জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচক ও বাংলাদেশ

জাহিদুল ইসলাম
Published : 25 Dec 2014, 11:18 AM
Updated : 25 Dec 2014, 11:18 AM

২০১৩ সালের এপ্রিলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে এশীয় পানি উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি (Asian Water Development Outlook) প্রকাশিত হয়েছে [১, ২]। এই প্রকাশনায় বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পানিসম্পদ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু চিত্র উঠে এসেছে। পানিসম্পদ উন্নয়নের জাতীয় পর্যায়ের এই রূপ আসলে জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচক বা National Water Secuirity Index (NWSI) এর মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে।

একটি দেশের সার্বিক জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচক আসলে পাঁচটি আলাদা আলাদা সূচকের সমন্বয়ে নির্ণীত হয়। এগুলো হচ্ছে, গৃহস্থালির পানির নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা, শহরাঞ্চলের পানির নিরাপত্তা, পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা এবং পানি সম্পর্কিত দুর্যোগের হাত থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সক্ষমতা (রেজিলিয়েন্সি)। জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের উন্নতি ঘটানোর জন্য প্রয়োজন সাব সূচকগুলোর মান উন্নয়ন। এই আলাদা আলাদা সূচকগুলির মান ১ থেকে ৫ পর্যন্ত এবং এদের গড়ই আসলে ঐ দেশের জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচক নির্দেশ করবে।

আমি এই লেখায় চেষ্টা করেছি এই রিপোর্টের আলোকে বাংলাদেশের জাতীয় পানি নিরাপত্তার একটি রূপ তুলে ধরতে। লেখাটির শুরুতে জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের মৌলিক তথ্য ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নির্ণয়ের সার্বিক ব্যবচ্ছেদ থাকবে এবং পরিশেষে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাপেক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান এবং কিভাবে এই সূচকগুলোর মান বৃদ্ধি করা যায় তা বিশ্লেষণের চেষ্টা থাকবে।

শুরুতে দেখা যাক কীভাবে আলাদা করে উপরে উল্লিখিত মাপকাঠিগুলোর মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। গৃহস্থালির পানি তখনই নিশ্চিত হবে যখন সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করা হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাও এই মাপকাঠির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

গৃহস্থালির পানির নিরাপত্তা সূচক নির্ভর করে তিনটি সাব সূচকের উপর– গৃহে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের সুবিধা, স্বাস্থ্যকর ও উন্নত পয়োনিষ্কাশনের সুবিধা এবং ডিসএবিলিটি এডজাস্টেড লাইফ ইনডেক্স বা DALY এর উপর। যদি একটি দেশে শতকরা ৯০ ভাগ বা ততোর্ধ্ব মানুষের গৃহে পাইপের মাধ্যমে পানির সুবিধা থাকে সে ক্ষেত্রে প্রথম সাব সূচকের মান হবে ৫। অন্যদিকে যদি শতকরা ৬০ ভাগের কম মানুষের গৃহে এই সুবিধা না থাকে তবে এই প্রথম সাব সূচকের মান হবে মাত্র ১।

একইভাবে, যদি একটি দেশে শতকরা ৯০ ভাগ বা ততোর্ধ্ব মানুষের গৃহে স্বাস্থ্যকর ও উন্নত পয়োনিষ্কাশনের সুবিধা থাকে সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সাব সূচকের মান হবে ৫। অন্যদিকে যদি শতকরা ৬০ ভাগের কম মানুষের গৃহে এই সুবিধা না থাকে, তবে এই দ্বিতীয় সাব সূচকের মান হবে মাত্র ১।

তৃতীয় সাব সূচকটি আসলে পানিবাহিত রোগ, যেমন, ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু বা অকর্মক্ষমতার কারণে প্রতি ১০০,০০০ মানুষের গড় আয়ু থেকে কত বছর নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তার একটি হিসাবের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। এর মান যত বেশি হবে সাব-সূচকের মান তত কম হবে। পরোক্ষভাবে বলা যায়, পানিবাহিত রোগের কারণে যত বেশি মানুষ মারা যাবে বা কর্মক্ষমতা হারিয়ে বাকি জীবন কাটাবে, এই সাব সূচকের মান তত কম হবে।

