‘সিআইএ’এর নির্যাতনচিত্র ও মানবাধিকারজীবীদের নিরবতা

শওগাত আলী সাগর
Published : 18 Dec 2014, 06:29 AM
Updated : 18 Dec 2014, 06:29 AM

জেমস মিশেল এবং ব্রুস জেসন দুজনেই মার্কিন মনস্তত্ববিদ। সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা 'সিআইএ' বন্দিদের নির্যাতনের কলাকৌশল শেখাতে এ দুজনকে নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু তারা শুধু শেখানোর কাজটি করেননি, নিজেরা নির্যাতনে অংশও নিয়েছেন। 'সিআইএ'এর সঙ্গে তাদের কাজটা ছিল চুক্তিভিত্তিক। ১৮১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে তারা কাজটি নিলেও ২০০৯ সালে চুক্তিটি শেষ হয়ে যায়। 'সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি'র রিপোর্ট বলছে, এ জন্য দুই মনস্তত্ববিদকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্থাটির গোপন নথির ভিত্তিতে মার্কিন একটি মিডিয়া দাবি করেছে, চুক্তির ১৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত হিসেবে এই ৮১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে।

দু্ই মনস্তত্ববিদকে কত মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে আলোচনায় আসেনি। সিনেট কমিটির রিপোর্টে যারা চোখ বুলিয়েছেন, তাদের কাছে এই অর্থ নিতান্তই সামান্য বলেই মনে হবে। কেননা, সন্ত্রাস দমনের নামে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার আর নির্যাতনের কাজে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি নাগরিকদের কত অর্থ ব্যয় করছে, তার সঠিক হিসাব সিনেট কমিটিও নিরূপণ করতে পারেনি। আমেরিকার বাইরে বিভিন্ন দেশে গোপন কারাগার স্থাপনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের একটি সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া গেলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই 'সিআইএ'এর নথিপত্রে অর্থের অংক মুছে ফেলা হয়েছে। সিনেট কমিটির রিপোর্টে প্রতিটি খাতেই ব্যয় 'মিলিয়ন ডলার' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

'সিআইএ'এর নির্যাতনের রিপোর্টটি তৈরি করতে সিনেট কমিটিও প্রায় ৫ বছর কাজ করেছে। এ সময়ে তাদের ব্যয় হয়েছে ৪০ মিলিয়ন ডলার। এত অর্থ খরচ করে মার্কিন সরকার তার নিজের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার অন্ধকার দিকটা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে।

এই বিশাল অংকের অর্থ সিআইএ কোথায় ব্যয় করেছে? সে তথ্যও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে বিদেশি রাষ্ট্রের সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের ঘুষ দিতে। 'সিআইএ' তার গোপন নথিতে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের ঘুষ দেওয়ার হিসাবপত্র, এমনকি ঘুষ-সংক্রান্ত সংলাপও অন্তর্ভূক্ত করে রেখেছে। বিশ্বের যে দেশগুলোতে তাদের গোপন নির্যাতন কেন্দ্র বা কারাগার আছে, সেগুলোর রাজনীতিক ও সরকারের লোকজন মাঝেমধ্যেই বিগড়ে যেত 'সিআইএ'এর নির্যাতন কেন্দ্রের ব্যাপারে। সে সময় তারা 'উদার হস্তে' অর্থ বিলিয়ে দিয়েছে ওই রাজনীতিক ও সরকারের লোকদের কাছে।

'সিআইএ'এর নথি উদ্ধৃত করে সিনেট কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোনো একটি দেশের সরকারপ্রধানকে 'সিআইএ' প্রতিনিধি বলেছেন:

''তোমাকে যে অংকের অর্থ দেব, তা দিয়ে পুরো দেশটিই তুমি কিনে ফেলতে পারবে।''

সিনেট কমিটি 'সিআইএ'এর নির্যাতনের কথা বললেও দেশগুলোর নাম প্রকাশ করেনি। তবে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, থাইল্যান্ড– এ ধরনের কিছু নাম মার্কিন মিডিয়ায় এসেছে। মজার ব্যাপার, 'সিআইএ'এর নির্যাতন নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলেও কোন কোন দেশের রাজনীতিক, সরকারপ্রধানদের ঘুষ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর নাম প্রকাশের কোনো সরব দাবি কোনো মহল থেকেই উঠেনি।

এখন পর্যন্ত বন্দিদের মানবাধিকার এবং অমানবিক নির্যাতনের আইনগত দিক নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, সমালোচনা হচ্ছে। নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের প্রক্রিয়া নিয়েও পুরনো সমালোচনা নতুন করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে পশ্চিমা মিডিয়ায়। নির্যাতনের মাধ্যমে সত্যি সত্যি কি সত্য তথ্য আদায় করা যায়? এ প্রশ্নে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের সিংহভাগেরই মনোভাব নেতিবাচক। মার্কিন সরকার কিংবা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এ নিয়ে বিস্তর সমীক্ষা করিয়েছে। তারপরও 'সিআইএ' নির্যাতনের পথেই গেল কেন?

অন্য কিছু বাদ দিলেও, মার্কিন সেনাবাহিনীর যে ট্রেনিং ম্যানুয়েল আছে, সেখানেই তো নির্যাতনের মাধ্যমে তথ্য আদায়ের প্রক্রিয়া 'সম্পূর্ণ বেআইনি' হিসেবে উল্লেখ করা আছে। উদ্ধৃতি দিই–

The use of force, mental torture, threats, insults, or exposure to unpleasant and inhumane treatment of any kind is prohibited by law and is neither authorized nor condoned by the US Government. Experience indicates that the use of force is not necessary to gain the cooperation of sources for interrogation. Therefore, the use of force is a poor technique, as it yields unreliable results, may damage subsequent collection efforts, and can induce the source to say whatever he thinks the interrogator wants to hear.

ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স কলেজ ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে গোয়েন্দা কার্যক্রমের আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতামত সম্বলিত একটি রিপোর্ট প্রচার করেছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে। 'ইন্টেলিজেন্স সায়েন্স বোর্ড'এর ওই রিপোর্টেও তথ্য আদায়ের কৌশল হিসেবে নির্যাতনের বিপক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছিলে। বলা হয়েছিল:

The scientific community has never established that coercive interrogation methods are an effective means of obtaining reliable intelligence information.

নির্যাতন যে কার্যকর কোনো পদ্ধতি নয় 'সিআইএ' নিজেও কিন্তু সে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল প্রায় এক যুগ আগে। সিনেট কমিটির রিপোর্টেই তার প্রতিফলন পাওয়া যায়। সিনেট কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিই:

… prior to the attacks of September 2001, the CIA itself determined from its own experience with coercive interrogations, that such techniques 'do not produce intelligence,' 'will probably result in false answers,' and had historically proven to be ineffective.

দেখা যাচ্ছে, 'সিআইএ' একদিকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে, আবার নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। একে 'স্ববিরোধিতা' বললে বোধহয় সঠিক বিশ্লেষণ হয় না। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী গোয়েন্দা সংস্থাটির এমন স্বেচ্ছাচারিতা কি কোনো যুক্তি দিয়ে আড়াল করা যায়?

তাই 'সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি'র রিপোর্ট নিয়ে দুনিয়াজুড়ে হৈচৈ হচ্ছে। মার্কিন মিডিয়া তো বটেই, প্রতিবেশি কানাডিয়ান মিডিয়াও তীব্র সমালোচনা করছে 'সিআইএ'এর নির্যাতনের। সমালোচনা করছে মার্কিন প্রশাসনেরও। কানাডার প্রভাবশালী পত্রিকা গ্লোব অ্যান্ড মেইলের কলামিস্ট তাবাথা সৌদি তো তার কলামের শিরোনামই করেছেন:

Memo to the CIA: You guys are monsters, period

তিনি 'সিআইএ'কে 'দানব' ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছেন না, সে কথা স্পষ্ট করেই লিখেছেন। খোদ জাতিসংঘ কঠিন ভাষায় 'সিআইএ'এর সমালোচনা করে দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছে। জাতিসংঘ বলছে, 'সিআইএ' ছাড়াও বুশ প্রশাসনের যে কর্মকর্তারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

জাতিসংঘের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণও রয়েছে। বন্দিদের উপর 'সিআইএ' যে নির্যাতন চালিয়েছে, সেটি কেবল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনই নয়। 'ইউএন কনভেনশন অ্যাগেইন্সট টর্চার' এবং 'ইউএন কনভেনশন অন এনফোর্সড ডিস অ্যাপিয়ারেন্স' নামে জাতিসংঘের দুটি কনভেনশন আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এবং নিজ দেশে গ্রহণও করেছে। 'সিআইএ'এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি এই কনভেনশনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘ অবশ্য 'সিআইএ'এর নির্যাতনকে 'ক্রিমিনাল অ্যাকটিভিটি' হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

রিপোর্টটি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে হৈ চৈ চললেও এ নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া আছে বলে মনে হল না। বাংলাদেশের সুশীল, মানবাধিকারের রক্ষক কোনো সংগঠন এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর দেখালেও সেটি এতটাই নিম্নকণ্ঠ যে, তেমন একটা নজর কাড়তে পারেনি। পান থেকে চুন খসতেই 'মানবাধিকার গেল' বলে যারা চিৎকার শুরু করে দেন, এমন একটি ঘটনায় তাদের উহ-আহ শব্দও হবে না এটা কেমন কথা!

সরকারের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ মার্কিন এক মন্ত্রীকে 'দুই আনার মন্ত্রী' বলে মন্তব্য করে দেশের অনেক সুশীলের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফ মন্তব্যটা করেছেন রাস্তার জনসভায়। যে কোনো রাজনীতিকের, মন্ত্রীর বক্তব্য-বিবৃতি অবশ্যই শোভন হওয়া দরকার। ভিনদেশের মন্ত্রীদের সম্পর্কে মন্তব্য করার ক্ষেত্রেও আমরা 'রুচিসম্মত' শব্দ প্রয়োগ আশা করি। কিন্তু সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য ধরে ঢাকার দুটি পত্রিকা যেভাবে ওয়াশিংটনে ধর্না দিয়েছে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার বাণি শুনতে চেয়েছে, সেটি কোন বিবেচনায় শোভন কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? তারা তো বরং দেশের বিরুদ্ধে বৃহৎ একটি রাষ্ট্রকে উসকানি দেওয়ারই চেষ্টা করেছেন। 'সিআইএ'এর নির্যাতনের রিপোর্ট নিয়ে তাদের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না হওয়ারই কথা। কিন্তু বাকিরা? দেশে তো মানবাধিকার রক্ষাকারীর সংখ্যা একেবারেই কম নয়।

ঢাকার সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন:

If the CIA-like tortures took place in Bangladesh, I wonder, what the 'civilised' nations, especially the United States of America, would have said?

I am sure we would have been bombarded with millions of statements of condemnations with the possibility of punitive measures.

I was once told by a renowned human rights activist of the county that there is no border for them and they will speak against rights violation wherever it happens.

Even that particular individual has not said anything yet about the CIA atrocities.

Hypocrisy is hypocrisy, be it in USA or UAE or Bangladesh.

হুমায়ুন অবশ্য সরকারকেও পরামর্শ দিয়েছেন কঠিন ভাষায় নিন্দা জানাবার। যে মার্কিনিরা ছুতোনাতায় বাংলাদেশের সমালোচনায় উচ্চকণ্ঠ হয়ে ওঠে, সেই আমেরিকার এই অমানবিক চিত্র কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 'সিআইএ'এর এই অপরাধের ব্যাপারে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নিয়ে আমেরিকার তো অন্য কোনো দেশে নাক গলানোরই অধিকার থাকার কথা নয়।

কেউ হয়তো বলতে পারেন, 'সিআইএ'এর নির্যাতনের রিপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশিদের কি হৈ চৈ করার তেমন কিছু আছে? আমি বলি, অবশ্যই আছে। এটা কেবল মার্কিনিদের সমালোচনা করার বিষয়, এটা হচ্ছে দেশে দেশে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নজরদারির মধ্যে রাখার বিষয়। পশ্চিমা বিশ্বে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সীমাহীন গোপনীয়তার আইনি অধিকার ভোগ করে। একই সঙ্গে তাদের সকল কার্যক্রম এক ধরনের 'দায়মুক্তির' আইনি নিরাপত্তায়ও থাকে। ঠিক যেমনটি থাকে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যত দৃশ্যমান কোনো নজরদারির ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। বিভাগীয় নজরদারি যেটা আছে, সেটা এক ধরনের প্রোটেকশনই বলা যায়। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশ্য সমালোচনা হয়েছে। সে সমালোচনায় রাজনীতিই ছিল বেশি। সামগ্রিকভাবে র‌্যাবের কার্যক্রম খতিয়ে দেখার কোনো দাবি কোনো মহল থেকেই উঠেনি।

'সিআইএ'এর রিপোর্ট নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে সমালোচনার মধ্যেই কানাডার প্রভাবশালী পত্রিকা 'টরন্টো স্টার' কানাডার গোয়েন্দা বাহিনীর নজরদারির ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পত্রিকাটি তার সম্পাদকীয়তে বলেছে, গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম সংসদীয় নজরদারিতে আনা উচিত। সংসদীয় নজরদারিতে আনলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং ফরাসি গোয়েন্দাদের উপর সংসদের 'ওভারসাইট অথরিটি' বা নজরদারি ক্ষমতা আছে। সেটা আছে বলেই 'সিআইএ'এর বর্বরতার দলিল বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হতে পেরেছে। 'টরন্টো স্টার' অবশ্য বলছে:

''সিআইএ পক্ষপাতমূলক রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়।''

'সিআইএ'এর কার্যক্রম পর্যালোচনায় এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কানাডায় অবশ্য একটি বিল সংসদের বিবেচনার জন্য অপেক্ষমান আছে। সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বকারী এমপিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি থাকবে। সেই কমিটি সেনাবাহিনী, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা– সবার কার্যক্রম নজরদারি করবে। তারা কেবলমাত্র জাতীয় সংসদের কাছেই তাদের যে কোনো রিপোর্ট বা সুপারিশ দেবে। আর এ কমিটির সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এমপিকে অবশ্যই 'ক্রিমিনাল রেকর্ড'মুক্ত হতে হবে। কোনো ধরনের ফৌজদারি মামলায় আসামি হয়েছেন, এমন কোনো এমপি এই কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন না।

বাংলাদেশে এ ধরনের পদক্ষেপ কঠিন। যেখানে দাগি আসামিরাই এমপি হয়ে বসে থাকেন, সেখানে তাদের হাতে গোয়েন্দা সংস্থার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া কতটা শোভন– এ প্রশ্ন উঠতে পারে। আমরা তো বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতাও এই এমপিদের হাতে অর্পণ করেছি।

তাহলে? 'সিআইএ'এর নির্যাতনের রিপোর্টটি দেশে দেশে গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম আলোচনায় নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের সুধী মহল সেই সুযোগটা নেবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

শওগাত আলী সাগর: টরন্টো থেকে প্রকাশিত ' নতুন দেশ'এর প্রধান সম্পাদক।