জাতীয় প্রেস ক্লাবে কী ঘটেছিল

আমানুল্লাহ কবীর
Published : 8 June 2015, 08:47 AM
Updated : 8 June 2015, 08:47 AM

গত কয়েক দিন যাবত মিডিয়ার শিরোনামে আসছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ঘটনাবলী। যারা জানেন না তাদের জন্য ঘটনাগুলো অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক, কিন্তু পর্দার অন্তরালে তা ঘটে আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। তার বহিঃপ্রকাশই চমকে দিয়েছে সকলকে। তাতে কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, কেউ আহত। অনেকেরই মনে হতে পারে এসব ঘটনায় জাতীয় প্রেসক্লাবের যে গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি ছিল, তার উপর আঘাত পড়েছে।

সাংবাদিকদের সবচেয়ে শক্তিশালী পেশাদার সংগঠন ইউনিয়ন দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পর জাতীয় প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের ঐক্যের প্রতীকরূপে স্থান করে নিয়েছে। সে ঐক্যের প্রতীকে চিড় ধরে আজ থেকে দেড় যুগ আগে; স্পষ্টতই তা সাংবাদিকদের রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে, যে জন্য তাদের ইউনিয়নও বিভক্ত হয়েছিল।

রাজনৈতিক কারণে সাংবাদিকরা দ্বিধাবিভক্ত দুটি ফোরামে। এই Legacy পাকিস্তান আমলের। তখনও সাংবাদিকরা দ্বিধাবিভক্ত ছিল, তবে ইউনিয়ন ছিল ঐক্যবদ্ধ। সে বিভক্তি ছিল প্রধানত প্রগতিশীল ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার দ্বারা প্রভাবিত। আজকের প্রজন্মের অনেকেরই জানার কথা নয় যে, তখন প্রগতিশীল সাংবাদিকদের অংশই নির্ধারণ করেছে ইউনিয়নের গতিধারা। কেননা সাংবাদিকদের পেশাগত স্বার্থ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতারক্ষায় তারাই ছিল সবচেয়ে সোচ্চার ও সক্রিয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও সাংবাদিকরা বিভক্ত হয় দুটি ফোরামে। কালক্রমে একটি ফোরাম আওয়ামীপন্থী, অপরটি আওয়ামী-বিরোধী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর আত্মপ্রকাশের পর আওয়ামী-বিরোধী ফোরামটি ধীরে ধীরে বিএনপি-জামায়াতপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, যা পাকিস্তানের ধারাবাহিকতার বিচ্যুতি। এই ফোরামের উপর এখন জামায়াতের প্রভাবই অধিকতর দৃশ্যমান।

এর প্রধান কারণ, জামায়াত-সমর্থক সংবাদপত্র বা মিডিয়া থাকলেও 'দিনকাল' ছাড়া বিএনপি ঘরানার কোনো সংবাদপত্র নেই। সংখ্যার ভিত্তিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ইউনিয়ন দুর্বল হলেও প্রেস ক্লাবে তাদের সদস্যসংখ্যা বেশি। আর এ কারণেই দেড় যুগের বেশি সময় ধরে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ফোরাম প্রেস ক্লাব নির্বাচনে বারবার জয়লাভ করেছে এবং ক্লাব পরিচালনা করে আসছে। প্রতিপক্ষ ফোরামের অভিযোগ, সদস্যপদের যোগ্য দাবিদার সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে যারা সদস্য থাকার যোগ্য নয় অথবা সদস্য হওয়ার যাদের যোগ্যতা নেই, তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় সদস্য রেখে বা করে প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব স্থায়ীভাবে দখলে রাখার চক্রান্ত চলছে। রাজনৈতিক কারণেই কবি শামসুর রাহমানের মতো ব্যক্তিত্বও প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ পাননি। এখনও সম্পাদকসহ অনেক সিনিয়র সাংবাদিক একাধিকবার আবেদন করা সত্ত্বেও ক্লাবের সদস্য হতে পারেননি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বারবার প্রতিবাদ করা হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি।

দাবি উঠে, যাচাই-বাছাই করে যাদের সদস্যপদ ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের। এই দাবির প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে অতিরিক্ত সভা আহবান করা হয়। সভায় উভয় ফোরামের পাঁচ-পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে সিনিয়র সাংবাদিকদের দ্বারা দশ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় যাদের দায়িত্ব ছিল সদস্যপদ যাচাই-বাছাই করে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সহযোগিতা করা। ফলে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের তফসিল স্থাগিত হয়ে যায় এবং ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংশোধিত ভোটার তালিকা তৈরির পর নির্বাচন হওয়ার কথা ৩১ মার্চের মধ্যে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সংশোধিত ভোটার তালিকা তৈরি সম্ভব হয়নি। তার বদলে দশ-সদস্যের কমিটি সমঝোতার ভিত্তিতে ক্লাবের পরবর্তী কমিটি গঠনে তৎপর হয়ে উঠে।

দশ-সদস্যের কমিটির সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ফোরাম থেকে ইকবাল সোবহান চৌধুরী গোলাম সারোয়ার, মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল, হাসান শাহরিয়ার ও কুদ্দুস আফ্রাদ, আর বিএনপি-জামায়াত-সমর্থিত ফোরামের প্রতিনিধিত্ব করেন রিয়াজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মনিরুল আলম, শওকত মাহমুদ, রুহুল আমিন গাজী ও এমএ আজিজ। কিন্তু উভয় ফোরামের একটি বড় গ্রুপ সমঝোতার পরিবর্তে নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাব কমিটি গঠনের পক্ষে সক্রিয় থাকে।

দশ সদস্যের কমিটির সমঝোতা প্রস্তাব অনুসারে ক্লাবের ১৭-সদস্যের কমিটিতে সভাপতির পদসহ সাতটি আসন পাবে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ফোরাম, আর সাধারণ সম্পাদকসহ দশটি আসন পাবে বিএনপি-জামায়াত-সমর্থক ফোরাম। নির্বাচনপন্থী গ্রুপের প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয় উভয় ফোরামের সাধারণ সভায়। দশ-সাত অনুপাতে উভয় ফোরাম তাদের প্যানেলও প্রস্তুত করে। তবে বাদ-প্রতিবাদের মধ্যে সর্বসম্মত প্যানেল তৈরিতে দীর্ঘ সময় ব্যয়িত হওয়ায় নির্বাচনের তফশিল আবার পিছিয়ে সাধারণ সভা ও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয় যথাক্রমে ২৮-২৯মে।

সভাপতি পদে 'সমকাল'এর সম্পাদক গোলাম সারোয়ার মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগপন্থী ফোরামের; সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ফোরামের মনোয়ন পান রুহুল আমিন গাজী। গাজী বিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইজে) সভাপতি ছিলেন; বর্তমানে মিরপুরে সাংবাদিকদের আবাসন সমিতির সভাপতি ও বিএনপি-জামায়াত-সমর্থক সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শওকত মাহমুদও, যিনি এর আগে দু দুবার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএফইউজের একাংশের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা।

জামায়াত-সমর্থক গাজীকে সাধারণ সম্পাদককের পদে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রতিপক্ষ ফোরামে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। কয়েক জন রসিক সাংবাদিক চায়ের টেবিলে শ্লোগান তুলে, 'আল্লাহর আইন চাই, শেখ হাসিনার শাসন চাই'। সাংবাদিকদের দ্বন্দ্ব ও সমঝোতার বিষয়টি গড়াতে গড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দরবারে যায়।

উভয় ফোরামের নেতৃবৃন্দের সভায় ইতোপূর্বে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, প্রেসক্লাব কমিটিকে রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য যারা সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় (অর্থাৎ অ্যাকটিভিস্ট) ও দল বা সরকারের উচ্চপদে অসীন আছেন, তারা ক্লাবের কর্মকর্তার পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। সাধারণ সদস্যদের সমালোচনা ও ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশই ছিল এই নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণ। অপ্রিয় ও অযৌক্তিক শোনালেও সত্য হচ্ছে, ইউনিয়ন ও প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব দীর্ঘদিন কতিপয় সাংবাদিক নেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং তাদের প্রতি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থনও রয়েছে।

ফলে সাংবাদিকদের ইউনিয়ন ও প্রেস ক্লাব পরিণত হয়েছে দলের অঙ্গ সংগঠনে। রাজনৈতিক ফায়দা ও আর্থিক প্রাপ্তিযোগের কারণেই সাংবাদিদের মধ্যে এই সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। এসব সাংবাদিক নেতার অনেকেই কার্যত পেশায় নেই, অথবা দীর্ঘ দিন কারও চাকরি নেই, কিন্তু তাদের জীবন-জীবিকার মানে কোনো ঘাটতি নেই, বরং দিন দিন শ্রীবৃদ্ধিই ঘটছে। তাদের অজ্ঞাত আয়ের উৎস কী? একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল তার তহবিলের একাংশ ব্যয় করে সাংবাদিকদের সমর্থন ক্রয়ের জন্য। এমনকি, পবিত্র হজ্বকে ব্যবহার করা হয় উৎকোচ হিসেবে।

এছাড়া ইউনিয়ন ও প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে ভোট বেচাকেনাও হয়। প্রেস ক্লাবের একজন সভাপতি কথা প্রসঙ্গে একদিন বলে ফেললেন, নির্বাচনে তার ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। শুনে স্তম্ভিত হয়েছি। জিজ্ঞেস করলাম, এত টাকা কোথায় পেলেন? তার জবাব, নির্বাচনের টাকা ভূতে যোগায়। ভূত কোথায় থাকে?

পাঠক খোঁজে নিন। সাংবাদিকদের ইউনিয়ন ও ক্লাবে কত মধু যে, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেও নির্বাচিত হতে হবে? আর ঘুরেফিরে ইউনিয়ন বা প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে থাকতেই হবে?

যাহোক, পরিবর্তিত তফশিল অনুযায়ী ১৪মে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। নিজেদের পছন্দমতো না হওয়ায় ইতোমধ্যে একদিন রাতের অন্ধকারে রিয়াজ ভাই, শওকত মাহমুদ, রুহুল আমিন গাজী ও সৈয়দ আবদাল (তখন সাধারণ সম্পাদক) মনোনীত প্রার্থী তালিকা বদলে দেন এবং খন্দকার মনির ও আমিসহ (আমরা দুজনই কখনও প্রার্থী হতে চাইনি) কয়েক জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা তৈরি করেন। কিন্তু গোল বাঁধল অন্যত্র। সমঝোতার শর্ত (যা উল্লিখিত দশজন নেতাই স্বাক্ষর করেছিলেন) ভঙ্গ করে শওকত মাহমুদ সভাপতির পদে মনোনয়ন জমা দেন। সমঝোতার শর্ত ভঙ্গ করা হলে প্রতিপক্ষ সোচ্চার হয়ে উঠে। সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নির্বাচন কমিটি অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করে।

ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। সমঝোতার সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়। প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়, সমঝোতারও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে না। তারা নির্বাচন তফশিল বাতিল করে দিয়ে ২৭ জুন অতিরিক্ত সাধারণ সভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তফশিল অনুসারে ২৮ মে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ সভা বাতিল করে অতিরিক্ত সাধারণ সভা হতে পারে কীভাবে? সাধারণ সভার পরিবর্তে সাধারণ সভাই হতে পারে, অতিরিক্ত সাধারণ সভা নয়।

শোনা যায়, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার জন্যই কমিটি এই বিলম্বিকরণ কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু আওয়ামী-লীগ সমর্থিত ফোরাম চলতি তফশিল অনুসারেই সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিটির উপর চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণ সদস্যদের দাবিও ছিল তা-ই, কেননা ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এই কমিটি ক্ষমতা আঁকড়ে আছে।

এদিকে ক্লাবের সার্বিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। দুর্নীতি ও অযোগ্যতা একই সঙ্গে যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর ভর করে, তাহলে যে পরিণতি হওয়ার কথা, ক্লাবের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সেবা ও খাবার মান হ্রাস পেয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ক্লাব চত্বর অঘোষিত গাড়ি পার্কিং স্থানে পরিণত হয়েছে। যারা সচিবালয়ে কোনো কাজে বা তদবিরে আসে তাদের গাড়ি রাখার স্থান হয়েছে ক্লাব চত্বর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লাব চত্বরে শতশত মানুষের জটলা। এরা কারা, কেন?

কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই, যদিও প্রতিদিনই সদস্যরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। অনেক সময় মনে হয়েছে প্রেস ক্লাব বহিরাগতদের দখলে চলে গিয়েছে। কাঁচা বাজার ও অন্যান্য খাতে লাখ লাখ বাকি পড়েছে, আয়ের উৎসগুলোতে ব্যবস্থাপনা কমিটি লোকসান গুনছে। দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ক্লাবভবন ভেতরে বাইরে এতিমের চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সমঝোতা ভেঙে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ফোরাম একতরফাভাবে ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করে ক্লাবদখলের হুমকি দেয়। তফসিল অনুসারে ২৮ মে সাধারণ সভা, এদিনই সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিতে এ ঘোষণা দেওয়ার কথা। তার আগে আবার সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ফোরাম নেতারা শওকত মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অস্বীকার করে। রিয়াজ ভাই শওকতকে বাদ দিয়ে বৈঠকে বসতে রাজি নন।

এরপর তাদের সঙ্গে নতুন করে সমঝোতা হয় রিয়াজ-গাজী-শওকতের নেতৃত্বাধীন ফোরাম বাদ দিয়ে তৃতীয় ফোরামের সঙ্গে, যারা জাতীয়তাবাদী হিসেবেই পরিচিত। তবে সমঝোতার ১০-৭ অনুপাত পাল্টে যায়, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ফোরাম লাভ করে ১০টি আসন এবং জাতীয়তাবাদী ফোরাম পায় সাতটি। সমঝোতা অনুসারে আগের মতোই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ফোরাম সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী ফোরাম সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভ করে। দুটি পদেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম বদলে যায় সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। সমঝোতার প্রথম প্যানেলে রুহুল আমিন গাজীসহ জামায়াত-সমর্থক চারজন প্রার্থী থাকলেও নতুন প্যানেলে জামায়াত-সমর্থিত কেউ নেই। যদিও সব কিছুই ঘটেছে মূল সমঝোতার ভিত্তিতে। প্রেস ক্লাবে অস্থিরতার অন্যতম কারণও এটাই।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুসারে সাধারণ সভা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী, অর্থাৎ যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা তার রয়েছে। কিন্তু বিদায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটি এই সুযোগ গ্রহণ না করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার কৌশল নেয় মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও। কারা তাদের এই অপকৌশল সমর্থন দিয়েছে, তা অনুমান করা কঠিন নয়।

যারা বর্তমান কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তারা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বৈধতার সাফাই কীভাবে করবেন?

আমানুল্লাহ কবীর: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র এডিটর।