বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা জরুরি

এইচ এম মহসীন
Published : 29 Sept 2014, 07:25 PM
Updated : 29 Sept 2014, 07:25 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যেই স্নাতক পর্যায়ের ভর্তিপরীক্ষা শুরু হয়েছে, ফলাফলও প্রকাশ শুরু হয়েছে। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়ার 'মহাযুদ্ধে' উত্তীর্ণ হওয়া নিশ্চয়ই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ। তবে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ শেষেও যখন অনেকেই কাঙ্ক্ষিত পেশায় যোগদানের সুযোগ পায় না, অথবা বিশ্ববাজারের প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে পেরে ওঠে না, তখন সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো অস্ত্রশস্ত্রে (দক্ষতায়) সজ্জিত করার মতো সময়োপযোগী পাঠ্যক্রম দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই।

পাঠ্যক্রম নিয়ে বিশদ আলোচনার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্যসমূহ জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড অথবা যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কিংবা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে 'জ্ঞান সৃষ্টি' এবং 'জ্ঞান প্রদান' করাই মূল উদ্দেশ্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। জ্ঞান সৃষ্টি বা প্রসার (knowledge creation অথবা advancement of knowledge) করা হয় গবেষণার মাধ্যমে, নতুন তত্ত্ব বা প্রযুক্তি আবিস্কারের মাধ্যমে।

যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পিএইচ-ডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই সাধারণত মৌলিক গবেষণায় যুক্ত থাকেন, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই যে জ্ঞান সৃষ্টিতে সম্পৃক্ত নয় সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান প্রদান লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করলেও, সাধারণত শিক্ষার্থী বা অভিভাবকেরা জ্ঞান অর্জন জীবনে সফল হওয়ার একটি মাধ্যম হিসেবেই বিবেচনা করেন। তাহলে উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত?

এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ইন সেইন্ট লুইসের ওয়েবসাইটে বর্ণিত একটি উদ্দেশ্য অত্যন্ত উপযুক্ত মনে হয়েছে:

"ইতিবাচক মনোভাব, দক্ষতা, জীবনব্যাপী শিক্ষাগ্রহণের অভ্যাস এবং নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্বসমাজের উপযুক্ত, কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।''

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উৎপাদনশীল একটি শিল্প হিসেবে বিবেচনা করলে বলা যায়, দেশ ও বিশ্বসমাজের উন্নতির জন্য দক্ষ ও আদর্শবান পেশাজীবী (চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, শিক্ষক ইত্যাদি) এবং নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম মানবসম্পদ তৈরির চাহিদা মেটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য।

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো পেশাজীবী ও নেতা তৈরি করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনা জরুরি। অনার্স বা বিবিএ'র মূল বিষয় যা-ই হোক না কেন, স্নাতক পর্যায়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই কিছু সাধারণ বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কারণ শুধু স্পেশালাইজড শিক্ষা দিয়ে আজকের বিশ্বে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা সম্ভব নয়। একজন টেকনিক্যাল ফিল্ডের পেশাজীবীর যদি অর্থনীতির মৌলিক জ্ঞান না থাকে, তাহলে তার উদ্ভাবিত বা প্রস্তাবিত প্রযুক্তি অর্থনৈতিকভাবে মানানসই না-ও হতে পারে। যে প্রযুক্তি অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, সে প্রযুক্তি ব্যর্থ হতে বাধ্য।

পক্ষান্তরে, প্রত্যেক সচেতন নাগরিকেরই বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়ের ওপর দখল থাকা দরকার। না হলে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে দেশ বা বিশ্ব কী ঝুঁকির মুখে পড়ছে, ওজোন স্তর কী, কার্বন ডাই অক্সাইড কেন ক্ষতিকর এসব সম্পর্কিত টিভির সংবাদ দেখে অথবা সংবাদপত্রের খবর বা প্রবন্ধ পড়ে ভাসা-ভাসা একটি ধারণা পেলেও, খবরে প্রকাশিত বিষয়ের মূল প্রতিপাদ্য অনুধাবন করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারী কেউ যদি সংবাদপত্রের খবর শুনে তার মর্মার্থ বুঝতে না পারে তাহলে সেটি নিশ্চয়ই দুর্ভাগ্যজনক।

এ তো গেল নাগরিক সচেতনতার কথা। ক্যারিয়ার গঠনের দিক থেকে চিন্তা করলেও সাধারণ শিক্ষা (general education) অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পড়াশোনার বিষয়ের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের মিল থাকে না। পদার্থবিদ্যার গ্র্যাজুয়েটের ব্যাংকে, কিংবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পুলিশ বা কাস্টমসে যোগদানের ঘটনা বাংলাদেশে অসংখ্য আছে। এ ধরনের পেশা নির্বাচন দেশের সম্পদের অপচয় কিনা সে বিষয় অন্য একদিনের জন্য থাকুক। তবে এ-ই যখন দেশের বাস্তবতা, তখন স্নাতক পর্যায়ের কারিকুলামে সাধারণ শিক্ষার অন্তর্ভূক্তি এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য সহায়কই হবে।

ক্যারিয়ার পরিবর্তনের কথা না হয় বাদই থাকল। বর্তমান বিশ্বে চাকরির বাজারে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত যে দক্ষতা (skills), সেগুলো হচ্ছে: যোগাযোগ ক্ষমতা (communication skills), বিশ্লেষণাত্নক চিন্তা ক্ষমতা (Critical reasoning/analytical skills), টিমওয়ার্ক এবং পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা (adaptability)।

যে কোনো পেশায় সফল হতে হলে, যোগাযোগ ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পেশাজীবী যোগাযোগে দক্ষ না হলে কখনও-ই সফল হতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন বিজ্ঞানীর উদ্ভাবন যতই সৃষ্টিশীল ও যুগান্তকারী হোক না কেন, তিনি যদি সঠিকভাবে তাঁর আবিস্কার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর উদ্ভাবন কখনও-ই আলোর মুখ দেখবে না। তেমনি ব্যবসার ক্ষেত্রেও গ্রাহককে প্রস্তাবিত পণ্য বা সেবার বৈশিষ্ট্য সমন্ধে পরিস্কার ধারণা দিয়ে আকৃষ্ট করতে না পারলে বিক্রির সম্ভাবনা শূন্য।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে লিখিত এবং মৌখিক যোগাযোগ উভয়ই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির এই যুগে আজকাল অনেক সময় দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। লিখিত যোগাযোগের ওপর যথাযথ দখল না থাকলে সঠিকভাবে তথ্য আদান প্রদান নিতান্তই অসম্ভব। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ক্যারিয়ারেই লিখিত যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম-– ব্যবসায় মূলধন সংগ্রহের জন্য 'বিজনেস প্ল্যান' লেখা থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের রায় লেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও লিখিত যোগ্যতা অত্যন্ত জরুরি।

আমরা জানি গুরুত্বপূর্ণ এসব ক্ষেত্রে যোগাযোগের ভাষাটি সাধারণত ইংরেজি। শুধু তাই নয়, বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হলেও ইংরেজি ভাষা শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে ইংরেজি লেখা (English Writing) নিয়ে কোর্স থাকা নিতান্তই আবশ্যক।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে মৌখিক উপস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো পেশায় সফল ব্যক্তিদের গুণাবলীর দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ভালো বক্তা। জনগণের কাছের রাজনীতিবিদদের ভোট চাওয়া অথবা অফিসের বসের কাছে নিজের প্রজেক্টের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন-– উপলক্ষ যাই হোক না কেন, সহজ, সংক্ষিপ্ত, পরিস্কার ও সাবলীলভাবে, টার্গেট শ্রোতাদের কাছে নিজের মতামত অথবা দাবি যুক্তিসহকারে উপস্থাপন করে, তাদের প্রভাবিত করার মাধ্যমেই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে হয়।

কর্মক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে থাকলে, অধীনস্তদের উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করার জন্যও বলিষ্ঠ উপস্থাপক হতে হয়। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দক্ষ উপস্থাপক বা বক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে কোর্স থাকা আবশ্যক।

বিশ্লেষণাত্নক চিন্তা বা critical reasoning সমন্ধে সহজে বলতে গেলে বলতে হয়, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ সমন্বয় করে, যুক্তি ব্যবহার করে, বিশ্লেষণাত্নকভাবে কোনো উপসংহারে (conclusion) পৌছানো এবং এর ভিত্তিতে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ। সহজে করে বললে, বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে শেখা থিওরি, অভিজ্ঞতা ও তথ্য ব্যবহার (অ্যাপ্লাই) করে কোনো সমস্যার সমাধানের ক্ষমতাই এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে থিওরির ব্যবহারিক প্রয়োগের চেয়ে মুখস্তবিদ্যার ওপরেই জোর বেশি। শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যার মতো বিষয় অনেকাংশে সহায়ক হয়। বলাবাহুল্য, 'যুক্তিবিদ্যা' জাতীয় বিষয় খুব কম সংখ্যক ক্ষেত্রেই পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত।

বিশ্ববাজারে চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত অন্য দুটি দক্ষতা 'টিম ওয়ার্ক' ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশা যতই টেকনিক্যাল হোক না কেন, প্রত্যেককেই কোনো না কোনো টিমে কাজ করতে হয়– সে জটিল চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডই হোক আর নতুন পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য মাল্টিফাংশনাল টিমই হোক। বিশ্ববাজারে টিমওয়ার্ক বা অ্যাডাপটেবলিটির দক্ষতা তৈরির জন্য সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি জাতীয় বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।

এবার দেখা যাক, আমাদের দেশে প্রচলিত উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের উপরোক্ত স্কিলগুলো শিক্ষা দেওয়া হয় কিনা। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, গত কয়েক দশকে বিশ্ব অনেকখানি বদলালেও আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার কারিকুলাম অনেক ক্ষেত্রেই পুরোনো ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচলিত পাঠ্যক্রম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশেষীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন, বিজ্ঞান অনুষদের অনার্সের মূল বিষয়ের বাইরে যে কোর্সগুলো সহায়ক (subsidiary বা minor) বা ঐচ্ছিক (elective) বিষয় হিসেবে পছন্দ করতে দেওয়া হয়, সেগুলোও ওই বিজ্ঞান সম্পর্কিতই। পক্ষান্তরে, বাণিজ্য অনুষদে অর্থনীতি, হিসাব বিজ্ঞান বা ফিন্যান্স জাতীয় বিষয়ের বাইরে খুব একটি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে এই বিভাগের অনার্সের কারিকুলামের উদাহরণটি তুলে ধরতে চাই। এ ডিপার্টমেন্টের ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রোগ্রামের চার বছরের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ের বাইরের একমাত্র কোর্সটি হচ্ছে বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণে জ্বালানির অর্থনীতি সংক্রান্ত। সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, পৌরনীতি বা অর্থনীতির মতো কোনো বিষয় এখানে মোটেই গুরুত্ব পায় না।

স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাব যে, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন বা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই স্নাতক পর্যায়ে মূল বিষয়ের বাইরে সাধারণ শিক্ষা কারিকুলাম (general education) সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম ভেদে এই কারিকুলাম ভিন্ন হলেও সাধারণত, ইংরেজিতে প্রবন্ধ লেখা, নৈতিকতা শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি, সমাজবিদ্যা, পৌরনীতি, অর্থনীতি এবং গণিত ও বিজ্ঞানের দুই একটি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়ে থাকে।

উল্লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের অধিকাংশই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল এবং অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এসব সাফল্যের পেছনে শুধু তাদের পাঠ্যক্রমই মূল ভূমিকা না রাখলেও কার্যকর ভূমিকা যে রেখেছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।

আশার কথা হচ্ছে, খোদ বাংলাদেশেই স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে সাধারণ শিক্ষার (general education) প্রচলন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর বিবিএ সম্পন্ন করার আবশ্যিক শর্ত হিসেবে সাধারণ শিক্ষার ওপর সাতটি কোর্স নিতে হয়, যার মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস, ভৌত ও জীব বিজ্ঞান, ব্যবসা ক্ষেত্রে নীতি ও নেতৃত্ব জাতীয় বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত থাকে। সনাতন পাঠ্যক্রমের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারিকুলাম প্রবর্তন এবং মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের কারণেই আইবিএ দেশি ও বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আস্থা ও সুনাম অর্জন করতে পেরেছে। বাংলাদেশের চাকরির বাজারে তাই আইবিএ'র গ্র্যাজুয়েটরা করে নিয়েছেন এক অনন্য অবস্থান।

সময়ের সঙ্গে বিশ্ব বদলেছে, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাই বদলাতে হবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও। মনে রাখতে হবে, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম পেশাজীবী ও নেতৃত্ব তৈরি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করে শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে 'অলরাউন্ডার' হিসেবে, যারা নিজ নিজ বিষয়ে আধিপত্যের পাশাপাশি, বলিষ্ঠ যোগাযোগ ক্ষমতা, বিশ্লেষণাত্নক চিন্তা ক্ষমতা এবং টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে বিশ্বের দরবারে সম্মানিত করবেন।

দেশের নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিরা যত দ্রুত এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল।

এইচ এম মহসীন: স্ট্র্যাটিজি প্রফেশনাল।