বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ও সমাধানের পথনির্দেশ

জহিরুল হক মজুমদার
Published : 4 June 2015, 02:30 PM
Updated : 4 June 2015, 02:30 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে সেশনজট। শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় অকারণেই নষ্ট হচ্ছে এর কারণে। অনেক সময় বিদেশে ভর্তি হতে গেলে শিক্ষার্থীকে কেন তার চার বছরের ডিগ্রি নিতে সাত বা পাঁচ বছর লাগল তার জন্য রীতিমতো ব্যাখ্যা দিতে হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চতর শিক্ষা নিতে গিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেখে তাদের সতীর্থরা বয়সে অনেক ছোট। কিছু কিছু একাডেমিক বৃত্তিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সুযোগ হারায় বয়সের কারণে। ওদিকে সেশনজটের ফলে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে বিলম্ব ও পরিবারের আর্থিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সমস্যাগুলো তো রয়েছেই।

সেশনজট বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি খারাপ মাত্রা যোগ করেছে। একটি হচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি না হওয়া। আরেকটি হল, অনিয়মিত একাডেমিক সাইকেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সাইকেল ছিল জুলাই থেকে জুন। সেটির সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার সময়ও নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো শিক্ষকের জন্মতারিখ অনুযায়ী যদি তাঁর অবসরে যাওয়ার সময় হয় জুলাই মাসে, তাহলে তিনি তা পারবেন পরবর্তী বছরের জুন মাসে। এখানে স্পিরিটটি সম্ভবত এই যে, একাডেমিক কার্যক্রম চলাকালীন অবসর নেওয়া চলবে না।

কিন্তু বর্তমানে যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয় একেক বছরে একেক মাসে। যে কোনো সভ্য দেশের জন্য এটি একটি হাস্যকর পরিস্থিতি। অনুষদের ডিনদের ধারণা যে, এভাবে সেশনজট কমানো যাচ্ছে। এক যুগের অধিক সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় লক্ষ্য করেছি, একটু একটু করে পনের বা বিশ দিন করে এগিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রচলিত সেশন, জুলাই থেকে জুন পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। কারণ উপাচার্য নিয়োজিত হন চার বছর আর ডিনরা দুবছরের জন্য। তাদের অফিসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এই হিসাব আবার গোলমেলে হয়ে যায়। এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই। তা থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেই যে কেউ গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেন।

সমাধানও এমন জটিল কিছু নয়। এভাবে পনের দিন বা এক মাস করে না এগিয়ে, কোনো একটি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত সেশনে, মানে জুলাই থেকে ক্লাস শুরু করিয়ে দিতে হবে। তাতে আগের বছরের সঙ্গে চলমান বছরের শিক্ষাকার্যক্রম কিছুটা সমান্তরাল হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ দেখা গেল, দুটো প্রথম বর্ষ পাশাপাশি চলছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কিছু অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দিয়ে সমান্তরালে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা যেতে পারে। যে কোনো এক বছর সঠিক সময়, অর্থাৎ জুলাই মাসে ক্লাস শুরু করা গেলে এবং এরপর থেকে প্রতি বছর জুলাইতে প্রতিটি বর্ষের ক্লাস শুরু করা গেলে চার বছরের ডিগ্রি সময়মতো শেষ করা যাবে। এভাবে চললে এক সময় কোনো রকম সেশনজট আর থাকবে না।

এই সহজ সমাধান নিয়ে ভাবার সময় উপাচার্য ও ডিনদের নেই। কিংবা তাদের কাছে হয়তো সেশনজটের ভিন্ন রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে।

সবচেয়ে বেদনাদায়ক হচ্ছে, একজন শিক্ষার্থী ডিগ্রি সমাপনান্তে মনে করতে পারে না যে, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন কোনটি ছিল। জীবনের সবচেয়ে মধুর দিনটি এভাবেই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। আমার স্পষ্ট মনে আছে একজন ছাত্র বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় ওখানকার কর্তৃপক্ষ তার প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরুর তারিখ জানতে চেয়েছিলেন। আমি আমার বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে বিব্রত হতে দেখেছি। কারণ তিনিও ভুলে গেছেন তারিখটি। কিন্তু যে কোনো দেশেই, হোক সেটা উন্নত কিংবা অনুন্নত, একাডেমিক সেশন শুরুর সময়, পরীক্ষা, ফলাফল, গ্রীষ্মকালীন কিংবা শীতকালীন ছুটি, দুই সেমিস্টারের মাঝখানের সময়ের ব্যবধান, সব পূর্বনির্ধারিত। বিষয়গুলি ওইসব দেশের আবহাওয়া, সংস্কৃতি, জাতীয় উৎসব ও অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করা।

বাংলাদেশে কোনো উপাচার্যের পক্ষেও বলা সম্ভব নয় যে, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বর্ষে কখন পরীক্ষা হয়ে গেছে, কোনটার ক্লাস চলছে, কোনটির ফলাফল দেওয়া হল। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই এক সময় সব নিয়মিত ছিল। প্রথম থেকে চতুর্থ, সকল বর্ষের ক্লাস একযোগে অনুষ্ঠিত ও শেষ হয়েছে; পরীক্ষাও হয়েছে একযোগে। পরীক্ষা শেষে ছাত্রছাত্রীরা গ্রামের বাড়ি চলে গেছে বেড়াতে। শিক্ষকরা পেয়েছেন অখণ্ড অবসর, দ্রুত দেখে ফেলেছেন পরীক্ষার খাতা। ছাত্রছাত্রীরা ফিরে এসে দেখেছে তাদের ফলাফল হয়ে গেছে মাত্র বাইশ দিনের মধ্যে। আবার শুরু হত নতুন বছরের ক্লাস।

বর্তমান চিত্র হচ্ছে, একেক ব্যচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা একেক সময় হয়। হয়তো প্রথম বর্ষ ও চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা নেই। একই রুম শেয়ার করা শিক্ষার্থীরা এর ফলে সমস্যায় পড়ে।

ফি বছর সব বর্ষের পরীক্ষা একযোগে অনুষ্ঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির চরিত্রও পাল্টে যেত। সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিক তৎপরতাগুলো নিয়মের মধ্যে চলে আসত। মিছিল, প্রচারণা ও কাউন্সিল এসব কর্মকাণ্ড পরীক্ষার সময় বাদ দিয়ে অনুষ্ঠিত হত। এখন দেখা যায়, একটি ব্যাচের পরীক্ষা চলাকালীন হলের মধ্যে মিছিল, বক্তৃতা, কাউন্সিল চলতে থাকে। তাতে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে।

সারা বছর ধরেই অনিয়মিতভাবে পরীক্ষা ও ক্লাস চলার কারণে দেখা যায়, প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পনের দিনের মধ্যেই দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিল সংশ্লিষ্ট বিভাগ কিংবা ডিনের দপ্তর। এই পনের দিন ছাত্রছাত্রীরা কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। অনেক সময় বর্ষা বা চরম গ্রীষ্ম হওয়ার কারণে কোথাও যেতে পারে না তারা। বিষণ্ণ দিন কাটানো ছাড়া আর উপায় থাকে না।

অথচ ষাটের দশকে শিক্ষার্থীরা পরের বছরের ক্লাস শুরু হওয়ার মাঝের সময়টুকু গ্রামের বাড়িতে বাবা মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে আসত। এতে পারিবারিক সংহতি বাড়ত। মূল্যবোধের জায়গাগুলো শাণিত থাকত। দীর্ঘ পরিবার-বিচ্ছিন্নতা মূল্যবোধের জায়গায় ঘুণ ধরায়; পরিবারের সঙ্গে চাপ শেয়ার করতে না পারায় মাদকদ্রব্য ব্যবহার বা রুক্ষ আচরণের প্রবণতা বেড়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট কমানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে রোজার ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এসবই বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা থেকে। কিন্তু যে রথী মহারথীরা দেশ উদ্ধারের প্রচেষ্টা হিসেবে এসব করছেন তাদের শিক্ষাদর্শনে জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়। শিক্ষা মানে অবিন্যস্ত উপায়ে কিছু বই পড়া আর পরীক্ষা দেওয়া নয়। যে সমস্ত ছুটি শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সে সব ছুটি বিশ্রাম, মানসিক বিকাশ ও বিনোদনের জন্য প্রয়োজন। উচ্চতর শিক্ষা একটি মানসিক চাপপূর্ণ শিক্ষা। অবসর, ছুটি ও বিনোদন সেটি আত্মস্থ করার জন্য খুব প্রয়োজন।

শিক্ষা চলাকালীন ক্যারিয়ার পরিকল্পনার জন্যও দরকার ছুটি। এ সময় দেশভ্রমণ কিংবা নিজ গ্রামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশলে শিক্ষার্থী দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। না হলে একজন বিচ্ছিন্ন আত্মমুখী মানুষ হয়ে উঠতে পারে সে।

সেশনজটের কারণে শিক্ষকদের পেশাগত ও ব্যক্তিজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা সম্পর্কে অনেকেই ভাবেন যে, এটি হল আরামের চাকরি; দিনে একটি কিংবা সপ্তাহে দুটি ক্লাস নিতে হয়। এই জাতীয় ছেলেমানুষীপূর্ণ ভাবালুতা দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয় শিক্ষকতার। মূলত, বাংলাদেশে শিক্ষার ঐতিহ্য বেশি দিনের নয় বলে এসব যুক্তিহীন ভাবালুতার চল হয়েছে। শিক্ষকতা একটি পেশা হিসেবে দেখলে বোঝা যাবে এখানে দায়িত্ব পালন কত কঠিন; সে তুলনায় প্রাপ্যতা বাংলাদেশেরই অন্য অনেক পেশার চেয়ে কম। অনিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষার কারণে শিক্ষকরা সব সময় চাপে থাকেন। পরীক্ষার হলে ডিউটি, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয়। একটি ব্যাচের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা মূল্যায়নের জন্য আলাদা করে সময় পাওয়া যায় না। কারণ তখন তিনি হয়তো আরও কোর্স পড়াচ্ছেন। এর ফলে শিক্ষকদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।

বছর ধরে পরীক্ষার চাপ থাকার আরেকটি কুফল দেখা যায় শিক্ষকদের গবেষণাকাজে। শুধু পরীক্ষার খাতা দেখাই নয়, বিবিধ পরীক্ষা কমিটিতে থেকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সম্মার্জনা ও ছাপানোর কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেবুলেশনের কাজও করেন শিক্ষকরা। সেশনজট যখন ছিল না তখন এ সমস্ত কাজ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় করতে হত। এখন করতে হয় সারা বছর।

সেশন শুরু ও শেষের তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তিত হওয়ার ফলে বহু শিক্ষক তাদের প্রাপ্য শ্রান্তিবিনোদন ছুটি ভোগ করতে পারেন না। রোজা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি সঙ্কুচিত করার ফলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন না। সন্তান স্কুল থেকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেয়েছে, কিন্তু শিক্ষক পিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন বলে সন্তানকে সময় দিতে পারেননি, এমন ঘটনা দেখেছি। আরেকটি সমস্যা হল, শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি হলেও সেশনজট কমানোর কথা বলে শনিবারে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা হচ্ছে।

নাগরিকরা বলতেই পারেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় তো শিক্ষকরাই চালান। উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ সবাই শিক্ষক। তাঁরা এসব সমস্যার সমাধান করে ফেললেই তো সরকার ও নাগরিকরা খুশি হবেন।

এভাবে ভাবলে দায়ী পক্ষ চিহ্নিত করা যাবে না। সমস্যা বোঝাও মুশকিল হবে। প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার যে, সেশনজটের শুরু আশির দশকে, স্বৈরশাসনের সময়। তখন স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে অনেক বার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করার এখতিয়ার একমাত্র সিণ্ডিকেটের। এসব স্বৈরতান্ত্রিক অবৈধ ছুটির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা এলোমেলো হয়ে যায়। এর রেশ সেশনজট আকারে বহন করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, আজও। এর জন্য কোনোভাবেই শিক্ষকরা দায়ী নন।

এর সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাস ও ছাত্রহত্যার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বন্ধ থাকা। উপাচার্যদের বিতর্কিত ও অবৈধ কর্মের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন উঠবে, উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্যদের হাতেই পরিকল্পনার ভার। তারা কেন একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করে সেশনজটের সুরাহা করছেন না?

প্রধান সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, এসব পদে রাজনৈতিক ভিত্তিতে নিয়োগদান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো পরিষদে বহুবার নির্বাচিত হয়ে পরিচিতি গড়ে না তুললে ওই সমস্ত পদে যাওয়া যায় না। সুতরাং শিক্ষকদের অনেকে প্রচুর সময় ব্যয় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতিতে। যার মাধ্যমে দল থেকে নিজের নমিনেশন নিশ্চিত করা যায়। ফলে হঠাৎ একটি পদ পেয়ে তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয় না। তাঁরা তা করতেও চান না। চেয়ারে বসে একাডেমিক পরিকল্পনার চেয়ে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ও তাদের প্রতিপক্ষ ম্যানেজ করাই বড় কাজ বলে মনে করেন পদধারীরা।

তাহলে সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে, রাষ্ট্র ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সেশনজটের সমস্যা একটি গুরুতর বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, যিনি একই সঙ্গে আচার্য, তিনি এটির সমাধানের জন্য উপাচার্যদের পরামর্শ দিতে পারেন। একই সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারেন। পাশাপাশি, বন্ধ করতে হবে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগদান। শিক্ষকদের কাছেও আশা করব, যেভাবেই কোনো পদে তাঁর নিয়োগ হোক না কেন, কোনো ছাত্র সংগঠনের তোষণনীতি বাদ দিয়ে তিনি একাডেমিক পরিকল্পনায় মনোযোগী হবেন। তবে এ-ও বুঝি, এই আকালের যুগে সে আশা না করাই ভালো।

সেশনজট স্বৈরশাসনের তৈরি ক্ষত। সেটি সারিয়ে তোলার জন্য সকলের সোচ্চার হওয়া উচিত। সেশনজট বন্ধ যে কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি হওয়ার দাবিদার বৈকি।।

জহিরুল হক মজুমদার: সহযোগী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।