ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণা: এবার মনে হচ্ছে জেলে যেতেই হবে

মহিউদ্দিন আহমদ
Published : 25 Nov 2014, 01:03 PM
Updated : 25 Nov 2014, 01:03 PM

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জনাব বেনজীর আহমেদ গত শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪ ঘোষণা দিয়েছেন, ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউর রূপসী বাংলা হোটেল থেকে উত্তরে ফার্মগেটের পুলিশ বক্স পর্যন্ত সেকশনে মানুষজন যদি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ইচ্ছেমতো যে কোনো জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে, তাদের ধরে মোবাইল কোর্টের সাহায্যে আজ মঙ্গলবার থেকে জেল-জরিমানা করা হবে। জেলের মেয়াদ সর্বোচ্চ ছয় মাস এবং জরিমানার পরিমাণ ২০০ টাকা হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

খবরটি প্রথম কয়েক দিন পুরো বুঝতে পারিনি বলে নিশ্চিত হতে আজ সকালে গত রোববারের ইংরেজি দৈনিক 'ডেইলি স্টার'এর কপিটি আবার ভালো করে দেখলাম। প্রথম পৃষ্ঠাতে দুই লাইনের বড় বড় হরফের সবচাইতে বড় শিরোনাম এটি, 6 months jail or tk 200 in fine ; এর মধ্যে jail এবং fine শব্দ দুটির প্রতি বেশি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লাল কালিতে। খবরটিতে দেখতে পাচ্ছি, কমিশনার বেনজীর আহমেদ তাঁর এই ঘোষণার কার্যকারিতা ঢাকার একটি অতি ব্যস্ত সড়কের একটি সীমিত অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তাতে কিছুটা 'রিলিফ' বোধ করছি, তবে পুরোপুরি নয়।

এখানে উল্লেখ করি, বেনজীর আহমেদের সঙ্গে আমার কখনও দেখা বা কথা হয়নি। তবে তিনি আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। তাঁর মতো এমন হ্যান্ডসাম অফিসার অতীতে ক'জন ছিলেন বা এখন ক'জন আছেন?

আমি উত্তরায় থাকি, ঢাকা টঙ্গি সড়কের পশ্চিম পাশে। এই সড়কের পশ্চিম পাশের সেক্টরগুলোর অনেকগুলোই বেজোড় সংখ্যায়, যেমন, ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১। জোড় সংখ্যার সেক্টরগুলো রাস্তার পূর্ব পাশে, যেমন, ২, ৪, ৬ ও ৮। এই রাস্তার পশ্চিম পাশে বেশিরভাগ ব্যাংক, বাজার, দোকান-পাট; তবে পূর্ব পাশেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু অফিস আছে; যেমন, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোনের উত্তরা শাখা অফিসগুলো। সারা দেশখ্যাত স্কুল উত্তরা হাই স্কুলটিও ৪ নম্বর সেক্টরে সড়কের ওপাশে।

উত্তরায়, শাহ্জালাল বিমান বন্দরের কাছে ঢাকা টঙ্গির এই সড়কে প্রথম ওভারব্রিজ, তার উত্তরেরটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের পাশে, তার পরেরটি আধা কিলোমিটার উত্তরে আজমপুরে, তার পরেরটি আরও আধা মাইল দূরে সদ্যনির্মিত সাঈদ গ্র্যান্ড সেক্টরের সামনে এবং এই সিরিজের শেষটি হাউজ বিল্ডিং-এর বাস স্টপে। তো এই দুই মাইলের মধ্যে পাঁচ পাঁচটি ফুটওভার ব্রিজ। মানুষজনের পারাপারের জন্য অবশ্যই ভালো ব্যবস্থা সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু ঢাকা শহরের অন্যান্য ফুটওভার ব্রিজের মতোই এগুলোও অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্ন এবং বলতে গেলে হকারদের দখলে।

তারপরও আমার জন্য এই ফুটওভার ব্রিজ যে তেমন সাহায্যকারী নয়; কারণ আমি ওভারব্রিজের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারি না; কয়েকটি সিড়ি উঠলেই হাঁপিয়ে পড়ি। আমার বয়সী প্রবীণ, 'সিনিয়র সিটিজেন'দের তো একই অবস্থা হওয়ার কথা। তারপর যারা অন্তঃসত্ত্বা, প্রতিবন্ধী, শিশুকোলে মা বা বাবা, তারা কীভাবে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবেন?

জরুরি কাজ থাকলেও কয়েক বছর ধরে সড়কের ওপাশে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ, টেলিফোন অফিসগুলোতে যেতে পারি না। যতটুকু সম্ভব টেলিফোনে কাজ সেরে নিতে চেষ্টা করি। তাতে কাজ না হলে অন্য কারও সাহায্য নিই। তাতেও কাজ না হলে ট্রাফিক পুলিশের সাহায্য নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করি। সাহায্য চাইলে সব সময়েই তাদের সাহায্য পেয়েছিও। আমার স্ত্রী বিলকিসও ট্রাফিক পুলিশের সাহায্য চেয়ে সব সময়েই তা পেয়েছেন।

এসবের কিছুই লাগত না যদি আমাদের রাস্তাগুলোতে জেব্রা ক্রসিং, পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা থাকত। উপরে বর্ণিত ওই দুই মাইলের মধ্যে, বিমান বন্দর থেকে টঙ্গি ব্রিজ পর্যন্ত একটিও যে জেব্রা ক্রসিং নেই। গত কয়েক বছরেও ঢাকা শহরের কোনো সড়কে কোনো জেব্রা ক্রসিং দেখেছি কিনা মনে করতে পারছি না। এই এক বছরে নতুন ঢাকা বাদেও আমি পুরানো ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, মৌলভীবাজার, আরমানিটোলা পার্ক, রথখোলা, ব্রাহ্মমন্দির, বাংলাবাজার, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, লোহারপুল, ধুপখোলা মাঠ, শ্মশানঘাট ঘুরেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এইসব জায়গা নতুন করে ঘুরে দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।

বলছিলাম, পুরানো ঢাকার কোথাও তো নয়ই, নতুন ঢাকার কোথাও একটি জেব্রা ক্রসিং দেখেছি বলে মনে পড়ে না।

দুই

জেব্রা ক্রসিং দিলেও বাস ড্রাইভার, ট্রাক ড্রাইভার, মোটরকার ড্রাইভার, সিএনজি ড্রাইভার এবং আমাদের রিকশাওয়ালা ভাইয়েরা এতটুকু মানবেন তা বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই। মগবাজার মোড়ের ট্রাফিক ব্যবস্থা কয়েক বছর আগে, যখন এখানে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি, এই জায়গাটিতে তখন যে 'ক্যাওস, কনফিউশন অ্যান্ড এনার্কি' সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে আমি দেখতাম, তাতে গোটা জাতির চরিত্রের প্রতিফলন ঘটছে বলেই আমার মনে হত। ট্রাক এবং বাস ড্রাইভারদের লাল বাতি মানার কোনো আগ্রহ দেখিনি; এখনও অনেক জায়গায় দেখি না।

সেই চল্লিশ বছর আগে নতুন দিল্লিতে আমেরিকান অ্যামবেসির এক দ্বিতীয় সচিবের স্ত্রী মিসেস গ্রান্টস্মিথ দিল্লির ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি মূল্যায়ন দিয়েছিলেন; এত বছর পরও তা আজ মনে আছে। এই মহিলা বলেছিলেন, তাদের দূতাবাসে নতুন কেউ যোগ দিলে তাকে দিল্লির ট্রাফিক কীভাবে সামলাতে হবে, তার ব্রিফিং দেওয়া হয়। এই ব্রিফিং-এ বলা হয়ে থাকে, বইপত্রে, আইনকানুনে যা আছে তার সঙ্গে বাস্তববাদী হয়ে এই রীতিটাও মেনে চলতে হবে– বাসের আগে ট্রাক অগ্রাধিকার পাবে, মাইক্রোবাসের আগে বাস, মোটরগাড়ির আগে মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেলের আগে বেবি ট্র্যাক্সি, সাইকেল আরোহীর আগে মোটর সাইকেল। মানে যানবাহনের সাইজের উপর নির্ভর করবে কে কার আগে অগ্রাধিকার পাবে, কে কার আগে যাবে।

আর, আর সকলের আগে যাওয়ার অধিকার পাবে 'সর্দারজি'!!! এই 'সর্দারজি' যদি একজন পথচারীও হয়, সে ট্রাকের আগেই যাওয়ার অধিকার পাবে। 'সর্দারজি'দের বোকামি নিয়ে কৌতুকের কারণেই বোধহয় আজও মহিলার কথা মনে আছে। এখনও কখনও কৌতুকটা মনে পড়লে হেসে উঠি। তো বাংলাদেশে প্রায় জায়গাতেই সড়ক, মোড়, ক্রসিং সবখানেই যানবাহনের সাইজ দিয়ে রাস্তায় চলাচলের অধিকার, কার আগে কে যাবে তা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

আমাদের ট্রাফিক পুলিশের জন্য আমার সব সময়েই সমর্থন। এত অল্প বেতন-ভাতায়, এত দীর্ঘ সময়ের ডিউটি! ডিউটি শেষে হয়তো ঘুমানোর জন্য একটু সাধারণ ব্যবস্থাও নেই। তার উপর তাদের কথা কেউই যে শুনতে চায় না, মানা তো দূরের কথা। তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ তোলা হয়, তারা ঘুষ খায়। তো যেসব লোক, যেসব সাংবাদিক এইসব অভিযোগ তোলে তারা কি ঘুষ খায় না? এসব ট্রাফিক পুলিশের কেউ তো বেসিক ব্যাংক লুট করেনি। তাদের কেউ তো বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু নয়। তাদের কেউ তো তাজরিন গার্মেন্টেসের মালিক দেলোয়ার হোসেনও নয়।

যে সব সাংবাদিক তাদের পত্রিকা অফিস থেকে ছয় মাসে, নয় মাসেও এক মাসের বেতন-ভাতা পায় না; তারা কী করে? তারাও তো চরে-বরেই খায়।

এখানে আরও স্পষ্ট করা দরকার যে, আমি ট্রাফিক পুলিশদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থনের কথা বলছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী পুলিশ কর্মর্কতা এবং সদস্যদের জন্য আমার কেনো সমর্থন বা সহানুভূতি নেই।

তিন

বেনজীর আহমেদ তাঁর ঘোষণা শুধুমাত্র কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের একটি অংশে কার্যকর করবেন, তাতে আশ্বস্ত বোধ করছি। তিনি যদি পুরো ঢাকা শহরে তা কার্যকর করতে চান, আমার মতো সিনিয়র সিটিজনদের সমূহ বিপদ। উত্তরাতে প্রয়োগ করলেও কোনো না কোনোদিন ধরা খেয়ে যেতে পারি রাস্তা পার হতে গিয়ে। তারপর তাঁর ঘোষণা মতোই জেল বা জরিমানা।

এত বছর পুলিশ, থানা এড়িয়ে যেতে পেরেছি। একাত্তরে দূরের লন্ডন থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একটু সম্পৃক্ত ছিলাম বলে আমার বিরুদ্ধে ফেনীতে মামলা হয়েছিল, জেল-জরিমানা, মৃত্যুদণ্ডও হতে পারত। দেশটা ৩০ লাখ মানুষের রক্তে দ্রুত স্বাধীন হয়ে গেল বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। আর একবার, এরশাদ জমানার শেষ দিকে কারফিউ জারি করা হয়েছে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে। হেঁটে শেরে বাংলা নগরের মিনিস্টার্স হোস্টেলের বাসায় ফিরতে কয়েক মিনিটের দেরি হয়েছিল আমার। মিরপুর রোডে আসাদ গেটের ওখানে পুলিশ দিল ধাওয়া। ধরা না পড়ে কোনোভাবে বেঁচে এসেছিলাম।

তিন চার দিন আগে সুব্রত বাইনের নাম করে কেউ একজন আমাকে হুমকি দিয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানায় টেলিফোন করে জানতে চাইলাম, আমাকে কী করতে হবে। ডিউটি অফিসার খুব বিনয়ের সঙ্গেই পরামর্শ দিলেন, স্যার, একটি জিডি করতে পারেন। করিনি; কারণ হুমকিদাতা যদি ছাত্রনেতাদের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে কমিশনার বেনজীর আহমেদ কেন, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খোন্দকারও কিছু করতে পারবেন না। আর সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডে রহস্যেরও তো কিছু হল না গত চৌত্রিশ মাসে। মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি কিবরিয়া হত্যারও, গত দশ বছরে।

ইচ্ছেমতো রাস্তা পার হওয়ার ঝুঁকির উপর আর একটি আমোদজনক অভিজ্ঞতার উদাহরণ। তখন জেনেভাতে আমাদের বাংলাদেশ মিশনে আমি একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং এমন বালক হয়েও প্রায় আট মাস মিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান। আমাদের এক বাংলাদেশি জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করে একটু দূরে রাস্তা পার হচ্ছিল। আর তখনই তার সামনে একটি বাস। তাকে রক্ষা করতে কড়া ব্রেক চেপে বাস থামাতে হল। কিন্তু ঐ কড়া ব্রেকে এক প্রবীণা বাসযাত্রীর চোখ থেকে চশমা পড়ে ভেঙে গেল। সেদিন বাংলাদেশি ভাইকে তাৎক্ষণিক জরিমানা তো দিতেই হল, সঙ্গে ওই প্রবীণা বাসযাত্রীর চশমা ভাঙার ক্ষতিপূরণও।

মাঝে মাঝে আমার মনে হয় এই যে, ১৬ কোটি লোকের দেশ, প্রায় দেড় কোটি লোকের ঢাকা মহানগরী। যেমন এবং যতটুকু চলছে, তাই তো যথেষ্ট। আইন আছে, প্রয়োগ নেই; আর আমাদের প্রত্যেকেই তো স্বাধীন। সরকারি দল বা অঙ্গ সংগঠনগুলোর মাস্তানদের চাঁদা দিয়ে যে কোনো ফুটপাতে দোকান খুলে বসার স্বাধীনতা আছে যে কোনো নাগরিকের; এলাকার সন্ত্রাসীদের সন্তষ্ট রেখে জমি-নদী-নালা-বনভূমি-খাসজমি দখল করার স্বাধীনতা আলবৎ আছে। বেশি আছে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। ফুটপাতের কত হকারকেই পুলিশ তাড়াবে? সারা শহরের প্রায় সব ফুটপাতই তাদের দখলে; লাখে লাখে হকার এই ঢাকা মহানগরীতে।

সুতরাং এতটুকু ছোট জায়গার ঢাকা মহানগরীতে ফার্মগেটের ফুটপাতে একটু হাঁটতে গেলেই মানুষের সঙ্গে মানুষের, একটির পর একটি ধাক্কা, মিনিটে পাঁচ-দশটি ধাক্কা, কীভাবে সামাল দেবেন বেনজীর আহমেদ। আর ঢাকার রাস্তাঘাটগুলোতে যে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে শহরটাই অচল হয়ে পড়েছে; এখন দেশটাই অচল হওয়ার পথে।

এদেশের মানুষ তাদের নিজেদের জীবন নিয়েই এত উদাসীন। রেললাইন ধরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে ট্রেনের নিচে মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন। সতর্ক করার জন্য এখানে পুলিশের দরকার আছে? রেললাইনের পাশে এতসব খুপড়ি ঘর, দোকান। মাত্র সেদিন এতগুলো লোক কাটা পড়ল, তারপরও তো জীবনের মায়া দেখছি না ওখানে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তো আবার একই অবস্থা। এখানে পুলিশ কী করবে?

বরং আমার প্রশ্ন, ওখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কে কী করেছেন ওখানে? ওয়ার্ড কমিশনার তো কয়েক বছর ধরে নেই, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগ কি ওখানে স্বেচ্ছামূলক কোনো কাজ করেছে? যুবলীগের যুবকরা কোথায়? এরা ওখানকার বিপন্ন মানুষজনকে বুঝিয়ে কি ওখান থেকে সরিয়ে আনতে পারে না?

চার

প্রবীণদের প্রতি 'কনটেম্পট' দেখি আমাদের ব্যাংকগুলোতে গেলে। বয়সনির্বিশেষে সকলকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে বা জমা দিতে হবে। প্রবীণদের জন্য কি আলাদা কাউন্টারের ব্যবস্থা করা যায় না? আমাকে লাইনে দাঁড়াতে বললে চোখে চোখ রেখে ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলি, ''আমি একজন 'সিনিয়র সিটিজেন', আমি এখানে চেয়ারে বসলাম, আমার কাজটা করে এনে দাও।''

তারপর আর তর্ক করতে সাহস করে না কেউ। কিন্তু আমার স্ত্রীকে– তিনিও একজন 'সিনিয়র সিটিজেন'– লাইনে দাঁড়াতে বললে তিনি যে প্রতিবাদ করতে পারেন না।

দুনিয়ার সব দেশেই, 'সিনিয়র সিটিজেন'দের জন্য ব্যাংকে, রেল স্টেশনে, বাস স্টেশনে, দোকানের লাইনে, যে কোনো সরকারি বেসরকারি অফিসে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। ব্যবস্থা থাকে প্রতিবন্ধীদের জন্য, অসুস্থদের জন্য। কিন্তু ব্যবস্থা নেই এই বাংলাদেশে। যেন এখনকার জোয়ানরা কোনো দিন বুড়ো হবে না।

উত্তরার সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা পেনশন তোলেন। তাদের সবাই বয়স্ক। মাসের প্রথম কয়েক দিন ওখানে দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না। এই প্রবীণ মানুষদের জন্য ব্যাংকটিতে বসার আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।

এমন বিশেষ ক্যাটেগরির মানুষজনের জন্য আলাদা কাউন্টার এবং বসার ব্যবস্থা চালু করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সবগুলো ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিদের্শ দিতে পারে। ব্যাংকগুলো শুধু লুট হয়ে যাবে বা শুধুই লাভ করতে থাকবে, এমন তো হতে পারে না। সেবাপ্রদানে ব্যাংক এবং এমন অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়স্ক সেবাপ্রত্যাশীদের প্রতি বেশি আন্তরিক, আগ্রহী ও মনোযাগী হতে হবে।

'শিউলীতলা', উত্তরা; সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪।