রাষ্ট্রের কাঠামোয় অস্তিত্বহীন যাদের জীবন

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 11 August 2015, 07:54 AM
Updated : 11 August 2015, 07:54 AM

প্রথমেই বলে নেওয়া সততার পরিচয় হবে যে, আমি যাদের নিয়ে এ নিবন্ধ লিখছি, বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে তাদের কোনো 'অস্তিত্ব' নেই। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬ (২)-এ আমরা দেখতে পাই, 'বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি', [সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১] যার অর্থ দাঁড়ায় যারা বাঙালি নন বা বাঙালি জাতির লোক নন অর্থাৎ যারা আদিবাসী বা সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন, যেমন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খুমি, খেয়াং, মনিপুরি, সাঁওতাল, গারো এরা কেউ বাংলাদেশের নাগরিক নন।

এভাবেই, সাংবিধান-সম্মতভাবে বাংলাদেশ একটি 'এক জাতি, এক রাষ্ট্র' জাতীয় অদ্ভুত একরৈখিক জাতীয়তাবাদী দর্শনের ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেছে। এভাবেই, বাংলাদেশে বসবাসকারী ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন (আদমশুমারী ২০১১ হিসাব অনুযায়ী) আদিবাসী মানুষকে তার সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

আমাদের কোনো রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে 'আদিবাসী' নামে কোনো মানুষের 'অস্তিত্ব' নেই। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের বলা হয়েছে, 'এথনিক পপুলেশন'। আর পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন জনগোষ্ঠীকে 'উপজাতি', 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী', 'ক্ষুদ্র জাতিসত্তা' প্রভৃতি শব্দ দিয়ে নির্দেশ করা হয়েছে।

এই যে প্রায় ১৬ লাখ আদিবাসী জনগণকে রাষ্ট্র সাংবিধানিক এবং আইনি কাঠামোর ভেতর দিয়ে অস্তিত্বহীন করে রেখেছে, এর মধ্য দিয়ে মূলত একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং একটি জাতি হিসেবে বাঙালির মেজরিটারিয়ান তথা সংখ্যাগুরুত্বের আধিপত্যবাদী মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে। তাছাড়া, এই যে আদিবাসী মানুষের অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সেটা স্বীকার করে না এটি বলে দেয় রাষ্ট্রের সঙ্গে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক এবং সে সম্পর্কের বিবর্তিত কাঠামোর স্বরূপ কী।

বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র হিসেবে যে দর্শনের উপর ভিত্তি করে জন্ম নিয়েছিল ১৯৭১ সালে, জন্মোত্তর সে দর্শন জাতি-নির্মাণের একরৈখিক প্রকল্পে আর ধারণ করেনি। সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন বা আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে বাঙালি মেজরিটারিয়ান জাতি-গঠনের প্রক্রিয়ায় রীতিমতো সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতরেই 'অস্তিত্বহীন' করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাধের কাঠামোয় একটি আধুনিক ও উদার-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে উঠবার বিপুল সম্ভাবনা এ রকম সংকীর্ণ চিন্তার কারণে বেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশের আদিবাসীদের 'অস্তিত্ব' নিয়ে লুকোচুরি চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি জাতিসংঘের মাধ্যমে ২০০৭ সালেই মোটামুটি মিটমাট হয়ে গেছে। দীর্ঘ আলোচনা, বিতর্ক, প্রায় দুই দশকের নানান কার্যক্রমের বিচার-বিশ্লেষণের ভেতর দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে জাতিসংঘে প্রথম আদিবাসী বিষয়ক আলোচনা শুরু হয় এবং এর অস্তিত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়।

প্রায় এক দশকের দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে প্রতি বছরের ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয় (রেজ্যুলেশন ৪৯/২১৪)। এ তারিখ নির্ধারণের প্রধান কারণ ছিল, ১৯৮২ সালের এ দিনেই জাতিসংঘ সর্বপ্রথম আদিবাসীদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯৯৫-২০০৪ 'প্রথম আদিবাসী দশক' এবং ২০০৫-২০১৪ 'দ্বিতীয় আদিবাসী দশক' ঘোষণা করা হয়।

প্রথম আদিবাসী দিবসের লক্ষ্য ছিল আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, ভূমি, পরিবেশ, উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শক্তিশালীকরণ। দ্বিতীয় আদিবাসী দিবসের লক্ষ্য ছিল আদিবাসীদের জীবনের নানান রিসোর্সের কার্যকর প্রয়োগ ও সম্মানের জায়গা নিশ্চিতকরণের জন্য অংশগ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ।

অবশেষে, ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আদিবাসী অধিকার সনদ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পাস হয়। যেখানে চারটি দেশ (আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড) এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং ১১টি দেশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে।

দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশ সে ১১ দেশের একটি। তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে ছিল মিলিটারি-সমর্থিত সরকার যা 'ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন' সরকার নামে পরিচিত। তখন সেই সরকারের পক্ষ থেকে একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল যে, এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জনগণের সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে, জাতিসংঘের এ ঘোষণায় স্বাক্ষর না করলেও, প্রতি বছর অত্যন্ত ধুমধাম করে ৯ আগস্ট রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস' পালন করে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতেও আদিবাসীদের 'আদিবাসী' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২০০৮, ২০০৯ এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী বিভিন্ন বাণী দিয়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনে দেশের আদিবাসী জনগণকে নানানভাবে উৎসাহিত করেছেন। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল আদিবাসীদেরকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুভেচ্ছা জানান।

কিন্তু ২০১১ সালে এসে কোনো এক 'অজানা' এবং 'রহস্যময়' কারণে গণেশ উল্টে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে হঠাৎ ঘোষণা আসে যে, বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। জাতিসংঘের অধিবেশনে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপুমনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, 'বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই।' কেন এবং কী কারণে তৎকালীন সরকার এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। তবে একটি প্রেস কনফারেন্সে দিপু মনি বলেছিলেন, ''বাংলাদেশে যদি কোনো আদিবাসী থেকে থাকে তবে সেটা হচ্ছে বাঙালি।''

এ বিষয়ে আমি অন্যত্র লিখেছি যে, আমার মনে হয় রাষ্ট্র মূলত 'আদিবাসী' আর 'আদি বাসিন্দা'র মধ্যকার তফাৎ কোথায় সেটা অনুধাবন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। 'আদিবাসী' আর 'আদি বাসিন্দা' যে এক নয় এটা নিয়ে তেমন সিরিয়াস রাজনৈতিক ও একাডেমিক বিতর্কও লক্ষ্য করিনি। এখানে মনে রাখা জরুরি যে, 'ইন্ডিজেনাস' শব্দের অর্থ 'আদিবাসী' যেটা একটি সাংস্কৃতিক ক্যাটেগরি; আর 'আরলিয়েস্ট মাইগ্রেন্টস' অর্থ হচ্ছে, 'আদি বাসিন্দা' যা একটি ডেমোগ্রাফিক ক্যাটেগরি যা বসতি স্থাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

হাজার বছরের বাঙালির নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস বলে, এতদঞ্চলের আদি বাসিন্দারা কোনো কালেই বাঙালিও ছিলেন না। তথাপি যদি ধরেও নিই যে, আদিবাসীদের আগমনের পূর্বেই এদেশে বাঙালিদের বসতি ছিল অর্থাৎ বাঙালিরাই এতদঞ্চলের আদি বাসিন্দা, তাতে এটা প্রমাণিত হয় যে, বাঙালিরা এতদঞ্চলের 'আদি বাসিন্দা' কিন্তু 'আদিবাসী' নন। কেননা, সাধারণত কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অনুপ্রবেশকারী বা দখলদার জনগোষ্ঠীর আগমনের পূর্বে যারা বসবাস করত (এটা ঔপনিবেশিকতার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পৃক্ত যা আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশের ক্ষেত্রে নয়, কেননা এতদঞ্চলের ইতিহাস একে সমর্থন করে না) এবং এখনও করে; যাদের নিজস্ব ও আলাদা সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে; যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগণিত, তারাই আদিবাসী।

অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে বসবাসকারী এক দল জনগোষ্ঠী যারা সাংস্কৃতিকভাবে সংখ্যালঘু, যাদের নিজস্ব একটি সংস্কৃতি আছে যা জনতাত্ত্বিক সংখ্যাগুরুদের সংস্কৃতি থেকে স্বতন্ত্র এবং যাদের একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রয়েছে এবং যারা রাষ্ট্রের কাঠামোয় সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক তারাই আদিবাসী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে।

এ বিবেচনার ফ্রেমওয়ার্কে বাংলাদেশে বসবাসকারী বাঙালি ছাড়া চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খেয়াং, খুমি, ম্রু, লুসাই, পাংখোয়া, চাক, মণিপুরি, হাজং, সাঁওতাল, ওরাং, পাত্র, জৈন্তা, খাসিয়া প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী আদিবাসী হওয়ার দাবি রাখে। অতএব, বাঙালিরা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠন করেছে এবং তারা বর্তমানে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে এদেশের আধিপত্যশীল শ্রেণি। ফলে তারাই রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত, যেখানে সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘু জনগণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক অবস্থানে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা নিয়ে প্রান্তিক অবস্থানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে যদি বিশ্বব্যাপী আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশে তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়? রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আমরা এখনও পাইনি। কিন্তু যখন বিশ্বব্যাপী আদিবাসী দিবস উদযাপিত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের ঘোষণা অনুযায়ী আদিবাসীদের 'স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং কল্যাণ চিন্তা' নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক করছে, তখন বাংলাদেশের আদিবাসীরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রের কাঠামোতে এবং সাংবিধানিক সীমানার মধ্যে নিজের জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছেন।

২০১৫ সালের বিশ্ব আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, '২০১৫ উত্তর উন্নয়ন লক্ষ্য: আদিবাসী জাতিসমূহের স্বাস্থ্যসেবা এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণ'। যেখানে মূলত সাতটি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে:

১. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আদিবাসী মানুষের যথাযথ স্বীকৃতি;

২. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, বিশেষ করে জমি, চাষযোগ্য ভূমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা নিশ্চিতকরণ;

৩. শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় পর্যায়ে আন্তঃসাংস্কৃতিক বা স্বতন্ত্র সংস্কৃতি-বান্ধব নীতি প্রনয়ণ;

৪. আদিবাসী নারী, শিশু, যুবক এবং আদিবাসী-প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক এ রকম বিশেষ বিষয় এবং নীতিগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ;

৫. সংস্কৃতিকে টেকসই উন্নয়নের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের আদিবাসী দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ভুক্তিকরণ;

৬. আদিবাসীদের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তাদের সম্মতি এবং আগে থেকেই অবহিতকরণের প্রতি গুরুত্বারোপ;

৭. সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন এজেন্ডায় এবং পরিকল্পনায় আদিবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।

বাংলাদেশের ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে শত শত বছর ধরে বাস করছে, অথচ সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে তাদের 'অস্তিত্ব' নেই, এটা কেবল বাংলাদেশের আদিবাসী মানুষগুলোরই নয়, বরঞ্চ বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর জন্যও লজ্জার। এক ধরনের উদ্ভট স্বাজাত্যবোধের প্রতিফল হিসেবে সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অস্তিত্বহীন করে রাখবার মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদ আছে, কিন্তু একটি উদার-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নেই।

তাই, আজকের 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৫'-এ আমাদের সকলের দাবি হোক বাংলাদেশের আদিবাসীদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দান যাতে 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৬' আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল আদিবাসী-বাঙালি মিলে একত্রে উদযাপন করতে পারি।

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন: লেখক ও গবেষক। অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।