বিদেশে নারী শ্রমিকের মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে

ফরহাদ আল করিম
Published : 9 March 2015, 04:36 PM
Updated : 9 March 2015, 04:36 PM

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিশাল অংশ নারী। জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাইলে নারীর অবস্থার উন্নয়নের বিকল্প নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে নারীর অবস্থানগত উন্নতি সাধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সূচকে পরিবর্তন এসেছে।

বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে, ২০১০ অনুযায়ী দেশে মোট ৫.৪১ কোটি শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন; এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ১.৬২ কোটি। সরকারিভাবে বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। নারীরা যে গৃহস্থালি কর্মকাণ্ড করেন তার অর্থমূল্য আনুমানিক আড়াই লাখ কোটি টাকা। সে হিসাবে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ। এই তথ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীদের গুরুত্ব যে অনেক বেশি তা বোঝা যায়।

বাংলাদেশের নারী এখন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বপ্নময় ভবিষ্যত বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিদেশে চাকরি করতেও উৎসাহিত হচ্ছেন। সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, গত ১০ বছরে গড়ে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় চাকরি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী শ্রমিকও রয়েছেন। বর্তমানে ১৬০ দেশে প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।

দালালদের দৌরাত্ম্য, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনিয়ম, শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ আরও নানা কারণে সম্প্রতি বিদেশে শ্রমিক প্রেরণের হারে বেশ ভাটা পড়েছে। এ অবস্থার মধ্যেও পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিদেশ গমনের হার অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের জনশক্তি ব্যুরোর মতে, ২০১৩ সালে যেখানে ৫৬,৪০০ নারী কাজের উদ্দেশে বিদেশে গেছেন, সেখানে ২০১৪ সালে গেছেন ৭৬,০০৭ জন। গত ৬ বছরে নারীদের বিদেশে গমনের হার প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে।

বর্তমানে নারীদের সরকারিভাবে বিদেশে যাওয়ার খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় এটা হচ্ছে; মাত্র ২০ হাজার টাকায় নারীরা বিদেশে যেতে পারছেন। তাছাড়া আগের চেয়ে বর্তমানে নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার নিয়মাবলী ও সুযোগ-সুবিধার প্রচারণার হার বাড়ার কারণেও নারীরা বিদেশে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে মনে করা যায়।

লক্ষ্যণীয় যে, নারী-পুরুষ ভেদে বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কাজের সুযোগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। নারী শ্রমিকেরা সাধারণত হাউজকিপার, গার্মেন্টসকর্মী, মিডওয়াইফ, বেবি সিটার, কেয়ারগিভার, ডে কেয়ার কর্মী, নার্স ও বিউটিশিয়ান পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন। তাই বিদেশে নারীদের কাজের চাহিদা অনুযায়ী দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গেলে যেমন বেশি বেতন পাওয়া যায়, তেমনি কর্মক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি সহজে মোকাবেলা করা যায়। সরকার সারাদেশে বেশ কিছু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছেন যেখানে নারী বিদেশগামীরা দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন। হাউজকিপার বা গৃহকর্মীর কাজে বিদেশে যেতে চাইলে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশত্যাগ করতে হবে যা সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক। তবে জনশক্তি ব্যুরোর আওতায় বিদেশগামী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের জন্য দেশে মোট ৩৮টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও নারীরা প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ১৪টিতে যা একটি বৈষম্য।

বাংলাদেশি পুরুষ শ্রমিকরা ১৯৭৪ সাল থেকে সরকারিভাবে বিদেশে গেলেও নারী শ্রমিকরা আরও অনেক পরে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করেন। তারা মূলত ১৯৯০ সালের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশে কাজের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের কম নারী বিদেশে শ্রমিক হিসেবে যেতে পেরেছেন। তাদের বেশিরভাগ ওমান, লেবানন, সিঙ্গাপুর, জর্ডান, সৌদি আরব, মরিশাস ও হংকংএ কাজ করছেন। তবে বর্তমানে লেবাননে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি নারী শ্রমিক রয়েছেন।

বিদেশ গমনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নারীদের বেলায় তাদের মতামত খুব কমই অগ্রাধিকার পায়। স্বামী বা পরিবারের অন্যদের মতামতের উপর ভিত্তি করে তার বিদেশে যাওয়া বা না যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। নারীর কষ্টার্জিত রেমিটেন্সও তার ইচ্ছায় ব্যয় হয় না। এমনকি পরিবার বা সমাজ তার এই অবদানের মূল্যায়ন করতেও দ্বিধা করে অনেক সময়।

