টেকটোনিক চলন, ভূমিকম্প-প্রবণতা ও সূচকীয় বিধি

ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী
Published : 17 March 2011, 04:57 PM
Updated : 17 March 2011, 04:57 PM

ভূমিকম্প কেন হয়?
প্রশ্ন ছিল একটি ছোট্ট শিক্ষার্থীর, মানিকগঞ্জ গণিত উৎসবে, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে। ভূমিকম্পের কার্যকারণ কী, ভূমিকম্প কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, বা আদৌ যায় কি-না, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কি সম্ভব– এসব প্রশ্ন আজকাল হামেশাই উঠে আসছে। ইদানিং মাঝেমধ্যেই আমাদের দেশের জমিন কেঁপে উঠছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট, ও ঢাকাবাসীরা প্রায়শই স্বল্পস্থায়ী ভূমিকম্প টের পাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও ভূমিকম্পের মারাত্মক সব ধ্বংসের খবরাখবর আমরা পাচ্ছি। তাই জনমনে প্রশ্ন জেগেছে ভূমিকম্প নিয়ে। মানিকগঞ্জের ঐ বাচ্চাটিও তাই উৎসুক– ভূমিকম্প কেন হয়। বিশেষ করে গত ১১ই মার্চ ২০১১ জাপানের উত্তর উপকূল থেকে সামান্য দূরে ৮.৯ মাত্রার যে ভূমিকম্পটি ঘটে তার ফলে ৩৩ ফুট উঁচু সুনামির সৃষ্টি হয়। মৃতের সংখ্যা প্রায় বারো হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। আর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো হয়নি। এদিকে আঘাতগ্রস্ত চারটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বিস্ফোরিত হয়েছে, এসব থেকে বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত বাস্তব। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামি তরঙ্গটি পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে আঘাত হানে। জাপানের গত ১৪০ বছরের লিখিত ইতিহাসে এটিই ভয়াবহতম ভূমিকম্প।

এক কথায়, ভূমিকম্প হয় প্লেট টেকটোনিকের সংঘর্ষের ফলে। পাশাপাশি দুটি মহাদেশীয় প্লেটের সীমান্ত অঞ্চলে যে প্রবল পীড়নের সৃষ্টি হয় সেই পীড়ন যখন বড়সড় চ্যুতির সৃষ্টি করে এবং তার অন্তর্নিহিত শক্তি বের করে দেয় তখন ভূমিকম্প হয়। কিন্তু এতে কি উৎসুক মন ভরে? ভূমিকম্পের মূল প্রকৃতি জানতে হলে পৃথিবীর গঠন একটু জানা চাই। পৃথিবীকে যদি মাঝখান থেকে কেটে অর্ধেক করে ফেলা হয়, তবে দেখা যাবে এর একাধিক স্তর আছে যাদের গঠন ভিন্ন ভিন্ন। সবচেয়ে ওপরের যে পাতলা স্তরটি দেখা যাবে সেটি হলো গড়ে সত্তর কিলোমিটার পুরু ভূ-ত্বক। এই ভূত্বকের পৃষ্ঠে আমাদের বসবাস। এর নিচে আছে গলিত বা অর্ধ-গলিত ম্যাগমার ম্যান্টল এবং একদম কেন্দ্রে লৌহ-নিরেট কেন্দ্রভাগ। ভূ-ত্বক কিন্তু অবিচ্ছিন্ন ফলের খোসার মতো নয়। প্রায় এক ডজন ছোট-বড় অংশ নিয়ে ভূ-ত্বক গঠিত। এই অংশগুলোকে প্লেট টেকটোনিক বলে। এই প্লেটগুলো নিচের অশক্ত ম্যান্টলের ওপর ভাসতে থাকে। এই প্লেটগুলো একে অপরের সাথে ঘষা খেতে থাকে, কখনো একটি প্লেট অপরটির উপরে উঠে যায়, কখনো আবার নিচে চলে যায়, কোথাও আবার একে অপর থেকে দূরে সরে যায়। এই প্লেটগুলোর প্রান্তরেখা বরাবরই পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকগুলো অবস্থিত। টেকটোনিক প্লেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল তিন রকমের হতে পারে: স্প্রেডিং জোন বা অপসারী অঞ্চল, সাবডাক্শন জোন বা অধোগামী অঞ্চল এবং ট্রান্সফর্ম ফল্ট বা পরিবর্তী চ্যুতি। অপসারী অঞ্চলে দুটি প্লেট একে অপর থেকে দূরে সরে যায়। তাই এখানে ভূ-ত্বকের পুরুত্ব সবচেয়ে কম থাকে, কারণ এর নিচে ভূ-অভ্যন্তর থেকে গলিত ম্যাগমা ঠেলে উঠতে থাকে। এখানে নতুন জমি তৈরি হয়। এসব অঞ্চল স্বাভাবিক ভাবেই মহাসমুদ্রের মধ্যে থাকে। ভূ-ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলে ছিদ্রযুক্ত হয়ে যায়। ফলে মহাসমুদ্রের পানি উত্তপ্ত ম্যাগমার সংস্পর্শে এসে অত্যুত্তপ্ত হয়ে যায়। এদেরকে সামুদ্রিক ভেন্ট বলে। এসব ভেন্টে চরম ও পরম শর্তের অধীনে বিচিত্র অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায়। আটলান্টিকের অতলে মিড-আটলান্টিক রিজ বরাবর নর্থ আমেরিকা প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেট পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যখন দুটি প্লেট পরস্পরের গা ঘেঁষে যায় তখন পরিবর্তী চ্যুতির সৃষ্টি হয়। এর অতি-বিখ্যাত উদাহরণ হলো ক্যালিফোর্নিয়ার সান অ্যান্ড্রিয়াস ফল্ট। অধোগামী অঞ্চলে এক প্লেটের নিচে আরেক প্লেট ঢুকে যায়। একটি প্লেটের অভ্যন্তরেও ভূমিকম্প হতে পারে, তবে অধিকাংশ ভূমিকম্পই প্লেটসমূহের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হয়ে থাকে।

