উন্নয়নের সরকারি কীর্তন ও একুশ শতকের দাস-ব্যবসা

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 5 July 2015, 10:07 AM
Updated : 5 July 2015, 10:07 AM

মে এবং জুন মাস ধরে বাংলাদেশের সব ধরনের (ছাপা, ইলেকট্রনিক, অনলাইন এবং সামাজিক) মিডিয়ায় এবং বিষয়ের গুরুত্বের কারণে বিভিন্ন বিশ্বমিডিয়ায়, মানবপাচার একটি অন্যতম প্রধান সংবাদ-ইস্যু (নিউজ-আইটেম) হিসেবে জারি হয়েছে। এসব সংবাদে মানবপাচারের মানবিক বিপর্যয়ের দিকটি যতটুকু আলোচনায় এসেছে, এর অন্তরালে একুশ শতকের নির্মম দাস-ব্যবসার ভয়ানক চরিত্র ততটুুকু উপস্থাপিত হয়নি। পাছে আমাদের সমাজের যে 'সভ্য সভ্য' চেহারা তার অন্তরালের 'অসভ্য' সুরতটি উন্মোচিত হয়ে যায়!

এখানে তিনটি খুবই সাধারণ প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।

আমরা সরকারের মন্ত্রী, মিডিয়ার প্রতিবেদন এবং তথাকথিত উন্নয়ন-গবেষকদের মুখে বেশ কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের মজার মজার কাহিনি শুনছি। দেশে যদি সত্যিকার অর্থেই এত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে থাকে, তাহলে মানুষ কেন জীবন-মৃত্যুর পুলসেরাত পার হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে?

আমরা আরও শুনি, বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের মডেল 'মালয়েশিয়া' হয়ে যাচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে সে মালয়েশিয়ার (মানে বাংলাদেশের) মানুষ বৈধ-অবৈধ পথে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কেন মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে?

শেষ প্রশ্ন হল, গোলকায়নের যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে পুঁজি, পণ্য ও তথ্যের অবাধ যাতায়াত হতে পারলে মানুষ কেন তা করতে পারবে না?

সত্যিকার অর্থে এ সকল প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সরকারি উন্নয়নের চিত্রনাট্যের কাহিনি, বিশ্বায়নের নামে নব্য উপনিবেশ স্থাপনের নিউলিবারেল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং 'শ্রমবাজার সৃষ্টি' নামক একবিংশ শতাব্দীর দাস-ব্যবসার আন্তর্জাতিকীকরণের সুকৌশল প্রকৌশল। এ নিবন্ধের প্রধান নিশানা আদম পাচারের যে বিদ্যমান কাঠামো তার ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রের চরিত্র বোঝা কিংবা একবিংশ শতাব্দীর দাস-ব্যবসা কীভাবে তথাকথিত উন্নয়ন-মডেলে অন্তর্ভূক্তির রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায় তার শানে নুযুল উপলব্ধির চেষ্টা। একই সঙ্গে এটি সরকারি উন্নয়নের ফাঁপা বেলুনের গল্প; আন্তর্জাতিক পুঁজির আনাগোনা ও সমাজে বিদ্যমান শোষণ-বঞ্চনার চিত্রের অবগুণ্ঠন খোলার প্রয়াস।

মে মাসের প্রথমদিকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শংখলা প্রদেশের সাদাও এলাকায় অভিবাসন-প্রত্যাশীদের গণকবর আবিস্কারের ঘটনায় তামাম দুনিয়ায় যখন তুলকালাম বেঁধে গেল, বিশেষ করে বিশ্বের প্রধান প্রধান মিডিয়া বেশ গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ ছেপে ঘটনার ভয়াবহতা ব্যাখ্যার চেষ্টায় রত, তখনও বাংলাদেশ সরকারের তেমন নড়াচড়া চোখে পড়েনি। এই নির্বিকার প্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশীয় মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠলে কেবল আমাদের মন্ত্রী বাহাদুরদের ঘুম ভাঙতে শুরু করে। ঘটনার ভয়াবহতা যত তীব্র ও ভয়ংকর হোক-না-কেন, বিকারহীনতাই যেন আমাদের জাতীয় চরিত্রের রূপ ধারণ করেছে।

মিডিয়ার কল্যাণে এটা ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছে যে, গণকবরে যেসব লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে তার উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে বাংলাদেশিদের। থাইল্যান্ডের পর মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী পারলিশ শহরে যখন আরও ১৩৯টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেল, যার কঙ্কাল হয়ে যাওয়া লাশের বেশিরভাগই বাংলাদেশিদের, তখন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটু গা-ঝাড়া দিয়ে বসে অনিচ্ছুক কাশি দিতে আরম্ভ করে। এদেশের হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষজন জীবিকার খোঁজে ঘরছাড়া হয়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার গভীর জঙ্গলে লাশ কিংবা লাশের কঙ্কাল হয়ে পড়ে থা্কলেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টনক নড়েনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেবল একটা বিবৃতি দিয়েই খালাস।

অকৃতজ্ঞ আমরা বেমালুম ভুলে বসে আছি যে, এই মানুষরা জীবন-মৃত্যুর ভয়ঙ্কর পুলসেরাত পার হয়ে শ্রম বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ এদেশে পাঠান বলেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। ১২ থেকে ২৫ হাজার বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড করে যার মিডিয়া-প্রদর্শনী দিয়ে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডুগডুগি বাজাই। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। কিন্তু মানবপাচারের ব্যাপারে রাষ্ট্রের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। কেবল ঘটনা ঘটে যাবার পর একটি বিবৃতি দেওয়া এবং লাশ দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করাই যেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সীমান্তে আবিস্কৃত গণকবরে প্রাপ্ত বাংলাদেশিদের লাশের ব্যাপারেও আমরা তার অন্যথা দেখিনি।

মিডিয়ার বিস্তর লেখালেখি এবং দেশের ভেতরকার মানুষের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে সরকার নড়চড়া করতে বাধ্য হয় এবং নানান যোগাযোগের সূত্র ধরে তখনও পর্যন্ত সমুদ্রে ভাসমান কিছু বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের জঙ্গলে শত শত বাংলাদেশির লাশ ও লাশের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হওয়া অত্যন্ত বেদনা ও লজ্জার যা আমাদের রাষ্ট্রীয় অক্ষমতার স্বাক্ষর বহন করে।

হয়তো কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, চুরি করে, অবৈধ পথে, গোপনে এভাবে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমালে সরকারের কী করার আছে? হ্যাঁ, করার আছে। সরকারের এজেন্সিগুলো কী করে? বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড, পুলিশের কাজ কী? মানবপাচার রোধে নিয়োজিত বাহিনী এবং সংস্থাগুলো যদি পাচার রোধ করতে না পারে, তবে এসব মৃত্যুর দায় তাদেরকেই নিতে হবে।

সংবাদ মাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, এদেরকে চাকরির লোভ দেখিয়ে অপহরণ করে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায় মানবপাচারকারী ও আদম ব্যবসায়ীরা। তারপর জঙ্গলে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে। তাতে ব্যর্থ হলে বন্দিদের খাবার ও পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাসের পর মাস এভাবে অনাহারে, অর্ধাহারে থাকতে থাকতে অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আবার অনেককে গুলি করে হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়।

থাইল্যান্ডে এটা নতুন ঘটনা নয়। সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার, থাইল্যান্ডের বন্দিশিবির, মালয়েশিয়ার কারাগারে জেলজীবন এবং নৌযানযোগে যাত্রাকালে বিভিন্ন কারণে নিমজ্জিত হয়ে হতদরিদ্র মানুষের মৃত্যুর অসংখ্য ঘটনার পর এবার আবিস্কৃত হয়েছে থাইল্যান্ডের উপকূলবর্তী জঙ্গলে গণকবর। বিদেশি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায়, এ পর্যন্ত শত শত গণকবরের সন্ধান মিলেছে। এসব গণকবর থেকে থাই পুলিশ একে একে উদ্ধার করেছে নরকঙ্কাল ও গলিত লাশ।

বিদেশি গণমাধ্যমের খবরে আরও জানানো হয়েছে যে, প্রায় পাঁচশ বন্দিশিবির রয়েছে থাই উপকূলের গভীর জঙ্গলে। থাইল্যান্ডে ২০১৪ সালের অক্টোবরেও একটি জঙ্গল থেকে ৮৯ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয় যাদের সে দেশে 'ক্রীতদাস' হিসেবে বিক্রির জন্য নেওয়া হয়েছিল। এভাবে ইঞ্জিনচালিত নৌযানে করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় মানবপাচার নিয়মিত ও প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।

যেহেতু মানবপাচারের সহজ রাস্তা হিসেবে সমুদ্রপথ বিবেচনা করা হয়, তাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকেই এর মূল যাত্রা শুরু হয় এবং একে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে একটি সংগঠিত চক্র তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মানবপাচারসহ চোরাচালানের ঘটনা নিয়ে তদন্তে নিয়োজিতদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে (যা সংবাদপত্রে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে) যে, থাইল্যান্ডের বন্দিশিবির এবং গণকবরে যাদের ঠিকানা হয়েছে এদের অধিকাংশ বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সে খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নিপীড়নে টিকতে না পেরে ১৯৭৮, ১৯৯১, ১৯৮৩ এবং ২০১২ সাল থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসা শুরু করেছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ রোহিঙ্গাদেরই একটি বড় অংশ অবৈধভাবে নৌপথে থাইল্যান্ড হয়ে মুসলিমপ্রধান মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ৫৭ হাজার রোহিঙ্গা এভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে।

বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ায় সমুদ্রপথে অন্য দেশে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশি জনগণ। এখনও প্রতিনিয়ত কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সেন্টমার্টিন, উখিয়া, টেকনাফ, বাঁশখালি, কুতুবদিয়া ও সীতাকুণ্ড উপকূলজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এ সুযোগে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মানবপাচারকারী শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যাকে দৈনিক গার্ডিয়ান বলছে 'আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ-চক্র' (transnational criminal syndicates) হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন নিয়ে খেলছে। তার নগদ ও ভয়ংকর নজির হচ্ছে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার গণকবর।

বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো 'উন্নয়নের ধারণায়নে' বিদেশে শ্রমিক-রপ্তানি একটি অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। 'অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব' জাতীয় উন্নয়ন-পথ্য আমাদের মতো দেশগুলোকে গেলানো হয় এবং আমরা সে উন্নয়ন-প্রেসক্রিপশন মোতাবেক আমাদের অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে রপ্তানি করি। এটা যে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক দাস-ব্যবসা সেটা আমরা যাদের রপ্তানি করি তারা হাড়ে হাড়ে টের পায়। কেননা তাদের প্রতি রপ্তানিকৃত দেশের আমদানিকারীরা যে ধরনের আচরণ করে সেটা মধ্যযুগের দাস-ব্যবসার ক্রীতদাসদের প্রতি আচরণের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ন্যূনতম মৌলিক ও মানবিক চাহিদা তাদের মেটানো হয় না।

এই শ্রমিকরা কী অমানবিক জীবনযাপন করে তার খবর সাময়িক বিরতি দিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়ে থাকে। তবু রাষ্ট্র তার খবর রাখে না। রাষ্ট্র ব্যস্ত মাস শেষে রেমিটেন্স কত এল তার হিসাবনিকাশ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কত বাড়ল তার সংখ্যা নির্ধারণ নিয়ে।

তাই, উন্নয়নের জোয়ারের জারিগান সংখ্যার সরকারি কীর্তন ছাড়া আর কিছু নয়। বিদেশে শ্রমের বাজার আবিস্কার মানে একবিংশ শতাব্দীর দাস-ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় এনগেজমেন্ট যাকে আমরা সুশীল শব্দচয়নে আদর করে নাম দিয়েছি, 'রিক্রুটিং বিজনেস'। মানবপাচার সেই আধুনিক দাস-ব্যবসার দাস সাপ্লাইয়ের একটি অবৈধ প্রক্রিয়া, রাষ্ট্রীয় পরিভাষায় যার বৈধ নাম, 'জনশক্তি রপ্তানি'। অর্থাৎ বৈধ এবং অবৈধ উভয় পন্থায় আমরা মূলত একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক দাস-ব্যবসার 'দাস সাপ্লাইয়ার'।

এখানে আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, কেন এভাবে মানুষ অবৈধ পথে ভাগ্যের অন্বেষণে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমায়? যেসব হতদরিদ্র মানুষ পাড়ি জমায় এটা কি কেবল তাদেরই দোষ? নাকি আমরা তাদেরকে জীবন-মৃত্যুর দাবা খেলায় ঠেলে দিতে বাধ্য করছি? সমাজে বিদ্যমান অসম সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একজন মানুষকে এভাবে জীবনের ঝুঁকি ও মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য করছে। এখানে রাষ্ট্রের কাজ কী? কিংবা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং করণীয় কী?

বিষয়গুলো গভীরভাবে ভাববার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে আরও ভয়াবহ পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের দূতাবাসগুলি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি দক্ষতা, বিজ্ঞতা ও কূটনৈতিক প্রকৌশল দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচারের বিষয়টি যেমন দেখতে হবে, তেমনি বিদেশে বসবাসরত শ্রমিকদের জানমালের হেফাজতের জন্যও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা-শক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকশ্রেণির মানুষের অকৃত্রিম অবদান।

তাই, রাষ্ট্রকে এবং রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রবাসী শ্রমিক, মানবপাচার এবং ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের যথাযথ দেখভাল করতে হবে। অন্যথায় পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে অন্য কোনো গণকবরে বাংলাদেশিদের সারি সারি লাশ উদ্ধারের সংবাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যতটা বিকারহীনভাবে সব চলছে, তাতে সে অপেক্ষা খুব দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে হচ্ছে না।

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন: লেখক ও গবেষক; অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।