০১২ অনুযায়ী আমরা এখনও জনসংখ্যা নীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। এর লক্ষ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে সমগ্র প্রজনন হার (টিএফআর) ২.১এ পৌঁছানোর কথা। ২০০৪ সালের জনসংখ্যা নীতিতেও একই লক্ষ্য ছিল। জন্ম-নিরোধের হার ২০১৫ সালের মধ্যে ৭২ শতাংশে পৌঁছানোর কথা।

সর্বশেষ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (২০১৪)এর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী আমরা এখনও দুটি প্রধান লক্ষ্য অর্জন থেকে দূরে রয়েছি। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রজনন হার হ্রাসে সাফল্য নেই। টিএফআর ২.৩এ থেমে আছে। জন্ম-নিরোধের হার ৬২ শতাংশে। কিশোরীদের (১৫-১৯ বছর) যাদের সন্তান রয়েছে বা বর্তমানে গর্ভবতী তাদের প্রজনন-হার ২০১১এর ৩০ শতাংশ থেকে ২০১৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৩১ শতাংশ।

দেশে এখনও বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার জরিপ ২০১২-১৩তেও ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে, ২০১৪ বলছে, ২০-৪৯ বছর বয়সের নারীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছরে পৌঁছানোর আগেই। বাল্যবিবাহের কারণে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নারী প্রথম সন্তানের মা হয়ে যায় ওই বয়সের আগে। আমার নিজের পরিচালিত এক গবেষণাতেও দেখেছি, ১৮ বছরের আগে বিয়ে হলে কোনো নারীর সন্তান সংখ্যা ৫ বা তার বেশি হবার সম্ভাবনা থেকে যায় অনেক (ল্যানসেট জার্নালে গত অক্টোবরে সারমর্ম প্রকাশিত)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের বাল্য বিবাহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার হারে উর্ধ্বগতি ব্যাহত করছে। ১৮ বছরের পরিবর্তে যদি ১৬ বছর বয়সে কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে তার ১ বছরের শিক্ষা হারিয়ে যায়।

সার্বিক বিবেচনায় এ মুহূর্তেই আমাদের এক সন্তানের স্লোগান থেকে সরে যাওয়া সঠিক হবে বলে মনে করছি না। কারণ, পূর্ববর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রজনন-হার হ্রাসে সাফল্য থাকলেও এখনও আমাদের জনসংখ্যা স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছেনি। গ্রাম ও শহরের প্রজনন-হারে ব্যবধান রয়েছে। তাছাড়া বিভাগ, এমনকি জেলা-ভেদেও সমতা অর্জন করতে পারিনি আমরা; বরং কোথাও কোথাও, বিশেষ করে সিলেট ও চট্রগ্রাম বিভাগে এ হার অনেক বেশি। শহরের বস্তি এলাকায় প্রজনন-হার বেশি। তাছাড়া দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর, যাদের সাক্ষরতা নেই, তাদের মধ্যেও একই চিত্র দেখা যায়।

গত বছরের এ সময় কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণার কাজে থাকার সুবাদে ওখানকার জনসংখ্যার সঙ্গে বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ে কিছুটা তুলনা করেছিলাম। সে দেশের জনসংখ্যা এখন ৩৪.৮৮ মিলিয়ন যার সাড়ে চার (৪.৫) গুণ হল আমাদের জনসংখ্যা। অথচ আয়তনে কানাডা বাংলাদেশের প্রায় ৭০ গুণ। এটি একটি বড় দেশ, অর্থনৈতিক ভিত্তিও এর শক্ত, কাজের সু্যোগ বেশি। তাই এখানে দরকার প্রয়োজনীয় জনবল। এ জন্য তারা এখনও বিভিন্ন দেশ থেকে ইমিগ্র্যান্ট নিয়ে থাকে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে মাত্র ৪ জন, যেখানে বাংলাদেশে ১,১৮৮ জন। ভূমির পরিমাপে বিশ্বের ৯৪ তম দেশ বাংলাদেশ আর কানাডা হল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরোর তথ্যমতে, ১০-২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী কানাডাতে যেখানে শতকরা ১৮ ভাগ সেখানে আমাদের ৩০ ভাগ। আপাতদৃষ্টিতে জনসংখ্যার উপাদানগত ও পরিমাণগত মানদণ্ডে এই একটি জায়গাতেই এগিয়ে রয়েছি আমরা।

তবে কেবল আমরা নই, আমাদের প্রতিবেশি ভারতও তরুণ-যুবা জনগোষ্ঠীর সংখ্যার বিচারে এগিয়ে। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকালে মেডিসিন স্কয়ারে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছিলেন যে, বিশ্বে ভারতের গর্ব করার মতো তিনটি জিনিস রয়েছে যা অন্যদের নেই। গণতন্ত্র, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও চাহিদা।

ভারতের মতো আমাদের দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র না থাকলেও রয়েছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও চাহিদা। আমাদের সরকারপ্রধান ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো ভাবনা লক্ষ্য করছি না। জাতিসঙ্ঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াদি সংক্রান্ত পপুলেশন ডিভিশনের প্রক্ষেপন অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫-৫৯ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বর্তমানের ৬১.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে হবে ৬৫.৬ শতাংশে যা পরবতীতে ক্রমহ্রাসমান। তাছাড়া ১৪ বছরের নিচে রয়েছে ৩৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী।

চিন্তার বিষয় হল, এই বিশাল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিবে যা আমাদের কাম্য নয়। উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে জনসংখ্যা ও তার উপাদান বিবেচনায় নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এ মুহূর্তে আমাদের দরকার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড নিয়ে ভাবা। একে সৃষ্টি, পুঁজিকরণ ও তা দীর্ঘায়িত করে সদ্ব্যবহার করতে দরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কর্মকৌশল থাকা জরুরি। আর দরকার জনসংখ্যার গুণগত বিকাশ কীভাবে সাধন করা যায় সে বিষয়ে দৃষ্টিদান।

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০১৫এর (প্রতি বছর ১১ জুলাই পালিত হয়) মূল প্রতিপাদ্য ছিল জরুরি অবস্থায় বিপন্ন জনগোষ্ঠী। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী, বিশেষত বর্তমানের বিশ্ব বাস্তবতায় যেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলো থেকে প্রতি দিনই অসংখ্য মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ভিনদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। সাধারণত অধিকতর বিপন্ন জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হল, নারী, কিশোর-কিশোরী ও যুবা গোষ্ঠী। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিপন্ন জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির ক্রমধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বর্তমানে ৫০ মিলিয়ন মানুষ বিপন্ন যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কনফ্লিক্ট বা দ্বন্দ্ব কিংবা স্থানচ্যুত ও বলপূর্বক স্থানান্তরের শিকার। এই জনগোষ্ঠীর তিন-চতুর্থাংশই নারী, কিশোর-কিশোরী ও যুবা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী-ভাঙ্গন ও পরিবেশগত কারণে মানুষ বিপন্নতার শিকার হচ্ছে। ফলে সংকটকালে প্রজনন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত প্রস্তুতি ও জরুরি অবস্থায় বিপন্ন জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে সরকারি পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক।

পরিবর্তিত বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেমে নেই। ২০০৭ সালেই এ পৃথিবী ধারণ করেছে ৭ বিলিয়ন জনসংখ্যা। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রতি ১২ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়েছে ১ বিলিয়ন করে। বাংলাদেশেও এ হার ক্রমবর্ধমান। প্রজনন-হার কমে এলেও প্রতি বছর ২০ লক্ষাধিক নতুন মানুষ যোগ হচ্ছে। ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ, ২০১৫ এর গবেষণা তথ্য বলছে, ১৯০১ সালে বাংলদেশের জনসংখ্যা ছিল ২৯ মিলিয়ন, তা বেড়ে ২০১৪ তে হয়েছে ১৫৬ মিলিয়ন। ২০৬১ সালে আমাদের মোট জনসংখ্যা হবে ২৬৫ মিলিয়ন।

ওদিকে আয়ুস্কাল বেড়ে যাওয়ায় দেশে বয়স্ক লোকের সংখ্যা ২০১১ সালে হয়েছে মোট জনসংখ্যার ৭.৫ শতাংশ যা প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে। বিপরীতে প্রতি বছর ২.১ মিলিয়ন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫ বছর ও ততোধিক) জনসংখ্যায় যোগ হচ্ছে। এ বিশাল গোষ্ঠীকে শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করাই হচ্ছে সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।

সে পেক্ষিতে বলতে হয়, চীন-জাপানের উদাহরণ আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। বরং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে বর্তমানের এক সন্তান নেওয়ার স্লোগান অপরিবর্তিত রেখেই জনসংখ্যা কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার। এক সময় গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে, বিদ্যালয়-মাঠে পরিবার-পরিকল্পনা বিষয়ক নাটিকা, ডকুমেন্টারি দেখানো হত। কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না। প্রচারণাকর্মে ভাটা পড়া, জনবল ও অর্থের ঘাটতি, উপকরণের অভাব, জনসংখ্যা খাত ও স্বাস্থ্য খাত এক করে দেখা, বাজেটে বরাদ্দ আনুপাতিক হারে প্রতিনিয়ত কমে যাওয়া, জনসংখ্যা নীতির সঠিক বাস্তবায়ন না করা, জাতীয় জনসংখ্যা কাউন্সিলের দীর্ঘদিন কোনো সভা না হওয়া– এ সবই আমাদের প্রতিবন্ধকতা।

সরকারের পাশাপাশি বিশেষ করে মিডিয়াকেও জনসংখ্যা বিষয়ক প্রোগ্রাম প্রচার করে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, আমাদের বিশাল তরুণ-যুবা জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে। তাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার তারুণ্যে বিনিয়োগ, আগামীর উন্নয়ন সাধন। পাশাপাশি জাতীয় বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ। ১০-২৪ বছর বয়সের এই জনগোষ্ঠীকে যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারি আমরা তবে সেটি হবে চরম ব্যর্থতা। কারণ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড একটি জাতির জন্য সব সময় সুলভ ঘটনা নয়। তাই এ থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিতে হবে।

আমাদের তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী একটি দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠুক, বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করুক, সঠিক নেতৃত্ব দিক, সেটি কামনা করি।

ড. মঈনুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।