বিএনপি বদলাবে: কোন দিকে কতটুকু

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 28 May 2015, 06:08 AM
Updated : 28 May 2015, 06:08 AM

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অভ্যন্তরীন সংকট নিয়ে সম্প্রতি নানা ধরনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। পর পর বেশ কিছু ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচির কারণে দলটি কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এখন যথেষ্ট দুর্বল, এলোমেলো, ভেঙে-পড়ার উপক্রম। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো খুব সহজ হবে না। কেউ-বা আরও এক কদম অগ্রসর হয়ে বলছেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করবে।

বিএনপিতে ব্যাপক পরিবর্তন না আনলে এই দলের পক্ষে আর কোমর সোজা করে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপিকে যদি বড় দলের মর্যাদা ধরে রাখতে হয়, ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবস্থান ধরে রাখতে হয়, তাহলে চারটি কাজ অবিলম্বে নির্মোহভাবে এই দলের নীতিনির্ধারকদের করতে হবে।

এক. দলটিকে সন্ত্রাস-সহিংসতার পথ ছেড়ে গণতান্ত্রিক ধারায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ফিরে আসতে হবে।

দুই. দলের সব পর্যায়ের কমিটি ভেঙে দিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।

তিন. নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দলের লন্ডনপ্রবাসী নেতা তারেক রহমানের নির্দেশ কিংবা পরামর্শ গ্রহণ না করে রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত দলের সিনিয়র নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে দল চালাতে হবে। অর্থাৎ তারেক রহমানের কথায় দল চালানোর নিয়ম বাদ দিতে হবে।

চার. জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সব ধরনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে হবে। এ নিয়ে কোনো ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেওয়া চলবে না।

এক সঙ্গে এই চারটি কাজ করা বিএনপির পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও প্রতিবাদে হরতাল বা অন্য কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না করায় এটা মনে করা হচ্ছে যে, বিএনপি হয়তো বদলাতে শুরু করেছে। তাছাড়া এতদিন বিএনপি যে অন্ধ ভারতবিরোধী নীতি অনুসরণ করে এসেছে, এখন সেখানেও পরিবর্তনে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দিল্লির প্রতি বিএনপির মনোভাব বেশ নরম। কিন্তু সাংগঠনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের লক্ষণ নেই। বিএনপির একক কর্তৃত্ব জিয়াপন্থী খালেদা জিয়ার হাতে। তিনি দল পরিচালনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মোটেও তোয়াক্কা করেন না। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করার চেয়ে লন্ডনে বসবাসকারী পুত্র তারেকের কথায় চলতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কথাই দলের মধ্যে শেষ কথা।

এ রকম স্বেচ্ছাচারী পদ্ধতিতে পরিচালিত একটি দলের মধ্যে ব্যাপক 'শুদ্ধি' অভিযান চালানোর কথা বলা যত সহজ, করা মোটেও তত নয়। বেগম খালেদা জিয়া গত কয়েক বছরে একাধিকবার দল এবং অঙ্গ সংগঠনগুলো গোছানো কিংবা কমিটি পুনর্গঠনের কথা বলেছেন। বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু তার একটিও সফল হয়নি। তিনি যত বার দল গোছানোর কথা বলেছেন, তত বারই যেন দল আরও বেশি অগোছালো হয়ে পড়েছে। সংগঠন গতিশীল করার লক্ষ্যে পুনর্গঠনের চেষ্টা করায় তা আরও স্থবির হয়েছে। নেতায় নেতায় এবং নেতায়-কর্মীতে বিশ্বাসের সংকট এতটাই তীব্র যে, কোনো প্রক্রিয়াই আর কাজ করছে না।

এক সময় বেগম জিয়ার নির্দেশ ছিল দলের সবার জন্য অবশ্য মান্য করার মতো বিষয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে দলের ওপর বেগম জিয়ার নিয়ন্ত্রণ বাইরে বাইরে বহাল থাকলেও, ভেতরে ভেতরে সেখানেও ধস নেমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বেগম জিয়া হুকুম দিলে জীবন দেওয়ার জন্য যাদের হাসিমুখে প্রস্তুত থাকার কথা, এখন তারা তাঁর নির্দেশ সেভাবে পালন করে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন এবং গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ-হরতাল চলাকালে ঢাকা নগরের নেতাকর্মীরা কার্যত বেগম জিয়ার নির্দেশ অমান্য করেছে অথবা তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে।

