সব অভিযোগ কি সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 13 May 2015, 01:42 AM
Updated : 13 May 2015, 01:42 AM

দেশের প্রধান দুই নগরীর তিন সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা শপথ নিয়ে কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা শেষ হচ্ছে না। তিন সিটিতেই মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন সরকারি দলসমর্থিত প্রার্থী। অধিকাংশ কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগসমর্থিত কিংবা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতেছেন। বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছেন, যদিও নির্বাচন শুরু হওয়ার তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপি ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। তবু তাদের যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, তারা শপথ নিয়েছেন, অর্থাৎ তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যে রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন নিয়ে তারা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, বিজয়ী হয়েছেন, তারা এই নির্বাচন গ্রহণ করছে না। এটি বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিও তোলা হয়েছে। এ দাবি যে মানা হবে না অথবা মানার জন্য যে এটি তোলা হয়নি, সেটা তাদের কমিশনাররাও জানেন, বোঝেন। সে জন্যই তারা শপথ নিয়েছেন।

বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমর্থক এবং আরও কেউ কেউ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদানসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। নির্বাচন কমিশন অনিয়মের অভিযোগ খুব বেশি আমলে নেয়নি। সরকারপক্ষও নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ বলেই মনে করছে।

সরকারের সমর্থক বলে পরিচিত অনেকেই আবার নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে মনে করলেও কিছু অনিয়ম যে হয়েছে সেটা অস্বীকার করছেন না। তারা মনে করেন, নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে সেটা এমন ব্যাপক নয় যে, এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আমাদের দেশে প্রায় সব নির্বাচনেই কমবেশি অনিয়ম হয়ে থাকে। তবে অতীতে অনেক নির্বাচনে যেভাবে ভোটের ফলাফল বদলে দেওয়া হয়েছে, এবার তা হয়নি। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করত এবং তাদের নেতা-কর্মীরা সাহস করে মাঠে থাকত, তাহলে নির্বাচনে যে সামান্য অনিয়ম হয়েছে তাও হয়তো হত না। সরকারপক্ষকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না বলে বিএনপি নেতারা হম্বিতম্বি করেছেন, কিন্তু বাস্তবে ভীত হয়ে তারা মাঠ ফাঁকাই করে দিয়েছেন। সরকারপক্ষ কোথাও কোথাও এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।

নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ যারা করেছেন, তাদের কোনো অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয়। বলা হচ্ছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে 'অনেক' ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে; 'অনেক' জালভোট পড়েছে; 'অনেককে' ভোট দিতে দেওয়া হয়নি; বিরোধী প্রার্থীদের 'অনেক' পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে; 'অনেক' এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি ই্ত্যাদি।

এই 'অনেক' শব্দ দিয়ে কি প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়? সংখ্যা উল্লেখ না করলে তুলনামূলক আলোচনা করা যায় না। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভোটকেন্দ্র ছিল ২ হাজার ৭০০। এর মধ্যে কয়টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, বিএনপিপ্রার্থীদের কতজন পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে, কতজনকে বের করে দেওয়া হয়েছে তার প্রকৃত সংখ্যা কিন্তু কেউ বলতে পারছেন না।

'অনেক' বলে ঢালাও অভিযোগ করলে আসলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যায় না। আমাদের মতো দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোতে নির্বাচনে মোটামুটি শতকরা ১০ ভাগ অনিয়ম খুব অস্বাভাবিক বলে মনে করা হয় না। সে হিসেবে ২ হাজার ৭০০ কেন্দ্রের মধ্যে ২৭০টি কেন্দ্রেও যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তাকে খুব বড় করে দেখা উচিত নয়। ৬০-৭০টির বেশি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে বলে গণমাধ্যমেও খবর নেই। তাছাড়া যারা ক্ষমতায় থাকে তারাই শুধু ভোটারদের ওপর জোর খাটায় না, যে প্রার্থীর যে জায়গায় শক্তি বেশি সে জায়গায় তারাই জোর দেখায়।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আমরা সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু ভারতের অনেক রাজ্যে এখনও নির্বাচনের দিন 'জোর যার মুল্লুক তার' নীতি অনুসরণ করতে দেখা যায়। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা সেখানে এখনও নিয়মিতই ঘটে। এগুলো নিয়ে বাদ-প্রতিবাদও হয়।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সিটি ও পৌর করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলকাতা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে। বলা হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফলাফল বদলে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলাফল ঘোষণার পর বামফ্রন্ট ও বিজেপি আলাদা আলাদাভাবে কলকাতায় 'বনধ'ও ডেকেছিল। ব্যস, ওই পর্যন্তই। আমাদের দেশে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে যেভাবে হায় হায় মাতম করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে সে রকম দেখছি না।

নির্বাচনে অনিয়মের গুরুতর অভিযোগটি ঢালাওভাবে তোলার কারণে সেটি অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না। যেমন, নির্বাচন কেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকার বিষয়টি। সবাই জানেন, এবার বুথের সংখ্যা বেশি থাকায় সব বুথের জন্য পোলিং এজেন্ট দিতে হলে একজন প্রার্থীর কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মীর প্রয়োজন হত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া আর কোনো দলের প্রার্থীর পক্ষে কি এত বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব ছিল?

বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে, সেটা না হয় বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। কিন্তু সিপিবি-বাসদ কিংবা গণসংহতির প্রার্থীরাও যদি বলেন যে, তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে, সেটা খুব বিশ্বাসযোগ্য হয় কি? তারা কয়টি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিয়েছিলেন? তাদের মধ্যে কয়জনকে বের করে দেওয়া হয়েছে? সংখ্যা না বলে ঢালাও অভিযোগ করলে তা গুরুত্ব হারায়।

বিএনপিও যে সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারছিল না, সে খবর নির্বাচনের দু-তিন দিন আগে খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে। আবার নির্বাচনের দিন বেশ কিছু কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। মারধরের পর কোনো এজেন্টকে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করতে দেখা যায়নি। আহত হয়ে কাউকে চিকিৎসা নিতে হয়নি। এমন নির্বাচনী সহিংসতার কথা আগে কখনও শুনেছেন কেউ?

এবার আসুন ভোটের হার নিয়ে। নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে, নির্বাচনে শতকরা ৪৪ ভাগ ভোট পড়েছে। বলা হচ্ছে, জালিয়াতির কারণেই ভোট প্রদানের হার এত বেশি হয়েছে। বাস্তবে কত ভোট পড়েছে সে কথা কেউ বলছেন না। দুপুর বারোটা পর্যন্ত প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। অনেক কেন্দ্রে লাইন দিয়ে মানুষ ভোট দিয়েছে। বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে ভোটার উপস্থিতি কমে গিয়েছিল। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, বারোটার পর কেউ ভোট দিতে যায়নি। বিএনপি-জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে ছিলেন এবং তারা তাদের ভোটারদের কেন্দ্রে আনার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত করে গেছেন।

তারপরও যদি মনে হয়, নির্বাচন কমিশন ভোট প্রদানের হার বাড়িয়ে দেখিয়েছেন তাহলে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তা বলতে হবে। বিএনপির প্রদত্ত তথ্যের নমুনা দেখুন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দলের নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুর বারোটায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার সময় সংবাদ সম্মেলনে জানান, শতকরা ৫ ভাগের বেশি মানুষ ভোট দেননি। আবার ঢাকা দক্ষিণের বিএনপিসমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেছেন, তিনি সকাল এগারোটা পর্যন্ত যে সব কেন্দ্রে গেছেন সেখানে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি।

ব্যারিস্টার মওদুদ কোনো কেন্দ্রে না গিয়ে বলেছেন যে, ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দেয়নি। আফরোজা কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, মওদুদ যা বলেছেন তার তিন গুণের বেশি ভোট পড়েছে! কার কথা বিশ্বাস করব? আফরোজা গিয়েছেন মাত্র কয়েকটি কেন্দ্রে। তাছাড়া তার অভিজ্ঞতা বেলা বারোটা পর্যন্ত। তার পরের পাঁচ ঘণ্টায় কত শতাংশ ভোট পড়েছে সে হিসাব কে দেবে?

আমাদের দেশে পরাজিত প্রার্থীরা কখনও নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মানতে চান না। ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে বামপন্থী প্রার্থী জোনায়েদ সাকি ৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়েও মনে করছেন তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে! বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরী ১৪ হাজারের উপরে ভোট পেয়েও মনে করেন 'সুষ্ঠু' নির্বাচন হলে তিনি জিতে যেতেন। আসলে কি তাই? যত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই হোক না কেন, এই প্রার্থীদের কি এদেশের মানুষ ভোট দিতে আগ্রহবোধ করেন?

সব জেনেশুনেও তারা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকছেন না। সবাই শুধু জয়ের জন্য নির্বাচন করেন। সব প্রার্থীকে বিজয়ী করার মতো 'সুষ্ঠু' নির্বাচন ব্যবস্থা কোনো দেশে আবিষ্কৃত হয়েছে কি?

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন অনেকেই। এই কমিশনের দুর্বলতা নেই, সেটা বলা যাবে না। কমিশন অনেক ক্ষেত্রে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে পারেনি। তাদের কিছু কিছু উদ্যোগ মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে তাড়াহুড়া করে এবং সেনা মোতায়নের বিষয়ে প্রথমে এক রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে অল্পসময় পরেই তা বদলিয়ে কমিশন বিতর্ক বাড়িয়েছে।

এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনটি যতটা 'স্ট্রং' ছিল বলে মনে করা হয়, বর্তমান কমিশনকে সে রকম নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যত কঠোরতাই দেখাক, পরাজিত পক্ষ কি তাকে ভালো বলে? সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা এবং তার আরেক সহকর্মী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছেন। তাদের কি মনে আছে, তাদের সম্পর্কে এক সময় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা কী মন্তব্য করেছিলেন? বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে যেমন এখন মেরুদণ্ডহীন ও সরকারের অনুগত বলা হচ্ছে, হুদা কমিশনকেও তো বিএনপি তাই বলেছিল, নয় কি?

কথা বলার সময় আমাদের অনেকেরই মাত্রাজ্ঞান বা অনুপাতজ্ঞান থাকে না। সিটি নির্বাচন নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। এখনও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য। দেশবাসীর কাছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত। তার লেখা বই পড়ে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করেছে। তিনি রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ঘরানার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় বাহবা পাওয়ার জন্য সস্তা মন্তব্য করে থাকেন। কিন্তু এমাজউদ্দিন একজন শিক্ষাবিদ; তিনি অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন কেন? তিনি মানুষকে আলোকিত করবেন; ক্রান্তিকালে জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করবেন।

তিন মাসের অর্থহীন, অসহনীয় জনদুর্ভোগের সহিংস আন্দোলন থেকে বিএনপিকে বের করে সিটি নির্বাচনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে রাজি করাতে ড. এমাজউদ্দিন যে ভূমিকা পালন করেছেন, সেটির প্রশংসা অনেকেই করেছে। কিন্তু নির্বাচনের দিন তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা অনেককেই হতাশ করেছে। তিনি বলেছেন, দীর্ঘ জীবনে এত খারাপ নির্বাচন নাকি দেখেননি। তিনি একে 'নিকৃষ্ট' বলে অভিহিত করেছেন!

আমাদের দেশে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসকরা যে নির্বাচন ব্যবস্থা একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছিল সে কথা তিনি ভুলে গেলেন কী করে? জিয়ার 'হ্যাঁ-না' ভোটের কথা কি তার মনে নেই? ঊনআশি সালের সংসদ নির্বাচন কিংবা এরশাদ আমলের নির্বাচন এবারের সিটি নির্বাচন থেকে 'উৎকৃষ্ট' ছিল কি? ভোট ডাকাতি, মিডিয়া ক্যু– এসব শব্দ কখন চালু হয়েছিল? বেগম জিয়ার প্রথম সরকারের সময় মাগুরায় উপনির্বাচন কেমন হয়েছিল? কেমন উপনির্বাচনে মোসাদ্দেক আলী ফালু এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন? বেগম জিয়া ছিয়ানব্বইয়ের ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে মাত্র কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেটাই-বা এমাজউদ্দিন ভুলে গেলেন কী করে?

এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি আদর্শ নির্বাচনের উদাহরণ তা অবশ্যই বলা যাবে না। কিন্তু একে 'নিকৃষ্ট' বা বাতিলযোগ্য বলে শোরগোল তুললে এটাই মনে হবে যে, বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই তা করা হচ্ছে। বিএনপি একে বিতর্কিত করার রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে এতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের একশ্রেণির গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলে দাবিদার কিছু মানুষ 'গেল গেল' বলে যে হাহাকার করছেন, তা কি কোনো বিশেষ এজেন্ডা ছাড়াই? নির্বাচন নিয়ে তাদের সমালোচনামুখর হয়ে ওঠা কি গণতন্ত্রের প্রতি দরদ থেকে, নাকি আওয়ামী লীগকে পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবিয়ে উপযুক্ত 'শিক্ষা' দেওয়া গেল না বলে মনোবেদনা থেকে?

আমরা সবাই বিতর্কমুক্ত নির্বাচন চাই। কিন্তু সেটা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা করলে হবে না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং নাগরিক সমাজকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা করতে হবে। রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা হবে না, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অন্য কোথাও অনুসরণ করা হবে না, শুধু ভোটের দিন সব কিছু ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হবে বলে আশা করলে চলবে কেন?

বিভুরঞ্জন সরকার: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।