টেকটোনিক প্লেটের আইডিয়াটি প্রথম মাথায় আসে জার্মান আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েগেনারের (১৮৮০-১৯৩০)। পৃথিবীর ম্যাপ একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, প্রায়শই কিছু কিছু দ্বীপের আকৃতি তার বিপরীত পাশের তটরেখার সাথে মিলে যায়, কিংবা পুরো মহাদেশের তটরেখা বিপরীত পাশের মহাদেশীয় তটরেখার সাথে মিলে যায়। যেমন দক্ষিণ-আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় তটরেখা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের সাথে হুবহু মিলে যায় আর উত্তর আমেরিকার পূর্ব-উপকূল (ফ্লোরিডা থেকে কানাডার উপকূল পর্যন্ত) আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম তটরেখার সাথে সুন্দর খাপ যায়। মনে হয় যেন এরা একটা বৃহৎ জিগ-স' পাজলের টুকরোর মতো, একটা আরেকটার সাথে সুন্দর খাপ খায়। শুধু আফ্রিকা ও আমেরিকার তটরেখাই নয়, অন্যান্য কয়েকটি মহাদেশ ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। এই সব দেখে শুনে ওয়েগেনার সাহেব তত্ত্ব দিলেন যে সম্ভবত বহুকাল আগে সকল মহাদেশ মিলে একটি বড় মহাদেশ ছিল (তিনি তার নাম দেন 'প্যানজিয়া')। তারপর এরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখনকার অবস্থানে গিয়েছে। এই তত্ত্বের নাম 'কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট' বা মহীসঞ্চারণ তত্ত্ব। এই তত্ত্বের সমর্থনে ওয়েগেনার মাদাগাস্কার দ্বীপ ও ভারতে প্রাপ্ত ফসিলের সাদৃশ্যও উল্লেখ করেন। তাঁর সময়ে এই তত্ত্ব ছিল বড়ই বেমানান, কিংবা বলা যায় সময়ের আগেই চলে আসা তত্ত্ব। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমনটি কিন্তু আমরা হামেশাই দেখেছি যে সঠিক সময়ের অনেক আগেই কোনো তত্ত্বের কথা শোনা যায়। সময়ের সাথে বেমানান এসব তাত্ত্বিককে নানান হাসি-তামাশার সম্মুখীন হতে হয়। আজ আমরা জানি, ওয়েগেনারের 'কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট' সর্বাংশ সঠিক নয়। মহাদেশগুলো জাহাজের মতো ঘোরাফেরা করে না। ঘোরাফোরার কাজটা করে টেকটোনিক প্লেট। এসব প্লেট যেখানে খুব বেশি পুরু, অর্থাৎ যেখানে পানির ওপর সে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সেখানে সে মহাদেশ; আর যেখানে অগভীর, সেখানে সে মহাসমুদ্রের তলদেশ। এসব প্লেটের সঞ্চরণজনিত ঘোরাফেরার ফলেই মহাদেশসমূহের আজকের চেহারা তৈরি হয়েছে। তাই মহাদেশসমুহের চেহারার যে মিল দেখে ওয়েগেনার সাহেব মুগ্ধ হয়েছিলেন তা নিতান্তই কাকতালীয় নয় তার পেছনে আছে প্লেট টেকটোনিকের জটিল সঞ্চরণ (সোজা কথায় 'সাঁতার কাটা')।

মহাসমুদ্রের তলদেশে মহাদেশীয় প্লেটের পুরুত্ব মাত্র দশ কিলোমিটারের মতো। কিন্তু এই অংশে পাথরের ঘনত্ব বেশি, তিন গ্রাম/সিসি'র থেকেও বেশি। এই সুকঠিন আগ্নেয় শিলার ওপরে থাকে অপেক্ষাকৃত নরম পাথরের স্তর যার ঘনত্ব দুই দশমিক সাত গ্রাম/সিসি। এই পাথর কর্দম, পাললিক শিলায় তৈরি। কিন্তু এর পুরুত্ব প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ কিলোমিটার হতে পারে। তাই যখন প্লেটে প্লেটে ধাক্কা লাগে, তখন এই নরম শিলার স্তরে ভাজের সৃষ্টি হয়, তৈরি হয় পর্বতমালার। মিড-ওশান রিজ বা মধ্য-মহাসাগরীয় শৈলশিরা অঞ্চলে মহাদেশীয় প্লেটের গঠনক্রিয়া চলে। এই অঞ্চলের পাথরের নাম মধ্য-মহাসাগরীয় শৈলশিরার ব্যাসন্ট শিলা। মহাসাগরের তলদেশে এভাবে নতুন ব্যাসল্ট যোগ হয়ে নতুন প্লেট তৈরি হয়। রিচার্ড ফোর্টির ভাষায়,
" অন্ধকারে এর জন্ম হয়। এই অন্ধকারে থাকে লাভার স্রোত। প্রতিটি চোরা অগ্ন্যুৎপাতের সাথে হয় চোরা ভূমিকম্প, কিন্তু স্পেশাল ইনস্ট্রুমেন্ট ছাড়া এইসব ছোট ভূমিকম্প অধরাই থেকে যায়। বিশ্ব সাইসমিক ম্যাপে এইসব শৈলশিরা বরাবর ক্ষুদ্র ভূমিকম্পের চিহ্ন উল্লেখ থাকে। পুরো শৈলশিরা তার নিচ থেকে আসা তাপে যেন ভাসতে থাকে। রিফ্ট বা বিদারের চূড়া যেন সৃজনের বলিরেখা। এইখানে প্লেট জন্মায় আর চিরজীবনের জন্য সঙ্গ ত্যাগ করে। এই চূড়ায় যে নতুন আগ্নেয় উপাদান যোগ হয় তা নতুন প্লেটের অংশ হয়ে যায়।"

প্লেটের নিচে যে উচ্চতাপ অনুভূত হয় এই তাপ প্রবাহের উৎস কিন্তু ম্যাগমার মধ্যস্থ পরিচলন স্রোত। এই তাপের উৎস পৃথিবীর কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় তাপ। এই তাপ ঠিক কীভাবে সঞ্চালিত হয়, কীভাবে ম্যাগমায় তা পরিচলন প্রবাহের সৃষ্টি করে, এই তাপ-প্রবাহ কীভাবে কোনদিকে প্রবাহিত হয় তার পুঙ্খানুপঙ্খ হিসাব আমরা জানি না। আমরা শুধু এইটুকু নিশ্চিত জানি, কেন্দ্রভাগের তাপ ম্যাগমা স্তরে নানা পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি করে, ম্যাগমার এই চলনই তার উপরস্থ টেকটোনিক প্লেটে সঞ্চরণের সৃষ্টি করে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, বিশালবপুর এক-একটি মহাদেশীয় প্লেটকে ম্যাগমার দ্বারা নড়ানো অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু যদি আমরা স্কেলের কথা মাথায় রাখি তাহলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে। ম্যাগমার প্রকৃত বিস্তারের তুলনায় ভূ-ত্বক খুবই পাতলা। মাত্র সত্তর কিলোমিটার পুরু ভূ-ত্বক কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ম্যাগমার উপর সত্যিকার অর্থে ভাসতে থাকে। দুধের সর যেমন ভাসে, তেমনি। আর লক্ষকোটি বছর ধরে চলা ভৌগোলিক পরিবর্তনের গতি খুবই মন্থর। একে যদি একটা ফাস্ট-ফরোয়ার্ড মুভির মতো চালানো যায়, তবেই বোঝা যায় প্রকৃত ভূ-গাঠনিক ক্রিয়া কেমন করে কাজ করে। যেমন মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরায় নতুন মহাদেশীয় প্লেট তৈরির হার বছরে মাত্র আড়াই সেন্টিমিটার যেটা এমনকি আমাদের নখের বৃদ্ধির হার থেকেও কম।

যা-হোক ভূমিকম্পের ফলে যে শক-ওয়েভের সৃষ্টি হয় তা তরঙ্গাকারে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক ভাগ পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে যায়, অন্যভাগ পৃথিবীর অভ্যন্তর দিয়ে ছড়ায়। উভয়প্রকার তরঙ্গই আবার দুই প্রকার– কম্প্রেশনাল ও শিয়ার। কম্প্রেশনাল তরঙ্গ সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে এগোয়, শিয়ার বা আড়-তরঙ্গ এগোয় ওপর-নিচ দুলতে দুলতে। যেহেতু কম্প্রেশনাল তরঙ্গের দ্রুতি বেশি, তাই একেই আগে অনুভূত হয়। এর নাম 'পি' বা প্রাইমারি তরঙ্গ, অন্যটিকে বলে সেকেন্ডারি বা এস-তরঙ্গ। এস-তরঙ্গ তার সামনে সকল কিছুকে আড়াআড়ি আঘাত করে। ফলে ভূ-পৃষ্ঠের যা কিছু আছে তারা ওপর-নিচ করতে থাকে। ভূমিকম্পের আগমন বার্তা শোনা যায় পি-তরঙ্গ থেকে এবং অনেক প্রাণী এইসব শুনতে পায়। ড. জাফর ইকবাল তার ভূমিকম্প অভিজ্ঞতায় বর্ণনা দিয়েছেন, "(১৯৮৭ সালে) আমি তখন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডিনা এলাকায় থাকি এবং সবাই জানে এই এলাকায় সান এন্ড্রিয়াস ফল্ট লাইনটির কারণে যে কোনোদিন এখানে একটা ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে। আমার ধারণা হলো এটিই বুঝি সেটি। আমার ছোট ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে দোতলা থেকে নেমে বাইরে যাওয়ার জন্য যখন ছুটছি তখন অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম ভয়ংকর ভূমিকম্পটি আমাকে করিডোরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ছুড়ে দিচ্ছে আমি এগুতেই পারছি না। কোনোভাবে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি এবং দেখছি একটু পরপর ভূমিকম্প ছুটে আসছে টেউয়ের মতো। ভূমিকম্প যে মাটির উপর দিয়ে ছুটে আসতে পারে সেটি আমি এর আগে কখনো দেখি না'। (পৃ-১১৭, 'একটুখানি বিজ্ঞান', কাকলি প্রকাশনী, ২০০৭)।

