ড. ইউনূস, মামলা ও কয়েকটি প্রশ্ন

এম এম আকাশ
Published : 6 March 2011, 06:41 PM
Updated : 6 March 2011, 06:41 PM

ড. ইউনূস ও রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে যে মামলা চলছে তার ইস্যুটি বেশ জটিল এবং এর একাধিক মাত্রা রয়েছে।

প্রথম মাত্রাটি অবশ্য legal বা আইনগত মাত্রা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ডারে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ordinance-এ এদের অধিকার ও দায়িত্বের সংজ্ঞা দেয়া আছে। এগুলি বিভিন্ন সময় সংশোধন হয়েছে। বর্তমানে এগুলির যে চূড়ান্ত রূপ আছে তা এর অতীত রপগুলিকে বিবেচনা করে কোর্টকে বলতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক ড. ইউনূসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিয়োগকে অবৈধ বলতে পারে কি না।

আমি দুটি অর্ডার পড়েছি। তাতে আমার মনে হয়েছে দু-দিকেই যুক্তি রয়েছে, নির্ভর করবে আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারার সংজ্ঞা ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যা কী দাঁড়ায় তার উপর। এছাড়া আমাদের  সংবিধানেও এ ধরনের সংস্থাগুলিকে কী ও কতটুকু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেই ইস্যুটিও এই মামলায় প্রাসঙ্গিক। আমি রায় না হওয়া পর্যন্ত এই সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে কিছু বলতে চাই না। বলার যোগ্যও আমি নই।

তবে সাধারণ নাগরিক ও অর্থনিতিবিদ হিসাবে আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই:

প্রথমত, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটাকে কেন্দ্র করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা ড. ইউনূসের বিদেশী বন্ধুরা বন্ধু হিসাবে মতামত দিতে পারেন কিন্তু এ নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে Black mail করা উচিৎ হবে না।  প্রথম আলোর সংবাদে বলা হয়েছে যে এই কারণে হিলারী ক্লিন্টন তার সফর বাতিল করবেন বা ওবামা শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটি করবেন না–তা খুবই অন্যায় বলে মনে করি। দেশের ভেতরেও ড. ইউনূস সমর্থকদের বা বিরোধীদের এটা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা–এই পক্ষে হোক ঐ পক্ষে হোক–করা ঠিক হবে না। ড. ইউনূসের রাজনৈতিক মত ও ভ্রান্তির বিষয়টি একটি পৃথক  বিষয়–পৃথকভাবে এর সমাধান হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যেকোন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার উচিৎ সবসময় তার দ্বিতীয় জন তৈরি করে রাখা। ড. ইউনূসের জন্য এটা আরো বেশি উচিৎ ছিল। তাকে তো বছরের বেশিরভাগ সময়ই বাইরে কাটাতে  হোত। সে জন্যও সেটা আরো বেশি জরুরী ছিল। যদি এটা এতবছরেও না হয়ে থাকে, তাহলে এই ব্যর্থতার দায় তাকেই নিতে হবে।

এসব ঘটনার আগেই আমি বলেছি ড. ইউনূসের অন্যতম দুর্বলতা হচ্ছে তার দ্বিতীয় পক্ষ গড়ে ওঠার সুযোগ পায় নি।

তৃতীয়ত, গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক হচ্ছে সরকার ও লক্ষ লক্ষ গরীব মহিলা। তাদের প্রতিনিধিরা হচ্ছে সরকার মনোনীত ৩ জন ও গরীব মহিলাদের দ্বারা নির্বাচিত ৯ জন বোর্ড সদস্য। এখন বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য যদি ড. ইউনূসকেই তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে বছরের পর বছর দেখতে চান তখন সেই ইচ্ছা অসংগত হলেও তাদের সঙ্গেই আলাপ করে তাদেরকে Convince করে তাদের ইচ্ছা আগে বদলাতে হবে। তাদের  সবাইকে ক্ষুন্ন করে একটা প্রশাসনিক আদেশ বা আদালতের একটি ডিক্রী বলে এ ধরনের অদল-বদল কার্যকরী করলে মূল প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। যেটা কাম্য নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো এই ব্যাপারগুলোই ঘটেছে।

এম এম আকাশ : গবেষক ও  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক।