যুদ্ধাপরাধের বিচার: দীর্ঘসূত্রতার বিপদ

মো. আনোয়ার হোসেনমো. আনোয়ার হোসেন
Published : 21 July 2014, 04:00 AM
Updated : 21 July 2014, 04:00 AM

বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় একটি অনন্য গৌরবময় ঘটনা। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জন্য এই মহাঅর্জন বিনা আত্মত্যাগে ঘটেনি। শুরুতে নিরস্ত্র জনগণকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও নিষ্ঠুর একটি সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।

যুদ্ধে প্রাণহানি স্বাভাবিক। কিন্তু ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৩০ লাখ মানুষের জীবনদান; জীবন বাঁচাতে প্রায় ১ কোটি মানুষের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় গ্রহণ; প্রায় ৪ লাখ বিপন্ন নারীকে ধর্ষণ; শুধুমাত্র বিশেষ ধর্মবিশ্বাসের কারণে একটি জনগোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা-ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত করা ও বিতাড়ন– এমন সব নিদারুণ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে পেরেছিল এদেশীয় ঘাতক-দালাল যারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়েছিল তাদের কারণে। এরাই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম ও তার সহযোগীদের নেতৃত্বে গঠিত শান্তি কমিটি ও হানাদার বাহিনীর অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী।

প্রারম্ভিক এই ভূমিকার পর একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাত্রি থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে কয়েকটি তথ্য দেব। স্বাধীনতালাভের তেতাল্লিশ বছর পর এসব রক্তক্ষরণকারী অগুণতি ঘটনার মাত্র কয়েকটি তুলে ধরব। তা এ জন্য যাতে নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তিন যুগ ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতেও পারেনি, তারা বিবেচনা করে দেখবে স্বজাতির উপর হানাদার বাহিনীর এমন অমানবিক অত্যাচারের পরও কী করে এদেশীয় দালালেরা হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা করেছে। এসব পাকিস্তানি সহযোগীদের যুদ্ধাপরাধ বিচার কত ন্যায্য, কত জরুরি।

আজ একুশে জুলাই। শহীদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে উত্থাপিত বক্ষ্যমান প্রবন্ধে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এলিট কমান্ডো অফিসার মেজর তাহের যিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের সর্ববৃহৎ সেক্টরের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সম্মুখযুদ্ধে আহত হয়েছেন, তাঁর একটি বক্তব্য স্মরণ করব।

১৯৭৬-এ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে জেনারেল জিয়াউর রহমান গঠিত গোপন প্রহসনের বিচার কাঠগড়ায় তাহের তাঁর ঐতিহাসিক জবানবন্দিতে পঁচিশে মার্চের কালরাতের কথা স্মরণ করে বলেন–

The barbaric purpose of the Military Junta was not unknown to us who were in West Pakistan, when from General Headquarters of the Pakistan Army the message went out: 'Burn everything, kill everyone in sight. [i]

তাই হয়েছিল পঁচিশে মার্চের কালরাত থেকে। ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা সাইমন ড্রিং এবং ফরাসি যুদ্ধ-আলোকচিত্রী মাইকেল লরেন্ট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা শহর ঘুরে হানাদার বাহিনীর বীভৎসতার যে বিবরণ পাঠান তা ৩০ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয়। সে রিপোর্টে ঢাকা পশু হাসপাতালে কর্মরত সুইপার পরদেশীর অভিজ্ঞতা এভাবে বর্ণিত হয়েছে–

After I went to office on March 29 morning, I was asked to go to Sakharibazar along with others for lifting bodies by trucks. As there were Pakistani troops patrolling the road and fire was in front of the Judge Court, we couldn't go to Sakharibazar through that way. We entered Sakharibazar on its west side after crossing the Patuatuli police box. We went to every house of the area and found bodies of female, male, youths, elderly people, boys, girls, and children in every room. Most of the buildings were destroyed. Most of the bodies of women were without any clothes. Their breasts were cut off. We found sticks pushed into their vaginas. Many bodies were burnt. As the Punjabi soldiers sprayed bullets, the Biharis looted their homes. We took bodies on two trucks and left the area shortly. Though there were many bodies, we, being afraid, didn't go to Sakharibazar on that day again. I was asked to take bodies from Mill-Barrack on March 30 morning.

