দৃষ্টিতে স্বচ্ছতা থাকলে উৎরে যাওয়া সম্ভব

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 26 Jan 2015, 10:21 AM
Updated : 26 Jan 2015, 10:21 AM

যে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো কিছুটা আকস্মিকভাবে মারা গেলেন, তাতে মনে হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়জোর একটা শোকবার্তা পাঠাবেন বিএনপি নেত্রীকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সেটাই আমরা মনে করতাম যথেষ্ট। এর বদলে শেখ হাসিনা যেটি করলেন, তাতে অনেকেই চমৎকৃত হয়েছেন।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এ দৃুটি পরিবারের যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তাদের মধ্যে যে ভাষা ও ভঙ্গিতে কথাবার্তা বিনিময় হয়, তাতে প্রশ্ন উঠতে পারে– প্রধানমন্ত্রী কতটা মন থেকে ওই কাজ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্নটির নিষ্পত্তি তো করা যাবে না; তার প্রয়োজনও নেই। ফেইসবুক স্ট্যাটাসে তাই পরিষ্কার করে লিখেছি, শোকাহত বেগম জিয়াকে সহানুভূতি জানাতে তাঁর কার্যালয়ে যাওয়াটা প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে ছিল 'রাজনৈতিকভাবে সঠিক' পদক্ষেপ।

দুর্ভাগ্যজনক হল, বিএনপির নেত্রী ও তাঁর সহকর্মীরা সেটা মোকাবেলা করলেন আমাদের গড়পড়তা সামাজিক শিষ্টাচারেরও নিচে নেমে গিয়ে। পুত্রশোকে কাতর বেগম জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাঁকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে বা ইনজেকশন দিয়ে বিশ্রামে রাখা হয়েছে– তো কী হয়েছে? অন্যরা, সিনিয়র নেতারাও সেখানে ছিলেন। তাঁরা পারতেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের অভ্যর্থনা জানাতে, ভেতরে নিয়ে যেতে। সেখানে তাঁরা সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলে কিছুক্ষণ পরই চলে আসতেন।

খালেদা জিয়া শয্যাশায়ী থাকলেও প্রধানমন্ত্রী গিয়ে তাঁর সঙ্গে দুটো কথা বলতে পারতেন। এ-ই তো? অথচ এটুকুর ব্যবস্থা করতে পারলেন না এত বড় একটা দল বিএনপির লোকজন। ঘটনাধারায় পরিষ্কার নয়– এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার কতটুকু দায় ছিল। তাঁর পক্ষ থেকে পরে যা বলা হয়েছে, তাতে কিন্তু 'ড্যামেজ কন্ট্রোল' হয়নি। যা হওয়ার, তা ততক্ষণে হয়ে গেছে। ওইদিনই খবর আর টকশোয় পরিস্থিতিটা চলে গেছে বিএনপির প্রতিকূলে।

দলটির পাঁড় সমর্থক আর সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে খালেদা জিয়ার প্রতি যারা সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছে– তারা বিষয়টা কীভাবে দেখবে, সেটি অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সিংহভাগ কিন্তু এর মধ্যে নির্জলা রাজনীতি খুঁজে পাবে এবং শেখ হাসিনার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তার পক্ষে যুক্তি বা অপযুক্তি জোগাবে। ওই ঘটনার পর রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে একাধিক জটলায় এমনতরো আলোচনা শুনেছি বলেও কথাটা জোর দিয়ে বলছি।

আওয়ামী লীগের দিকেও এমন লোকজন প্রচুর আছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে এরা দল ও নেত্রীর পক্ষে। তারা কিন্তু উল্লসিত হবে শেখ হাসিনার প্রতি ওই রকম আচরণ হওয়ায়। ক্ষমতাসীনদের দিকে এটা কত পয়েন্ট যুক্ত করল, সে হিসাব কষতে এরই মধ্যে বসে গেছে তারা।