এর পরবর্তী মাপকাঠি হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির তিনটি স্তম্ভ হচ্ছে: খাদ্য উৎপাদন, শিল্পপণ্য উৎপাদন এবং শক্তি উৎপাদন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই তিনটির সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পানি। পানি ছাড়া খাদ্য ও শিল্পপণ্য উৎপাদন অসম্ভব। সেই সঙ্গে শক্তি উৎপাদন প্ল্যান্টের শীতলীকরণের জন্য পানি আবশ্যক একটি উপাদান।

টেকসই উন্নয়নের জন্য পানির গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি কাজে পানির ব্যবহারের কতটা সমন্বয় ঘটছে সেটি জাতীয় পানি নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচক তাই তিনটি সাব সূচকের উপর নির্ভর করে: খাদ্য উৎপাদনে পানির নিরাপত্তা, শিল্পপণ্য উৎপাদনে পানির নিরাপত্তা এবং শক্তি উৎপাদনে পানির নিরাপত্তা। এই তিনটি আলাদা সাব সূচকের মান ১ ও ১০ যথাক্রমে স্ব স্ব ক্ষেত্রে পানির অনিশ্চিত ও নিশ্চিত যোগান নির্দেশ করে।

দ্রুত ও ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে শহরাঞ্চলে মানুষের জীবন ও জীবিকার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ জাতীয় পানি নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। স্বভাবতই পানির নিরাপত্তা সূচকের এর পরের গুরুতত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে, শহরাঞ্চলের পানির নিরাপত্তা।

শহরাঞ্চলের জন্য পানির নিরাপত্তা সূচক আসলে তিনটি সাব সূচকের উপর ভিত্তি করে হিসাব করা হয়। তিনটি সাব সূচক হচ্ছে: শহরের শতকরা কত ভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহ রয়েছে, শতকরা কত ভাগ মানুষের জন্য বর্জ্য জলের (Waste Water) পরিশোধনের সুব্যবস্থা আছে এবং শহরের অধিবাসীদের মাথাপিছু বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত। প্রথম দুটির ক্ষেত্রে যদি একটি শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের শতকরা ৯০ ভাগ বা ততোর্ধদের কাছে নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকে বা বর্জ্য জলের (Waste Water) পরিশোধনের সুব্যবস্থা থাকে, তবে ঐ সাব সূচকের মান হবে ৫। অন্যদিকে যদি শতকরা ৬০ ভাগের কম অধিবাসীদের কাছে এই সুবিধা না থাকে তবে তাদের মান হবে মাত্র ১। তৃতীয়টির ক্ষেত্রে বন্যার ফলে সৃষ্ট মাথাপিছু খরচ যত বেশি, সূচকের মান তত কম।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য কিছুটা বিপরীতে অবস্থান করে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশের, বিশেষত পানিসম্পদের বিপর্যয় ঘটায়। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তা কতটা বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বজায় রাখছে বা নদী ও জলাশয়ের পানির গুণগত মান কতটা সংরক্ষিত হচ্ছে তা পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা মাপকাঠির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। মূলত দুটি বিষয় দ্বারা এই সূচক নিয়ন্ত্রিত হয়: অববাহিকায় মানুষের কার্যক্রম ও দূষণের ফলে নদী কতটা হুমকির সম্মুখীন এবং নদী অববাহিকায় মানুষের নির্মিত বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামোর ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রবাহ কতটা বিঘ্নিত হচ্ছে। একটি নদী অববাহিকার জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম বা GIS বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই সূচক নির্ণয় করা হয়।

সর্বশেষ মাপকাঠি হচ্ছে, পানি-সম্পর্কিত দুর্যোগের হাত থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সক্ষমতা (রেজিলিয়েন্সি)। শিল্পায়নের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন সামনের দিনগুলোতে পানিসম্পর্কিত দুর্যোগ, যেমন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সে সঙ্গে এই ঝুঁকির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

একটি দেশ সেই পথে কতদূর অগ্রসর হল, তা এই মাপকাঠি নিয়ে নির্ণয় করা হয়। মূলত পানি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন, বন্যা, ঘূর্নিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ও উপকূলীয় বন্যা ইত্যাদির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার জন্য একটি দেশের অধিবাসীরা কতটা প্রস্তুত তার হিসাব করা হয় বেশ কয়েকটি সাব সূচকের মাধ্যমে। এই সূচকগুলি হচ্ছে, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বৃদ্ধির হার, দারিদ্র্যের হার, দেশের মানুষের টেলিযোগাযোগের হার ও শিক্ষিতের হার।

— দুই —

জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের সর্বোচ্চ মান হচ্ছে ৫, যা কিনা মডেল বা 'আদর্শ পানি নিরাপত্তা সূচক' নামে অভিহিত। কোনো দেশের পানি নিরাপত্তা সূচক ৫ মানে হচ্ছে, সে দেশে রয়েছে টেকসই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এবং সেবা; রয়েছে পরিবেশ ও পানিসম্পদের সুরক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই বিনিয়োগ; রয়েছে জনসাধারণের পানির ব্যবহারের টেকসই মাত্রা; রয়েছে উন্নত কারিগরি ব্যবস্থা, উন্নয়ন ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পানিসম্পদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রণীত আদর্শ মডেল।

এর বিপরীতে জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের সর্বনিম্ন মান হচ্ছে ১, যা কিনা ঝুঁকিপূর্ণ বা 'অনিশ্চিত পানি নিরাপত্তা সূচক' নামে অভিহিত। একটি দেশের পানি নিরাপত্তা সূচক তখনই অনিশ্চিত বা ঝুঁকিপূর্ণ, যখন সে দেশে পানি ও পরিবেশ নিয়ে নীতি ও আইন থাকলেও তার বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে এটি পরিবেশ ও পানিসম্পদের সুরক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিনিয়োগের দীনতাও নির্দেশ করে। জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের মান ২ মানে হচ্ছে পানি ও পরিবেশ নিয়ে নীতি ও আইন কিছুটা হলেও সক্ষমতা অর্জন করছে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কিছুটা উন্নয়নের পথে এবং পরিবেশ ও পানিসম্পদের সুরক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ কিছুটা হলেও বেড়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়।

জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের মান ৩ নির্দেশ করে দেশে পরিবেশ ও পানিসম্পদ নিয়ে নীতি ও আইনের বাস্তবায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, পানিসম্পদ উন্নয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, পরিবেশ ও পানিসম্পদের সুরক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সর্বোপরি স্থানীয় ভাবে কারিগরিগত ও আর্থিক উন্নয়ন ঘটেছে। জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের মান ৪কে বলা যেতে পারে কার্যকরী বা 'ফলপ্রসূ পানি নিরাপত্তা সূচক'। একটি দেশের পানি নিরাপত্তা সূচককে কার্যকরী তখনই বলা যাবে, যখন জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়ন (নগর ও গ্রামে) পরিকল্পনায় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জাতীয় পরিকল্পনায় পানিসম্পদের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে, পরিবেশ ও পানিসম্পদের সুরক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সর্বোপরি পরিবেশ ও পানিসম্পদ নিয়ে নীতি ও আইনের উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ ঘটেছে।

এবার দেখা যাক উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সূচক কত।

প্রথমেই আসা যাক গৃহস্থালির ক্ষেত্রে পানির নিরাপত্তা সূচকের প্রশ্নে। ইতোমধ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, গৃহস্থালির পানির নিরাপত্তা সূচক নির্ভর করে তিনটি সাব-সূচকের উপর: পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের সুবিধা, স্বাস্থ্যকর ও উন্নত পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা, এবং ডিসএবিলিটি এডজাস্টেড লাইফ ইনডেক্স বা DALY এর উপর। বাংলাদেশে মাত্র শতকরা ৬ ভাগ মানুষের পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের সুবিধা রয়েছে, ফলে প্রথম সাব-সূচকের মান ১ । যদিও শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যকর ও উন্নত পয়োনিষ্কাশনের সুবিধা রয়েছে কিন্তু তা ৬০ ভাগের নিচে বলে দ্বিতীয় সাব সূচকের মানও মাত্র ১। বিপরীতক্রমে, বাংলাদেশের ডিসএবিলিটি এডজাস্টেড লাইফ ইনডেক্স বা DALY এর মান ১,২১৭ যা কিনা বেশ উঁচু, ফলে তৃতীয় সাব সূচকের মানও মাত্র ১। অর্থাৎ বাংলাদেশে গৃহস্থালির ক্ষেত্রে পানির নিরাপত্তা সূচক ১ থেকে ৫ এর স্কেলে আসলে মাত্র ১।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচক যে তিনটি সাব সূচকের উপর নির্ভর করে তার মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদনে পানির নিরাপত্তা সূচকের মান ৪.৮৯ (১০ এর মধ্যে), শিল্পপণ্য উৎপাদনে পানির নিরাপত্তা সূচকের মান ৫.৫৬ এবং শক্তি উৎপাদনে পানির নিরাপত্তা সূচকের মান ৩.৭৮। অর্থাৎ মোট ৩০এর মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় স্কোর হচ্ছে ১৪.২২। ১ থেকে ৫ এর স্কেলে তাই বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচকের মান ৩।

আসা যাক শহরাঞ্চলের জন্য পানির নিরাপত্তা সূচক নির্ণয়ে। এই সূচক তিনটি সাব সূচকের উপর নির্ভরশীল: মানুষের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহ, বর্জ্য জলের পরিশোধনের সুব্যবস্থা এবং মাথাপিছু বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত। বাংলাদেশের শহরগুলিতে শতকরা মাত্র ২০ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধাপ্রাপ্ত; ফলে ১ থেকে ৫ এর স্কেলে এই সাব সূচকের মান মাত্র ১। সে সঙ্গে শতকরা ১৭ ভাগ মানুষের জন্য বর্জ্য জলের পরিশোধনের সুব্যবস্থা আছে যা কিনা দ্বিতীয় সাব সূচকের মান নির্ণয় করে মাত্র ১। অন্যদিকে বাংলাদেশে শহরের অধিবাসীদের মাথাপিছু বন্যার ক্ষয়ক্ষতির অংক প্রায় ১২৭ মার্কিন ডলার। ফলে তৃতীয় সাব সূচকের মান ৪। এই তিন সাব সূচকের সমন্বিত মান ৬ যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের জন্য পানির নিরাপত্তা সূচক দাঁড়ায় মাত্র ১ এ।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মানুষের কার্যক্রম ও দূষণের ফলে নদী কতটা হুমকির সম্মুখীন এবং নদী অববাহিকায় মানুষের নির্মিত বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামোর ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রবাহ কতটা বিঘ্নিত হচ্ছে তার ভিত্তিতে পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচক এর মান মাত্র ১। সে সঙ্গে জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বৃদ্ধির হার, দারিদ্র্যের হার, দেশের মানুষের টেলিযোগাযোগের হার ও শিক্ষিতের হারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পানি-সম্পর্কিত দুর্যোগের সঙ্গে অভিযোজনের ক্ষমতা সূচকও মাত্র ১।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচক নির্ণয়ের যে পাঁচটি ভিত্তি রয়েছে তার মধ্যে একমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচক (মান ৩) বাদে বাকি সবগুলোই ১ থেকে ৫এর স্কেলে ন্যূনতম মান অর্থাৎ ১ নির্দেশ করে। ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সূচকের মান দাঁড়ায়= (১+৩+১+১+১)/৫ =১.৪, বা ১ থেকে ৫এর স্কেলে এর মান ১ ও ২এর মধ্যে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পানির নিরাপত্তা সূচক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে কিছুটা উন্নীত হবার চেষ্টা করছে।

এখন দেখা যাক এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশে অঞ্চলে সার্বিক পানি উন্নয়ন সূচকের অবস্থা। এডিবির এই রিপোর্টের আলোকে এই অঞ্চলের মোট ৪৯ দেশের মধ্যে কোনোটিই সর্বোচ্চ পানি নিরাপত্তা সূচক (৫) অর্জন করতে পারেনি; মাত্র দু'টি দেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান (৪) অর্জন করতে পেরেছে (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড); মাঝারি অবস্থানে (৩) রয়েছে ১০ টি দেশ (আর্মেনিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, হংকং, জাপান, কাজাকাস্তান, মালয়েশিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইপে ও তাজিকিস্তান); নিরাপত্তা সূচক ২ অর্জন করেছে সর্বোচ্চ ২৯ টি দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ মোট ১০ টি দেশ ন্যূনতম ১ নিরাপত্তা সূচক অর্জন করেছে।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার গড় জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচক মাত্র ১.৬ যা কিনা অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ন্যূনতম। অন্যদিকে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলির পানি নিরাপত্তা সূচক অপেক্ষাকৃত বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের গভর্নেন্স পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় যে, এই অঞ্চলে যে দেশগুলিতে গভর্নেন্স সূচক ভালো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই দেশগুলির পানি নিরাপত্তা সূচকের অবস্থান ভালো।

— তিন —

আসা যাক কী কী পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ তার জাতীয় পানি নিরাপত্তা সূচকের উন্নয়ন ঘটাতে পারবে তার ব্যবচ্ছেদ পর্বে। প্রথমেই আসা যাক গৃহস্থালির পানি নিরাপত্তা সূচকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব দেশে গৃহস্থালির পানি নিরাপত্তা সূচকের মান ভালো, সে সব দেশের মাথাপিছু জিডিপির মান ভালো। গৃহস্থালির পানি নিরাপত্তা সূচকের মানের উন্নতি ঘটানোর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের জন্য অর্থায়নের সমন্বয় ঘটানো। গবেষণা মতে, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের জন্য যদি ১ টাকা ব্যয় করা হয় তাহলে চিকিৎসা খাতের ব্যয় হ্রাস পাবে ৫ থেকে ৪৬ টাকা। সে সঙ্গে অর্থনৈতিক উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

এ ক্ষেত্রে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন সেবা খাতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা ও স্বায়ত্তশাসন দেওয়া উচিত। তার আগে অবশ্যই এসব সেবা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপরায়ণতা সম্পর্কে সরকারকে নিশ্চিত হতে হবে। সে সঙ্গে পয়োনিষ্কাশন খাতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করা উচিত।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচকের মান ৩এর একটু উপরে। অন্যান্য সূচকের চেয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচকের মান একটু উন্নত; কারণ, স্বাভাবিকভাবেই সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তিমালিকাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের (পানিসম্পদ) যোগানের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়।

এর পরেও এই সূচকের উন্নয়নের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি। গবেষণায় এসেছে, সেচ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ১ টাকা বিনিয়োগ করলে গ্রামাঞ্চলের জিডিপি প্রায় ২ টাকা বৃদ্ধি পায়, তাই সেচ ব্যবস্থার আধুনিককরণ আশু প্রয়োজন। পানির চাহিদা ও ভোগের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সে সঙ্গে পানির ব্যবহারকারীদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হ্রাসের জন্য নীতি নির্ধারণ প্রয়োজন। উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে সম্ভাব্য জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নদীপ্রবাহের পরিবর্তন, ভাটি অঞ্চল ও জলাভূমিতে প্রভাব এসব বিষয় নিয়ে আসা উচিত।

গৃহস্থালির পানি নিরাপত্তা সূচকের মতোই একটি দেশের মাথাপিছু জিডিপির মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের শহরাঞ্চলের জন্য পানির নিরাপত্তা সূচকের মান বাড়ে। লক্ষ্যণীয় যে, দক্ষিণ এশিয়ায় পানি নিরাপত্তা সূচকের এই উপ-সূচকটির মান খুবই নিম্ন (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর মান ১ যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় মান)। শহরাঞ্চলের জন্য পানি নিরাপত্তা সূচক বৃদ্ধির জন্য প্রথমেই যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে কর্পোরেট ঘরানার গভর্নেন্স প্রণয়ন করা।

এই সূচকের উন্নয়নে এর পর যে পদক্ষেপটি নেওয়া উচিত তা হচ্ছে, নন-রেভেনিউ ওয়াটার হ্রাসকরণে যথোপযোগ্য বিনিয়োগ করা। নন-রেভিনিউ ওয়াটার হচ্ছে সরবরাহকৃত পানির সেই অংশ যা কিনা ভোক্তার কাছে পৌঁছাবার আগেই হারিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সরবরাহকৃত পানির যে অংশ অপচয় হয়, অথবা মিটার ম্যানুপুলেশন করে (মিটার রিডিংএর অন্যায়ভাবে পরিবর্তন) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দূষিত পানির পরিশোধনে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং যত্রতত্র পরিবেশে দূষিত পানির নিঃসরণ বন্ধ করলে তা এই উপ-সূচকের মান উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে।

এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বন্যা ব্যবস্থাপনা করা, সমন্বিত ভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনা আনয়ন এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনার উন্নয়ন শহরাঞ্চলের জন্য পানির নিরাপত্তা সূচকের মান উন্নীতকরণে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচকের মান মাত্র ১ (৫এর স্কেলে) যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার গড় মানের সমান। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার এই সূচকের মান কেন কম সেটা অনুধাবন করা যায়। পৃথিবীর শতকরা ৬০ ভাগ জনসংখ্যা বাস করে এশিয়ার দেশগুলোতে, ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চলে জনপ্রতি স্বাদু পানির যোগান সর্বাপেক্ষা কম। এশিয়ার শতকরা ৮০ ভাগ নদীর সার্বিক অবস্থা নাজুক যা কিনা অর্থনীতি ও সার্বিক জীবনযাত্রার উপর বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দেয়।

পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পানির নিরাপত্তা সূচকের এই নিম্নমান আসলে এই অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। কিন্তু এই অবস্থা থেকে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন পানিসম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন। আশার কথা হল, বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রতি প্রণীত পানি আইনের প্রথমেই বলা হয়েছে যে, পানিসম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, আহরণ, বিতরণ, ব্যবহার, সুরক্ষা ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এই আইন হয়েছে।

কিন্তু কীভাবে আমরা সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আনয়ন করব? সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে একটি নদী অবাহিকার সার্বিক পানিসম্পদের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। ধরা যাক, একটি নদীর পানি সেচ ও শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু সেই পানি এমনভাবে নদী থেকে উত্তোলন করতে হবে যাতে তা নদীতে বসবাসকারী জীবের (যেমন, মাছ, অন্যান্য জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ) প্রতি হুমকিস্বরূপ না হয়।

একইভাবে শিল্পকারখানা থেকে বর্জ্য-মিশ্র পানি সঠিকভাবে পরিশোধন না করে তা নদীতে ফেলা যাবে না। সে সঙ্গে পানির দূষণ রোধে ও নদীর পুণঃসংরক্ষণকল্পে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। গবেষণামতে, নদীর পুনঃসংরক্ষণকল্পে ১ টাকা বিনিয়োগ করলে এর বিনিময়ে অর্জিত মুনাফা হবে ৪ টাকা।

পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ দুর্যোগ হচ্ছে পানি-সম্পর্কিত। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হচ্ছে পৃথিবীতে পানি বিষয়ক দুর্যোগের ক্ষেত্রে দুটি সবচেয়ে ঝুঁকিবহুল অঞ্চল এবং ভাবনার বিষয় হচ্ছে এই দুর্যোগের হাত থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে (রেজিলিয়েন্সি) এদের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের জন্য পানি-সম্পর্কিত দুর্যোগের সঙ্গে অভিযোজনের ক্ষমতা সূচকের মান মাত্র ১ যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার গড় মানের চেয়ে (১.৮) কিছুটা কম।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সব দেশের মাথাপিছু জিডিপির মান যত ভালো সেই সব দেশে এই সূচকের মান তত উন্নত। বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়াকে এই অবস্থা থেকে ফিরে আসার জন্য দুটি প্রধান পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, বন্যা, উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ও জলোছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আধুনিক ও কার্যকরী পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

আশার বিষয় হচ্ছে, এই পদক্ষেপে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। নিচের ভিডিও টিতে [৩] মোবাইলভিত্তিক বন্যা পূর্বাভাস নিয়ে দারুণ একটা ভিডিও প্রেজেন্টেশন রয়েছে, আগ্রহী পাঠক সময় করে দেখতে পারেন। দ্বিতীয়ত, দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে হবে। এটা করা যেতে পারে দুর্যোগের আগেই কিছু ব্যবস্থা নিয়ে। সেটা হতে পারে দুর্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয় আবাসন বানিয়ে যাতে মানুষ ও গবাদিপশু সেখানে নিরাপদে অবস্থান নিতে পারে। অথবা বেশ কিছু ভিন্নধর্মী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নিয়ে।

উপরে উল্লিখিত ভিডিওতে [৩] দেখানো হয়েছে কীভাবে বন্যার পূর্বাভাস জেনে আগে থেকেই পুকুরের চারদিকে জাল দিয়ে আটকে দিয়ে পুকুরের মাছকে বন্যার পানির হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল, বাংলাদেশের পানি নিরাপত্তা সূচকের যে পাঁচটি আলাদা আলাদা সাব সূচক রয়েছে সেগুলি কীভাবে নির্ণীত হয় এবং এই সূচকের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাপেক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। সে সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে এই সূচকগুলোর মান বৃদ্ধি করা যায়। এই মান বৃদ্ধির দৌড়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমানে গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা হতাশাব্যঞ্জক।

আশা থাকবে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার এই পানি নিরাপত্তা সূচকের মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও সচেষ্ট হবে। কারণ, টেকসই উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে পানিসম্পদের উন্নয়ন এবং সেটা বুঝতে যত দেরি হবে দেশের উন্নয়ন ততই বিঘ্নিত হবে।

ড. জাহিদুল ইসলাম: পানি বিশেষজ্ঞ ও লেখক।

তথ্যসূত্র:

[১]

[২]

[৩]