একুশে আগস্টের নেপথ্যের রাজনীতি

বিজন সরকার
Published : 21 August 2015, 04:22 AM
Updated : 21 August 2015, 04:22 AM

একটি তারিখ। একুশ। বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের উগ্র ও ফ্যাসিস্ট আদর্শটি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর অন্যায় অন্যায্য হামলা চালিয়েছিল। ঠিক বায়ান্ন বছর পর, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশে একই আদর্শের সন্তানরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সকল নেতাদের হত্যার প্যাকেজ নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তারা আংশিক সফলও হয়েছিল। চব্বিশ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন সে ঘটনায়। আহত হন পাঁচ শতাধিক। তবে মূল টার্গেট, তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলটির নীতিনির্ধারকসহ উচ্চ পর্যায়ের সকল নেতা কাকতালীয়ভাবে প্রাণে বেঁচে যান।

মাসের ক্ষেত্রে আরেকটি সমাপতন বেরিয়ে আসে। সেটি হল আগস্ট। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জন্মদাতাসহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানি ভাবধারার আদর্শিক গোষ্ঠীগুলির একাত্তরের পরাজয়ের প্রথম প্রতিশোধ। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ওই আদর্শ রাজনৈতিক জয় পায়। তারা দীর্ঘ দুদশক দেশের শাসনতন্ত্রের আদর্শিক স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছিল। একই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আবারও ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হামলা করা হয়।

১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল অভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বহুমাত্রিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য। হামলার লক্ষ্যও অভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট। ১৫ আগস্টের কুশীলবেরা কেবল বঙ্গবন্ধুকে নয়, তাঁর রাজনৈতিক আদর্শও হত্যা করতে চেয়েছিল। কারণ তারা জানত, বঙ্গবন্ধু এক অদম্য ও অপ্রতিরোধ্য সর্বজনীন চেতনার শারীরিক প্রতিমূর্তি হিসেবে নিজেকে আসীন করেছিলেন। তাঁকে না সরালে পাকিস্তানি ভাবধারায় রাজনীতি বাংলাদেশে নির্মাণ অসম্ভব।

২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডেও ১৫ আগস্টের আদর্শিক কুশীলবরা জড়িত। এ হামলার মাস তিনেক আগে কানাডা-প্রবাসী বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীকে বাংলাদেশ থেকে ডব্লিউ সিরিয়াল নম্বরের একটি পাসপোর্ট পাঠানো হয়। ২০০৪ সালের দিকে দেশের একটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ডব্লিউ সিরিয়ালের ২৪০টি পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়েছিল। সে সময় পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র তারেক রহমানের বিশস্ত, শমসের মবিন চৌধুরী।

আবার ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলির সম্পৃক্ততার বিষয়টি দলিল-দস্তাবেজসহ প্রমাণ করা যায়নি বা হয়নি। গোয়েন্দা অনুসন্ধান এবং একাডেমিক গবেষণার মাধ্যমে বিষয়টি বেরিয়ে আসত। ঘটনা দুটির পরের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে অবস্থাগত ও ধারণাগতভাবে এটি আন্দাজ করা যায় যে, দুটি ঘটনায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা একই সমান্তরালে অবস্থান করছিল।

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পশ্চিমা দেশগুলি মুশতাক সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। তখন এ অঞ্চলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলায় উগ্র ইসলামিক রাজনীতি প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে পরপর দুটি সামরিক শাসককে বিভিন্নভাবে সমর্থন ও প্রণোদনা দেওয়ার বিনিময়ে মার্কিনিরা নিজেদের পুঁজিবাদী স্বার্থ-সহায়ক রাজনৈতিক ইসলামের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে ভালোভাবেই সফল হয়।

একইভাবে, ২১ আগস্টের হামলার পরে ও আগে দেশে জঙ্গি-উত্থানের কারণে জামায়াত-বিএনপি জোটকে চাপে ফেলে চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে তাইওয়ানকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অফিস খুলতে সহযোগিতা করে তারা। যদিও পরে চীনের তীব্র আপত্তির মুখে জোট সরকার অফিসটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে তিনটি স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। প্রথমত, ১৫ আগস্ট কেবল বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছিল; অপরপক্ষে ২১ আগস্ট টার্গেটে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাসহ দলের উচ্চ পর্যায়ের সকল নেতা। দ্বিতীয়ত, আপাতদৃষ্টে ১৫ আগস্টের অপারেশন পরিচালিত হয়েছিল শৃঙ্খলিত বাহিনীর কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা দ্বারা, কিন্তু ২১ আগস্টের অপারেশনে ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের শক্তিশালী একটি অংশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে সমর্থিত ও নির্দেশিত থার্ড পার্টি জঙ্গি-গোষ্ঠী। তৃতীয়ত, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়; আর ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সময় জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল।

২১ আগস্টের মূল উদ্দেশ্য সফল হলে আজকের বাংলাদেশ কোন জায়গায় থাকত সে প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন প্যারামিটারে চিত্রায়িত হতে পারে। বিএনপির বলিষ্ঠ একটি অংশ শেখ হাসিনাবিহীন দুর্বল আওয়ামী লীগকে খেলার মাঠে রেখে রাজনৈতিক খেলাটি খেলতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানি ভাবধারা এবং উগ্র-বান্ধব রাজনীতি দুদশকের জন্য যেমন ব্রেক-থ্রু পেয়েছিল, ঠিক একই ধরনের আরেকটি পাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই থার্ড-পার্টি জঙ্গি-গোষ্ঠীকে ২১ আগস্টের বোমা হামলায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দেয় তারা।

বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো, সুবিধাবাদী বিএনপি এবং ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মীয় উগ্র-গোষ্ঠীর অবস্থান, আঞ্চলিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশের ভূমিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় পশ্চিমাদের বহুমুখী পুঁজিবাদী স্বার্থের সুরক্ষার বিষয়গুলির চরিত্র কেমন হত, সেগুলি ভাবতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতি উপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলির আচরণ এবং রাজনৈতিক মানসিকতা একাত্তর-উত্তর ও মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন ছিল, একাত্তর-পরবর্তী ১৯৭৫ ও ২০০৪ সালেও একই। বর্তমানে এবং অদূর ভবিষ্যতেও তা একই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

এর মৌলিক কারণ হল, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শটি পশ্চিমাদের আচরণ ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে কেবল অসমঞ্জস নয়, বিপরীতমুখীও বটে। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের প্রতি পশ্চিমাদের, বিশেষ করে মার্কিনিদের মনোভাব একটি লিনিয়ার রেখা অনুসরণ করে।

অনুমানযোগ্য, শেখ হাসিনাবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক চিত্রটি বর্তমানের ইরাক, লিবিয়া অথবা পাকিস্তানের রূপ নিত। সীমাহীন অরাজকতা বিরাজ করত সমাজের সর্বস্তরে। দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি মানুষকে অসহিষ্ণু করে উগ্র ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার ছাদে সাধারণ মানুষের মনন গঠন হলে রাষ্ট্রের মূলনীতিতে উগ্র দলগুলির রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার সন্নিবেশ ঘটানো হত। তা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিতেও বাধ্য হত শাসক গোষ্ঠী। সামান্য আদর্শগত মতপার্থক্যের কারণে সকাল বিকাল বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে হত্যার সংস্কৃতিও গড়ে ওঠার আশঙ্কা ছিল।

অন্যদিকে, জেনারেল জিয়াউর রহমান ও এরশাদের মতো রাজনৈতিক ইসলামকে নানাবিধ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রণোদনা দিয়ে সমাজের মূল নিউক্লিয়াসে নিয়ে আসা তখন সহজ ছিল। বিতর্কিত ব্লাসফেমি আইনের মতো আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য হত রাষ্ট্র। আর এ্ আইনের বলে যখন-তখন মানুষ হত্যা করার জন্য উগ্র-গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করত। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নেমে আসত মধ্যযুগীয় বর্বরতা। উদার গণতান্ত্রিকমনাদের উপর চলত নির্যাতনের বুলডোজার।

২১ আগস্টের টার্গেট বাস্তবায়ন হলে বিএনপির রাজনীতি নিদেনপক্ষে দুদশক নিরাপদ থাকত। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ একটি দীর্ঘমেয়াদী সাংগঠনিক বিপর্যয় ও মেধার সংকটে পড়ত। দেশের মানুষের কাছে সুবিধাবাদী বিএনপি ছাড়া বিকল্প থাকত না। জামায়াত-বিএনপি জোট ২২ জানুয়ারি যে বিতর্কিত ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিল, ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সে রকম একটি নির্বাচন হত। এমন পরিস্থিতিতে পঁচাত্তরের খুনিরা আবারও সংসদ সদস্য হয়ে জাতিকে নসিহত দিত।

বাংলাদেশ পুলিশ ২১ আগস্টের ঘটনার সূত্র ধরে মজিদ বাট নামে এক পাকিস্তানিকে গ্রেফতার করেছিল। তার তথ্য মতে, শেখ হাসিনার হত্যা নিশ্চিত করতেই পাকিস্তানে তৈরি আর্জেস ৮৪ মডেলের দুশ গ্রেনেড পাকিস্তান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আনা হয়; এ সব গ্রেনেড কেবল যুদ্ধের মাঠে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপির তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টুর ভাই মুফতি মাওলানা তাইজউদ্দিন এই চালান থেকে একশ গ্রেনেড ভারতের জম্মু-কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিদের কাছে হস্তান্তর করে।

