সরকার এখন যা করতে পারে বা করা উচিত

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 1 April 2015, 08:04 AM
Updated : 1 April 2015, 08:04 AM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের বলেছিলাম, বিএনপি ও তার আন্দোলন পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর এ অবস্থায় সরকারের করণীয় নিয়ে কিছু কথা পেশ করব। এর মধ্যে রাজধানীতে একজন প্রবাসী লেখক-গবেষকের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে গেলে চিন্তার স্বাধীনতা বিষয়ে মনের তাগিদে একটি নিবন্ধ লিখতে বসে যাই আর তা মতামত-বিশ্লেষণে প্রকাশিত হয়। আশা করি, পাঠক এটা বিবেচনা করবেন।

সরকার এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে; তা হল, রাজধানী ও বন্দরনগরীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান। ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বোধহয় এই যে, সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করছে না। তারা 'অংশ' নিচ্ছেন বলাটাও যথাযথ হবে না, যেহেতু দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাখা হয়নি। তবে তিন সিটিতেই বিএনপিসমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা রয়েছেন।

এর আগেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ভালোও করেছিল তারা। এবার বিরোধী দলসমর্থিতরা তিন প্রধান সিটি করপোরেশনে কেমন করবেন, সে বিষয়ে আগাম বলা সম্ভব নয়। সরকারপক্ষ বলছে, জনসম্পৃক্ততাহীন, সহিংস ও ব্যর্থ আন্দোলনের কারণে শহরাঞ্চলের মানুষ তাদের বর্জন করবে। অভিজ্ঞতার নিরিখে বলা যায়, তেমনটি নাও হতে পারে। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার একটা প্রবণতা বরাবরই আমরা দেখতে পাই।

সরকার এর মধ্যে সিলেট ও রাজশাহী সিটি মেয়রসহ বেশ কিছু স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনানুযায়ী কাউকে সরিয়ে দেওয়া যেতেই পারে; কিন্তু তাদের নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নইলে ভোটার হিসেবে তারা অপমানিত বোধ করবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলসমর্থিত স্থানীয় প্রতিনিধিরা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিও ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রভাব রাখতে পারে।

প্রশ্ন উঠেছে, সরকার সিটি নির্বাচন প্রভাবিত করে পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার চেষ্টা নেবে কিনা। এর আগে বর্তমান সরকারের আমলে যেসব স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে, তাতে বিরোধী দলসমর্থিতরাই নির্বাচিত হয়েছেন বেশি। তাতে এ দাবি করা যেতেই পারে, নির্বাচন খুব একটা পক্ষপাতদুষ্ট হয়নি। ঢাকাসহ প্রধান প্রধান সিটির নির্বাচনে বিশেষত মেয়র পদে বিরোধী দলসমর্থিতরাই জিতেছিলেন। এর ভিত্তিতে বলাও হয়েছিল, 'জনগণ এ সরকারকে চায় না'। সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ইতোপূর্বে বিএনপি শাসনামলেও এমনটি ঘটেছিল।

সরকার সব সময়ই বলে এবং সঙ্গে তার সমর্থকরাও এটা বলেন যে, স্থানীয় আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। তাদের মতে, জনগণ এ দুই নির্বাচনে ভিন্ন আচরণ করে। তা সত্ত্বেও বলতে হবে, স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারদের রাজনৈতিক মতের এক ধরনের প্রকাশ ঘটে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এ দুই সিটির বাসিন্দাদের মতের প্রকাশ এ সময়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিবেচিত হবে। নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে হলেই জানা যাবে সেটা। সারা দেশের মানুষও এদিকে তাকিয়ে থাকবে।

এ কারণেও সরকারের উচিত হবে না এতে খারাপ কিছু করা। চাইলেই সরকার দলীয় রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন বিশ্বসম্প্রদায়েরও আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের বিষয়ে, তখন তাদের পক্ষে মন্দ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ঝুঁকিপূর্ণও বটে। প্রধান দুই সিটির নির্বাচন দেশি মিডিয়াও কভার করবে নিবিড়ভাবে। সরকার এসব জেনেবুঝেই নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েছে নিশ্চয়ই।

পা যখন বাড়িয়েই দিয়েছে, তখন তার উচিত হবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সহায়তা জোগানো। একটা সহিংস আন্দোলন থেকে এসে বিরোধী দল আশা করতে পারে না যে, তারা একটা ক্লাসিক্যাল 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' পাবে। পুলিশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা আইনানুযায়ী সক্রিয় থাকবেন সিটি নির্বাচনে। বিএনপির যেসব লোক সহিংসতায় জড়িত ছিল, নির্বাচনকালেও তারা 'দৌড়ের ওপর' থাকবে। এ নিয়ে দরকষাকষি করা বোধহয় যাবে না। সেটি না করে সীমিত জনসংযোগে ভোটারের ওপর নির্ভর করাই ভালো। একমাত্র ভোটারই বিরোধী দলসমর্থিতদের জেতাতে পারে।

সরকারও এ নির্বাচনের ভেতর দিয়ে দেখুক, দুই প্রধান সিটিতে তার জনসমর্থন কতটা রয়েছে। এতে সারা দেশের মানুষের মনোভাবেরও এক ধরনের প্রতিফলন থাকবে, এটা মনে রাখা ভালো। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাসিন্দারা সারা দেশের মানুষের সঙ্গে নানা সম্পর্কে জড়িয়ে রয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন যে আন্দোলন সম্প্রতি বেশ ঝিমিয়ে পড়েছে, তা ঢাকা নগরীতে শুরু থেকেই তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারেনি। চট্টগ্রামেও অবরোধ-হরতাল শিথিল হয়ে পড়ে দ্রুত। এমন প্রেক্ষাপটেও এ দুই নগরীতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন যথেষ্ট গুরুত্ববহ।

বড় একটা গুরুত্ব নাকি ওখানে যে, এটা বিশেষত বিএনপিকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে। টানা অবরোধ-হরতালে ঢুকে পড়ে ওখান থেকে বেরোতে পারছিল না তারা। এর পাশাপাশি অন্যান্য দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করেও সরকারকে যখন সংলাপে রাজি করানো গেল না, তখন তো আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। সরকার অবশ্য বলছে, এটা কোনো আন্দোলনই নয়, এটা সন্ত্রাস। কথা হল, সন্ত্রাস করেও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে বিরোধী দল। উল্টো তারা হয়ে পড়েছে ক্লান্ত। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাদের এ থেকে রেহাই দিতে পারে।

অর্থনীতিও সম্ভবত রেহাই পেতে চলেছে এবং সঙ্গে সরকার। টানা ও সহিংস অবরোধে অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে চাপে পড়েছিল সন্দেহ নেই। উৎপাদিত, আমদানিকৃত ও রফতানি-পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হলে অর্থনীতিতে নানা চাপ সৃষ্টি হয়। তাতে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে আসার শঙ্কা থাকে পুরোদস্তুর। এমন পরিস্থিতিতে সরকারও এডিপি বাস্তবায়নে স্বাভাবিকভাবে এগোতে পারে না; রাজস্ব আহরণেও পায় না সাফল্য। রুজি-রোজগার ব্যাহত হওয়ায় দারিদ্র্য পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটে। এতে শাসন বহাল রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে।

দুই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে যে ফলই মিলুক, সরকার সম্ভবত অস্থিরতা থেকে উত্তরণের দিকে যাওয়ার সুযোগ পাবে। শর্ত একটাই, সিটি নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় বড় কোনো ভুল করা চলবে না। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে সরকারের পক্ষে পরাজয় কবুল করে নেওয়াটাই বিধেয় হবে। এতে তো আর সরকারের পতন ঘটছে না। এর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে সরকার বরং শাসন পরিস্থিতি উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে পারবে।

সরকার বিশেষত আন্দোলন দমনে প্রশাসনকে নিয়োজিত রাখায় এ সময়ে জঙ্গি তৎপরতা বাড়িয়ে তোলার একটা চেষ্টা কিন্তু নজরে আসছে। বন্দরনগরী ও রাজধানীতে দু'টি বড় জঙ্গি আস্তানার খোঁজ মিলেছে এর মধ্যে। জেএমবির তৎপরতা নিঃশেষ হয়ে এসেছে বলে যে ধারণা দেওয়া হচ্ছিল, তা দেখা যাচ্ছে ঠিক নয়। সরকার জামায়াত-শিবিরের বিষয়ে একটা কঠোর মনোভাব নিয়ে আছে বৈকি। এদিকে কিন্তু তাদের চেয়েও কঠিন জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটছে দেশে। বিভিন্ন লোমহর্ষক হত্যার ঘটনায় তারা জড়িত বলে পুলিশই তথ্য দিচ্ছে আমাদের।

সরকারকে কেবল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে দৃঢ় থাকলে চলবে না, তাকে এ সময়ের জঙ্গি তৎপরতা দমনেও মন লাগিয়ে কাজ করতে হবে। এটা তার সমর্থকগোষ্ঠীর মনেও আস্থা জোগাবে; সঙ্গে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মহল হবে আশ্বস্ত। সব কিছুর পরও ভারতীয় প্রশাসন আশ্বস্ত রয়েছে বাংলাদেশের মাটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বার্থে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ এবং পশ্চিমাদেরও এ ধারণা দেওয়া প্রয়োজন যে, সরকার জঙ্গি বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।

ভালো হত সরকার সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিরীহ মানুষের ওপর নাশকতামূলক হামলার বিষয়ে একটি নতুন ধরনের তদন্তের দিকে গেলে। সেটা করলে তারা সহিংস আন্দোলনকারীদের ওপর রাজনৈতিক ও নৈতিক উভয়বিধ বিজয় অর্জন করতে পারত। শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপে, বিশেষত সরকারি হেফাজতে বিরামহীন মৃত্যুর ঘটনায় উল্টো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সরকার। জনগণ শুধু নয়, দেশি মিডিয়া ও বিশ্বসম্প্রদায়ের চোখেও তারা বিএনপির সঙ্গে 'সমান সমান' হয়ে পড়ছে। এতে সহিংস আন্দোলন এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেলেও অবাক হওয়া যাবে না।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন কেমন হয়েছিল, সেটা আমাদের সবার মতো সরকারও জানে। তার সুবিধা হল এই যে, বিএনপির নেতৃত্বে পরিচালিত সাম্প্রতিক আন্দোলনটিও ফুরিয়ে গেছে বা যেতে বসেছে। এতে সরকার 'লাইফ' পেয়ে গেল বলতে হবে। ভালো ব্যাটসম্যান লাইফ পেলে তার সেঞ্চুরি অনেক সময় ঠেকানো যায় না। প্রশ্ন হল, বর্তমান সরকার ভালো ব্যাটসম্যান কিনা। সে ক্ষেত্রে মেয়াদটাও পার করে দিতে পারে তারা। এ প্রসঙ্গে তাদের আশু ও দূরবর্তী লক্ষ্যগুলো আলোচিত হতে পারে।

এক. তারা সিটি নির্বাচনটা ঠিকভাবে করুক। তবে স্থানীয় সরকারসংক্রান্ত আইনে এ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে থাকার নানা কারণ রয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুপক্ষেরই রয়েছে ভূমিকা। সে ধারা থেকে বেরিয়ে বর্তমান সরকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে কিছু উদ্যোগ নিক। এর ২৫ শতাংশ উন্নতি হলেও হোক।

দুই. সরকার প্রশাসনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। এটা দলের ভেতরেও রয়েছে বলে শুনি। আওয়ামী লীগ পুরনো বড় দল। কিন্তু দলের কার্যক্রম কোথায়? আওয়ামী লীগকে সক্রিয় করা হোক। যেসব অঞ্চলে দুদফায় শক্তিশালী সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, সেখানে ক্ষমতাসীনরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি কেন? তাদের ব্যর্থতার কারণেই কিন্তু প্রশাসনকে বেশি সক্রিয় হতে হয়েছে। তাতে অঘটনও কম ঘটেনি।

তিন. ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুবকর্মীদের ওপর ইতিবাচক নিয়ন্ত্রণ কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেটা চিন্তা করে দেখা হচ্ছে বলে মনে হয় না। কোনো রকম অঙ্গীকার বা রাজনৈতিক কার্যক্রম ছাড়া এরা কেবল সম্পদশালী হতে চাইছে বললে ভুল হবে না। এটা চিরদিন চলতে পারে না। তাহলে তৃণমূল পর্যন্ত ন্যূনতম সুশাসনও নিশ্চিত করা যাবে না। আমাদের অর্থনীতির পরবর্তী বিকাশও সুশাসন দাবি করছে।

