আগাম নির্বাচন: কখন কী ঘটবে ঠিক নেই

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 10 July 2015, 08:03 AM
Updated : 10 July 2015, 08:03 AM

মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আবার সামনে এসেছে। আগাম নির্বাচনের দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে তোলা হলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ২০১৯ সালে দশম সংসদের মেয়াদ পূরণের আগে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে। ২৪ জুন দৈনিক 'প্রথম আলো'তে 'আগাম নির্বাচনের অঙ্ক কষছে সরকার' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। 'সরকারের একাধিক সূত্র' উদ্ধৃত করে প্রথম আলোর ওই অনুমাননির্ভর সংবাদটিতে বলা হয়েছে:

''আগামী বছরের শেষের দিকে অথবা ২০১৭ সালের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে এ রাজনৈতিক অঙ্ক কষা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দলকে দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলানোর চিন্তা রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কিছু যোগাযোগও হয়েছে।''

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র উল্লেখ করে সংবাদে বলা হয়:

''তারাও (বিএনপি) আগামী দেড় বছরের মধ্যে একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন। তার আগে বিএনপিতে ভাঙন ধরানোসহ বড় ধরনের ঝড়ের আশঙ্কাও করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস, দলভাঙার তৎপরতা নতুন করে জোরদার এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিভিন্ন মামলার দ্রুতগতি সে ঝড়েরই আলামত হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা।''

প্রথম আলোতে এই সংবাদটি প্রকাশের পরদিন (২৫ জুন) দৈনিক সমকালে সম্পূর্ণ বিপরীত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের উদ্ধৃত করে। 'আগাম নির্বাচন? প্রশ্নই ওঠে না' শিরোনামে প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:

''আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের দৃষ্টিতে, আগামী ২০১৯ সালের আগে একাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী ওই বছরের ২৯ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এর আগে নির্বাচনের কথা ভাবা স্বপ্নেরই নামান্তর।''

প্রতিবেদনে বলা হয়:

''আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা বলছেন, ওই নির্বাচনের (৫ জানুয়ারি) পর সরকার কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় পড়ে। ফলে তখন দলের ভেতর মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের ভাষায়, সরকার পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতার কারণে গোটা পরিস্থিতি বদলে গেছে। আন্দোলনের নামে যারা পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে তাদের পরাজয় হয়েছে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিকভাবে সবকিছু সরকারের অনুকূলে রয়েছে।''

আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুর রাজ্জাক, আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে উদ্ধৃত করে সমকাল জানিয়েছে, দেশে এখন শান্তি বিরাজ করছে, সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই।… অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ তৈরি করতে গিয়ে যারা পরাজিত হয়েছেন তারাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলছেন। মানুষ মধ্যবর্তী নির্বাচনের নাটক দেখতে চায় না।

মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন জোরালো বক্তব্য সত্ত্বেও প্রথম আলো 'সরকারের একাধিক সূত্র' থেকে জানতে পেরেছে আগাম নির্বাচনের অঙ্ক কষার তথ্য। এই দুই বিপরীতধর্মী তথ্যের মধ্যে কোনটা বেশি বিশ্বাসযোগ্য? 'রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই' বাক্যটি যদি সত্য বলে ধরা হয়, তাহলে আগাম নির্বাচন হওয়া এবং না-হওয়ার দুটি তথ্যই বিশ্বাসযোগ্য। তাছাড়া প্রথম আলোর আগাম নির্বাচনের অঙ্ক কষার খবরটি শর্তযুক্ত। যেমন 'যদি এটা হয়, যদি ওটা হয়,' ইত্যাদি। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে যদি কয়েকটি ঘটনা ঘটে এবং যদি সরকার পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূল বলে মনে করে তাহলেই কেবল আগাম নির্বাচন হতে পারে।

আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর চাপ আছে বলে মনে করা হলেও এই চাপের জন্য যে সরকার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে নির্বাচন দেবে না, সেটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। গত বছর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে, প্রশ্ন আছে। এই নির্বাচনে ১৫৩ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সরকার নৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে। তবে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আইনি বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।

অনেকেই আশা করেছিলেন, ওই নির্বাচনের পর সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে হাঁটবে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ধ্বংসাত্মক পথে গিয়েও নির্বাচন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত অর্থেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে দেশে যে উত্তেজনা ও সহিংসতার বিস্তার ঘটেছিল নির্বাচন শেষ হওয়া মাত্র তার অবসান ঘটায় দেশের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে।