২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অপারেশনাল কমান্ডার আবু জান্দালকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্য মতে, ১৫ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলাম নামের একজনকে র‍্যাব সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা থেকে গ্রেফতার করে। ২১ আগস্ট যে ধরনের আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়, তার কাছ থেকে একই ধরনের ৪১টি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দার সহযোগিতা ছাড়া পাকিস্তানে তৈরি একটি চালান ভারত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসবে, তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

২০০১-২০০৬ সময়কালে জঙ্গি-উত্থানের পিছনেও পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছিল। আফগানিস্তানে মার্কিনিদের আক্রমণের ফলে জঙ্গিদের কাছে আফগানিস্তান অনিরাপদ হয়ে উঠেছিল। তখন বিদেশি অনেক জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকেই পরিচালিত হত বলে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে খবর এসেছিল।

বাংলাদেশে জঙ্গিদের উত্থান ঘটলে কেবল পাকিস্তানের ঐতিহাসিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে, বিষয়টি তা নয়, এতে তাদের বিশাল কৌশলগত জয়ও হবে। চির-বৈরী ভারতকে পশ্চিম ফ্রন্টের ন্যায় পূর্ব ফ্রন্টের সীমান্তে ব্যস্ত রাখা যেত তাতে। ভারতে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে মুম্বাই হামলার মতো বড় ধরনের অপারেশন অনায়াসেই পরিচালনা সম্ভব ছিল তাদের পক্ষে।

পাকিস্তানের জঙ্গি-নির্ভর এই কৌশল আবার মার্কিনিদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের অনুকূলে। ভারত যদি তার উভয় ফ্রন্টে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, মার্কিনিরা তাহলে এ অঞ্চলে পুঁজিবাদী স্বার্থ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বহুদূর এগিয়ে যাবে। কূটনৈতিক দেন-দরবারে পাবে বাড়তি সুবিধা। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কটি কৌশলগত। যেহেতু চীন ভারত দুই নব্য পরাশক্তি, তাই তাদের উত্থান ঠেকানোর জন্য এ অঞ্চলে বহুমাত্রিক কৌশল আমেরিকা প্রয়োগ করে যাচ্ছে।

চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কটি একশ বিলিয়নের কাছাকাছি। দুদেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ থাকলেও উভয় দেশই আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে ফেলতে চায়। সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেয়ে উভয় দেশ নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য বৃদ্ধির পক্ষে। ভারত-চীনের এই অবস্থান আমেরিকার জন্যও স্বস্তিদায়ক নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কটি ভারতও কৌশলগতভাবে মূল্যায়ন করে। সিরিয়ার বিরুদ্ধে হামলার সিদ্ধান্তে ভারতের সায় পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ভারতের বাণিজ্যিক অংশীদার সৌদি আরব সিরিয়ায় হামলা করতে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রেকে। ভারত সৌদি আরব থেকেই সবচেয়ে বেশি জ্বালানি আমদানি করে থাকে। ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের নানাবিধ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায়ও ভারতকে পাশে পায়নি তারা। আন্তর্জাতিক সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এভাবে দেশটি বড় খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। একই সঙ্গে সৌদি আরব, ইরান ও ইসরাইলের মতো তিনটি দেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। চীনের সঙ্গে ভারতের সামগ্রিক সম্পর্কও আমেরিকার আকাঙ্ক্ষার সমান্তরাল নয়।

অপরদিকে, পাকিস্তানি রাজনৈতিক আদর্শ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনাটি ঐতিহাসিকভাবেই আমেরিকার পুঁজিবাদ সম্প্রসারণ-বান্ধব। মার্কিনিরা আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকাকে বন্ধুত্বের মর্যাদা দেয়। কারণ নিজ দেশের সম্ভাব্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে ফেলে অন্য দেশকে সহযোগিতা করার নজির তেমন নেই। তাই লাদেনকে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের ভিতর হত্যার পরও দেশটিকে লোকদেখানো হুঙ্কার দেওয়া ছাড়া তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাদের। বর্তমান বাস্তবতায় বিশ্বব্যাপী জঙ্গি উত্থানের ফলে মার্কিনিদের কিছুটা ইমেজ সংকটে থাকায় পাকিস্তানের সঙ্গে একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে মাত্র। এ অঞ্চলে পাকিস্তানকে নিয়ে মার্কিনিদের প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।

বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগের মতো দূরদর্শী রাজনৈতিক দলকে দাবিয়ে রাখা যায়, পশ্চিমাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ অনাসায়েই সম্প্রসারণ করা যাবে। আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গিয়েই বাংলাদেশের জন্মের নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন দেশকে ক্রমশ স্বনির্ভর করে তুলছে। দেশের ভিতরকার জঙ্গি সমস্যা শক্ত হাতে মোকাবেলা করছে। ভবিষ্যতে আরও ১৫ বা ২১ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটানোর রাজনৈতিক বাস্তবতা সে জন্যই রয়ে গেছে। তাই দরকার সতর্কতা। পাশাপাশি দরকার বিশ্বে একটি অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউজ হয়ে ওঠার বর্তমান প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।