প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: জাসদ একা প্রেক্ষাপট তৈরি করেনি

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 30 August 2015, 12:27 PM
Updated : 30 August 2015, 12:27 PM

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) পঁচাত্তর-পূর্ববর্তী এবং বিশেষত পঁচাত্তরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাংশ থেকে যে কথা উঠেছে, তার অন্য রকম কারণ খুঁজতে লেগে গেছেন অনেকে। যিনি কথাটা প্রথম তোলেন, দলে তার অবস্থান ও প্রভাব নিয়ে নানা মত রয়েছে। সম্প্রতি তিনি একটু আলোচিতও হন তার এক বিতর্কিত ধনাঢ্য আত্মীয় একটি ঘটনায় নতুন করে বিতর্কিত হওয়ায়। সেটি অবশ্য আড়ালে চলে যেতে শুরু করেছে। এর মধ্যে তিনি যে বুঝ থেকেই হোক, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের 'প্রেক্ষাপট' তৈরিতে জাসদের ভূমিকার প্রশ্ন তুলেছেন আগস্ট মাসে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের একযোগে হত্যা-প্রচেষ্টার ভয়াবহ ঘটনাটির জন্যও আগস্ট মাস বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এ-সংক্রান্ত মামলাটি চলছে এখনও। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের অনেকটাই অবশ্য কার্যকর হয়েছে এর মধ্যে। এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন পাল্টে দেওয়া ওই ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরিতে জাসদের ভূমিকা সামনে আনল আওয়ামী লীগের একাংশ। প্রথম যিনি এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন, তাকে পরে সমর্থন করেন দলের আরেক নেতা। মিডিয়া ঘটনাটি লুফে নেয়। প্রতিবেদন, টকশো আর নিবন্ধ প্রকাশ চলতে থাকে। এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত এটি দেখছি অব্যাহত।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী চাইলে এটা থামাতে পারেন। এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত সেটি তিনি করেননি। থামাতে চাইলে কী বলে থামাবেন, সেটি কিন্তু প্রশ্ন। জাসদ বিষয়ে বক্তব্য এসেছে এক অর্থে তাঁর পরিবারের ভেতর থেকে। বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বটে। আর প্রধানমন্ত্রী তো ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ওই ঘটনায় তাঁর শোক অপরিমেয়; বেদনা অশেষ। আর ওই সময়ে জাসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছে। অরাজনৈতিক কারণেও কেউ এটা তুলে ফেললে দলীয় সভানেত্রীর পক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়ে তা থামানো মুশকিল।

আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে দলে দলে লোকজন এ প্রশ্ন তুলে জাসদ নেতাদের বিপদগ্রস্ত করে তুলছেন, এমনটি অবশ্য নয়। এ ক্ষেত্রে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উক্তি প্রণিধানযোগ্য। সম্প্রতি এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি যা বলেছেন, তার সারমর্ম হল– জাসদের অতীত কী, আমরা জানি। ওটা জেনেই জোট বেঁধেছি। এখন প্রশ্ন তুলে কী লাভ?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তেরও ভিন্ন রাজনৈতিক অতীত রয়েছে। তিনিও বাম ধারা থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন। তবে এমন প্রশ্ন বোধহয় কেউ তুলতে পারবেন না যে, তিনিও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন। ১৫ আগস্টের ঘটনার একটা প্রেক্ষাপট যে তৈরি হয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই। তৎকালীন বিরোধী দল হিসেবে জাসদ যে এতে কিছু ভূমিকা রেখেছিল, সেটাও সত্য। তবে ওটাকে বোধহয় দুভাগে ভাগ করে দেখতে হবে। একটা হল, নিয়মতান্ত্রিক ভূমিকা; অন্যটা হল, অনিয়মতান্ত্রিক।

জাসদের নিয়মতান্ত্রিক বিরোধিতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, দেশ স্বাধীন হতে না হতেই আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে এ ধরনের বিরোধিতা কেন? এটা কি যুদ্ধ-পরবর্তী সরকারকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়নি? এর উত্তর দেন অনেকে এ কথা বলে যে, জাসদ সৃষ্টির কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। এ জায়গাটায় আওয়ামী লীগের 'দক্ষিণপন্থী অংশের' ভূমিকা ছিল। তারা নাকি বঙ্গবন্ধুকেও বিভ্রান্ত করে ফেলতে সক্ষম হন।

অনেকে আবার মনে করেন, এটা নানা শ্রেণি ও মতের সমন্বয়ে গঠিত আওয়ামী লীগের ভেতর বাম ও ডানের দ্বন্দ্বের পরিণতি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই এটা দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকারকেও এ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিয়ে চলতে হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী দেশ পুনর্গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বটি নাকি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অনেকে অবশ্য বলেন, সামনে নীতিগত মতপার্থক্য থাকলেও এর নেপথ্যে ছিল চক্রান্ত।

কে বলবে, কাদের বক্তব্য সঠিক। আমাদের ইতিহাসের এ অধ্যায় নিয়ে ভালো গবেষণাও কি হয়েছে?

জাসদ পরে বহুধাবিভক্ত ও দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ে। এক-এক নেতার নেতৃত্বাধীন জাসদকে বড় দুই দলে গিয়ে ভিড়তে সচেষ্ট দেখেছি আমরা। তার আগে অবশ্য ঘটে গেছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এটা ছিল রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিচালিত। এ ধরনের কোনো কোনো ঘটনা হয়ে থাকে প্রতিহিংসামূলক। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধু প্রতিহিংসামূলক ছিল না, সেটা পরবর্তী ঘটনাধারায় বোঝা গেছে।

ওই সময়ে এবং এ জায়গাটায় জাসদের ভূমিকা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। দলটি তার আগেই ঝুঁকে পড়েছিল অনিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে। জাসদ নেতারা বলতে পারেন, তৎকালীন সরকারই দমন-পীড়নের মাধ্যমে ওই দিকে ঠেলে দিয়েছিল তাদের। একটা সময় পর্যন্ত তারা বলতেন এ কথা। এখন আর বলছেন না, বিশেষত ১৪ দলীয় জোটভুক্ত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হওয়ার পর। ওই পর্বটি তারা বোধহয় ভুলে থাকতেই চান। তবে 'গণবাহিনী' গঠনের পর জাসদের রাজনীতি যে দিকে মোড় নেয়, তা বরাবরই আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে।

ওই সময়ে বাম ধারার একটি বড় অংশও হিংসাশ্রয়ী রাজনীতিতে মেতে ওঠে। সন্দেহ নেই, রাষ্ট্রও হয়ে ওঠে দমনমূলক। বিশেষ আইনের আওতায় গঠিত একটি বাহিনীর তখনকার ভূমিকা এখনও 'মিথ' হিসেবে বিরাজ করছে। আন্দাজে অনেক পরিসংখ্যান দেওয়া হয় তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে। দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়েও যে যা খুশি বলেন। বঙ্গবন্ধুর একাধিক বক্তৃতায় এটা স্পষ্ট যে, তিনি শান্তিতে দেশ পরিচালনা করতে পারছিলেন না। কিন্তু এর কারণ কি শুধু জাসদ বা গণবাহিনী?

জাসদ বেরিয়ে যাওয়ার পর যে দল তাঁর হাতে ছিল, সেটা কি সুসংবদ্ধ? তাতেও কি কিছুটা বাম ও ডানের বিরোধ দানা বেঁধে ওঠেনি? বামপন্থীদের একাংশ বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতি সহযোগিতার নীতি নিয়েছিল। ত্রিদলীয় ঐক্যজোটও গঠন করেন তারা, দেশের কঠিন সময়ে। এটা ছিল বামপন্থীদের ওই অংশের আন্তর্জাতিক লাইনেরও অংশ। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে দক্ষিণপন্থার উত্থান রোধ করা যায়নি। মন্ত্রিসভা থেকে তাজউদ্দীন আহমদের মতো নেতার বেদনাদায়ক প্রস্থানে সেটা চূড়ান্ত রূপ পায়। অনেকে তো মনে করেন, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের দূরত্ব আর বিচ্ছেদেই ছিল সর্বনাশের বীজ।