সাইমন ড্রিং তাঁর রিপোর্টে বলেন–

Caught completely by surprise, some 200 students were killed in Iqbal Hall, headquarters of the militantly anti-government student's union, I was told. Two days later, bodies were still smoldering in burnt-out rooms, others were scattered outside, more floated in a nearby lake, and an art student lay sprawled across his easel. The military removed many of the bodies, but the 30 bodies still there could never have accounted for all the blood in the corridors of Iqbal Hall. At another hall, reportedly, soldiers buried the dead in a hastily dug mass grave which was then bulldozed over by tanks. […] In the Hindu area of the old town, the soldiers reportedly made the people come out of their houses and shot them in groups. This area, too, was eventually razed. The troops stayed on in force in the old city until about 11 p.m. on the night of Friday, March 26, driving around with local Bengali informers. The soldiers would fire a flare and the informer would point out the houses of Awami League supporters. The house would then be destroyed – either with direct fire from tanks or recoilless rifles or with a can of gasoline, witness said. [ii]

রয়টারের সংবাদদাতা Howard Whitten সংবাদ পাঠালেন–

Members of Sheikh Mujib's Awami League were shot like dogs. [iii]

শুধু মানুষ হত্যা নয়, হানাদার বাহিনী ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয়গুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুটো মন্দির রমনা কালীবাড়ি ও আনন্দময়ী ধ্বংস করা হয়। প্রথমটি ছিল ২৫০ বছরের পুরনো তিন স্তরবিশিষ্ট সুদৃশ্য কৌণিক ভাস্কর্যের মন্দির। [iv]

পাকিস্তানি সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস যাকে হানাদার বাহিনী তাদের একজন সুহৃদ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান পরিভ্রমণের সুযোগ দিয়েছিল, তাঁর প্রেরিত 'গণহত্যা' শীর্ষক রিপোর্ট ১৯৭১ সালের ১৩ জুন তারিখে The Sunday Times পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

পরে এ রিপোর্টকে বিবিসি one of the most influential pieces of South Asian journalism of the past half century. [v] বলে অভিহিত করে। রিপোর্টে মাসকারেনহাস জেনারেল ইয়াহিয়া খানের গণহত্যার ব্লুপ্রিন্টের সারাংশ টানেন এভাবে–

The Pakistan Government's policy for East Bengal was spelled out to me in the Eastern Command Headquarters at Dacca. It has 3 elements:

(i) the Bengalis had proved themselves 'unreliable' and must be ruled by West Pakistanis;

(ii) the Bengalis will have to be re-educated along proper Islamic lines. The 'Islamisation of the masses' – this is official jargon – is intended to eliminate secessionist tendencies and provide a strong religious bond with West Pakistan;

(iii) when the Hindus have been eliminated by death and flight their property will be utilized as a golden carrot to win over the base for erecting administrative and political structures in the future. [vi]

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আমেরিকান নির্মাণ কর্মকর্তা Fritz Blankenship-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সিবিএস সংবাদদাতা John Sheahan। এই সাক্ষাৎকারে ১৯৭১ সালে একজন পাকিস্তানি মেজরের মনোজগতের স্বরূপটি বড় নগ্নভাবে ফুটে উঠে। পাকিস্তানি অফিসারদের চিন্তা-ভাবনা কেমন ছিল, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন–

One in particular was a Major Kamal. This man, we sat and talked to him for about two hours and this guy bragged about what he was going to do when the war was over when it was finished. He made the statement, 'Ahh its bloody good fun, this war is.' And he was very up [sic] in the air and he made statements like, 'When this is over, no Bengali will drive a car, only foreigners and West Pakistanis.' They have a club there called Chittagong Club. 'No Bengali will be allowed in the Club, no dogs or Bengali allowed in the Club.' […] He also made a statement that, 'I am going to have the most beautiful Bengali mistress in Chittagong and all my troops will have one.' It was kind, it was sickening to listen to this man. It was, I'm glad it was dark because I couldn't have, I couldn't have gotten by with sitting there. I know my face would have given me away. I was completely done on this guy. [vii]

অস্ট্রেলিয়ার মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট জেফ্রি ডেভিস ১৯৭২ সালের মার্চে International Planned Parenthood, the UNFPA এবং WHO-এর প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশে আসেন। ছয় মাসে তিনি অসংখ্য গর্ভপাত ও এতদসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, সরকারি হিসেবে ধর্ষণের সংখ্যা দুই লক্ষ নিতান্ত কম।

ডেভিস কুমিল্লা কারাগারে আটক অনেক পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেসব সাক্ষাৎকার থেকে তিনি জানতে পারেন যে, সৈন্যদের উপর ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি অফিসারদের নির্দেশ ছিল আপন পিতা ব্যতীত অন্য সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা প্রকৃত মুসলমানের পবিত্র দায়িত্ব। এ নির্দেশের কারণে তারা চেষ্টা করে যত বেশি সংখ্যক বাঙালি নারীকে গর্ভবতী করতে, যাতে পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানিদের রক্তের এক নতুন প্রজন্ম জন্মলাভ করে। [viii]

টাইম ম্যাগাজিনের সংবাদদাতা একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেন, ''পোল্যান্ডে নাৎসি বাহিনীর বীভৎসতার পর বাঙালিরা এক অকল্পনীয় ও পরিকল্পিত নৃশংসতার শিকার হয়।'' [ix]

সাম্প্রতিক এক প্রকাশনায় দেখানো হয় বাংলাদেশে পাকিস্তানি ও তার সহযোগী বাহিনীর হাতে নিহতদের ৬১৮টি গণকবর রয়েছে। [x]

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন জামায়েতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠিত আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল-নকশা বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। ১৯৭২ সালে The International Commission of Jurists তাদের আইনি গবেষণায় আলবদর বাহিনীর modus operandi বর্ণনা করেন এভাবে–

The Al Badr raids were carried out at night, the victims being led away blindfolded at gun point, never to return. Many were taken to the Dacca College of Physical Education building. A janitor at the College stated 'They brought in hundreds of people, all nicely dressed and tied up. We could hear the screaming all the time from the rooms.' The victims were later taken in trucks to a deserted brickyard near Mohammedpur. [xi]

পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দি যারা যুদ্ধাপরাধে যুক্ত ছিল তাদের বিচার হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্বজাতির কোলাবোরেটরদের বিচার ছিল আরও জরুরি। দ্রুত এবং যথাযথ বিচারের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা ছিল এক ঐতিহাসিক ও অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা। সে বিচার শুরুও হয়েছিল। স্বাধীনতালাভের অব্যবহিত পর দুটো আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ Bangladesh Collaborators (Special Tribunals) Order, 1972 [xii]-এর অধীনে সারা দেশে ৭৩ টি ট্রাইব্যুনালে এদেশীয় কলাবোরেটরদের বিচারকাজ শুরু হয়।

বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলে। এদের মধ্যে ২৮৪৮ জনের বিচার সম্পন্ন হয়। সাজা হয় ৭৫২ জনের। বাকি ২,০৯৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে একজনের ফাঁসির আদেশ হয়। [xiii]

এদেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দী যারা গুরুতর যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাই সংসদে The International Crimes (Tribunals) Bill আনা হয় এবং ২০ জুলাই তাদের বিচারকাজ চালাতে International Crimes (Tribunals) Act পাশ করে। যদিও পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দিদের বিচারের জন্য আইনটি প্রণীত হয়েছিল, তথাপি এর বিচারিক পরিধি শুধুমাত্র তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।

১৯৭৩ সালে সংসদে গৃহীত The International Crimes (Tribunals) Act ছিল একটি যুগান্তকারী ও দিকনির্দেশনামূলক আইন। Max Planck Institute-এর Professor Otto Von Triffterer এবং Dr. Hans-Heinrich Jescheck যাঁরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের দিকপাল ছিলেন, তাঁরা আইনটির চূড়ান্ত মুসাবিদা করে দেন। [xiv]

কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রমূলক অভ্যুত্থানে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতৃত্বকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির নেতা হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আবির্ভূত হন জেনারেল জিয়াউর রহমান।

রাষ্ট্র, সরকার, অর্থব্যবস্থা এবং সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির পুনর্বাসন; নিষিদ্ধ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া শুধু নয়, জিয়া একই সঙ্গে দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেন। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া-সেনাচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকাররের শাসনামলের প্রায় তিন দশকে নির্বাসনে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা– যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছিল বন্ধ।

কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ জীবন দিয়ে একটি সত্য প্রমাণ করেছে। তারা একাত্তর ভুলেনি– যারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে হত্যা-ধর্ষণ-লুণ্ঠন করেছে, তাদের ভুলেনি। আরও প্রমাণ করেছে, যে চেতনা বুকে ধারণ করে সীমাহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তারা প্রিয় বাংলাদেশ, দেশের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত অর্জন করেছে, তা তিন দশক কেন, আরও দীর্ঘ দুঃশাসনেও তাদের হৃদয় থেকে মুছে দিতে পারে না কোনো অন্ধকারের শক্তি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সচেতনভাবে লালন করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে বরং জনগণের চিন্তা ছিল অধিক ঘাতসহ, প্রাগ্রসর ও নিরেট। তাদের চেতনা ধারণ করে শহীদজননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলেন। তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল আমরা দেখি, যখন ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে সাধারণ মানুষের অনিঃশেষ সাহস ও সংকল্পের কাছে পরাভূত হয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি। ফলে ক্ষমতাসীন হয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারণকারী জোট।

২০০৯ সালে তিন চতুর্থাংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘ প্রতিক্ষীত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ পুনরায় শুরু করার অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ detention, prosecution and punishment of persons responsible for committing genocide, crimes against humanity, war crimes and other crimes under international law বাস্তবায়নের জন্য প্রথম International Crimes Tribunal under the International Crimes (Tribunals) Act, 1973 ঘোষণা করে।

পরবর্তী কয়েক মাসে ট্রাইব্যুনাল প্রণীত আইনি কার্যবিধি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ২০১০ সালের ১৫ জুলাই। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ The second International Crimes Tribunal (ICT-2) গঠিত হয়।

নানা বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কয়েকজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে। ঘাতক কাদের মোল্লার যাববজীবন সাজার রায় কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে সূচিত হয় নতুন প্রজন্মের এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদী গণজাগরণ। তারই ফলশ্রুতিতে জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর সংশোধন ঘটে।

রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর আপিলের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বলতে কী, গণজাগরণের কারণেই শেষ পর্যন্ত কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বহু চাপ অগ্রাহ্য করে ফাঁসি কার্যকরে অটল থাকেন। ঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে জনমনে গভীর আস্থার সৃষ্টি হয়।

কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বেশ কয়েকটি ঘটনায় মানুষের মনে এমন ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে যে বিচারকাজে সরকার দোদুল্যমান হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে জামায়েতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামির আপীল রায়ের দীর্ঘসূত্রতা এবং জামায়াতে ইসলামীর বিচারে সরকারি অবস্থান বিষয়ে মে মাসে দেওয়া মাননীয় আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে জনমনে দারুণ সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠন আইনমন্ত্রীর এইসব বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে। এমনকি প্রাক্তন আইনমন্ত্রীও বর্তমান আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি।

ইতোমধ্যে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। [xv] এটা ভাবতেও কষ্ট হয় যে, এডভোকেট আনিসুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতপন্থী আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। আর তাকেই কিনা করা হয়েছে সরকারের আইনমন্ত্রী! [xvi]

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দীর্ঘসূত্রতা বিষয়ে আরও গভীরে যাওয়া যাক। আমাদের দুটো স্বাধীন সার্বভৌম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়া তার নিজ আইনে এবং নিজস্ব গতিতেই চলবে। তাই বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, এ কথা খুব সহজে বলা যায় না। তারপরেও তার কিছু ইঙ্গিত আমরা দেখতে পাই।

যেমন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ এর ২১(৪) ধারায় বলা আছে–

The appeal shall be disposed of within 60 (sixty) days from the date of its filing.

অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো মামলা যদি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যায়, সেটি ফাইলিং-এর ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।

১. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলার রায় দিয়েছিল মে ৯, ২০১৩। কামারুজ্জামান আপিল করেন জুন ৬, ২০১৩। আপিল বিভাগে সে মামলার শুনানি শুরু হয় প্রায় এক বছর পর, জুন ৫, ২০১৪।

২. ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৩ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ দেলোয়ার হোসেন সাঈদির রায় প্রদান করে। তার আপিল শুরু হয় প্রায় সাত মাস পর, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৩। শেষ হয় এপ্রিল ১৬, ২০১৪। এই সময়কালে মামলাটির সর্বমোট ৪৯ দিন শুনানি হয়। বর্তমানে চূড়ান্ত রায় অপেক্ষমাণ আছে।

৩. জুলাই ১৫, ২০১৩ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গোলাম আজমের মামলার রায় প্রদান করে। আগস্ট ১২, ২০১৩ তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এর আগে আগস্ট ৫, ২০১৩ তারিখে গোলাম আজমও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। সর্বশেষ ডিসেম্বর ১২, ২০১৪ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গোলাম আজমকে তার 'কনসাইস স্টেটমেন্ট' দাখিল করতে আরও ৪০ দিন সময় দেয়।

এরপর গোলাম আজমের আপিল সম্পর্কিত তথ্য আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে আর নেই। ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত গোলাম আজমের আপিল মামলার মাত্র ৩ টি শুনানি হয়েছে– ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর, ২০ নভেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর।

যে কারণেই হোক, ৬০ দিনে আপিল নিষ্পত্তি করা আপিল বিভাগের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়গুলোকে কেউ কেউ দীর্ঘসূত্রতার লক্ষণ হিসেবে দেখতে পারেন। আপিল বিভাগের 'কজ লিস্টে' মামলা আসার একটি প্রক্রিয়া নিশ্চয়ই আছে। তাছাড়া এটাও নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আপিল বিভাগের আরও অনেক মামলার শুনানি চলছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অথবা আইন মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করেন। আদৌ দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে কিনা আমরা তখন বুঝতে পারব।

আইন কিংবা ট্রাইব্যুনাল নয়, ভিন্ন কয়েকটি বিষয় বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণ হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অফিসে তীব্র অনৈক্য আজ সকলের সামনে প্রকাশিত। এই অনৈক্য চলছে বহুদিন ধরে। এখন পর্যন্ত সরকার এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। অল্প কিছুদিন আগে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তাঁর অফিসিয়াল কম্পিউটার থেকে বিচার সংক্রান্ত তথ্য চুরির সন্দেহে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। [xvii] তাছাড়া প্রসিকিউটরদের বেতন কাঠামো নিতান্তই অপ্রতুল।

এই অনৈক্য, চলমান সংকট, অপ্রতুল বেতন কাঠামো, অর্থব্যয় ও বাজেট বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক বাধা– এসব বিষয়া চিফ প্রসিকিউটর অফিসের কাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রতার জন্ম দিচ্ছে বলে ধারণা করি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্র থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ৬০০-এর অধিক যুদ্ধাপরাধীর অপরাধ তদন্ত হতে পারে। তার জন্য অন্তত ৫০ জন তদন্ত কর্মকর্তার নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে সে সংখ্যা মাত্র ১১। এ-ও জানতে পেরেছি যে, নিয়োগের ফাইল মাস-বছর ধরে ঘুরতে থাকে। বাজেটের টাকা ফেরত যায়। মনে প্রশ্ন জাগে, স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ৭৩ টি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন সম্ভব হলে, বর্তমানের বাংলাদেশ যেখানে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাটের পরও জিডিপির প্রবৃদ্ধি সচল থাকে, সেখানে মাত্র দুটি ট্রাইব্যুনাল কেন?

আরও একটি বিষয়। সমুদ্র-সীমানা নির্ধারণ মামলায় বাংলাদেশ সরকার মামলা লড়ার জন্য আধুনিক আন্তর্জাতিক আইনের জনক বলে পরিচিত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মেইট্রিক্স চেম্বারের আইনজীবী জেইমস ক্রফর্ডকে নিয়োগ দেয়। অধ্যাপক ক্রফর্ড ছাড়া নিয়োগ পান ইউনিভারসিটি কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস এবং ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পায়াম আখাভান। আমরা তার ফলও পেয়েছি।

সমুদ্র-সীমা নির্ধারণ মামলায় প্রথিতযশা বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের উদাহরণ দেওয়ার কারণ এটা নয় যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের অফিসে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজন ছিল। মোটেই তা নয়। তবে সমুদ্র-সীমা নির্ধারণ মামলায় বাংলাদেশ সরকার আইনজীবী নিয়োগ ও মামলা লড়ার ব্যাপক পরিকল্পনা করে যে বিচক্ষণতা ও আন্তরিকতা দেখিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের অফিস অথবা তদন্ত সংস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারকে তেমন আন্তরিক বলে মনে হয়নি। অথচ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো কোনো অংশেই সমুদ্র-সীমা নির্ধারণ মামলার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই দীর্ঘসূত্রতা যে শুধুমাত্র মামলার শুনানির কারণেই হচ্ছে তা নয়।

বিচারে দীর্ঘসূত্রতার সমূহ বিপদ রয়েছে। তাতে বিচারপ্রক্রিয়ার উপর জনগণের আস্থা ধীরে ধীরে কমে আসে। আইনি প্রক্রিয়ার গতি এমনিতেই ধীর হয়ে থাকে। তার সঙ্গে জনগণের মনে যদি এমন ধারণা হয় যে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত বিভিন্ন সংকট নিরসনে আন্তরিক নয়, তখন পুরো প্রক্রিয়ার উপর থেকেই জনগণের আস্থা কমে যাওয়ার ভয় থাকে।

জনমনে যদি এই প্রতীতি জন্মে যে, কয়েক যুগ ধরে নিরবে-নিভৃতে কেঁদে ফেরা নির্যাতিত মানুষের বিচারের বাণী নয়, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্যই যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ব্যবহার করা হচ্ছে, তাহলে সময়ের পরে বিচার কার্যকর হলেও হারিয়ে ফেলা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।

বিচারে দীর্ঘসূত্রতার ঘোরতর বিপদ সম্পর্কে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করব। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, জঙ্গি সংগঠন হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ করতে গড়িমসি এবং এদের অর্থ-সাম্রাজ্যের উপর সরকারি কর্তৃত্ব আরোপে অনীহা, জামায়াত-শিবির-জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

৫ জানুয়ারির পূর্বে দেশে সহিংস গৃহযুদ্ধ চালাতে তাদের সক্ষমতা আমরা দেখেছি। এই জঙ্গি শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর একনায়কত্ব চালানো হয়নি বলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে জামায়াত-শিবির গত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে, অবাধে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে, নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছে– তার ফলাফল আমরা দেখেছি।

স্বাধীনতা-পরবর্তী গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের নীতি অনুসরণ করা হয়নি বলে পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্র বহাল থেকেছে, তার অভ্যন্তরে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা সংঘবদ্ধ হতে পেরেছে। ফলশ্রুতিতে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় স্বাধীনতাবিরোধীদের আসীন হওয়া সম্ভব হয়েছে। সে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করলে অতীতের পুনরাবৃত্তি যে হবে না, তা কেউ বলতে পারে না।

সরকার মনে করতে পারে যে, তাদের সামনে দীর্ঘ সময় পড়ে আছে, নির্বাচনও বহু দূরে। তাই ধীরে-সুস্থে বিচারকাজ চালানো যায়। এটা যে কত বড় ভ্রান্তি, তা কঠিন মূল্য দিয়ে বুঝতে হবে। সরকার কেন সে পথে যাবে? ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। সে ভয় জনগণ পাচ্ছে। ভয়মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। অতীতে তিনি তা করেছেন, এবারেও তার অন্যথা হবে না-– এই প্রত্যাশা আমদের সবার।

প্রত্যাশা পূরণে সকল দায়িত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকলে বড় ভুল হবে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজ কত সবল তা নির্ভর করে সরকারের উপর কত বেশি চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হয় নিচ থেকে। সকল গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, মিডিয়া এবং গণজাগরণে জেগে উঠা নতুন প্রজন্ম সম্মিলিতভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুক।

সে আন্দোলনের প্রবল চাপ শেখ হাসিনার হাতকেই শক্তিশালী করবে, নিষ্কম্প রাখবে। দেশের মঙ্গলের জন্য তা বড় বেশি জরুরি।

তথ্যসূত্র:

[i] Lawrence Lifschultz, Bangladesh: The Unfinished Revolution

(1st edn, Zed Press 1979) 77

The Daily Telegraph (London, 30 March, 1971)

[accessed 19 July, 2014]

[iii] 'Members Of Awami League Shot Like Dogs In Chittagong'

The Statesman (29 June, 1971)

[cited in the first chapter of the unpublished working Ph.D. thesis of M. Sanjeeb Hossain]

[iv] 'Destruction Of Dacca Temples– Nepal's Envoy Protests Informally'

The Statesman (26 June, 1971)

[cited in the first chapter of the unpublished working Ph.D. thesis of M. Sanjeeb Hossain]

BBC (16 December, 2011)

accessed 19 July, 2014

[cited in the first chapter of the unpublished working Ph.D. thesis of M. Sanjeeb Hossain]

[vi] Anthony Mascarenhas, Genocide

The Sunday Times

(London, 13 June 1971)

accessed 19 July 2014

[vii] John Sheahan, 'Interview of Fritz Blankenship'

(CBS News Calcutta, 12 April, 1971)

[cited in the first chapter of the unpublished working Ph.D. thesis of M. Sanjeeb Hossain]

[viii] Bina D'Costa, 1971: Rape and its consequences

bdnews24.com

accessed 19 July, 2014

Time (2 August, 1971)

accessed 19 July, 2014

[x] Mutaba Hakim Plato (ed), Boddhobhumir Goddo

(bdnews24.com, 2013)

accessed 19 July 2014

[xi] International Commission of Jurists, The Events in East Pakistan, 1971 A Legal Study (1972)

accessed 19 July 2014

[cited in the first chapter of the unpublished working Ph.D. thesis of M. Sanjeeb Hossain]

[xii] Promulgated on 24 January, 1972 (P.O. Oder No. 8 of 1972)

[xiii] Syeed Ahamed, Trials and Errors

[icsforum.org, 30 September, 2010]

accessed 19 July 2014

[xiv] Mohammad Gholam Rabbani and Wali-ur Rahman,

(The Daily Star, 1 March, 2010)

accessed 19 July 2014

বিডিনিউজ২৪ (ঢাকা, ১ জুন ২০১৪)

সাইটে সর্বশেষ প্রবেশ করা হয় জুলাই ১৯, ২০১৪ তারিখে।

[xvi] Op Cit.

বিডিনিউজ২৪ (ঢাকা, ২২ জুন ২০১৪)

সাইটে সর্বশেষ প্রবেশ করা হয় জুলাই ১৯, ২০১৪।