পাসপোর্ট ভিসা তৈরি রাখার রাজনীতি

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 6 Oct 2014, 11:18 AM
Updated : 6 Oct 2014, 11:18 AM

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে অস্থিরতা চলছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রচার, প্রকাশ হচ্ছে। এর মধ্যেই ২০ দলীয় জোট ছেড়েছে ছোট ৫ দল। এই ৫ দলই আবার ভেঙে দু'টুকরো হয়েছে। এক টুকরো ২০ দলীয় জোটের সঙ্গেই আছে। আরেক টুকরো নতুন একটি রাজনৈতিক জোটে সামিল হয়েছে।

২০ দল ছেড়ে আসা ৫ দলাংশ এবং আরও ৫ ক্ষুদ্র দল অর্থাৎ মোট ১০ টুকরো দল নিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নবগঠিত এই জোটের নাম দেওয়া হয়েছে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, সংক্ষেপে এনডিএফ। জোটভুক্ত ১০ দল হল, শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি- ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলমগীর মজুমদার), ইনসাফ পার্টি (রশিদ), মুসলিম লীগ (জোবাইদা কাদের), ন্যাপ ভাসানী (আনোয়ার), লেবার পার্টি (মনি), তৃণমূল ন্যাপ (পারভীন ভাসানী), ভাসানী ফ্রণ্ট (মমতাজ), ইনসাফ পার্টি (শহীদ চৌধুরী) এবং জাগদল।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট নিয়ে দেশের রাজনীতিতে এবং মানুষের মধ্যে যে রকম আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে, নবগঠিত ১০ দলীয় জোট এনডিএফ নিয়ে সে রকম যে হবে না এবং হওয়ার আশু কোনো সম্ভাবনাও নেই সেটা বলার জন্য আরও রাজনৈতিক জ্যোতিষী হওয়ার প্রয়োজন নেই। যে ১০ দল বা দলাংশ নিয়ে এই জোট গঠিত হয়েছে সেগুলো নামসর্বস্ব বা প্যাডসর্বস্ব। এই দলগুলোর নামেমাত্র সাংগঠনিক কাঠামো থাকলেও তাদের কোনো গণভিত্তি নেই, তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থনও নেই।

এসব দলের দু'একজন নেতার নাম কিছু কিছু মানুষ জানলেও বেশিভাগেরই নাম-পরিচয় রাজনীতির নিয়মিত খবরাখবর রাখেন এমন সচেতন মানুষের কাছেও অজানা। জাতীয় নির্বাচনে এই দলগুলোর প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কোনো দল প্রার্থী দিলেও তার বা তাদের জয়লাভের সম্ভাবনা যে একেবারে শূন্যের কোঠায় তা জোর দিয়েই বলা যায়। যদিও জোটের ঘোষণা দান উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ শওকত হোসেন নিলু বলেছেন, তাদের এই জোট নির্বাচনী জোট। তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন!

সংবাদপত্রগুলো অনুগ্রহ করে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দলগুলোর খবর মাঝেমধ্যে ছাপে বলেই এদের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে জোটভুক্ত দলের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া এই দলগুলোর আর কোনো রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। তারপরও এই দল বা দলাংশগুলো আমাদের দেশের রাজনীতিতে টিকে আছে, সেটাই বড় কথা।

বিএনপি থেকে যে ৫ দল ভাগ হয়ে বের হয়ে গেল, তাতে ওই জোটের বড় ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। ২০ দলীয় জোটের মধ্যে সংগঠন-শক্তি ও জনসমর্থন আছে মাত্র দুটি দলের– বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। ২০ দলীয় জোট থেকে ১৮ দলও যদি বেরিয়ে যায় এবং নতুন জোট গঠন করে তাহলেও রাজনীতিতে বড় কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়। কারণ শূন্যের সঙ্গে শূন্য যোগ হলে যোগফল শূন্যই হয়। শূন্যের আগে কোনো সংখ্যা বসলেই কেবল তার মান বাড়ে।

তারপরও ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে নতুন একটি জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা কেন দেখা দিল তা নিয়ে নানা কথা বাজারে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, সরকারই কোনো এজেন্সি ব্যবহার করে নতুন এই জোট গঠনে ভূমিকা পালন করছে। অবশ্য ১০ দলীয় জোটের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, 'দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রয়োজনে' এই জোট। এসব কথা শুধু বলার জন্যই বলা। যার নেতৃত্বে এই নতুন জোট সেই শেখ শওকত হোসেন নিলু 'বেগম জিয়া একটু সাধিলেই' পুনরায় ২০ দলীয় জোটে ফেরার সম্ভবনার কথা বিসমিল্লাহতেই জানিয়ে রেখেছেন।

এনডিএফ নামক নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা যে দিন দেওয়া হয়েছে, সেদিনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ''২০ দলীয় জোট অটুট-অক্ষুণ্ন আছে। তবে অনেকেই লোভ-প্রলোভন সামলাতে পারে না। সে লোভে দু'একজন যেতেই পারে। জনগণের আন্দোলনে সেটা কোনো প্রভাব ফেলবে না।''

মির্জা ফখরুল ইসলাম একেবারে বেঠিক কথা বলেননি। তবে ২০ দলীয় জোট যারা ছেড়েছেন তাদের রাজনৈতিক শক্তি-সামর্থ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা এখন বিএনপি নেতাদের উচিত হবে না। ওরা জোট ছেড়েছে বলে বলছেন তারা চলে যাওয়ায় কোনো ক্ষতি হবে না। তাহলে প্রশ্ন আসে, এত দিন এই 'রাজনৈতিক এতিম'দের জোটে রেখেছিলেন কেন? ছোট দলগুলোকে খুদ-কুঁড়ো ছিটিয়ে পক্ষে রাখার যে প্রতিযোগিতা ভেতরে ভেতরে চলছে তাকে কোনোভাবেই সুস্থ রাজনৈতিক প্রবাহের লক্ষণ বলা যায় না। এতে কেবল রাজনীতির দারিদ্র্যই প্রকটভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

নবগঠিত এনডিএফ জোট যদি বিএনপিকে ধাক্কা কিংবা শিক্ষা দেওয়া অথবা সরকারপক্ষকে সহযোগিতার জন্য অর্থাৎ সরকারের হাতকে 'শক্তিশালী' করার জন্য হয়ে থাকে তাহলেও এটা বলা যায় যে, এই জোট সেই উদ্দেশ্য পূরণে সফল হবে না। কারও ক্ষতি অথবা কারও উপকার করার ক্ষমতা এই জোটের নেই। সেজন্যই জোটটি আত্মপ্রকাশ হতে না হতেই কেউ কেউ একে 'নাথিং ডুইয়িং ফ্রণ্ট' (এনডিএফ) বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এই আখ্যা দেওয়া যে ঠিক হচ্ছে না সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব নতুন জোটেরই। এই জোট নিয়ে দেশের মানুষের বিন্দুমাত্র আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। দেশের রাজনীতিতে বড় কোনো ঢেউ তোলা তো দূরের কথা সামান্য বুদবুদ তৈরি করার সক্ষমতাও এই জোটের নেই।

দুই

৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে গত কয়েক মাস রাজপথে বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়নি বা দিতে পারেনি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। যদিও বর্তমান সরকারকে 'অবৈধ' বলে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে বিএনপির নেতারা একেবারেই কম যাচ্ছেন না। এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে গণআন্দোলনের মাধ্যমেই হটানোর কথা বলা হচ্ছে অবিরাম। গত ঈদের আগে বলা হয়েছিল ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।

বিএনপির এই সরকার পতনের আন্দোলন-হুমকিতে দেশের মানুষের মধ্যে কিছুটা ভয় ও আতংক দেখা দিয়েছিল। কারণ মানুষ এটা জানে যে, বিএনপির আন্দোলন মানে তার সঙ্গে থাকবে জামায়াতে ইসলামী। আর তার মানেই যে হিংসা-হানাহানি-জ্বালাও পোড়াও-হত্যা-অরাজকতা– এটা দেশের মানুষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন এবং তার আগে কয়েক মাস প্রত্যক্ষ করেছে।

ঈদের পর বিএনপি-জামায়াত আবার সে ধরনের আন্দোলন শুরু করবে বলে আশংকা তৈরি হলেও বাস্তবে তা হয়নি। নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা, আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা না থাকা অথবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক না কেন, বিএনপি ঈদের পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। গত ক'মাস বিএনপি জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে-বাইরে সেমিনার এবং মানববন্ধন করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করে গেছে।

গণমাধ্যমে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হওয়ায় মানুষ জেনেছে যে বিএনপি অত্যন্ত সক্রিয় আছে। কিন্তু বাস্তবে বর্তমানে নানামুখী দ্বন্দ্বে জর্জরিত বিএনপি। ফলে এই দলের পক্ষে আন্দোলনের হুংকার দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও কার্যকর আন্দোলনে গড়ে তোলার সক্ষমতা নেই।

দেশবাসীও এখন আন্দোলনের নামে ভাঙচুর-জ্বালাও-পোড়াও-বোমাবাজি, মানুষ হত্যা ইত্যাদি চায় না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ভালো হয়েছে কী মন্দ হয়েছে সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। তবে নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। এই অবস্থা কোনোভাবে ব্যাহত হোক, এটা কারও কাম্য নয়।

বেশিরভাগ মানুষ সম্ভবত এটা মনে করেন না যে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় বসালেই দেশের পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে ভালো হবে। সরকার বদল হলে সুশাসন কায়েম হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না। ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, হত্যা-গুম-খুন-দখল বাণিজ্য ইত্যাদি যেসব অভিযোগ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি করছে, তারা ক্ষমতায় গেলেও সেগুলো অব্যাহত থাকবে বলেই দেশের মানুষ বিশ্বাস করেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে এগুলো কোনো অংশেই কম ছিল না, বরং ক্ষেত্র বিশেষে বেশি ছিল।

সম্প্রতি মওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী নিহত হওয়ার পর বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া বলেছেন, এই হত্যার দায় সরকারের। তিনি সঠিক বলেছেন। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। একইভাবে বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকতে দেশে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, বিশেষ করে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে– তার দায়ও বেগম জিয়ার ওপর বর্তানোর কথা। তাই বিএনপি নিয়ে মানুষের মনে আশা তৈরি হওয়ার চেয়ে আশংকাই দানা বাঁধে।

অনেকেই এটা মনে করেন যে, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা তথা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যতটুকু অগ্রগতি সাধন করেছে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে তা ধরে রাখা যাবে না, চাকা তখন পেছনের দিকে ঘুরতে শুরু করবে। অনেকগুলো আলোচিত মামলার বিচার-প্রক্রিয়া হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়াও অব্যাহত থাকবে না বলেই ধারণা করা যায়।

এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলাসহ আরও কিছু মামলা যে হিমঘরে চলে যাবে, সেটাও প্রায় নিশ্চিত। এসব কারণেই হয়তো বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলেও বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য মানসিকভাবে এখনও প্রস্তুত হয়নি।

তিন

কয়েক মাস বিরতি দিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সংবিধানের ষোড়ষ সংশোধনী তথা বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এই হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সারা দেশে হরতাল পালিত হয়েছে দায়সারাভাবে। হরতালের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরাও মাঠে নামেননি।

রাজধানীতে আন্দোলন চাঙ্গা করার লক্ষ্য নিয়ে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরও, ২২ সেপ্টেম্বরের হরতালের দিন রাজধানীতে সামান্য তেজি ভাবও দেখা যায়নি। হরতাল আহ্বানকারীদের চেয়ে হরতাল বিরোধিতাকারীরাই রাজপথে বেশি সক্রিয় ছিল।

কেবল হামলা-মামলার ভয়েই দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামছে না, নাকি নেতাকর্মীদের নিস্পৃহতার পেছনে ভিন্ন কিছু কারণ আছে? বর্তমান সরকারকে বিএনপি 'অবৈধ সরকার' হিসেবে অভিহিত করছে। অথচ 'অবৈধ সরকার'কে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন না করে সরকারের একটি 'অবৈধ' কাজের (বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়া) প্রতিবাদে একদিনের হরতাল আহ্বান কি বিএনপি সমর্থকদের কাছেও যুক্তিহীন বলে মনে হয়নি?

তাছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়ার আদালতে হাজির হওয়ার তারিখ ছিল। কেউ যদি মনে করেন বেগম জিয়া আদালতে হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্যই ওই দিন হরতাল ডেকেছিলেন, তাহলে তার ধারণা ভুল প্রমাণ করা যাবে কোন যুক্তিতে?

চার

২০ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভা চলার সময় বিএনপি জোটের হরতাল ডাকার খবর এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হলে বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও বাড়াবাড়ি করলে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে থাকতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বিএনপির জন্য একটি সতর্কবার্তা বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে। আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করলে সরকার যে নমনীয়তা দেখাবে না সেটা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে।

অবশ্য ২৩ সেপ্টেম্বর বেগম জিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভার বক্তৃতায় বলেছেন, তিনি জেলে যেতে ভয় পান না। উল্টো তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বলে সতর্ক করেন যে, দেশে এমন আন্দোলন হবে যাতে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পথ পাবেন না। তাকে পাসপোর্ট-ভিসা প্রস্তুত রাখার পরামর্শও বেগম জিয়া দিয়েছেন।

নানা কারণেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন একটি বাতাবরণ তৈরি হয়েছে সন্দেহ নেই। তবে যা-ই কিছুই হোক, সাধারণ মানুষ দেশে কোনো ধরনের অস্থিরতা বা অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক, সেটা চায় না। আশা করি, রাজনীতিবিদরা সেটি মাথায় রাখবেন।

বিভুরঞ্জন সরকার: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।