ভাষার দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা

সালেক খোকনসালেক খোকন
Published : 21 Feb 2015, 06:20 AM
Updated : 21 Feb 2015, 06:20 AM

সুখদেব পাহানের বয়স তখন ছয়। বাবার ইচ্ছে, ছেলে তার সঙ্গে কাজে যাবে, সংসারে আসবে বাড়তি আয়। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে মা ভারতী পাহানের স্বপ্নটা ভিন্ন; বই হাতে ছেলে যাবে স্কুলে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে। তখন কেউ আর তাকে ঠকাতে পারবে না। সমাজে পাহানদের সম্মান বাড়বে। আর শিক্ষার আলো ছড়াবে সুখদেব।

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম গোদাবাড়ী। সুখদেবরা ছাড়াও এ গ্রামে বাস করেন পঁচিশটি মুণ্ডা পাহান পরিবার। এরা কথা বলেন 'সাদরি' ভাষায়। এ ভাষাতেই মায়ের ঘুমপাড়ানি গান আর বাবার বকুনি খেয়ে বেড়ে উঠেছে সুখদেব। রাত-দিন মায়ের মুখের কথা আর উৎসব-আনন্দে আদিবাসী গানের সুরের মাঝেই সে খুঁজে পায় তার মাতৃভাষা।

মায়ের ইচ্ছা প্রাধান্য পায়। সুখদেবকে স্কুলে পাঠাতে সম্মতি দেন বাবা খোসকা পাহান। বুকভরা আশা নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করান স্থানীয় কালিয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সুখদেব হেসে খেলে বড় হচ্ছিল যে ভাষার আলিঙ্গনে, মায়ের সে ভাষা খুঁজে পায় না বিদ্যালয়ে। সেখানে ছাত্র বা শিক্ষক কেউ কথা বলে না তার প্রিয় 'সাদরি' ভাষায়। চারপাশের সকলেই বাংলা ভাষাভাষী। বাংলা তার কাছে অপরিচিত, অন্য জাতির ভাষা। তাই প্রথম দিনেই দুরন্ত সুখদেবের শিশুমনে ছন্দপতন ঘটে। তার সব আনন্দ, হাসি উবে গিয়ে মনের ভেতর জায়গা করে নেয় অজানা আতঙ্ক। শিক্ষালাভ করতে এসে শিশু বয়সেই বাংলা ভাষা তার ওপর আরোপিত হয়।

একে তো ভাষার ভীতি, তার ওপর ক্লাসের বন্ধুদের আচরণে সুখদেব একেবারেই মুষড়ে পড়ে। আদিবাসী বলে তাকে বসতে হয় আলাদা এক বেঞ্চে। কেউ তার বন্ধু হতে চায় না। সবাই তাকে আড়চোখে দেখে। ফলে স্কুলে তার ভাব বিনিময়ের পথও হয় রুদ্ধ।

ক্রমেই স্কুলে যাওয়া তার কাছে রীতিমতো ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম পরীক্ষাতেই ফেল করে সে। বিদ্যালয়ের দুর্বল ছাত্রদের তালিকায় নাম ওঠে সুখদেবের। কেউ জানতেও পারে না তার পিছিয়ে পড়ার কারণ। কিছুদিনের মধ্যেই সে হারিয়ে ফেলে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ। পড়াশুনায় ইতি। অতঃপর বাবার হাত ধরে শুরু হয় কাজে যাওয়া।

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী আরেকটি গ্রাম ঝিনাইকুড়ি। এই গ্রামেই 'কড়া' নৃগোষ্ঠীর বাস। গোটা দেশে টিকে আছে ওদের মাত্র ১৯ পরিবার। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস। শিতা কড়া আর কোলো কড়ার আদরের সন্তান কৃষ্ণ কড়া। শিশু কৃষ্ণ ভর্তি হয় নিকটবর্তী রাঙ্গন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম দিনেই যেন সে সাগরে পড়ে। তার মায়ের ভাষায় বিদ্যালয়ের কেউ কথা বলে না। সকলেই বাঙালি। জাত যাওয়ার ভয়ে কৃষ্ণকে এড়িয়ে চলে সবাই। অবজ্ঞা আর অবহেলায় কষ্ট পায় সে। কিন্তু মায়ের উৎসাহে সাহস হারায় না সে। অজানা বাংলা ভাষা বুঝে পরীক্ষায় পাশ করা– সে এক দুরুহ ব্যাপার! তাই পাশ ফেলের মধ্যেই কেটে যায় তার ৮টি ক্লাস।

