বাংলাদেশে আদিবাসীদের প্রান্তিকতা

সাদেকা হালিম
Published : 9 August 2015, 04:32 AM
Updated : 9 August 2015, 04:32 AM

৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করছে না। 'ক্ষুদ্র জাতিসত্তা' কিংবা 'আদিবাসী জনগোষ্ঠী'– যে নামেই অভিহিত করি না কেন, বিশ্বের দেশে দেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তাতে সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী ছাড়াও ৫৪টির মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠী স্মরণাতীতকাল ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে বসবাস করে আসছেন। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ৩৫ জেলায় বসবাস করেন। এর মধ্যে তিনটি পার্বত্য জেলা– রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ও বান্দরবানে ১৩ জাতির মানুষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বসবাস করছেন। আয়তনে এ তিন জেলা দেশের প্রায় এক দশমাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত; এর বাইরে সমতলের ৩০টিরও বেশি জেলায় আদিবাসী মানুষরা বসবাস করেন।

আজ অবধি তাদেরকে রাজনৈতিক অস্ব্বীকৃতি তথা পরিচয় সংকটের সঙ্গে অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো 'নিজভূমে পরবাসী' হিসেবে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আদিবাসীদের রাজনৈতিক পরিচয় সংকট ঐতিহাসিকভাবে শাসকগোষ্ঠীর উদাসীনতা, উগ্র বাঙালি কিংবা উগ্র বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ইসলামিক সম্প্রসারণবাদ, সর্বোপরি সংবিধানে জাতীয়তা, ভাষা, ধর্ম, নাগরিকত্বের প্রশ্নে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে উপেক্ষিতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে নিহিত।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আদিবাসীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সকল জাতি-গোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের বিষয় এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদদের দ্বারা তথা গণপরিষদে উপেক্ষিত হয়েছিল। সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহে ১১, ১৫, ১৯(১), ২০(১), ২৮(১), ২৯(২), ৪১, ৪২ পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, এদেশে বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠী বসবাস করছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে ২০১১ সালে আদিবাসীদের আকাঙ্ক্ষা ও দাবি উপেক্ষা করে সংবিধানে ২৩(ক) ধারার আদিবাসী পরিবর্তে 'উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্যদিকে ৬(২) ধারায় বলা হচ্ছে, 'বাংলাদেশের জনগণ জাতিতে বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবে।'

আদিবাসীরা স্বভাবতই এটি গ্রহণ করেননি। উক্ত অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কেবল তাদের জাতিগত পরিচয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়নি, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী জাতিসমূহকে বাঙাণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সরকার বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের কল্যাণার্থে 'ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০' জারি করেছে। যদিও এ আইন আদিবাসীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করে, কিন্ত এটি কেবল ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়– আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে ভূমির উপর অধিকার এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি।

বাংলাদেশে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা মূলত ভূমি ও বনকেন্দ্রিক। তাাদের সংস্কৃতিতে ভূমি হচ্ছে সমষ্টির, ব্যক্তিমালিকানা নয়। তাদের ভূমি-বন মালিকানা বিশেষত 'সর্বজনীন সম্পদ- সম্পত্তি মালিকানা অধিকার' বিষয়ে আমাদের জ্ঞান যথেষ্ট মাত্রায় সীমিত। বংশপরম্পরায় ভোগদখলের সুত্রে সংশ্লিষ্ট জমির উপর তাদের এক ধরনের ঐতিহ্যগত অধিকার স্থাপিত হয়েছে। অথচ যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের আদিবাসীরা তাদের ভূমি হারিয়েছে। তাদের ভূমিচ্যুত করার প্রক্রিয়া ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় পরোক্ষভাবে ব্রিটিশ প্রণীত ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি এখনও কার্যকর। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সকল সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দু ভূমি, কিন্ত এখানকার আদিবাসীদের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে মূলত প্রথাগত ভূমি বেদখলের মাধ্যমে। সেখানে ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মিত হবার পর ৫৪ হাজার একর জমি বাঁধ ও কৃত্রিম হ্রদের কারণে নষ্ট হয়ে যায়; শত শত আদিবাসী ভূমিহীন হয়ে পড়েন।

তাছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালের 'পপুলেশন ট্রান্সফার' প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রায় ৪ লাখ বাঙালি ভূমিহীনকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এনে পার্বত্য এলাকার জুম্মদের ভোগ-দখলীয় ও রেকর্ডিয় জমির উপর বসতি দেওয়া হয়। তৎকালীন সরকারের এই নীতি আদিবাসী-অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যা আরও জটিল করে তুলে। পার্বত্য আদিবাসীদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম দমনের কৌশল হিসেবে সরকার উদ্যোগটি নিয়েছিল।

১৯৭৯-১৯৮৫ সালের সেটেলমেন্ট প্রোগ্রামের অর্থনৈতিক প্রভাব আদিবাসীদের আরও প্রান্তিক করে তোলে। ১৯৭৯ সালে ১৯০০ সালের পার্বত্য রেগুলেশন সংশোধনী দ্বারা 'বহিরাগতদের' সীমিত আকারে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্তির সুযোগ করে দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নিপীড়ন এবং ষাট দশকে কাপ্তাই বাঁধের ফলে আপন জন্মভূমি থেকে উদ্বাস্তু পাহাড়ের এক লাখ প্রান্তিক জাতির মানুষ জাতিগত অধিকার আদায়ের যে সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ নেন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (যিনি বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি নামে যা পরিচিত) স্বাক্ষরের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩টি জুম্ম জাতিসমূহের জন্য ঐতিহাসিক স্ব-শাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই চুক্তি উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিহার করে কিছুটা হলেও বহুত্ববাদের স্বীকৃতি দেয় এবং পাহাড়িদের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য এলাকার স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি প্রদান করে।

চুক্তিটির জন্য পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার' লাভ করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সে সময়ের সশস্ত্র বিরোধের রাজনৈতিক সমাধান নিহিত রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নিকট চুক্তিটি বস্তুনিষ্ঠভাবে বাস্তবায়নের প্রত্যাশার মাত্রাও বেশি।

পার্বত্য তিন জেলার ভূমি-বিরোধ ও নিস্পত্তিকল্পে ভূমি কমিশন ১৯৯৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক আগে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি না করে এবং অভ্যন্তরীন পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ও চুক্তি-পরবর্তী ভারত থেকে প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থীদের তাদের জমি প্রত্যার্পণ না করে, ভূমি কমিশন ভূমি মালিকানা চূড়ান্তকরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না।

সমতলের আদিবাসীরাও বাঙালি কর্তৃক ভূসম্পত্তির জবরদখলের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশে সমতল এলাকার আদিবাসীদের জমিদখলের তুঙ্গ সময়কাল, ১৯৭১ থেকে ১৯৮০– যদিও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হলে আদিবাসী জমি দখল ও ১৯৬৫এর পাক-ভারত যুদ্ধের পর থেকে শত্রু-সম্পত্তির নামে ব্যাপক মাত্রায় আদিবাসী জমিদখলের পর্বটি শুরু হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হবার পরও শত্রু-সম্পত্তির নাম বদলে অর্পিত সম্পত্তি নামকরণের মাধ্যমে একইভাবে আদিবাসীদের জমিদখলের তৎপরতা চলতে থাকে।

১৯৪০এর দশকের শেষ বছরগুলোয় ভারত উপমহাদেশের অন্যতম সাম্যবাদী কৃষক আন্দোলন তেভাগা আন্দলনে হাজং, গারো ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ করেন। তাই তদানীন্তন মুসলীম লীগের পাকিস্তান সরকার কমিউনিটি জমি দখলের নামে প্রচুর আদিবাসী জমি দখল করে। সমতলে প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ (সেকশন-৯৭) বলবত থাকার পরও এর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত ভূমি হারাচ্ছেন। এছাড়া সরকারি ভূমি অফিসে দুর্নীতি, ঘুষ দিতে বাধ্য করা, ঘুষ না দিলে জমি খাস করে দেওয়া, সঠিক বিচার থেকে বঞ্চনা ইত্যাদি কারণে সমতলের আদিবাসীরা জমিজমা হারিয়ে ক্রমাগত নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা গ্রন্থে (Life and Land of Adivasish, 2009) দেখা যায়, বাংলাদেশের সমতল অঞ্চলের ১০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী এ পর্যন্ত তাদের ২০২,১৬৪ একর জমি হারিয়েছেন। এরা হলেন, ডালু, গারো, হাজং মাহাতো, উরাও, পাত্র, খাসিয়া, পাহান, রাখাইন, ও সাঁওতাল। বেদখলকৃত জমির বর্তমান বাজার দর ৬২.৭ বিলিয়ন বাংলাদেশি টাকা বা ০.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে এবং সমস্যা পার্বত্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন হওয়ায় সমতলের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন অপরিহার্য।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগণ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যথার্থ নাগরিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বর্তমান শিক্ষানীতিতে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভ নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্ত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসব আইনের বাস্তবায়ন প্রশ্নবিদ্ধ। মূলত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষার ব্যবহার না হওয়া এবং অর্থনৈতিক প্রান্তিকতা। আরও যেসব কারণ চিহ্নিত করা যায় সেগুলো হল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব, সেখানে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতি সাম্প্রদায়িক মনোভাব, নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষার্থীদের আগ্রহের অভাব ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য যে সংরক্ষিত কোটা আছে তাও পূরণ হয় না।

বিভিন্ন গবেষণায় আরও প্রতীয়মান হয় যে, আদিবাসী নারীরা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হন। ২০১৪ সালের আগস্টে আদিবাসী নারী নেত্রী বিচিত্রা তিরকি নিজের কৃষিজমি চাষ করার সময় ধর্ষণ ও শারীরিক আক্রমণের শিকার হন, তার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়; কিন্ত অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রভাবে আইনি প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়। এর মূলে ছিল ভূমি-বিরোধ। ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪এ কাপ্তাইয়ে স্কুলছাত্রী ছবি মারমাকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়।

পার্বত্য এবং সমতলে ভূমি হারানোর ফলে অধিক সংখ্যক আদিবাসী নারী বাজার অর্থনীতিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন, কিন্ত সঠিক শ্রমমূল্য থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। বিভিন্ন বৈষম্য এবং সহিংসতার ঘটনার বিচারের দাবি আদিবাসী নারী সংগঠনগুলো থেকে উপস্থাপিত হলেও মূলধারার আদিবাসী নেতৃবৃন্দ এখন পর্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেননি। উপরন্তু, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের একটিতেও কোনো আদিবাসী নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশ অবশ্যই একটি বহু জাতি, বহু ধর্ম, বহু ভাষাভাষীদের রাষ্ট্র। সংবিধানেও এর স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। যে কারণে সংবিধানে দেশের নাম 'পিপলস রিপাবলিক' বলা হয়েছে, বাঙালি কিংবা ইসলামিক রিপাবলিক বলা হয়নি। তাই এ সত্য উপলব্ধি করে এদেশের চৌহদ্দির মধ্যে বসবাসকারী আদিবাসীকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান খুবই জরুরি।

আদিবাসী-বান্ধব একটি জাতীয় পলিসিও প্রয়োজন। আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে ভারতে আদিবাসী কমিশন হয়েছিল; তখন মুক্ত ভারতের বয়স মাত্র ১২ কী ১৩ বছর। স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরও আমরা অনেক পিছিয়ে। একক জাতিসত্তার উগ্র দাম্ভিকতা বাদ দিয়ে বহুত্ববাদ ও বহুজাতিসত্তার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এ লক্ষ্যেই পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ অনুসমর্থন করেন। এতে আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি ও বনের উপর সনাতনী অধিকারের স্বীকৃতি আছে। তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে আদিবাসীদের সাংবিধানিক ও ন্যায়াধিকার পাবার প্রত্যাশা আযৌক্তিক নয়। তাদের অধিকার আদায়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনাসমৃদ্ধ বর্তমান সরকারের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।

রবীন্দ্রনাথের কথায় শেষ করতে চাই:

To accept the truth of our own age it will be necessary to establish a new education on the basis not of nationalism but of a wider relationship of humanity.

অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম: সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক তথ্য কমিশনার।

ছবি: ছন্দসেন চাকমা ও সালেক খোকন।