আওয়ামী লীগে বরাবরের দক্ষিণপন্থী নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমদ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সুবিধা করতে না পারলেও পরে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন কীভাবে, সেটারও মূল্যায়ন প্রয়োজন। তাজউদ্দীনের বদলে তিনি হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ জন। এ অবস্থায় তাকে ঘিরেই চক্রান্তকারীরা জড়ো হয় এবং আঘাত হানে। অস্বীকার করা যাবে না, বঙ্গবন্ধু সরকার ততদিনে অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে। জাসদ, বিশেষত গণবাহিনী এখানে ভূমিকা রেখেছিল বৈকি। পিকিংপন্থী বামরাও রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর 'ঘনিষ্ঠ জনরা' কি রাখেননি? আর ক্ষমতার অপব্যবহারকারী আওয়ামী লীগ নেতারা? বঙ্গবন্ধু নিজেও কি বক্তব্য রেখে যাননি এদের বিষয়ে?

সে সব বক্তব্য অবশ্য প্রচারিত হতে দেখা যায় না। কেবল ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হয় নির্দিষ্ট কিছু সঙ্গীতসহ। স্বাধীনতা-যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগেরও কি উচিত নয় একটা যথাসম্ভব নির্মোহ মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া? বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কথা তারা এখন আর বলেন না। ওই সময়েও কি ওটা ছিল সঠিক পদক্ষেপ? বঙ্গবন্ধুর খুনি, তাদের সমর্থনকারী আর ওই কাজের সুফলভোগীরা তো এ কথা বলে বলে প্রায় প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিল যে, বাকশাল গঠনের কারণেই তাঁকে ওইভাবে প্রাণ হারাতে হয়! রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে তাঁকে সরানোর আর কোনো উপায় নাকি বঙ্গবন্ধু নিজেই খোলা রাখেননি।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, জাসদ তথা গণবাহিনীর ভূমিকাসহ অনেক কিছুই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল। আন্তর্জাতিক চক্রান্তও ছিল। এ-সংক্রান্ত অনেক বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে জাসদের যারা তখন অত্যন্ত বাজে বক্তব্য রাখতেন, তারা কি জড়িত ছিলেন ওই চক্রান্তকারীদের সঙ্গে? সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। তবে বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু তাহেরের নেতৃত্বে গণবাহিনীর একাংশ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল সেনাবাহিনীর মধ্যে। এটা নৈরাজ্যিক কাজ ছিল বৈকি। ওই সময়ে একাধিক হঠকারিতাপূর্ণ ঘটনাও তারা ঘটান, যেগুলোর রহস্যভেদ হয়নি আজও।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জাসদ বা গণবাহিনীর সম্পৃক্ততা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া না গেলেও এর পর তাদের ভূমিকা ছিল নেতিবাচক। ভয়ানক ওই হত্যাকাণ্ডের জোরালো প্রতিবাদ হয়নি আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের ভেতর থেকে। তাদেরই একাংশ আবার খুনিদের সহায়তায় গঠন করে নতুন সরকার। অন্য দিকটি হল, জাসদ ও এক শ্রেণির বাম নেতা-কর্মীর কখনও বিভ্রান্তিকর, কখনও অতিউৎসাহী ও নেতিবাচক ভূমিকা। জাসদের সঙ্গে একদা সম্পর্কিত লোকজনের জবানিতেই সে সব বেরিয়ে আসছে এখন। অস্বীকার করা কঠিন। তাদের ওই সময়কার দাবি-দাওয়া, প্রচারপত্র প্রভৃতিতে কিছু প্রমাণও রয়েছে।

সেনাবাহিনীর ভেতর থেকেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ওপর একটা পাল্টা আঘাত এসেছিল। তাদের প্রকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে অপপ্রচার চালিয়ে আর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের নামে যারা এদের ব্যর্থ করে দেন, তাদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন তাহেরসহ জাসদ নেতারা। 'রোমান্টিক বিপ্লবী' বলে তারা আপাতত চিহ্নিত হয়ে থাকলেও এর সুফল পান তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় তিনি ছিলেন উপ-সেনাপ্রধান। পরে পদোন্নতি পান। সিপাহী-জনতার কথিত বিপ্লব তার হাতে তুলে দেয় রাষ্ট্রক্ষমতা। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ৭ নভেম্বর পর্যন্ত জিয়ার ভূমিকাও কি স্পষ্ট?

নাকি তিনি নিছক সৌভাগ্যবান? জিয়ার রেখে যাওয়া বিএনপি অবশ্য তাকে এভাবেই চিত্রিত করে। এখন আওয়ামী লীগের একাংশের জাসদবিরোধী বক্তব্যে তারা নতুন করে সুযোগ পেয়েছেন জিয়াকে নির্দোষ হিসেবে তুলে ধরার।

এটা তো ঠিক, মোশতাক বা তাহেরের চেয়ে জিয়া বেশি করে আক্রান্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগ দ্বারা। তার কারণটা রাজনৈতিক। জিয়া ক্ষমতা সংহত করে নিজস্ব দল গঠন ও একটি রাজনৈতিক ধারার জন্ম দিয়ে গেছেন, যেটা স্পষ্টতই আওয়ামী লীগবিরোধী। এদিকে তাহের 'নিহত' হয়েছেন জিয়া সরকারের হাতে আর জাসদ হয়েছে বিধ্বস্ত। অনেক পরে এর একাংশ হয়েছে আওয়ামী লীগের সহযাত্রী। আর অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে মোশতাক তো চলে গিয়েছিলেন একেবারে সাইড লাইনে। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানকারীরা চাইলে তাকে হত্যাও করতে পারতেন।

যাহোক, এ সব বলার অর্থ হল কাউকে বা কোনো পক্ষকে এককভাবে দায়ী করে লাভ নেই। ইতিহাসে এর ভিত্তি মিলবে না। শুধু জাসদ বা বামের একাংশকে দায়ী করে নিজেদের হাত ধুয়ে ফেলাও যাবে না। অগ্রজপ্রতিম এক সাংবাদিক যথার্থই লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলে সাত খুনের ঘটনা জাসদ বা গণবাহিনী ঘটায়নি। ওটা ছিল মুজিববাদী ছাত্রলীগের অন্তর্কলহের পরিণতি। পদ, সুবিধা ও অর্থ নিয়ে এমনতরো অন্তর্কলহ কি এখন আরও বেড়ে ওঠেনি? হঠকারী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি যখন মাঠে পর্যুদস্ত, তখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ।

দল ও সরকারের পক্ষে কে কী বলছেন বা বলবেন, সে বিষয়েও কোনো রকম শৃঙ্খলা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। দলীয় সভানেত্রী পারেন একজন মুখপাত্র নিয়োগ করতে। তাহলে এমন প্রশ্নও উঠবে না যে, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বা তাঁর হত্যাকাণ্ডের সময় জাসদের ভূমিকার বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যটি দল না ব্যক্তির। তবে ব্যক্তি বা মহলবিশেষের বক্তব্য হলেও আর ঢালাওভাবে রাখা হলেও ওটা ভিত্তিহীন নয়। হঠকারী রাজনীতির স্বাভাবিক পরিণতিতেই যে জাসদ ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়ে এখন উল্টো আওয়ামী লীগের সঙ্গে এসে মিশেছে, তার নেতারা অবশ্যই পারেন সব কিছু স্বীকার করতে।

সত্য স্বীকারে দোষ নেই। অস্বীকারেই বরং অসুবিধা।