এ দু'পক্ষের মাঝে যে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আছে– তারা ঘটনাটি কীভাবে দেখছে বা দেখবে, সেটাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এরা সাধারণভাবে বলবে, বেগম জিয়া বা তাঁর লোকজন অশিষ্ট আচরণ করেছেন। শেখ হাসিনা পুরোপুরি রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেও যদি ওই কাজ করে থাকেন, তাদের উচিত ছিল রাজনৈতিকভাবেই সেটাকে গ্রহণ করা। সে ক্ষেত্রে তাঁরা 'সমান সমান' হয়ে না গেলেও বিবেকবানদের দৃষ্টিতে অভব্য হয়ে যেতেন না।

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে বসলে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা কি বিএনপি নেতৃত্বকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বলতেন? তাঁরা কি বলতেন, এ শোকাবহ পরিবেশে আসুন আমরা মিলেমিশে যাই? এমন চিন্তা শিশুসুলভ বৈকি। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ও যাওয়া নিয়ে রাজপথে তাদের মধ্যে ডনকুস্তি চলছে এখন। এর মধ্যে কোকোর অকালমৃত্যু যত দুর্ভাগ্যজনকই হোক– এর সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

খালেদা জিয়া ও তাঁর সহকর্মীরা স্বভাবতই বলেছেন, 'আন্দোলন চলবে'। মনে রাখতে হবে, দুই দফা ইজতেমার সময়ও তাঁরা কর্মসূচি শিথিল করেননি। সরস্বতী পূজার জন্যও নয়। দিনের পর দিন তাঁরা অবরোধ চালাচ্ছেন এমনি এমনি নয়। এ বিষয়ে তাদের বিবৃতিগুলোও যথেষ্ট কড়া ভাষায় লেখা। এর মধ্যে সর্বনিস্ন শর্ত হল, মধ্যবর্তী ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপে বসতে রাজি হতে হবে।

আমরা অনেকেই বলছি, কোকোর মৃত্যুতে খালেদা জিয়া যেন বোঝেন পেট্রল বোমায় নিদারুণভাবে হতাহত মানুষের স্বজনদের বেদনা এবং তিনি যেন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এটা বোধগম্য নয় যে, নাশকতার শিকার মানুষের সঙ্গে কোকোর মৃত্যুর তুলনা করা হচ্ছে কেন। এতে কি নাশকতা হালকা করে দেখা হচ্ছে না? কোকো অসুস্থই ছিলেন এবং তার মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে। এদেশে এখন প্রতিদিন যারা দগ্ধ হচ্ছে, তাদের যাতনার কোনো তুলনা কি হয় এর সঙ্গে?

খালেদা জিয়া, তাঁর সহকর্মী ও তাদের পাঁড় সমর্থকদের জিজ্ঞেস করে দেখুন, তাঁরা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবে– সব নাশকতাই সরকার ও তার লোকজন ঘটাচ্ছে আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে। মাঝে যে জনগোষ্ঠী রয়েছে, নির্বাচনে যারা 'ম্যাটার' করে– তাদের বিভ্রান্ত করে পক্ষে টানতে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে যে, বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল হয়ে গেছে, এদেরও নিষিদ্ধ করা দরকার ইত্যাদি।

আপনি যখন বলবেন, দু'তিনটি ঘটনায় বিএনপি ও জামাত-কর্মীদের ধৃত হয়ে গণধোলাইয়ের শিকার ও গ্রেপ্তার হওয়ার কথা, জানাবেন বোমা বানাতে গিয়ে হতাহত হওয়ার খবর– তারা বলবে, আওয়ামী লীগও এসব করেছিল। আন্দোলনে এসব হয়েই থাকে। বলবে, আওয়ামী লীগও শেরাটনের সামনে গান পাউডার দিয়ে বাস পুড়িয়ে একসঙ্গে অনেক মানুষ মেরেছিল। ওটা যে প্রমাণ হয়নি, সে কথা বলে আপনি তাদের সঙ্গে পারবেন না। বলবে, এসব প্রমাণ করা যায় না। আপনারাও পারবেন না ইত্যাদি।