এই বাস্তবতায় তিনি যদি দল গোছানোর উদ্যোগ নেন, সেটা কতটুকু সফল হবে, সে প্রশ্ন উঠছে। এত দিনে এটাও অনেকের কাছেই স্পষ্ট হয়েছে যে, বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামের দল নয়। জনগণের প্রয়োজনে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দলের জন্ম হয়নি। দলটির জন্ম হয়েছে ক্ষমতার গর্ভ থেকে। ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘদিন থাকার অভিজ্ঞতা এই দলের নেই। ক্ষমতার লোভ-প্রলোভনে যারা মাতোয়ারা, যারা রাজনীতিকে একটি বিনা পুঁজিতে অধিক মুনাফার ব্যবসা হিসেবে দেখে, যারা আখের গোছানোর সবচেয়ে নিরাপদ উপায় ও ক্ষেত্র হিসেবে রাজনীতিকে বিবেচনা করে, তারাই মূলত ভিড় করে বিএনপিতে। কিন্তু বিএনপি যদি ক্ষমতায় যেতে না পারে, ক্ষমতালোভী নেতাকর্মীরা যদি বুঝতে পারে যে, এই দলের খুব সহসা আর ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাহলে তারা কোন আশা-ভরসায় বিএনপির পতাকা বহন করবে? এরা চেষ্টা করবে পতাকা বদলের।

বেগম জিয়ার আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারার তিন মাসের অবরোধ-হরতালের ব্যর্থ পরিণতি দলের নেতাকর্মীদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে যে, আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিএনপির পক্ষে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব নয়। আবার নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনও কতটা সম্ভব হবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং সর্বশেষ তিন সিটির নির্বাচনের পর সেটা নিয়েও বিএনপিতে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিএনপির দাবি অনুযায়ী নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাও অনেকেই দেখছে না। পরবর্তী নির্বাচনও বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, তাও বুঝতে না পারার কোনো কারণ নেই। একটি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক করেও যে খুব লাভ হয় না, এই অভিজ্ঞতাও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে হয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা এখন প্রকাশ্যেই বলছেন যে, 'আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তবে বেশি গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি না। মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদ যে পথে এগিয়ে গেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনাও সে পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই গণতন্ত্র আমরা মেনে চলব।'

আওয়ামী লীগের এই 'বেশি উন্নয়ন, কম গণতন্ত্র' নীতি দেশের মানুষ যদি কয়েক বছরের জন্যও মেনে নেয় তাহলে বিএনপির জন্য সবদিক দিয়েই কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত দীর্ঘসময় গণতন্ত্রহীনতায় থাকতে চায় না। বিএনপির জন্য আশার কথা আপাতত এটাই।

বিএনপিতে গ্রুপিং-কোন্দল এখন চরমে। বেগম জিয়া যদি একজনের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রেখে দায়িত্ব দেন, তাহলে অন্যরা একজোট হবে তার বিরুদ্ধে। সাদেক হোসেন খোকা ব্যর্থ বলে দায়িত্ব দেওয়া হল মির্জা আব্বাসকে। কিন্তু মির্জা আব্বাস কি সফল? এখন শোনা যাচ্ছে তাকেও বাদ দেওয়া হবে ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হবে। যদি তরুণ কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে তাকে ব্যর্থ করার জন্য আগের 'ব্যর্থরা' কি একজোট হবে না? কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একই সমস্যা।

এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার যে উপায় সেটা বিএনপি অনুসরণ করবে বলে মনে হয় না। গঠনতান্ত্রিক নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নিয়মিত সম্মেলন করা এবং সম্মেলনে কাউন্সিলদের ভোটে কমিটি নির্বাচন করলেই কেবল দলের ভেতরকার গ্রুপিং-কোন্দল বন্ধ করা যেতে পারে। তবে এটাও একবারেই পুরো সফল হবে মনে করার কারণ নেই। এই ধারা অনুসরণ করলে এক পর্যায়ে গিয়ে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে। দল পুনর্গঠনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের ধৈর্য্য এবং আগ্রহ বেগম জিয়ার আছে কি? নাকি এবারও তিনি শর্টকাট পথই অনুসরণ করবেন?

দলের নেতৃত্বে তারেক রহমানের উল্লম্ফন বিএনপির জন্য কাল হয়েছে। তারেক রহমানকে দ্রুত বড় নেতা বানাতে গিয়ে বেগম জিয়া যতটা না দলের স্বার্থচিন্তা করেছেন, তার চেয়ে বেশি করেছেন ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক স্বার্থচিন্তা। তার অবর্তমানে বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবে অন্য কারও কথা না ভেবে নিজের বড় ছেলে তারেকের কথা ভেবে বেগম জিয়া কার্যত বিএনপিকে একটি বন্ধ্যা দলে পরিণত করতে চলেছেন। দলের সিনিয়র নেতারাই শুধু নন, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নেতারাও বুঝে নিয়েছেন যে, বিএনটি একটি পারিবারিক প্রপার্টি। এখানে জিয়া পরিবারের বাইরের কারও শীর্ষ পদে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জিয়া পরিবারের কেউ বিএনপির নেতৃত্ব লাভ করলে কারও প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকত না। কিন্তু তারেক রহমানকে নেতা বানানো হয়েছে সম্পূর্ণতই বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত ইচ্ছায়।

চাপিয়ে দেওয়া নেতা হয়ে তারেক রহমান নিজের যে গুণ ও মানের পরিচয় দিয়েছেন, সেটাও সাধারণভাবে খুব প্রশংসিত হয়নি। তার মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিভা বা দূরদর্শিতা যতটা না দেখা গেছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছে ক্ষমতা ও সম্পদলীপ্সা। ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র 'হাওয়া ভবন' তৈরি করে তারেক বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন। জরুরি-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের মুখে ভবিষ্যতে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে তিনি সেখানে বসে যে রাজনীতি করছেন, সেটা এক কথায় ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অসত্য ও বিকৃত তথ্য দিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তৃতা করে এবং হঠকারী কর্মসূচি গ্রহণে দলকে বাধ্য করে তারেক বিএনপির যে ক্ষতি করেছেন, সেটা যদি এখনও দলের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে না পারেন, তাহলে সঠিক পথে ফিরে আসার উপায় বের করবেন কীভাবে?

তারেক রহমানকে বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি ভেবে যারা মাতামাতি করছেন, তারা একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন, বিএনপির বর্তমান ভেঙে-পড়া অবস্থার জন্য তারেকের ভূমিকা কতটুকু দায়ী।

জামায়াতের সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখির নীতি কিংবা অতিরিক্ত জামায়াতনির্ভরতাও বিএনপির জন্য কোনোভাবেই লাভজনক হয়নি। জামায়াতের সহায়তা নিয়ে নির্বাচনে জেতার সহজ কৌশল সাময়িক সুবিধা দিলেও বিএনপির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিএনপি তাকে স্বাধীনতার 'ঘোষক' বলে দাবি করে; যদিও পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতার ঘোষক বলে কোনো কিছুর খোঁজ পাওয়া যায় না। তারপরও জিয়ার কারণেই বিএনপিতে বেশ কিছু খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাও শরিক হয়েছেন। জিয়া বেঁচে থাকতে ভারসাম্যের রাজনীতির নামে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কৌশলে আঁতাত করলেও প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে জোটবদ্ধ হননি। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরার পর স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে মিতালী গড়ে তোলেন। দেশের তরুণ প্রজন্ম যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার তখন বিএনপির অবস্থান হয় তার বিপরীতে।

বিএনপির এই কৌশলের রাজনীতির ফাঁকিটা কেউ ধরতে পারবে না মনে করলেও বাস্তবে এটা অনেকের কাছেই ধরা পড়েছে। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি সমর্থন করেন না, আবার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি বলে মনে করেন, তারা এক সময় বিএনপির দিকে ঝুঁকে থাকলেও এখন বিএনপির জামায়াতনির্ভরতা তাদের বিএনপির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য করছে। জামায়াতের যে সমর্থন বিএনপি পাচ্ছে, তার থেকে বেশি সমর্থন তারা হারাচ্ছে জামায়াতপ্রীতির কারণে।

শোনা যাচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে নাকি ইদানিং জামায়াতের সম্পর্ক খুব ভালো যাচ্ছে না। দুই দলের মধ্যে নাকি বিভিন্ন ইস্যুতে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। গোলাম আযমের মৃত্যু, কামারুজ্জামানের ফাঁসি এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির প্রতি জামায়াতের ক্ষোভ বেড়েছে। তাছাড়া এর আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন একাধিকবার প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে। অতিসম্প্রতি জামায়াতের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন পরিবর্তনের ইঙ্গিত পেয়ে বিএনপিও নাকি ভাবছে জামায়াত ছাড়ার কথা। তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক খুব সহসাই বিএনপি-জামায়াতের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তেমন দেখতে পাচ্ছেন না।

বর্তমানে বিএনপির যেমন সাংগঠনিকভাবে 'ছেড়াবেড়া' অবস্থায় আছে, জামায়াতে ইসলামীও এখন পার করছে চরম দুঃসময়। দলের শীর্ষনেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের দুজনের মৃত্যুদণ্ড এর মধ্যেই কার্যকর হয়েছে। অন্যদেরও রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। অন্যদিকে, আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে জামায়াত এখন উপায়হীন। এই অবস্থায় বিএনপি যদি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়, তাহলে জামায়াত যে গোপনে বিএনপিতেই লীন হওয়ার চেষ্টা করবে না, তা কে বলতে পারে?

সম্ভবত কৌশলগত কারণেই জামায়াতের কোনো কোনো নেতা স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে জামায়াতের যে রাজনীতি তার জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি যে অধিক সহায়ক সেটা জামায়াত ভালো করেই জানে। তাই জামায়াতের পক্ষে আত্মরক্ষার সহজ পথ হল বিএনপিতে ঢুকে পড়া। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে যখন বিএনপিতে পরিবর্তন তথা বদলানোর প্রয়োজনীয়তা প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে, তখন বদলানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর পুরো জামায়াতই যদি বিএনপির ঘরে ঢুকে পড়ে তাহলে পরিবর্তন বা বদলটা আসলে কোন দিকে হবে?

নানা বাস্তবতায় বিএনপি হয়তো ঠিকই বদলাবে কিন্তু সে বদল এখনকার চেয়ে আরও খারাপ হবে কি-না সে প্রশ্ন তো থাকছেই।