ভূমিকম্প মাপে কীভাবে? ১৯৩৫ সালে ক্যালটেকের ভূমিকম্পবিদ ড. চার্লস রিকটার একটি লগারিদমিক স্কেল প্রস্তাব করেন যাতে প্রতিটি মাত্রার ভূমিকম্প তার পূর্ববর্তী মাত্রার তুলনায় দশগুণ বেশি হয়। এই রিকটার স্কেলে সর্বনিম্ন দুই-মাত্রার ভূমিকম্প মানুষ অনুভব করতে পারে এবং দশমাত্রার ভূমিকম্প সর্ব-বিনাশী হয়ে থাকে। একটি বিশেষ ধরনের সাইজমোমিটারে কাঁটার বিচ্যুতি সর্বাধিক যতোখানি দেখা যায়, তার লগ-মানকে ঐ ভূমিকম্পের রিকটার স্কেল ধরা হয়। এভাবে ভূমিকম্পের একটা সর্বজনমান্য স্কেল তৈরি হয়েছে।

ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় কী করে? নানা বিজ্ঞানী এসব নিয়ে বহু ভেবেছেন। কিন্তু কোনো কূলকিনারা পাননি। ১৯৫০এর দশকে ক্যালটেকে কর্মরত দুই ভূমিকম্পবিদ, চার্লস রিকটার ও বেনো গুটেনবার্গ , ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখতে লাগলেন কত মাত্রার ভূমিকম্প কতবার সংঘটিত হয়েছে। তাঁরা আশা করছিলেন, ভূমিকম্পের বন্টন থেকে হয়ত ভূমিকম্পের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু জানা যাবে, আর সেসব থেকে জানা যাবে কীভাবে ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে। তাঁরা দেখলেন যে ভূমিকম্পের বন্টন একটা 'পাওয়ার ল' বা সূচকীয় বিধি অনুসরণ করে। এই বিধি অনুযায়ী বড় মাত্রার ভূমিকম্প কম সংঘটিত হয়, কিন্তু কম মাত্রার ভূমিকম্প অধিক সংখ্যায় সংঘটিত হয়।

গুটেনবার্গ-রিকটার যে নিয়ম খুঁজে পেলেন সেটা অনুযায়ী যদি কোনো ভূমিকম্প অন্য মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তি মুক্ত করে, তবে ঐ ধরনের শক্তিশালী ভূমিকম্প চারগুণ কম সংখ্যায় সংঘটিত হয়। কাজেই ভূমিকম্পের শক্তি যদি অর্ধেক হয় তাহলে তার সংঘটনের সংখ্যা চারগুণ বাড়ে। সূচকীয় নিয়মের একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে, যেসব ভৌত প্রপঞ্চ সূচকীয় নিয়ম মেনে চলে তাদের কোনো গড় বা টিপিকাল ঘটনা নেই। যেমন স্টক মার্কেট, পাওয়ার গ্রিড, নেটওয়ার্ক ইত্যাদি। তাই চ্যুতি রেখা বা ফল্ট সিস্টেমের ক্ষেত্রেও কোনো টিপিকাল 'ফল্ট লেংথ' বা 'গড় চ্যুতি রেখা' নেই। অর্থাৎ ভূমিকম্পনের ক্ষেত্রে এমন কোনো বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণ নির্দিষ্ট করা মুশকিল যা দেখে বলা যায় যে উক্ত লক্ষণ স্পষ্ট হলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এজন্যই ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। দেখা গেছে, কোনো ফল্ট সিস্টেমের চ্যুতিগুলো ফ্র্যাকটাল চরিত্র দেখায়। অর্থাৎ বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের চ্যুতিগুলো সূচকীয় বিধি অনুসরণ করে; বড় চ্যুতির তুলনায় ছোট চ্যুতি অনেক বেশি সংখ্যায় থাকে। ঠিক একই ঘটনা দেখা যায় বালুর স্তুপে। বালুর স্তুপের ক্ষেত্রে দেখা যায় আপনি যদি বালির একটা স্তুপ গড়ে তোলেন, এক পর্যায়ে স্তুপটি ধসে পড়ে। স্তুপটি একটি সংকট দশা বা ক্রিটিকাল পয়েন্টে পৌঁছলে স্তুপের প্রতিটি বালুকণাই পতনোন্মুখ থাকে। ঠিক তখনই যদি কেবল একটি মাত্র বালুকণা যোগ করা হয়, তাহলে স্তুপটির প্রতিটি কণা পতনের মুখে পড়ে এবং স্তুপটি ধসে পড়ে। ক্রিটিকালিটি বা সংকট দশায় পৌঁছনোর পর একটিমাত্র বালুকণা বড় বা ছোট ধসের (অ্যাভালাঞ্চ) সূত্রপাত করতে পারে। স্যান্ড পাইলের এই ধর্ম কাজে লাগিয়ে ভূমিকম্পের মডেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

ধরা যাক, দুটো সমান্তরাল পাত আছে। নিচের পাতে অনেকগুলো শক্ত ইট বা ব্লক রাখা আছে যারা পরস্পরের সাথে স্প্রিঙের সাহায্যে যুক্ত। এদের ওপরে যে পাতটি আছে সেটি ব্লকগুলোর সাথে রডের সাহায্যে হাল্কাভাবে যুক্ত থাকে। এখন ওপরের পাতটি যখন একদিকে চলতে চায়, তখন এর সাথে সংযুক্ত রডগুলো বেঁকে যায় এবং তাদের সাথে যুক্ত ইট বা ব্লকগুলোকে টেনে নিতে চায়। কিন্তু ইট বা ব্লকগুলোর সাথে নিচের পাতের ঘর্ষণ বেশ জোরালো, তাই তারা সহজে নড়তে চায় না। কিন্তু টান বেশি হলে পরে তা ঘর্ষণকে ছাড়িয়ে যাবে। তখন কোনো একটা ব্লক নড়ে ওঠে। একই সাথে তার সাথে যুক্ত অন্য ব্লকটিও নড়ে ওঠে বা নড়বার উপক্রম হয়। স্প্রিঙের সাহায্যে যুক্ত থাকায় সামনে-পেছনে এবং পাশের ব্লকগুলোও এই নড়াচড়ায় অংশ নেয়। এভাবে ওপরের পাতের টান যথেষ্ট জোরালো হলে তবেই কোনো ব্লক নড়ে ওঠে। তখন এর সাথে যুক্ত আরো কয়েকটি ব্লক নড়ে-চড়ে বসে। এভাবে বেশ বড় নড়াচড়ার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী টান না আসা পর্যন্ত একটা স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। এই সরল মডেলে পাতের চলন দুটি মহাদেশীয় প্লেটের সঞ্চালন এবং ব্লকগুলো সুষম ও সমসত্ত্ব গঠনের শিলাস্তর নির্দেশ করে। বাস্তব দুনিয়ায় অবশ্য এরকম সমসত্ত্ব গঠনের শিলাস্তর পাওয়া মুশকিল। সবধরনের শিলা নিয়েই তৈরি হয় শৈলশিরা। আরো একটা বিষয় মনে রাখতে হবে। শিলা বা পাথর যত কঠিনই হোক প্রচন্ড চাপে (এবং তাপে) তার সংকোচন-প্রসারণ হয়। এই সংকোচন-প্রসারণকে স্প্রিঙ দিয়ে মডেল করা হয় যাতে পাথরের স্থিতিস্থাপকতা গুণটি প্রকাশ করা যায়। ভূমিকম্পের এই সহজ মডেলটির প্রস্তাবক আর. বারিজ ও লিওন নোপফ ('ফিজিকাল রিভিউ লেটার্স', খন্ড ৬৮, পৃ. ১২৪৪, ১৯৯২)। এই মডেলে একটি ব্লকের চলনের অর্থ হলো শৈলশিরার স্লিপ বা আপেক্ষিপ সরণ, এভাবে এই মডেলটি ভূমিকম্পকে খুব সাদামাটাভাবে মডেল করে। আরেকদল বিজ্ঞানী এই সাদামাটা মডেলটিতে একটা ছোট্ট সংযোজন করলেন। তারা বললেন যখন কোনো ব্লক নড়ে, তখন তার সরণ ঘটে। সরণ ঘটলে তার উপর ক্রিয়াশীল বল কমে যায়, কিন্তু তার চারপাশের চারটি ব্লকে এক চতুর্থাংশ বল বেড়ে যায়। এর ফলে দেখা যায় এই মডেলে ক্রিটিকালিটি ব্যাপারটা দেখা দেয়। এই জিনিস অন্য সকল ঘটনায়ও দেখা যায় যারা সূচকীয় নিয়ম মেনে চলে। কাজেই ঐ সরল মডেলটি ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে রিকটার-গুটেনবার্গ পাওয়ার ল'য়ের উদ্ভব ব্যাখ্যা করতে পারে। এই মডেলে কোনো একটা বা কয়েকটি ব্লক নড়ে উঠলে তা ছোট ভূমিকম্পের তুলনীয় ঘটনা বোঝায়। যদি অনেকগুলো ব্লক নড়ে ওঠে তাহলে সেটা হবে সাংঘাতিক ভূমিকম্পের তুল্য। এই মডেলে দেখা যায়, সিস্টেমের কোথাও কোনো ব্লক নড়ে উঠলে সেটা ছোট ভূমিকম্পও ঘটাতে পারে, আবার বড় ভূমিকম্পও ঘটাতে পারে। একটা ব্লক সিস্টেমের সামান্য অংশে আলোড়ন তুলতে পারে অথবা পুরো সিস্টেম জুড়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটাতে পারে। কখন কোনটা ঘটবে সেটা নির্ভর করে পুরো সিস্টেমের আদি অবস্থার উপর, প্রতিটি ব্লকে সঞ্চিত শক্তির উপর ইত্যাদি। বাস্তব দুনিয়ায় লক্ষ-কোটি ব্লকের আদি অবস্থা, তাদের মধ্যে সঞ্চিত পীড়নের পরিমাণ, তাদের গঠন-ঘনত্ব-সান্দ্রতা-স্থিতিস্থাপকতা কিছুই নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। সেই জন্যে ভূমিকম্পনের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে প্রায়শই ছোট ও মাঝারি ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। অনেকেই বলেন, এই অঞ্চলে প্রায় প্রতি একশ বছর পরপর একটা বড়সড় ভূমিকম্প হয়। শেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে মেঘালয় অঞ্চলে । এই ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথই বদলে যায়। ডক্টর জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, "সর্বশেষ যে সিসমিক জোনিং ম্যাপ বা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মানচিত্র তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলকে ভূমিকম্পের জন্য সর্বাধিক ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহিত করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং রংপুর এলাকা। সিলেটের উত্তর মেঘালয় সীমান্তে একটি ফল্ট আছে, যাকে ডাউকি ফল্ট বলে। সেখান থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে। … … কয়েক বছর আগে আমরা যে জোনিং রিভিউ করেছি, তাতে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। আগের মানচিত্রে চট্টগ্রামকে মাঝারি মাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা ধরা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, এটি উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা।" ( সাক্ষাৎকার, 'দৈনিক কালের কন্ঠ', ১লা জুন ২০১০।

ভূতাত্ত্বিকদের মতে বাংলাদেশের আশপাশ দিয়ে বেশ কয়েকটি চ্যুতিরেখা বা ফল্ট-লাইন গেছে। ভূআন্দোলন বা টেকটোনিক মুভমেন্টের কারণে এক শিলাস্তর যদি পার্শ্ববর্তী শিলাস্তর থেকে ওপর-নিচে সরে যায় তবে চ্যুতির সৃষ্টি হয়। চ্যুতি বরাবর অনেক সময় গ্রস্ত-উপত্যকা বা রিফ্ট-ভ্যালির সৃষ্টি হয়। পূর্ব-আফ্রিকার বিখ্যাত গ্রস্ত উপত্যকাটি ৬,০০০ কিমি দীর্ঘ । বিজ্ঞানীরা মনে করেন সোমালিয়া অংশটি একসময় মূল আফ্রিকা ( বা নুবিয়ান প্লেট) থেকে ছিন্ন হয়ে যাবে। ঐ গ্রস্ত উপত্যকার উপস্থিতি এরই পূর্বাভাস। চ্যুতি বরাবর সাধারণত জলাশয় বা নদীখাত দেখা যায়। যেমন ঢাকার অদূরে বংশী নদী একটি চ্যুতিরেখা বরাবর বয়ে চলেছে। এছাড়া আমাদের দেশেই আছে চট্টগ্রাম চ্যুতি সিস্টেম, রাজশাহীর তানোর, সীতাকুন্ড-টেকনাফ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, শাহজিবাজার ফল্ট সিস্টেম ইত্যাদি। এছাড়াও ভারত ও বার্মায় আমাদের সীমান্ত ঘেঁষে আছে আরো বেশ কিছু ফাটল বা চ্যুতিরেখা। ঢাকার মতো একটা ঘনবসতিপূর্ণ শহরে (জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি) ছয় দশমিক ছয় বা সাত মাত্রার ভূমিকম্পেই অন্তত সত্তর হাজার ইমারত ধ্বংস হবে বলে ধারণা করা হয়। এই অভিমত অধ্যাপক মাকসুদ কামালের (ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢা.বি., ৪টা জুন ২০১০, 'দৈনিক কালের কন্ঠ')। গত ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল অবধি চার-মাত্রার ছিয়াশিটি ভূমিকম্প হয়েছে বাংলাদেশে। আসলে বাংলদেশ পড়েছে দুটো সংঘর্ষমান (ইন্ডিয়ান-ইউরেশিয়ান ও মায়ানমার) প্লেটের মাঝখানে। এই দুই প্লেটের মধ্যে যথেষ্ট পীড়ন সঞ্চিত হচ্ছে। এই পীড়ন হঠাৎ রিলিজ হলেই বড়মাত্রার ভূমিকম্প ঘটতে পারে। তার সাথে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হলো অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস বা সুনামি। ২০১০ সালে ঈদুল ফিতরের আগের রাতে (১০ সেপ্টেম্বর) একটি মাঝারি কম্পন ঢাকাবাসী অনুভব করে। এর কেন্দ্র ছিল চাঁদপুরের সন্নিকটে। ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি চ্যুতিরেখা গিয়েছে। এই রেখাতেই ১৭৬২ সালে সীতাকুন্ড ভূমিকম্প হয়। চাঁদপুর এই চ্যুতির কাছেই অবস্থিত।

গত দেড়শ বছরে বাংলাদেশের ভূমিকম্প সারণি
১০ই জানুযারি, ১৮৬৯ — কাছাড় ভূমিকম্প — ৭.৫ (রিখটার স্কেল)
১৪ই জুলাই, ১৮৮৫ — বেঙ্গল ভূমিকম্প — ৭.০
১২ই জুন , ১৮৯৭ — গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্প (শিলং উপত্যকা) — ৮.১
১৮ই জুলাই, ১৯১৮ — শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প — ৭.৬
২রা জুলাই, ১৯৩০ — ধুবরি, আসাম — ৭.১
১৫ই জানুযারি, ১৯৩৪ — বিহার -নেপাল — ৮.৩
১৫ ই আগষ্ট, ১৯৫০ — আসাম — ৮.৬

[সূত্র: মোঃ হোসেন আলি, "আর্থকোয়েক ডেটাবেস এন্ড সিসমিক জোনিং অব বাংলাদেশ", INCEDE রিপোর্ট, ব্যাংকক, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮; মোহাম্মদ জোবায়ের, "জিআইএস বেজ্ড সিসমিক ড্যামেজ অ্যাসেসমেন্ট: আ কেস স্টাডি অন রাজশাহী সিটি", মাস্টার্স থিসিস, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বুয়েট, জানুয়ারি ২০০৬ ]

ভূমিকম্প মানব-সভ্যতার অত্যন্ত ভয়ানক এক প্রাকৃতিক দুযোর্গ। যে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে মানুষের পুরো সভ্যতা দন্ডায়মান, সেই জমিন যখন ওলট-পালট হয়ে যায় এর থেকে ভয়ের আর কিছুই থাককে পারে না।

ভূমিকম্পের এমনকি ভবিষ্যদ্বাণীও নেই। ব্যাঙ, পাখি আর ইঁদুর দেখে আমাদের সর্তক হতে হবে ভূমিকম্প সম্পর্কে! কি নিষ্ঠুর এই আয়রনি! আর আমাদের সোনার বাংলার কী অবস্থা হবে ?

[কৃতজ্ঞতা: ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি, প্রফেসর, সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং, বুয়েট]

তথ্যপঞ্জি:
১/ মার্ক বুকানন , 'ইউবিকুইটি: দ্য ফিজিক্স অব কমপ্লেক্স সিস্টেম্স', ২০০০। ২/ কায়ে শেডলক ও লুইস প্যাকাইনার,"আর্থকোয়েক্স", [[pubs.usgs.gov/gip/earthq1/index.html]। ৩/ রিচার্ড ডকিন্স, 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ', ২০০৯। ৪/ রিচার্ড ফোর্টি, 'দ্য আর্থ', ২০০৪।