চার. দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনাসহ মানসম্মত শাসন নিশ্চিত করে জনসমর্থন বাড়াতে হবে সরকারকে, যেহেতু আরও কিছুটা সময় পাওয়া যাচ্ছে। পূর্ণ মেয়াদ মিললে তো বলতে হয় দীর্ঘ সময়। এ সময়ে সরকার যদি শুধু বিএনপিকে, বিশেষত জিয়া পরিবারকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তাহলে সেটা বিপরীত ফল দেবে। এতে বিএনপি দুর্বল হবে, সেটা হয়তো ভেঙেও যাবে; কিন্তু সমর্থন বাড়বে দলটির প্রতি। মোটামুটি একটা নির্বাচন হলেই তখন দেখা যাবে, তাদের কলাগাছও জিতে আসছে।

৫. জামায়াত শুধু নয়, সব ধর্মীয় উগ্রবাদী বিষয়ে সরকারের চিন্তা ও পরিকল্পনা কী, সেটা দেশের সুস্থচিন্তার মানুষের মতো বিশ্বসম্প্রদায়ও জানতে চায়। এ নিয়ে কৌশলের খেলা স্বল্পমেয়াদে 'কমফোর্ট' দিলেও আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে যেদিকের দল, তাতে এটা তার জন্য মধ্যমেয়াদেও সুফলদায়ক হবে না। এক বিদগ্ধ বন্ধু এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পিপিপির পরিণতির দিকে দৃষ্টি দেওয়ার কথা বারবার বলছেন ফেসবুকে। তার মতো অনেকেই দেশের একাংশের উগ্রবাদের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়া দেখে চিন্তিত। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে?

ছয়. অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় শেখ হাসিনা সরকার একই সঙ্গে কিছুটা জনবাদী ও বাস্তবানুগ। বিএনপির রেখে যাওয়া নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে চলতেও দ্বিধা করছেন না তারা। এতে প্রবৃদ্ধির একটা ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক দিন ধরেই এটা অবশ্য পড়েছে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়ার খপ্পরে। বোদ্ধারা বলছেন, 'সেভেন প্লাস' প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে এটা জরুরি। এ জন্য অবকাঠামোর বড় উন্নয়নও লাগবে। সরকার এ লক্ষ্যে পদ্মা সেতুসহ যেসব মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে, সেগুলো যথাসম্ভব দুর্নীতিমুক্তভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে যেন সম্পন্ন করে এ মেয়াদেই। মানুষ তাহলে এর সুফল পেতে শুরু করবে।

সাত. বিএনপি তো শুধু নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংলাপ করতে চায়। সরকার এখন তাকে এবং অন্য সব পক্ষকে উল্টো প্রস্তাব দিক এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় নিয়ে সংলাপে বসার। নির্বাচন কমিশন সংস্কার, প্রশাসন নির্দলীয়করণ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কার্যকর করা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও বিচার বিভাগ সংস্কার, সংসদ কার্যকর করা, ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিক্ষা সংস্কার প্রভৃতি নানা বিষয়েই তো কথা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। এ থেকে বেশি নয়, গোটা পাঁচেক বিষয় বেছে নিতেই না হয় সংলাপ শুরু করুক সরকার। এটা চলতে থাকুক মাসের পর মাস। কিছু বাস্তবায়িতও হোক বিদ্যমান একতরফা সংসদের মাধ্যমে। তাহলে জাতীয় সংসদও একটা অর্থ পাবে।

যেগুলো এখানে উল্লিখিত হল, তার একটিও ঠিকমতো হচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে এর অন্তত পঞ্চাশ ভাগ না করলে শুধু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ভিত্তিতে টিকে থাকা বোধহয় সম্ভব হবে না। দেশের অগ্রগতিও সঙ্কটে পড়বে বারবার। উন্নয়নপ্রয়াসী মানুষ এটা 'অ্যাফোর্ড' করতে পারবে না। তারা তো আর সেধে সেধে অন্য কিছুকে স্বাগত জানায় না।

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট।