হিরোশিমা: স্মৃতির ভয়াবহতা ও শান্তির সন্ধানে

এম এম আকাশ
Published : 7 August 2014, 04:44 AM
Updated : 7 August 2014, 04:44 AM

[''I stated that Hiroshima and Nagasaki are among the most unspeakable crime in history.''

''আমি বলেছি হিরোশিমা ও নাগাসাকি ইতিহাসের সবচেয়ে অকথ্য অপরাধগুলির অন্তর্ভুক্ত।''

— Noam Chomsky]

এই মুহূর্তে পৃথিবীর দিকে তাকালে আমরা অনেকগুলি জায়গাতেই আঞ্চলিক বা স্থানীয় অশান্তির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাই। গাজায় একতরফা বোমাবর্ষণ হচ্ছে বেসামরিক স্থাপনাগুলিতে। এমনকি হাসপাতাল বা ত্রাণ শিবিরও রক্ষা পাচ্ছে না। প্রতিদিন মৃত মানুষের নতুন নতুন ছবি ও সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশিত হচ্ছে। সকালে খবরের কাগজ খুললেই মনটা বিষাদঘন হয়ে যায়। যেদিক তাকাই সেখানেই ধ্বংস।

আফগানিস্তানে প্রায়ই নিরাপরাধ মানুষের উপর ড্রোন হামলা বহু দিন ধরেই চলছে, পাকিস্তানের মসজিদে ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর মৌলবাদের সশস্ত্র আক্রমণ ও বোমা হামলা হচ্ছে। ইরাকে শিয়া-সুন্নী আত্মঘাতী যুদ্ধ, লিবিয়া ও সিরিয়াতে যুদ্ধ, ইউক্রেনে যুদ্ধ– সর্বত্রই আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য অশান্তির স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাচ্ছি। এরই মধ্যে আবার বৃহৎ শক্তিবর্গ জলে-স্থলে শক্তির মহড়া প্রদর্শনও অব্যাহত রেখেছে। এই সেদিন আমাদের ঘরের কাছে জাপান-চীন সমুদ্র সীমান্তে আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ ও জাপানি নৌবহরের সামরিক মহড়া হয়ে যাওয়ার পর চীন এবং রাশিয়াও সেখানে একটি যুক্ত সামরিক অনুশীলন প্রদর্শন করেছে।

এসব দেখে শুনে মানুষের মানবিকতা ও শুভ শক্তিতে যাদের আস্থা শেষ হয়ে গেছে, তারা আজ প্রধানত হতাশা ও আশঙ্কার কথাই বলছেন। তারা বলছেন–

ক.

যুদ্ধ অনিবার্য, তাই আমাদেরকে আগে থেকেই শত্রুর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। যুদ্ধের মাধ্যমেই বেঁচে থাকতে হবে। শান্তির ললিত বাণী পরিহাসের মতো শোনাচ্ছে।

খ.

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ রোধ করা অসম্ভব, সুতরাং অসহায়ের মতো মরতে না চাইলে আজ আমাদের প্রয়োজন হবে নিজস্ব আণবিক সক্ষমতা। তাই আমাদের উচিত আণবিক বোমা প্রস্তুত করা। সুতরাং অস্ত্র প্রতিযোগিতায় আমাদের শরীক হতে হবে।

আসলেই কি এ বক্তব্য ঠিক?

যুদ্ধের আশঙ্কা যে একদম নেই, শক্রর কায়কারবার দেখে রক্তে যে আগুন জ্বলে যায় না, এ কথা বুকে হাত দিয়ে কেউই বলতে পারেন না। কিন্তু বহু আগে যাঁর তত্ত্ব আশ্রয় করেই শেষ পর্যন্ত আণবিক বোমা আবিস্কৃত হয়েছিল সেই সমাজ সচেতন মানবতাবাদী বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন–

I didn't know with what weapons world war three will be fought, but world war four will be fought with stick and stones.

আণবিক বোমা-উত্তর পৃথিবী যে আগের পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, এই উক্তিটি তা আমাদের পুনর্বার মনে করিয়ে দিচ্ছে।

এই বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট, যে আঞ্চলিক খণ্ডযুদ্ধগুলি এখন পৃথিবীতে চলছে তাতে 'আমি জিতল', 'সে হারল'– এটাই চূড়ান্ত কথা নয়। এসব খণ্ডযুদ্ধ পৃথিবীকে এমন এক ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে যখন পৃথিবী জুড়েই এক মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে এবং তার পরিণতি হবে সত্যিই খুবই ভয়াবহ। সে যুদ্ধে আসলে কেউ জিতবেন না, সকলেই আমরা হারব। সেটাই আইনস্টাইনের কথা, শান্তি আন্দোলনের কথা।

যুদ্ধের মাধ্যমে শান্তি নয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধানের জন্য প্রথম সচেষ্ট হতে হবে। শান্তিই কাম্য, শান্তিই সমাধান। কখনও কখনও যুদ্ধ শান্তির সাময়িক একটি উপায় হলেও তা যথার্থ উপায় নয়, ভালো উপায় তো নয়ই, অগত্যা যুদ্ধ– এভাবেই মানুষকে যুদ্ধ দেখতে হবে এবং দ্রুততর সময়ের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে।

তবে আত্মরক্ষা ও নিপীড়িতের সংগ্রামকে অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদী ও আক্রমণকারীর আক্রমণ ও যুদ্ধ থেকে আলাদা করে দেখা সম্ভব। সেখানেও যুদ্ধ থামানোর জন্যই অগত্যা প্রতিরোধ যুদ্ধ করতে আমরা বাধ্য হয়েছি, এ রকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। সবচেয়ে নিষ্ঠুর যুদ্ধেরও তাই একটি নিয়ম থাকতে হয়। মহাভারতে যেমন আছে চরম শক্রর মধ্যেও নারী ও নাবালকরা অবধ্য।

যুদ্ধ কত ভয়াবহ হতে পারে তারই একটি ছোট ইঙ্গিত তৈরি হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। আমরা হাতে-কলমে সেদিন টের পেয়েছিলাম একটি পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির চেহারা কতটা বীভৎস হতে পারে। ওই দিন হিরোশিমাতে প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। তাই প্রতি বছর হিরোশিমা দিবসে মানবজাতি স্মরণ করে সেই সব হতভাগ্য নিরপরাধ মানুষকে যারা সেদিন কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।

তফাৎ শুধু এটুকু ছিল যে, কোনো বস্তু আগুনে পুড়লে তার ছাইটুকু মাটিতে চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেদিন প্রথমে যে বিয়াল্লিশ হাজার লোক মারা যান (প্রথম দিনেই মৃত্যুবরণকারী মোট সত্তর হাজার লোকের মধ্যে ষাট শতাংশ তৎক্ষণাৎ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আর ত্রিশ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছিলেন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে, বাকি দশ শতাংশ অন্য নানা কারণে) তাদের তা-ও ছিল না। পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়ার ধ্বংস ক্ষমতা প্রায় ২১ কিলোটন টিএনটির সমান। পারমাণবিক বোমা-সৃষ্ট উত্তাপ প্রায় ৩৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান। এর কারণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন যারা, তাদের অনেকের ছাইভস্মটুকুও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যারা এই ভয়াবহ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে বেঁচে ছিলেন, আজীবন স্মৃতি তাদেরকে তাড়া করে ফিরেছে। ঘটনার পঁয়ষট্টি বছর পর ২০১০ সালে তাদের একজনের বর্ননায় শোনা যায়, ''আমার মা কোথায় যেন উবে গেলেন, পড়ে রইল শুধু তাঁর স্টিলের ঘড়ির ব্যান্ডটি।'' আবার কেউ বলছেন, ''কারও পুরো শরীরটা পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে, আর পোড়া হাড়ের সঙ্গে আটকে রয়েছে কোলের কয়লা হয়ে যাওয়া পোড়া শিশুটি।''

এসব বর্ণনা গত রাতে যখন ইন্টারনেট থেকে চিত্রসহ বার করছিলাম, তখন আমার বার বছরের মেয়ে এগুলি দেখতে দেখতে পড়তে পড়তে দ্রুত মুখ ঢেকে ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে গিয়েছিল। পরে সে ফিরে এসে রাতে শোয়ার আগে আমাকে 'শুভরাত্রি' জানিয়ে বলেছে, তখনও নাকি তার ভয় করছে, রাতে যদি আবার দেখতে হয় যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন!

সাধারণ মানুষ কখনওই আরেকটি হিরোশিমা দেখতে চায় না। অন্তত এসব শিশুদের মনস্তত্ত্বের কথা ভেবে আমরা বড়রা আজ নিশ্চয়ই প্রতিজ্ঞা করব– "পারমাণবিক যুদ্ধ কখনও নয়, কখনও নয়।" কল্পনা করুন, যদি সত্যি লাদেনের হাতে পারমাণবিক বোমা থাকত তাহলে আজ পৃথিবীটা কী রকম হত!

এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় আত্মসমর্পণকারী জাপানি রাষ্ট্রনায়কদের মুখ থেকে। পারমাণবিক বোমার অসীম ধ্বংসক্ষমতা দেখে জাপানের সম্রাট হিরোহিতো অবশেষে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আত্মসমর্পণের ঘোষণায় তিনি উল্লেখ করছিলেন–

"যদি আমরা এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাই, তাহলে শুধু জাপানি জাতির চূড়ান্ত পরাজয় হবে না, শুধু পৃথিবী থেকেই জাপানি জাতির নাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না, এর ফলে মানব সভ্যতারই সামগ্রিক বিলুপ্তি ঘটবে।''

[উৎস:

What Hirohito Really Said In His Acceptence Speech

translated by Willium Wetherall

Yosha Research Retrieved

Sept. 15, 2]

অতএব পারমাণবিক বোমামুক্ত পৃথিবী আমাদের গড়ে তুলতেই হবে।

আমার মনে পড়ছে নিকিতা ক্রুশ্চেভ ও মাও সে তুং-এর সেই বিখ্যাত বিতর্কের কথা। মাও সে তুং লেনিন-স্ট্যালিনকে উদ্ধৃত করে বলছেন– ''সাম্রাজ্যবাদ যতদিন থাকবে ততদিন বিশ্বযুদ্ধ ঠেকানো অসম্ভব।''

এরপর মাও আরও এগিয়ে বলছেন– ''এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে কাগুজে বাঘ।''

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত বিপ্লব জয়যুক্ত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে চীনে বিপ্লব হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে পৃথিবীতে আরও নতুন নতুন দেশে সমাজতন্ত্রের অভ্যুদয় হবে, এ রকমই ছিল তখনকার ধারণা, কল্পনা। এই তত্ত্ব যে খুবই সরলীকরণ ছিল তা আজ সুপ্রমাণিত। তবে সেদিন ক্রুশ্চেভের জবাবটি ছিল মোক্ষম। ক্রুশ্চেভ বলেছিলেন– "সাম্রাজ্যবাদ কাগুজে বাঘ এ কথা সত্য, কিন্তু ওই কাগুজে বাঘের আণবিক বোমার মতো লোহার দাঁত আছে।"

সুতরাং যুদ্ধ করে সাম্রাজ্যবাদকে পরাভূত করার চেষ্টা যে বৃথা সেটি ক্রুশ্চেভ অনুধাবন করেছিলেন। তাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যেই প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হবে এ রকম একটি তত্ত্ব তিনি দিয়েছিলেন। সেজন্য তাঁকে সংশোধনবাদী উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল।

পরে অবশ্য চীন অনেক বেশি সংশোধনবাদী শক্তিতে পরিণত হয়ে জয়লাভ করেছে। পরবর্তীতে আমরা এ-ও দেখেছি, যেমন ঠাণ্ডা যুদ্ধের আমলে, সমরাস্ত্র প্রতিযোগিতায় আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে কীভাবে সোভিয়েত অর্থনীতির ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয়েছে, আফগানিস্তানে বিপ্লব রপ্তানির ব্যর্থ চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করতে হয়েছে। আখেরে এসব নীতির ফলাফল মোটেই ভালো হয়নি। সামরিক-অর্থনৈতিক তীব্র প্রতিযোগিতায় শেষে এসে ১৯৯০ সালে সোভিয়েতের পরাজয় হয়েছে।

সুতরাং আজ পারমাণবিক অস্ত্রধারী সকল দেশকেই স্বীকার করে নিতে হবে, এই ভয়াবহ অস্ত্র প্রতিযোগিতা তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। তাই অন্তত পারমাণবিক অস্ত্রের আর কোনো প্রসার চলবে না। এই প্রসঙ্গে আরও বলা দরকার, অস্ত্র প্রতিযোগিতা হচ্ছে বিশেষভাবে দরিদ্র দেশের জন্য একটি আত্মঘাতী ব্যাপার।

বস্তুত UNO এর তরফ থেকে ১৯৭০ সালে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র প্রসারের বিরুদ্ধে একটি Non Proliferation treaty পাশ হয়েছিল। তখন এই চুক্তির অধীনে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি একমত হয়েছিলেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের যতটুকু প্রসার হয়েছে তারপর আর বাড়তি পারমাণবিক বোমা উৎপাদন বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা চলবে না। কিন্তু তলে তলে বৃহৎ শক্তিগুলি, বিশেষ করে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চুক্তি ভঙ্গ করে বিপুল অর্থ ব্যয় করে পারমাণবিক বোমার মজুদ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ফেললেন। তখন পৃথিবীর অন্য দেশগুলিও বলতে শুরু করল, তাহলে আমরাই-বা কেন বাদ থাকব!

ফলে পাকিস্তান-ভারত, ইসরাইল-ইরান, রাশিয়া-চীন এই দেশগুলোও পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজে আত্মনিয়োগ করল। ঠাণ্ডা যুদ্ধের সেই ইতিহাসটি আমাদের জানা আছে। এদের তত্ত্ব ছিল Balance of Fear তত্ত্ব। আমরা একে অপরকে পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় দেখিয়েই যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হব। কিছুটা তারা সফল হল বটে। কিন্তু এই তত্ত্ব প্রথম দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলেও এর প্রয়োগ দুর্বল দেশগুলির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। দুর্বল বা দরিদ্র দেশগুলি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে গেলে সমগ্র অর্থনীতিতে যে রক্তক্ষরণ হবে তা সহ্য করার ক্ষমতা তাদের নেই।

চিন্তা করে দেখুন, জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, শুধুমাত্র ২০১০ সালের বিশ্বব্যাপী মিলিটারি ব্যয়ের মোট পরিমাণ ছিল ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই টাকাটি দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষকে পুরো দশ বছর ধরে খাইয়ে-দাইয়ে ভালোভাবেই চালানো সম্ভব। আমাদের কাউকে কিছু করতে হবে না। দশ বছরের জিডিপি আপনা আপনিই এই টাকা থেকে সরবরাহ হবে।

এই হিসাব থেকেই আমরা বুঝতে পারি কী ধরনের পাগলামির মধ্যে বিশ্বের যুদ্ধবাজ প্রভুরা আজ মেতে উঠেছে। আমরা বাঁচার জন্য নয়, মরার জন্য অর্থ ব্যয় করছি। ভাবছি, আমি তো মরব না, আমি তো মারব! কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রতিটি যুদ্ধই হচ্ছে এক ধরনের 'বুমেরাং'। যাকে লক্ষ্য করে যিনি তা মারেন, তা আবার ফিরে এসে তাকেই বধ করে।

তাই ইতিহাস বিচারের সময় দেখতে হয় বুমেরাংটি ছুঁড়েছিল কে। সকল সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে সমাধান হিসেবে সব সময় বলতে হবে, যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, যুদ্ধবাজ বাজপাখিটাকে থামিয়ে দিতে চাই। শেষ বিচারে প্রকৃতির নিয়মও তাই। আমেরিকা আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল, আমরা তাকে থামাতে পারিনি। কিন্তু সেই যুদ্ধ যে আবার ওয়ান-ইলেভেনের রূপ নিয়ে ফিরে এসে আমেরিকাকেই প্রত্যাঘাত করেছিল, সে ঐতিহাসিক সত্য কি আমাদের জানা নেই?

হিরোশিমা আমাদের সকল শান্তিপ্রিয় যুদ্ধবিরোধী দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শান্তির পতাকাতলে নিয়ে আসুক, এটাই আজকের আহব্বান।

ড. এম এম আকাশ: অর্থনীতিবিদ; অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।