যখনি জাগিবে তুমি

মুহম্মদ জাফর ইকবালমুহম্মদ জাফর ইকবাল
Published : 24 April 2015, 03:40 AM
Updated : 24 April 2015, 03:40 AM

১.

বাংলা নববর্ষ উদযাপন নিয়ে আমার সব সময়েই এক ধরনের অহংকার ছিল। আমি সুযোগ পেলে সবাইকে বলে এসেছি ইংরেজি বছরের শেষে যখন নূতন বছরের শুরু হয় তখন সেটা উদযাপন করা নিয়ে যেটা করা হয় সেটা রীতিমতো তাণ্ডব। সেই তুলনায় বাংলা নববর্ষ হচ্ছে খুবই কোমল এবং মধুর একটি ব্যাপার। মনে আছে ডিসেম্বরের একত্রিশ তারিখ রাতে ঢাকা শহরেই আমি ইংরেজি নববর্ষের একটা তাণ্ডবের মাঝখানে পড়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছিলাম।

বাংলা নববর্ষের শুরুটা সম্পূর্ণ অন্যরকম– খুব ভোরে কোথাও বসে মধুর কিছু গান শুনতে শুনতে বছরটি বরণ করে নেওয়া। এর মাঝে যে আঘাত আসেনি তা নয়। চৌদ্দ বছর আগে রমনার বটমূলে বোমা ফাটিয়ে বর্ষবরণ করতে আসা তরুণ-তরুণীদের হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বাঙালিদের ভয় দেখানো যায়নি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে এই দেশের মানুষ বাংলা নববর্ষ পালন করতে শুরু করেছে, প্রত্যেক বছর উৎসবটি পালন করা হচ্ছে আগের বছরের থেকে আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে। সত্যিকারের উৎসব বলতে যা বোঝায়, বাংলা নববর্ষ হচ্ছে তার সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ। কোমল এবং মধুর একটা উৎসব।

এই বছর কথাটি লিখতে গিয়ে এবারে আমার হাত কেঁপে উঠল। নববর্ষের দিনই আমি খবরে দেখেছি কিছু মানুষ মেয়েদের উপর হামলা করে পুরো উৎসবের আনন্দটিতে লজ্জা ক্ষোভ আর অপমানের গ্লানি স্পর্শ করিয়েছে। আমি খুব দুর্বল প্রকৃতির মানুষ, যখন এই ধরনের খবর দেখি তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিই। যেন চোখ ফিরিয়ে নিলেই এই খবরগুলো আদৃশ্য হয়ে যাবে। খবরগুলো অদৃশ্য হয়নি। দেশের ছেলেমেয়েরা আমার সাথে যোগাযোগ করেছে; আমার কাছে জানতে চেয়েছে কেমন করে এটি সম্ভব?

আমিও জানতে চাই কেমন করে এটি সম্ভব?

২.

আমরা সবাই জানি আমাদের আশেপাশে অসুস্থ বিকারগ্রস্ত কিছু মানুষ থাকে। এরা ভীড়ের মাঝে সুযোগ বুঝে মেয়েদের শরীরে হাত দেয়। প্রায় প্রতি বছরই এ রকম একটি দুটি বিকারগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়। বই মেলায় আমি যখন বসে বসে আটোগ্রাফ দিই তখন মাঝে মাঝেই আশপাশে ছেলেমেয়েদের ভীড় জমে উঠে এবং প্রতি বছরেই সেখানে হঠাৎ করে একটি মেয়ে চিৎকার করে কোনো একজন মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, পায়ের জুতো খুলে মানুষটির মুখে মেরে বসতে দ্বিধা করে না। সেই মানুষগুলোর চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের ভেতরে এ রকম ফর্দা একটা প্রাণি লুকিয়ে আছে, প্রায় সময়েই তারা কমবয়সী সুদর্শন তরুণ!

এই মানুষগুলো কিন্তু শুধুমাত্র ভীড়ের সুযোগ নিয়ে গোপনে একটি মেয়ের শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা ভীরু এবং কাপুরুষ– প্রকাশ্যে কিছু করার তাদের সাহস নেই। তাদেরকে ধরে যখন পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় তারা কোনো প্রতিবাদ করে না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। এরা সমাজের এক ধরর জঞ্জাল– শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশে সব কালে এরা থাকে, এরা থাকবে।

এবার নববর্ষে যারা মেয়েদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের সঙ্গে কিন্তু এই ভীরু কাপুরুষ বিকারগ্রস্ত মানুষদের একটা বড় পার্থক্য আছে– এই মানুষগুলো কিন্তু ভীড়ের মাঝে লুকিয়ে আসেনি– তারা এসেছে দল বেঁধে, প্রকাশ্যে সবার চোখের সামনে। এই দেশে পকেটমার ধরা পড়লে গণপিটুনিতে তার একেবারে মরে যাবার ঝুঁকি থাকে। নববর্ষে যারা মেয়েদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে এসেছে, কোনো একটা বিস্ময়কর কারণে তারা জানে তাদের কোনো ভয় নেই, কেউ তাদের ধরবে না। একেবারে সবার সামনে তারা যা খুশি করতে পারবে, কেউ তাদের কিছু করার সাহস পাবে না। পুলিশ কিছু করবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাদের বাধা দিতে আসবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরও তাদের কাজকর্মের নিন্দা করবে না। মহাশক্তিধর এই তরুণেরা কারা? তাদের কি রাজনৈতিক পরিচয় আছে?

থাকলেও আমি একটুও অবাক হব না। বর্ষবরণের দিন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি ঘটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা– খবরের কাগজে পড়েছি তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে, তারপর পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে কী না জানি না। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে নাকি ছেড়ে দিয়েছে সেটাও আমরা জানি না।

একই দিনে আদিবাসী একটি মেয়েকে নিপীড়ন করার জন্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন দুইজন নয়, আট জন ছাত্রলীগের কর্মী (অথবা নেতাকে) বহিস্কার করা হয়েছে। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি। কিন্তু তারা যে অপরাধটি করেছে সেটি দেশের আইনে অনেক গুরত্বপূর্ণ অপরাধ। আমার জানার খুবই কৌতূহল, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে কী না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে হইচই শুরু হয়েছে, কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ কেন নেই? ঐ ঘটনাগুলো কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা থেকে কোনো অংশে কম বীভৎস?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ষবরণের দিনের ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে, নিশ্চিতভাবে তারা সবাই একটা দলের। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে এসে পুরোপুরি অপরিচিত কিছু তরুণ একে অন্যের সঙ্গে প্রথমবার পরিচিত হয়ে আলাপ আলোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্রমণ শুরু করেনি। আমাদের সবার প্রশ্ন, এই দলটি কাদের? নৈতিকতার ধারক বাহক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলার ধারক বাহক প্রক্টর এবং পুলিশ বাহিনী এত আশ্চর্য রকম নিরব কেন? ছোটখাট ঘটনায় সোচ্চার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ এখন হঠাৎ করে এত চুপচাপ কেন? বিষয়টি কি তাদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না– নাকি আমাদের তার থেকেও গুরুতর কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে যে, সামাজিক মাধ্যমের অভিযোগে সত্যতা আছে– অর্থাৎ ছাত্রলীগের ছেলেরাই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে?

পুলিশ বাহিনীর হাতে যে সিসি ক্যামেরায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ আছে সেগুলো কেন প্রকাশ করে সকল সন্দেহ মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে না? সেগুলো প্রকাশ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর কেউ না কেউ নিশ্চয়ই তাদের চিনতে পারবে– তার পরিচয় জানতে পারবে। আমরা চাই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হোক, তাদের বন্ধু-বান্ধবেরা জানুক যে. তাদের পরিচিত ছেলেটি আসলে একটি দানব; তার শিক্ষকেরা জানুক যে, তারা তার ছাত্রটিকে মানুষ করতে পারেননি; তার ছোট ভাই বোন জানুক তার বড় ভাই একজন অমানুষ; তার বাবা মা জানুক তারা একটা পশু জন্ম দিয়েছেন। যদি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকে তাহলে তাদের নেতারা জানুক তাদের সমস্ত অর্জন কারা চোখের পলকে ধূলায় মিশিয়ে দিচ্ছে।

৩.

যখন থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন শুরু হয়েছে, প্রায় ঠিক সেই সময় থেকেই কিছু মানুষ এটাকে ধর্মবিরোধী একটা কাজ বলে প্রচার করতে শুরু করেছে। পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের নিজস্ব কালচারে নিজেদের ক্যালেন্ডার আছে– সেই ক্যালেন্ডারের হয়তো এখন আর সে রকম গুরুত্ব নেই– তারপরেও সবাই খুব আনন্দোল্লাস করে তাদের নববর্ষ উদযাপন করে। সেই নববর্ষ উদযাপন নিয়ে কখনও কাউকে সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মানুষ যখন আমাদের বাংলা বছরের বর্ষবরণ করতে যাচ্ছি, তখন হঠাৎ করে সেটা কেমন করে ধর্মবিরোধী কাজ হয়ে গেল সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই।

চৌদ্দ বছর আগে বোমা মেরেও মানুষকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন থেকে সরিয়ে আনা যায়নি। কিন্তু আমার মনে হয় এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় অনেক মানুষই এই উৎসব পালনের জন্যে নিজের স্ত্রী বা কন্যাকে নিয়ে বের হওয়ার আগে একবার চিন্তা করবেন।

আমরা তো সেটা কখনও চাই না। এই দেশের সবচাইতে বড় সর্বজনীন উৎসবটি সবাই মিলে উদযাপন করা থেকে যদি পিছিয়ে আসে তাহলে কেমন করে হবে? তাই যেভাবেই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদেরকে ধরতেই হবে, শাস্তি দিতেই হবে। ভবিষ্যতে আর কখনও এ রকম ঘটনা ঘটবে না এ ধরনের একটা বিশ্বাস তৈরি করতেই হবে। পুলিশের কাছে তথ্যের অভাব নেই, তারা যদি কাউকে ধরতে না পারে বুঝতে হবে ইচ্ছে করে তারা এই মানুষগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছে।

এত কষ্ট করে ধীরে ধীরে আমরা যখন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির একটা ক্ষেত্র তৈরি করছি তখন সেটাকে লণ্ডভ্ণ্ড করে দেওয়াটি আমাদের কারও পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কেউ মেনে নেবে না।

৪.

বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এই অসভ্য বর্বর ঘটনাটির খুঁটিনাটি খবর ধীরে ধীরে আমরা সবাই জানতে শুরু করেছি। দলবেঁধে অনেকগুলো তরুণ যখন কিছু মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে তখন বিশাল সংখ্যক মানুষ দর্শক হিসেবে সেটি দেখেছে– সাহায্যের জন্যে এগিয়ে যায়নি। আমরা এটি বার বার ঘটতে দেখেছি। অভিজিতকে হত্যা করার সময়েও একই ব্যাপার ঘটেছে, তার স্ত্রী সাহায্যের জন্যে চিৎকার করছেন, এগিয়ে যায়নি। বিষয়টা হয়তো নানাভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব এবং কেন এটি ঘটেছে কিংবা কেন এটাই স্বাভাবিক সে রকম একটা যুক্তিতর্কও দাঁড় করানো সম্ভব, কিন্তু তারপরেও এটা গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের বেশ কিছু তরুণ সাহায্যের জন্যে এগিয়ে গিয়েছে এবং তাদের কেউ কেউ সাহায্য করতে গিয়ে আহতও হয়েছে– এই মূহূর্তে সেই কথাটি চিন্তা করে আমরা এক ধরনের শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছি যে, সবাই নিরব দর্শক হয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলেনি। এই দেশের তরুণদের নিয়ে আমি সব সময়েই স্বপ্ন দেখি, আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি আমাদের দেশের তরুণদের উপর বিশ্বাস রাখি, তাদেরকে দায়িত্ব দিই, তাহলে নিশ্চয়ই তারা এগিয়ে আসবে।

গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম দিনগুলোয় কথা মনে আছে? অসংখ্য ছেলেমেয়ে, নারী, পুরুষ পাশাপাশি শাহবাগে রাত কাটিয়েছে; কখনও কারও কাছ থেকে একটি অভিযোগ শুনতে পাইনি। উনিশশ একাত্তর সালে যখন পাকিস্তান মিলিটারি হামলা করেছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণের ভয়ে দেশের ভেতরে ছুটে বেরিয়েছে; তখনও কিন্তু একেবারে সাধারণ মানুষেরা একজন আরেকজনকে সাহায্য করেছে। আমি নিজে তার সাক্ষী। মানুষের ভেতরে এক ধরনের শুভ বোধ থাকে, দেশটাকে জাগিয়ে তোলা যায়। আমাদের দেশেই অনেকবার সেটাকে জাগ্রত হতে দেখেছি, এখন কেন আবার পারব না?

যত দিন যাচ্ছে আমার ভেতরে ততই একটা ধারণা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে; সেটি হচ্ছে আমাদের দেশটির প্রধান শক্তি হচ্ছে এই দেশের ছেলে এবং মেয়েদের পাশাপাশি কাজ করার শক্তি। আমাদের দেশে স্কুলে ছেলেরা আর মেয়েরা প্রায় সমান সমান; একটু বড় হলে বাবা মায়েরা জোর করে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন; তখন তাদের সংখ্যা একটু কমে আসে। তারপরেও আমাদের দেশে মেয়েরা অনেক বড় সংখ্যায় ছেলেদের পাশাপাশি এগিয়ে আসছে।

সেই মেয়েদের যদি আমরা একজন মানুষ হিসেবে না দেখে শুধু মেয়ে হিসেবে দেখে তাদের অবমাননা করার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের স্বপ্ন দেখার থাকল কী? আমি খুব আশাবাদী মানুষ, আমার ভিতরে বিষয়টি নিশ্চয়ই ঘটেছে উনিশশ একাত্তর সালে। যখন টিকে থাকা দূরে থাকুক, বেঁচে থাকব কী না সেটাই জানতাম না, তখনও আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্ন একদিন সত্যি হয়েছে। যত দুঃসহ অবস্থাই হোক আমি স্বপ্ন দেখা থেকে পিছিয়ে আসিনি।

এই নববর্ষে আবার খুবই বড় ধরনের দুঃসময় আমাদেরকে বিপর্যস্ত করেছে। আমি কিন্তু তার মাঝে আবার স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের মানুষ ঘটনাটি নির্লিপ্তভাবে দেখেনি। পুরো দেশের মানুষ প্রতিবাদে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই দুটি বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে– ছাত্র শিক্ষক তাদের বুকের ভেতরের ক্ষোভ সবার সামনে প্রকাশ করেছে। শুধু তাই না, আমি দেখেছি এই দেশের মেয়েরা মোটেও অসহায় নির্যাতিতা মেয়ে হিসেবে হতাশার ক্রন্দন করেনি– তারাও গর্জন করে উঠেছে। আমি স্বপ্ন দেখছি, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি এই মেয়েরাও এই দেশে অসভ্য এবং বর্বর কিছু মানুষের এই কাপুরুষোচিত আচরণ আর সহ্য করবে না। প্রয়োজনে তাদের উপর পাল্টা কষাঘাত করবে– আর এই ভীরু কাপুরুষগুলো গর্তের ভেতর ঢুকে যাবে।

হয়তো আমরা আমাদের দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে পালন করিনি– আমরা হয়তো আমাদের সন্তানদের, আমাদের নূতন প্রজন্মকে কিছু মূল্যবোধ শেখাতে ভুলে গিয়েছি। হয়তো পুরো বিষয়টি নিয়ে আমাদের নূতন করে ভাবতে হবে, আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের ছাত্রছাত্রীদেরকে, আমাদের নূতন প্রজন্মকে মূল্যবোধটি শিখিয়ে দিতে হবে। তাদেরকে বলে দিতে হবে, যারা অন্যায় করে তারা আসলে ভীরু এবং কাপুরুষ। তাদেরকে হয়তো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই দুটি লাইন বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে:

যখনি জাগিবে তুমি সম্মুখে তাহার

তখনি সে ভীত কুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে

যাবে মিশে!


মুহম্মদ জাফর ইকবাল:
লেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।