তিন প্রজন্মের বিএনপি অতঃপর

বিজন সরকার
Published : 20 March 2015, 12:09 PM
Updated : 20 March 2015, 12:09 PM

বিএনপির বিদ্যমান রাজনৈতিক সক্ষমতার দুর্বল দিকগুলি ক্রমশই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। দলটি অনেকটা ঝিমিয়েও পড়েছে। এই নির্লিপ্ততা ও ঝিমুনির পিছনের কারণগুলি সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট। তাদের এই ঝিমিয়ে চলা সহসা শেষ হবার লক্ষণও নেই। বিশেষ করে চলমান রাজনীতির (আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দেশীয়) নতুন নতুন মেরুকরণ বুঝা ও জনগণকে নিজেদের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার জন্য যে ধরনের গবেষণালব্ধ ও বিশ্লেষণমাফিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার তা নিতে দলটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ভবিষ্যতে কতটুকু পারবে, সে সংশয়ও জনমনে প্রবল।

বিএনপির এই করুণ পরিণতির জন্য দলটির ত্রুটিযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার যেমন ভূমিকা রয়েছে, একই সঙ্গে রাজনৈতিক নিয়তির ভূমিকাও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক নিয়তির প্রভাব ভালোভাবে বুঝতে হলে বিএনপির জন্ম, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, কর্মকাণ্ড ও নেতৃত্ব নির্মোহ বিশ্লেষণের লেন্সে নিয়ে আসতে হবে।

তিন দশক ধরে বিএনপির রমরমা রাজনীতির পিছনে যে উৎসগুলি অবদান রাখছে, সেগুলি আদর্শিক নয়, তাদের রাজনীতির পুঁজি। এ পুঁজি ত্বরিৎ ফলদায়ক। তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ থেকে দীর্ঘদিন ফল ভোগ করার ইতিহাস নেই। যদিও পুঁজিটি আমাদের সমাজে বিদ্যমান, তা থেকে সুবিধা গ্রহণ পদ্ধতি ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে এর ভাগিদারের সংখ্যাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এর বর্তমান বাজারের হিসাব-নিকাশ তিন দশক আগের মতো নয়।

উদাহরণস্বরূপ, উপমহাদেশের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের কথা বলা যায়। তাদের জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তারা পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট পায়। সাতচল্লিশে ধর্মের উপর ভিত্তি করে ভারত-ভাগের নেতৃত্বও দেয় তারা। বিভক্ত ভারতে এটি ছোট দলে পরিণত হয়। ১৯৫৩ সালে দলটি বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে যায়। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত সময়কালে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের নেতৃত্বে কনভেনশনাল মুসলিম লীগ এবং নুরুল আমিনের নেতৃত্বে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নামে দু'ভাগ হল মুসলিম লীগ। স্বাধীন বাংলাদেশে দলটির তেমন অস্তিত্ব না থাকলেও ১৯৭৬ সালে একে আবার জীবিত করার চেষ্টা চালানো হয়। তবে সমাজ জীবনের নিত্য বাস্তবতা বুঝতে না পারার কারণে দলটি রাজনৈতিক নিয়তির শিকার হয়েছে।

বর্তমানে এটি কার্যত পাকিস্তানেই টিকে আছে। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগও বহুভাগে বিভক্ত হয়েছিল। এর একটি অংশের নেতা নওয়াজ শরীফ বর্তমানে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় আসীন।

বিএনপির অবস্থা মুসলিম লীগের মতো হবে কি না, তা পরিষ্কার হতে যুগের পর যুগ অপেক্ষা করতে হবে না। তাদের নেতৃত্বে চলমান ক্রিয়াহীন রাজনৈতিক কর্মসূচি যত প্রলম্বিত হবে, মুসলিম লীগের মতো পরিণতি তাদেরও হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। এর পিছনে বহু কারণ রয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা, প্রাজ্ঞদের অবহেলা করা, তারেক রহমানের অতি ডানপন্থী মানসিকতা, জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত না করে তাদের উপর জঙ্গিদের ন্যায় হামলা করা, বৈশ্বিক জঙ্গি সমস্যা, দেশের ভিতর উগ্রবাদী রাজনীতির প্রসার, ভারত-আমেরিকার কৌশলগত সম্পর্ক ই্ত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা যায়।

দলটির আন্দোলনের রূপরেখায় প্রাজ্ঞ নেতাদের ন্যূনতম ভূমিকাও নেই। দু'মাসের বেশি সময়ে কোনো আন্দোলন সফল হওয়ার ইতিহাস গণতন্ত্রে কখনও দেখা যায় না। বিএনপির এই 'আউটসোর্স' করা আন্দোলনটি তাই কার্যত ব্যর্থ।

বর্তমান সরকার যে ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন দিবে না সেটি খালেদা জিয়া যেমন বুঝেন, তারেক রহমানও তেমনি। তবু তারেকের নির্দেশে অর্থহীন হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। দলটির এমন রাজনৈতিক আচরণের জন্য মহাজোট সরকারের ক্ষমতায় থাকা একটা সময় পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। তবে তাতে আমাদের রাজনৈতিক সমাজে যে সম্ভাব্য শূন্যতা তৈরি হবে, তার ভয়ানক মূল্য সমাজকে দিতে হবে। সরকার ইচ্ছা করলেও 'আত্মহননমনস্ক' বিএনপিকে আত্মহননের পথ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। ট্র্যাকে থাকতে হলে বিদ্যমান বাস্তবতা সাপেক্ষে তাদের নিজেদেরই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জন্মের পর থেকে আজ অবধি তিনটি প্রজন্মের নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বিএনপি; প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান; প্রত্যেকেরই কথিত আদর্শ ও উদ্দেশ্য অভিন্ন। তিন প্রজন্মেই বিএনপিকে তার সম-আদর্শের রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হয়নি। দলটির জন্মের মূলেই রয়েছে মুসলিম লীগের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিচ্ছায়া। সে প্রতিচ্ছায়া ও পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্বের আশীর্বাদের ফলে বিএনপির নিষেক হয়। বহু দেশি ও বিদেশি গোষ্ঠীর অবদান রয়েছে এতে।

জিয়াউর রহমান ভালো করেই জানতেন যে, বাংলাদেশে একই সঙ্গে উদার রাজনীতি ও ভারতবিরোধী চেতনার রাজনীতির ধারক বিপুল একটি অংশ রয়েছে। আরেকটি অংশে রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। তারা একাত্তরেও দেশের স্বাধীনতা চায়নি, এখনও নয়। চীনপন্থী আরেকটি ছোট অংশ রয়েছে যারা চীনের স্বার্থের সমান্তরালে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তখনই আরেকটি অংশ ক্রমশ বেড়ে উঠে যারা দেশে ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। জিয়াউর রহমানের সময় 'আমরা ঢাকাবাসী' এবং 'খতমে নবুওয়াত আন্দোলন' (এটি পাকিস্তানের অংশ) পাকিস্তানের অর্থায়নে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল। এই গোষ্ঠীগুলি বিএনপির জন্মের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। তাছাড়া তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের বিরোধী আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থন ছিল তাদের পক্ষে।

বেশ কয়েকটি ছোট ছোট রাজনৈতিক দল বিএনপিতে যোগ দেয়। সেগুলির দিকে দৃষ্টি দিলেই দলটির রাজনৈতিক ডিএনএ মডেল ভালোভাবে বুঝা যায়। ব্যারিস্টার মওদুদু আহমদ তাঁর 'চলমান ইতিহাস' বইয়ে জানিয়েছেন, ছ'টি দল নিয়ে বিএনপি গঠিত হয়; খান-এ সবুর ও শাহ আজিজুরের মুসলিম লীগ, মশিউর রহমান (যাদু মিয়া) এবং আনোয়ার জাহিদের চীনপন্থী ন্যাপ ও মাওলানা মতিনের ন্যাশনাল লেবার পার্টি। এই তিনটি দলের উল্লিখিত নেতারা একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকায় ছিলেন।

তাছাড়া রাজাকার শাহ আজিজের আশীর্বাদপুষ্ট শ্রীযুক্ত রসরাজ মণ্ডলের সিডিউল কাস্ট ফেডারেশন, কাজী জাফর-মেননের চীনা ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) এবং জিয়াউর রহমানের প্রথম পর্যায়ে গঠিত জাগদল বিএনপিতে যোগ দেয়। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ-বিরোধী ও সুবিধাবাদী বহু পেশাজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জাগদলে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে পিডিপি এবং কনভেনশনাল মুসলিম লীগও বিএনপিতে যোগ দেন বলে মওদুদ আহমেদ উল্লেখ করেন।

প্রসঙ্গত, ছ'টি দলের মধ্যে একমাত্র জাফর-মেননের চীনা ইউপিপি পার্টি ছাড়া একটি দলও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি।

ওদিকে পাকিস্তান-ফেরত সেনা কর্মকর্তারা বিএনপি গঠনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের পরপরই সেনাবাহিনীর গঠন প্রক্রিয়াতে বিএনপির আদর্শ-সহায়ক পাকিস্তানপন্থী সেনা কর্মকর্তাদের গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছিল। গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয়নি। এ বাহিনীকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর রেপ্লিকেশন করার ফলাফল কেবল ১৫ আগস্ট নয়, আমাদের বর্তমান রাজনীতিতেও দেখতে পাই। জিয়া পাকিস্তানপন্থী অফিসারদের উপর নির্ভর করেই সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ ভেঙে উপরে উঠেন। নির্মম বাস্তবতা হল, রাজনৈতিক নিয়তি তাঁকেও মুক্তি দেয়নি।

জিয়ার মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আওয়ামী-বিরোধী কনসোর্টিয়ামের প্রধানের ভূমিকাও পালন করেছিল দলটি। তখন অবশ্য তারা গণমানুষের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। তাই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসার মধ্য দিয়ে বিএনপি একটি মধ্যপন্থী দল হিসেবে দেশের শাসনভার হাতে নেয়। বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার ১৯৯১-১৯৯৬ সালের সরকারের অবদান উল্লেখ করার মতো। রাজনীতির ক্ষেত্রেও দলটির তখনকার ভূমিকা ২০০১ সালের পরবর্তী অবস্থানের মতো ছিল না। নারীর ক্ষমতায়ন, বনায়ন, নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সফল ভূমিকা ছিল।

এর পিছনের কারণ মোটা দাগে দুটি। প্রথমত, বিএনপিতে এবং সরকারে বহু প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদের বিচরণ ছিল। খালেদা জিয়া রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাদের উপর নির্ভরও করতেন। দ্বিতীয়ত, তারেক রহমানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য খালেদা জিয়াকে আজকের মতো মাথা ঘামাতে হয়নি।

তবে তখনও বিএনপি তার রাজনৈতিক পুঁজির বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিল। তাই বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিক্রিয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর দু'বছরব্যাপী ধর্মীয় সন্ত্রাসের প্রতি উদাসীন ছিল তখনকার সরকার। নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনকে দেশত্যাগ করতে হয়েছিল এ সময়। ভারতের সঙ্গে দেশের সম্পর্কও তেমন ভালো ছিল না। দলটি চীন এবং আমেরিকার সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছিল।

তারেক রহমানের প্রতিনিধিত্বে বিএনপি তৃতীয় প্রজন্মের রাজনীতিতে প্রবেশ করে। দলটির চলমান সমস্যা এই নেতার অতি দ্রুত নেতা হওয়ার খায়েশের মধ্যেই নিহিত। এতে দলটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্মোহ বাস্তবতা হল, তারেক একক নেতা হতে গিয়ে মূলত বিএনপির একাংশের নেতা হয়েছেন। বড় একটি অংশ যে তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল নয়, তা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন ভূমিকাতেও স্পষ্ট।

২০০১ সালের পর থেকেই দলে এবং চারদলীয় জোট সরকারে তারেকের ক্ষমতা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায়। হাওয়া ভবনে বসে তিনি সরকারের সমান্তরাল আরেকটি 'ছায়া সরকারের' নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ সময় দলটি উগ্র ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে পুরোপুরি। তখন জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে তারেককেই দেখা যেত, খালেদা জিয়াকে নয়। তারেকের সঙ্গে উগ্র ডানদের দহরম মহরমের ফলে দেশে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। বিএনপির ভেতরে থাকা মধ্যপন্থীরা তাতে চরম বেকায়দায় পড়ে যান। আবার অনেকেই তারেকের ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে দল ছেড়ে চলে যান। ফলে তারেকও জঙ্গি 'ম্যানুফ্যাকচারার' জামায়াত-শিবিরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই জঙ্গি গোষ্ঠীর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল এসব কারণেই।

২০০১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপির যে কোনো সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যের কোনো ভূমিকা পালনের লক্ষণ নেই। এমনকি খালেদা জিয়াও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের বিশ্বাস করতে পারছেন না। স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত বাইরে পাচার করার অভিযোগ আনা হয়। তাই সভার আগে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মুঠোফোন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের কাছে জমা দিতে হয়।

তারেকের সম্পর্কে বাইরের দুনিয়ার দৃষ্টিও ভয়ানক নেতিবাচক। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রদান, দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার, মাফিয়া ডন দাউদ হায়দার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাত করার মতো অভিযোগ রয়েছে তার উপর। উইকিলিসের তারবার্তা থেকে জানা যায়, তারেককে 'আমেরিকার জন্য হুমকি' আখ্যায়িত করে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমেরিকাতে তার প্রবেশাধিকার না দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যে রাজনৈতিক আচরণ করা দরকার, তিনি তা করতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছেন। ফেরারি আসামি হয়ে লন্ডনে বসে ইতিহাস-বিকৃতি ও মিথ্যাচারে মেতে উঠেছেন। এখনও গিয়াস উদ্দিন মামুন আর রিজভি আহমেদ সিজারের মতো বিতর্কিতদের পাশে রেখে রাজনীতি করতে চান তারেক।

অন্যদিকে, তার পিতা-মাতা, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া বেশ দক্ষতার সঙ্গে বহু আদর্শিক গোষ্ঠী সঙ্গে নিয়ে দল পরিচালনা করেছিলেন। খালেদা জিয়ার বয়স এখন ঊনসত্তর। শারীরিকভাবেও বেশ অসুস্থ তিনি। এ অবস্থায় বিএনপির হাল ধরার মতো নেতা নেই। তারেকের ব্যক্তিগত ইমেজ, মেধা ও প্রজ্ঞার স্তর যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে বিএনপির মতো একটি 'বহু-আদর্শের কনসোর্টিয়ামের' প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন তার পক্ষে সম্ভব নয়।

অতঃপর বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নেতৃত্ব কেমন হবে, দলটি এগিয়ে যাবে কী যাবে না, তা খুব দ্রুত স্পষ্ট হবে।