মান্নাকে চেনা হল কিন্তু মুখোশধারীদের নয়

বিজন সরকার
Published : 6 April 2015, 08:18 AM
Updated : 6 April 2015, 08:18 AM

জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে খ্যাত জনপ্রিয় হলিউড অভিনেতা টম হ্যাঙ্কসের অসাধারণ মুভি 'কাস্ট অ্যাওয়ে'। সে ছবিতে টমের অভিনীত 'চাক নোল্যান্ড' চরিত্রটি মুভিপাগল মানুষদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ফেডেক্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর জনবসতিহীন নির্জন দ্বীপে বেঁচে থাকার জন্য নোল্যান্ডের পাগলের মতো চেষ্টাই মুভির প্রতিপাদ্য।

চিন্তা ও ভাব বিনিময়ের জন্য মানুষের যে সঙ্গীর কতটুকু প্রয়োজন, তা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মুভিটির চিত্রনাট্যকার উইলিয়াম ব্রলেস। মানবহীন দ্বীপের তীরে কুড়িয়ে পাওয়া একটি ভলিবল নোল্যান্ড মূর্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। তখন এর নাম দেয় 'উইলসন'। নির্জন দ্বীপে একা একা উইলসনের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে সে। একদিন এক ঝড়ে মানবহীন দ্বীপের চার বছরের বাসিন্দা নোল্যান্ডের সেই মূর্ত বন্ধু, উইলসন সাগরে হারিয়ে যায়।

নোল্যান্ড এক সময় মানব বসতিতে ফিরে আসে। ওদিকে, ফেডেক্সের ওই ভলিবল, নোল্যান্ডের 'উইলসন' নিলামে আঠার হাজার পাঁচশ ডলারে বিক্রি হয়ে যায়।

কথিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান মান্নার পরিণতিটি নোল্যান্ডের মূর্ত বন্ধু উইলসনের মতোই। চার দেয়ালের ভিতরে স্বঘোষিত নাগরিক সমাজের সমচিন্তার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মান্না এখন অনেকটাই জড় সঙ্গী উইলসনের ভূমিকায়। মান্নাকে একটি ঝড় সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, নোল্যান্ডরা 'বুকফাটা কষ্ট' নিরবে সহ্য করেও নিজেদের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

মান্নাকে আর রাজনীতির মাঠে দেখা যাবে না। তাকে ফরোয়ার্ডিং খেলিয়ে নেপথ্যে থেকে যারা মাঝমাঠ থেকে গোল করতে চেয়েছিলেন, তারাও আপাতত মাঠে নেই। তবে গোল দেবার নেশা একবার চেপে বসলে সহজে ছাড়ে না। সুযোগ পেলেই গোল দিতে আবারও মাঝমাঠের খেলোয়াড়রা নামবেন, সেটাও ঠিক।

যে ফোনালাপ ফাঁসের কারণে মান্নাকে উইলসন হতে হল, সেই ফোনালাপের বিষয়বস্তুর বহুমাত্রিক দিক রয়েছে। এর মধ্যে আতঙ্কিত হওয়ার মতো ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ এবং সেনাবাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা। এছাড়া এ আলাপের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে। প্রথমত, প্রভাবশালী পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের 'আম্বিলিক্যাল কর্ড' সম্পর্কটি। দ্বিতীয়ত, বিএনপির প্রায় পতিত নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মান্নার সখ্যতার বিষয়টি।

কথোপকথনের একটি অংশ থেকে জানা যায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের চিঠির বিষয়টি। চিঠি যে আসছে তা নাকি 'প্রথম আলো'র সম্পাদক মতিউর রহমান আগে থেকেই জানতেন এবং মতিউর জানার আরও আগেই জানতেন ড. কামাল হোসেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতিসংঘের মহাসচিবের চিঠির গুরুত্ব কতটুকু এ প্রেক্ষাপটে সে প্রসঙ্গ আলোচনা সম্ভব নয়। তবে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায় আমাদের যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সংস্থাটি চিঠি দেওয়াসহ প্রাসঙ্গিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রসঙ্গত, কাদের মোল্লার রায় কার্যকরের প্রস্তুতির সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বান কি মুনের টেলিফোন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে কোরিয়ার সচেতন সমাজের অনেকেই অবাক হয়েছিলেন।

তবে চিঠির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার পিছনে একটি মৌলিক কারণ রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক সমস্যায় বাইরের শক্তিকে জড়ানোর জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ভয়ঙ্কর ধরনের প্রবণতাই চিন্তার কারণ। যদি ড. কামাল হোসেনের জানার বিষয়টি সত্য হয়ে থাকে, তবে এটি কেবল তিনি একা নন, উনার সমপর্যায়ের আরও অনেকেই জানতেন।

তার মানে, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে চিঠি ইস্যু করার যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তার আলোচনায় সুশীল সমাজের যে একটি ভূমিকা ছিল, তা পরিষ্কার। জাতিসংঘ অবশ্যই তাদের নিজস্ব চ্যানেলে দেশের কথিত নাগরিক সমাজের সঙ্গে চিঠি ইস্যুর বিষয়ে পরামর্শ করেছে। এই প্রতিনিধিরা কথিত সুশীল সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসীন। এদের মধ্যে আমাদের একমাত্র নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ড. আকবর আলী খানের মতো মহারথীদের থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ড. ইউনূসের যে তোড়জোড় ছিল, তা এখন দৃশ্যমান নয়। তার মানে এই নয় যে, বর্তমানের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে সারাজীবনের অর্জিত ইমেজ বিনিয়োগ করে যে লোকসান হয়েছে, তা মেনে নিয়ে তিনি নিরবে বসে থাকবেন।

মান্নার কথোপকথনে সুশীল সমাজের মধ্যেও একটি 'হায়েরারকিক্যাল প্যাটার্ন' লক্ষ্য করা যায়। চিঠির বিষয়ে ড. কামালের পর 'প্রথম আলো' সম্পাদক মতিউরও জানতেন বলে মান্না উল্লেখ করেন। এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে কোনো বিচক্ষণ ব্যক্তি একা অবগত থাকেন না। সমচিন্তার কারও কারও সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অবশ্যই করে থাকেন। ফলে ধরে নেওয়া যায় যে, মতিউরের সমপর্যায়ের নাগরিক সমাজের অনেক প্রতিনিধিও সম্ভাব্য চিঠির বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন।

তৃতীয় পর্যায়ে চিঠির তৎপরতার বিষয়টি জানাজানি হয় মান্নার সমপর্যায়ের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে। নাগরিক সমাজের এ স্তরেও চিঠিসহ সরকারকে কীভাবে ঘায়েল করা যায়, সে ধরনের প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তা সহজেই অনুমেয়। তবে চিঠি আদানপ্রদানের বিষয়টি কেবল নাগরিক সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি রাজনীতিবিদ খোকা ও সুশীল মুখোশধারী রাজনীতিবিদ মান্নার আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

নাগরিক সমাজের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জামায়াত-বিএনপি জোটের প্রতি সমর্থন রয়েছে বুঝা গেলেও তা একদম ঠিক নয়। এ সমাজের উদ্দেশ্য হল, দেশের ভিতর রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করে নিজেদের রাজনৈতিক মনোবাসনা পূর্ণ করা। নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আগ্রহী নন।

আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বহুমাত্রিক চরিত্রের মধ্যে রাজনৈতিক চরিত্রটি খুবই দুর্বল ও ভঙ্গুর। অনেকটা বিখ্যাত রচনাকার, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা ও খণ্ডকালীন ব্যর্থ রাজনীতিবিদ জনাথন সুইফটের মতো। সুইফট রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে সুবিধামাফিক কখনও সরকারি দল, আবার কখনও বিরোধী দলের সমালোচনা করতেন। ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে বিখ্যাত রচনা লিখেছেন। আমাদের সুশীল সমাজের রাজনৈতিক চরিত্রটিও তাঁর অস্থির চরিত্রের মতোই। নিজেদের রাজনৈতিক অভিলাষ ত্যাগও করতেও মন চায় না, আবার সুশীল হয়ে জাতিকে নসিহত করতেও ইচ্ছা করে তাদের!

আরেকটি ফোনালাপ থেকে সেনাবাহিনীর কিছু উপরের স্তরের অফিসারের সঙ্গে মান্নার সাক্ষাতের আগ্রহ আছে বলে জানা যায়। এটি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আকাঙ্ক্ষার সমান্তরাল। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের এমন উঁচু স্তরে মান্নার অবস্থান নয় যে, নিজের একক ইচ্ছায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার বিষয় নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাপে বসবেন। এ বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই মান্না অনেকটা বেপরোয়া হয়ে পড়েন।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য একটাই। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া। সেটি করতে গিয়ে যদি জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসে, তাতে সমস্যা নেই। কারণ ওই জোট এলে দেশে আবারও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে। উদারপন্থীদের গ্রেনেড বোমা মেরে হত্যা করা হবে। পশ্চিমা দেশের কর্ণধারেরা ঘন ঘন বাংলাদেশে সফরে ব্যস্ত সময় ব্যয় করবেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জোট সরকারের সমান্তরাল প্রটোকলে গুলশানে কূটনীতিকদের বাসভবনে ব্রেকফাস্ট সভায় আমাদের সুশীলদের দাওয়াত দেওয়া হবে। তাঁরা দেশের চলমান বিষয়ে মতামত দিবেন। বিনিময়ে মানসিক সুখ পাবেন এই সমাজর সদস্যরা।

দেশের উন্নয়নে নাগরিক সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নাগরিকদের সমস্যাভিত্তিক ইস্যুতে যে কোনো নাগরিক আন্দোলন হতে পারে। আমাদের দেশে হচ্ছেও। প্রতিবেশি ভারতের নাগরিক আন্দোলনের পুরোধা আন্না হাজারের নাগরিক আন্দোলন আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের চিন্তাচেতনায় ধাক্কা দিয়েছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও আমাদের নাগরিক সমাজের সেই প্রচেষ্টার লক্ষণ পাওয়া যায়।

তবে নাগরিক আন্দোলনের এজেন্ডাগুলি পরিষ্কার হতে হবে। নাগরিক সমাজের ব্যানারে রাজনৈতিক ইস্যু ব্যবহার করতে গিয়ে বরং ইস্যুগুলি খেলো হয়ে পড়ে। তাই রাজনীতিতে জড়ানোর খায়েশ থাকলে সরাসরি রাজনীতিই করা উচিত। গাছের এবং গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল, দুটি একসঙ্গে খাওয়ার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকা দরকার। ভারতে আন্না হাজারে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনটি রাজনৈতিক পথে পরিচালিত করার বিরোধী ছিলেন। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন চালানোর পক্ষে। আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে দুজন আলাদা হয়ে পড়েন। আন্না এখনও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। অন্যদিকে অরবিন্দ পুরোদস্তর রাজনীতিবিদ। আন্না যেমন সুশীলদের মুখোশ পরে রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি; ঠিক তেমনি অরবিন্দও রাজনীতিবিদ ও সুশীলদের ক্লোনিং হওয়ার চেষ্টা করেননি।

পাঠক এবার চলুন, নোল্যান্ডদের মূর্ত বন্ধু উইলসনের নির্বাচনী কৌশল বিশ্লেষণ করি। মান্না কেন বিএনপির ডার্ক সাইডের নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে বেছে নিলেন? খোকা বিএনপির চলমান আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নে বা বাস্তবায়নে নেই। বিএনপির বর্তমান রাজনীতির বাস্তবতায় প্রভাবশালী নেতাও নন তিনি। এমনকি বিএনপির ঢাকাস্থ মহানগর কমিটিতে তিনি নেই। যদি জামায়াত-বিএনপি জোটের আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই হয়, তাহলে মান্নার তো তারেকের সঙ্গে তা করার কথা। অথবার তার গুলশান অফিসের কর্মকর্তা বা ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। তা না করে মান্নার খোকাকে বেছে নেওয়ার পিছনে বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রেক্ষাপট রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই মান্না প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। 'অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি' সেন্টিমেন্ট পুঁজি করে দীর্ঘদিন টকশো ও লেখালেখির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করে আসছিলেন তিনি। তবে সুশীলদের প্ল্যাটফর্ম নাগরিক ঐক্যের যে সক্ষমতা, তা দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন করতে হলে মাঠ পর্যায়ে যে কর্মীবাহিনী দরকার, তা এ প্ল্যাটফর্মের নেই।

প্রথম প্রেক্ষাপট, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারবিরোধী যে অনড় অবস্থান নিয়েছে, তাতে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে এলে তাদের চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করবে না বলেই মান্নার ধারণা ছিল। এ অবস্থায় যদি জামায়াত-বিএনপি জোট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ না নিত, তাহলে নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে মান্নার প্রার্থিতার সপক্ষে সরকারবিরোধী গোষ্ঠী একসঙ্গে কাজ করত– এটাই ছিল মান্নার ধারণা। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার অফিসে গিয়ে ড. কামাল হোসেন ও মান্নার সাক্ষাতটিতে কেবল সামাজিকতা ছিল না, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মান্নার নিজের প্রার্থিতার পক্ষে একটি নিরব সমর্থন আদায়ের রাজনীতিও ছিল।

বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই মান্না খোকাকে বেছে নিয়েছিলেন। ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে খোকার রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে সুশীল সমাজের জুনিয়র প্রতিনিধি মান্নাকে নির্বাচন করতে হলে তার সাহায্য অপরিহার্য।

দ্বিতীয় প্রেক্ষাপটে এটা বিবেচনায় ছিল যে, বিএনপি যদি নির্বাচন করে সে ক্ষেত্রেও মান্না সুযোগ পেতেন। বিএনপি নির্বাচনে করলে ঢাকার একটি সিটি কর্পোরেশন থেকে দলটির মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস নির্বাচন করবেন, সেটা সবাই নিশ্চিত ছিলেন। আব্বাস খোকার কর্মীবাহিনীর সমর্থন পাবেন কি না তা নিয়ে বিএনপির ভিতরেই প্রবল সন্দেহ রয়েছে। খোকা বরং মান্নাকে সাহায্য করতে পারেন, এমনটাই ছিল হিসাব।

তৃতীয় প্রেক্ষাপটে রয়েছে, মানুষহত্যার আন্দোলনের ফলে জনমনে সৃষ্ট হতাশা থেকে 'দৈবক্রমে' সেনাবাহিনী যদি আরেকটি এক-এগার ঘটিয়ে ফেলত, সেখানেও খোকা নির্ভরশীল ব্যক্তি। আগের এক-এগারতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনেক রুই-কাতলা জেলে গেলেও দশ পার্সেন্টখ্যাত তৎকালীন মেয়র খোকাকে যেতে হয়নি। সে প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে খোকা তাই একজন নির্ভরশীল উৎস ও বিভিন্ন চক্রান্তের সহায়ক হয়ে উঠতে পারতেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না কেবল একজন টকশো সেলিব্রেটি নন, নিজেও এমন শো সঞ্চালনা করতেন। প্রায়ই তিনি 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ধারণাটি নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছেন। সেই ডিজিটাল পদ্ধতির ফলেই হাতেনাতে ধরা খেলেন তিনি।

তবে মান্নাকে আমরা চিনতে পারলাম; কিন্তু 'মুখোশধারীদের' পারিনি।