বিএনপি যদি সরকারকে তাদের মতো করে নির্বাচন সম্পন্ন করতে দিত, হিংসা-হানাহানির পথে না চলত, তাহলে হয়তো পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে অল্প সময়ের মধ্যে নতুন একটি নির্বাচনের কথা সরকার ভাবতে পারত। বিএনপির বাড়াবাড়ি সরকারকেও কঠোর অবস্থানের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে দেশবাসীকে। সরকারের জন্যও ছিল এই নির্বাচন এক বড় চ্যালেঞ্জ।

নতুন করে একটি নির্বাচনের আয়োজন করলেও পরিস্থিতি ৫ জানুয়ারি থেকে ভিন্নতর হবে, তারই-বা গ্যারান্টি কী? একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন ছেলেখেলা নয়। এর সঙ্গে একদিকে যেমন বিপুল অর্থব্যয়ের প্রশ্ন জড়িত, তেমনি আছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নও। দেশের মানুষ এখন ভোটের অধিকার প্রয়োগের জন্য ব্যাকুল, না শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে বেশি আগ্রহী সেটা এখন একটি গবেষণার বিষয় হতে পারে। মানুষ গণতন্ত্র চায়। কিন্তু গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের বার বার যেভাবে ঠকানো হয়েছে, তাতে এখন তারা আর আশা মরীচীকার পেছনে ছুটে জীবন ধ্বংস করতে চায় কি-না সেটা অনুসন্ধান করা দরকার।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকারকে বিপদে ফেলতে গিয়ে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট এমন হঠকারিতা করেছে যে উল্টো তারাই এখন চরম বিপাকের মধ্যে আছে। বিএনপি-জামায়াতের তিন মাসের অবরোধ-হরতালের ব্যর্থতা থেকে প্রমাণ হয়েছে, সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ের ক্ষমতা বিএনপি এবং তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর নেই। তিন মাসের আন্দোলনে সরকার দুর্বল হয়নি, বরং বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় আন্দোলন করে বিএনপি আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে পারবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি আন্দোলন না করলেও কি সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে আগাম নির্বাচন দিতে পারে না? হ্যাঁ, সেটা দিতে পারে। সরকার যদি মনে করে আগে নির্বাচন দিলে তাদের পক্ষে জয়লাভ সহজ হবে, তাহলে তারা আগাম নির্বাচন দিতেও পারে। সে ধরনের পরিস্থিতি হলে অর্থাৎ সরকারের জন্য সহজ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হলে একটি আগাম নির্বাচন দিয়ে সরকার নিজেদের নৈতিক অবস্থান মজবুত করে নিলেও নিতে পারে। সেটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।

২০১৬ সালের শেষে বা ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সরকারের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে, এমন কোনো সম্ভাবনা কি বাস্তবে দেখা যাচ্ছে? এখানেই আসছে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের 'যদি' প্রসঙ্গ। প্রথম যদি, চলতি বছরের মধ্যে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের এক বা একাধিক মামলার বিচার কাজ শেষ হয়ে তাদের সাজা হয় এবং তারা নির্বাচনের অযোগ্য হন। দ্বিতীয় যদি, নানা ধরনের কোন্দল-কলহের জের ধরে বিএনপির মধ্যে ভাঙন দেখা দেয় অর্থাৎ বিএনপির যদি দুই বা ততোধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৃতীয় যদি, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্ন হয় এবং চতুর্থ যদি, ২০-দলীয় জোট ভেঙে যায়।

এই চারটি 'যদি' সত্যি সত্যি ঘটে তাহলে পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে যাবে, বিএনপির অবস্থা শোচনীয় হবে। সে অবস্থায় আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিগুলোকে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ না দিয়ে একটি আগাম নির্বাচনের ব্যবস্থা সরকার করলেও করতে পারে।

তবে এই বিষয়গুলো কল্পনায় যতটা সহজ বলে মনে হয়, বাস্তবে ততটা নয়। এ তো সেই ''মামির যদি গোঁফ হয়, তাহলে…'' গল্পের মতো। প্রথমত, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো সরকার দ্রুত শেষ করতে চাইলেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তা সম্ভব নাও হতে পারে। বেগম জিয়ার আইনজীবীরা সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগই হাতছাড়া করবেন না। ইতোমধ্যেই যেটা তারা করছেন। আবার বিচারিক আদালত বিচার সম্পন্ন করে সাজা দেওয়ার পর আছে উচ্চ আদালতে আপিলের প্রশ্ন। সেখানেও লম্বা সময়ের ব্যাপার। তাই খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে নির্বাচনে অযোগ্য করার বিষয়টি দ্রুত ফয়সালা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

তারপর এ ক্ষেত্রে বিচারপ্রক্রিয়ার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার। বেগম জিয়ার বিদেশি মিত্ররা তাকে শাস্তি দেওয়া কিংবা নির্বাচনে অযোগ্য করার বিষয়টি কীভাবে নেবে? দেশজুড়ে বিএনপির বিপুল সমর্থকগোষ্ঠীও কি বেগম জিয়ার শাস্তি হলে একেবারেই প্রতিক্রিয়াহীন থাকবে?

দ্বিতীয়ত, বিএনপির ভাঙনের ঘটনাটিই-বা কত দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে? দুচার জন নেতার ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা থেকে যদি বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট অনেক বড় করে দেখা হয়, তাহলে সেটাও ভুল হবে। বিএনপির মধ্যে উপদলীয় কোন্দল আছে, গ্রুপিং আছে, কিন্তু মূল দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে যে রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধা করা যায় না, এটা যারা রাজনীতি করেন তাদের কারও অজানা নয়। তাই বেগম জিয়া দল থেকে বের করে না দিলে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে গিয়ে আলাদা বিএনপি করার ঝুঁকি কেউ নেবেন কি-না সেটা একটি বড় প্রশ্ন।

অতীতে যারা দল থেকে বেরিয়ে গেছেন, তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তার ওপর যারা বের হবেন তাদের সম্পর্কে যদি সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ ওঠে, তাহলে তো সর্বনাশ। মানুষ সরকারের বি-টিম বিএনপিকে সমর্থন করবে কি? বিএনপি ভাঙলেও সাধারণ সমর্থকরা মূল দলের দিকেই থাকবে। অবশ্য খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে না থাকলে বিএনপির জন্য সত্যিকার অর্থেই বড় সংকট তৈরি হবে।

তৃতীয়ত, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টিও খুব সহজে ঘটবে বলে মনে হয় না। খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবেন জামায়াতের সঙ্গে থাকার। নানা মহল থেকে কত কথা হচ্ছে, তারপরও জামায়াতের ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে খালেদা জিয়া এই বার্তাই দিয়েছেন। পরিস্থিতি যদি বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগে বাধ্য করে তাহলে তা থেকে বিএনপির লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যারা জামায়াতের কারণে বিএনপিকে সমর্থন দিতে দ্বিধায় আছেন, (এমন সংখ্যা কম নয়) তারা চোখ বন্ধ করে বিএনপির দিকে ঝুঁকবেন। জামায়াত ছাড়লে বিএনপির লাভ বেশি এটা বেগম জিয়া বুঝতে পারছেন না বলেই তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।

চতুর্থত, ২০-দলীয় জোটে ভাঙন প্রসঙ্গ। নির্বাচনী রাজনীতিতে ২০-দলীয় জোট ভাঙা না-ভাঙা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। ২০ দলে নির্বাচন করার মতো দল কয়টি আছে? বিএনপি-জমায়াত ছাড়া অন্যগুলো তো হোন্ডা বা স্কুটার পার্টি। ২০ দল মূলত বিএনপি-জামায়াতের জোট। ফলে ২০-দলীয় জোট ভাঙন দেখা দিলে আগাম নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে মনে করার কারণে নেই।

তবে আগাম নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, আগাম নির্বাচন নিয়ে দলে কোনো আলোচনা নেই। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে আগাম নির্বাচন দিতে হবে। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে কখন কী ঘটবে তার কোনো ঠিক নেই। কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা আগে থেকে বলা যায় না। এর নির্দিষ্ট ছক নেই।

আসলেই রাজনীতি সব সময় ছকবাঁধা পথে চলে না। এখন আগাম নির্বাচনের ছক যারা কষছেন, তারা কি তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছেন? সময় হল রাজনীতির বড় ফ্যাক্টর। কাজেই সময়ই বলে দেবে কখন কী হবে। বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে জোরের সঙ্গে যে কথাটা বলা যায় সেটি হল, আগাম নির্বাচন তখনই হবে যখন সরকার তথা আওয়ামী লীগ মনে করবে যে তাদের জয়ের পথে কোনো বাধা নেই।

সে রকম পরিস্থিতি 'আপসে আপ' তৈরি হওয়ার কোনো কারণ আছে কি?