হালুয়াঘাটের আচকিপাড়ার গারো নারী সুমনা চিসিম। পেশায় এনজিও কর্মকর্তা। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরের বিরিশিরি মিশন স্কুলে। স্কুলে গিয়ে সুমনাও খুঁজে পাননি নিজের মায়ের ভাষা। ফলে প্রথম দিনেই ভড়কে যান তিনি। তাঁর ভাষায়. ''আমার ক্লাস টিচার ছিলেন একজন বাঙালি। ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেস করলে, ভাষা বুঝতে না পারায় সঠিক উত্তর দিতে পারতাম না। টিচারদের 'তুমি' বলে সম্বোধন করতাম। এ নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত। 'তুমি' ও 'আপনি'র ব্যবহার জানা ছিল না। প্রথম প্রথম বাংলা ভাষা না জানার কারণে নিজেও ছিলাম অন্ধকারে।''

আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া ওপরের চিত্রগুলোতে নারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের বাস্তব অবস্থা খানিকটা ফুটে উঠেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে এ চিত্র আরও করুণ।

শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ভূমিকাই প্রধান। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ''শিক্ষা ক্ষেত্রে মাতৃভাষা হচ্ছে মায়ের দুধের মতো। নিজেকে প্রকাশে মাতৃভাষা দেয় সকালে সূর্যের দিগন্তবিস্তারী আলো।''

কিন্তু এদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নেই তাদের নিজেদের ভাষায় পুস্তক কিংবা তাদের ভাষাভাষী শিক্ষক। ফলে এসব জনগোষ্ঠীর শিশুরা নিঃশব্দে বঞ্চিত হচ্ছে মাতৃভাষার সেই দিগন্তবিস্তারী আলো থেকে।

শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। এই ভাষাই যদি শিশুর কাছে দুর্বোধ্য ও ভীতিকর হয়, তবে প্রথমেই শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার শুরুতেই বোঝার মতো চেপে বসছে বাংলা ভাষা। ফলে বিকশিত না হয়ে অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে ওই শিশুদের স্বপ্ন। বাঙালি সমাজের কোমলমতি শিশুরা যখন শিক্ষার শুরুতেই বিদ্যালয়ে আনন্দ-হাসির মধ্যে নিজের মাতৃভাষায় ছড়া কাটছে, নিজের ভাষায় ভাব জমিয়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে, তখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা নিরবে চোখের জল ফেলে বেরিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয় থেকে। অথচ এদেশের মানুষই মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছে নিজের বর্ণমালা। বাঙালি জাতির সে ইতিহাস আজ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয় প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের।

আমাদের ভাষা দিবস আজ সারা বিশ্বের মাতৃভাষা দিবস। কিন্তু ভাষার জন্য রক্ত দেওয়া শহীদদের এদেশে রক্ষা পাচ্ছে না অন্য জাতির মাতৃভাষাগুলো, শিশুরাও বঞ্চিত হচ্ছে মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ থেকে। এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার!

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ১৯৫৭ সালের ৫ জুন ৪০তম অধিবেশনে ১০৭ নং কনভেশনে আদিবাসী ও উপজাতীয় ভাষা বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে কিছু নীতিমালা তৈরি করে এবং এ কনভেশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ। কনভেশনের অনুচ্ছেদ ২১-এ উল্লেখ রয়েছে, 'সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জাতীয় জনসমষ্টির অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সকল স্তরে শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।'

অনুচ্ছেদ ২৩(১)এ উল্লেখ রয়েছে, 'সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের তাদের মাতৃভাষায় পড়তে ও লিখতে শিক্ষা দান করতে হবে। কিংবা যেখানে এটা সম্ভব নয়, সেখানে তাদের সমগোত্রীয়দের মধ্যে সাধারণভাবে বহুল প্রচলিত ভাষায় শিক্ষা দান করতে হবে।'

অনুচ্ছেদ ২৩(২)এ উল্লেখ রয়েছে, 'মাতৃভাষা বা আদিবাসী ভাষা থেকে জাতীয় ভাষা কিংবা দেশের একটি অফিসিয়াল ভাষায় ক্রমান্বয়ে উত্তরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।'

এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষরিত 'আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ'এর ৩০ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে, 'যেসব দেশে জাতিগোষ্ঠীগত, ধর্মীয় কিংবা ভাষাগত সংখ্যালঘু কিংবা আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে, সেসব দেশে ওই ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত বা আদিবাসী শিশুকে সমাজে তার নিজস্ব সংষ্কৃতি ধারণ, নিজস্ব ধর্মের কথা ব্যক্ত ও চর্চা করা, তার সম্প্রদায়ের অপরাপর সদস্যদের সঙ্গে ভাষা ব্যবহার করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।'

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির 'খ'এর ৩৩ নং ক্রমিকের খ (২) নং উপ-অনুচ্ছেদে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের কথা উল্লেখ রয়েছে।

এছাড়া ২০১০ সালে চালু হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষা শিখতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আদিবাসী শিক্ষক ও পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা করা হবে। সে অনুসারে একটি জাতীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছিল ২০১২ সালে। পরে ২০১৩ সালে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, সাদরি ও গারো শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৪ সালে কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও এখনও সরকারিভাবে তা শুরু করা হয়নি।

