অন্যায় আর অসৎ নির্লিপ্ততা

নাদির জুনাইদ
Published : 9 April 2015, 01:00 AM
Updated : 9 April 2015, 01:00 AM

দুষ্কৃতকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অভিজিৎ রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। রক্তাক্ত শরীরে হতবুদ্ধি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন বন্যা আহমেদ, স্বামীর নিথর দেহের পাশে। সামান্য দূরেই জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছে কিছু মানুষ। তাদের মুখে খুব বিচলিত, ক্ষুব্ধ বা আতঙ্কিত ভাব লক্ষ্য করা যায় কি? মনোযোগ দিয়ে দেখলে বরং বোঝা যায় তাদের নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি। এ বিষয়ে সন্দেহ থাকে না যখন জানা যায় যে, কেবল একজন ফটোসাংবাদিক অভিজিতকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও এমন গুরুতর আহত দুজন মানুষের জন্য এই আধুনিক শহরে দ্রুত অ্যামবুলেন্স আনানোর ব্যবস্থা করা যায়নি। চলমান একটি অটোরিকশা থামিয়ে টিএসসি থেকে খুব কাছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিজিতকে নেওয়া হয়। যাত্রাপথে অটোরিকশা থেকে অভিজিতের পা বের হয়ে থাকে। জীবন নিজের কোলে অভিজিতের ক্ষত-বিক্ষত মাথাটি রেখে তার কাটা অংশ চেপে ধরে রাখেন যাতে ঘিলু আর বের হয়ে না আসে। একজন পুলিশ সদস্য সেই অটোরিকশার পেছনে আসছিলেন তাদের যাত্রা নিরাপদ রাখার জন্য। এমন কষ্ট করে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলেও অভিজিৎ বেশিক্ষণ বেঁচে থাকেননি।

বই মেলা চলাকালীন সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও দুষ্কৃতকারীরা অভিজিতকে আক্রমণ করতে ভয় পায়নি। ভয় পায়নি টিএসসির পাশে বহু মানুষের উপস্থিতিতেও। এ হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে একইভাবে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউল ইসলামকে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর এক মাস অতিবাহিত হলেও যারা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাঁকে কুপিয়ে মেরে ফেলল সেই খুনিদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। মানুষের মনে এই দুশ্চিন্তা প্রবল হয়ে উঠেছিল যে, অভিজিতের হত্যাকারীদের হামলাস্থলে প্রতিরোধ এবং ধাওয়া করার ব্যাপারে ব্যর্থতা এবং এক মাসের মধ্যেও তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে সাফল্যহীনতার কারণে দুষ্কৃতকারীরা আবার এমন ঘৃণ্য অপরাধ করতে উদ্যত হবে কিনা।

গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা দেখলাম অভিজিৎ হত্যার এক মাস পরই আবার ঢাকা শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা আর মুখমণ্ডলে পৈশাচিক আঘাত করে ওয়াশিকুর রহমান নামে একজন অনলাইন লেখককে হত্যা করা হল। সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ওয়াশিকুর অনলাইনে ছিলেন সরব। অভিজিতের হত্যাকারীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারলেও ওয়াশিকুরের ওপর হামলাকারীদের ধাওয়া করেন হিজড়া সম্প্রদায়ের কয়েক জন যারা আমাদের সমাজে অবহেলিত। চোখের সামনে খুনিদের হিংস্রতা দেখেও এরা ভীত হননি। পরে আরেক হামলাকারীকেও ধাওয়া করে ধরে ফেলে জনতা ও পুলিশ। এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড আবার ঘটতে দেখার হতাশা ও দুঃখের মাঝেও আমরা কিছুটা হলে স্বস্তি পাই ভেবে যে, এবার হত্যাকারীদের সরাসরি ধরে ফেলার ক্ষেত্রে উপস্থিত জনতা সক্রিয়তা দেখিয়েছে। আশা করা যায়, এমন সক্রিয়তা এ ধরনের হামলাকারীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করবে।

ধর্মান্ধ এবং যুক্তিহীন উগ্র মানুষ এ সমাজে আমরা বিভিন্ন সময় দেখতে পেয়েছি। যুক্তিভিত্তিক এবং মুক্তচিন্তা এদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বিবেচনাশূন্য সেই মানুষরা কারও মতামত পছন্দ না হলেই সে ব্যক্তিকে হিংস্রভাবে হত্যা করতে দ্বিধা করে না। সুস্থ সমাজের জন্য এমন বোধহীন মানুষ বিপদজনক। যে প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হল, কোন কারণসমূহ এ সমাজে অন্ধচিন্তা টিকিয়ে রাখার জন্য দায়ী? মানুষের অনুভূতিহীনতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তাও আমরা দেখতে পাচ্ছি। সমাজে ক্ষতিকর দিক টিকে থাকলে সরকার বা ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী যেমন দায় এড়াতে পারে না, তেমনি নাগরিক সমাজ, সাংস্কৃতিকভাবে অগ্রসর ব্যক্তিবর্গ এবং পুরোদস্তুর সাধারণ মানুষ যারা ক্ষমতার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়, তাদের অবস্থানও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে লাম্পেন প্রলেটারিয়েট শ্রেণির উপস্থিতি আমরা দেখতে পাই। Lumpen শব্দটির দুটি অর্থ; একটি হল, সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থাকা সুবিধাবঞ্চিত মানুষ; অন্যটি হল, অশিক্ষিত, বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে অনগ্রসর মানুষ। অর্থ উপার্জনের আশায় বড় শহরে আসা এই মানুষরা প্রায়ই থাকে কর্মহীন। শহরের যে সামাজিক ব্যবস্থা, সব সময় তার বাইরেই এদের অবস্থান। নিজেদের গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন এই শিকড়বিহীন, শিক্ষাদীক্ষাহীন মানুষরা অভাব এবং অজ্ঞতার অন্ধকারের জন্য যুক্ত হতে পারে সহিংস অপরাধের সঙ্গে; হয়ে উঠতে পারে হঠকারী কিংবা ধর্মান্ধ অথবা অনুভূতিহীন। যৌথভাবে কোনো সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও এই ক্ষমতাহীন শ্রেণি অক্ষম। সামাজিক শোষণ নিয়তি হিসেবে মেনে নিতেই তারা অভ্যস্ত।

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন মার্কস আর এঙ্গেলস মেনিফেস্টো অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টিতে লাম্পেন প্রলেটারিয়েটদের 'বিপদজনক শ্রেণি' বা সমাজের জঞ্জাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন (মার্কস আর এঙ্গেলস, পৃ-৪৬)। 'দ্য পেসেন্ট ওয়ার ইন জার্মানি' শীর্ষক একটি লেখার ভূমিকায় এঙ্গেলস লাম্পেন প্রলেটারিয়েটদের বর্ণনা করেছেন 'বিশৃঙ্খল এবং ইতর জনতা' হিসেবে এবং তাদের কোনো ধরনের বৈপ্লবিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত না করার ব্যাপারে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন (মার্কস আর এঙ্গেলস, সিলেক্টেড ওয়ার্কস, পৃ-১৬৮)।

লেনিন এবং মাও সে-তুং অবশ্য মার্কস-এঙ্গেলসের মতো লাম্পেন প্রলেটারিয়েটদের বাতিল করেননি। লেনিন-মাও মতপ্রকাশ করেছেন, যদি এদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় সে ক্ষেত্রে তারা সমাজে টিকে থাকা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সূচিত সংগ্রামে সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে (হ্যানসেন, পৃ-১৫৯; মাও সে-তুং, পৃ-১১)। এই 'সঠিকভাবে পরিচালনা' করার অর্থ হল, এই মানুষদের মনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। কিন্তু এ লক্ষ্য পূরণ যথেষ্ট কঠিন। কারণ ভাসমান, নিরক্ষর মানুষদের যুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানের জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ খুব নিয়মিত ব্যাপার নয়।

সমাজের এই প্রান্তস্থিত মানুষদের মধ্যে উপলব্ধির অভাব লক্ষ্য করলে সে জন্য তাদের শিক্ষাহীনতা দায়ী করা যায়। কিন্তু যদি শিক্ষিত এবং সাংস্কৃতিকভাবে অগ্রসর মানুষদের মধ্যেও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিবাদী না হওয়ার এবং দ্রুত সেই অন্যায় ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তখন বর্তমান সময়ে সমাজব্যবস্থা এবং শিক্ষা মানুষকে কতটা যুক্তিবাদী, নীতিনিষ্ঠ এবং সচেতন করে তুলতে সক্ষম হচ্ছে তা নিয়ে ভাবতে হয়। ইতালিয়ান চিন্তাবিদ অ্যান্তনিও গ্রামসি রাষ্ট্রকে দেখেছেন শিক্ষাদাতা হিসেবে। কোনো রাষ্ট্রে নিশ্চুপ হয়ে কোনো অন্যায় মেনে নেওয়া যদি নিয়মে পরিণত হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, সে রাষ্ট্র নাগরিকদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং চিন্তাশীল করার পরিবর্তে তাদের বিদ্যমান অন্যায্য ব্যবস্থার সঙ্গে বিনা প্রশ্নে নিষ্ক্রিয়ভাবে তাল মিলিয়ে চলা মানুষে (conformist) পরিণত করতেই তৎপর। কোনো সমাজে মানুষের আচরণ দেখলেই স্পষ্ট হয় সে সমাজব্যবস্থা মানুষকে কোন ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছে।

কোনো সমাজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠদান প্রক্রিয়া যদি শিক্ষার্থীকে যুক্তিভিত্তিক চিন্তা ও বাস্তব জীবনের বিভিন্ন জটিল দিক বিশ্লেষণে সক্ষমতা প্রদানের পরিবর্তে দায়সারা ও অগভীর পুঁথিগত শিক্ষা প্রদানের সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে আটকে থাকে– সমাজের সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক সৃষ্টিসমূহ, যেমন, সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত যদি টিকে থাকা সামাজিক সমস্যাসমূহের সমালোচনা উপস্থাপন না করে সব সময় কেবল হালকা বিনোদনকেন্দ্রিক মোহ আর বিভ্রমের মধ্যে দর্শককে আচ্ছন্ন করে রাখে– সে ক্ষেত্রে আশা করা যায় না যে, নাগরিকরা সমাজের জন্য যা অনিষ্টকর তা অনুধাবন করবেন এবং সামাজিক অন্যায় সব সময় সক্রিয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন। যে সামাজিক পরিবেশ মানুষকে প্রশ্নহীন আর নিষ্ক্রিয় করে তোলে তা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যদি কনফরমিস্টে পরিণত হন এবং নিজ দলের ভুল পদক্ষেপও বিনা প্রশ্নে মেনে চলতে থাকেন, সে ক্ষেত্রে নিজ স্বার্থসাধনের জন্য উদগ্রীব কিছু রাজনীতিবিদের লাভ হলেও সমাজের উপকার ঘটবে না। বরং প্রশ্নহীনতার সংস্কৃতি সমাজে টিকিয়ে রাখবে অন্যায় ও বৈষম্য।

ভেবে দেখা দরকার রাজনৈতিক দল তাদের কর্মীদের কোন ধরনের রাজনৈতিক শিক্ষা দিচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিকদের সঠিকভাবে 'পলিটিসাইজ' করার অর্থ হল, তাদের সব ধরনের শোষণ, অন্ধচিন্তা এবং জনবিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান গ্রহণের মানসিকতা অর্জনে অনুপ্রাণিত করা। ঔপনিবেশিকতাবিরোধী চিন্তাবিদ ফ্র্যান্ত্জ্ ফ্যানন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদেরও গণমুখী ও শোষণবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে এমন রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন (হ্যানসেন, পৃ-১৮১-১৯৬)। রাজনৈতিক দলের ঘোষিত আদর্শ ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে মিল থাকছে কিনা তা দলের সদস্য এবং নাগরিকদের সচেতনভাবে অনুধাবন করতে হবে। কিন্তু তাদের মন যদি কেবল সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তায় আচ্ছন্ন থাকে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজনৈতিক দল ও সমাজের সাধারণ মানুষ।

সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন যদি ভীরু, অন্ধ আর স্বার্থপর চিন্তা থেকে মুক্ত করা যায়, তাহলেই সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদ গড়ে উঠবে। কারও মত পছন্দ না হলেই তাকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা; অন্ধ, উগ্র চিন্তা এবং ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষ টিকিয়ে রাখা; দুর্নীতিতে প্রশ্রয়দান– এমন যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বল্পসংখ্যক মানুষের প্রতিরোধ কখনও ফলপ্রসূ হয় না।

বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বহু মানুষের বিশেষ করে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জোরালো প্রতিবাদ দেখতে পাওয়ার পরিবর্তে যদি আমরা দেখি তাদের দায়সারা প্রতিবাদ আর নির্লিপ্ততা, সে ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে তাদের মনের জড়তা, স্বার্থপরতা আর প্রকৃত রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবই দায়ী। প্রশ্ন তুলতে হবে এই সময়ের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে। দেশের বর্তমান জ্ঞানচর্চার পরিবেশ আর পদ্ধতি কি নাগরিকদের বিশেষ করে নবীনদের যুক্তি আর অন্ধচিন্তা, আলো আর অন্ধকারের পার্থক্য বোঝাতে সক্ষম হচ্ছে? সমকালীন সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটকে বর্তমান সমাজের নেতিবাচক দিকগুলির মূল কারণ তুলে ধরার মাধ্যমে দর্শককে কতটা সচেতন আর প্রতিবাদী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে? সমাজ কাঠামোতে ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে কোন ধরনের মানুষ? কোন ধরনের আচরণ?

সমাজের বেশিরভাগ মানুষের মনে উগ্রচিন্তা এবং সব ধরনের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার মতো বৈপ্লবিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যার অবসান ঘটবে না। সমাজের স্বার্থেই সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টা করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি শিক্ষিত মানুষরা কনফরমিস্ট হয়ে উঠছেন কিনা সে ব্যাপারে তাদের আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি করা জরুরি। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ কনফরমিস্ট, অন্ধচিন্তায় আচ্ছন্ন আর অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়লে সমাজ কতটা বিপদগ্রস্ত হবে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাষ্ট্র এবং সমাজের সাংস্কৃতিকভাবে অগ্রসর মানুষদের কোন ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে বহু মানুষ সঠিক সচেতনতা অর্জন করতে পারে, তা বোঝাও কঠিন নয়।

তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কিনা সেটাই প্রশ্ন।

ড. নাদির জুনাইদ: সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র:

১. কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, 'মেনিফেস্টো অব দ্য কমিউনিস্ট পার্টি' (কলকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, ১৯৯৩)

২. কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, 'সিলেক্টেড ওয়ার্কস' (মস্কো: প্রগ্রেস পাবলিশার্স, ১৯৬৯)

৩. মাও সে-তুং, 'অ্যানালিসিস অব দ্য ক্লাসেস ইন চাইনিজ সোসাইটি' (পিকিং: ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস প্রেস, ১৯৫৬)

৪. ইম্যানুয়েল হ্যানসেন, 'ফ্র্যান্ত্জ্ ফ্যানন: সোশাল অ্যান্ড পোলিটিকাল থট' (ওহাইও: ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৭)।