জঙ্গি-দমন: সরিষার মধ্যে ভূত

জায়েদুল আহসান পিন্টু
Published : 31 May 2015, 07:23 AM
Updated : 31 May 2015, 07:23 AM

গত বছর এপ্রিলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কমিটির বৈঠকে হিযবুত তাওহীদ ও আনছারুল্লাহ বাংলা টিমের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকে সংগঠন দুটির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সরকারের এক বছর লেগে গেল আনসারউল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ করতে।

এই এক বছর কী এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে? জবাবটি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। অনেক দিন ধরেই আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতা নিয়ে গণমাধ্যমে খবর বেরুলেও সরকার সংগঠনটি নিষিদ্ধ করতে এত দীর্ঘ সময় নিল কেন এ বিষয়ে বিবিসি তাকে প্রশ্ন করেছিল। প্রতিমন্ত্রী উত্তরে জানিয়েছেন যে, সংগঠনটির প্রধানসহ প্রায় সবাইকে পুলিশ গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছিল বলে সরকারের ধারণা ছিল, সংগঠনটি নির্মূল করা গেছে; কিন্তু ইন্টারনেটে ওটির নানা তৎপরতা দেখে সরকার একে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ধারণা যে ভুল ছিল সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু তার বক্তব্য মোটেও ঠিক নয়। এই এক বছরে পুলিশ এই সংগঠনের টিকিরও নাগাল পায়নি। এখন পর্যন্ত গোয়েন্দারা আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে অন্ধকারেই রয়ে গেছেন। এই সংগঠনে কত সদস্য আছে, কারা এর সদস্য, কীভাবে এদের রিক্রুট করা হয়, অর্থের সংস্থান কোথা থেকে আসে, কীভাবে তারা পরিকল্পনা করে– এর বিস্তারিত কিছুই পুলিশ জানতে পারেনি। পুলিশ শুধু ব্লগার রাজিবের হত্যাকারী ৫ জনকে ধরতে পেরেছে। এরপর অভিজিৎ, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়ের খুনিদের কাউকেই ধরতে পারেনি। বাবুর খুনি দুজনকে তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন মানুষ ধরিয়ে দিতে না পারলে হয়তো তারা কখনও ধরা পড়ত না। এছাড়া আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের কাউকে ধরতে তেমন অভিযানও পুলিশকে চালাতে হয়নি। কারণ তাদের কোনো আস্তানার খোঁজই তারা জানে না।

একটা সময় গিয়েছে যখন এই দেশে জঙ্গিবাদের চাষাবাদ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিদের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালে এটি যে কত বড় একটি সমস্যা তা সরকারকে বোঝানো যায়নি। অথবা বুঝতে চাইত না তারা। তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর জঙ্গিবাদ কোনো সমস্যা বলে মনে করেননি। তখন দেশে জঙ্গিবাদের স্রষ্টা জামায়াতে ইসলামী সরকারের অংশীদার ছিল। স্বরাষ্ট্র সচিবও জামায়াতের রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাই সারাদেশে যখনই কোনো জঙ্গি ধরা পড়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা করা হত না। একদিকে ধরা পড়ত ওরা, অন্যদিকে বেরিয়ে যেত।

রাষ্ট্রীয় এই পৃষ্ঠপোষকতার ফলে তখন সারাদেশে একের পর এক হামলা চালিয়ে প্রগতিশীল মানুষদের মেরে ফেলেছে জঙ্গিরা। এরপরও তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন যে, দেশে জঙ্গি নেই। পরে জেএমবি ও জেমএমজিবি নিষিদ্ধ করতে দাতা সংস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারকে চাপ দিতে হয়েছে। হুজিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল হুজির উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করে, আপোষে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেই বৈঠক হয়েছিল ২০০৫ সালের ৬ অক্টোবর। ১৭ অক্টোবর সরকার হুজি নিষিদ্ধ করে।

বর্তমান সরকারের বিষয়টি আলাদা। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং জঙ্গিদের এক নন্বর টার্গেট। জঙ্গিরা মনে করে, শেখ হাসিনাই তাদের স্বপ্নের রাষ্ট্রগঠনে প্রধান বাধা। বারবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। শেখ হাসিনাও এটা ভালো করে জানেন যে, ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন তারপর থেকেই জঙ্গিরা তাঁকে টার্গেট করে রেখেছে। প্রশ্ন হল, তিনবার ক্ষমতায় এসেও কেন তিনি জঙ্গিদমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছেন না?

সমস্যা ঠিক কোথায় তা কেউ খুঁজে বের করছে না। বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েও জঙ্গিদমনে তেমন কিছু করতে পারেনি। এই সরকার জঙ্গিদের লালনপালন করে না, কিন্তু জঙ্গিদমন কার্যক্রমে কোথায় যেন একটা বড় ফাঁক রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কর্মকৌশল খুব দুর্বল মনে হচ্ছে। জঙ্গিরা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা বোঝার ক্ষমতা যে সরকারের আছে তা বিশ্বাস না করার কারণ নেই। তবে আমলারা সেটা বুঝতে পারছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তা না হলে সরকারের নানা উদ্যোগ কেন বাস্তবায়িত হয় না? তার মানে, সরকারের ভেতর সরকার রয়েছে এটা পরিস্কার।

জঙ্গি দমনে সরকার এ পর্যন্ত অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন, ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্ত এই জাতীয় কমিটির নির্দেশনা বাস্তবায়নে কারও মাথাব্যথা নেই। গত বছরের ১৪ আগস্ট কমিটির বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা সংস্থাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি জঙ্গি-দমন বিষয়ক অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ ছিল পাঠ্যসূচিতে জঙ্গিবাদবিরোধী লেখা অর্ন্তভুক্ত করার। মাদ্রাসার বইগুলোর সঙ্গে কোরআন ও হাদিসের কী কী বৈপরীত্য রয়েছে তা চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতি।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল জঙ্গিবাদবিরোধী তথ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং জঙ্গিবাদের নেতিবাচক দিক ও এর প্রভাব নিয়ে নিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের। এগুলো নির্মাণ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাজ ছিল, জঙ্গিবাদ নিয়ে নাটক নির্মাণ করে সেগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করা। যেমন, গণযোগাযোগ বিভাগের সহায়তা নিয়ে সেগুলো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রদর্শন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যাতে প্রতি মাসে একটি করে জঙ্গিবাদবিরোধী নাটক প্রচার করে সে ব্যবস্থা নিতেও তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ ছিল।

ওদিকে এই কমিটি পুলিশের বিশেষ বিভাগ (এসবি), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই), ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল দেশের সব ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কঠোর নজরদারি করার জন্য। কথা ছিল, পরবর্তী বৈঠকে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেবে।

এতগুলো নির্দেশনা দেওয়ার পর এসব কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাড়া কোনো সংস্থাই প্রতিবেদন জমা দেয়নি। অর্থাৎ সরকারের উচ্চ ক্ষমতার এই কমিটির সিদ্ধান্তও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সরকারের ওইসব নির্দেশনার কোনো একটি বাস্তবায়ন হয়েছে বলেও দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে না।

জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স করা হয়েছে। এতে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে টাস্কফোর্স সুপারিশ করবে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এর প্রধান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক, এনএসআইএর মহাপরিচালক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, এসবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম (এফআইইউ) ও জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেলের পরিচালক।

দেশে জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার এবং এতে অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা এই টাস্কফোর্সের। জঙ্গি তৎপরতা রোধে নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি, আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত নেবে এই টাস্কফোর্স।

উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাপক কর্মপরিধির টাস্কফোর্সের কর্মকাণ্ডে যে ধীরগতি দেখতে হচ্ছে তাতে জঙ্গিদমনে তা কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে সে সন্দেহ রয়ে যায়। এখন পর্যন্ত টাস্কফোর্স ইসলামী ব্যাংকের লভ্যাংশ ব্যয়ের একটি প্রতিবেদন পেয়েছে। সে প্রতিবেদনে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটির ফলাফল ঝুলে আছে। 'ইসলামি' নামধারী ব্যাংকগুলোর প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমাই দেওয়া হচ্ছে না। সেগুলো পাওয়ার পর তাদের প্রতিবেদনও যাচাই করার কথা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর অর্থ কীভাবে খরচ করা হচ্ছে তাও মনিটরিং করার কথা। জঙ্গিবাদের মূল উৎস অর্থ। সরকার উদ্যোগ নিলেও ওদের অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে, সরকারের কর্মকাণ্ডের ভেতরেই শুভঙ্করের ফাঁকি রয়ে গেছে।

জঙ্গি-দমনে বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাও একটি ফ্যাক্টর। ২০০৫ সালে সারাদেশে একযোগে বোমা হামলার পর দেশি-বিদেশি চাপে জেএমবির নীতিনির্ধারকদের ধরা হলেও তাদের বিচারে ছিল ধীরগতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, ২০০৭ সালে বাংলা ভাইসহ ৬ শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপর গত ৮ বছরে আর কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা যায়নি। এমন ৩৯টি আপিল মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। সে সময়ে ধরা পড়া জঙ্গিদের অনেকেই জামিন নিয়ে বের হয়ে হয়ে গেছে। এমনকি সাজাপ্রাপ্তদের অনেকেও জামিন পেয়েছে।

বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বলতে শুনি, জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার পর আদালতে হাজিরার তারিখে তারা আর হাজির হচ্ছে না। তখন তারা পুরোপুরি আত্মগোপনে গিয়ে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে, বদলে ফেলে ঠিকানা। তাই তাদের ওপর নজরদারি করা কঠিন হয়ে পড়ে। গোয়েন্দা পুলিশ আশা করে কীভাবে যে, জামিনে বের হয়ে জঙ্গিরা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিবে! তারা পালিয়ে যাবে না এটা ধরে নেয় কীভাবে!

আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে পাওয়া দূরের কথা, নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরির প্রকাশ্যে মিছিল করে বেড়াচ্ছে, তাদেরই খোঁজ নেই গোয়েন্দাদের কাছে। যে গোয়েন্দারা বিশ্বাস করে যে, জঙ্গিরা আইন মেনে চলবে, তাদের পক্ষে আর যাই হোক, জঙ্গিদের ওপর নজরদারি করা কঠিন হবে।

গত দশ বছরে সমস্যাটি নিয়ে বহুবার লেখালেখি ও বলাবলি করার পর সরকার এবার সেটি আমলে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে জঙ্গি ও দুর্ধর্ষদের জামিন মনিটরিং করতে বিশেষ সেল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জামিন পাওয়ার পর এসব আসামি কী করছে এবং মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে কি-না সেল এসব বিষয় তদারকি করবে। কিন্তু ভরসা রাখা যাচ্ছে না এ কারণে যে, সরকারের এ সংক্রান্ত অনেক উদ্যোগেরই ফলাফল পাওয়া যায়নি। এ সেলের ভবিষ্যত কী হবে তা জানার জন্য হয়তো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

যেহেতু সরকারের কোনো সংস্থা জঙ্গি ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না, যেহেতু এদেশে প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে শেখ হাসিনারই সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা, তাই তাঁর নেতৃত্বেই 'জাতীয় জঙ্গি দমন সংস্থা' করা যেতে পারে। এ সংন্থার অধীনে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী থাকবে যারা শুধু জঙ্গিদের আটক ও বিচারের মুখোমুখি করবে। প্রসিকিউশনের একটি বিভাগ দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কাজটি করে যাবে। একটি বিভাগ গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। আরেকটি বিভাগ জঙ্গিবাদের বিস্তাররোধে সচেতনতা সৃষ্টি করবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনকাজের পাশাপাশি কাউন্সেলিং করাবে একটি বিভাগ। পাশাপাশি. জঙ্গিদের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে জঙ্গি দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তাদের অপরাধসমূহ আমলযোগ্য অ-জামিনযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

তবে সবার আগে, জঙ্গিবাদ যে একটি বিরাট সমস্যা এটি স্বীকার করে নিতে হবে। নয়তো অদূর ভবিষ্যতে চাপাতির কোপ যে সরকারের ঘাড়ে কতদিক দিয়ে এসে পড়বে তা আগাম কেউ বলতে পারবে না।

জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করলেই জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়ে যাবে না। আগেও জঙ্গি তৎপরতার জন্য হিযবুত তাহরির, শাহাদাত-ই-আল হিকমা, জামায়াতে মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), এই পাঁচ সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাতে তাদের কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। নামে-বেনামে তারা কর্মকাণ্ড চালিয়েই যাচ্ছে। বরং নতুন নতুন সংগঠনের জন্ম দিচ্ছে। তাই জঙ্গি-দমনে এ যাবত গৃহীত সরকারের উদ্যোগে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা দরকার। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে সরকার শুধু নির্দেশনা দিয়ে যাবে, কাজের কাজ হবে না।

গত ছ বছরে সরকারের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তার ভেতরেই শক্তিশালী একটি জঙ্গি মদত গোষ্ঠী ঘাপটি মেরে আছে। সরকারের বাইরের শুধু নয়, ভেতরের মদতদাতাদেরও খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা তাই জরুরি।