অন্যদিকে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দিই তাহলে দেখব, অনেক ভাষাই আজ হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে তা সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে কোচ ও রাজবংশীদের ভাষা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। প্রায় পুরো বিলুপ্ত হয়ে গেছে কুড়ুখ ও নাগরি ভাষা।

একাধিক তথ্য মতে, এদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৪টি ভাষা পরিবারে প্রায় ৩০টির অধিক ভাষা রয়েছে। এ সব ভাষাকে মূলত ৪টি ভাষা পরিবারে ভাগ করা যায়। অস্টো-এশিয়াটিক, তিব্বতি- চীন, দ্রাবিড়, ইন্দো-ইউরোপীয়। বাংলাদেশে অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাসমূহ আবার মোন-খমের ও মুণ্ডারি দুটি শাখায় বিভক্ত। মোন-খমের শাখার অন্তর্ভুক্ত খাসি ভাষা। সাঁওতালি ও মুণ্ডা ভাষা দুটিই মুণ্ডারি শাখার অন্তর্ভূক্ত। উভয় ভাষারই নিজস্ব হরফ নেই। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রঘুনাথ মুর্মু 'অলচিকি' নামে সাঁওতাল বর্ণমালা তৈরি করেন এবং তা সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে।

চীনা-তিব্বতি ভাষাসমূহ আবার কয়েকটি শাখায় বিভক্ত। মান্দি বা গারো, ককবোরক (ত্রিপুরা), লিঙ্গাম, পাত্র বা লালং, কোচ, রাজবংশী প্রভৃতি ভাষাসমূহ বোডো শাখার মধ্যে পড়ে। মণিপুরী, লুসাই, বম, খেয়াং, খুমি, ম্রো, পাংখো প্রভৃতি ভাষাগুলো কুকি-চীন শাখাভুক্ত। রাখাইন, ওরাওঁদের কুড়ুখ, পাহাড়িয়া ও মাহালি ভাষা দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের। রাখাইন ভাষা অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ একটি ভাষা। রাখাইন ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। ওরাওঁদের কুড়ুখ ভাষাটি আদি ও কথ্য ভাষা, যা এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

বাংলা ছাড়াও বাংলাদেশে ইন্দো-আর্য পরিবারভুক্ত ভাষাগুলোর মধ্যে চাকমা ভাষা এবং সাদরি ভাষা রয়েছে। মণিপুরীদের বিষ্ণুপ্রিয়া, হাজং প্রভৃতি ভাষাও এই শ্রেণিভুক্ত।

ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে প্রতি দুই সপ্তাহে হারিয়ে যাচ্ছে একটি ভাষা। বিলুপ্তপ্রায় এসব ভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেছে ইউনেসকো। সে বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা সংরক্ষণের বিষয়টি অতি দ্রুত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।

আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ভাষা রক্ষা কিংবা তাদের শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের প্রসঙ্গ এলেই প্রশ্ন ওঠে বর্ণ নিয়ে। মজার বিষয় হল, বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক প্রচলিত ইংরেজি ভাষারও নেই নিজস্ব বর্ণ। ইংরেজি বর্ণগুলো রোমান হরফ থেকে নেওয়া। তাছাড়া চাকমা, মারমা, রাখাইন, সাঁওতাল, ত্রিপুরা, ম্রো. বম, গারো, খাসিয়া, হাজং, মণিপুরি, ওরাওঁ, মুণ্ডাসহ ১৫টি আদিবাসী ভাষায় লিখিত রচনা এখনও রয়েছে। ভাষা রক্ষা কার্যক্রমে যা সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইনে (২০১০) উল্লেখ আছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভাষা সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং যে সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষার লেখ্যরূপ নেই, সে সব ভাষার লেখ্যরূপ প্রবর্তন করা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ২০১০ সাল থেকে সে লক্ষ্য সামনে রেখেই যাত্রা শুরু করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

সরকার সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ এ দেশে মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশু স্কুলে যাচ্ছে। যাদের মধ্যে বড় একটি অংশ মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ না পাওয়ার কারণে ঝরে পড়ে। তাই প্রয়োজন অতি দ্রুত এই জনগোষ্ঠীগুলোর ভাষা রক্ষার পাশাপাশি তাদের শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের উদ্যোগ গ্রহণ। পাশাপাশি দরকার প্রত্যেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাসের এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন এবং সেখানে বাধ্যতামূলভাবে তাদের নিজস্ব ভাষার শিক্ষকদের নিয়োগদান।

একুশে ফেব্রুয়ারি সকল মানুষের কথা বলে। তাই আমরা চাই, ভাষার এ দেশে রক্ষা পাক অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে টিকিয়ে রাখার গৌরবময় ইতিহাসের উত্তরাধিকারীদের এ দেশে সব শিশু তাদের চিরচেনা, চিরআপন মায়ের ভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাক।

ছবি ও ভিডিও: সালেক খোকন।

সালেক খোকন: লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক।