যৌনশিক্ষা নয়, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে আরেক কিস্তি

কাজী আহমদ পারভেজ
Published : 23 August 2014, 08:21 AM
Updated : 23 August 2014, 08:21 AM

আমি বেশ অসহায় বোধ করি, যখন কেউ বলেন, এমন যৌনশিক্ষায় আপত্তি নেই যা বিবাহবহির্ভুত যৌনচর্চা উৎসাহিত করবে না।

যৌনশিক্ষা অর্থে যা বুঝিয়েছি তা হল, প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য দু'টি–

১. যৌন-এক্সপ্লয়টেশন ও হয়রানির শিকার হওয়া (এবং এরই ধারাবাহিকতায় তা না করা) থেকে সুরক্ষা পেতে পর্যাপ্ত সচেতনতা অর্জন;

২. প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানের আদান-প্রদান যা একজনকে ভুল শিক্ষা থেকে দূরে রেখে যৌন আচরণের বিষয়ে সৎ থাকতে উৎসাহিত করবে।

আমার অসহায়ত্বের কারণ পাঠক হয়তো এখন অনুমান করতে পারছেন। আমি যে যৌনশিক্ষার কথা বলছি, তার সঙ্গে যৌনকর্মে বা রতিক্রিয়ায় দক্ষতা অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটা এমন একটা সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস যা থেকে আশা করা যায় যে সচেতনতাটি সেই পর্যায়ের হবে যা সঙ্গী নির্বাচনেও ভূমিকা রাখতে পারে। এমন ভূমিকা যা ওই সঙ্গীর বাইরে অন্য যে কোনো যৌনসম্পর্ক নিরুৎসাহিত করবে।

একজন মানুষের যৌনতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সে যেমন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াতে পারে, আবার কোনো জ্ঞান না থাকলেও তেমন ঘটনা ঘটাতে পারে। প্রজনন স্বাস্থ্য বা যৌনতা সম্পর্কিত জ্ঞানের সঙ্গে কারও কারও এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য যৌনআচরণের কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রথমেই যৌনহয়রানি বা এক্সপ্লয়টেশন নিয়ে কিছু আলোচনা করি।

যৌনহয়রানি বা এক্সপ্লয়টেশনজনিত ট্রমা কারও কারও জীবন এমনভাবে বিষিয়ে তুলতে পারে যা হয়তো সে সারা জীবনেও কাটিয়ে উঠতে পারবে না। তুলনামূলক কম আক্রান্ত অন্যরা হয়তো কষ্টকর একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এর সঙ্গে খাপ খাওয়ায়, স্বাভাবিক হয়। কিন্তু মূলত অজ্ঞতার কারণে এই পরিস্থিতির শিকার হওয়ার মূল দায়টা কার, ভেবেছেন কখনও? আর এদেরই একটা অংশ যে এই অভিজ্ঞতা 'জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি' ভেবে একসময় নিজেরাও তাতে জড়িয়ে যেতে পারে, (জড়ায়ও, অনেক অভিযুক্তই একটা সময়ে নিজেরাও এর শিকার ছিলেন বলে জানিয়েছেন) সেটা কি কখনও ভেবে দেখেছেন?

"ও কিছু না, এই বয়সে এ রকম হয় একটু আধটু, বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, মনেও থাকবে না"-– ভেবে যারা বালিতে মুখ গুঁজে রাখছেন বা হয়রানিকারীকে রক্ষা করছেন (ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে), তারা যে এর মাধ্যমে একজন ভাবী হয়রানিকারী সৃষ্টির ঝুঁকি নিচ্ছেন না, বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন?

দুনিয়ার কোনো শিশুই যৌনহয়রানি ও এক্সপ্লয়টেশন থেকে নিরাপদ নয়– যতক্ষণ সে আগের প্রজন্মের এমন কারও সংশ্রবে থাকছে যে নিজে হয়রানির শিকার হয়েছিল কিন্তু জানে না যে তার সঙ্গে ঘটা ওই কাজটি গর্হিত কাজ ছিল। আমি এক ভদ্রলোককে বলতে শুনেছি যে, তিনি তার চার কী পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু করে আট-নয় বছর বয়স পর্যন্ত নারী পুরুষ মিলিয়ে সাত-আটজনের কাছে অসংখ্যবার যৌনএক্সপ্লয়েটেশনের শিকার হয়েছেন।

পরে নিজের নয় বছর বয়সে প্রায় সমবয়সী একটি মেয়েকে প্রথম এক্সপ্লয়েট করার সুযোগ পান তিনি। সেটি 'খুবই স্বাভাবিক একটি কাজ' ভেবে গ্রহণ করেন তিনি। এভাবে নিজের বারো-তেরো বছর বয়স পর্যন্ত আরও একাধিক এক্সপ্লয়েটেশনের সুযোগ কাজে লাগানোর পর একটা সময়ে তিনি বোঝা শুরু করেন যে, এগুলো গর্হিত কাজ। এতে তার যে অনুশোচনা হয়, সেটা তাকে বয়ে বেড়াতে হয় দীর্ঘদিন।

এই কষ্টকর ও হতবিহ্বল অভিজ্ঞতার পুরোটা সময়ে তাকে কেউ কোনো বিষয়ে সহায়তা করতে পারেনি। কারণ এ রকমের একটা 'লজ্জাজনক' বিষয় যে কারও সঙ্গে শেয়ার করা যায়, ভদ্রলোক সে সময়ে তা জানতেনই না।

অথচ একটি ছোট্ট তথ্য, "কারও কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত কখনও টাচ করতে হয় না। তোমাকে যদি কেউ কখনও টাচ করে বা নিজেরটা কেউ তোমাকে টাচ করতে বলে, সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবাকে জানাবে"-– ওই ব্যক্তিকে এই দীর্ঘ দিন বয়ে বেড়ানো ট্রমার হাত থেকে বাঁচাতে পারত।

প্রশ্ন উঠতে পারে, শিশুটি যদি জিজ্ঞাসা করে, কী এমন সমস্যা সামান্য টাচ-এ? কী উত্তর হবে এই প্রশ্নের?

কোন বয়সের শিশুকে এটা বলছেন, তার উপরে ভিত্তি করে এর জন্য কনভিন্সিং আবার সত্য এমন উত্তরও দেওয়া সম্ভব। বেশি ছোট শিশুকে যেমন বলা যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এটা প্রয়োজনীয় (যেমন, গাল টিপে আদর করার প্রচেষ্টা নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে)– তুলনামূলকভাবে বড়দের ক্ষেত্রে তাদের প্রজননঅঙ্গের সংবেদনশীলতার কথা বলে এটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কারণ ততদিনে তারা সেই সংবেদনশীলতার বিষয়টি বুঝতে শুরু করেছে।

মূল ঘটনা হল, এই কাজটি একদম ছোট বয়সে করার মাধ্যমে একদিকে যেমন তার মধ্যে এক্সপ্লয়টেশন সম্পর্কে সচেতনতা জাগানো শুরু করা যায়, অন্যদিকে আবার তাকে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কেও জানানোর সূচনা করা সম্ভব। এই আলাপটি বাড়িতে মা-বাবাও করতে পারেন। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ করলে তার ফল আরও ভালো হবারই কথা। শিশুরা একটা বয়স পর্যন্ত প্রথাগত শিক্ষার ব্যাপারে স্কুলকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। তাছাড়া মা-বাবার বলা একই কথাগুলি যখন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণকেও বলতে শোনে, সেগুলির সারবেত্তা নিয়ে ওরা একদমই নিঃসন্দেহ হয়ে যায়।

যারা ভাবছেন, "স্কুলে যৌনশিক্ষা দেওয়া, সে কী করে সম্ভব? এ তো খুবই কঠিন (বা খারাপ) কাজ"– ভেবে বলুন তো, এই শুরুটা কি সত্যিই সে রকম কিছু?

এই শুরুটা যত নিচের ক্লাসেই করা হোক না কেন, সমস্যা নেই। এরপর পিউবার্টি অর্জনের আগ পর্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে শুধু হাত-দাঁত-চুল-নখ নয়, মলমূত্র ত্যাগের স্থান ও আশেপাশের সকল অঙ্গের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার বিষয়গুলোতে গুরুত্ব আরোপ করা যায়। আর এগুলো বলার মাধ্যমে শরীর সম্পর্কিত আলাপে যে ট্যাবুগুলো রয়েছে তা কাটিয়ে উঠানো সম্ভব। পিউবার্টির সঙ্গে সঙ্গে যে শারীরিক পরিবর্তন ও সে সম্পর্কিত মানসিক চাপ, হতাশা ও ফ্যান্টাসিগুলো আসা শুরু করে তা কেন ঘটছে, কী কী হবে এগুলো জানিয়ে তাদের সেগুলো মোকাবেলায় প্রস্তুত করা যায়।

এটাও কি খুব কঠিন বা গর্হিত কোনো কাজ? কই, এখনও তো সে রকম মনে হচ্ছে না।

তবে এই সময়ে বাবা-মাকেও এমন কিছু পাবলিকেশন বা তথ্যকণা সরবরাহ করা উচিত যেন শিশুর জিজ্ঞাসাগুলির উত্তরে তারা স্কুলে দেওয়া একই উত্তর দিতে পারেন। দু'জায়গায় দু'ধরনের উত্তর সদ্য-পিউবার্টির চাপে থাকা শিশুটির জন্য জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে সংবেদনশীল অঙ্গের যত্নের যে আলোচনা আগে থেকেই চলছিল, সে অঙ্গগুলোতে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে যত্ন ও আরও সংবেদনশীলতা সম্পর্কিত বিষয়ে আলাপ-আলোচনা খুবই প্রসঙ্গক্রমে শুরু করা যায়। এই সময়ে সেসবের কাজ, সুরক্ষা, অপব্যবহারের ঝুঁকি, যত্নের সুফল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলাপে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। যখন তারা গাছের প্রজনন, ব্যাঙের প্রজনন নিয়ে শিখছে, প্রসঙ্গক্রমে মানব প্রজননের প্রক্রিয়াটাও সেখানে ঢুকে পড়া কঠিন কিছু হবার কথা নয়।

মনে রাখা দরকার, এজন্য তাদের সঙ্গে যেসব সংবেদনশীল অঙ্গ সম্পর্কে কথা বলতে হবে, সেগুলো নিয়ে আলাপে তারা কিন্তু অভ্যস্ত হয়েই আছে। সে ক্ষেত্রে এই আলাপে সমস্যা কোথায়?

মানব প্রজনন নিয়ে আলাপে যখন যাওয়াই যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে জন্মবিরতিকরণের প্রক্রিয়াগুলোও টেনে আনা সম্ভব। আর এই জন্য দেশের জনসংখ্যা আধিক্য একটা পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই সব আলোচনায় জন্মবিরতি ছাড়াও এগুলির অন্যান্য স্বাস্থ্যকর দিকগুলিও আলোচিত হতে পারে।

মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে এটুকু অর্জন করতে পারলে একদিকে যেমন এই কিশোর-কিশোরীদের নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে তারা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা দ্বারা সহজে বিভ্রান্ত হবে না। তারা জানবে, ওইসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে কার কাছে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে।

আমাদের কৈশোরের এ জাতীয় একটি বিভ্রান্তিকর অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি যা এখনকার ওই বয়সী অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হবে।

সর্বরোগের মহৌষধ বিক্রেতা ক্যানভাসারদের ও মঘা শাস্ত্রীয় লিফলেট পড়ে আমাদের জেনারেশনের অনেকেরই বধ্যমূল ধারণা ছিল, হস্তমৈথুন অত্যন্ত স্বাস্থ্যহানিকর একটি জঘন্য কাজ এবং এতে অচিরেই মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও যারা সেটা ছাড়তে পারত না, তারা পরদিন সকালে অন্ধ হয়ে গেছে কিনা সেই ভয়ে চোখ খুলতে চাইত না দীর্ঘক্ষণ।

এই সময়ে বিদ্যুৎ মিত্রের 'যৌনসঙ্গম' বইটি হাতে এল। ওখানে বলা ছিল, কৈশোরোত্তীর্ণ বয়সে হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌনআচরণ, এতে কোনো শারীরিক ঝুঁকি নেই।

আমরা বিরাট কনফিউশনে পড়ে গেলাম। শত শত সোর্স থেকে পাওয়া এতকালের এত এত জ্ঞান (?) যা দিয়ে হস্তমৈথুনে অভ্যস্তদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছি আর অন্ধ হবার ভয় দেখাচ্ছি, তা এভাবে এক ফুৎকারে চলে যেতে দেওয়া যায় না! নানান বানোয়াট যুক্তি দিয়ে এটা দাঁড় করানোর চেষ্টা চলল যে বইতে যা লেখা থাকে তার সব ঠিক না-ও হতে পারে।

আবার সমস্যা অন্য জায়গায়ও ছিল। প্রশ্ন করার ও তার উত্তর পাবার মতো কেউ ছিল না হাতের কাছে। তাই সঠিক তথ্য পেলেও সেটা তেমন কোনো কাজে আসেনি। জানতে চান কী প্রশ্ন? ১. ফ্রিকোয়েন্সি কী? ২. লুব্রিকেশনের জন্য কী কী ব্যবহার নিরাপদ, ইত্যাদি।

না জেনে ট্রায়েল এন্ড এররের প্রক্রিয়ায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখিও হয়েছে কেউ কেউ। বিপাকে পড়া একজনের সরল স্বীকারোক্তি থেকে জেনেছিলাম, লুব্রিকেশনের জন্য মবিল ব্যবহার করার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় মাসাধিককালের শারীরিক জটিলতা নিয়ে। অজ্ঞতার জন্য কেবল মানসিকই নয়, শারীরিক চাপেও পড়তে হয়।

সঙ্গী-সঙ্গিনী নির্বাচনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে জিনবিদ্যার ক্লাসে। সঠিক সুস্থ উত্তরাধিকারীর জন্য অনেক নিম্নস্তরের প্রাণিদের মধ্যেও নাকি সঙ্গী নির্বাচনে বাছ-বিচার করতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে মানুষের সঙ্গী নির্বাচনে কী কী বিষয় গুরুত্ব পাওয়া উচিত সে আলোচনা টেনে আনা সম্ভব। মানুষের ক্ষেত্রে সঠিক সঙ্গী হওয়ার জন্য ভালোবাসা থাকার গুরুত্ব আর সেই ভালোবাসাটা পাবার জন্য যোগ্যতা অর্জনের গুরুত্ব বোঝানো গেলে অনেক ধরনের ইম্পালস লাভের (লাভ-অ্যাট-ফার্স্ট সাইট জাতীয় কিছু একটা) অভিনয় করে প্রতারণা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এ সময়ে মনোবিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়ে এটা বোঝানো সম্ভব যে, যাকে চিনি না জানি না সে এসে বলল, "তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না"-– এটা একটা উচ্চ পর্যায়ের ভণ্ডামিই শুধু নয়, বিরাট একটা ফাঁদ। কারণ চলচ্চিত্রে যা-ই দেখানো হোক না কেন, বাস্তবে ভালোবাসার মতো একটা কমিটেড ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে সম্পর্ক গড়ানোর জন্য পরিচিতি থেকে শুরু করে বন্ধুত্ব, সাধারণ বন্ধুত্ব থেকে আস্থায় নেওয়া যায় এ রকম একটা গাঢ় বন্ধুত্বের পর্যায়ে সম্পর্কটার উত্তরণ হওয়া প্রয়োজন।

এটা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার মতো বিষয়। হালকা কিছু নয়। বিশেষ করে পিয়ার প্রেসারে "ইলেভেনে উঠে গেলাম, এখনও বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড নেই.. কী হবে আমার…" এ রকম ভাবার সুযোগ নেই। আর এ রকম ভেবে অপরীক্ষিত কারও সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে জড়িয়ে যাবার সুযোগ তো আরও নেই। যদি কোনো বন্ধু এ রকম চাপ দেয়, তারা যে প্রকৃত বন্ধু নয়, সেটাও বুঝে নেওয়া উচিত।

সঙ্গী নির্বাচনে এই সতর্কতার বিষয়টি একবার পাঠ্য বিষয়ে আনা গেলে তা থেকে সঙ্গীর সঙ্গে মানবিক আচার-আচরণ, পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলোতে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। আর এর সবই এই পর্যায়ে সম্পর্ক নিয়ে চাপমুক্ত করাই শুধু নয়, তরুণ-তরুণীদের সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক বেশি দায়িত্ববান হতে সাহায্য করার কথা।

মনে হল, অনেকেই যে ভাবছেন, 'যৌনশিক্ষা' মানেই হয়তো শিক্ষক বাৎসায়নের 'কামসূত্র' হাতে করে ক্লাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের দু'পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলবেন, "দেখাও দেখি, এইগুলা ক্যামনে ক্যামনে করে"– তা যে নয়, তা কি পরিষ্কার করতে পারলাম?

যৌনশিক্ষাই বলি আর প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষাই বলি, তা চালু ছাড়া বর্তমানে নর-নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ক্রমাবনতিকর পরিস্থিতি চলার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি তা নিরসনে আর কোনো বিকল্প আছে কি? যদি না থাকে তাহলে এটা চালু করার বিরোধিতা কি এই ক্রমাবনতি সমর্থনের সমতুল্য হয়ে যাচ্ছে না?

ভেবে বলুন তো?

[পুনশ্চ: ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ইচ্ছা করেই কোনো অবজেকটিভ আলাপে ঢুকিনি, বিষয়টার সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। আশা করছি, পাঠকগণও সেই সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন এবং অলৌকিক নয় বরং লৌকিক পদ্ধতিতেই সমাধান খুঁজবেন। ধন্যবাদ।]