টকশোয় এ জাতীয় কথা কাটাকাটি রোজ দেখতে পাচ্ছি। দেখে মেজাজ খারাপ হলেও কিছু করার নেই। কারণ বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না যে, এদের বক্তব্য আরও শুনতে হবে। বুদ্ধিজীবীরাও দু'ভাগ হয়ে অনেক ক্ষেত্রে নেতাদের চেয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন দেখে এক রকম মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এর মাঝে যারা আছে, তাদেরও প্রতিনিধিত্ব করছেন অনেকে। এরা আছেন বিপাকে। দু'পক্ষই চায়– তারা যেন কোনো একটা দিকে চলে আসেন। দু'পক্ষের লোকজনও চায়।

আমাদের পরিষ্কার করে বুঝতে হবে, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন টেকাতে চায় সরকার। চেষ্টা করবেন তারা পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে। নিদেনপক্ষে যতটা সম্ভব বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে, নিজেদের অবস্থান মজবুত ও প্রধান বিরোধী পক্ষকে দুর্বল করে নির্বাচন দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসতে চান তারা। এদের দিক থেকে দেখলে ভিন্ন কিছু ভাবার সুযোগ নেই।

আর বিএনপি ভাবছে, বেশিদিন অপেক্ষা করা অসম্ভব। জোট সংহত নয়; দলও ধরে রাখা যাবে না। ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকেই জিয়া পরিবার রয়েছে বিপদে। খালেদা জিয়ার দুই পুত্র বিদেশে থাকছিলেন বাধ্য হয়ে। তার একজন মারা গেলেন খুব সম্প্রতি। নিম্ন আদালতে তিনি কিন্তু দণ্ডিত ছিলেন দুর্নীতির দায়ে। খালেদা ও তারেক রহমানের নামেও ঝুলছে মামলা। সরকার টিকে গেলে ও শক্তিশালী হয়ে উঠলে জিয়া পরিবার ও দলের ওপর আরও আঘাত আসবে, এটাই স্বাভাবিক।

মাঝখান থেকে আমরা যত কথাই বলি, তা শোনার মতো অবস্থা কোনো পক্ষেরই নেই। নেই যে, সেটা বোঝা যায় তাদের বক্তব্যে। দু'পক্ষই বলে, এটা যুদ্ধ। কীসের যুদ্ধ, সেটা অবশ্য স্পষ্ট করে বলে না। তাহলে তো বলতে হয়– এর মর্মে রয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতা। সেটা তারা বলবেন না। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের যুদ্ধকে তারা বরং মহিমান্বিত করছেন আদর্শের কথা বলে। যেমন, গণতন্ত্র মুক্ত করা। যেমন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি লড়ছে বলে গণতন্ত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অধিকারী কেউ মনে করবে না। হতে পারে,তারা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তর পদ্ধতির জন্য লড়ছেন। সেটাও বেকায়দায় পড়ে। কেননা অতীতে তারাও মাগুরা নির্বাচন করেছিলেন; ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের কথাও কেউ ভুলবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে তাদের মতো করে বিনষ্ট আর কেউ করেনি। এখন তারাই আবার সে রকম একটা কিছুর জন্য 'আন্দোলন' করছেন।

এটাও মানা শক্ত, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার আর জামাতকে কাহিল করলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে। গণতন্ত্র মানে যেমন নির্বাচন বাদেও আরও অনেক কিছু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেও তাই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী হয়েছে, এটা কি বিশ্বাস করতে হবে? ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠন দেশজুড়ে যা করছে/করছিল, তাও কি ওই চেতনার সমার্থক? বিরোধী দলের প্রতি সম্প্রতি যে আচরণ করা হল, সেটাও কি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ধারণার সঙ্গে যায়?

কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নেন, সেটাকে বরং বলা যেতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। নিয়মমাফিক একজন আদিবাসী ও ভিন্নধর্মাবলম্বীকে যে প্রধান বিচারপতি করা হল, সেটা বরং ওই চেতনার প্রকাশ। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যে কিছুটা স্বস্তি বোধ করে, সেটাকে বরং বলা যাবে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। কিন্তু এ সরকারের আমলেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, সেটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

আদর্শের কথা তাই যত কম বলা হয়, ততই ভালো। বরং বলুন সুশাসনের কথা। ক্ষমতাসীনরা বলছেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা ভালো রেখেছি জনগণকে। এ দাবি কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না হলেও মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ইতিবাচক। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দামসহ নানা কারণে এটা আরও ইতিবাচক হওয়ার আশাও রয়েছে। এখানে অনেক কিছু করার আছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের।

সরকার 'মিন' করলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটা উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটানোও সম্ভব। দলবাজি একটু কমাতে পারলেই এর লক্ষণীয় উন্নতি ঘটানো যাবে। বিনিয়োগ বাড়িয়ে তোলা গেলে সামাজিক অসন্তোষ ও সন্ত্রাস কমে আসবে বলেই ধারণা। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগে অবকাঠামোর উন্নয়ন কিন্তু কম হচ্ছে না। এক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজের গতি বাড়ানো সম্ভব।

এগুলো করেও সরকার দাবি করতে পারে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করছি। মুক্তিযুদ্ধের মূলে ছিল একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। গণতান্ত্রিক সংস্কার ও এর উপযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছাড়া সেটা কীভাবে সম্ভব? বিএনপি তো শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাপনার কথা বলছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ বলুক গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের কথা। বাতিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ সংস্কারের কথা বলুক, যেটা ওয়ান-ইলেভেন সরকার বলত।

এসব করে আর বলে কিন্তু বিএনপিকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব। বালুর ট্রাক আর জলকামান দিয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করার কী দরকার? কী হবে রাজধানীতে তাঁকে একটি বড় জমায়েত করতে দিলে? কী হয় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি, সেটা স্বীকার করে নিলে? এ মুহূর্তেই আরেকটি জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে, বিষয়টি তো এত সহজ নয়। সংলাপে গেলেও সে প্রক্রিয়ায় অনেকটা সময় যাবে। বিএনপিও এটা জানে।

আগের এক নিবন্ধে বলেছিলাম, অনির্বাচিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার দু'বছর থাকতে পারলে দুর্বলভাবে নির্বাচিত এ সরকার অন্তত তিন বছর থাকতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায়। তাদের আইনগত বৈধতা কেউ উড়িয়ে দিতে পারছে না; পশ্চিমারাও নয়। প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তার পেছনে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ও বড় দলের সরকার। সরকারে রয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) অংশীদারিত্ব। দেশের বিশেষ কিছু অঞ্চলে এর শক্তি উপেক্ষণীয় নয়। জামায়াত নিয়ে বিএনপিতে যে 'পেইন' রয়েছে, জাপা নিয়ে সরকারে তা নেই। আর ঘুরেফিরে দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষ রয়েছে সরকারের সমর্থনে।

দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ হলে এ সরকারের এত নার্ভাসনেসের কারণ দেখি না। এ মুহূর্তে তার দায়িত্ব হল অব্যাহত অবরোধ আর নাশকতা থেকে জনগণ ও অর্থনীতিকে বের করে আনার কৌশল অবলম্বন করা। কোকোর মৃত্যুপরবর্তী ঘটনাবলীতে কিন্তু বোঝা গেল, প্রধানমন্ত্রী চাইলেই কুশলী হতে পারেন। তাঁর পক্ষে চলমান সঙ্কট থেকে উৎরে যাওয়াও সম্ভব।

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট।