ফেসবুকে কদর্য মন্তব্য ও সামাজিক পরিবেশ

নাদির জুনাইদ
Published : 7 July 2015, 03:17 AM
Updated : 7 July 2015, 03:17 AM

পরপর দুটো ওয়ান-ডে সিরিজে দুই ক্রিকেট পরাশক্তি, পাকিস্তান আর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিজয়ের পর বহু মানুষের আনন্দে মেতে থাকা সময়েই জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির তার ছোট বোনকে নিয়ে রংপুরে নিজেদের বাড়িতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। যাত্রার সময় বিমানে ছোট বোনের সঙ্গে তোলা একটি ছবি তিনি পোস্ট করেন তার ফেসবুক পেজে। নাসিরের অনুরাগী বহু মানুষ ছবিটি পছন্দ করেছেন। অনেকে সুন্দর মন্তব্যও করেছেন।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি, বিমানে ভাইবোনের তোলা এই ছবিতে অত্যন্ত কুরুচিকর বিভিন্ন মন্তব্যও করা হয়েছে। এই ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য যে কোনো মানুষকেই কষ্ট দেবে। ছোট বোনের সঙ্গে তোলা একটি ছবিতে কিছু মানুষের এমন কদর্য কথাবার্তা নাসিরকেও মর্মাহত করেছে। তিনি ছবিটি তার ফেসবুক পেজ থেকে মুছে দেন। পরবর্তীতে বেদনার সঙ্গে নাসির বলেছেন, তিনি তার ফেসবুক পেজই বন্ধ করে দেবেন। কারণ এমন একটি ঘটনার পর নিজেকে ভক্তদের সামনে ফেসবুকে প্রকাশ করার ইচ্ছেটাই তার মিটে গেছে।

ঘটনার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মাশরাফি, মুশফিকুর রহিমের মতো ক্রিকেটাররাও। যারা কুৎসিত মন্তব্য করেছে তাদের রুচিবিকার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের অসংখ্য মানুষ। জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়কে তার পরিবারের সদস্য সম্পর্কে অশোভন কথা বলে কষ্ট দিতে এই দেশের এক শ্রেণির মানুষ বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না এই চিন্তাজনিত বেদনাবোধ আমাদের খেলোয়াড়দের মন হতাশাগ্রস্ত করে তুলতেই পারে।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মান আর সুনাম অর্জিত হয় এই খেলোয়াড়দের পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেই তারা জাতীয় দলে স্থান করে নিয়েছেন; সম্মান তাদের প্রাপ্য। দেখা যাচ্ছে. এই সমাজের কিছু মানুষ অবলীলায় জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়ের ছবিতে কুরুচিকর মন্তব্য করতে পারে। নাসিরের পোস্ট করা সেই ছবিতে অমার্জিত মন্তব্যের সংখ্যা কম ছিল না। তাই মনে হয়, রুচিদৈন্য আজ গ্রাস করছে অনেক মানুষকেই।

তবে আমাদের খেলোয়াড়দের শুধু এটাই মনে রাখতে হবে যে, অশোভন কথা বলা এই মানুষদের মন অন্ধকার এবং তারা নিকৃষ্ট রুচির মানুষ। তাদের আচরণের জন্য সব সময় তারা নিন্দিত এবং ধিকৃত হবে। এই সমাজে আলোকিত মানুষও আছেন এবং তারাই এই রুচিহীন মানুষদের প্রতিরোধ করবেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পড়ে থাকার কিছু ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে আমরা দেখেছি। এই ছবিগুলোতে দেখা যায়, অভিজিতের নিথর দেহের পাশে হতবুদ্ধি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন তার স্ত্রী বন্যা। তিনিও মারাত্মকভাবে আহত, তার শরীর রক্তেভেজা। এমন একটি ছবির নিচে কেউ কেউ বন্যার পোশাক নিয়ে অত্যন্ত অশালীন মন্তব্য করেছে। এমন করুণ, বীভৎস ও ভীতিপ্রদ একটি ছবির নিচেও একজন নারীর প্রতি কদর্য মন্তব্য করতে কিছু মানুষ দ্বিধা করেনি। এই সমাজে কিছু মানুষের মন আজ কতটা নীচ এবং অনুভূতিহীন তা চিন্তা করে হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

ফেসবুকে যারা বিভিন্ন সময় এমন কুৎসিত মন্তব্য করে তারা লেখাপড়া না-জানা মানুষ নয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ও দক্ষতা তাদের রয়েছে। এমন মানুষরা যখন অশালীন মন্তব্য করতে দ্বিধা করে না এবং ইদানিং যখন প্রায়ই ফেসবুকে এই ধরনের অশোভন আচরণ দেখা যাচ্ছে তখন এই ব্যক্তিদের নিন্দা করার পাশাপাশি বিদ্যমান সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশও বিশ্লেষণ করতে হয়। সমাজে প্রচলিত চর্চাসমূহ মানুষের আচরণ ও চিন্তা বহুলাংশে প্রভাবিত করে।

ফিদেল ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বে বিপ্লবের পর কিউবায় যে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে নতুন সামাজিক রীতি প্রবর্তনের কারণে বহু মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা ও বক্তব্যধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর। এই পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি কিউবায় বহু মানুষের সমর্থন নিশ্চিত করা হয়।

হিটলারের শাসনকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চলচ্চিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল জার্মানির তরুণদের নাৎসি মতাদর্শে দীক্ষিত করার জন্য। কেবল নাৎসি পার্টি ও হিটলারের সমর্থক শিক্ষকরাই সেই সময় শিক্ষকতা করার সুযোগ পেতেন। হিটলার বলতেন তিনি চান জার্মান তরুণরা হবে নির্মম, উদ্ধত, ভয়হীন ও নিষ্ঠুর। তরুণদের মধ্যে একই সঙ্গে তৈরি করা হত জাতিবিদ্বেষ। এমন বহুসংখ্যক তরুণকেই হিটলারের একান্ত অনুগত প্যারামিলিটারি ফোর্স এসএস বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি চিন্তায় দীক্ষাপ্রাপ্ত এই এসএস সদস্যদের নৃশংসতা ছিল ভয়াবহ।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত শিক্ষা এবং গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু মানুষের রুচি ও চিন্তা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের পক্ষে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত থাকা সহজ নয়। ফলে সমাজে মানুষ যে ধরনের আচরণ প্রদর্শন করছে তা রাজনৈতিক দিক দ্বারাও প্রভাবিত। অনেক শিক্ষিত মানুষকেই যদি অপ্রশংসনীয় আচরণ করতে দেখা যায় তখন সমাজের বিদ্যমান পরিবেশ ও শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যৌক্তিক কারণ থাকে। গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রভাবের এই যুগে পরিবারের সদস্যদের চেয়ে কমবয়সীরা গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হয়। চলচ্চিত্র, নাটক, সঙ্গীত, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি জনপ্রিয় শৈল্পিক মাধ্যমে নান্দনিক ও বক্তব্যজনিত গভীরতা রাখা জরুরি যেন তা দর্শকদের চিন্তাশীল ও সুরুচিসম্পন্ন হয়ে উঠতে সহায়তা করে।

ফেসবুকে অনেকের কদর্য মন্তব্য করার প্রবণতা যখন আমাদের আহত করে, তখন চিন্তা করা উচিত কেন এই মানুষরা শিক্ষা গ্রহণের পরও অরুচিকর ও অনুভূতিহীন আচরণ করতে দ্বিধা করছে না। আমাদের সাম্প্রতিক নাটক-চলচ্চিত্র-সঙ্গীত-বিজ্ঞাপনে কি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে অগভীর, চটুল, আর লঘুতা-সর্বস্ব উপাদান? যে উপাদানগুলির প্রভাবে অনেকে চটুল আচরণ করাই চলতি প্রথা বা রীতি মনে করছে? গণমাধ্যম বিনোদন প্রদান করতেই পারে, কিন্তু বিনোদন যদি বেশিরভাগ সময় তারল্য হয়ে ওঠে, তবে দর্শকের ওপর তার প্রভাব সমাজের জন্য সুখকর নয়। কারণ নিয়মিতভাবে তারল্যে তৃপ্তি পাওয়া মানুষ চিন্তাশীল ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন হয়ে উঠবে তা আশা করা যায় না।

আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে এই সমাজে লেখাপড়ার মান সম্পর্কেও। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কেবল সিলেবাস অনুযায়ী দায়সারাভাবে পড়ানো কখনও সঠিক শিক্ষাদান পদ্ধতি নয়। ছাত্রছাত্রীদের যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে শেখানো এবং আলো আর অন্ধকারের পার্থক্য বোঝানোও শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। শিক্ষকতার প্রতি গভীর উৎসাহ ও আগ্রহ থাকলে একজন শিক্ষক নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষ আকর্ষণীয় করে তুলতে সক্ষম হবেন। কেবল এমন ব্যক্তিদেরই তাই শিক্ষকতায় আসা উচিত। নিবিড় জ্ঞানচর্চার ভিত্তিতে একজন শিক্ষক যখন নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তখনই শিক্ষার্থীরা উপলব্ধি করে বুদ্ধিবৃত্তিক সৌন্দর্যের মাহাত্ম্য। এমন উপলব্ধির মাধ্যমে আলোকিত হয় ছাত্রছাত্রীর মন।

আমাদের সামাজিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক চর্চাসমূহ জ্ঞানানুশীলনের জন্য এবং গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনের জন্য মানুষকে কতটা অনুপ্রাণিত করতে পারছে তা বিশ্লেষণ করা দরকার। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা যেন উঁচুমানের শিক্ষা পায় তা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিশ্চিত করা হচ্ছে? কমবয়সীদের পরিশীলিত ও সুরুচিসম্পন্ন করে গড়ে তোলার জরুরি দায়িত্বটি কি সমাজে বা এই সময়ের শিক্ষকদের কাছে অবহেলিত, নাকি যথেষ্ট যত্নের সঙ্গে সৌন্দর্য আর অসুন্দরের পার্থক্য তরুণদের কাছে স্পষ্ট করা হচ্ছে?

যদি কদর্যতা আর অশুভত্বকে ঘৃণা করার সংস্কৃতি সমাজে প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে তাহলে কেন অনেক শিক্ষিত মানুষ নারীর ছবিতে নিয়মিতভাবে অশোভন মন্তব্য করতে দ্বিধা করছে না? এই মানুষরা তাহলে কোন সামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত?

১৯৭৬ সালে সরদার ফজলুল করিমের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় স্বাধীনতা-পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন:

''অতীতে কোনো দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে শিক্ষকদের মধ্যে যে লজ্জাবোধ দেখতাম, তা এখন আর একেবারেই দেখি না। কিন্তু এটা তো কেবল ইউনিভার্সিটিরই বৈশিষ্ট্য নয়। এই ধরনের মানসিকতা তো আগে দেখা যায় পুরো সমাজেই। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন মানসিকতা চোখে বেশি ঠেকে। সমাজে ন্যায়পরায়ণতা এবং নীতিবোধের যে মান বিরাজমান সমাজের মধ্যে অবস্থানরত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চেয়ে উঁচু মান টিকে থাকবে এমন আশা বাস্তবধর্মী নয়। সমাজে কোন ধরনের মূল্যবোধের চর্চা চলছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশে তা কেবল আরও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।''

[সরদার ফজলুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ, সাহিত্য প্রকাশ:১৯৯৩, পৃষ্ঠা-৪৩]

অধ্যাপক রাজ্জাকের এই বক্তব্য যৌক্তিক কারণ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ প্রভাবিত করে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকেই।

আমরা অল্পদিন আগেই দেখেছি রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে সাধারণ, নিরীহ মানুষের শরীরে অমানবিকভাবে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে প্রাণঘাতী পেট্রোল বোমা। রাস্তায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে অনেককে। ইসলামি উগ্রপন্থী দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম তাদের বিবেচনায় যারা ইসলামবিরোধী, সম্ভব হলে প্রতিমাসে এমন মানুষদের একজনকে খুন করতে চায়। আবার ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এর প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশে এক বক্তা সংবাদপত্রের স্থানীয় প্রতিনিধিকে রাস্তায় প্রকাশ্যে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন। বর্ষবরণের আনন্দময় উৎসবে নারীদের যৌনহয়রানি করে একদল পুরুষ। এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভে একাধিক পুরুষ পুলিশ সদস্য ধাওয়া করে হেনস্তা করে একজন নারী কর্মীকে।

দেশের অর্থমন্ত্রী ক্ষুব্ধভাবে বলেছেন, 'আমাদের লোকজনের' সমর্থনের কারণে কয়েকটি ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। অসহনীয় যানজটে বিপর্যস্ত এই শহরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের খোলাখুলিভাবে উল্লেখ করেছেন, যানজট নিয়ে আইনপ্রণেতারা সংসদে অভিযোগ তুললেও তারাই সব থেকে বেশি আইন ভাঙেন। ভিআইপিরা প্রটোকল নিয়ে উল্টোদিকে গাড়ি চালান। কেউ কাউকে তোয়াক্কা করেন না।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সমাজে বিভিন্ন নিন্দনীয় ঘটনা বা নিয়মনীতি লঙ্ঘনের প্রবণতা সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি করে। কিন্তু নেতিবাচক পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে এক সময় অনেক সাধারণ মানুষও অন্যায়কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। নৈতিকতার অধঃপতন প্রকট হয়ে উঠলে সমাজে রুচিবিকার দেখা যাবে সেটাই স্বাভাবিক।

ফেসবুকে যারা নারীর ছবিতে বা ভাইবোনের ছবিতে অশোভন মন্তব্য করছে তাদের রুচিদৈন্যের আসল কারণ সামাজিক পরিবেশে টিকে থাকা অসঙ্গতি। যদি নিজ স্বার্থের জন্য ন্যায়নিষ্ঠতা উপেক্ষা করার উদাহরণ সমাজে দেখা যায় সে ক্ষেত্রে নীতিবান, সুরুচিসম্পন্ন মানুষদের প্রতিনিয়ত হতাশার মুখোমুখি হতে হবে। বিভিন্ন বৃহৎ অন্যায় সামাজিক পরিবেশের যে ক্ষতিসাধন করে সেই নীতিভ্রষ্ট পরিবেশে দেখা যেতে থাকে আরও নানা ধরনের অনুচিত কাজ; কারণ কিছু মানুষের মনে স্থান করে নেয় সমাজে বিদ্যমান কলুষতা।

সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি আন্তরিকভাবে শক্ত অবস্থান নেওয়া যায় কেবল তাহলেই সামাজিক পরিবেশে শুভত্ব থাকবে তা আমাদের অজানা নয়। আমাদের প্রয়োজন উঁচুমানের শিক্ষা, নান্দনিক দিক দিয়ে গভীর সংস্কৃতিচর্চা আর ব্যক্তিস্বার্থভিত্তিক নয়, সমাজের জন্য হিতকর রাজনীতি। তাহলেই সামাজিক পরিবেশ সুন্দর এবং কল্যাণকর হয়ে উঠবে।

এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশীল ব্যক্তিবর্গ ও সাংস্কৃতিকভাবে অগ্রসর মানুষদেরই। মানুষের মন আলোকিত রাখা অসম্ভব কাজ নয়; দরকার কেবল সদিচ্ছা আর প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা। তেমন উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন।

ড. নাদির জুনাইদ: সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।