যে কোনো পেশায় বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিপদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ভাগ্যান্বেষণে দূরদেশে গিয়ে কাজ করতে চাইলে পাচার কিংবা যৌন নির্যাতনের মতো কিছু বিশেষ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ঝুঁকি কেবলমাত্র নারীদেরই থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা অনেক সময় বিদেশে যাওয়ার আগে লাভক্ষতি বিচার না করেই অপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে তারা বিভিন্ন সময় নানা সমস্যা ও প্রতারণার মুখোমুখি হন।

এক কথায় বলা যায়, বিদেশগামী নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত ও অসহায় অবস্থায় থাকেন। অপরিকল্পিত উপায়ে ও নিয়ম না মেনে বিদেশে গেলে প্রতিটি ধাপেই ঝুঁকি রয়ে যায়। সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে নারীরা সঠিক পেশা নির্ধারণ এবং নিরাপদ বাসস্থান বা অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেন না। তারা প্রায়ই পাচারকারীর হাতে পড়েন্য। অনেক সময় যৌনকর্মীর মতো অনিচ্ছুক ও মাদক কেনাবেচার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করতে বাধ্য হন। অনেকে দালালদের দ্বারা আর্থিক প্রতারণার শিকার হন। কর্মক্ষেত্রে অত্যধিক শ্রমের বিনিময়েও অনেকের ভাগ্যে খাবার, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা জোটে না।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে পুনরায় শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের সরকারের সিদ্ধান্ত হয় এবং ইতোমধ্যে শ্রমিক প্রেরণ বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়ে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে গৃহকর্মের পেশায় নারী শ্রমিকেরা যাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নারীদের মধ্যে সৌদি আরবে যাওয়া নিয়ে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না। কাতারেও নারী শ্রমিক প্রেরণের বিষয়ে দু'দেশের সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

বিগত সময়গুলোতে সরকার 'জিটুজি' চুক্তির আওতায় হংকংএ নারী শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখন সারাদেশ থেকে আগ্রহী নারীদের নাম নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাস্তবতা হল, খুব সংখ্যক নারী সরকারি তালিকায় 'জব সিকারস রেজিস্ট্রেশন' করেন যা হতাশাব্যঞ্জক। কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিদেশে কম খরচে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও এ পেশায় বেতনের অংক কম এবং নারীরা শ্রম শোষণ, শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নির্যাতনসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা করেন।

আরব নিউজের সূত্রমতে, সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া সরকার তাদের দেশের নারীদের গৃহকর্মের ভিসায় বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ স্থগিত করেছেন। তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীরা বেশি সংখ্যায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন যা মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনাগুলো ঘটছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

বিদেশের কর্মক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকরাও কমবেশি শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। তবে নারী কর্মীদের বেলায় সেটি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়। অন্যান্য পেশার তুলনায় গৃহকর্মী নারীরা বেশি নির্যাতনের শিকার হন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) একটি রিপোর্টে আরব আমিরাতে নারী শ্রমিকের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একটি ঘটনায় নিয়োগদাতা নারী প্রতিবাদী নারী শ্রমিককে বলেন, 'তোমাকে আমরা কিনেছি, অভিযোগ করবে না'।

দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা বেশ কিছু নারী শ্রমিকের উপর ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) একটি স্টাডি রিপোর্ট করেছেন। তাতে দেখা যায়, প্রতি ৩ জনে ২ জন অভিবাসী নারী শ্রমিক তাদের নিয়োগকর্তা দ্বারা কোনো না কোনো প্রকার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

বিদেশে কম-বেশি প্রায় সব পেশায় নারী শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হন। তবে যারা গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তারা বেশি মাত্রায় শোষণ, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার শিকার হন। গৃহকর্মে অন্তরীণ পরিবেশ থাকার কারণে নির্যাতনের অনেক ঘটনা প্রকাশিত হয় না; নিরুপায় নারী শ্রমিকেরা সব অন্যায় আচরণ সহ্য করতে বাধ্য হন।

এছাড়া নারীদের বিদেশের কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার যে ক'টি কারণ রয়েছে তার মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য হল, তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও জীবনদক্ষতার উপর প্রশিক্ষণ না থাকা। অন্যদিকে, এজেন্সি, লেবার উইংস ও দূতাবাসসমূহের চরম গাফিলতির কারণেও অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন নারীদের মতে, জরুরি সময়ে এজেন্সি ও দূতাবাসসমূহ প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

শুধুমাত্র বিদেশে নয়, দেশে ফিরে আসার পরও একজন নারী শ্রমিককে প্রায়ই সমাজে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে যারা প্রতারিত হয়ে ফিরে আসেন তাদের নিয়ে সমাজের কেউ কেউ উপহাস বা হাস্যরসের জন্ম দেয়। আবার কারও অর্থিক উন্নতি দেখলে বলা হয়, অবৈধ উপায়ে টাকা আয় করেছে। যারা অসুস্থ হয়ে ফেরত আসেন তাদের সম্পর্কেও সমাজে নেতিবাচক ধারণা থাকে। প্রতিবেশিরা তাদের সঙ্গে সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে চান না। উল্লিখিত অপবাদ একজন নারী শ্রমিকের জন্য পীড়াদায়ক ও মানসিক নির্যাতন। ফলে এ ধরনের ঘটনা তার স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়। তিনি সমাজে হেয় হন। বিপদে পড়লে সহায়তার জন্য তাদের পাশে কেউ এগিয়ে আসতে চায় না। এমনও দেখা যায় যে, সামাজিক কাজে তাদের কেউই ডাকে না।

যারা পরিবার ও দেশের জন্য এত ত্যাগ শিকার করে রেমিটেন্স পাঠান তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভবিষ্যতে অপবাদের শিকার হতে হবে বা মানুষ নানান কথা বলবে এই ভয়ে নারীরা ভালো কাজের সুযোগ পেলেও বিদেশে যেতে প্রায়ই ভয় পান।

এখন তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, বিদেশের কর্মক্ষেত্রটি নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলে কি আমরা মুখ ফিরিয়ে নেব? পরিবর্তনের জন্য কি আমাদের করণীয় নেই? ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের জন্য কি আমাদের ন্যূনতম সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই?

আমরা চাই আমাদের কর্মক্ষম নারী শ্রমিকেরা নিরাপদ উপায়ে ও ন্যায্য খরচে বিদেশে যাবেন। সেখানে ভালো কর্মপরিবেশ এবং বাসস্থানে সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা পাবেন। চাকরি শেষে তারা বীরের মতো দেশে ফিরে এসে সমাজের মূল স্রোতে মিশে যাবেন। তবে যেটি সর্বাগ্রে খেয়াল করতে হবে তা হল, সঠিক নিয়মে নারীদের বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। বিশেষ করে যে মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছেন তারা, সেটি বিশ্বস্ত ও সরকারি তালিকাভুক্ত কিনা দেখা দরকার। অপরিচিত মাধ্যমে বিদেশে গেলে পাচারের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি ভাষা জানা ও জীবন-দক্ষতার উপর প্রশিক্ষণ নিলে প্রতিদিনই বিভিন্ন পরিবর্তনশীল অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে চলা যায়। গৃহকর্মে ভিসায় নারীদের নিয়োগদানের আগে সম্ভব হলে এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তা সম্পর্কে পূর্বে খোঁজখবর নিতে হবে। চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের জন্য কর্মঘণ্টা ও বেতন পর্যালোচনা করা উচিত।

পাশাপাশি, সব কর্মীর জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিতে এজেন্সি, লেবার উইংস ও দূতাবাসগুলোর আরও আন্তরিক হয়ে সেবা দিতে হবে। নির্যাতনের ঘটনা যে সব দেশে বেশি, সে সব দেশের দূতাবাসে নারী কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত শেল্টার হোমের ব্যবস্থা থাকা দরকার। প্রয়োজনবোধে সে দেশের সরকার, শ্রম মন্ত্রণালয় ও নিয়োগকর্তাদের নালিশ করে সমস্যার সুরাহা করতে হবে। এছাড়া নতুন করে বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে চাইলে বিরাজমান অনিয়মগুলো আমলে নিয়ে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে যাচাই বাছাই করে চুক্তিতে সই করা উচিত।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন তথা নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করতে বিদেশে নারীর কর্মসংস্থান একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে নারীবান্ধব নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করা হলে নারীরা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে কাজের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের একটি দেশ হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছুনোর স্বপ্ন দেখছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশে ও বিদেশে নারী ও পুরুষের নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এখন প্রয়োজন আমাদের করণীয় নির্ধারণ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ব্যক্তিস্বার্থ ও দল-মতের উর্ধ্বে থেকে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরও ভূমিকা রাখতে অঙ্গীকার করতে হবে সবাইকে।